Ajker Patrika

মৃত্যু, সহিংসতা, আতঙ্কের ভোট কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মৃত্যু, সহিংসতা, আতঙ্কের ভোট কাল

দেশে কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা রূপ নিচ্ছে সহিংসতায়। গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী চলতি বছরে প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ইউপি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় ৪৬ জন। তৃতীয় দফা ইউপি নির্বাচনে, বছর শেষে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন মানুষ। ইউপি নির্বাচনে প্রাণহানি ও সহিসংতায় উদ্বেগ জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু গতকাল জোটের বৈঠক শেষে সহিসংতা বন্ধে সরকারের কাছে দাবি জানান। তিনি বলেন, সহিংসতার কারণে মানুষ ভোট দিতে ভীত।

দেশের রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে কাজ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক)। তাদের হিসাবে চলতি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় মারা গেছে ৪০ জন। ২১০টি সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৫৪৩ জন। আর পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মারা গেছেন একজন। এ ছাড়া গণমাধ্যমের হিসাবে মতে নভেম্বর মাসে সহিংসতায় মারা গেছেন ৬ জন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন রাজনীতি মানেই ফায়দা পাওয়া। তাই দলীয় বা নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো পদপদবি পেলে বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা পায়। অন্যায় করে পার পেয়ে যায়। সেই অযাচিত সুযোগ-সুবিধার জন্য সকলেই মরিয়া। এতে অন্যকে মাঠ ছাড়া করতে সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে।

এদিকে নির্বাচনী সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় বিব্রত ও উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। তিনি সম্প্রতি বলেছিলেন, সহিংসতা ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করে মাঠপর্যায়ে দিকনির্দেশনা দেবে ইসি। তারপরও ঠেকান যাচ্ছে না সহিংসতা।

দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬টি ইউনিয়নে আগামীকাল বৃহস্পতিবার এবং তৃতীয় ধাপের ১ হাজার ১টি ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বর নির্বাচন। আর এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সহিংসতা। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়া ভোটের মাঠে প্রায় একচেটিয়া আওয়ামী লীগ ও এর বিদ্রোহী প্রার্থীরা। ফলে অধিকাংশ স্থানে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগই। আর ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা নিজেদের মধ্যে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই বেকায়দায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।

গত সোমবার মেহেরপুর গাংনীতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই ভাই নিহত হয়েছেন। গত ৭ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কক্সবাজার জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার। এর আগে ৫ নভেম্বর কক্সবাজার শহরতলির লিংক রোড এলাকায় জহিরুল ইসলাম ও তাঁর ভাই কুদরত উল্লাহ সিকদারকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। তাঁদের পরিবারের দাবি নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ গুলি করা করা হয়।

গত ৪ নভেম্বর নরসিংদীর সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। গত ২৮ অক্টোবর নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলি ইউনিয়নে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। ১৫ অক্টোবর মাগুরা সদরের জগদল ইউনিয়নে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। ২৬ অক্টোবর রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হন।

এর আগে ১৭ অক্টোবর কাপ্তাই সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া ফরিদপুর ও সিলেট একজন করে নিহত হয়েছেন। আরও কয়েকটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং বিভিন্ন স্থানে এসব সংঘর্ষে কয়েক শ’ মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে জানা গেছে। গতকালও কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ধামরাই, মেহেরপুর, কুড়িগ্রামে ঘটেছে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা।

কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নে দুর্বৃত্তের গুলিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম আহত হয়েছেন। তিনি ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং তেঁতুলখালী এলাকার সাবেক মেম্বার আবুল কালামের ছেলে। গত সোমবার রাতে নির্বাচনী তাঁর ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বাগেরহাটের মোল্লাহাটের গাংনী ইউপি নির্বাচনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ভোট চাওয়াকে কেন্দ্র করে হামলা- পাল্টা হামলায় সাতজন আহতের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বেলা ১২টার দিকে উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর প্রার্থী জাকির বিশ্বাস (টিউবওয়েল) ও গোলাম রব্বানী (মোরগ)-র সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। মোল্লাহাট থানার ওসি সোমেন দাশ বলেন, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য উভয় পক্ষের আটজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নে নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষে দুই পক্ষের ১২ জন আহত হয়েছে। গতকাল বিকেলে ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামের আদর্শ বাজারের পাশে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মো. শাহনেওয়াজ অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী শহীদুল আজমের কর্মী-সমর্থকেরা বিভিন্ন কটূক্তিমূলক স্লোগান দিয়ে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাঁর ছয়জন কর্মী আহত হয়। অভিযোগ অস্বীকার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শহীদুল আজম বলেন, নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা মোটর শোভাযাত্রা করে মিছিল সহকারে তাঁদের ওপর হামলা করে। ফটিকছড়ি থানার ওসি মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে যারা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন, নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন তাঁদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী তৎপরতা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। যেকোনো মূল্যে এ সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ করতে হবে। এখানে যেকোনো দলীয় কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকুক না কেন।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো শঙ্কা নেই। প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। কোনো রকমের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল(অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিজিবিও সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের প্রায় ৩৫ হাজার সদস্য নির্বাচনের সময় নিয়োজিত থাকবে। এর মধ্যেও দুই-চারটা অস্ত্র যে দেশে ঢুকছে না তা না। তবে এগুলো ধরাও হচ্ছে। প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে। কোনো রকমের কোথাও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

আজ ‎সোমবার বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো শঙ্কা নেই। এবারই নির্বাচনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

কেরানীগঞ্জ মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কেরানীগঞ্জে যেই ব্যক্তি অপকর্মটা ঘটিয়েছে সে পলাতক রয়েছে। কিন্তু তার সহযোগীকে ধরা হয়েছে। পলাতক ওই ব্যক্তিকেও ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। ‎

এসব ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে কিনা —এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিস্ট যারা আছে তারা সব সময়ই এটা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু সবার সহযোগিতা যদি থাকে তবে নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর হবে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এ রকম একটা নির্বাচনই এই সরকারের দেওয়ার ইচ্ছা এবং এটা বাস্তবায়ন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুয়াশায় গাড়ি চালানো নিরাপদ করতে বিআরটিএর নির্দেশনা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতকালে ঘন কুয়াশার কারণে চালকের দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। এ পরিস্থিতিতে নিরাপদে গাড়ি চালাতে মোটরযান চালক ও মালিকদের জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিআরটিএ তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এসব নির্দেশনা প্রকাশ করে।

বিআরটিএ নির্দেশনায় বলা হয়েছে—

১. কুয়াশায় দৃষ্টিসীমার মধ্যে থামানো যায় এমন নিয়ন্ত্রণ উপযোগী ধীর গতিতে সর্বদা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে রাস্তায় গাড়ি চালাতে হবে।

২. সর্বদা ‘লো-বিম বা ডিপার’ জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। ‘হাই-বিম বা আপার’ কুয়াশাকে আরও বেশি ঘন করে বিধায় ‘হাই-বিম বা আপার’ জ্বালিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না।

৩. লেন পরিবর্তন/ওভারটেকিং করা যাবে না। যেসব স্থানে দৃষ্টি যায় না বা বাঁক নেওয়ার আগে দেখা যায় না, সেসব স্থানে দরকার হলে বিপদ এড়ানোর জন্য হর্ন বাজাতে হবে।

৪. ঘন কুয়াশার কারণে একেবারেই দেখা না গেলে বা দৃষ্টিসীমা শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেলে নিরাপদ জায়গায় গাড়ি থামিয়ে হেডলাইট বন্ধ করে হ্যাজার্ড লাইট জ্বালাতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসীরা যেন পালাতে না পারে, সতর্ক থাকার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

‎সীমান্ত দিয়ে কোনো অপরাধী বা সন্ত্রাসী যেন পালিয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ‎

আজ ‎সোমবার বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা ও দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবিকে আরও পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ‎

বক্তব্যের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির সাহস ও আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ‎স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং ওই আন্দোলনে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ছাত্র-জনতার প্রতি সম্মান জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিজিবি একটি গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। বর্তমানে বিজিবি একটি “ত্রিমাত্রিক বাহিনী” হিসেবে সীমান্ত সুরক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা এবং জনকল্যাণমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।’

বিজিবির সার্বিক উন্নয়নে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

‎স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে কোনো ধরনের মাদক দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা জোরদার করতে হবে।’

একই সঙ্গে অবৈধ পথে দেশীয় পণ্য বিদেশে পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

‎‎চোরাকারবারি ও মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে জড়িত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পাশাপাশি অধীনস্ত সদস্যদের কল্যাণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সর্বদা সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্তসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা অত্যন্ত কৌশল ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, যাতে দেশের স্বার্থ শতভাগ সুরক্ষিত থাকে। সীমান্ত ব্যবহারকারী চোরাকারবারিদের আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় বজায় রাখার নির্দেশ দেন তিনি। ‎

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবি সদস্যদের ‘চেইন অব কমান্ড’-এর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও আনুগত্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বিজিবি দেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে তার গৌরবময় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে এমন প্রত্যাশা তাঁর।

‎‎অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং বিজিবির মহাপরিচালকসহ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে চায় বিআইডব্লিউটিসি

  • অনুমোদিত মূলধন ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব
  • কোম্পানির শেয়ার বিআইডব্লিউটিসি রাখতে পারবে, প্রয়োজনে অন্যকেও দেবে
  • বিআইডব্লিউটিসির পরিচালনা পর্ষদে সদস্যসংখ্যা দুজন বাড়িয়ে ৭ করার প্রস্তাব
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে চায় বিআইডব্লিউটিসি

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) এক বা একাধিক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে চায়। এসব কোম্পানির শেয়ার করপোরেশন নিজে ধারণ করতে পারবে এবং প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও ধারণের অনুমতি দিতে পারবে।

বিআইডব্লিউটিসি তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এসব কোম্পানি করবে সরকারের পূর্বানুমোদন নিয়ে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ায় এসব প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়ায় বিআইডব্লিউটিসির অনুমোদিত মূলধন ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে মতামতের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

খসড়া বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে বিআইডব্লিউটিসির কার্যক্রমে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্ব ও কাজের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি আন্তদেশীয় প্রটোকলের আওতায় নৌযান পরিচালনা করতে পারবে। পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে অভ্যন্তরীণ, উপকূলীয় ও আন্তদেশীয় প্রটোকল রুটে দুর্ঘটনাকবলিত, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বা যেকোনো বিপর্যস্ত নৌযান উদ্ধারে সহায়তা করতে পারবে। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিসি পরিচালিত যেকোনো যাত্রী ও ফেরি নৌপথে নৌ যোগাযোগ ও পরিবহন সেবা যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু থাকে, সে জন্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট নৌপথে পলি অপসারণের কাজ করতে পারবে।

অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মো. সলিমউল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ক্যাবিনেটের নির্দেশনায় আগের অধ্যাদেশ পুনর্লিখন করা হচ্ছে। এর আওতায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আইনটিকে যুগোপযোগী করতে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, যাতে করপোরেশন আরও কার্যকর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে।

১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে বিআইডব্লিউটিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরে ১৯৭৬ এবং ১৯৭৯ সালে এই অধ্যাদেশে সংশোধন আনা হয়। পরবর্তী সময়ে এই অধ্যাদেশ সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।

নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় বিআইডব্লিউটিসির অনুমোদিত মূলধনের বিষয়ে পরিবর্তন এনে অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার এই অর্থ দেবে। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই মূলধন আরও বাড়াতে পারবে। আগে করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ছিল মাত্র ৪০ লাখ টাকা।

খসড়ায় বিআইডব্লিউটিসির পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে পরিচালনা পর্ষদে মোট পাঁচজন সদস্য ছিলেন। খসড়ায় আরও দুই সদস্য যুক্ত করে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসংখ্যা সাত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন যুক্ত দুই সদস্যের একজন হবেন নৌ মন্ত্রণালয় থেকে মনোনীত যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, অন্যজন হবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে মনোনীত একই পদমর্যাদার কর্মকর্তা। বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ও চারজন পরিচালক পদাধিকার বলে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য থাকবেন।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান, পরিচালক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁদের সবার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের মতো আইন প্রযোজ্য হবে।

বিআইডব্লিউটিসি অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান উদ্দিন বলেন, অধ্যাদেশের খসড়ার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে তা দেশের নৌপরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা করা যায়। তবে শুধু কাগজ-কলমে আইন ও নীতি প্রণয়নেই সীমাবদ্ধ না থেকে প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক সাংগঠনিক কাঠামোর সব কর্মপরিধি যাতে সুচারুভাবে সম্পন্ন হয় এবং দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো যেন যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হয়, সেদিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত