সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

উত্তরের পথে আমাদের অভিযান
‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে, প্রয়োজন হলে সময়ের আগে প্রস্তুত থাকতে হবে বা পৌঁছাতে হবে। কিন্তু দেরি হওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে তাই ওকে ‘আর্মি পারসন’ বলি! যাই হোক, সেখানকার সময় ৬টায় উঠে গেলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যে দুজনে তৈরি হয়ে রুম থেকে বেরিয়েছি। হঠাৎ বারান্দার একপাশ দিয়ে বাইরে চোখ যেতেই দেখি কী সুন্দর দৃশ্য! রাতে পাহাড়ের গায়ে যে তারা দেখেছিলাম জ্বলজ্বল করছে, সেগুলো দিনের আলোয় স্পষ্ট ঘরবাড়ি। ছবিতে দেখলে হয়তো মনে হবে বস্তি। সামনে থেকে না দেখলে এর সৌন্দর্য অনুভব করা যাবে না। ঝটপট সেই দৃশ্যের ছবি তুলে নিল ভুবন।
হোটেল থেকে বের হলাম নাশতা খাব বলে। রাতে তো নিয়নের আলোয় খুব একটা বুঝিনি, সকালে বের হয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মল রোডটা যে কত পরিষ্কার, স্বচ্ছ! রাস্তার ওপরেই যেন নির্দ্বিধায় গড়াগড়ি করা যাবে। রাস্তার একপাশ ‘ওয়ান ওয়ে’, অন্য পাশ দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করানো যায় না। এপাশ দিয়ে সবাই আরাম করে হাঁটাহাঁটি করে। আর একধারে কিছু দূর পর পর বেঞ্চি আছে। হাঁটতে হাঁটতে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। ওই পথ ধরে হেঁটে একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। খেলাম সবজি আর লুচি। সবজি বলতে গাঢ় ঝোলের মধ্যে আলু! আলুর দম বলা চলে। কিন্তু তারা এটাকে সবজিই নাম দিয়েছে। ভুবন অবশ্য লুচি না খেয়ে রুটি খেয়েছিল। মিষ্টির চেহারাগুলো দেখে এত লোভ লাগছিল! কিন্তু যেই খেতে গিয়েছি, আর ভালো লাগল না। নাশতা পর্ব শেষ করে আবার ছুটলাম হোটেলের দিকে। হাঁটার মাঝে থেমে থেমে কিছু ছবিও তুলে নিলাম। মোড়ে একটা বিশাল লাল পান্ডার ভাস্কর্য আছে। সেটার সঙ্গে ছবি তুলতে ভুললাম না। সময় পেলে সত্যিকারের লাল পান্ডা দেখতে যেতাম গ্যাংটকের চিড়িয়াখানায়, কিন্তু সময় হয়নি।
আমরা ঠিক ৭টার সময় হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সবাই প্রস্তুত। কিন্তু গাড়ি আসেনি। ৮টার পর গাড়ি পেয়ে রওনা হলাম বজরা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের উদ্দেশে। মোটামুটি পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে। সেখানে হলো মহাবিলম্ব! কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে, পায়চারি করে সময় পার করেছি, আল্লাহ জানেন। কথা ছিল আগের দিন রাতেই অমরদা সব গাড়ি ঠিক করে রাখবেন, কিন্তু পারেননি।
প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আমরা গাড়ি পেলাম। একটা বড় জিপ পেয়ে আমরা নয়জন চড়ে বসলাম সেটাতে। আমাদের দুজনকে সবাই জিজ্ঞেস করছিল কোথায় বসতে চাই। আমি বললাম, ‘আপনাদের সুবিধামতো আমাদের একটু জায়গা দিলেই হবে।’ আকাশ ভাই দুষ্টুমি করে বললেন, ‘তাহলে ছাদে বসে যান। আমরা আরাম করে যাই।’ আমি বললাম, ‘কোনো সমস্যা নাই। সেটা তো ভীষণ মজার ব্যাপার হবে!’ সবাই হো হো করে হেসে দিয়ে দুজনকে চালকের সঙ্গে সামনের সিটে বসতে দিলেন। সামনে দুইটা সিটই বলা চলে। চালকেরটা ছাড়া। আরামসে আমি আর ভুবন এঁটে যাই। সবাই গাড়িতে উঠে অপেক্ষা করছি। বাকিদের বসা হলে একসঙ্গে রওনা দেব। বড় দলটা আরও দুইটা জিপে ভাগ হয়ে উঠল। তবে ঝামেলা লেগেছিল ওই দলের দুজন ‘জেঠুমশাই’কে নিয়ে। তাঁরা দুজনে একই জায়গায় বসতে চান। অর্থাৎ, একই সিটে। এ নিয়ে তুমুল লঙ্কাকাণ্ড! গাল ফুলিয়ে, চোখ রাঙিয়ে যাঁর যাঁর পরিচয় দিচ্ছিলেন। মাঝখান দিয়ে বেচারা অমরদা হলেন তুলাধুনা। আমরা জিপের ভেতরে বসে থেকে দর্শকের মতো ওই নাটক-সিনেমা দেখছিলাম। পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আরে ওনারা এত বড় মানুষ হয়ে বাচ্চাদের মতো করছেন, অথচ আমাদের মিস্টার অ্যান্ড মিসেস এজাজের গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে যেতেও আপত্তি নাই।’ সত্যিই যদি এমন পরিস্থিতি হতো, তাহলেও আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে ঝুলেই যেতাম। যাই হোক, সিনেমাটা আধা ঘণ্টার মতো চলল। অবশেষে অমরদা গালি হজম করে হাসিমুখে সবাইকে নিয়ে রওনা দিলেন। প্রায় ১২টা বেজে গিয়েছিল তখন।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছি, বুঝতে পারছিলাম। আর সে কী যে পাগল করা অপরূপ সৌন্দর্য! এই পথে যেতে যেতে ‘মাশাআল্লাহ’, ‘সুবহানআল্লাহ’, ‘ওয়াও’, ‘অ্যামেজিং’ শব্দগুলো আপনা-আপনি মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। সবাই মিলে এক এক করে গান ধরলাম। আকাশ ভাইয়ের গলা ভালো। তিনি অনেক গান গাইলেন। পুরোটা পথ এই গানের আসর সঙ্গী ছিল। ভুবনের গান শুনে তো সবাই মুগ্ধ। আকাশ ভাই আমাকে বলছিলেন, ‘বাহ, আপনার স্বামীর গানের গলা তো বেশ!’ মুচকি হেসে বললাম, ‘এমনি এমনি কি আর প্রেমে পড়েছি!’ এ কথা শুনে সবাই হেসে দিলেন। এরপর এল আমাদের প্রেমকাহিনির গল্পের অনুরোধ। গানের ফাঁকে ফাঁকে সেটাও হয়ে গেল। আমার গানের গলা ভালো না। ছেড়ে গাইতে পারি না। অনেকটা নাকি সুরে গাই। তবু সবার জোর অনুরোধে গাইতে হলো। একটার বেশি গাইলাম না। কারণ আমি ওই একটা গানই একটু ছেড়ে দিয়ে গাইতে পারি, ‘তোমার ঘরে বাস করে কারা...’।
আমাদের সামনে বসার খুব ভালো একটা সুফল পাওয়া গেছে। যতটা স্পষ্ট আমরা দুজন দেখতে পাচ্ছিলাম বাইরের দৃশ্য, পেছনের লোকজন হয়তো সেটার অর্ধেক দেখেছে। তবু যা দেখেছে, তাতে চোখ ছানাবড়া না হয়ে পারেই না। পথে থেমে থেমে পাহাড়ি ঝরনা দেখাচ্ছিলেন আমাদের চালক। তাঁর নাম রবিন। নামটা শুনে তাঁকে রবিন হুড ডাকতে ইচ্ছা হলো। রবিন হুড থেকে মনে পড়ল সালমান খানের ‘চুলবুল পান্ডে ওরফে রবিন হুড পান্ডে’ চরিত্রের কথা। আমি তাই তাঁকে ‘পান্ডেজি’ বলে ডাকা শুরু করলাম। পান্ডেজি নরম মানুষ। আস্তে-ধীরে কথা বলেন। নেপালি। মানে, সিকিমের বাসিন্দা আরকি। তিনি সবগুলো ঝরনার নাম ও বর্ণনা দিলেন। সব ঝরনার নামের সাইনবোর্ড নেই আবার। সেখানে নাম লেখা থাকে সাধারণত। আবার কোনো কোনো ঝরনার নাম নেই। সেগুলো ছোটখাটো। অনেক ঝরনার নাম পান্ডেজি নিজেও জানেন না। কারণ সেগুলো নতুন। সেভেন সিস্টার্স, নাগা, ভিম নালাসহ আরও ছোট-বড় কিছু ঝরনা দেখলাম। ভিম নালা ঝরনাটার আরেকটা নাম আছে। ‘অমিতাভ বচ্চন ফলস’। এমন নাম কেন, জিজ্ঞেস করতেই পান্ডেজি বললেন, ‘উ বহুত লম্বা হ্যায়। উ অ্যাক্টর হ্যায় না, অমিতাভ বচ্চন, উসকি তারাহ।’ লম্বায় এটা ২৭৫ ফুট। এর আরেক নাম ভিমা ফলস। স্থানীয় ভাষায় ভিমা বা ভিম নালা মানে ‘রেড স্নেক’ বা লাল সাপ। তাই এর আরেক নাম ‘রেড স্নেক’। বিগত কয়েক বছর ধরে পর্যটকেরা এই ঝরনাকে আবার ‘লাচুং নর্থ সিকিম ফলস’ নামেও ডাকছে। ঝরনার পাশাপাশি মেঘের কথা না বললেই নয়। পাহাড়ের চূড়ায় তুলার মতো লেগে থাকা মেঘ দেখা যায় দূর থেকে। আর পাহাড়ের নিচে স্বচ্ছ সবুজ তিস্তার পানি বয়ে চলে। ওপরের দিকে উঠতে উঠতে মেঘের ভেতর দিয়ে গিয়েছি আমরা। গাড়ি থেকে নেমেও ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। আসলে মেঘ নিজেই তো আমাদের জাপটে ধরে।
দুপুর থেকে পেটে উৎপাত শুরু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পথে টং দোকানের চা-বিস্কুট ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। শেষে বিকালের দিকে এক মুসলিম হোটেল পেলাম। পাহাড়ি রাস্তার একপাশে বেড়ার হোটেল। নিচের দিকে নেমে গেলে গ্রাম। সেখানে বেশির ভাগ মুসলমানরাই বাস করে। অনেকটা লুকিয়ে তারা গোমাংস রান্না করে খাওয়ায়। অমরদা আগে থেকে বলে রেখেছিলেন। তাই আমরা গরুর মাংস দিয়ে গরম ভাত-ডাল খেতে পারলাম। মনে হচ্ছিল অমৃত। রান্নাটাও বেশ। জম্পেশ খাওয়া দিয়ে আবার রওনা দিলাম। লাচুংয়ে পৌঁছাতে হবে। ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আলবৎ মাথায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়েছিল। এরপর বাকিটা ইতিহাস। তবে পরদিন থেকে।
সন্ধ্যা নেমে এলে গাড়ির হেডলাইটের আলো ছাড়া গতি ছিল না। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, যাচ্ছি আবার মেঘের ভেতর দিয়ে। পথ একেবারে পিচ্ছিল। ভয় পাচ্ছিলাম না একটুও। কেননা, পান্ডেজি যেভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে ভরসা না করে পারা যায় না। তিনি মুখে তো অভয় দিচ্ছিলেনই, কাজ দিয়েও প্রমাণ করেছেন। সিকিমের এই পাহাড়ি পথ এমনভাবে তৈরি করা যে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খুব কম। জায়গায় জায়গায় সতর্কবার্তা লেখা আছে। আর চালকদের এতটাই মুখস্থ রাস্তা যে তারা চোখ বুজে পাড়ি দিতে পারেন।
লাচুংয়ে ঢোকার আগেও অনুমতি লাগল। সেখানে এক বিজ্ঞপ্তিতে লেখা দেখলাম উত্তরের কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে আর কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে না। অবশ্যই লাচুংয়ে টিক চিহ্ন দেওয়া ছিল। সেটা দেখে মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম। যাক বাবা, আটকে দিল না তাহলে। অনুমতি নিয়ে চলতে শুরু করলাম আবার। সাড়ে ৭টার পরপর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। আর্মি চেকপোস্টের কাছাকাছি ‘লাচুং রিজেন্সি’তে গিয়ে উঠলাম। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকে করে রেখেছিলেন অমরদা। এই হোটেলে লোক মাত্র দুজন। যিনি ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন, তিনি নিজেই রান্না করেন। তাঁর সঙ্গে একজন আছেন, যিনি অতিথিদের ফরমাশ খাটেন। তাঁকে সাহায্যও করেন। আমরা যার যার রুম বেছে নিয়ে হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিলাম। ভাগ্যিস এখানে খাওয়া না পাওয়া যাওয়ার ভয় ছিল না।
ধীরে-সুস্থেই খাবারঘরে গেলাম। বুফে সিস্টেম করে রেখেছিলেন আমাদের রাঁধুনি। ভাত, ডাল, সবজি, রুটি, মটর পনির, সালাদ। এখানে আমিষজাতীয় কোনো রান্না হয় না। বেশ ভালোই লাগল খেতে। ভাত ছাড়া সব খেলাম অল্প করে। বড় দলটাকে আমার ভালো লাগছিল না। তারা সবকিছুতে একটা লোকদেখানো ভাব করছিল। সে যাক গে, খেয়েদেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকে গল্প করছিলাম। এর মধ্যে হেঁশেল থেকে খবর এল, কেউ গরুর দুধ খেতে চায় কি না। তবে কিনে খেতে হবে। ভুবন খুব আগ্রহ নিয়ে দুধ আনতে গেল রান্নাঘরে। ফিরে এল একটা দুঃখ ভাব নিয়ে। ব্যাপার কী? এক গ্লাস দুধের দাম ৫০ রুপি! যদিও সে কিনে এনেছে এবং খুব কষ্ট করে গিলেছে। মনে হচ্ছিল টাকা গিলছে! সবার এক কথা, আমাদের দেশে ৭০ টাকায় লিটার আর এখানে মাত্র এক গ্লাস ৫০ রুপি! একটু বেশি হয়ে যায় না? এক গ্লাসের দাম পড়ছে তাহলে পঁয়ষট্টি টাকার মতো। গল্প-গুজব শেষ করে রুমে গেলাম ঘুমাতে। এমন সময় বাইরে হন্তদন্ত শুনলাম। পরদিন কে কোথায় যাবে সেটা নিয়ে বিস্তর ক্যাচাল লেগে গেল অমরদার সঙ্গে। কে আর লাগাবে। সেই বড় দলের পণ্ডিতেরা। অমরদার ভাষ্যমতে, জিরো পয়েন্টে গিয়ে কোনো লাভ নেই।
সময় নষ্ট না করে শুধু ইয়ামথাং ভ্যালি ঘুরে এলেই হবে। জিরো পয়েন্টে যেতে আর্মিরা ঝামেলা করতে পারে। তখন আবহাওয়াও সুবিধার ছিল না। আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা সব জেনে-বুঝে, অন্তর্জাল ঘেঁটে অমরদার কথায় রাজি ছিলাম। কিন্তু নাছোড়বান্দা বড় দলের লোকজন। কেউ যেতে চান, কেউ চান না। যাঁরা যেতে চান, তাঁদের কথা হলো, ‘টাকা দিচ্ছি আপনাকে, নেবেন না কেন? যাবই!’ অথচ অমরদা আগেই বলে রেখেছিলেন যে যদি অনুমতি না পাই, আবহাওয়া দখলে না থাকে কিংবা পরিস্থিতি ভিন্ন হয়, তবে আমাদের পরিকল্পনার পরিবর্তন হতে পারে। সে কথাটা আমাদের দলকে না বললেও আমরা জানতাম। সিকিম ঘুরতে গেলে এই কথাগুলো মাথায় রাখতে হয়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হলো যাঁরা জিরো পয়েন্টে যেতে চান, তাঁরা আলাদা যাবেন সকাল ৭টায়। আর বাকিরা নাশতা সেরে ৮টায় রওনা হবেন ইয়ামথাং ভ্যালির জন্য। জিরো পয়েন্ট ঘুরে বাকিরা সরাসরি ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে যাবেন। জিরো পয়েন্টে না যাওয়ার কারণ ছিল, সেখানে যা আছে তার চেয়ে কয়েক গুণ সুন্দর দৃশ্য ইয়ামথাং ভ্যালিতে আছে। শরীরের ওপর দিয়ে ধকল যাবে কি না, সে কথাও মাথা থেকে ফেলে দিলাম না। ওহ্, আরেকটা ব্যাপার, অমরদার কিন্তু জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল সাঙ্গুতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু অনুমতি পাননি। সেখানে আমরা সবাই যেতে চেয়েছিলাম। অনুমতি পাননি বিধায় কয়েকজন জেঁকে ধরেছিলেন জিরো পয়েন্টে নিয়ে যেতে। আমাদের সাঙ্গুতে নিতে না পারায় কিন্তু তিনি পরে তাঁর সম্মানীটাও কম রেখেছিলেন।
বিতর্কের সিদ্ধান্ত জানার পর ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু কী মুশকিল! ঘুম যে আসে না! এক ফোঁটাও না। না আমার, না ভুবনের। রাত যত বাড়ে, ঠান্ডা তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে। ঘুম কী করে আসে এমন অবস্থায়! রুমে হিটার আনালাম। সেখানে আবার রুম হিটারের জন্য আলাদা খরচ করতে হয়। কিন্তু সারা রাতেও হিটার ঘরটাকে গরম করতে পারল না। এদিকে বাইরে হচ্ছে তুষারপাত। তাপমাত্রা সম্ভবত মাইনাস ৯ ছিল। একাত-ওকাত করে করে রাত পার করলাম। সব মিলিয়ে বড়জোর ঘণ্টা দেড়েক ঘুমিয়েছি; ভোরের দিকে যখন ঘরটা গরম হলো।

উত্তরের পথে আমাদের অভিযান
‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে, প্রয়োজন হলে সময়ের আগে প্রস্তুত থাকতে হবে বা পৌঁছাতে হবে। কিন্তু দেরি হওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে তাই ওকে ‘আর্মি পারসন’ বলি! যাই হোক, সেখানকার সময় ৬টায় উঠে গেলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যে দুজনে তৈরি হয়ে রুম থেকে বেরিয়েছি। হঠাৎ বারান্দার একপাশ দিয়ে বাইরে চোখ যেতেই দেখি কী সুন্দর দৃশ্য! রাতে পাহাড়ের গায়ে যে তারা দেখেছিলাম জ্বলজ্বল করছে, সেগুলো দিনের আলোয় স্পষ্ট ঘরবাড়ি। ছবিতে দেখলে হয়তো মনে হবে বস্তি। সামনে থেকে না দেখলে এর সৌন্দর্য অনুভব করা যাবে না। ঝটপট সেই দৃশ্যের ছবি তুলে নিল ভুবন।
হোটেল থেকে বের হলাম নাশতা খাব বলে। রাতে তো নিয়নের আলোয় খুব একটা বুঝিনি, সকালে বের হয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মল রোডটা যে কত পরিষ্কার, স্বচ্ছ! রাস্তার ওপরেই যেন নির্দ্বিধায় গড়াগড়ি করা যাবে। রাস্তার একপাশ ‘ওয়ান ওয়ে’, অন্য পাশ দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করানো যায় না। এপাশ দিয়ে সবাই আরাম করে হাঁটাহাঁটি করে। আর একধারে কিছু দূর পর পর বেঞ্চি আছে। হাঁটতে হাঁটতে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। ওই পথ ধরে হেঁটে একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। খেলাম সবজি আর লুচি। সবজি বলতে গাঢ় ঝোলের মধ্যে আলু! আলুর দম বলা চলে। কিন্তু তারা এটাকে সবজিই নাম দিয়েছে। ভুবন অবশ্য লুচি না খেয়ে রুটি খেয়েছিল। মিষ্টির চেহারাগুলো দেখে এত লোভ লাগছিল! কিন্তু যেই খেতে গিয়েছি, আর ভালো লাগল না। নাশতা পর্ব শেষ করে আবার ছুটলাম হোটেলের দিকে। হাঁটার মাঝে থেমে থেমে কিছু ছবিও তুলে নিলাম। মোড়ে একটা বিশাল লাল পান্ডার ভাস্কর্য আছে। সেটার সঙ্গে ছবি তুলতে ভুললাম না। সময় পেলে সত্যিকারের লাল পান্ডা দেখতে যেতাম গ্যাংটকের চিড়িয়াখানায়, কিন্তু সময় হয়নি।
আমরা ঠিক ৭টার সময় হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সবাই প্রস্তুত। কিন্তু গাড়ি আসেনি। ৮টার পর গাড়ি পেয়ে রওনা হলাম বজরা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের উদ্দেশে। মোটামুটি পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে। সেখানে হলো মহাবিলম্ব! কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে, পায়চারি করে সময় পার করেছি, আল্লাহ জানেন। কথা ছিল আগের দিন রাতেই অমরদা সব গাড়ি ঠিক করে রাখবেন, কিন্তু পারেননি।
প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আমরা গাড়ি পেলাম। একটা বড় জিপ পেয়ে আমরা নয়জন চড়ে বসলাম সেটাতে। আমাদের দুজনকে সবাই জিজ্ঞেস করছিল কোথায় বসতে চাই। আমি বললাম, ‘আপনাদের সুবিধামতো আমাদের একটু জায়গা দিলেই হবে।’ আকাশ ভাই দুষ্টুমি করে বললেন, ‘তাহলে ছাদে বসে যান। আমরা আরাম করে যাই।’ আমি বললাম, ‘কোনো সমস্যা নাই। সেটা তো ভীষণ মজার ব্যাপার হবে!’ সবাই হো হো করে হেসে দিয়ে দুজনকে চালকের সঙ্গে সামনের সিটে বসতে দিলেন। সামনে দুইটা সিটই বলা চলে। চালকেরটা ছাড়া। আরামসে আমি আর ভুবন এঁটে যাই। সবাই গাড়িতে উঠে অপেক্ষা করছি। বাকিদের বসা হলে একসঙ্গে রওনা দেব। বড় দলটা আরও দুইটা জিপে ভাগ হয়ে উঠল। তবে ঝামেলা লেগেছিল ওই দলের দুজন ‘জেঠুমশাই’কে নিয়ে। তাঁরা দুজনে একই জায়গায় বসতে চান। অর্থাৎ, একই সিটে। এ নিয়ে তুমুল লঙ্কাকাণ্ড! গাল ফুলিয়ে, চোখ রাঙিয়ে যাঁর যাঁর পরিচয় দিচ্ছিলেন। মাঝখান দিয়ে বেচারা অমরদা হলেন তুলাধুনা। আমরা জিপের ভেতরে বসে থেকে দর্শকের মতো ওই নাটক-সিনেমা দেখছিলাম। পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আরে ওনারা এত বড় মানুষ হয়ে বাচ্চাদের মতো করছেন, অথচ আমাদের মিস্টার অ্যান্ড মিসেস এজাজের গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে যেতেও আপত্তি নাই।’ সত্যিই যদি এমন পরিস্থিতি হতো, তাহলেও আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে ঝুলেই যেতাম। যাই হোক, সিনেমাটা আধা ঘণ্টার মতো চলল। অবশেষে অমরদা গালি হজম করে হাসিমুখে সবাইকে নিয়ে রওনা দিলেন। প্রায় ১২টা বেজে গিয়েছিল তখন।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছি, বুঝতে পারছিলাম। আর সে কী যে পাগল করা অপরূপ সৌন্দর্য! এই পথে যেতে যেতে ‘মাশাআল্লাহ’, ‘সুবহানআল্লাহ’, ‘ওয়াও’, ‘অ্যামেজিং’ শব্দগুলো আপনা-আপনি মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। সবাই মিলে এক এক করে গান ধরলাম। আকাশ ভাইয়ের গলা ভালো। তিনি অনেক গান গাইলেন। পুরোটা পথ এই গানের আসর সঙ্গী ছিল। ভুবনের গান শুনে তো সবাই মুগ্ধ। আকাশ ভাই আমাকে বলছিলেন, ‘বাহ, আপনার স্বামীর গানের গলা তো বেশ!’ মুচকি হেসে বললাম, ‘এমনি এমনি কি আর প্রেমে পড়েছি!’ এ কথা শুনে সবাই হেসে দিলেন। এরপর এল আমাদের প্রেমকাহিনির গল্পের অনুরোধ। গানের ফাঁকে ফাঁকে সেটাও হয়ে গেল। আমার গানের গলা ভালো না। ছেড়ে গাইতে পারি না। অনেকটা নাকি সুরে গাই। তবু সবার জোর অনুরোধে গাইতে হলো। একটার বেশি গাইলাম না। কারণ আমি ওই একটা গানই একটু ছেড়ে দিয়ে গাইতে পারি, ‘তোমার ঘরে বাস করে কারা...’।
আমাদের সামনে বসার খুব ভালো একটা সুফল পাওয়া গেছে। যতটা স্পষ্ট আমরা দুজন দেখতে পাচ্ছিলাম বাইরের দৃশ্য, পেছনের লোকজন হয়তো সেটার অর্ধেক দেখেছে। তবু যা দেখেছে, তাতে চোখ ছানাবড়া না হয়ে পারেই না। পথে থেমে থেমে পাহাড়ি ঝরনা দেখাচ্ছিলেন আমাদের চালক। তাঁর নাম রবিন। নামটা শুনে তাঁকে রবিন হুড ডাকতে ইচ্ছা হলো। রবিন হুড থেকে মনে পড়ল সালমান খানের ‘চুলবুল পান্ডে ওরফে রবিন হুড পান্ডে’ চরিত্রের কথা। আমি তাই তাঁকে ‘পান্ডেজি’ বলে ডাকা শুরু করলাম। পান্ডেজি নরম মানুষ। আস্তে-ধীরে কথা বলেন। নেপালি। মানে, সিকিমের বাসিন্দা আরকি। তিনি সবগুলো ঝরনার নাম ও বর্ণনা দিলেন। সব ঝরনার নামের সাইনবোর্ড নেই আবার। সেখানে নাম লেখা থাকে সাধারণত। আবার কোনো কোনো ঝরনার নাম নেই। সেগুলো ছোটখাটো। অনেক ঝরনার নাম পান্ডেজি নিজেও জানেন না। কারণ সেগুলো নতুন। সেভেন সিস্টার্স, নাগা, ভিম নালাসহ আরও ছোট-বড় কিছু ঝরনা দেখলাম। ভিম নালা ঝরনাটার আরেকটা নাম আছে। ‘অমিতাভ বচ্চন ফলস’। এমন নাম কেন, জিজ্ঞেস করতেই পান্ডেজি বললেন, ‘উ বহুত লম্বা হ্যায়। উ অ্যাক্টর হ্যায় না, অমিতাভ বচ্চন, উসকি তারাহ।’ লম্বায় এটা ২৭৫ ফুট। এর আরেক নাম ভিমা ফলস। স্থানীয় ভাষায় ভিমা বা ভিম নালা মানে ‘রেড স্নেক’ বা লাল সাপ। তাই এর আরেক নাম ‘রেড স্নেক’। বিগত কয়েক বছর ধরে পর্যটকেরা এই ঝরনাকে আবার ‘লাচুং নর্থ সিকিম ফলস’ নামেও ডাকছে। ঝরনার পাশাপাশি মেঘের কথা না বললেই নয়। পাহাড়ের চূড়ায় তুলার মতো লেগে থাকা মেঘ দেখা যায় দূর থেকে। আর পাহাড়ের নিচে স্বচ্ছ সবুজ তিস্তার পানি বয়ে চলে। ওপরের দিকে উঠতে উঠতে মেঘের ভেতর দিয়ে গিয়েছি আমরা। গাড়ি থেকে নেমেও ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। আসলে মেঘ নিজেই তো আমাদের জাপটে ধরে।
দুপুর থেকে পেটে উৎপাত শুরু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পথে টং দোকানের চা-বিস্কুট ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। শেষে বিকালের দিকে এক মুসলিম হোটেল পেলাম। পাহাড়ি রাস্তার একপাশে বেড়ার হোটেল। নিচের দিকে নেমে গেলে গ্রাম। সেখানে বেশির ভাগ মুসলমানরাই বাস করে। অনেকটা লুকিয়ে তারা গোমাংস রান্না করে খাওয়ায়। অমরদা আগে থেকে বলে রেখেছিলেন। তাই আমরা গরুর মাংস দিয়ে গরম ভাত-ডাল খেতে পারলাম। মনে হচ্ছিল অমৃত। রান্নাটাও বেশ। জম্পেশ খাওয়া দিয়ে আবার রওনা দিলাম। লাচুংয়ে পৌঁছাতে হবে। ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আলবৎ মাথায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়েছিল। এরপর বাকিটা ইতিহাস। তবে পরদিন থেকে।
সন্ধ্যা নেমে এলে গাড়ির হেডলাইটের আলো ছাড়া গতি ছিল না। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, যাচ্ছি আবার মেঘের ভেতর দিয়ে। পথ একেবারে পিচ্ছিল। ভয় পাচ্ছিলাম না একটুও। কেননা, পান্ডেজি যেভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে ভরসা না করে পারা যায় না। তিনি মুখে তো অভয় দিচ্ছিলেনই, কাজ দিয়েও প্রমাণ করেছেন। সিকিমের এই পাহাড়ি পথ এমনভাবে তৈরি করা যে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খুব কম। জায়গায় জায়গায় সতর্কবার্তা লেখা আছে। আর চালকদের এতটাই মুখস্থ রাস্তা যে তারা চোখ বুজে পাড়ি দিতে পারেন।
লাচুংয়ে ঢোকার আগেও অনুমতি লাগল। সেখানে এক বিজ্ঞপ্তিতে লেখা দেখলাম উত্তরের কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে আর কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে না। অবশ্যই লাচুংয়ে টিক চিহ্ন দেওয়া ছিল। সেটা দেখে মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম। যাক বাবা, আটকে দিল না তাহলে। অনুমতি নিয়ে চলতে শুরু করলাম আবার। সাড়ে ৭টার পরপর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। আর্মি চেকপোস্টের কাছাকাছি ‘লাচুং রিজেন্সি’তে গিয়ে উঠলাম। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকে করে রেখেছিলেন অমরদা। এই হোটেলে লোক মাত্র দুজন। যিনি ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন, তিনি নিজেই রান্না করেন। তাঁর সঙ্গে একজন আছেন, যিনি অতিথিদের ফরমাশ খাটেন। তাঁকে সাহায্যও করেন। আমরা যার যার রুম বেছে নিয়ে হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিলাম। ভাগ্যিস এখানে খাওয়া না পাওয়া যাওয়ার ভয় ছিল না।
ধীরে-সুস্থেই খাবারঘরে গেলাম। বুফে সিস্টেম করে রেখেছিলেন আমাদের রাঁধুনি। ভাত, ডাল, সবজি, রুটি, মটর পনির, সালাদ। এখানে আমিষজাতীয় কোনো রান্না হয় না। বেশ ভালোই লাগল খেতে। ভাত ছাড়া সব খেলাম অল্প করে। বড় দলটাকে আমার ভালো লাগছিল না। তারা সবকিছুতে একটা লোকদেখানো ভাব করছিল। সে যাক গে, খেয়েদেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকে গল্প করছিলাম। এর মধ্যে হেঁশেল থেকে খবর এল, কেউ গরুর দুধ খেতে চায় কি না। তবে কিনে খেতে হবে। ভুবন খুব আগ্রহ নিয়ে দুধ আনতে গেল রান্নাঘরে। ফিরে এল একটা দুঃখ ভাব নিয়ে। ব্যাপার কী? এক গ্লাস দুধের দাম ৫০ রুপি! যদিও সে কিনে এনেছে এবং খুব কষ্ট করে গিলেছে। মনে হচ্ছিল টাকা গিলছে! সবার এক কথা, আমাদের দেশে ৭০ টাকায় লিটার আর এখানে মাত্র এক গ্লাস ৫০ রুপি! একটু বেশি হয়ে যায় না? এক গ্লাসের দাম পড়ছে তাহলে পঁয়ষট্টি টাকার মতো। গল্প-গুজব শেষ করে রুমে গেলাম ঘুমাতে। এমন সময় বাইরে হন্তদন্ত শুনলাম। পরদিন কে কোথায় যাবে সেটা নিয়ে বিস্তর ক্যাচাল লেগে গেল অমরদার সঙ্গে। কে আর লাগাবে। সেই বড় দলের পণ্ডিতেরা। অমরদার ভাষ্যমতে, জিরো পয়েন্টে গিয়ে কোনো লাভ নেই।
সময় নষ্ট না করে শুধু ইয়ামথাং ভ্যালি ঘুরে এলেই হবে। জিরো পয়েন্টে যেতে আর্মিরা ঝামেলা করতে পারে। তখন আবহাওয়াও সুবিধার ছিল না। আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা সব জেনে-বুঝে, অন্তর্জাল ঘেঁটে অমরদার কথায় রাজি ছিলাম। কিন্তু নাছোড়বান্দা বড় দলের লোকজন। কেউ যেতে চান, কেউ চান না। যাঁরা যেতে চান, তাঁদের কথা হলো, ‘টাকা দিচ্ছি আপনাকে, নেবেন না কেন? যাবই!’ অথচ অমরদা আগেই বলে রেখেছিলেন যে যদি অনুমতি না পাই, আবহাওয়া দখলে না থাকে কিংবা পরিস্থিতি ভিন্ন হয়, তবে আমাদের পরিকল্পনার পরিবর্তন হতে পারে। সে কথাটা আমাদের দলকে না বললেও আমরা জানতাম। সিকিম ঘুরতে গেলে এই কথাগুলো মাথায় রাখতে হয়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হলো যাঁরা জিরো পয়েন্টে যেতে চান, তাঁরা আলাদা যাবেন সকাল ৭টায়। আর বাকিরা নাশতা সেরে ৮টায় রওনা হবেন ইয়ামথাং ভ্যালির জন্য। জিরো পয়েন্ট ঘুরে বাকিরা সরাসরি ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে যাবেন। জিরো পয়েন্টে না যাওয়ার কারণ ছিল, সেখানে যা আছে তার চেয়ে কয়েক গুণ সুন্দর দৃশ্য ইয়ামথাং ভ্যালিতে আছে। শরীরের ওপর দিয়ে ধকল যাবে কি না, সে কথাও মাথা থেকে ফেলে দিলাম না। ওহ্, আরেকটা ব্যাপার, অমরদার কিন্তু জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল সাঙ্গুতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু অনুমতি পাননি। সেখানে আমরা সবাই যেতে চেয়েছিলাম। অনুমতি পাননি বিধায় কয়েকজন জেঁকে ধরেছিলেন জিরো পয়েন্টে নিয়ে যেতে। আমাদের সাঙ্গুতে নিতে না পারায় কিন্তু তিনি পরে তাঁর সম্মানীটাও কম রেখেছিলেন।
বিতর্কের সিদ্ধান্ত জানার পর ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু কী মুশকিল! ঘুম যে আসে না! এক ফোঁটাও না। না আমার, না ভুবনের। রাত যত বাড়ে, ঠান্ডা তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে। ঘুম কী করে আসে এমন অবস্থায়! রুমে হিটার আনালাম। সেখানে আবার রুম হিটারের জন্য আলাদা খরচ করতে হয়। কিন্তু সারা রাতেও হিটার ঘরটাকে গরম করতে পারল না। এদিকে বাইরে হচ্ছে তুষারপাত। তাপমাত্রা সম্ভবত মাইনাস ৯ ছিল। একাত-ওকাত করে করে রাত পার করলাম। সব মিলিয়ে বড়জোর ঘণ্টা দেড়েক ঘুমিয়েছি; ভোরের দিকে যখন ঘরটা গরম হলো।
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

উত্তরের পথে আমাদের অভিযান
‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে, প্রয়োজন হলে সময়ের আগে প্রস্তুত থাকতে হবে বা পৌঁছাতে হবে। কিন্তু দেরি হওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে তাই ওকে ‘আর্মি পারসন’ বলি! যাই হোক, সেখানকার সময় ৬টায় উঠে গেলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যে দুজনে তৈরি হয়ে রুম থেকে বেরিয়েছি। হঠাৎ বারান্দার একপাশ দিয়ে বাইরে চোখ যেতেই দেখি কী সুন্দর দৃশ্য! রাতে পাহাড়ের গায়ে যে তারা দেখেছিলাম জ্বলজ্বল করছে, সেগুলো দিনের আলোয় স্পষ্ট ঘরবাড়ি। ছবিতে দেখলে হয়তো মনে হবে বস্তি। সামনে থেকে না দেখলে এর সৌন্দর্য অনুভব করা যাবে না। ঝটপট সেই দৃশ্যের ছবি তুলে নিল ভুবন।
হোটেল থেকে বের হলাম নাশতা খাব বলে। রাতে তো নিয়নের আলোয় খুব একটা বুঝিনি, সকালে বের হয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মল রোডটা যে কত পরিষ্কার, স্বচ্ছ! রাস্তার ওপরেই যেন নির্দ্বিধায় গড়াগড়ি করা যাবে। রাস্তার একপাশ ‘ওয়ান ওয়ে’, অন্য পাশ দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করানো যায় না। এপাশ দিয়ে সবাই আরাম করে হাঁটাহাঁটি করে। আর একধারে কিছু দূর পর পর বেঞ্চি আছে। হাঁটতে হাঁটতে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। ওই পথ ধরে হেঁটে একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। খেলাম সবজি আর লুচি। সবজি বলতে গাঢ় ঝোলের মধ্যে আলু! আলুর দম বলা চলে। কিন্তু তারা এটাকে সবজিই নাম দিয়েছে। ভুবন অবশ্য লুচি না খেয়ে রুটি খেয়েছিল। মিষ্টির চেহারাগুলো দেখে এত লোভ লাগছিল! কিন্তু যেই খেতে গিয়েছি, আর ভালো লাগল না। নাশতা পর্ব শেষ করে আবার ছুটলাম হোটেলের দিকে। হাঁটার মাঝে থেমে থেমে কিছু ছবিও তুলে নিলাম। মোড়ে একটা বিশাল লাল পান্ডার ভাস্কর্য আছে। সেটার সঙ্গে ছবি তুলতে ভুললাম না। সময় পেলে সত্যিকারের লাল পান্ডা দেখতে যেতাম গ্যাংটকের চিড়িয়াখানায়, কিন্তু সময় হয়নি।
আমরা ঠিক ৭টার সময় হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সবাই প্রস্তুত। কিন্তু গাড়ি আসেনি। ৮টার পর গাড়ি পেয়ে রওনা হলাম বজরা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের উদ্দেশে। মোটামুটি পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে। সেখানে হলো মহাবিলম্ব! কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে, পায়চারি করে সময় পার করেছি, আল্লাহ জানেন। কথা ছিল আগের দিন রাতেই অমরদা সব গাড়ি ঠিক করে রাখবেন, কিন্তু পারেননি।
প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আমরা গাড়ি পেলাম। একটা বড় জিপ পেয়ে আমরা নয়জন চড়ে বসলাম সেটাতে। আমাদের দুজনকে সবাই জিজ্ঞেস করছিল কোথায় বসতে চাই। আমি বললাম, ‘আপনাদের সুবিধামতো আমাদের একটু জায়গা দিলেই হবে।’ আকাশ ভাই দুষ্টুমি করে বললেন, ‘তাহলে ছাদে বসে যান। আমরা আরাম করে যাই।’ আমি বললাম, ‘কোনো সমস্যা নাই। সেটা তো ভীষণ মজার ব্যাপার হবে!’ সবাই হো হো করে হেসে দিয়ে দুজনকে চালকের সঙ্গে সামনের সিটে বসতে দিলেন। সামনে দুইটা সিটই বলা চলে। চালকেরটা ছাড়া। আরামসে আমি আর ভুবন এঁটে যাই। সবাই গাড়িতে উঠে অপেক্ষা করছি। বাকিদের বসা হলে একসঙ্গে রওনা দেব। বড় দলটা আরও দুইটা জিপে ভাগ হয়ে উঠল। তবে ঝামেলা লেগেছিল ওই দলের দুজন ‘জেঠুমশাই’কে নিয়ে। তাঁরা দুজনে একই জায়গায় বসতে চান। অর্থাৎ, একই সিটে। এ নিয়ে তুমুল লঙ্কাকাণ্ড! গাল ফুলিয়ে, চোখ রাঙিয়ে যাঁর যাঁর পরিচয় দিচ্ছিলেন। মাঝখান দিয়ে বেচারা অমরদা হলেন তুলাধুনা। আমরা জিপের ভেতরে বসে থেকে দর্শকের মতো ওই নাটক-সিনেমা দেখছিলাম। পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আরে ওনারা এত বড় মানুষ হয়ে বাচ্চাদের মতো করছেন, অথচ আমাদের মিস্টার অ্যান্ড মিসেস এজাজের গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে যেতেও আপত্তি নাই।’ সত্যিই যদি এমন পরিস্থিতি হতো, তাহলেও আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে ঝুলেই যেতাম। যাই হোক, সিনেমাটা আধা ঘণ্টার মতো চলল। অবশেষে অমরদা গালি হজম করে হাসিমুখে সবাইকে নিয়ে রওনা দিলেন। প্রায় ১২টা বেজে গিয়েছিল তখন।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছি, বুঝতে পারছিলাম। আর সে কী যে পাগল করা অপরূপ সৌন্দর্য! এই পথে যেতে যেতে ‘মাশাআল্লাহ’, ‘সুবহানআল্লাহ’, ‘ওয়াও’, ‘অ্যামেজিং’ শব্দগুলো আপনা-আপনি মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। সবাই মিলে এক এক করে গান ধরলাম। আকাশ ভাইয়ের গলা ভালো। তিনি অনেক গান গাইলেন। পুরোটা পথ এই গানের আসর সঙ্গী ছিল। ভুবনের গান শুনে তো সবাই মুগ্ধ। আকাশ ভাই আমাকে বলছিলেন, ‘বাহ, আপনার স্বামীর গানের গলা তো বেশ!’ মুচকি হেসে বললাম, ‘এমনি এমনি কি আর প্রেমে পড়েছি!’ এ কথা শুনে সবাই হেসে দিলেন। এরপর এল আমাদের প্রেমকাহিনির গল্পের অনুরোধ। গানের ফাঁকে ফাঁকে সেটাও হয়ে গেল। আমার গানের গলা ভালো না। ছেড়ে গাইতে পারি না। অনেকটা নাকি সুরে গাই। তবু সবার জোর অনুরোধে গাইতে হলো। একটার বেশি গাইলাম না। কারণ আমি ওই একটা গানই একটু ছেড়ে দিয়ে গাইতে পারি, ‘তোমার ঘরে বাস করে কারা...’।
আমাদের সামনে বসার খুব ভালো একটা সুফল পাওয়া গেছে। যতটা স্পষ্ট আমরা দুজন দেখতে পাচ্ছিলাম বাইরের দৃশ্য, পেছনের লোকজন হয়তো সেটার অর্ধেক দেখেছে। তবু যা দেখেছে, তাতে চোখ ছানাবড়া না হয়ে পারেই না। পথে থেমে থেমে পাহাড়ি ঝরনা দেখাচ্ছিলেন আমাদের চালক। তাঁর নাম রবিন। নামটা শুনে তাঁকে রবিন হুড ডাকতে ইচ্ছা হলো। রবিন হুড থেকে মনে পড়ল সালমান খানের ‘চুলবুল পান্ডে ওরফে রবিন হুড পান্ডে’ চরিত্রের কথা। আমি তাই তাঁকে ‘পান্ডেজি’ বলে ডাকা শুরু করলাম। পান্ডেজি নরম মানুষ। আস্তে-ধীরে কথা বলেন। নেপালি। মানে, সিকিমের বাসিন্দা আরকি। তিনি সবগুলো ঝরনার নাম ও বর্ণনা দিলেন। সব ঝরনার নামের সাইনবোর্ড নেই আবার। সেখানে নাম লেখা থাকে সাধারণত। আবার কোনো কোনো ঝরনার নাম নেই। সেগুলো ছোটখাটো। অনেক ঝরনার নাম পান্ডেজি নিজেও জানেন না। কারণ সেগুলো নতুন। সেভেন সিস্টার্স, নাগা, ভিম নালাসহ আরও ছোট-বড় কিছু ঝরনা দেখলাম। ভিম নালা ঝরনাটার আরেকটা নাম আছে। ‘অমিতাভ বচ্চন ফলস’। এমন নাম কেন, জিজ্ঞেস করতেই পান্ডেজি বললেন, ‘উ বহুত লম্বা হ্যায়। উ অ্যাক্টর হ্যায় না, অমিতাভ বচ্চন, উসকি তারাহ।’ লম্বায় এটা ২৭৫ ফুট। এর আরেক নাম ভিমা ফলস। স্থানীয় ভাষায় ভিমা বা ভিম নালা মানে ‘রেড স্নেক’ বা লাল সাপ। তাই এর আরেক নাম ‘রেড স্নেক’। বিগত কয়েক বছর ধরে পর্যটকেরা এই ঝরনাকে আবার ‘লাচুং নর্থ সিকিম ফলস’ নামেও ডাকছে। ঝরনার পাশাপাশি মেঘের কথা না বললেই নয়। পাহাড়ের চূড়ায় তুলার মতো লেগে থাকা মেঘ দেখা যায় দূর থেকে। আর পাহাড়ের নিচে স্বচ্ছ সবুজ তিস্তার পানি বয়ে চলে। ওপরের দিকে উঠতে উঠতে মেঘের ভেতর দিয়ে গিয়েছি আমরা। গাড়ি থেকে নেমেও ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। আসলে মেঘ নিজেই তো আমাদের জাপটে ধরে।
দুপুর থেকে পেটে উৎপাত শুরু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পথে টং দোকানের চা-বিস্কুট ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। শেষে বিকালের দিকে এক মুসলিম হোটেল পেলাম। পাহাড়ি রাস্তার একপাশে বেড়ার হোটেল। নিচের দিকে নেমে গেলে গ্রাম। সেখানে বেশির ভাগ মুসলমানরাই বাস করে। অনেকটা লুকিয়ে তারা গোমাংস রান্না করে খাওয়ায়। অমরদা আগে থেকে বলে রেখেছিলেন। তাই আমরা গরুর মাংস দিয়ে গরম ভাত-ডাল খেতে পারলাম। মনে হচ্ছিল অমৃত। রান্নাটাও বেশ। জম্পেশ খাওয়া দিয়ে আবার রওনা দিলাম। লাচুংয়ে পৌঁছাতে হবে। ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আলবৎ মাথায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়েছিল। এরপর বাকিটা ইতিহাস। তবে পরদিন থেকে।
সন্ধ্যা নেমে এলে গাড়ির হেডলাইটের আলো ছাড়া গতি ছিল না। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, যাচ্ছি আবার মেঘের ভেতর দিয়ে। পথ একেবারে পিচ্ছিল। ভয় পাচ্ছিলাম না একটুও। কেননা, পান্ডেজি যেভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে ভরসা না করে পারা যায় না। তিনি মুখে তো অভয় দিচ্ছিলেনই, কাজ দিয়েও প্রমাণ করেছেন। সিকিমের এই পাহাড়ি পথ এমনভাবে তৈরি করা যে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খুব কম। জায়গায় জায়গায় সতর্কবার্তা লেখা আছে। আর চালকদের এতটাই মুখস্থ রাস্তা যে তারা চোখ বুজে পাড়ি দিতে পারেন।
লাচুংয়ে ঢোকার আগেও অনুমতি লাগল। সেখানে এক বিজ্ঞপ্তিতে লেখা দেখলাম উত্তরের কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে আর কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে না। অবশ্যই লাচুংয়ে টিক চিহ্ন দেওয়া ছিল। সেটা দেখে মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম। যাক বাবা, আটকে দিল না তাহলে। অনুমতি নিয়ে চলতে শুরু করলাম আবার। সাড়ে ৭টার পরপর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। আর্মি চেকপোস্টের কাছাকাছি ‘লাচুং রিজেন্সি’তে গিয়ে উঠলাম। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকে করে রেখেছিলেন অমরদা। এই হোটেলে লোক মাত্র দুজন। যিনি ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন, তিনি নিজেই রান্না করেন। তাঁর সঙ্গে একজন আছেন, যিনি অতিথিদের ফরমাশ খাটেন। তাঁকে সাহায্যও করেন। আমরা যার যার রুম বেছে নিয়ে হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিলাম। ভাগ্যিস এখানে খাওয়া না পাওয়া যাওয়ার ভয় ছিল না।
ধীরে-সুস্থেই খাবারঘরে গেলাম। বুফে সিস্টেম করে রেখেছিলেন আমাদের রাঁধুনি। ভাত, ডাল, সবজি, রুটি, মটর পনির, সালাদ। এখানে আমিষজাতীয় কোনো রান্না হয় না। বেশ ভালোই লাগল খেতে। ভাত ছাড়া সব খেলাম অল্প করে। বড় দলটাকে আমার ভালো লাগছিল না। তারা সবকিছুতে একটা লোকদেখানো ভাব করছিল। সে যাক গে, খেয়েদেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকে গল্প করছিলাম। এর মধ্যে হেঁশেল থেকে খবর এল, কেউ গরুর দুধ খেতে চায় কি না। তবে কিনে খেতে হবে। ভুবন খুব আগ্রহ নিয়ে দুধ আনতে গেল রান্নাঘরে। ফিরে এল একটা দুঃখ ভাব নিয়ে। ব্যাপার কী? এক গ্লাস দুধের দাম ৫০ রুপি! যদিও সে কিনে এনেছে এবং খুব কষ্ট করে গিলেছে। মনে হচ্ছিল টাকা গিলছে! সবার এক কথা, আমাদের দেশে ৭০ টাকায় লিটার আর এখানে মাত্র এক গ্লাস ৫০ রুপি! একটু বেশি হয়ে যায় না? এক গ্লাসের দাম পড়ছে তাহলে পঁয়ষট্টি টাকার মতো। গল্প-গুজব শেষ করে রুমে গেলাম ঘুমাতে। এমন সময় বাইরে হন্তদন্ত শুনলাম। পরদিন কে কোথায় যাবে সেটা নিয়ে বিস্তর ক্যাচাল লেগে গেল অমরদার সঙ্গে। কে আর লাগাবে। সেই বড় দলের পণ্ডিতেরা। অমরদার ভাষ্যমতে, জিরো পয়েন্টে গিয়ে কোনো লাভ নেই।
সময় নষ্ট না করে শুধু ইয়ামথাং ভ্যালি ঘুরে এলেই হবে। জিরো পয়েন্টে যেতে আর্মিরা ঝামেলা করতে পারে। তখন আবহাওয়াও সুবিধার ছিল না। আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা সব জেনে-বুঝে, অন্তর্জাল ঘেঁটে অমরদার কথায় রাজি ছিলাম। কিন্তু নাছোড়বান্দা বড় দলের লোকজন। কেউ যেতে চান, কেউ চান না। যাঁরা যেতে চান, তাঁদের কথা হলো, ‘টাকা দিচ্ছি আপনাকে, নেবেন না কেন? যাবই!’ অথচ অমরদা আগেই বলে রেখেছিলেন যে যদি অনুমতি না পাই, আবহাওয়া দখলে না থাকে কিংবা পরিস্থিতি ভিন্ন হয়, তবে আমাদের পরিকল্পনার পরিবর্তন হতে পারে। সে কথাটা আমাদের দলকে না বললেও আমরা জানতাম। সিকিম ঘুরতে গেলে এই কথাগুলো মাথায় রাখতে হয়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হলো যাঁরা জিরো পয়েন্টে যেতে চান, তাঁরা আলাদা যাবেন সকাল ৭টায়। আর বাকিরা নাশতা সেরে ৮টায় রওনা হবেন ইয়ামথাং ভ্যালির জন্য। জিরো পয়েন্ট ঘুরে বাকিরা সরাসরি ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে যাবেন। জিরো পয়েন্টে না যাওয়ার কারণ ছিল, সেখানে যা আছে তার চেয়ে কয়েক গুণ সুন্দর দৃশ্য ইয়ামথাং ভ্যালিতে আছে। শরীরের ওপর দিয়ে ধকল যাবে কি না, সে কথাও মাথা থেকে ফেলে দিলাম না। ওহ্, আরেকটা ব্যাপার, অমরদার কিন্তু জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল সাঙ্গুতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু অনুমতি পাননি। সেখানে আমরা সবাই যেতে চেয়েছিলাম। অনুমতি পাননি বিধায় কয়েকজন জেঁকে ধরেছিলেন জিরো পয়েন্টে নিয়ে যেতে। আমাদের সাঙ্গুতে নিতে না পারায় কিন্তু তিনি পরে তাঁর সম্মানীটাও কম রেখেছিলেন।
বিতর্কের সিদ্ধান্ত জানার পর ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু কী মুশকিল! ঘুম যে আসে না! এক ফোঁটাও না। না আমার, না ভুবনের। রাত যত বাড়ে, ঠান্ডা তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে। ঘুম কী করে আসে এমন অবস্থায়! রুমে হিটার আনালাম। সেখানে আবার রুম হিটারের জন্য আলাদা খরচ করতে হয়। কিন্তু সারা রাতেও হিটার ঘরটাকে গরম করতে পারল না। এদিকে বাইরে হচ্ছে তুষারপাত। তাপমাত্রা সম্ভবত মাইনাস ৯ ছিল। একাত-ওকাত করে করে রাত পার করলাম। সব মিলিয়ে বড়জোর ঘণ্টা দেড়েক ঘুমিয়েছি; ভোরের দিকে যখন ঘরটা গরম হলো।

উত্তরের পথে আমাদের অভিযান
‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে, প্রয়োজন হলে সময়ের আগে প্রস্তুত থাকতে হবে বা পৌঁছাতে হবে। কিন্তু দেরি হওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে তাই ওকে ‘আর্মি পারসন’ বলি! যাই হোক, সেখানকার সময় ৬টায় উঠে গেলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যে দুজনে তৈরি হয়ে রুম থেকে বেরিয়েছি। হঠাৎ বারান্দার একপাশ দিয়ে বাইরে চোখ যেতেই দেখি কী সুন্দর দৃশ্য! রাতে পাহাড়ের গায়ে যে তারা দেখেছিলাম জ্বলজ্বল করছে, সেগুলো দিনের আলোয় স্পষ্ট ঘরবাড়ি। ছবিতে দেখলে হয়তো মনে হবে বস্তি। সামনে থেকে না দেখলে এর সৌন্দর্য অনুভব করা যাবে না। ঝটপট সেই দৃশ্যের ছবি তুলে নিল ভুবন।
হোটেল থেকে বের হলাম নাশতা খাব বলে। রাতে তো নিয়নের আলোয় খুব একটা বুঝিনি, সকালে বের হয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মল রোডটা যে কত পরিষ্কার, স্বচ্ছ! রাস্তার ওপরেই যেন নির্দ্বিধায় গড়াগড়ি করা যাবে। রাস্তার একপাশ ‘ওয়ান ওয়ে’, অন্য পাশ দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করানো যায় না। এপাশ দিয়ে সবাই আরাম করে হাঁটাহাঁটি করে। আর একধারে কিছু দূর পর পর বেঞ্চি আছে। হাঁটতে হাঁটতে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। ওই পথ ধরে হেঁটে একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। খেলাম সবজি আর লুচি। সবজি বলতে গাঢ় ঝোলের মধ্যে আলু! আলুর দম বলা চলে। কিন্তু তারা এটাকে সবজিই নাম দিয়েছে। ভুবন অবশ্য লুচি না খেয়ে রুটি খেয়েছিল। মিষ্টির চেহারাগুলো দেখে এত লোভ লাগছিল! কিন্তু যেই খেতে গিয়েছি, আর ভালো লাগল না। নাশতা পর্ব শেষ করে আবার ছুটলাম হোটেলের দিকে। হাঁটার মাঝে থেমে থেমে কিছু ছবিও তুলে নিলাম। মোড়ে একটা বিশাল লাল পান্ডার ভাস্কর্য আছে। সেটার সঙ্গে ছবি তুলতে ভুললাম না। সময় পেলে সত্যিকারের লাল পান্ডা দেখতে যেতাম গ্যাংটকের চিড়িয়াখানায়, কিন্তু সময় হয়নি।
আমরা ঠিক ৭টার সময় হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সবাই প্রস্তুত। কিন্তু গাড়ি আসেনি। ৮টার পর গাড়ি পেয়ে রওনা হলাম বজরা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের উদ্দেশে। মোটামুটি পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে। সেখানে হলো মহাবিলম্ব! কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে, পায়চারি করে সময় পার করেছি, আল্লাহ জানেন। কথা ছিল আগের দিন রাতেই অমরদা সব গাড়ি ঠিক করে রাখবেন, কিন্তু পারেননি।
প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আমরা গাড়ি পেলাম। একটা বড় জিপ পেয়ে আমরা নয়জন চড়ে বসলাম সেটাতে। আমাদের দুজনকে সবাই জিজ্ঞেস করছিল কোথায় বসতে চাই। আমি বললাম, ‘আপনাদের সুবিধামতো আমাদের একটু জায়গা দিলেই হবে।’ আকাশ ভাই দুষ্টুমি করে বললেন, ‘তাহলে ছাদে বসে যান। আমরা আরাম করে যাই।’ আমি বললাম, ‘কোনো সমস্যা নাই। সেটা তো ভীষণ মজার ব্যাপার হবে!’ সবাই হো হো করে হেসে দিয়ে দুজনকে চালকের সঙ্গে সামনের সিটে বসতে দিলেন। সামনে দুইটা সিটই বলা চলে। চালকেরটা ছাড়া। আরামসে আমি আর ভুবন এঁটে যাই। সবাই গাড়িতে উঠে অপেক্ষা করছি। বাকিদের বসা হলে একসঙ্গে রওনা দেব। বড় দলটা আরও দুইটা জিপে ভাগ হয়ে উঠল। তবে ঝামেলা লেগেছিল ওই দলের দুজন ‘জেঠুমশাই’কে নিয়ে। তাঁরা দুজনে একই জায়গায় বসতে চান। অর্থাৎ, একই সিটে। এ নিয়ে তুমুল লঙ্কাকাণ্ড! গাল ফুলিয়ে, চোখ রাঙিয়ে যাঁর যাঁর পরিচয় দিচ্ছিলেন। মাঝখান দিয়ে বেচারা অমরদা হলেন তুলাধুনা। আমরা জিপের ভেতরে বসে থেকে দর্শকের মতো ওই নাটক-সিনেমা দেখছিলাম। পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আরে ওনারা এত বড় মানুষ হয়ে বাচ্চাদের মতো করছেন, অথচ আমাদের মিস্টার অ্যান্ড মিসেস এজাজের গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে যেতেও আপত্তি নাই।’ সত্যিই যদি এমন পরিস্থিতি হতো, তাহলেও আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে ঝুলেই যেতাম। যাই হোক, সিনেমাটা আধা ঘণ্টার মতো চলল। অবশেষে অমরদা গালি হজম করে হাসিমুখে সবাইকে নিয়ে রওনা দিলেন। প্রায় ১২টা বেজে গিয়েছিল তখন।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছি, বুঝতে পারছিলাম। আর সে কী যে পাগল করা অপরূপ সৌন্দর্য! এই পথে যেতে যেতে ‘মাশাআল্লাহ’, ‘সুবহানআল্লাহ’, ‘ওয়াও’, ‘অ্যামেজিং’ শব্দগুলো আপনা-আপনি মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। সবাই মিলে এক এক করে গান ধরলাম। আকাশ ভাইয়ের গলা ভালো। তিনি অনেক গান গাইলেন। পুরোটা পথ এই গানের আসর সঙ্গী ছিল। ভুবনের গান শুনে তো সবাই মুগ্ধ। আকাশ ভাই আমাকে বলছিলেন, ‘বাহ, আপনার স্বামীর গানের গলা তো বেশ!’ মুচকি হেসে বললাম, ‘এমনি এমনি কি আর প্রেমে পড়েছি!’ এ কথা শুনে সবাই হেসে দিলেন। এরপর এল আমাদের প্রেমকাহিনির গল্পের অনুরোধ। গানের ফাঁকে ফাঁকে সেটাও হয়ে গেল। আমার গানের গলা ভালো না। ছেড়ে গাইতে পারি না। অনেকটা নাকি সুরে গাই। তবু সবার জোর অনুরোধে গাইতে হলো। একটার বেশি গাইলাম না। কারণ আমি ওই একটা গানই একটু ছেড়ে দিয়ে গাইতে পারি, ‘তোমার ঘরে বাস করে কারা...’।
আমাদের সামনে বসার খুব ভালো একটা সুফল পাওয়া গেছে। যতটা স্পষ্ট আমরা দুজন দেখতে পাচ্ছিলাম বাইরের দৃশ্য, পেছনের লোকজন হয়তো সেটার অর্ধেক দেখেছে। তবু যা দেখেছে, তাতে চোখ ছানাবড়া না হয়ে পারেই না। পথে থেমে থেমে পাহাড়ি ঝরনা দেখাচ্ছিলেন আমাদের চালক। তাঁর নাম রবিন। নামটা শুনে তাঁকে রবিন হুড ডাকতে ইচ্ছা হলো। রবিন হুড থেকে মনে পড়ল সালমান খানের ‘চুলবুল পান্ডে ওরফে রবিন হুড পান্ডে’ চরিত্রের কথা। আমি তাই তাঁকে ‘পান্ডেজি’ বলে ডাকা শুরু করলাম। পান্ডেজি নরম মানুষ। আস্তে-ধীরে কথা বলেন। নেপালি। মানে, সিকিমের বাসিন্দা আরকি। তিনি সবগুলো ঝরনার নাম ও বর্ণনা দিলেন। সব ঝরনার নামের সাইনবোর্ড নেই আবার। সেখানে নাম লেখা থাকে সাধারণত। আবার কোনো কোনো ঝরনার নাম নেই। সেগুলো ছোটখাটো। অনেক ঝরনার নাম পান্ডেজি নিজেও জানেন না। কারণ সেগুলো নতুন। সেভেন সিস্টার্স, নাগা, ভিম নালাসহ আরও ছোট-বড় কিছু ঝরনা দেখলাম। ভিম নালা ঝরনাটার আরেকটা নাম আছে। ‘অমিতাভ বচ্চন ফলস’। এমন নাম কেন, জিজ্ঞেস করতেই পান্ডেজি বললেন, ‘উ বহুত লম্বা হ্যায়। উ অ্যাক্টর হ্যায় না, অমিতাভ বচ্চন, উসকি তারাহ।’ লম্বায় এটা ২৭৫ ফুট। এর আরেক নাম ভিমা ফলস। স্থানীয় ভাষায় ভিমা বা ভিম নালা মানে ‘রেড স্নেক’ বা লাল সাপ। তাই এর আরেক নাম ‘রেড স্নেক’। বিগত কয়েক বছর ধরে পর্যটকেরা এই ঝরনাকে আবার ‘লাচুং নর্থ সিকিম ফলস’ নামেও ডাকছে। ঝরনার পাশাপাশি মেঘের কথা না বললেই নয়। পাহাড়ের চূড়ায় তুলার মতো লেগে থাকা মেঘ দেখা যায় দূর থেকে। আর পাহাড়ের নিচে স্বচ্ছ সবুজ তিস্তার পানি বয়ে চলে। ওপরের দিকে উঠতে উঠতে মেঘের ভেতর দিয়ে গিয়েছি আমরা। গাড়ি থেকে নেমেও ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। আসলে মেঘ নিজেই তো আমাদের জাপটে ধরে।
দুপুর থেকে পেটে উৎপাত শুরু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পথে টং দোকানের চা-বিস্কুট ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। শেষে বিকালের দিকে এক মুসলিম হোটেল পেলাম। পাহাড়ি রাস্তার একপাশে বেড়ার হোটেল। নিচের দিকে নেমে গেলে গ্রাম। সেখানে বেশির ভাগ মুসলমানরাই বাস করে। অনেকটা লুকিয়ে তারা গোমাংস রান্না করে খাওয়ায়। অমরদা আগে থেকে বলে রেখেছিলেন। তাই আমরা গরুর মাংস দিয়ে গরম ভাত-ডাল খেতে পারলাম। মনে হচ্ছিল অমৃত। রান্নাটাও বেশ। জম্পেশ খাওয়া দিয়ে আবার রওনা দিলাম। লাচুংয়ে পৌঁছাতে হবে। ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আলবৎ মাথায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়েছিল। এরপর বাকিটা ইতিহাস। তবে পরদিন থেকে।
সন্ধ্যা নেমে এলে গাড়ির হেডলাইটের আলো ছাড়া গতি ছিল না। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, যাচ্ছি আবার মেঘের ভেতর দিয়ে। পথ একেবারে পিচ্ছিল। ভয় পাচ্ছিলাম না একটুও। কেননা, পান্ডেজি যেভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে ভরসা না করে পারা যায় না। তিনি মুখে তো অভয় দিচ্ছিলেনই, কাজ দিয়েও প্রমাণ করেছেন। সিকিমের এই পাহাড়ি পথ এমনভাবে তৈরি করা যে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খুব কম। জায়গায় জায়গায় সতর্কবার্তা লেখা আছে। আর চালকদের এতটাই মুখস্থ রাস্তা যে তারা চোখ বুজে পাড়ি দিতে পারেন।
লাচুংয়ে ঢোকার আগেও অনুমতি লাগল। সেখানে এক বিজ্ঞপ্তিতে লেখা দেখলাম উত্তরের কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে আর কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে না। অবশ্যই লাচুংয়ে টিক চিহ্ন দেওয়া ছিল। সেটা দেখে মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম। যাক বাবা, আটকে দিল না তাহলে। অনুমতি নিয়ে চলতে শুরু করলাম আবার। সাড়ে ৭টার পরপর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। আর্মি চেকপোস্টের কাছাকাছি ‘লাচুং রিজেন্সি’তে গিয়ে উঠলাম। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকে করে রেখেছিলেন অমরদা। এই হোটেলে লোক মাত্র দুজন। যিনি ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন, তিনি নিজেই রান্না করেন। তাঁর সঙ্গে একজন আছেন, যিনি অতিথিদের ফরমাশ খাটেন। তাঁকে সাহায্যও করেন। আমরা যার যার রুম বেছে নিয়ে হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিলাম। ভাগ্যিস এখানে খাওয়া না পাওয়া যাওয়ার ভয় ছিল না।
ধীরে-সুস্থেই খাবারঘরে গেলাম। বুফে সিস্টেম করে রেখেছিলেন আমাদের রাঁধুনি। ভাত, ডাল, সবজি, রুটি, মটর পনির, সালাদ। এখানে আমিষজাতীয় কোনো রান্না হয় না। বেশ ভালোই লাগল খেতে। ভাত ছাড়া সব খেলাম অল্প করে। বড় দলটাকে আমার ভালো লাগছিল না। তারা সবকিছুতে একটা লোকদেখানো ভাব করছিল। সে যাক গে, খেয়েদেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকে গল্প করছিলাম। এর মধ্যে হেঁশেল থেকে খবর এল, কেউ গরুর দুধ খেতে চায় কি না। তবে কিনে খেতে হবে। ভুবন খুব আগ্রহ নিয়ে দুধ আনতে গেল রান্নাঘরে। ফিরে এল একটা দুঃখ ভাব নিয়ে। ব্যাপার কী? এক গ্লাস দুধের দাম ৫০ রুপি! যদিও সে কিনে এনেছে এবং খুব কষ্ট করে গিলেছে। মনে হচ্ছিল টাকা গিলছে! সবার এক কথা, আমাদের দেশে ৭০ টাকায় লিটার আর এখানে মাত্র এক গ্লাস ৫০ রুপি! একটু বেশি হয়ে যায় না? এক গ্লাসের দাম পড়ছে তাহলে পঁয়ষট্টি টাকার মতো। গল্প-গুজব শেষ করে রুমে গেলাম ঘুমাতে। এমন সময় বাইরে হন্তদন্ত শুনলাম। পরদিন কে কোথায় যাবে সেটা নিয়ে বিস্তর ক্যাচাল লেগে গেল অমরদার সঙ্গে। কে আর লাগাবে। সেই বড় দলের পণ্ডিতেরা। অমরদার ভাষ্যমতে, জিরো পয়েন্টে গিয়ে কোনো লাভ নেই।
সময় নষ্ট না করে শুধু ইয়ামথাং ভ্যালি ঘুরে এলেই হবে। জিরো পয়েন্টে যেতে আর্মিরা ঝামেলা করতে পারে। তখন আবহাওয়াও সুবিধার ছিল না। আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা সব জেনে-বুঝে, অন্তর্জাল ঘেঁটে অমরদার কথায় রাজি ছিলাম। কিন্তু নাছোড়বান্দা বড় দলের লোকজন। কেউ যেতে চান, কেউ চান না। যাঁরা যেতে চান, তাঁদের কথা হলো, ‘টাকা দিচ্ছি আপনাকে, নেবেন না কেন? যাবই!’ অথচ অমরদা আগেই বলে রেখেছিলেন যে যদি অনুমতি না পাই, আবহাওয়া দখলে না থাকে কিংবা পরিস্থিতি ভিন্ন হয়, তবে আমাদের পরিকল্পনার পরিবর্তন হতে পারে। সে কথাটা আমাদের দলকে না বললেও আমরা জানতাম। সিকিম ঘুরতে গেলে এই কথাগুলো মাথায় রাখতে হয়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হলো যাঁরা জিরো পয়েন্টে যেতে চান, তাঁরা আলাদা যাবেন সকাল ৭টায়। আর বাকিরা নাশতা সেরে ৮টায় রওনা হবেন ইয়ামথাং ভ্যালির জন্য। জিরো পয়েন্ট ঘুরে বাকিরা সরাসরি ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে যাবেন। জিরো পয়েন্টে না যাওয়ার কারণ ছিল, সেখানে যা আছে তার চেয়ে কয়েক গুণ সুন্দর দৃশ্য ইয়ামথাং ভ্যালিতে আছে। শরীরের ওপর দিয়ে ধকল যাবে কি না, সে কথাও মাথা থেকে ফেলে দিলাম না। ওহ্, আরেকটা ব্যাপার, অমরদার কিন্তু জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল সাঙ্গুতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু অনুমতি পাননি। সেখানে আমরা সবাই যেতে চেয়েছিলাম। অনুমতি পাননি বিধায় কয়েকজন জেঁকে ধরেছিলেন জিরো পয়েন্টে নিয়ে যেতে। আমাদের সাঙ্গুতে নিতে না পারায় কিন্তু তিনি পরে তাঁর সম্মানীটাও কম রেখেছিলেন।
বিতর্কের সিদ্ধান্ত জানার পর ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু কী মুশকিল! ঘুম যে আসে না! এক ফোঁটাও না। না আমার, না ভুবনের। রাত যত বাড়ে, ঠান্ডা তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে। ঘুম কী করে আসে এমন অবস্থায়! রুমে হিটার আনালাম। সেখানে আবার রুম হিটারের জন্য আলাদা খরচ করতে হয়। কিন্তু সারা রাতেও হিটার ঘরটাকে গরম করতে পারল না। এদিকে বাইরে হচ্ছে তুষারপাত। তাপমাত্রা সম্ভবত মাইনাস ৯ ছিল। একাত-ওকাত করে করে রাত পার করলাম। সব মিলিয়ে বড়জোর ঘণ্টা দেড়েক ঘুমিয়েছি; ভোরের দিকে যখন ঘরটা গরম হলো।

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
১৬ মিনিট আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৫ ঘণ্টা আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন।
৬ ঘণ্টা আগে
শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের...
৭ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।
লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–
লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার
ন্যুড গ্লো লুক
লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।
ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড
লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।
ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক
এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।
স্মোকি আই
রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।
ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক
ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।
ঠোঁট ও নখ
খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।
চুল
লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।
চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন
আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।
লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–
লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার
ন্যুড গ্লো লুক
লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।
ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড
লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।
ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক
এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।
স্মোকি আই
রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।
ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক
ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।
ঠোঁট ও নখ
খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।
চুল
লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।
চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন
আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে...
২৫ অক্টোবর ২০২২
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৫ ঘণ্টা আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন।
৬ ঘণ্টা আগে
শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের...
৭ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।
ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম
শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য
ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা
ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব
কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো
আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।
সূত্র: হেলথশট

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।
ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম
শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য
ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা
ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব
কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো
আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।
সূত্র: হেলথশট

‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে...
২৫ অক্টোবর ২০২২
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
১৬ মিনিট আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন।
৬ ঘণ্টা আগে
শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের...
৭ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
আজ আপনার শরীরে এত বেশি এনার্জি থাকবে যে ভুলবশত বাড়ির সব ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র চার্জ করার চেষ্টা করতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত উৎসাহে আজ এমন কিছু করার চেষ্টা করবেন না, যাতে প্রতিবেশী আপনাকে দেখে দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রেমের ক্ষেত্রে প্রিয়জনকে ইমপ্রেস করতে গিয়ে এমন কিছু বলে ফেলবেন, যা গুগলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত শক্তি কাজে লাগিয়ে আজ অন্তত একটা পুরোনো বাক্স গুছিয়ে ফেলুন। বাকিটা ওপরওয়ালার হাতে!
বৃষ
আপনার জীবনের ‘স্বযত্নলালিত স্বপ্ন’ আজ সত্যি হতে পারে! আর সেই স্বপ্নটি হলো, সারা দিন সোফায় শুয়ে থাকা এবং প্রিয় খাবার ডেলিভারি নেওয়া। আজ এমন এক গভীর আলস্যের জালে জড়িয়ে পড়বেন যে, রিমোট কন্ট্রোলটা হাত থেকে পড়ে গেলে সেটা তোলার জন্য কাউকে ফোন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কর্মক্ষেত্রে কাজের গতি হবে কচ্ছপের থেকেও ধীর। সহকর্মীরা ভাববে, আপনি হয়তো ধ্যানের নতুন কোনো উচ্চস্তরে পৌঁছে গেছেন। অর্থের দিক থেকে আজ এমন কিছু ডিসকাউন্ট খুঁজতে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন, যা আসলে অস্তিত্বহীন। আজ যদি কেউ আপনাকে তাড়াহুড়ো করতে বলে, মনে মনে বলুন: ‘আমি বৃষ, তাড়াহুড়ো আমার ডিকশনারিতে নেই। ওটা অন্য কোনো রাশির জন্য।’
মিথুন
আপনার ভেতরের দুটি মানুষ আজ সকাল থেকে প্রচণ্ড তর্কে লিপ্ত থাকবে। একজন বলবে, ‘আজ আমি পৃথিবীকে জয় করব!’ অন্যজন বলবে, ‘আরে বাবা, আগে ঠিক করো কোন রঙের মোজাটা পরবে!’ আপনি কোনো একটি বিষয়ে স্থির হতে পারবেন না। কফি না চা? লাল শার্ট না নীল? এই দ্বিধায় পুরো দিন কেটে যাবে। এমন কারও অভাব অনুভব করবেন, যে আপনার সব দ্বিমুখী সিদ্ধান্তকে একমুখী করে দিতে পারে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি আজ চূড়ান্ত জনপ্রিয়। এত বেশি মেসেজ আসবে যে ফোন চার্জে দিয়েই আপনি হয়তো চার্জার খুঁজে পাবেন না। আজ একটি মাত্র কাজ করুন: স্থির থাকুন। যদি না পারেন, তাহলে একটি কয়েন টস করুন এবং টস হওয়ার আগেই সেই সিদ্ধান্তকে মেনে নিন।
কর্কট
আজ আপনার মন অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। যেকোনো তুচ্ছ ঘটনাতেই চোখে পানি চলে আসতে পারে। হয়তো দেখবেন, ফ্রিজে শেষ রুটিটা দেখে অতীতের সব দুঃখ মনে পড়ে যাচ্ছে। মনে হবে, পৃথিবীর সবচেয়ে আরামদায়ক স্থান হলো ঘর। তাই আজ ঘর থেকে বের হতে চাইবেন না। যদি বের হতে হয়, তাহলে একটা বালিশ আর কম্বল সঙ্গে নিয়ে নিন—কে জানে কখন কোথায় একটু আবেগ নিয়ে বসা দরকার হয়! পরিবারকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবেন। বিশেষত, বাড়ির পোষা প্রাণীটি ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা, সেটা নিয়ে আজ গবেষণা করতে পারেন। আজ অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। তবে পুরোনো বিল বা ফাইনাল পরীক্ষার খাতা দেখলে চোখ মুছতে টিস্যু পেপার হাতের কাছে রাখুন।
সিংহ
আজ যা কিছু করবেন, তাতেই আপনার লাইমলাইট চাই। ধরুন, অফিসে এক গ্লাস পানি খেলেন, আপনার মনে হবে সেটা একটা প্রেস কনফারেন্সের যোগ্য ইভেন্ট। যদি কেউ আপনার দিকে না তাকায়, তাহলে নিজেই জোরে জোরে নিজের প্রশংসা শুরু করে দেবেন। আপনার মনে হবে, আপনার প্রতিটি পদক্ষেপই বুঝি ইতিহাস তৈরি করছে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনার আপনার প্রশংসা না করলে আপনি হয়তো সাময়িক ধর্মঘট শুরু করে দিতে পারেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেলে বিল দেওয়ার সময় এমন নাটকীয় ভঙ্গিতে মানিব্যাগ বের করবেন, যাতে মনে হয় আপনি পুরো গ্যালাক্সির দেনা মেটাচ্ছেন। সবার মনোযোগ পেতে আজ আপনি যা-ই করুন না কেন, শেষমেশ দেখবেন বাড়ির কুকুরটাই সবচেয়ে বেশি করতালি পাচ্ছে। সেটা মেনে নিন।
কন্যা
আজ আপনার মস্তিষ্ক একটি হাইপার-অ্যাকটিভ স্প্রেডশিটের মতো চলবে। আপনার প্রধান চিন্তা হবে, বালিশের কভারটি আর টেবিলের কোণটা একই সমান্তরালে আছে কি না। কাজের জায়গায় সহকর্মীর কফির মগে কতটুকু চিনি বেশি আছে, সেটা বের করে ফেলবেন। আর সেই খুঁত নিয়েই আপনি আজ একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে ফেলবেন। যদি দেখেন কোনো কিছু নিখুঁত নয়, তাহলে মেজাজ সপ্তমে উঠবে। দুশ্চিন্তা করবেন না, আজকের দিনের সবচেয়ে বড় ভুলটি হয়তো আপনিই করবেন, সঠিকটা করতে গিয়ে ভুলটা করে ফেলবেন! আজ দয়া করে নিজের চুল গুনতে শুরু করবেন না। আজ অন্তত একবার একটা ভুল করুন। স্বাধীনতা উপভোগ করুন!
তুলা
ন্যায়, ভারসাম্য এবং সৌন্দর্যের পূজারি আপনি আজ একটি কঠিন পরীক্ষায় পড়বেন। আপনাকে হয়তো ঠিক করতে হবে, দুপুরে ভাত খাবেন নাকি রুটি! এই নিয়েই অন্তত এক ঘণ্টা ভাববেন এবং শেষমেশ দুটোই খেয়ে ফেলবেন। কর্মক্ষেত্রে দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী মতের সঙ্গে সহমত হবেন, আর এতে সহকর্মীরা আপনাকে ‘ডাবল এজেন্ট’ ভাবতে পারে। প্রেমের ক্ষেত্রে পার্টনারের সামান্যতম অভিযোগ শুনেই এত বেশি ভারসাম্য আনতে চাইবেন যে সম্পর্কটা দড়ির ওপর হাঁটা সার্কাসের মতো মনে হবে। কোনো জটিল সিদ্ধান্ত এলে আজ শুধু একটা জিনিস ভাবুন: যেটাতে আপনার সবচেয়ে কম কষ্ট হবে। ব্যস! ব্যালেন্স নিজের থেকেই চলে আসবে।
বৃশ্চিক
আজ মন গভীর ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত থাকবে। হয়তো ভাববেন, পাশের ডেস্কের সহকর্মী কেন আজ আপনার দিকে একটু বেশি হেসেছেন? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো গভীর রহস্য আছে! সারা দিন ধরে সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করবেন, যা আসলে সামান্য দাঁত ব্রাশ করার পরের হাসি। তীব্র মনোযোগ আজ আপনাকে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান দেবে, কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার নীরবতা আজ একটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। লোকে ভাববে আপনি ধ্যান করছেন, কিন্তু আসলে ভাবছেন, কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীর চায়ে লবণ মিশিয়ে দেবেন। কাউকে কিছু বলবেন না। নীরবতা আজ স্বর্ণময়। সেটা জমিয়ে রাখুন।
ধনু
আজ মন চঞ্চল, আজ বাড়ি ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করতে পারেন। হয়তো অফিস থেকে সোজা হিমালয় বা চাঁদে চলে যাওয়ার টিকিট খুঁজতে থাকবেন। আপনার ফিলোসফিক্যাল রগ আজ এত বেশি চড়ে থাকবে যে, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে মহাজাগতিক সত্য আবিষ্কার করতে পারেন। আপনার অতি-সৎ কথাগুলো আজ কারও না কারও মন খারাপ করবে। হয়তো বলবেন, ‘তোমাকে এই শাড়িতে এত মোটা লাগছে না, যতটা গত সপ্তাহে লাগছিল।’ এই রাশিফল পড়ার সময়ও আপনি ভাবছেন, এটার কোথাও কোনো বানান ভুল আছে কি না। আজ মুখটা সাবধানে ব্যবহার করুন। বিশেষত যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকে, তাহলে কথা বলার আগে তিনবার কফি খান।
মকর
আজ আপনি বিশ্বের সবচেয়ে সফল এবং গম্ভীর মানুষ। মনে করবেন, পৃথিবীর সব দায়িত্ব আপনার কাঁধেই। আপনার প্রধান শখ হবে অন্যদের হাসতে দেখে বিরক্ত হওয়া। ভাববেন, ‘এরা এত হাসছে কেন? কাজের ডেডলাইন তো এখনো বাকি!’ আপনার মনে হবে, আপনি যদি এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেন, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনারকে ইমপ্রেস করতে কোনো রোমান্টিক ডিনার বা উপহার না দিয়ে, বরং একটি সুন্দর এক্সেল শিট তৈরি করে দেবেন, যেখানে আপনাদের সম্পর্কের আগামী ১০ বছরের লক্ষ্য লেখা থাকবে। আজকের দিনটি একটু আরাম করুন। না করলে মস্তিষ্ক আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে আপনার দাঁত ব্রাশ করা বাকি এবং এই ভুলটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
কুম্ভ
আজ এমন একটি অদ্ভুত আইডিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, যা পৃথিবীর বাকি ১১টা রাশি কখনোই বুঝবে না। হয়তো ঠিক করবেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে কীভাবে বিশ্বশান্তি আনা যায়, অথবা কেন সব শার্টে তিনটি করে কলার থাকা উচিত। আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলো আজ খুবই বৈপ্লবিক হবে, কিন্তু বন্ধুরা হয়তো ভাববে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কেউ আপনার কথা বুঝতে না পারলে আরও খুশি হবেন—কারণ জানেন আপনি কতটা এগিয়ে! প্রেম নিয়ে ভাবনা হবে, কেন এই ‘সামাজিক বন্ধন’-এর প্রয়োজন, যেখানে দুজন মানুষ শুধু নিজেদের মধ্যে একটি ইমোজি বিনিময় করেও দিব্যি থাকতে পারে। পরামর্শ: আপনার আইডিয়াগুলো খুব ভালো। কিন্তু আজ দয়া করে আপনার আইডিয়াগুলো দিয়ে পোষা প্রাণীটির ওপর কোনো পরীক্ষা করবেন না।
মীন
আজ বাস্তবের ধারেকাছেও থাকবেন না। দিনের বেশির ভাগ সময় এমন এক কল্পনার জগতে ভেসে বেড়াবেন, যেখানে আপনার সব বিল পরিশোধ হয়ে গেছে এবং পোষা মাছটা কথা বলতে পারে। কাজের জায়গায় ভুলবশত সহকর্মীকে ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমার/রাজকুমারী’ বলে ডাকতে পারেন। মনে হবে, জীবন একটি হিন্দি সিনেমা, আর আপনি তার হিরো/হিরোইন। যদি কিছু ভুলে যান, যেমন চাবি বা মানিব্যাগ, তার জন্য গ্রহদের দোষ দেবেন। সন্ধ্যায়, হয়তো এত বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবেন যে টিভির সিরিয়ালের ভিলেনের দুঃখেও চোখে পানি চলে আসবে। আজ চোখ খুলে হাঁটুন। আর যদি চারপাশের মানুষ আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তাহলে চোখ বন্ধ করে শুধু ‘হুম’ বলে দিন। নিরাপদ থাকবেন।

মেষ
আজ আপনার শরীরে এত বেশি এনার্জি থাকবে যে ভুলবশত বাড়ির সব ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র চার্জ করার চেষ্টা করতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত উৎসাহে আজ এমন কিছু করার চেষ্টা করবেন না, যাতে প্রতিবেশী আপনাকে দেখে দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রেমের ক্ষেত্রে প্রিয়জনকে ইমপ্রেস করতে গিয়ে এমন কিছু বলে ফেলবেন, যা গুগলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত শক্তি কাজে লাগিয়ে আজ অন্তত একটা পুরোনো বাক্স গুছিয়ে ফেলুন। বাকিটা ওপরওয়ালার হাতে!
বৃষ
আপনার জীবনের ‘স্বযত্নলালিত স্বপ্ন’ আজ সত্যি হতে পারে! আর সেই স্বপ্নটি হলো, সারা দিন সোফায় শুয়ে থাকা এবং প্রিয় খাবার ডেলিভারি নেওয়া। আজ এমন এক গভীর আলস্যের জালে জড়িয়ে পড়বেন যে, রিমোট কন্ট্রোলটা হাত থেকে পড়ে গেলে সেটা তোলার জন্য কাউকে ফোন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কর্মক্ষেত্রে কাজের গতি হবে কচ্ছপের থেকেও ধীর। সহকর্মীরা ভাববে, আপনি হয়তো ধ্যানের নতুন কোনো উচ্চস্তরে পৌঁছে গেছেন। অর্থের দিক থেকে আজ এমন কিছু ডিসকাউন্ট খুঁজতে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন, যা আসলে অস্তিত্বহীন। আজ যদি কেউ আপনাকে তাড়াহুড়ো করতে বলে, মনে মনে বলুন: ‘আমি বৃষ, তাড়াহুড়ো আমার ডিকশনারিতে নেই। ওটা অন্য কোনো রাশির জন্য।’
মিথুন
আপনার ভেতরের দুটি মানুষ আজ সকাল থেকে প্রচণ্ড তর্কে লিপ্ত থাকবে। একজন বলবে, ‘আজ আমি পৃথিবীকে জয় করব!’ অন্যজন বলবে, ‘আরে বাবা, আগে ঠিক করো কোন রঙের মোজাটা পরবে!’ আপনি কোনো একটি বিষয়ে স্থির হতে পারবেন না। কফি না চা? লাল শার্ট না নীল? এই দ্বিধায় পুরো দিন কেটে যাবে। এমন কারও অভাব অনুভব করবেন, যে আপনার সব দ্বিমুখী সিদ্ধান্তকে একমুখী করে দিতে পারে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি আজ চূড়ান্ত জনপ্রিয়। এত বেশি মেসেজ আসবে যে ফোন চার্জে দিয়েই আপনি হয়তো চার্জার খুঁজে পাবেন না। আজ একটি মাত্র কাজ করুন: স্থির থাকুন। যদি না পারেন, তাহলে একটি কয়েন টস করুন এবং টস হওয়ার আগেই সেই সিদ্ধান্তকে মেনে নিন।
কর্কট
আজ আপনার মন অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। যেকোনো তুচ্ছ ঘটনাতেই চোখে পানি চলে আসতে পারে। হয়তো দেখবেন, ফ্রিজে শেষ রুটিটা দেখে অতীতের সব দুঃখ মনে পড়ে যাচ্ছে। মনে হবে, পৃথিবীর সবচেয়ে আরামদায়ক স্থান হলো ঘর। তাই আজ ঘর থেকে বের হতে চাইবেন না। যদি বের হতে হয়, তাহলে একটা বালিশ আর কম্বল সঙ্গে নিয়ে নিন—কে জানে কখন কোথায় একটু আবেগ নিয়ে বসা দরকার হয়! পরিবারকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবেন। বিশেষত, বাড়ির পোষা প্রাণীটি ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা, সেটা নিয়ে আজ গবেষণা করতে পারেন। আজ অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। তবে পুরোনো বিল বা ফাইনাল পরীক্ষার খাতা দেখলে চোখ মুছতে টিস্যু পেপার হাতের কাছে রাখুন।
সিংহ
আজ যা কিছু করবেন, তাতেই আপনার লাইমলাইট চাই। ধরুন, অফিসে এক গ্লাস পানি খেলেন, আপনার মনে হবে সেটা একটা প্রেস কনফারেন্সের যোগ্য ইভেন্ট। যদি কেউ আপনার দিকে না তাকায়, তাহলে নিজেই জোরে জোরে নিজের প্রশংসা শুরু করে দেবেন। আপনার মনে হবে, আপনার প্রতিটি পদক্ষেপই বুঝি ইতিহাস তৈরি করছে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনার আপনার প্রশংসা না করলে আপনি হয়তো সাময়িক ধর্মঘট শুরু করে দিতে পারেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেলে বিল দেওয়ার সময় এমন নাটকীয় ভঙ্গিতে মানিব্যাগ বের করবেন, যাতে মনে হয় আপনি পুরো গ্যালাক্সির দেনা মেটাচ্ছেন। সবার মনোযোগ পেতে আজ আপনি যা-ই করুন না কেন, শেষমেশ দেখবেন বাড়ির কুকুরটাই সবচেয়ে বেশি করতালি পাচ্ছে। সেটা মেনে নিন।
কন্যা
আজ আপনার মস্তিষ্ক একটি হাইপার-অ্যাকটিভ স্প্রেডশিটের মতো চলবে। আপনার প্রধান চিন্তা হবে, বালিশের কভারটি আর টেবিলের কোণটা একই সমান্তরালে আছে কি না। কাজের জায়গায় সহকর্মীর কফির মগে কতটুকু চিনি বেশি আছে, সেটা বের করে ফেলবেন। আর সেই খুঁত নিয়েই আপনি আজ একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে ফেলবেন। যদি দেখেন কোনো কিছু নিখুঁত নয়, তাহলে মেজাজ সপ্তমে উঠবে। দুশ্চিন্তা করবেন না, আজকের দিনের সবচেয়ে বড় ভুলটি হয়তো আপনিই করবেন, সঠিকটা করতে গিয়ে ভুলটা করে ফেলবেন! আজ দয়া করে নিজের চুল গুনতে শুরু করবেন না। আজ অন্তত একবার একটা ভুল করুন। স্বাধীনতা উপভোগ করুন!
তুলা
ন্যায়, ভারসাম্য এবং সৌন্দর্যের পূজারি আপনি আজ একটি কঠিন পরীক্ষায় পড়বেন। আপনাকে হয়তো ঠিক করতে হবে, দুপুরে ভাত খাবেন নাকি রুটি! এই নিয়েই অন্তত এক ঘণ্টা ভাববেন এবং শেষমেশ দুটোই খেয়ে ফেলবেন। কর্মক্ষেত্রে দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী মতের সঙ্গে সহমত হবেন, আর এতে সহকর্মীরা আপনাকে ‘ডাবল এজেন্ট’ ভাবতে পারে। প্রেমের ক্ষেত্রে পার্টনারের সামান্যতম অভিযোগ শুনেই এত বেশি ভারসাম্য আনতে চাইবেন যে সম্পর্কটা দড়ির ওপর হাঁটা সার্কাসের মতো মনে হবে। কোনো জটিল সিদ্ধান্ত এলে আজ শুধু একটা জিনিস ভাবুন: যেটাতে আপনার সবচেয়ে কম কষ্ট হবে। ব্যস! ব্যালেন্স নিজের থেকেই চলে আসবে।
বৃশ্চিক
আজ মন গভীর ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত থাকবে। হয়তো ভাববেন, পাশের ডেস্কের সহকর্মী কেন আজ আপনার দিকে একটু বেশি হেসেছেন? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো গভীর রহস্য আছে! সারা দিন ধরে সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করবেন, যা আসলে সামান্য দাঁত ব্রাশ করার পরের হাসি। তীব্র মনোযোগ আজ আপনাকে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান দেবে, কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার নীরবতা আজ একটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। লোকে ভাববে আপনি ধ্যান করছেন, কিন্তু আসলে ভাবছেন, কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীর চায়ে লবণ মিশিয়ে দেবেন। কাউকে কিছু বলবেন না। নীরবতা আজ স্বর্ণময়। সেটা জমিয়ে রাখুন।
ধনু
আজ মন চঞ্চল, আজ বাড়ি ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করতে পারেন। হয়তো অফিস থেকে সোজা হিমালয় বা চাঁদে চলে যাওয়ার টিকিট খুঁজতে থাকবেন। আপনার ফিলোসফিক্যাল রগ আজ এত বেশি চড়ে থাকবে যে, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে মহাজাগতিক সত্য আবিষ্কার করতে পারেন। আপনার অতি-সৎ কথাগুলো আজ কারও না কারও মন খারাপ করবে। হয়তো বলবেন, ‘তোমাকে এই শাড়িতে এত মোটা লাগছে না, যতটা গত সপ্তাহে লাগছিল।’ এই রাশিফল পড়ার সময়ও আপনি ভাবছেন, এটার কোথাও কোনো বানান ভুল আছে কি না। আজ মুখটা সাবধানে ব্যবহার করুন। বিশেষত যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকে, তাহলে কথা বলার আগে তিনবার কফি খান।
মকর
আজ আপনি বিশ্বের সবচেয়ে সফল এবং গম্ভীর মানুষ। মনে করবেন, পৃথিবীর সব দায়িত্ব আপনার কাঁধেই। আপনার প্রধান শখ হবে অন্যদের হাসতে দেখে বিরক্ত হওয়া। ভাববেন, ‘এরা এত হাসছে কেন? কাজের ডেডলাইন তো এখনো বাকি!’ আপনার মনে হবে, আপনি যদি এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেন, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনারকে ইমপ্রেস করতে কোনো রোমান্টিক ডিনার বা উপহার না দিয়ে, বরং একটি সুন্দর এক্সেল শিট তৈরি করে দেবেন, যেখানে আপনাদের সম্পর্কের আগামী ১০ বছরের লক্ষ্য লেখা থাকবে। আজকের দিনটি একটু আরাম করুন। না করলে মস্তিষ্ক আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে আপনার দাঁত ব্রাশ করা বাকি এবং এই ভুলটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
কুম্ভ
আজ এমন একটি অদ্ভুত আইডিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, যা পৃথিবীর বাকি ১১টা রাশি কখনোই বুঝবে না। হয়তো ঠিক করবেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে কীভাবে বিশ্বশান্তি আনা যায়, অথবা কেন সব শার্টে তিনটি করে কলার থাকা উচিত। আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলো আজ খুবই বৈপ্লবিক হবে, কিন্তু বন্ধুরা হয়তো ভাববে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কেউ আপনার কথা বুঝতে না পারলে আরও খুশি হবেন—কারণ জানেন আপনি কতটা এগিয়ে! প্রেম নিয়ে ভাবনা হবে, কেন এই ‘সামাজিক বন্ধন’-এর প্রয়োজন, যেখানে দুজন মানুষ শুধু নিজেদের মধ্যে একটি ইমোজি বিনিময় করেও দিব্যি থাকতে পারে। পরামর্শ: আপনার আইডিয়াগুলো খুব ভালো। কিন্তু আজ দয়া করে আপনার আইডিয়াগুলো দিয়ে পোষা প্রাণীটির ওপর কোনো পরীক্ষা করবেন না।
মীন
আজ বাস্তবের ধারেকাছেও থাকবেন না। দিনের বেশির ভাগ সময় এমন এক কল্পনার জগতে ভেসে বেড়াবেন, যেখানে আপনার সব বিল পরিশোধ হয়ে গেছে এবং পোষা মাছটা কথা বলতে পারে। কাজের জায়গায় ভুলবশত সহকর্মীকে ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমার/রাজকুমারী’ বলে ডাকতে পারেন। মনে হবে, জীবন একটি হিন্দি সিনেমা, আর আপনি তার হিরো/হিরোইন। যদি কিছু ভুলে যান, যেমন চাবি বা মানিব্যাগ, তার জন্য গ্রহদের দোষ দেবেন। সন্ধ্যায়, হয়তো এত বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবেন যে টিভির সিরিয়ালের ভিলেনের দুঃখেও চোখে পানি চলে আসবে। আজ চোখ খুলে হাঁটুন। আর যদি চারপাশের মানুষ আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তাহলে চোখ বন্ধ করে শুধু ‘হুম’ বলে দিন। নিরাপদ থাকবেন।

‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে...
২৫ অক্টোবর ২০২২
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
১৬ মিনিট আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৫ ঘণ্টা আগে
শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের...
৭ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

ডিসেম্বরের ছুটির দিন খানিকটা আলাদা তো বটেই। এমন শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
গরুর মাংস ১ কেজি, আদা ও রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, টক দই আধা কাপ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, তেজপাতা ২ পিস, কাজুবাদাম বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ফালি ৮ থেকে ১০টি, বেরেস্তা আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, সয়াবিন তেল আধা কাপ।
প্রণালি
গরুর মাংস টক দই এবং সব বাটা ও গুঁড়া মসলা দিয়ে মাখিয়ে ঢেকে রাখুন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি হালকা বাদামি করে ভেজে তাতে মাখানো মাংস দিয়ে দিন। তারপর ভালোভাবে নেড়ে অল্প আঁচে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রান্না করে ঢাকনা দিয়ে দিন। এবার ঢাকনা খুলে মাংস ভালোভাবে কষান। যদি মাংস সেদ্ধ না হয়, তবে সামান্য পানি দিন। মাংসের ওপর তেল ভেসে উঠলে কাঁচা মরিচ ফালি ও পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে দমে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। ব্যস, রান্না হয়ে গেল কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসা।

ডিসেম্বরের ছুটির দিন খানিকটা আলাদা তো বটেই। এমন শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
গরুর মাংস ১ কেজি, আদা ও রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, টক দই আধা কাপ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, তেজপাতা ২ পিস, কাজুবাদাম বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ফালি ৮ থেকে ১০টি, বেরেস্তা আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, সয়াবিন তেল আধা কাপ।
প্রণালি
গরুর মাংস টক দই এবং সব বাটা ও গুঁড়া মসলা দিয়ে মাখিয়ে ঢেকে রাখুন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি হালকা বাদামি করে ভেজে তাতে মাখানো মাংস দিয়ে দিন। তারপর ভালোভাবে নেড়ে অল্প আঁচে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রান্না করে ঢাকনা দিয়ে দিন। এবার ঢাকনা খুলে মাংস ভালোভাবে কষান। যদি মাংস সেদ্ধ না হয়, তবে সামান্য পানি দিন। মাংসের ওপর তেল ভেসে উঠলে কাঁচা মরিচ ফালি ও পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে দমে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। ব্যস, রান্না হয়ে গেল কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসা।

‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে...
২৫ অক্টোবর ২০২২
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
১৬ মিনিট আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৫ ঘণ্টা আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন।
৬ ঘণ্টা আগে