মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম

দেশের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি একটি। এই জেলাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারও বলা হয়। ফলে এখানে পর্যটকদের যাতায়াত আছে বেশ। যোগাযোগব্যবস্থাও দারুণ। ঈদের লম্বা ছুটিতে হাতে তিন থেকে চার দিনের সময় নিয়ে গেলে প্রকৃতির চোখজুড়ানো রূপ দেখে আসা যাবে।
ভ্রমণ পরিকল্পনা সব ঠিকঠাক। যাব অচেনা-অজানা দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে। তাই দীঘিনালার বাসিন্দা রকি বিশ্বাসের সহযোগিতা নিলাম। তিনি সবুজ সংকেত দিলে এক বৃহস্পতিবার রাতের গাড়িতে ছুটলাম খাগড়াছড়ি। ভোরে সেখানে নেমে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে উঠে বসলাম চান্দের গাড়িতে। প্রায় এক ঘণ্টা পর মহাসড়ক ছেড়ে তাবাক্ষ গুহার দিকে এগোতে থাকল গাড়ি। পাহাড়ি পথ। কিছুটা অগ্রসর হতেই গাড়ি খাদে আটকে যায়। ঠেলা-ধাক্কা, নাকে দড়ি বেঁধেও গাড়ি এগিয়ে নেওয়া গেল না। খাদে আটকা অচল গাড়ি সচল করতে গিয়ে একটা ঘণ্টা বরবাদ। অতঃপর দুই পা-ই ভরসা।
হাঁড়ি-পাতিল, বাজারসদাইসহ ট্র্যকিং শুরু। প্রখর রোদ উপেক্ষা করেই ট্র্যাকিং চলছে। মাঝেমধ্যে ছায়াঘেরা কোনো গাছতলায় জিরিয়ে নিই। চলতে চলতে চোখে ধরা দেয় নীল আসমানে পেজা তুলার মতো শুভ্র মেঘের ভেলা, কখনোবা কালো মেঘের ঘনঘটা, ঢেউ খেলানো পাহাড়, জুমের ফসল, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ অরণ্য, উঁচু-নিচু পাহাড়। নলখাগড়ার জঙ্গল। এ সবই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রাণশক্তি। এই শক্তি বেড়ে দ্বিগুণ হলো যখন একটা সময় পুরোপুরি জংলি পথে ঢুকে গেলাম। সে এক রোমাঞ্চকর ব্যাপার-স্যাপার। সব মিলিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা হাইকিং-ট্র্যাকিং করতে করতে পৌঁছে যাই বড় মাইরুং ঝরনার ওপরে। গড়িয়ে যাওয়া টলটলে পানির ঝাপটা চোখেমুখে দিতেই সব ক্লান্তি উবে যায়।
ঝরনা দেখে সবাই দড়ি বেয়ে তরতর করে নেমে গেল পানিতে। ১১০ কেজির দেহ নিয়ে প্রায় ৮৫ ডিগ্রি খাঁড়া পাহাড়ের আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ ফুট নিচে নেমে এলাম। বড় মাইরুং ঝরনার ঠান্ডা পানি মন কেড়ে নেয়। বয়ে চলা ঝিরির পরিবেশ দেখতেও বেশ নৈসর্গিক। ঝরনার পানি রিমঝিম ছন্দ তুলে অবিরাম গড়িয়ে পড়ে। এর শীতল পানি চুম্বকের মতো দেহটাকে টেনে নেওয়ায় ইচ্ছেমতো ভিজতে থাকি। সবুজের গালিচায় মোড়ানো গহিন পাহাড়ের বুক চিরে জেগে থাকা বড় মাইরুং ঝরনা মন জিতে নেয়।
ওদিকে বন্ধুদের কেউ কেউ জঙ্গল থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে আনে। কেউ বড় বড় পাথর বসিয়ে চুলা বানায়। রন্ধন কারিগরেরা আগুন জ্বালিয়ে রান্নায় ব্যতিব্যস্ত। বাঁশকোড়ল সংগ্রহ করতে যাওয়া স্থানীয় বগড়াছড়া পাড়ার তরুণীরাও আমাদের রান্নাযজ্ঞে হাত মেলায়।
অল্প কিছুদূর গেলেই কাঙ্ক্ষিত তাবাক্ষ গুহার দেখা মিলবে। কিন্তু না। এখনই যাচ্ছি না। আগে দুপুরের আহার সেরে নেওয়া হবে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই রেডি হয়ে যায় সাদা ভাত আর মুরগির তরকারি। আহ্ কী ঘ্রাণ! এই ঘ্রাণ কি তবে ঝরনার পানি দিয়ে রান্নার কারণে? তা যাই হোক, সবাই মিলে পেট পুরে খাই। খেয়েদেয়ে এবার ছুটলাম তাবাক্ষ।

অল্প কিছু দূর মাইরুং তৈসা ঝিরিপথ ধরে এগোতেই গুহামুখের দেখা মেলে। দেখেই কেমন যেন রহস্যময় লাগে। ভেতরে ঢুকলে না জানি কী হয়! কিন্তু আমাদের থামাবে কে? একে একে সবাই সরু গুহার ভেতরে ঢুকে পড়ি। একটা সময় পুরোই ঘুটঘুটে অন্ধকার আমাদের আচ্ছন্ন করে। তবু সঙ্গে নেওয়া টর্চের আলোয় আগাতে থাকি। তাবাক্ষর ভেতরটা ভয়ংকর অদ্ভুত সৌন্দর্যে ঘেরা। পাথুরে পাহাড়ের মাঝে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই তাবাক্ষ গুহাটর্চের আলোয় ওপরের দিকে তাকালে মনের মাঝে ভয়ানক শিহরণ জাগে। তাবাক্ষর পাথুরে ছাদজুড়ে যেন রহস্য খেলা করে। গুহার কিছু কিছু জায়গা মাত্র ১৭ থেকে ১৮ ইঞ্চি চওড়া। সেসব জায়গা দিয়েও কাতচিৎ হয়ে অবলীলায় ঢুকে পড়ছি।

দলের প্রত্যেকের মাথায় অদেখাকে দেখার নেশা চেপে ধরেছে। ভয়ডর সব তখন ছিল ফিকে। কথা একটিই, দেখতে হবে তাবাক্ষর শেষ পর্যন্ত। গুহার আঁকাবাঁকা পথে আগাতে আগাতে একটা সময় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সুরু পথের মাঝে থাকা একখণ্ড পাথর। হয়তো পাথরটি পথ আগলে না রাখলে আরও কিছুটা দূর যাওয়া যেত। খানিকটা সময় পাথরের চিপাচাপা দিয়ে চোখ বুলিয়ে সেখান থেকেই ফিরতি পথ ধরি। সাংবাদিক অপু দত্তর রিপোর্ট অনুযায়ী, তাবাক্ষ গুহা প্রায় ১৬০ ফুট দীর্ঘ। এর উচ্চতা ৩০ ফুট। আর প্রায় সাড়ে তিন ফুট প্রশস্ত এই গুহা।
স্থানীয়রা তাবাক্ষ গুহাটিকে দেবতার গুহা নামেও ডাকে। ত্রিপুরা ভাষায় ‘তাবাক্ষ’ অর্থ বাদুড়ের গুহা। যারা যে নামেই ডাকুক না কেন, এর সৌন্দর্য অসাধারণ। নিঃসন্দেহে ভ্রমণপিপাসুদের তাবাক্ষ গুহা রোমাঞ্চিত করবে এটা নিশ্চিত। তাবাক্ষ মিশন শেষ করার পরেও যাদের সময় থাকবে, তারা ফেরার সময়ই যেতে পারেন তুয়ারী মারাইং।

এবার আমাদের গাইড মিল্টন ত্রিপুরার নির্দেশনা মতো ছুটলাম। পথে ব্রেক দিয়ে পেটে কিছু দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। সারা দিন কী পাব আর কোথায় খাব এই ভেবে। তাই গরম ভাত, ডিম, ভর্তা আর ডাল দিয়েই সকালের নাশতা সেরে নিলাম। এরপর ছুটলাম পিচঢালা আঁকাবাঁকা পথে। যেতে যেতে নয়মাইল ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে মাহেন্দ্রে ঢুকে যায় ইট সুরকির পথ মাইতুই পাড়ার দিকে। মনের ভেতরে বেশ ভালো লাগা কাজ করতে থাকে।
চারপাশ সুনসান নীরব অরণ্য। তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে সরু পথ। আলহাজ মোস্তফা হাকিম বিদ্যানিকেতন ছাড়িয়ে সীমানাপাড়ায় পৌঁছে গাড়িতে ব্রেক পড়ল। এবার শুরু ঢেউ খেলানো পাহাড়ে হাইকিং ট্রেকিং। সঙ্গে জুমের ফসলের মন উদাস করা ঘ্রাণ। চলার পথে ছোট্ট একটি জুমঘরে খানিকটা সময় জিরিয়ে নেওয়া। মাঝেমধ্যে দূর থেকে দৈত্যকার গাছের ঘন অরণ্য দেখার মাঝে অদ্ভুত অনুভূতি দোল দেয়। এরকমভাবে প্রায় ঘণ্টাখানিক ট্রেকিং করার পর এক বিশাল খাদের কিনারায় গিয়ে থামতে হয়।

এবার চিকন চিকন সব বাঁশের ফাঁক গলে নামতে হবে। দেখতে এসেছি, দেখতে হবে। তাই লতাগুল্ম ধরে ধরে নেমে যাই। নামলাম তো ঠিকই, কিন্তু এর পরের দৃশ্য যে ভয়ংকর তা বুঝিনি। অনবরত পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় দেড় শ ফুটের ওপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি পাথর আর পাথর। ঠিক ওই জায়গাটা দিয়েই ১০ থেকে ১২ ফুট নিচে নামতে হবে। একটু এদিক-সেদিক হলেই চোখে আর কিছু দেখতে হবে না। কী আর করা, সঙ্গীদের সাহায্যে রশি বেয়ে নেমে পড়ি। নিখাদ এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। লিখে বোঝানো মুশকিল। বুঝতে হলে যেতে হবে মায়াবি প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘেরা তুয়ারী মারাইং। সেখানে প্রকৃতি যেমন মায়াবি, তেমনি চরম প্রতিশোধপরায়ণ। যাক সেসব গুরুগম্ভীর কথা। বরং বাকি অংশের ট্রেইল নিয়ে গল্প করি।
তুয়ারী মারাইং ঝরনার দেখা পেতে আর খুব বেশি পথ ছিল না। যতটুকুনই ছিল শুধু পাথর আর পাথর। দুপাশে খাঁড়া উঁচু পাহাড়, তার মাঝ দিয়েই চলছিল আমাদের হাইকিং। প্রাচীন গাছগুলোর ডালপালা এমনভাবে একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল, যে কেউ প্রথম দেখায় ভূতুরে বাড়ির প্রান্তর মনে করে ভুল করতে পারে। ভ্রমণের আনন্দ ঠিক এই জায়গাটাতেই।

যেতে যেতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঝরনার দেখা মেলে। তুয়ারী মারাইং ঝরনার রূপ দেখব, নাকি এর পরিবেশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখব স্থির করা কিছুটা অসম্ভব হয়ে যায়। প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে ঝরনার পানির ধারা পতনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখানে। মন মাতানো অনবরত ছন্দ তোলা রিমঝিম শব্দ। পানি পড়তে পড়তে ঝরনার সামনে খুব সুন্দর ক্যাসকেড তৈরি হয়েছে। সেখানে অবলীলায় সাঁতার কাটা যায়। ঝরনার ডান পাশের পাহাড়ের পাদদেশটা চমৎকার আকৃতির। যেন বিশাল একটি থালা। সম্ভবত এ কারণেই ঝরনার নামটা তুয়ারী মারাইং।
তুয়ারী অর্থ কুয়া বা কূপ আর মারাইং অর্থ থালা। অর্থাৎ কুয়ার থালা বা কুয়ার মতো থালা। এটি একটি ত্রিপুরা ভাষার শব্দ। সব মিলিয়ে তুয়ারী মাইরাং ঝরনা ও এর পাহাড়ের পাদদেশের ভৌগোলিক আকৃতিসহ এখানে যাওয়ার ট্রেইলটা অসাধারণ সুন্দর।
সতর্কতা
অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণে রশি, শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত পানিসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নিতে হবে। গাইডের পরামর্শ ছাড়া কোনো পাড়া বা পাহাড়ের পথে যাওয়া যাবে না।
যাবেন যেভাবে
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি রুটে যেতে হবে বাসে। অথবা বাস, ট্রেন বা ফ্লাইটে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে খাগড়াছড়ি। ঢাকা থেকে বাসে ভাড়া ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা। তাবাক্ষ যেতে হলে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর থেকে চান্দের গাড়িতে ১৭ কিলোমিটার দূরত্বের দীঘিনালা উপজেলার আটমাইল নামক এলাকা হয়ে বড় পাড়া বা বগড়াছড়া পাড়া পর্যন্ত যেতে হবে। এরপর প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ি পথে ট্র্যাকিং করতে হবে। অবশ্যই স্থানীয় পাড়াগুলো থেকে গাইড নিয়ে যেতে হবে। নয়তো পথ হারানোর আশঙ্কা আছে। যাঁরা খাগড়াছড়ি শহর থেকে সরাসরি তুয়ারী মারাইং যেতে চান, তাঁরা বাসস্ট্যান্ড থেকে চান্দের গাড়ি বা মাহেন্দ্র কিংবা সিএনজিতে দীঘিনালার নয়মাইল এলাকার সীমানা পাড়া পর্যন্ত যাবেন। মাইতুই বা সীমানা পাড়া থেকে স্থানীয় গাইড পাওয়া যায়।
খাওয়া ও থাকা
সকালে বেরিয়ে গেলে দিনেই ঘুরে এসে শহরে থাকা যায়। তাবাক্ষ যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও শুকনো খাবার সঙ্গে নিতে হবে।

দেশের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি একটি। এই জেলাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারও বলা হয়। ফলে এখানে পর্যটকদের যাতায়াত আছে বেশ। যোগাযোগব্যবস্থাও দারুণ। ঈদের লম্বা ছুটিতে হাতে তিন থেকে চার দিনের সময় নিয়ে গেলে প্রকৃতির চোখজুড়ানো রূপ দেখে আসা যাবে।
ভ্রমণ পরিকল্পনা সব ঠিকঠাক। যাব অচেনা-অজানা দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে। তাই দীঘিনালার বাসিন্দা রকি বিশ্বাসের সহযোগিতা নিলাম। তিনি সবুজ সংকেত দিলে এক বৃহস্পতিবার রাতের গাড়িতে ছুটলাম খাগড়াছড়ি। ভোরে সেখানে নেমে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে উঠে বসলাম চান্দের গাড়িতে। প্রায় এক ঘণ্টা পর মহাসড়ক ছেড়ে তাবাক্ষ গুহার দিকে এগোতে থাকল গাড়ি। পাহাড়ি পথ। কিছুটা অগ্রসর হতেই গাড়ি খাদে আটকে যায়। ঠেলা-ধাক্কা, নাকে দড়ি বেঁধেও গাড়ি এগিয়ে নেওয়া গেল না। খাদে আটকা অচল গাড়ি সচল করতে গিয়ে একটা ঘণ্টা বরবাদ। অতঃপর দুই পা-ই ভরসা।
হাঁড়ি-পাতিল, বাজারসদাইসহ ট্র্যকিং শুরু। প্রখর রোদ উপেক্ষা করেই ট্র্যাকিং চলছে। মাঝেমধ্যে ছায়াঘেরা কোনো গাছতলায় জিরিয়ে নিই। চলতে চলতে চোখে ধরা দেয় নীল আসমানে পেজা তুলার মতো শুভ্র মেঘের ভেলা, কখনোবা কালো মেঘের ঘনঘটা, ঢেউ খেলানো পাহাড়, জুমের ফসল, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ অরণ্য, উঁচু-নিচু পাহাড়। নলখাগড়ার জঙ্গল। এ সবই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রাণশক্তি। এই শক্তি বেড়ে দ্বিগুণ হলো যখন একটা সময় পুরোপুরি জংলি পথে ঢুকে গেলাম। সে এক রোমাঞ্চকর ব্যাপার-স্যাপার। সব মিলিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা হাইকিং-ট্র্যাকিং করতে করতে পৌঁছে যাই বড় মাইরুং ঝরনার ওপরে। গড়িয়ে যাওয়া টলটলে পানির ঝাপটা চোখেমুখে দিতেই সব ক্লান্তি উবে যায়।
ঝরনা দেখে সবাই দড়ি বেয়ে তরতর করে নেমে গেল পানিতে। ১১০ কেজির দেহ নিয়ে প্রায় ৮৫ ডিগ্রি খাঁড়া পাহাড়ের আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ ফুট নিচে নেমে এলাম। বড় মাইরুং ঝরনার ঠান্ডা পানি মন কেড়ে নেয়। বয়ে চলা ঝিরির পরিবেশ দেখতেও বেশ নৈসর্গিক। ঝরনার পানি রিমঝিম ছন্দ তুলে অবিরাম গড়িয়ে পড়ে। এর শীতল পানি চুম্বকের মতো দেহটাকে টেনে নেওয়ায় ইচ্ছেমতো ভিজতে থাকি। সবুজের গালিচায় মোড়ানো গহিন পাহাড়ের বুক চিরে জেগে থাকা বড় মাইরুং ঝরনা মন জিতে নেয়।
ওদিকে বন্ধুদের কেউ কেউ জঙ্গল থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে আনে। কেউ বড় বড় পাথর বসিয়ে চুলা বানায়। রন্ধন কারিগরেরা আগুন জ্বালিয়ে রান্নায় ব্যতিব্যস্ত। বাঁশকোড়ল সংগ্রহ করতে যাওয়া স্থানীয় বগড়াছড়া পাড়ার তরুণীরাও আমাদের রান্নাযজ্ঞে হাত মেলায়।
অল্প কিছুদূর গেলেই কাঙ্ক্ষিত তাবাক্ষ গুহার দেখা মিলবে। কিন্তু না। এখনই যাচ্ছি না। আগে দুপুরের আহার সেরে নেওয়া হবে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই রেডি হয়ে যায় সাদা ভাত আর মুরগির তরকারি। আহ্ কী ঘ্রাণ! এই ঘ্রাণ কি তবে ঝরনার পানি দিয়ে রান্নার কারণে? তা যাই হোক, সবাই মিলে পেট পুরে খাই। খেয়েদেয়ে এবার ছুটলাম তাবাক্ষ।

অল্প কিছু দূর মাইরুং তৈসা ঝিরিপথ ধরে এগোতেই গুহামুখের দেখা মেলে। দেখেই কেমন যেন রহস্যময় লাগে। ভেতরে ঢুকলে না জানি কী হয়! কিন্তু আমাদের থামাবে কে? একে একে সবাই সরু গুহার ভেতরে ঢুকে পড়ি। একটা সময় পুরোই ঘুটঘুটে অন্ধকার আমাদের আচ্ছন্ন করে। তবু সঙ্গে নেওয়া টর্চের আলোয় আগাতে থাকি। তাবাক্ষর ভেতরটা ভয়ংকর অদ্ভুত সৌন্দর্যে ঘেরা। পাথুরে পাহাড়ের মাঝে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই তাবাক্ষ গুহাটর্চের আলোয় ওপরের দিকে তাকালে মনের মাঝে ভয়ানক শিহরণ জাগে। তাবাক্ষর পাথুরে ছাদজুড়ে যেন রহস্য খেলা করে। গুহার কিছু কিছু জায়গা মাত্র ১৭ থেকে ১৮ ইঞ্চি চওড়া। সেসব জায়গা দিয়েও কাতচিৎ হয়ে অবলীলায় ঢুকে পড়ছি।

দলের প্রত্যেকের মাথায় অদেখাকে দেখার নেশা চেপে ধরেছে। ভয়ডর সব তখন ছিল ফিকে। কথা একটিই, দেখতে হবে তাবাক্ষর শেষ পর্যন্ত। গুহার আঁকাবাঁকা পথে আগাতে আগাতে একটা সময় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সুরু পথের মাঝে থাকা একখণ্ড পাথর। হয়তো পাথরটি পথ আগলে না রাখলে আরও কিছুটা দূর যাওয়া যেত। খানিকটা সময় পাথরের চিপাচাপা দিয়ে চোখ বুলিয়ে সেখান থেকেই ফিরতি পথ ধরি। সাংবাদিক অপু দত্তর রিপোর্ট অনুযায়ী, তাবাক্ষ গুহা প্রায় ১৬০ ফুট দীর্ঘ। এর উচ্চতা ৩০ ফুট। আর প্রায় সাড়ে তিন ফুট প্রশস্ত এই গুহা।
স্থানীয়রা তাবাক্ষ গুহাটিকে দেবতার গুহা নামেও ডাকে। ত্রিপুরা ভাষায় ‘তাবাক্ষ’ অর্থ বাদুড়ের গুহা। যারা যে নামেই ডাকুক না কেন, এর সৌন্দর্য অসাধারণ। নিঃসন্দেহে ভ্রমণপিপাসুদের তাবাক্ষ গুহা রোমাঞ্চিত করবে এটা নিশ্চিত। তাবাক্ষ মিশন শেষ করার পরেও যাদের সময় থাকবে, তারা ফেরার সময়ই যেতে পারেন তুয়ারী মারাইং।

এবার আমাদের গাইড মিল্টন ত্রিপুরার নির্দেশনা মতো ছুটলাম। পথে ব্রেক দিয়ে পেটে কিছু দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। সারা দিন কী পাব আর কোথায় খাব এই ভেবে। তাই গরম ভাত, ডিম, ভর্তা আর ডাল দিয়েই সকালের নাশতা সেরে নিলাম। এরপর ছুটলাম পিচঢালা আঁকাবাঁকা পথে। যেতে যেতে নয়মাইল ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে মাহেন্দ্রে ঢুকে যায় ইট সুরকির পথ মাইতুই পাড়ার দিকে। মনের ভেতরে বেশ ভালো লাগা কাজ করতে থাকে।
চারপাশ সুনসান নীরব অরণ্য। তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে সরু পথ। আলহাজ মোস্তফা হাকিম বিদ্যানিকেতন ছাড়িয়ে সীমানাপাড়ায় পৌঁছে গাড়িতে ব্রেক পড়ল। এবার শুরু ঢেউ খেলানো পাহাড়ে হাইকিং ট্রেকিং। সঙ্গে জুমের ফসলের মন উদাস করা ঘ্রাণ। চলার পথে ছোট্ট একটি জুমঘরে খানিকটা সময় জিরিয়ে নেওয়া। মাঝেমধ্যে দূর থেকে দৈত্যকার গাছের ঘন অরণ্য দেখার মাঝে অদ্ভুত অনুভূতি দোল দেয়। এরকমভাবে প্রায় ঘণ্টাখানিক ট্রেকিং করার পর এক বিশাল খাদের কিনারায় গিয়ে থামতে হয়।

এবার চিকন চিকন সব বাঁশের ফাঁক গলে নামতে হবে। দেখতে এসেছি, দেখতে হবে। তাই লতাগুল্ম ধরে ধরে নেমে যাই। নামলাম তো ঠিকই, কিন্তু এর পরের দৃশ্য যে ভয়ংকর তা বুঝিনি। অনবরত পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় দেড় শ ফুটের ওপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি পাথর আর পাথর। ঠিক ওই জায়গাটা দিয়েই ১০ থেকে ১২ ফুট নিচে নামতে হবে। একটু এদিক-সেদিক হলেই চোখে আর কিছু দেখতে হবে না। কী আর করা, সঙ্গীদের সাহায্যে রশি বেয়ে নেমে পড়ি। নিখাদ এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। লিখে বোঝানো মুশকিল। বুঝতে হলে যেতে হবে মায়াবি প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘেরা তুয়ারী মারাইং। সেখানে প্রকৃতি যেমন মায়াবি, তেমনি চরম প্রতিশোধপরায়ণ। যাক সেসব গুরুগম্ভীর কথা। বরং বাকি অংশের ট্রেইল নিয়ে গল্প করি।
তুয়ারী মারাইং ঝরনার দেখা পেতে আর খুব বেশি পথ ছিল না। যতটুকুনই ছিল শুধু পাথর আর পাথর। দুপাশে খাঁড়া উঁচু পাহাড়, তার মাঝ দিয়েই চলছিল আমাদের হাইকিং। প্রাচীন গাছগুলোর ডালপালা এমনভাবে একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল, যে কেউ প্রথম দেখায় ভূতুরে বাড়ির প্রান্তর মনে করে ভুল করতে পারে। ভ্রমণের আনন্দ ঠিক এই জায়গাটাতেই।

যেতে যেতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঝরনার দেখা মেলে। তুয়ারী মারাইং ঝরনার রূপ দেখব, নাকি এর পরিবেশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখব স্থির করা কিছুটা অসম্ভব হয়ে যায়। প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে ঝরনার পানির ধারা পতনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখানে। মন মাতানো অনবরত ছন্দ তোলা রিমঝিম শব্দ। পানি পড়তে পড়তে ঝরনার সামনে খুব সুন্দর ক্যাসকেড তৈরি হয়েছে। সেখানে অবলীলায় সাঁতার কাটা যায়। ঝরনার ডান পাশের পাহাড়ের পাদদেশটা চমৎকার আকৃতির। যেন বিশাল একটি থালা। সম্ভবত এ কারণেই ঝরনার নামটা তুয়ারী মারাইং।
তুয়ারী অর্থ কুয়া বা কূপ আর মারাইং অর্থ থালা। অর্থাৎ কুয়ার থালা বা কুয়ার মতো থালা। এটি একটি ত্রিপুরা ভাষার শব্দ। সব মিলিয়ে তুয়ারী মাইরাং ঝরনা ও এর পাহাড়ের পাদদেশের ভৌগোলিক আকৃতিসহ এখানে যাওয়ার ট্রেইলটা অসাধারণ সুন্দর।
সতর্কতা
অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণে রশি, শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত পানিসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নিতে হবে। গাইডের পরামর্শ ছাড়া কোনো পাড়া বা পাহাড়ের পথে যাওয়া যাবে না।
যাবেন যেভাবে
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি রুটে যেতে হবে বাসে। অথবা বাস, ট্রেন বা ফ্লাইটে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে খাগড়াছড়ি। ঢাকা থেকে বাসে ভাড়া ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা। তাবাক্ষ যেতে হলে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর থেকে চান্দের গাড়িতে ১৭ কিলোমিটার দূরত্বের দীঘিনালা উপজেলার আটমাইল নামক এলাকা হয়ে বড় পাড়া বা বগড়াছড়া পাড়া পর্যন্ত যেতে হবে। এরপর প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ি পথে ট্র্যাকিং করতে হবে। অবশ্যই স্থানীয় পাড়াগুলো থেকে গাইড নিয়ে যেতে হবে। নয়তো পথ হারানোর আশঙ্কা আছে। যাঁরা খাগড়াছড়ি শহর থেকে সরাসরি তুয়ারী মারাইং যেতে চান, তাঁরা বাসস্ট্যান্ড থেকে চান্দের গাড়ি বা মাহেন্দ্র কিংবা সিএনজিতে দীঘিনালার নয়মাইল এলাকার সীমানা পাড়া পর্যন্ত যাবেন। মাইতুই বা সীমানা পাড়া থেকে স্থানীয় গাইড পাওয়া যায়।
খাওয়া ও থাকা
সকালে বেরিয়ে গেলে দিনেই ঘুরে এসে শহরে থাকা যায়। তাবাক্ষ যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও শুকনো খাবার সঙ্গে নিতে হবে।
মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম

দেশের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি একটি। এই জেলাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারও বলা হয়। ফলে এখানে পর্যটকদের যাতায়াত আছে বেশ। যোগাযোগব্যবস্থাও দারুণ। ঈদের লম্বা ছুটিতে হাতে তিন থেকে চার দিনের সময় নিয়ে গেলে প্রকৃতির চোখজুড়ানো রূপ দেখে আসা যাবে।
ভ্রমণ পরিকল্পনা সব ঠিকঠাক। যাব অচেনা-অজানা দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে। তাই দীঘিনালার বাসিন্দা রকি বিশ্বাসের সহযোগিতা নিলাম। তিনি সবুজ সংকেত দিলে এক বৃহস্পতিবার রাতের গাড়িতে ছুটলাম খাগড়াছড়ি। ভোরে সেখানে নেমে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে উঠে বসলাম চান্দের গাড়িতে। প্রায় এক ঘণ্টা পর মহাসড়ক ছেড়ে তাবাক্ষ গুহার দিকে এগোতে থাকল গাড়ি। পাহাড়ি পথ। কিছুটা অগ্রসর হতেই গাড়ি খাদে আটকে যায়। ঠেলা-ধাক্কা, নাকে দড়ি বেঁধেও গাড়ি এগিয়ে নেওয়া গেল না। খাদে আটকা অচল গাড়ি সচল করতে গিয়ে একটা ঘণ্টা বরবাদ। অতঃপর দুই পা-ই ভরসা।
হাঁড়ি-পাতিল, বাজারসদাইসহ ট্র্যকিং শুরু। প্রখর রোদ উপেক্ষা করেই ট্র্যাকিং চলছে। মাঝেমধ্যে ছায়াঘেরা কোনো গাছতলায় জিরিয়ে নিই। চলতে চলতে চোখে ধরা দেয় নীল আসমানে পেজা তুলার মতো শুভ্র মেঘের ভেলা, কখনোবা কালো মেঘের ঘনঘটা, ঢেউ খেলানো পাহাড়, জুমের ফসল, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ অরণ্য, উঁচু-নিচু পাহাড়। নলখাগড়ার জঙ্গল। এ সবই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রাণশক্তি। এই শক্তি বেড়ে দ্বিগুণ হলো যখন একটা সময় পুরোপুরি জংলি পথে ঢুকে গেলাম। সে এক রোমাঞ্চকর ব্যাপার-স্যাপার। সব মিলিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা হাইকিং-ট্র্যাকিং করতে করতে পৌঁছে যাই বড় মাইরুং ঝরনার ওপরে। গড়িয়ে যাওয়া টলটলে পানির ঝাপটা চোখেমুখে দিতেই সব ক্লান্তি উবে যায়।
ঝরনা দেখে সবাই দড়ি বেয়ে তরতর করে নেমে গেল পানিতে। ১১০ কেজির দেহ নিয়ে প্রায় ৮৫ ডিগ্রি খাঁড়া পাহাড়ের আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ ফুট নিচে নেমে এলাম। বড় মাইরুং ঝরনার ঠান্ডা পানি মন কেড়ে নেয়। বয়ে চলা ঝিরির পরিবেশ দেখতেও বেশ নৈসর্গিক। ঝরনার পানি রিমঝিম ছন্দ তুলে অবিরাম গড়িয়ে পড়ে। এর শীতল পানি চুম্বকের মতো দেহটাকে টেনে নেওয়ায় ইচ্ছেমতো ভিজতে থাকি। সবুজের গালিচায় মোড়ানো গহিন পাহাড়ের বুক চিরে জেগে থাকা বড় মাইরুং ঝরনা মন জিতে নেয়।
ওদিকে বন্ধুদের কেউ কেউ জঙ্গল থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে আনে। কেউ বড় বড় পাথর বসিয়ে চুলা বানায়। রন্ধন কারিগরেরা আগুন জ্বালিয়ে রান্নায় ব্যতিব্যস্ত। বাঁশকোড়ল সংগ্রহ করতে যাওয়া স্থানীয় বগড়াছড়া পাড়ার তরুণীরাও আমাদের রান্নাযজ্ঞে হাত মেলায়।
অল্প কিছুদূর গেলেই কাঙ্ক্ষিত তাবাক্ষ গুহার দেখা মিলবে। কিন্তু না। এখনই যাচ্ছি না। আগে দুপুরের আহার সেরে নেওয়া হবে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই রেডি হয়ে যায় সাদা ভাত আর মুরগির তরকারি। আহ্ কী ঘ্রাণ! এই ঘ্রাণ কি তবে ঝরনার পানি দিয়ে রান্নার কারণে? তা যাই হোক, সবাই মিলে পেট পুরে খাই। খেয়েদেয়ে এবার ছুটলাম তাবাক্ষ।

অল্প কিছু দূর মাইরুং তৈসা ঝিরিপথ ধরে এগোতেই গুহামুখের দেখা মেলে। দেখেই কেমন যেন রহস্যময় লাগে। ভেতরে ঢুকলে না জানি কী হয়! কিন্তু আমাদের থামাবে কে? একে একে সবাই সরু গুহার ভেতরে ঢুকে পড়ি। একটা সময় পুরোই ঘুটঘুটে অন্ধকার আমাদের আচ্ছন্ন করে। তবু সঙ্গে নেওয়া টর্চের আলোয় আগাতে থাকি। তাবাক্ষর ভেতরটা ভয়ংকর অদ্ভুত সৌন্দর্যে ঘেরা। পাথুরে পাহাড়ের মাঝে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই তাবাক্ষ গুহাটর্চের আলোয় ওপরের দিকে তাকালে মনের মাঝে ভয়ানক শিহরণ জাগে। তাবাক্ষর পাথুরে ছাদজুড়ে যেন রহস্য খেলা করে। গুহার কিছু কিছু জায়গা মাত্র ১৭ থেকে ১৮ ইঞ্চি চওড়া। সেসব জায়গা দিয়েও কাতচিৎ হয়ে অবলীলায় ঢুকে পড়ছি।

দলের প্রত্যেকের মাথায় অদেখাকে দেখার নেশা চেপে ধরেছে। ভয়ডর সব তখন ছিল ফিকে। কথা একটিই, দেখতে হবে তাবাক্ষর শেষ পর্যন্ত। গুহার আঁকাবাঁকা পথে আগাতে আগাতে একটা সময় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সুরু পথের মাঝে থাকা একখণ্ড পাথর। হয়তো পাথরটি পথ আগলে না রাখলে আরও কিছুটা দূর যাওয়া যেত। খানিকটা সময় পাথরের চিপাচাপা দিয়ে চোখ বুলিয়ে সেখান থেকেই ফিরতি পথ ধরি। সাংবাদিক অপু দত্তর রিপোর্ট অনুযায়ী, তাবাক্ষ গুহা প্রায় ১৬০ ফুট দীর্ঘ। এর উচ্চতা ৩০ ফুট। আর প্রায় সাড়ে তিন ফুট প্রশস্ত এই গুহা।
স্থানীয়রা তাবাক্ষ গুহাটিকে দেবতার গুহা নামেও ডাকে। ত্রিপুরা ভাষায় ‘তাবাক্ষ’ অর্থ বাদুড়ের গুহা। যারা যে নামেই ডাকুক না কেন, এর সৌন্দর্য অসাধারণ। নিঃসন্দেহে ভ্রমণপিপাসুদের তাবাক্ষ গুহা রোমাঞ্চিত করবে এটা নিশ্চিত। তাবাক্ষ মিশন শেষ করার পরেও যাদের সময় থাকবে, তারা ফেরার সময়ই যেতে পারেন তুয়ারী মারাইং।

এবার আমাদের গাইড মিল্টন ত্রিপুরার নির্দেশনা মতো ছুটলাম। পথে ব্রেক দিয়ে পেটে কিছু দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। সারা দিন কী পাব আর কোথায় খাব এই ভেবে। তাই গরম ভাত, ডিম, ভর্তা আর ডাল দিয়েই সকালের নাশতা সেরে নিলাম। এরপর ছুটলাম পিচঢালা আঁকাবাঁকা পথে। যেতে যেতে নয়মাইল ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে মাহেন্দ্রে ঢুকে যায় ইট সুরকির পথ মাইতুই পাড়ার দিকে। মনের ভেতরে বেশ ভালো লাগা কাজ করতে থাকে।
চারপাশ সুনসান নীরব অরণ্য। তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে সরু পথ। আলহাজ মোস্তফা হাকিম বিদ্যানিকেতন ছাড়িয়ে সীমানাপাড়ায় পৌঁছে গাড়িতে ব্রেক পড়ল। এবার শুরু ঢেউ খেলানো পাহাড়ে হাইকিং ট্রেকিং। সঙ্গে জুমের ফসলের মন উদাস করা ঘ্রাণ। চলার পথে ছোট্ট একটি জুমঘরে খানিকটা সময় জিরিয়ে নেওয়া। মাঝেমধ্যে দূর থেকে দৈত্যকার গাছের ঘন অরণ্য দেখার মাঝে অদ্ভুত অনুভূতি দোল দেয়। এরকমভাবে প্রায় ঘণ্টাখানিক ট্রেকিং করার পর এক বিশাল খাদের কিনারায় গিয়ে থামতে হয়।

এবার চিকন চিকন সব বাঁশের ফাঁক গলে নামতে হবে। দেখতে এসেছি, দেখতে হবে। তাই লতাগুল্ম ধরে ধরে নেমে যাই। নামলাম তো ঠিকই, কিন্তু এর পরের দৃশ্য যে ভয়ংকর তা বুঝিনি। অনবরত পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় দেড় শ ফুটের ওপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি পাথর আর পাথর। ঠিক ওই জায়গাটা দিয়েই ১০ থেকে ১২ ফুট নিচে নামতে হবে। একটু এদিক-সেদিক হলেই চোখে আর কিছু দেখতে হবে না। কী আর করা, সঙ্গীদের সাহায্যে রশি বেয়ে নেমে পড়ি। নিখাদ এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। লিখে বোঝানো মুশকিল। বুঝতে হলে যেতে হবে মায়াবি প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘেরা তুয়ারী মারাইং। সেখানে প্রকৃতি যেমন মায়াবি, তেমনি চরম প্রতিশোধপরায়ণ। যাক সেসব গুরুগম্ভীর কথা। বরং বাকি অংশের ট্রেইল নিয়ে গল্প করি।
তুয়ারী মারাইং ঝরনার দেখা পেতে আর খুব বেশি পথ ছিল না। যতটুকুনই ছিল শুধু পাথর আর পাথর। দুপাশে খাঁড়া উঁচু পাহাড়, তার মাঝ দিয়েই চলছিল আমাদের হাইকিং। প্রাচীন গাছগুলোর ডালপালা এমনভাবে একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল, যে কেউ প্রথম দেখায় ভূতুরে বাড়ির প্রান্তর মনে করে ভুল করতে পারে। ভ্রমণের আনন্দ ঠিক এই জায়গাটাতেই।

যেতে যেতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঝরনার দেখা মেলে। তুয়ারী মারাইং ঝরনার রূপ দেখব, নাকি এর পরিবেশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখব স্থির করা কিছুটা অসম্ভব হয়ে যায়। প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে ঝরনার পানির ধারা পতনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখানে। মন মাতানো অনবরত ছন্দ তোলা রিমঝিম শব্দ। পানি পড়তে পড়তে ঝরনার সামনে খুব সুন্দর ক্যাসকেড তৈরি হয়েছে। সেখানে অবলীলায় সাঁতার কাটা যায়। ঝরনার ডান পাশের পাহাড়ের পাদদেশটা চমৎকার আকৃতির। যেন বিশাল একটি থালা। সম্ভবত এ কারণেই ঝরনার নামটা তুয়ারী মারাইং।
তুয়ারী অর্থ কুয়া বা কূপ আর মারাইং অর্থ থালা। অর্থাৎ কুয়ার থালা বা কুয়ার মতো থালা। এটি একটি ত্রিপুরা ভাষার শব্দ। সব মিলিয়ে তুয়ারী মাইরাং ঝরনা ও এর পাহাড়ের পাদদেশের ভৌগোলিক আকৃতিসহ এখানে যাওয়ার ট্রেইলটা অসাধারণ সুন্দর।
সতর্কতা
অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণে রশি, শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত পানিসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নিতে হবে। গাইডের পরামর্শ ছাড়া কোনো পাড়া বা পাহাড়ের পথে যাওয়া যাবে না।
যাবেন যেভাবে
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি রুটে যেতে হবে বাসে। অথবা বাস, ট্রেন বা ফ্লাইটে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে খাগড়াছড়ি। ঢাকা থেকে বাসে ভাড়া ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা। তাবাক্ষ যেতে হলে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর থেকে চান্দের গাড়িতে ১৭ কিলোমিটার দূরত্বের দীঘিনালা উপজেলার আটমাইল নামক এলাকা হয়ে বড় পাড়া বা বগড়াছড়া পাড়া পর্যন্ত যেতে হবে। এরপর প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ি পথে ট্র্যাকিং করতে হবে। অবশ্যই স্থানীয় পাড়াগুলো থেকে গাইড নিয়ে যেতে হবে। নয়তো পথ হারানোর আশঙ্কা আছে। যাঁরা খাগড়াছড়ি শহর থেকে সরাসরি তুয়ারী মারাইং যেতে চান, তাঁরা বাসস্ট্যান্ড থেকে চান্দের গাড়ি বা মাহেন্দ্র কিংবা সিএনজিতে দীঘিনালার নয়মাইল এলাকার সীমানা পাড়া পর্যন্ত যাবেন। মাইতুই বা সীমানা পাড়া থেকে স্থানীয় গাইড পাওয়া যায়।
খাওয়া ও থাকা
সকালে বেরিয়ে গেলে দিনেই ঘুরে এসে শহরে থাকা যায়। তাবাক্ষ যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও শুকনো খাবার সঙ্গে নিতে হবে।

দেশের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি একটি। এই জেলাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারও বলা হয়। ফলে এখানে পর্যটকদের যাতায়াত আছে বেশ। যোগাযোগব্যবস্থাও দারুণ। ঈদের লম্বা ছুটিতে হাতে তিন থেকে চার দিনের সময় নিয়ে গেলে প্রকৃতির চোখজুড়ানো রূপ দেখে আসা যাবে।
ভ্রমণ পরিকল্পনা সব ঠিকঠাক। যাব অচেনা-অজানা দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে। তাই দীঘিনালার বাসিন্দা রকি বিশ্বাসের সহযোগিতা নিলাম। তিনি সবুজ সংকেত দিলে এক বৃহস্পতিবার রাতের গাড়িতে ছুটলাম খাগড়াছড়ি। ভোরে সেখানে নেমে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে উঠে বসলাম চান্দের গাড়িতে। প্রায় এক ঘণ্টা পর মহাসড়ক ছেড়ে তাবাক্ষ গুহার দিকে এগোতে থাকল গাড়ি। পাহাড়ি পথ। কিছুটা অগ্রসর হতেই গাড়ি খাদে আটকে যায়। ঠেলা-ধাক্কা, নাকে দড়ি বেঁধেও গাড়ি এগিয়ে নেওয়া গেল না। খাদে আটকা অচল গাড়ি সচল করতে গিয়ে একটা ঘণ্টা বরবাদ। অতঃপর দুই পা-ই ভরসা।
হাঁড়ি-পাতিল, বাজারসদাইসহ ট্র্যকিং শুরু। প্রখর রোদ উপেক্ষা করেই ট্র্যাকিং চলছে। মাঝেমধ্যে ছায়াঘেরা কোনো গাছতলায় জিরিয়ে নিই। চলতে চলতে চোখে ধরা দেয় নীল আসমানে পেজা তুলার মতো শুভ্র মেঘের ভেলা, কখনোবা কালো মেঘের ঘনঘটা, ঢেউ খেলানো পাহাড়, জুমের ফসল, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ অরণ্য, উঁচু-নিচু পাহাড়। নলখাগড়ার জঙ্গল। এ সবই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রাণশক্তি। এই শক্তি বেড়ে দ্বিগুণ হলো যখন একটা সময় পুরোপুরি জংলি পথে ঢুকে গেলাম। সে এক রোমাঞ্চকর ব্যাপার-স্যাপার। সব মিলিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা হাইকিং-ট্র্যাকিং করতে করতে পৌঁছে যাই বড় মাইরুং ঝরনার ওপরে। গড়িয়ে যাওয়া টলটলে পানির ঝাপটা চোখেমুখে দিতেই সব ক্লান্তি উবে যায়।
ঝরনা দেখে সবাই দড়ি বেয়ে তরতর করে নেমে গেল পানিতে। ১১০ কেজির দেহ নিয়ে প্রায় ৮৫ ডিগ্রি খাঁড়া পাহাড়ের আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ ফুট নিচে নেমে এলাম। বড় মাইরুং ঝরনার ঠান্ডা পানি মন কেড়ে নেয়। বয়ে চলা ঝিরির পরিবেশ দেখতেও বেশ নৈসর্গিক। ঝরনার পানি রিমঝিম ছন্দ তুলে অবিরাম গড়িয়ে পড়ে। এর শীতল পানি চুম্বকের মতো দেহটাকে টেনে নেওয়ায় ইচ্ছেমতো ভিজতে থাকি। সবুজের গালিচায় মোড়ানো গহিন পাহাড়ের বুক চিরে জেগে থাকা বড় মাইরুং ঝরনা মন জিতে নেয়।
ওদিকে বন্ধুদের কেউ কেউ জঙ্গল থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে আনে। কেউ বড় বড় পাথর বসিয়ে চুলা বানায়। রন্ধন কারিগরেরা আগুন জ্বালিয়ে রান্নায় ব্যতিব্যস্ত। বাঁশকোড়ল সংগ্রহ করতে যাওয়া স্থানীয় বগড়াছড়া পাড়ার তরুণীরাও আমাদের রান্নাযজ্ঞে হাত মেলায়।
অল্প কিছুদূর গেলেই কাঙ্ক্ষিত তাবাক্ষ গুহার দেখা মিলবে। কিন্তু না। এখনই যাচ্ছি না। আগে দুপুরের আহার সেরে নেওয়া হবে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই রেডি হয়ে যায় সাদা ভাত আর মুরগির তরকারি। আহ্ কী ঘ্রাণ! এই ঘ্রাণ কি তবে ঝরনার পানি দিয়ে রান্নার কারণে? তা যাই হোক, সবাই মিলে পেট পুরে খাই। খেয়েদেয়ে এবার ছুটলাম তাবাক্ষ।

অল্প কিছু দূর মাইরুং তৈসা ঝিরিপথ ধরে এগোতেই গুহামুখের দেখা মেলে। দেখেই কেমন যেন রহস্যময় লাগে। ভেতরে ঢুকলে না জানি কী হয়! কিন্তু আমাদের থামাবে কে? একে একে সবাই সরু গুহার ভেতরে ঢুকে পড়ি। একটা সময় পুরোই ঘুটঘুটে অন্ধকার আমাদের আচ্ছন্ন করে। তবু সঙ্গে নেওয়া টর্চের আলোয় আগাতে থাকি। তাবাক্ষর ভেতরটা ভয়ংকর অদ্ভুত সৌন্দর্যে ঘেরা। পাথুরে পাহাড়ের মাঝে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই তাবাক্ষ গুহাটর্চের আলোয় ওপরের দিকে তাকালে মনের মাঝে ভয়ানক শিহরণ জাগে। তাবাক্ষর পাথুরে ছাদজুড়ে যেন রহস্য খেলা করে। গুহার কিছু কিছু জায়গা মাত্র ১৭ থেকে ১৮ ইঞ্চি চওড়া। সেসব জায়গা দিয়েও কাতচিৎ হয়ে অবলীলায় ঢুকে পড়ছি।

দলের প্রত্যেকের মাথায় অদেখাকে দেখার নেশা চেপে ধরেছে। ভয়ডর সব তখন ছিল ফিকে। কথা একটিই, দেখতে হবে তাবাক্ষর শেষ পর্যন্ত। গুহার আঁকাবাঁকা পথে আগাতে আগাতে একটা সময় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সুরু পথের মাঝে থাকা একখণ্ড পাথর। হয়তো পাথরটি পথ আগলে না রাখলে আরও কিছুটা দূর যাওয়া যেত। খানিকটা সময় পাথরের চিপাচাপা দিয়ে চোখ বুলিয়ে সেখান থেকেই ফিরতি পথ ধরি। সাংবাদিক অপু দত্তর রিপোর্ট অনুযায়ী, তাবাক্ষ গুহা প্রায় ১৬০ ফুট দীর্ঘ। এর উচ্চতা ৩০ ফুট। আর প্রায় সাড়ে তিন ফুট প্রশস্ত এই গুহা।
স্থানীয়রা তাবাক্ষ গুহাটিকে দেবতার গুহা নামেও ডাকে। ত্রিপুরা ভাষায় ‘তাবাক্ষ’ অর্থ বাদুড়ের গুহা। যারা যে নামেই ডাকুক না কেন, এর সৌন্দর্য অসাধারণ। নিঃসন্দেহে ভ্রমণপিপাসুদের তাবাক্ষ গুহা রোমাঞ্চিত করবে এটা নিশ্চিত। তাবাক্ষ মিশন শেষ করার পরেও যাদের সময় থাকবে, তারা ফেরার সময়ই যেতে পারেন তুয়ারী মারাইং।

এবার আমাদের গাইড মিল্টন ত্রিপুরার নির্দেশনা মতো ছুটলাম। পথে ব্রেক দিয়ে পেটে কিছু দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। সারা দিন কী পাব আর কোথায় খাব এই ভেবে। তাই গরম ভাত, ডিম, ভর্তা আর ডাল দিয়েই সকালের নাশতা সেরে নিলাম। এরপর ছুটলাম পিচঢালা আঁকাবাঁকা পথে। যেতে যেতে নয়মাইল ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে মাহেন্দ্রে ঢুকে যায় ইট সুরকির পথ মাইতুই পাড়ার দিকে। মনের ভেতরে বেশ ভালো লাগা কাজ করতে থাকে।
চারপাশ সুনসান নীরব অরণ্য। তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে সরু পথ। আলহাজ মোস্তফা হাকিম বিদ্যানিকেতন ছাড়িয়ে সীমানাপাড়ায় পৌঁছে গাড়িতে ব্রেক পড়ল। এবার শুরু ঢেউ খেলানো পাহাড়ে হাইকিং ট্রেকিং। সঙ্গে জুমের ফসলের মন উদাস করা ঘ্রাণ। চলার পথে ছোট্ট একটি জুমঘরে খানিকটা সময় জিরিয়ে নেওয়া। মাঝেমধ্যে দূর থেকে দৈত্যকার গাছের ঘন অরণ্য দেখার মাঝে অদ্ভুত অনুভূতি দোল দেয়। এরকমভাবে প্রায় ঘণ্টাখানিক ট্রেকিং করার পর এক বিশাল খাদের কিনারায় গিয়ে থামতে হয়।

এবার চিকন চিকন সব বাঁশের ফাঁক গলে নামতে হবে। দেখতে এসেছি, দেখতে হবে। তাই লতাগুল্ম ধরে ধরে নেমে যাই। নামলাম তো ঠিকই, কিন্তু এর পরের দৃশ্য যে ভয়ংকর তা বুঝিনি। অনবরত পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় দেড় শ ফুটের ওপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি পাথর আর পাথর। ঠিক ওই জায়গাটা দিয়েই ১০ থেকে ১২ ফুট নিচে নামতে হবে। একটু এদিক-সেদিক হলেই চোখে আর কিছু দেখতে হবে না। কী আর করা, সঙ্গীদের সাহায্যে রশি বেয়ে নেমে পড়ি। নিখাদ এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। লিখে বোঝানো মুশকিল। বুঝতে হলে যেতে হবে মায়াবি প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘেরা তুয়ারী মারাইং। সেখানে প্রকৃতি যেমন মায়াবি, তেমনি চরম প্রতিশোধপরায়ণ। যাক সেসব গুরুগম্ভীর কথা। বরং বাকি অংশের ট্রেইল নিয়ে গল্প করি।
তুয়ারী মারাইং ঝরনার দেখা পেতে আর খুব বেশি পথ ছিল না। যতটুকুনই ছিল শুধু পাথর আর পাথর। দুপাশে খাঁড়া উঁচু পাহাড়, তার মাঝ দিয়েই চলছিল আমাদের হাইকিং। প্রাচীন গাছগুলোর ডালপালা এমনভাবে একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল, যে কেউ প্রথম দেখায় ভূতুরে বাড়ির প্রান্তর মনে করে ভুল করতে পারে। ভ্রমণের আনন্দ ঠিক এই জায়গাটাতেই।

যেতে যেতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঝরনার দেখা মেলে। তুয়ারী মারাইং ঝরনার রূপ দেখব, নাকি এর পরিবেশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখব স্থির করা কিছুটা অসম্ভব হয়ে যায়। প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে ঝরনার পানির ধারা পতনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখানে। মন মাতানো অনবরত ছন্দ তোলা রিমঝিম শব্দ। পানি পড়তে পড়তে ঝরনার সামনে খুব সুন্দর ক্যাসকেড তৈরি হয়েছে। সেখানে অবলীলায় সাঁতার কাটা যায়। ঝরনার ডান পাশের পাহাড়ের পাদদেশটা চমৎকার আকৃতির। যেন বিশাল একটি থালা। সম্ভবত এ কারণেই ঝরনার নামটা তুয়ারী মারাইং।
তুয়ারী অর্থ কুয়া বা কূপ আর মারাইং অর্থ থালা। অর্থাৎ কুয়ার থালা বা কুয়ার মতো থালা। এটি একটি ত্রিপুরা ভাষার শব্দ। সব মিলিয়ে তুয়ারী মাইরাং ঝরনা ও এর পাহাড়ের পাদদেশের ভৌগোলিক আকৃতিসহ এখানে যাওয়ার ট্রেইলটা অসাধারণ সুন্দর।
সতর্কতা
অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণে রশি, শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত পানিসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নিতে হবে। গাইডের পরামর্শ ছাড়া কোনো পাড়া বা পাহাড়ের পথে যাওয়া যাবে না।
যাবেন যেভাবে
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি রুটে যেতে হবে বাসে। অথবা বাস, ট্রেন বা ফ্লাইটে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে খাগড়াছড়ি। ঢাকা থেকে বাসে ভাড়া ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা। তাবাক্ষ যেতে হলে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর থেকে চান্দের গাড়িতে ১৭ কিলোমিটার দূরত্বের দীঘিনালা উপজেলার আটমাইল নামক এলাকা হয়ে বড় পাড়া বা বগড়াছড়া পাড়া পর্যন্ত যেতে হবে। এরপর প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ি পথে ট্র্যাকিং করতে হবে। অবশ্যই স্থানীয় পাড়াগুলো থেকে গাইড নিয়ে যেতে হবে। নয়তো পথ হারানোর আশঙ্কা আছে। যাঁরা খাগড়াছড়ি শহর থেকে সরাসরি তুয়ারী মারাইং যেতে চান, তাঁরা বাসস্ট্যান্ড থেকে চান্দের গাড়ি বা মাহেন্দ্র কিংবা সিএনজিতে দীঘিনালার নয়মাইল এলাকার সীমানা পাড়া পর্যন্ত যাবেন। মাইতুই বা সীমানা পাড়া থেকে স্থানীয় গাইড পাওয়া যায়।
খাওয়া ও থাকা
সকালে বেরিয়ে গেলে দিনেই ঘুরে এসে শহরে থাকা যায়। তাবাক্ষ যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও শুকনো খাবার সঙ্গে নিতে হবে।

আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি
১৩ ঘণ্টা আগে
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প...
১৫ ঘণ্টা আগে
বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।...
১৭ ঘণ্টা আগে
পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু...
১৯ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি ঘটে। অনিচ্ছাকৃতভাবে বেশি চিনি বা ক্যালরি খেয়ে ফেলার পরদিন সকালে আমাদের মনে দানা বাঁধে অপরাধ বোধ, আর শুরু হয় নিজেকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার পালা। আমরা ভাবি, আজ খাবার না খেয়ে বা খুব কম খেয়ে আগের রাতের ঘাটতি পুষিয়ে নেব। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, এই অভ্যাসটিই আমাদের স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
অতিরিক্ত খাবার বা চিনি খেয়ে ফেলাটা জীবনের এক অতি স্বাভাবিক অংশ। এর জন্য নিজেকে শাস্তি দেওয়া বা ক্লিনসিং করার প্রয়োজন নেই। বরং প্রচুর পানি পান, হালকা ব্যায়াম, ভারসাম্যপূর্ণ খাবার এবং নিজের প্রতি মমতা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাই সুস্থ থাকার আসল চাবিকাঠি। মনে রাখবেন, আপনার সুস্বাস্থ্য গড়ে ওঠে আপনার বড় ক্যানভাসের জীবনধারা দিয়ে, একটি মাত্র রাত দিয়ে নয়। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ডায়েটিশিয়ান ভিক্টোরিয়া হুইটিংটন এবং সাম্প্রতিক পুষ্টি গবেষণার আলোকে জেনে নিন, একদিনের অনিয়ম সামলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার বিজ্ঞানসম্মত উপায়।

১. নিজেকে বঞ্চিত করবেন না
বেশি খেয়ে ফেলার পরদিন না খেয়ে থাকা বা খুব অল্প খাওয়ার যে প্রবণতা, তা আসলে উল্টো ফল আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করলে খাবারের প্রতি আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়, যা পরবর্তী সময়ে আবার অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার দিকে ঠেলে দেয়। তাই অতিরিক্ত চিনি খেয়ে ফেলার পরদিন খাবার কমিয়ে দেওয়ার বদলে প্রোটিন, ফাইবার এবং ভালো ফ্যাটের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসে ফিরে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ।
২. সকালের নাশতা হোক প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ
অনিয়মের পরদিন সকালের শুরুটা হওয়া চাই জুতসই। গবেষণা বলছে, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত সকালের নাশতা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত ফাইবার যোগ করলে তা রক্তে গ্লুকোজের আকস্মিক বৃদ্ধি রোধ করে এবং সারা দিন আপনাকে তৃপ্ত রাখে। খাবার বাদ দিলে শরীরে ‘ঘ্রেলিন’ বা ক্ষুধা উদ্দীপক হরমোন বেড়ে যায়, যা দিনশেষে আপনাকে আবারও বেশি খেতে প্ররোচিত করতে পারে।
৩. শরীরকে সচল রাখুন এবং পানি পান করুন
অতিরিক্ত খাওয়ার পর শরীরে যে অলসতা বা ভারী ভাব কাজ করে, তার পেছনে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার বড় ভূমিকা থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে হজমপ্রক্রিয়া সহজ হয়। পাশাপাশি হালকা শারীরিক পরিশ্রম বা অল্প হাঁটাহাঁটি করা জরুরি। এতে আমাদের পেশিগুলো রক্তে জমে থাকা শর্করাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৪. ‘পারফেকশন’ নয়, গুরুত্ব দিন সামগ্রিক অভ্যাসে
পুষ্টিবিদ হুইটিংটন জোর দিয়ে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য মূলত আপনার নিয়মিত অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে, কোনো একদিনের অনিয়মের ওপর নয়। নার্সেস হেলথ স্টাডির মতো বড় বড় গবেষণাও বলছে, কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনের খাদ্যাভ্যাস নয়; বরং আপনার দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসের ধরনই নির্ধারণ করে আপনার দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি। তাই একদিন বেশি খেয়ে ফেললে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্য মানে নিখুঁত হওয়া নয়; বরং একটি সুস্থ ধারায় থাকা।
৫. নিজের প্রতি সদয় হোন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো, নিজেকে ক্ষমা করা। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের প্রতি সদয় থাকেন, তাঁরা আবেগতাড়িত হয়ে বেশি খাওয়ার অভ্যাসটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন। নিজেকে দোষারোপ না করে বরং বোঝার চেষ্টা করুন, সে মুহূর্তে আপনার কিসের প্রয়োজন ছিল। সমালোচনা নয়, কৌতূহলী মন নিয়ে নিজের আচরণ বিশ্লেষণ করলে আপনি ভবিষ্যতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
সূত্র: ডেইলি মেইল

আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি ঘটে। অনিচ্ছাকৃতভাবে বেশি চিনি বা ক্যালরি খেয়ে ফেলার পরদিন সকালে আমাদের মনে দানা বাঁধে অপরাধ বোধ, আর শুরু হয় নিজেকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার পালা। আমরা ভাবি, আজ খাবার না খেয়ে বা খুব কম খেয়ে আগের রাতের ঘাটতি পুষিয়ে নেব। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, এই অভ্যাসটিই আমাদের স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
অতিরিক্ত খাবার বা চিনি খেয়ে ফেলাটা জীবনের এক অতি স্বাভাবিক অংশ। এর জন্য নিজেকে শাস্তি দেওয়া বা ক্লিনসিং করার প্রয়োজন নেই। বরং প্রচুর পানি পান, হালকা ব্যায়াম, ভারসাম্যপূর্ণ খাবার এবং নিজের প্রতি মমতা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাই সুস্থ থাকার আসল চাবিকাঠি। মনে রাখবেন, আপনার সুস্বাস্থ্য গড়ে ওঠে আপনার বড় ক্যানভাসের জীবনধারা দিয়ে, একটি মাত্র রাত দিয়ে নয়। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ডায়েটিশিয়ান ভিক্টোরিয়া হুইটিংটন এবং সাম্প্রতিক পুষ্টি গবেষণার আলোকে জেনে নিন, একদিনের অনিয়ম সামলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার বিজ্ঞানসম্মত উপায়।

১. নিজেকে বঞ্চিত করবেন না
বেশি খেয়ে ফেলার পরদিন না খেয়ে থাকা বা খুব অল্প খাওয়ার যে প্রবণতা, তা আসলে উল্টো ফল আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করলে খাবারের প্রতি আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়, যা পরবর্তী সময়ে আবার অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার দিকে ঠেলে দেয়। তাই অতিরিক্ত চিনি খেয়ে ফেলার পরদিন খাবার কমিয়ে দেওয়ার বদলে প্রোটিন, ফাইবার এবং ভালো ফ্যাটের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসে ফিরে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ।
২. সকালের নাশতা হোক প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ
অনিয়মের পরদিন সকালের শুরুটা হওয়া চাই জুতসই। গবেষণা বলছে, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত সকালের নাশতা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত ফাইবার যোগ করলে তা রক্তে গ্লুকোজের আকস্মিক বৃদ্ধি রোধ করে এবং সারা দিন আপনাকে তৃপ্ত রাখে। খাবার বাদ দিলে শরীরে ‘ঘ্রেলিন’ বা ক্ষুধা উদ্দীপক হরমোন বেড়ে যায়, যা দিনশেষে আপনাকে আবারও বেশি খেতে প্ররোচিত করতে পারে।
৩. শরীরকে সচল রাখুন এবং পানি পান করুন
অতিরিক্ত খাওয়ার পর শরীরে যে অলসতা বা ভারী ভাব কাজ করে, তার পেছনে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার বড় ভূমিকা থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে হজমপ্রক্রিয়া সহজ হয়। পাশাপাশি হালকা শারীরিক পরিশ্রম বা অল্প হাঁটাহাঁটি করা জরুরি। এতে আমাদের পেশিগুলো রক্তে জমে থাকা শর্করাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৪. ‘পারফেকশন’ নয়, গুরুত্ব দিন সামগ্রিক অভ্যাসে
পুষ্টিবিদ হুইটিংটন জোর দিয়ে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য মূলত আপনার নিয়মিত অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে, কোনো একদিনের অনিয়মের ওপর নয়। নার্সেস হেলথ স্টাডির মতো বড় বড় গবেষণাও বলছে, কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনের খাদ্যাভ্যাস নয়; বরং আপনার দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসের ধরনই নির্ধারণ করে আপনার দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি। তাই একদিন বেশি খেয়ে ফেললে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্য মানে নিখুঁত হওয়া নয়; বরং একটি সুস্থ ধারায় থাকা।
৫. নিজের প্রতি সদয় হোন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো, নিজেকে ক্ষমা করা। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের প্রতি সদয় থাকেন, তাঁরা আবেগতাড়িত হয়ে বেশি খাওয়ার অভ্যাসটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন। নিজেকে দোষারোপ না করে বরং বোঝার চেষ্টা করুন, সে মুহূর্তে আপনার কিসের প্রয়োজন ছিল। সমালোচনা নয়, কৌতূহলী মন নিয়ে নিজের আচরণ বিশ্লেষণ করলে আপনি ভবিষ্যতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
সূত্র: ডেইলি মেইল

দেশের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি অন্যতম। এই জেলাটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারও বলে লোকজন। ফলে এখানে পর্যটকদের যাতায়াত আছে বেশ। যোগাযোগ ব্যবস্থাও দারুণ। ঈদের লম্বা ছুটিতে হাতে তিন থেকে চার দিনের সময় নিয়ে গেলে প্রকৃতির চোখ জুড়ানো রূপ দেখে আসা যাবে।
৩১ মার্চ ২০২৫
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প...
১৫ ঘণ্টা আগে
বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।...
১৭ ঘণ্টা আগে
পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু...
১৯ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

‘চাকরি ছেড়ে কৃষিতে লাখপতি’ কিংবা ‘যুবকের ভাগ্য ফিরল কৃষিতে’। এমন সংবাদ আমরা প্রায়ই দেখি সংবাদমাধ্যমে। এই যুবকেরা কখনো কখনো নীরবে বদলে দেয় পুরো জনপদের শত শত কৃষকের জীবন। এসব ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশেই ঘটে, তা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘটে থাকে। নেপালেও এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে। তা প্রকাশিত হয়েছে দেশটির জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’-এ।
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প। সেখানে এই সোনালি-হলুদ ফলটি বদলে দিয়েছে শত শত কৃষকের ভাগ্য এবং পুরো গ্রামের জীবনযাত্রা।
ঘরের আঙিনায় চকচকে সাফল্য
এই পরিবর্তনের উজ্জ্বল প্রতীক তরুণ কৃষক রেবতি ভট্টরাই। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভাগ্যের অন্বেষণে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। সেখানে প্রায় এক দশক হাড়ভাঙা খাটুনির পর কিছু অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পৈতৃক জমিতে প্রচলিত দানাদার শস্যের চাষ বাদ দিয়ে তৈরি করেন কমলার বাগান। আজ তাঁর ৫৩৫টি কমলাগাছ ফলে ভরপুর। গত বছর ১৭০ কুইন্টাল কমলা বিক্রি করে তিনি ৯ লাখ রুপি আয় করেছেন। এবার ফলন আরও ভালো হওয়ায় ২০০ কুইন্টাল উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। রেবতি বলেন, ‘বিদেশের চাকরির চেয়ে কমলার চাষ আমার জীবনকে বেশি বদলে দিয়েছে। এখন আর আমাকে বাজারের পেছনে ছুটতে হয় না। ফল পাকার আগেই ব্যবসায়ীরা এসে বাগান বুক করে নেন।’ কমলার আয়েই তিনি সিমলেতে আড়াই তলা একটি পাকা বাড়ি তুলেছেন।
পেনশনের চেয়েও বেশি আয়
শুধু তরুণেরাই নন, এ বিপ্লবে শামিল হয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও। তাঁদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত কৃষি টেকনিশিয়ান দধি রাম গৌতম। পাঁচ বছর ধরে তিনি বাণিজ্যিক কমলা চাষ করছেন। তাঁর ২৫০টি গাছের কমলা থেকে বছরে যে আয় হয়, তা তাঁর সরকারি পেনশনের চেয়ে তিন গুণ বেশি। বুটওয়াল, পাল্পা ও পোখারা থেকে ব্যবসায়ীরা গাড়ি নিয়ে তাঁর বাড়িতে এসে নগদ টাকায় কমলা কিনে নিয়ে যান।
কমলা চাষে এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও পিছিয়ে নেই। ওয়ার্ড চেয়ারম্যান চন্দ্রকান্ত পাউডেল তাঁর জনসেবামূলক কাজের পাশাপাশি ৬০০টি কমলাগাছের বিশাল বাগান সামলাচ্ছেন। এ বছর শিলাবৃষ্টি বা পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ফলন হয়েছে বাম্পার, যা আরও বেশি লাভের আশা জোগাচ্ছে।
কমলার এক নতুন হাব
পাণিনি-১-এর সলেরি টোল গ্রামে এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কমলার বাগান রয়েছে। গ্রামের কৃষকেরা নিজেদের সংগঠিত করতে গঠন করেছেন পাখাপানি কৃষক দল। ৪৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০টিই এখন এই দলের সদস্য। গ্রামের বড় চাষি টুক বাহাদুর দারলামি গত বছর ৩ দশমিক ৫ লাখ রুপি আয় করেছেন কমলা চাষ করে। তিনি জানিয়েছেন, পুরো সলেরি গ্রাম এখন কমলার হাবে পরিণত হয়েছে। ফলে তাঁদের জমিগুলো আর অনাবাদি থাকছে না এবং গ্রাম থেকে মানুষের শহরে চলে যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে।
অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক প্রভাব
কৃষকদের এ সাফল্যে হাত বাড়িয়েছে অ্যাগ্রিকালচার নলেজ সেন্টার। সেচের সুবিধার জন্য তারা বড় বড় পানির ট্যাংক তৈরি করে দিয়েছে গ্রামটিতে। কৃষি টেকনিশিয়ান শারদা আচার্যের মতে, সিমলে গ্রামের এই ব্যাপক সাফল্য দেখে প্রতিবেশী গ্রামগুলোও এখন বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষে ঝুঁকছে। শুধু সিমলে গ্রাম থেকেই বছরে ৩ কোটি রুপিরও বেশি কমলা বিক্রি হয়। গত বছর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কমলার দাম ছিল ৬০ রুপি। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ রুপিতে। কমলার আয়ে কৃষকেরা সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিচ্ছেন, ঘরবাড়ি সংস্কার করছেন এবং গবাদিপশুর আধুনিক খামার গড়ে তুলছেন।
আরঘাখাঁচির এই জনপদে কমলা এখন আর কেবল একটি ফল নয়—স্বনির্ভরতার প্রতীক। যখন পুরো গ্রাম কমলার হলুদ রঙে ঝলমল করে ওঠে, তখন তা কেবল ঋতু পরিবর্তনের জানান দেয় না; বরং এক সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের গল্প শোনায়।
সূত্র: কাঠমান্ডু পোস্ট

‘চাকরি ছেড়ে কৃষিতে লাখপতি’ কিংবা ‘যুবকের ভাগ্য ফিরল কৃষিতে’। এমন সংবাদ আমরা প্রায়ই দেখি সংবাদমাধ্যমে। এই যুবকেরা কখনো কখনো নীরবে বদলে দেয় পুরো জনপদের শত শত কৃষকের জীবন। এসব ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশেই ঘটে, তা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘটে থাকে। নেপালেও এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে। তা প্রকাশিত হয়েছে দেশটির জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’-এ।
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প। সেখানে এই সোনালি-হলুদ ফলটি বদলে দিয়েছে শত শত কৃষকের ভাগ্য এবং পুরো গ্রামের জীবনযাত্রা।
ঘরের আঙিনায় চকচকে সাফল্য
এই পরিবর্তনের উজ্জ্বল প্রতীক তরুণ কৃষক রেবতি ভট্টরাই। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভাগ্যের অন্বেষণে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। সেখানে প্রায় এক দশক হাড়ভাঙা খাটুনির পর কিছু অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পৈতৃক জমিতে প্রচলিত দানাদার শস্যের চাষ বাদ দিয়ে তৈরি করেন কমলার বাগান। আজ তাঁর ৫৩৫টি কমলাগাছ ফলে ভরপুর। গত বছর ১৭০ কুইন্টাল কমলা বিক্রি করে তিনি ৯ লাখ রুপি আয় করেছেন। এবার ফলন আরও ভালো হওয়ায় ২০০ কুইন্টাল উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। রেবতি বলেন, ‘বিদেশের চাকরির চেয়ে কমলার চাষ আমার জীবনকে বেশি বদলে দিয়েছে। এখন আর আমাকে বাজারের পেছনে ছুটতে হয় না। ফল পাকার আগেই ব্যবসায়ীরা এসে বাগান বুক করে নেন।’ কমলার আয়েই তিনি সিমলেতে আড়াই তলা একটি পাকা বাড়ি তুলেছেন।
পেনশনের চেয়েও বেশি আয়
শুধু তরুণেরাই নন, এ বিপ্লবে শামিল হয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও। তাঁদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত কৃষি টেকনিশিয়ান দধি রাম গৌতম। পাঁচ বছর ধরে তিনি বাণিজ্যিক কমলা চাষ করছেন। তাঁর ২৫০টি গাছের কমলা থেকে বছরে যে আয় হয়, তা তাঁর সরকারি পেনশনের চেয়ে তিন গুণ বেশি। বুটওয়াল, পাল্পা ও পোখারা থেকে ব্যবসায়ীরা গাড়ি নিয়ে তাঁর বাড়িতে এসে নগদ টাকায় কমলা কিনে নিয়ে যান।
কমলা চাষে এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও পিছিয়ে নেই। ওয়ার্ড চেয়ারম্যান চন্দ্রকান্ত পাউডেল তাঁর জনসেবামূলক কাজের পাশাপাশি ৬০০টি কমলাগাছের বিশাল বাগান সামলাচ্ছেন। এ বছর শিলাবৃষ্টি বা পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ফলন হয়েছে বাম্পার, যা আরও বেশি লাভের আশা জোগাচ্ছে।
কমলার এক নতুন হাব
পাণিনি-১-এর সলেরি টোল গ্রামে এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কমলার বাগান রয়েছে। গ্রামের কৃষকেরা নিজেদের সংগঠিত করতে গঠন করেছেন পাখাপানি কৃষক দল। ৪৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০টিই এখন এই দলের সদস্য। গ্রামের বড় চাষি টুক বাহাদুর দারলামি গত বছর ৩ দশমিক ৫ লাখ রুপি আয় করেছেন কমলা চাষ করে। তিনি জানিয়েছেন, পুরো সলেরি গ্রাম এখন কমলার হাবে পরিণত হয়েছে। ফলে তাঁদের জমিগুলো আর অনাবাদি থাকছে না এবং গ্রাম থেকে মানুষের শহরে চলে যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে।
অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক প্রভাব
কৃষকদের এ সাফল্যে হাত বাড়িয়েছে অ্যাগ্রিকালচার নলেজ সেন্টার। সেচের সুবিধার জন্য তারা বড় বড় পানির ট্যাংক তৈরি করে দিয়েছে গ্রামটিতে। কৃষি টেকনিশিয়ান শারদা আচার্যের মতে, সিমলে গ্রামের এই ব্যাপক সাফল্য দেখে প্রতিবেশী গ্রামগুলোও এখন বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষে ঝুঁকছে। শুধু সিমলে গ্রাম থেকেই বছরে ৩ কোটি রুপিরও বেশি কমলা বিক্রি হয়। গত বছর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কমলার দাম ছিল ৬০ রুপি। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ রুপিতে। কমলার আয়ে কৃষকেরা সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিচ্ছেন, ঘরবাড়ি সংস্কার করছেন এবং গবাদিপশুর আধুনিক খামার গড়ে তুলছেন।
আরঘাখাঁচির এই জনপদে কমলা এখন আর কেবল একটি ফল নয়—স্বনির্ভরতার প্রতীক। যখন পুরো গ্রাম কমলার হলুদ রঙে ঝলমল করে ওঠে, তখন তা কেবল ঋতু পরিবর্তনের জানান দেয় না; বরং এক সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের গল্প শোনায়।
সূত্র: কাঠমান্ডু পোস্ট

দেশের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি অন্যতম। এই জেলাটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারও বলে লোকজন। ফলে এখানে পর্যটকদের যাতায়াত আছে বেশ। যোগাযোগ ব্যবস্থাও দারুণ। ঈদের লম্বা ছুটিতে হাতে তিন থেকে চার দিনের সময় নিয়ে গেলে প্রকৃতির চোখ জুড়ানো রূপ দেখে আসা যাবে।
৩১ মার্চ ২০২৫
আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি
১৩ ঘণ্টা আগে
বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।...
১৭ ঘণ্টা আগে
পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু...
১৯ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

রূপচর্চায় বেসন খুব পরিচিত একটি উপকরণ। একসময় ত্বক পরিষ্কার করতে সাবানের পরিবর্তে বেসন ব্যবহার করা হতো। শীতে ত্বকের নির্জীব ভাব নিয়ে যাঁরা চিন্তায় রয়েছেন, তাঁরা সহজলভ্য এই উপকরণটি রোজকার ত্বকের যত্নে ব্যবহার করে নানা উপকার পেতে পারেন।
এ কথা তো সবাই জানেন, শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা খুব জরুরি। পাশাপাশি ত্বক দূষণমুক্ত রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।
বেসন ও এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেলের প্যাক

পুরো শরীরের ত্বকে মাখার জন্য বেসন নিন। এতে কয়েক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ দুধ মেশাতে পারেন। প্যাক তৈরিতে যতটুকু পানি প্রয়োজন, তা যোগ করুন। এই প্যাক ত্বকে লাগিয়ে রাখুন আধা শুকনো হওয়া পর্যন্ত। এরপর আলতো করে কুসুম গরম পানিতে পুরো শরীর ধুয়ে নিন। নারকেল তেল ও দুধ রুক্ষ ত্বকে গভীর থেকে পুষ্টি জোগায় ও ময়শ্চারাইজ করে। পাশাপাশি এ প্যাক ত্বকের ডিপ ক্লিনজিংয়েও সহায়তা করে। যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, তাদের জন্য এ প্যাক খুবই ভালো কাজ করে।
বেসন, টক দই ও হলুদের প্যাক
এ সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। পুরো শরীরে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে শরীর আলতো ঘষে প্যাক দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। টক দই ত্বকের আর্দ্রতা ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবেও দুর্দান্ত কাজ করে। অন্যদিকে হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, দাগছোপ কমায় ও ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
বেসন ও গাঁদা ফুল বাটার প্যাক
বেসনের সঙ্গে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল বাটা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এই প্যাক মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে ও নরম করতে এ প্যাক ভালো কাজ করে। যাঁদের ত্বকে ব্রণ ও দাগ রয়েছে তাঁরা প্রতি সপ্তাহে একবার করে এই প্যাক মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
ডিপ ক্লিনজিং প্যাক
যাঁরা সকালে মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে ফেসওয়াশ ব্যবহার এড়াতে চান তাঁরা ১ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ দুধ, সামান্য হলুদ এবং ৩ ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন প্রতিদিন সকালে। এতে ত্বক গভীরভাবে পরিষ্কার হবে ও ধীরে ধীরে জেল্লাদার হয়ে উঠবে।
বেসন, মধু ও গোলাপজল
বেসন, মধু, গোলাপজল ও অল্প পানি মিশিয়ে মিহি পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকাতে শুরু করলে হালকা করে ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। মধু প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার। এটি ত্বক নরম রাখে। গোলাপজল ত্বক সতেজ করতে সাহায্য করে। মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই একটি ভালো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
মেছতার দাগ হালকা করতে
বেসনের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মেছতার ওপর লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এক দিন অন্তর এ প্যাক ব্যবহার করুন। দাগ কমে এলে ধীরে ধীরে প্যাক ব্যবহারও কমিয়ে আনুন। যেমন সপ্তাহে একবার, তারপর ১৫ দিনে একবার, তারপর মাসে একবার। এভাবে এই প্যাক ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে দাগ একেবারে হালকা হয়ে আসবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য

রূপচর্চায় বেসন খুব পরিচিত একটি উপকরণ। একসময় ত্বক পরিষ্কার করতে সাবানের পরিবর্তে বেসন ব্যবহার করা হতো। শীতে ত্বকের নির্জীব ভাব নিয়ে যাঁরা চিন্তায় রয়েছেন, তাঁরা সহজলভ্য এই উপকরণটি রোজকার ত্বকের যত্নে ব্যবহার করে নানা উপকার পেতে পারেন।
এ কথা তো সবাই জানেন, শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা খুব জরুরি। পাশাপাশি ত্বক দূষণমুক্ত রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।
বেসন ও এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেলের প্যাক

পুরো শরীরের ত্বকে মাখার জন্য বেসন নিন। এতে কয়েক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ দুধ মেশাতে পারেন। প্যাক তৈরিতে যতটুকু পানি প্রয়োজন, তা যোগ করুন। এই প্যাক ত্বকে লাগিয়ে রাখুন আধা শুকনো হওয়া পর্যন্ত। এরপর আলতো করে কুসুম গরম পানিতে পুরো শরীর ধুয়ে নিন। নারকেল তেল ও দুধ রুক্ষ ত্বকে গভীর থেকে পুষ্টি জোগায় ও ময়শ্চারাইজ করে। পাশাপাশি এ প্যাক ত্বকের ডিপ ক্লিনজিংয়েও সহায়তা করে। যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, তাদের জন্য এ প্যাক খুবই ভালো কাজ করে।
বেসন, টক দই ও হলুদের প্যাক
এ সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। পুরো শরীরে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে শরীর আলতো ঘষে প্যাক দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। টক দই ত্বকের আর্দ্রতা ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবেও দুর্দান্ত কাজ করে। অন্যদিকে হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, দাগছোপ কমায় ও ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
বেসন ও গাঁদা ফুল বাটার প্যাক
বেসনের সঙ্গে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল বাটা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এই প্যাক মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে ও নরম করতে এ প্যাক ভালো কাজ করে। যাঁদের ত্বকে ব্রণ ও দাগ রয়েছে তাঁরা প্রতি সপ্তাহে একবার করে এই প্যাক মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
ডিপ ক্লিনজিং প্যাক
যাঁরা সকালে মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে ফেসওয়াশ ব্যবহার এড়াতে চান তাঁরা ১ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ দুধ, সামান্য হলুদ এবং ৩ ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন প্রতিদিন সকালে। এতে ত্বক গভীরভাবে পরিষ্কার হবে ও ধীরে ধীরে জেল্লাদার হয়ে উঠবে।
বেসন, মধু ও গোলাপজল
বেসন, মধু, গোলাপজল ও অল্প পানি মিশিয়ে মিহি পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকাতে শুরু করলে হালকা করে ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। মধু প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার। এটি ত্বক নরম রাখে। গোলাপজল ত্বক সতেজ করতে সাহায্য করে। মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই একটি ভালো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
মেছতার দাগ হালকা করতে
বেসনের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মেছতার ওপর লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এক দিন অন্তর এ প্যাক ব্যবহার করুন। দাগ কমে এলে ধীরে ধীরে প্যাক ব্যবহারও কমিয়ে আনুন। যেমন সপ্তাহে একবার, তারপর ১৫ দিনে একবার, তারপর মাসে একবার। এভাবে এই প্যাক ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে দাগ একেবারে হালকা হয়ে আসবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য

দেশের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি অন্যতম। এই জেলাটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারও বলে লোকজন। ফলে এখানে পর্যটকদের যাতায়াত আছে বেশ। যোগাযোগ ব্যবস্থাও দারুণ। ঈদের লম্বা ছুটিতে হাতে তিন থেকে চার দিনের সময় নিয়ে গেলে প্রকৃতির চোখ জুড়ানো রূপ দেখে আসা যাবে।
৩১ মার্চ ২০২৫
আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি
১৩ ঘণ্টা আগে
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প...
১৫ ঘণ্টা আগে
পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু...
১৯ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু সুন্দর করে সেলিব্রেট করতে পারেন।
আলো ও উষ্ণতার আমেজ
শীতকাল মানেই ঠান্ডা আর কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। সন্ধ্যার দিকে ঘরে কিছু ওয়ার্ম লাইট ও মোমবাতি জ্বালিয়ে দিন। রাতে ছাদে বা উঠানে আগুন জ্বালিয়ে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব মিলে এর চারপাশে বসুন। আগুনের উষ্ণতা একটা শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে। এটি শুধু যে অন্ধকার দূর করে, তা-ই নয়; বরং শীতে একটা সুন্দর, স্নিগ্ধ ও উষ্ণ ভাব এনে দেয়। আগুনের তাপের সঙ্গে এই আয়োজনে থাকে সম্পর্কের উত্তাপও।

পুরোনো জিনিস সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন
শীতকালে ঘর পরিষ্কার করে একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন। নেতিবাচকতা দূর করতে ঘর পরিষ্কার করে ধূপ বা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। আবার শীতের আমেজ আনতে ঘরে দারুচিনি, এলাচি বা লবঙ্গ জাতীয় মসলার সুগন্ধ ব্যবহার করুন। চুলায় পানি গরম করে তাতে এসব দিয়ে ফুটতে দিন, ধীরে ধীরে পুরো বাসায় সুবাস ছড়িয়ে পড়বে। ঘর পরিষ্কার থাকলে মনও শান্ত থাকে আর নতুন দিনগুলোকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
একটা সালতামামি হয়ে যাক
এ সময়টিতে নিজেকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। এ বছর কী কী ভালো-খারাপ হলো বা কী কী শিখলেন, তা নিয়ে একটু ভাবুন। একটি ডায়েরিতে আপনার চিন্তাগুলো লিখে রাখতে পারেন। যেসব অভ্যাস এখন আর আপনার কাজে আসছে না, সেগুলো বাদ দিয়ে নিজের ভালো হয়—এমন কিছু ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলুন। নতুন বছরে কী কী করতে চান, সে লক্ষ্য ঠিক করে লিখে রাখুন।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
জীবনে ছোট-বড় যা কিছু ভালো আছে, সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। একটি তালিকা তৈরি করুন, যেখানে আপনার অর্জন, প্রিয় মানুষ, ব্যক্তিগত ভালো লাগা ও সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা লিখে রাখবেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মনে শান্তি পাবেন এবং অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাবেন।
নিজের যত্ন নিন
শীতকাল হলো নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার সময়। প্রতিদিন হালকা ইয়োগা, হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করে শরীর সচল রাখুন। নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন এবং নিজেকে কিছু উপহার দিন। নিজের জন্য সময় বের করে নিজের অস্তিত্ব সেলিব্রেট করার জন্য শীতকাল হলো উপযুক্ত সময়।

প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন
শীতের সকাল বা বিকেলে প্রকৃতির কাছে থাকার চেষ্টা করুন। শিশিরভেজা ঘাসে খালি পায়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন এবং শীতের নরম রোদ গায়ে মাখুন, যা আপনার মন ভালো করার পাশাপাশি শরীরে শক্তি জোগাবে। শীতকালীন ফুলগাছ বারান্দায় রাখুন ও মাটির তৈরি জিনিস দিয়ে ঘর সাজান। দেখবেন এই ছোট কাজগুলো ঘরে একটা স্নিগ্ধ ও সতেজ ভাব আনবে।
প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান
শীতকাল মানেই পিঠাপুলির উৎসব। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পিঠার আয়োজন করুন। একসঙ্গে গল্প, হাসি আর খাবার সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করবে এবং সময় আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলবে।
এবার ‘না’ বলতে শিখুন
শীতকাল মানেই বিভিন্ন রকম দাওয়াত। সেগুলোকে পাশে রেখে সামাজিক বা অন্যান্য কাজের চাপ এড়িয়ে চলুন। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে বা কোনো কাজ করতে যদি একেবারেই ইচ্ছা না করে তবে, অযথা চাপ অনুভব না করে বিনীতভাবে এড়িয়ে চলুন। এ সময় নিজের বিশ্রাম ও মানসিক শান্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়াটাই বেশি জরুরি।
সূত্র: রিদমস অব প্লে ও অন্যান্য

পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু সুন্দর করে সেলিব্রেট করতে পারেন।
আলো ও উষ্ণতার আমেজ
শীতকাল মানেই ঠান্ডা আর কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। সন্ধ্যার দিকে ঘরে কিছু ওয়ার্ম লাইট ও মোমবাতি জ্বালিয়ে দিন। রাতে ছাদে বা উঠানে আগুন জ্বালিয়ে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব মিলে এর চারপাশে বসুন। আগুনের উষ্ণতা একটা শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে। এটি শুধু যে অন্ধকার দূর করে, তা-ই নয়; বরং শীতে একটা সুন্দর, স্নিগ্ধ ও উষ্ণ ভাব এনে দেয়। আগুনের তাপের সঙ্গে এই আয়োজনে থাকে সম্পর্কের উত্তাপও।

পুরোনো জিনিস সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন
শীতকালে ঘর পরিষ্কার করে একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন। নেতিবাচকতা দূর করতে ঘর পরিষ্কার করে ধূপ বা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। আবার শীতের আমেজ আনতে ঘরে দারুচিনি, এলাচি বা লবঙ্গ জাতীয় মসলার সুগন্ধ ব্যবহার করুন। চুলায় পানি গরম করে তাতে এসব দিয়ে ফুটতে দিন, ধীরে ধীরে পুরো বাসায় সুবাস ছড়িয়ে পড়বে। ঘর পরিষ্কার থাকলে মনও শান্ত থাকে আর নতুন দিনগুলোকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
একটা সালতামামি হয়ে যাক
এ সময়টিতে নিজেকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। এ বছর কী কী ভালো-খারাপ হলো বা কী কী শিখলেন, তা নিয়ে একটু ভাবুন। একটি ডায়েরিতে আপনার চিন্তাগুলো লিখে রাখতে পারেন। যেসব অভ্যাস এখন আর আপনার কাজে আসছে না, সেগুলো বাদ দিয়ে নিজের ভালো হয়—এমন কিছু ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলুন। নতুন বছরে কী কী করতে চান, সে লক্ষ্য ঠিক করে লিখে রাখুন।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
জীবনে ছোট-বড় যা কিছু ভালো আছে, সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। একটি তালিকা তৈরি করুন, যেখানে আপনার অর্জন, প্রিয় মানুষ, ব্যক্তিগত ভালো লাগা ও সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা লিখে রাখবেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মনে শান্তি পাবেন এবং অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাবেন।
নিজের যত্ন নিন
শীতকাল হলো নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার সময়। প্রতিদিন হালকা ইয়োগা, হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করে শরীর সচল রাখুন। নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন এবং নিজেকে কিছু উপহার দিন। নিজের জন্য সময় বের করে নিজের অস্তিত্ব সেলিব্রেট করার জন্য শীতকাল হলো উপযুক্ত সময়।

প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন
শীতের সকাল বা বিকেলে প্রকৃতির কাছে থাকার চেষ্টা করুন। শিশিরভেজা ঘাসে খালি পায়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন এবং শীতের নরম রোদ গায়ে মাখুন, যা আপনার মন ভালো করার পাশাপাশি শরীরে শক্তি জোগাবে। শীতকালীন ফুলগাছ বারান্দায় রাখুন ও মাটির তৈরি জিনিস দিয়ে ঘর সাজান। দেখবেন এই ছোট কাজগুলো ঘরে একটা স্নিগ্ধ ও সতেজ ভাব আনবে।
প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান
শীতকাল মানেই পিঠাপুলির উৎসব। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পিঠার আয়োজন করুন। একসঙ্গে গল্প, হাসি আর খাবার সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করবে এবং সময় আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলবে।
এবার ‘না’ বলতে শিখুন
শীতকাল মানেই বিভিন্ন রকম দাওয়াত। সেগুলোকে পাশে রেখে সামাজিক বা অন্যান্য কাজের চাপ এড়িয়ে চলুন। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে বা কোনো কাজ করতে যদি একেবারেই ইচ্ছা না করে তবে, অযথা চাপ অনুভব না করে বিনীতভাবে এড়িয়ে চলুন। এ সময় নিজের বিশ্রাম ও মানসিক শান্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়াটাই বেশি জরুরি।
সূত্র: রিদমস অব প্লে ও অন্যান্য

দেশের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি অন্যতম। এই জেলাটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারও বলে লোকজন। ফলে এখানে পর্যটকদের যাতায়াত আছে বেশ। যোগাযোগ ব্যবস্থাও দারুণ। ঈদের লম্বা ছুটিতে হাতে তিন থেকে চার দিনের সময় নিয়ে গেলে প্রকৃতির চোখ জুড়ানো রূপ দেখে আসা যাবে।
৩১ মার্চ ২০২৫
আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি
১৩ ঘণ্টা আগে
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প...
১৫ ঘণ্টা আগে
বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।...
১৭ ঘণ্টা আগে