Ajker Patrika

প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির অমিলে ছাত্রসংগঠনগুলো অখুশি

  • ফ্যাসিবাদের বিচার ও আহতদের চিকিৎসায় ব্যর্থতার অভিযোগ।
  • সরকার যথেষ্ট কঠোর হতে পারছে না বলে দাবি।
  • ‘জনজীবনের সমস্যা সমাধানে সরকার বেশি দুর্বল।’
সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা 
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬: ১৫
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ফাইল ছবি
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ফাইল ছবি

গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের আগুন সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন। জুলাইয়ের আগেও দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন করেছে ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন। তবে সেই সংগঠনগুলোই আবার ৬ মাস আগে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের লক্ষ্য পূরণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে। ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, এ সরকারের কর্মকাণ্ডে জুলাই অভ্যুত্থানের লক্ষ্য এবং চেতনা ফিকে হয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও বিচার কার্যক্রমে ধীরগতি, ৬ মাসেও আন্দোলনের সব শহীদ ও আহতের ক্ষতিপূরণ এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, নতুন ভ্যাটের ফলে পণ্য মূল্যবৃদ্ধি, বিভিন্ন উগ্রপন্থী গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন কারণে তাঁরা মনে করছেন, সরকার যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। ছাত্রসংগঠনের নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যেমন গণতান্ত্রিক পরিবেশ তাঁরা আশা করেছিলেন, তেমন পরিবেশ তৈরি করতেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা থেকে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তা পূরণে বর্তমান সরকার অনেকাংশেই অসফল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, হত্যা-নির্যাতন-গুমে জড়িত অপরাধীদের বিচার শুরু করা এবং একের পর এক মহলের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু হওয়া নিয়ন্ত্রণে সরকার দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে।’

শিপন আরও অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের দোসরেরা এখনো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদের কর্মকাণ্ডে সমন্বয়ের অভাবের কারণেও যথাযথভাবে সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। শিপন বলেন, এ মুহূর্তে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর ঐক্য এবং অতিদ্রুত রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

জুলাই-আগস্টের হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৬ মাসে সবকিছু বাস্তবায়িত হবে না। কিন্তু আরও অনেক কিছু হতে পারত বলে আমরা মনে করি। আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের লোকজনকে গ্রেপ্তার ও বিচার এবং গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকার ব্যাপক দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে।’

আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীলতার কারণে সরকার যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মন্তব্য করেন আরিফ সোহেল। এ ছাড়া তিনিও পুলিশ, প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় থাকা ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের’ অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।

হতাশার কারণ হিসেবে গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী বিভিন্ন হামলা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক তামজিদ হায়দার চঞ্চল। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে মন্দির, মাজার, আদিবাসীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। মব ইনজাস্টিসের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের নতুন বন্দোবস্তও দেখলাম। গণহত্যার বিচার ও সব আহতকে যথাযথ চিকিৎসা দিতে না পারা সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। এ ছাড়া গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা, সিন্ডিকেট ভেঙে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রেও সরকার সফলতা পায়নি বলে মনে করেন ছাত্র ইউনিয়নের এই নেতা।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁরা যেমন পরিবর্তন প্রত্যাশা করেছিলেন, তা দেখতে পাচ্ছেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের বিচার প্রশ্নে সরকারের ভূমিকা সবচেয়ে দুর্বল বলে মনে করেন তিনি।

শিবিরের এই নেতার ধারণা, সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণে নমনীয়তার নীতি অনুসরণের ফলেই সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের যেভাবে বড় সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া দরকার ছিল, সেগুলো নিতে পারেনি।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিলেও সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে সরকারি উদ্যোগ এ পর্যন্ত অত্যন্ত অপ্রতুল। তিনি বলেন, সরকার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পুরোপুরি বিপরীতে গিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে জনপ্রিয় থাকতে চাচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি, আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের দুর্বলতায় মানুষ ক্ষুব্ধ ও হতাশ।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভ্যুত্থানের মূল চেতনা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম। ৬ মাস বেশি সময় নয়। তবে মৌলিক চেতনাটিও বাস্তবায়নের চেষ্টা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। ফ্যাসিস্টের পতন হলেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ হয়নি।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, আন্দোলনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে চেতনা ছিল, তা সরকারের ভূমিকায় প্রতিফলিত হচ্ছে না। অভ্যুত্থানের পরই শ্রমিকের বুকে গুলি চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটকে ভাঙা যায়নি। জনজীবনের সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারের ভূমিকা সবচেয়ে দুর্বল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে: মার্কিন বিশেষ দূতকে প্রধান উপদেষ্টা

বাসস, ঢাকা  
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়েই দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, যা স্বৈরাচারী শাসনামলে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।’

আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত সার্জিও গোরের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এই আলাপে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনা, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং তরুণ রাজনৈতিক কর্মী শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়।

ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী সার্জিও গোর সাম্প্রতিক শুল্ক আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানান। আলোচনার ফলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

আলাপকালে মার্কিন বিশেষ দূত শহীদ ওসমান হাদির বৃহৎ জানাজার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শাসনের সমর্থকেরা নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে এবং তাদের পলাতক নেতা সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন। তবে তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আর প্রায় ৫০ দিন বাকি। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে চাই। এটি যেন স্মরণীয় হয়, সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’

ফোনালাপের সময় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হিন্দুত্ববাদী বিক্ষোভের মুখে শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র বন্ধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ২৪
আজ সোমবার দুপুরে হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে যান। ছবি: শিলিগুড়ি টাইমস
আজ সোমবার দুপুরে হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে যান। ছবি: শিলিগুড়ি টাইমস

পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র ভাঙচুর করেছেন হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের সদস্যরা আজ সোমবার শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের পর সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দিল্লি ও কলকাতার কয়েকটি কূটনৈতিক সূত্র বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ‘ডিইউডিজিটাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কয়েক বছর ধরে শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের ঘটনার প্রতিবাদে শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কে জমায়েত হন ভিএইচপি, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের শ তিনেক সদস্য। এরপর তাঁরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে বাংলাদেশের ভিসা অফিস ঘেরাও করেন। বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ, দীপু দাসের হত্যার বিচার ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান।

পরে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে পাঁচজনের একটি প্রতিনিধিদল ভিসা অফিসে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এবং প্রতিবাদস্বরূপ ভিসা অফিস বন্ধ রাখতে বলে।

এ সময় প্রতিনিধিদলের এক সদস্য ডিইউডিজিটালের কর্মকর্তাকে ফোন করে বলেন, ‘আপনাকে একটাই অনুরোধ, এই অফিসের তালা খুলবেন না। আপনার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিন, এই অফিসের তালা খুলবে না। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হবে, আপনি এখানে ব্যবসা করবেন, সেটা হবে না। বাংলাদেশের ভিসাসংক্রান্ত ব্যানার অথবা বোর্ড আজকের মধ্যে সরিয়ে নিন।’

প্রতিনিধিদলের ওই সদস্য পরে স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, তাঁরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে জানাবেন। বাংলাদেশে তাঁদের হিন্দু ভাইদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। এখান থেকে যেন কোনো ভারতীয়, কোনো হিন্দু বাংলাদেশে না যায়, ব্যবসা না করে, সেটা তাঁরা চান।

কলকাতা থেকে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কথা ভেবে ডিইউডিজিটাল আজ বেলা ৩টার আগেই ভিসা কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর পুনরায় ভিসা কেন্দ্র চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে শিলিগুড়িতে ওই ভিসা কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কলকাতা দপ্তরে কূটনৈতিকপত্র পাঠিয়েছে কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশন।

এদিকে আজ ভারতের দিল্লি ও আগরতলা মিশন থেকেও ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনের সামনে এ-সংক্রান্ত নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‎পুলিশ সদর দপ্তরে ৬ ডিআইজিকে রদবদল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
পুলিশ সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত
পুলিশ সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত

‎পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ ছয়টি ডিআইজি পদে রদবদল করা হয়েছে। বর্তমানে কর্মরত ও সদ্য যোগদান করা ছয়জন ডিআইজিকে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়।‎

‎আজ সোমবার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সই করা এক অফিস আদেশে এ রদবদল করা হয়েছে।‎

‎ছয়জনের মধ্যে— পুলিশ সদরদপ্তরের লজিস্টিকস বিভাগের ডিআইজি খোন্দকার নজমুল হাসানকে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে, তাপতুন নাসরীনকে ডিআইজি হেডকোয়ার্টার্সে, আশিক সাঈদকে ডিআইজি ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টে, সারোয়ার মুর্শেদ শামীমকে লজিস্টিকসে, আতিকুর রহমানকে ফিন্যান্সে এবং মোস্তাফিজুর রহমানকে ডেভেলপমেন্টের ডিআইজি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামার আশা সরকারের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বাজেট ব‍্যয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে মূল্যস্ফীতি, মজুরি প্রবৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন, আর্থিক ও বৈদেশিক খাত, চলতি হিসাব, প্রবাসী আয়, আমদানি ও ঋণপত্র নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয়, সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে ২০২৬ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

এতে আরও বলা হয়, ১২ মাসের গড় হিসাবে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বিগত জুন ২০২৩-এর পর প্রথম চলতি বছরের নভেম্বরে ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মার্চ ২০২৩-এ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ পেরিয়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়। তবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) ইতিমধ্যে চলতি বছরের জুন মাসে ৯ শতাংশের নিচে চলে আসে এবং নভেম্বরে এটি আরও কমে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ হয়। আশা করা যায়, সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে আগামী জুন মাসে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

মজুরি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয়, বিগত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে পার্থক্য ছিল অনেক বেশি, যার ফলে দেশের মানুষের প্রকৃত আয় কমে আসছিল। তবে চলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে পার্থক্য অনেকটাই কমে এসেছে। সর্বশেষ গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধি (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) যথাক্রমে ৮ দশমিক ২৯ ও ৮ দশমিক ০৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড়েছিল ৯ দশমিক ০২ ও ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। ফলে বিগত বছরগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে প্রকৃত আয়ের পরিমাণ অনেক কমলেও বর্তমান অর্থবছরে এই অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে উত্তরণ সাধিত হবে।

কৃষি উৎপাদনের বিষয়ে বলা হয়, কৃষি খাতে যথাযথ প্রণোদনা ও ব্যবস্থাপনার ফলে বিগত অর্থবছরে বোরো মৌসুমে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটায় আমন ধানেরও ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে মর্মে আশা করা যায়। উল্লেখ্য, চলতি ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমন ধানের উৎপাদন ১৬০ দশমিক ৯৫ লক্ষ টনে পৌঁছেছে। অবশিষ্ট ফসল কাটা হলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে আশা করা যায়। পাশাপাশি, আউশ ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় মোট উৎপাদন ৭ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়েছে। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন চলকের ভারসাম্যহীনতা ইতিমধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে চলে এসেছে।

চলতি ১৮ ডিসেম্বর গ্রোস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগস্ট ২০২৪ মাসে ছিল মাত্র ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়ে আসা, প্রবাসী আয়ের গতি বৃদ্ধি এবং দেশের আর্থিক খাতে সম্প্রতি সুদের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে আরও বাড়বে।

বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলতি হিসাব ঋণাত্মক ছিল এবং ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে -১৮ দশমিক ৭, -১১ দশমিক ৬, ও -৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে আর্থিক খাতে সুব্যবস্থাপনা ও অর্থ পাচার রোধের ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে এটি হয়েছে মাত্র ১৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এটি হয়েছে ৭৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে পাঁচ লাখ কর্মীর বৈদেশিক নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার এবং একই সময়ে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় হয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও উৎপাদনশীল করতে আমদানির ক্ষেত্রে আরোপিত বিধিনিষেধ অপসারণ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে আমদানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল -১ দশমিক ২ শতাংশ (ঋণাত্মক), যা বর্তমান অর্থবছরের (২০২৫-২৬) একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

মূলধনি যন্ত্রপাতির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি ছিল -৩২ দশমিক ৮ শতাংশ (ঋণাত্মক), যা বর্তমান অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্পজাত কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ, যা চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশে। আর্থিক অব্যবস্থাপনার ফলে দেশের ইমেজের নিম্নগতি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে, যার উদাহরণ ঋণপত্র খোলার হার ও ট্রেড ফাইন্যান্সিং সহজতর হওয়া।

এই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত