Ajker Patrika

৬৫৮ কোটি টাকায় কেনা নতুন কোচ-ইঞ্জিনে ত্রুটি

  • দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কেনা হয়েছে ২০টি লোকোমোটিভ ও ১৪৭টি যাত্রীবাহী কোচ।
  • অনেক কোচের ডিসপ্লে, অ্যামপ্লিফায়ার, কাপলার, ভলিউম কন্ট্রোলার এখন অকার্যকর।
  • তিনটি পাওয়ার কার অকেজো। ২০টি ইঞ্জিন, ৫৮টি কোচের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ।
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৬৫৮ কোটি টাকায় কেনা ডিজেলচালিত ২০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) এবং ১৪৭টি যাত্রীবাহী কোচের বেশ কয়েকটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এগুলোর ডিসপ্লে কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ঘোষণা শুনতে পাচ্ছে না যাত্রীরা। এ কারণে ডিসপ্লে, পিআইএস, কাপলার প্রতিস্থাপনের বিকল্প নেই। অকেজো পড়ে আছে তিনটি পাওয়ার কার।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র বলছে, চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (ওয়ারেন্টির মেয়াদকালে) কোরীয় ঠিকাদারের ত্রুটি মেরামত করার কথা। কিন্তু প্রকল্প দপ্তর, কোরীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি ও কোরীয় প্রতিনিধিকে জানানো হলেও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সমস্যা জটিল হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশনের জন্য সার্কিট ডায়াগ্রাম, ম্যানুয়াল, প্রোডাক্ট ব্রুশিয়ারের হার্ড কপি এবং সফট কপি সরবরাহ করা হয়নি।

তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, রেলওয়ে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সমস্যা হয়েছে। এর আগে কিছু ত্রুটি ঠিকাদারের কাছ থেকে ঠিক করিয়ে নেওয়া হয়। ঠিকাদারকে ঢালাও দায় দেওয়া যাবে না। এখনকার সমস্যাগুলো কারিগরি কমিটির মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রকল্প দপ্তরে এলে এবং ওয়ারেন্টির মেয়াদ থাকলে ঠিকাদারের কাছ থেকে ঠিক করিয়ে নেওয়া যাবে।

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কেনা ২০টি লোকোমোটিভ ও ১৪৭টি কোচ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে চলাচল করছে। রেলের পূর্বাঞ্চলের সূত্র জানায়, এসব কোচ ও ইঞ্জিনে বিভিন্ন কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কোচের ডিসপ্লে, অ্যামপ্লিফায়ার, কাপলার ও ভলিউম অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে রেলওয়ে একটি প্রকল্পের আওতায় এসব ইঞ্জিন এবং কোচ কেনে। আটটি ধাপে এসব কোচ-ইঞ্জিন দেশে আসে। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি এসেছিল প্রথম চালান এবং শেষ অর্থাৎ অষ্টম চালান আসে ২০২৪ সালের ১৭ এপ্রিল। কোচগুলো বাংলাদেশে সরবরাহের সময় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০টি লোকোমোটিভ এবং ৫৮টি কোচের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড (দুই বছর) শেষ হয়ে গেছে। বাকি ৮৯টির ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মেয়াদ ধাপে ধাপে শেষ হবে ২০২৬ সালের ১৭ এপ্রিল নাগাদ।

এই প্রকল্পে ৬৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ের ৭৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অর্থায়ন করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ)। বাকি ২১ দশমিক ৩৭ শতাংশ অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকারের। ঠিকাদার দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ কোম্পানি সুংশিন আরএসটি-পসকো ইন্টারন্যাশনাল। এই প্রকল্পে কিছু টাকা সাশ্রয় হওয়ায় একই প্রতিষ্ঠান থেকে আরও ৩৫টি কোচ কিনছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অবশ্য এর একটিও এখনো দেশে আসেনি।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কোরিয়ার কোচগুলোয় একাধিক কারিগরি সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। কোচগুলোর ডিসপ্লে ও পাবলিক অ্যাড্রেস (পিএ) ব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি ও কোরিয়ান প্রতিনিধিকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও এখনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৭০৩ (মহানগর গোধূলী)/ ৭৪২ (তূর্ণা নিশীথা), ৭৪১ (তূর্ণা নিশীথা)/ ৭০৪ (মহানগর প্রভাতী), ৭৮৭ (সোনার বাংলা এক্সপ্রেস)/ ৭৮৮ (সোনার বাংলা এক্সপ্রেস) নম্বর ট্রেনের ডিসপ্লের পাবলিক ইনফরমেশন সিস্টেম (পিআইএস) কন্ট্রোলার অকার্যকর হয়ে আছে। পিআইএস কন্ট্রোলার নতুন লাগানো ছাড়া ডিসপ্লে সিস্টেম কার্যকর করা যাবে না। পিআইএস কন্ট্রোলারের জন্য আপডেট সফটওয়‍্যার দিতে হবে। সফটওয়্যার দেওয়া হয়নি এবং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে কোচভিত্তিক নম্বর ইনপুট দেওয়ার জন্য কোনো ডিভাইস এবং নেটওয়ার্ক কেব্‌ল দেওয়া হয়নি। ঠিকাদারকে ডিসপ্লের সফটওয়্যার আপডেট দিতে বলা হলেও সেটি করছে না।

৭০১ (সুবর্ণ এক্সপ্রেস)/৭০২ (সুবর্ণ এক্সপ্রেস), ৭০৩/৭৪২, ৭৪১/৭০৪ নম্বর ট্রেনের উভয় দিকের অ্যামপ্লিফায়ার (সাউন্ড রেগুলেটর) অকার্যকর হয়ে গেছে। ৭৮৭/৭৮৮ নম্বর ট্রেনের শুধু এক দিকের অ্যামপ্লিফায়ার কার্যকর। এতে প্রায়ই অ্যামপ্লিফায়ার বন্ধ হয়ে যায়। আপৎকালের জন্য স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা অ্যামপ্লিফায়ার দিয়ে পিএ সিস্টেম সচল রাখা হয়।

সূত্র জানায়, কোরীয় কোচগুলোর ৪০টি কাপলার অকার্যকর রয়েছে। এগুলো বদলে কার্যকর কাপলার সরবরাহ করা না হলে কোনোভাবে ট্রেনগুলোর ডিসপ্লে সিস্টেম সচল করা সম্ভব নয়। কাপলারের মাধ্যমে ট্রেনের দরজার কন্ট্রোল এবং যাত্রীদের তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। কাপলারে মোট ৩৮টি পিন থাকে। যেকোনো একটি পিন নষ্ট হলে বা পানি ঢুকলে বা শর্টসার্কিট হলে, এমনকি ভারী কুয়াশা হলেও পিএ ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে সব ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ ছাড়া ৭০১/৭০২, ৭০৩/৭৪২, ৭৪১/৭০৪, ৭৮৭/৭৮৮ নম্বর ট্রেনের ১৩১টি ভলিউম কন্ট্রোলার অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে জানানো হলেও ভলিউম কন্ট্রোলার প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এ কারণে যাত্রীরা ট্রেনে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা যথাযথভাবে শুনতে পায় না।

প্রতি কোচে দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা ও একটি এনজিআর স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ভিডিও চিত্র দেখার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে সিসিটিভি ক্যামেরা কার্যকর কি না, তা বোঝা যায় না।

রেলের পূর্বাঞ্চলের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরিয়ার পাওয়ার কারের জেনারেটর ১৫টির বেশি কোচের লোড নিতে পারে না। তাই এসব পাওয়ার কারে সর্বোচ্চ ১৫টি কোচ সংযুক্ত করা যায়। এই পাওয়ার কারে ঈদের সময় বাড়তি কোচ যুক্ত করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বর্তমানে তিনটি পাওয়ার কার অকেজো পড়ে আছে।

কোচের এসব ত্রুটির বিষয়ে জানতে চাইলে ২০ লোকোমোটিভ ও ১৫০ মিটারগেজ যাত্রী কোচ সংগ্রহ প্রকল্পের পরিচালক ফকির মো. মহিউদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, নতুন কোচের এসব সমস্যা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে হয়েছে। এসব কোচ যেভাবে রক্ষণাবেক্ষণ দরকার ছিল, সেভাবে হয়নি। কোচের কাপলারগুলো খুলে রাখায় সেগুলোয় পানি ঢুকে সমস্যা হয়েছে। এর আগেও কিছু সমস্যা হয়েছিল, ঠিকাদারের কাছ থেকে সেসব ঠিক করিয়ে নেওয়া হয়। তবে এখন যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হচ্ছে, এগুলোর জন্য কারিগরি কমিটির মাধ্যমে যথাযথভাবে এই দপ্তরে এলে, ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে এবং চুক্তিতে থাকলে ঠিকাদারের কাছ থেকে নেওয়া যাবে। তবে ঠিকাদারকে ঢালাও দায় দেওয়া যাবে না।

এসব কোচ ও ইঞ্জিন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রেলের বিভিন্ন বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা আজকের পত্রিকাকে জানান, প্রকল্পে উল্লেখ আছে রক্ষণাবেক্ষণের মেয়াদ ২ বছর। রক্ষণাবেক্ষণ মেয়াদে ত্রুটি দেখা দিলে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে ঠিক করতে হবে অর্থাৎ ঠিকাদার করে দেবে। ঠিকাদার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করছে না। সেটার দায় রেলের ওপর চাপাতে চাইছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ করায় সমস্যা হচ্ছে। কাপলার ট্রেনের বাইরের অংশে থাকে, সেগুলো রোদ-বৃষ্টিতে এত দ্রুত নষ্ট হবে কেন?

প্রকল্প দপ্তর সূত্র বলছে, চুক্তি অনুযায়ী কোচ দেশে আসার সময় থেকে পরবর্তী দুই বছর প্রতিটি কোচ ও ইঞ্জিনের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দেবে। তবে রেলের কর্মীদের ভুলে সমস্যা তৈরি হলে এর দায় ঠিকাদার নেবে না। কারিগরি ত্রুটি হলে ঠিকাদার দেখবে।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব কোচের সমস্যা হয়েছে, সেগুলো ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যেই আছে। এরপরও সেগুলোর ত্রুটি সারাচ্ছে না ঠিকাদার।

দৃষ্টি আকর্ষণ করলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোরিয়া থেকে কোচ-ইঞ্জিন আনার আগে কি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছিল? এমন কোচ অন্য যেসব দেশ কিনেছে, তাদের এত দ্রুত সমস্যা হয়েছে কি না, এগুলো চিন্তা না করেই ক্রয় কমিটির কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া ভুল হয়েছে। রেলে কোচ-ইঞ্জিনের যে সংকট, তাতে এত কোটি টাকার একটি প্রকল্পে এমন সমস্যা যদি হতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে এসব কোচের দশা ডেমুর মতো হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩১
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত