Ajker Patrika

পর্যটনের নেতিবাচক প্রভাব সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্যে

সাবিত আল হাসান, সেন্ট মার্টিন থেকে ফিরে
পর্যটনের নেতিবাচক প্রভাব সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্যে

পরিবেশ সংকটাপন্ন সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সূর্যাস্তের পর সৈকতে আলো জ্বালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। কচ্ছপসহ সামুদ্রিক প্রাণীদের রক্ষার জন্য এই নিয়ম জারি রয়েছে দ্বীপটিতে। কিন্তু এসব নিয়ম মানছে না কেউ। রাতভর সৈকতের পাশে আলো জ্বালিয়ে চলছে ব্যবসা। সৈকতসংলগ্ন কটেজ-রিসোর্টগুলোতে করা হয়েছে বাড়তি আলোকসজ্জা। এলইডি লাইট স্থাপন করে পর্যটন মৌসুমে পুরো দ্বীপকে পরিণত করা হয়েছে উৎসবকেন্দ্রে।

চোখের সামনে দ্বীপের এমন আইন ভঙ্গের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না স্থানীয় চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। তাঁর দাবি, ‘সেন্ট মার্টিনে বিচের পাশে এক-আধটু আলো জ্বলবেই সিজনের সময়। এটা একটু মেনে নিতেই হবে। আমরা (দ্বীপবাসী) বাঁচলেই সবকিছু বাঁচবে।’
রাতের আঁধারে দ্বীপের সুরক্ষা নিশ্চিতে পরিবেশ অধিদপ্তর বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে— 

  • সৈকতে কোনো প্রকার আলোকসজ্জা না করা। 
  • আতশবাজি ও ফানুস না ওড়ানো। 
  • কচ্ছপের ডিম পাড়ার জায়গায় চলাফেরা না করা। 
  • রাতে সৈকতে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইট ব্যবহার না করা। 
  •  উচ্চ শব্দ না করা বা মাইক না বাজানো। 

কিন্তু এর কোনোটিই মানা হচ্ছে না সেন্ট মার্টিনে। উল্টো পর্যটকদের অবাধ চলাচল, স্থানীয়দের ব্যবসা, মাইক বাজানো, আলোকসজ্জায় উদ্ভাসিত পুরো দ্বীপ।

দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, সৈকতের উত্তর থেকে পশ্চিম প্রান্তের স্যান্ড ক্যাসেল রিসোর্ট পর্যন্ত কিছু দূর পরপরই বসানো হয়েছে অস্থায়ী দোকান। এর কোনোটিতে আছে ডাব, সামুদ্রিক মাছ, চা-সিগারেট কিংবা খাদ্যপণ্যের পসরা। প্রায় সব দোকানেই ব্যবহার করা হচ্ছে সাদা আলো। এ ছাড়া সৈকত লাগোয়া রিসোর্টগুলোতে রয়েছে উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি। লাল, নীল, সবুজ এলইডি বাতিতে ছেয়ে ফেলা হয়েছে সৈকতসংলগ্ন এলাকা। অল্প কিছু জায়গা ছাড়া উত্তর থেকে পশ্চিম সৈকত পর্যন্ত আলোকিতই থাকে সারা রাত। 

উত্তর সৈকতে ডাব ও চায়ের ফ্লাক্স নিয়ে দোকান বসানো এক কিশোর জানিয়েছে, সারা রাত তার দোকান খোলা থাকে। রাতে সৈকতে আলো না জ্বালানোর জন্য পোস্টার থাকলেও সে বিষয়ে কেউ কিছু বলে না। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নেতা তারিক বাবু বলেন, ‘উজ্জ্বল আলো শুধু কাছিম নয়, বহু সামুদ্রিক প্রাণী ও দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের সমস্যা তৈরি করে। কিন্তু এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। বিধিনিষেধ অমান্য করা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হলেও ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের নাকের ডগায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

সচেতন পর্যটক ও স্থানীয় লোকজন জানান, চার মাসব্যাপী পর্যটন মৌসুম চলাকালে দ্বীপের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা পূরণ করতে পারে না দ্বীপের প্রকৃতি। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পর্যটকদের উদাসীনতার কারণে দিন দিন ক্ষতির মুখে পড়ছে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মুসাইব ইবনে রহমান বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো অভিযান চালাচ্ছি এবং মামলা করছি।

সম্প্রতি ১২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এখন প্রশাসন যদি কঠোর হয়, তাহলে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব। আমরা চাইলেই উচ্ছেদ করতে পারি না। আমরা আইনগত ব্যবস্থা, মামলা বা জরিমানা করতে পারি। যদি প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালায়, তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের পাশে থাকবে। লাইট পলিউশনের বিষয়ে আমাদের কাছে আগেও অভিযোগ আছে। এ ছাড়া সৈকতে দোকান বসানো, প্রবাল তুলে অন্যত্র সরানো—এ বিষয়গুলো আমরা অবগত। এগুলো নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনাও দেওয়া আছে।’ 

একই বিষয়ে কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সারওয়ার আলম বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনের পরিবেশের সঙ্গে যা করা হয়েছে তাতে শুধু কচ্ছপ নয়, উদাসীনতার কারণে সেন্ট মার্টিন থেকে বিপুল পরিমাণ প্রাণী হারিয়ে গেছে। অনেক প্রাণী হুমকির মুখে আছে। আগে একসময় প্রবাল, শৈবাল, মোলাস্ট, কাঁকড়া, ডলফিন, বিভিন্ন উভচর প্রাণী, পাখি, সরীসৃপের বসবাস ছিল এখানে। এগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এর পরেও এ বিষয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন নন। মানুষ যদি সচেতন না হয়, তাহলে এই সেন্ট মার্টিন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এটাই স্বাভাবিক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে কেন টার্কি খাওয়া হয়, প্রচলন হয়েছিল কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৫৪
ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে স্পেনীয় অভিযাত্রীদের মাধ্যমে টার্কি প্রথম ইউরোপে আসে। ছবি: সংগৃহীত
ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে স্পেনীয় অভিযাত্রীদের মাধ্যমে টার্কি প্রথম ইউরোপে আসে। ছবি: সংগৃহীত

বড়দিন বা ক্রিসমাস মানেই ডাইনিং টেবিলে সাজানো বড়সড় এক টার্কি রোস্ট। কিন্তু উত্তর আমেরিকার আদি নিবাসী এই পাখি কীভাবে ইউরোপীয়দের উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে উঠল, তা বেশ কৌতূহল উদ্দীপক। ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে স্পেনীয় অভিযাত্রীদের মাধ্যমে টার্কি প্রথম ইউরোপে আসে। তার আগে উৎসবের ভোজ বলতে ছিল ময়ূর বা রাজহাঁসের মাংস।

ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি অষ্টম প্রথম ব্রিটিশ সম্রাট হিসেবে বড়দিনের ভোজে টার্কি খেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তবে টার্কিকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেওয়ার মূল কৃতিত্ব ভিক্টোরিয়ান যুগের। রানি ভিক্টোরিয়া যখন তাঁর রাজকীয় ক্রিসমাস ভোজে টার্কি খাওয়া শুরু করেন, তখন থেকেই এটি আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি অষ্টম প্রথম ব্রিটিশ সম্রাট হিসেবে বড়দিনের ভোজে টার্কি খেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি অষ্টম প্রথম ব্রিটিশ সম্রাট হিসেবে বড়দিনের ভোজে টার্কি খেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

রাজকীয় পছন্দের বাইরে সাধারণ মানুষের ঘরে টার্কিকে জনপ্রিয় করার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল লেখক চার্লস ডিকেন্সের। ১৮৪৩ সালে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘আ ক্রিসমাস ক্যারল’-এ দেখা যায়, একসময়ের কৃপণ ইবেনেজার স্ক্রুজ বড়দিনে ক্র্যাচিট পরিবারকে একটি বিশাল টার্কি উপহার পাঠাচ্ছেন। এই গল্প সাধারণ মানুষের মনে গেঁথে দেয় যে—বড়দিনের আদর্শ খাবার মানেই টার্কি।

কেন টার্কিই সেরা পছন্দ

টার্কি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে কিছু ব্যবহারিক কারণও রয়েছে। আকার ও উপযোগিতা—গরু দুধ দেয় আর মুরগি দেয় ডিম; কিন্তু টার্কির অন্য কোনো ব্যবহার নেই। এ ছাড়া একটি বড় টার্কি দিয়ে অনায়াসেই পুরো পরিবারের ভোজ সম্পন্ন করা যায়। অনেকগুলো ছোট পাখি রান্না করার চেয়ে একটি বড় পাখি রান্না করা অনেক বেশি সাশ্রয়ী।

হিমায়িত বা ফ্রোজেন টার্কি—রেফ্রিজারেশন বা ফ্রিজ আবিষ্কারের আগে টাটকা টার্কি কেনা ছিল বেশ ঝক্কির কাজ। কিন্তু ফ্রোজেন টার্কি বাজারে আসার পর মানুষ আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এটি কিনতে শুরু করে, যা এর জনপ্রিয়তা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

রাজকীয় পছন্দের বাইরে সাধারণ মানুষের ঘরে টার্কিকে জনপ্রিয় করার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল লেখক চার্লস ডিকেন্সের। ছবি: সংগৃহীত
রাজকীয় পছন্দের বাইরে সাধারণ মানুষের ঘরে টার্কিকে জনপ্রিয় করার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল লেখক চার্লস ডিকেন্সের। ছবি: সংগৃহীত

পরদিনের চমৎকার নাশতা—বড়দিনের পরদিন অর্থাৎ ‘বক্সিং ডে’তে টার্কির বেঁচে যাওয়া মাংস (Leftovers) দিয়ে স্যান্ডউইচ, স্টু, কারি বা পাই তৈরি করা যায়। বিশেষ করে, টার্কি কারি এখন অনেক দেশেই বেশ জনপ্রিয়।

যুক্তরাজ্যে টার্কির একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আজও ক্রিসমাসে টার্কি খাওয়ার রীতি বজায় আছে।

যাঁরা বড় টার্কি রান্না করতে চান না বা ঝামেলা ছাড়াই উৎসবের খাবার উপভোগ করতে চান, তাঁদের জন্যও আজ নানা ধরনের প্রস্তুত টার্কি খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে—যা ক্রিসমাস উদ্‌যাপনকে আরও সহজ করে তুলেছে। বড়দিনের এই দীর্ঘ ঐতিহ্যের কারণে আজও বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ টার্কি ছাড়া উৎসবের কথা কল্পনাও করতে পারেন না। আপনিও কি এবার বড়দিনের আয়োজনে টার্কি রাখছেন?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাজুবাদাম কেন খাবেন, কতটুকু খাবেন

ফিচার ডেস্ক
এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম, কপার আর জিংক। ছবি: সংগৃহীত
এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম, কপার আর জিংক। ছবি: সংগৃহীত

কাজুবাদামকে বলা হয় ‘পুষ্টির ছোট প্যাকেট’। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর। এ কারণে যে আপনি মুঠো মুঠো করে সব সময় এটি খেতেই থাকবেন, তা হবে না। নিয়মিত কাজুবাদাম পরিমিত খেতে হবে। এতে আপনি পেতে পারেন দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সুস্থতা। মূলত ব্রাজিলীয় বংশোদ্ভূত এই বৃক্ষজাত বীজ বর্তমানে বিশ্বজুড়ে তার স্বাস্থ্যগুণের জন্য সমাদৃত। হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ওজন নিয়ন্ত্রণ—কাজুবাদামের আছে বহুমুখী উপকারিতা। এটি নিয়মিত খাওয়ার পেছনে অনেকগুলো স্বাস্থ্যগত কারণ আছে। আবার খাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে কিছু সতর্কতাও। তাই নিজের খাবারের তালিকায় কাজুবাদাম রাখার আগে ভালো ও খারাপ দিক জেনে রাখুন।

হৃদ্‌যন্ত্রের সুরক্ষা

কাজুবাদামে রয়েছে প্রচুর অসম্পৃক্ত চর্বি। এটি রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা এলডিএলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বাদাম খেলে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ২৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এ ছাড়া এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

কাজুবাদাম উচ্চ ক্যালরিযুক্ত হলেও এটি ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। এর কারণ হলো, কাজুবাদামের সবটুকু ক্যালরি শরীর শোষণ করতে পারে না। এর ভেতরের আঁশ বা ফাইবার চর্বিকে আটকে ফেলে, যা হজমের সময় শরীরে পুরোপুরি শোষিত হয় না। ফলে এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং আজেবাজে খাওয়ার প্রবণতা কমায়।

ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী

টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য কাজুবাদাম খুবই উপকারী। এতে থাকা আঁশ রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া রোধ করে। এ ছাড়া এর ম্যাগনেশিয়াম ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক ক্যালরির ১০ শতাংশ কাজুবাদাম থেকে গ্রহণ করলে ইনসুলিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।

শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধক্ষমতা

কাজুবাদাম কপার ও জিঙ্কের চমৎকার উৎস। এই দুটি খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী রাখতে অপরিহার্য। এ ছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (পলিফেনল ও ক্যারোটিনয়েড) শরীরের ভেতরের ব্যথা কমাতে এবং কোষের ক্ষতি রোধ করতে কাজ করে।

হাড় ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য

কাজুবাদামে আছে ভরপুর ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ভিটামিন কে। এগুলো হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে। এর কপার উপাদান মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশ ও শক্তি উৎপাদনে সরাসরি সাহায্য করে।

কাঁচা কাজু নিরাপদ কি না

আমরা বাজারে যে কাজুবাদাম কাঁচা হিসেবে কিনি, তা আসলে পুরোপুরি কাঁচা নয়। গাছের তাজা কাজুবাদামের খোসায় ইউরুশিয়াল নামক বিষাক্ত উপাদান থাকে, যা ত্বকে অ্যালার্জি বা ফোসকা তৈরি করতে পারে। প্রক্রিয়াজাত করার সময় তাপ দিয়ে এই বিষাক্ত অংশ দূর করা হয়। তাই গাছ থেকে সরাসরি পেড়ে কাজু খাওয়া নিরাপদ নয়।

খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত করার সহজ উপায়

কাজুবাদাম খুব সহজে প্রতিদিনের খাবারে যোগ করা যায়। বিকেলের নাশতায় এক মুঠো ভাজা কাজু খেতে পারেন। সালাদ, স্যুপ বা স্ট্যুতে কাজুবাদাম ছড়িয়ে দিলে স্বাদ ও পুষ্টি—দুই-ই বেড়ে যায়। কাজুবাদাম ভিজিয়ে ব্লেন্ড করে দুধ মুক্ত ক্রিম বা পনির তৈরি করা সম্ভব। টোস্ট বা ওটমিলের সঙ্গে কাজু বাটার ব্যবহার করা যায়।

মনে রাখবেন

পরিমাণ: কাজুবাদাম অত্যন্ত পুষ্টিকর হলেও এতে ক্যালরি বেশি। তাই দিনে ২৮ গ্রাম বা প্রায় ১৮টি বাদাম খাওয়াই যথেষ্ট।

লবণ ও তেল: অতিরিক্ত লবণ বা তেলে ভাজা কাজুর চেয়ে শুকনো ভাজা বা আনসলটেড কাজু বেছে নেওয়া ভালো।

অ্যালার্জি: যাদের কাঠবাদাম বা পেস্তাবাদামে অ্যালার্জি আছে, তাদের কাজু খাওয়ার আগে সতর্ক হওয়া উচিত। শ্বাসকষ্ট বা চুলকানির মতো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সূত্র: হেলথ লাইন, ইভিএন এক্সপ্রেস, ওয়েব মেড

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গরম কড়াইয়ে কেন ঠান্ডা পানি ঢালবেন না

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কড়াইসহ যেকোনো ধাতব হাঁড়িপাতিল কেন বাঁকা হয়ে যায়, জানেন? এর উত্তর লুকিয়ে আছে ধাতব পাত্রে ঠান্ডা পানি ঢালার অভ্যাসের মধ্যে।

চুলা থেকে নামানো গরম কড়াইয়ে হঠাৎ ঠান্ডা পানি ঢাললে যে শব্দ হয়, অনেকের কাছে তা সাধারণ মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটি একটি সতর্কবার্তা। আপনার কড়াইটি তখন থার্মাল শকের শিকার হচ্ছে, যা ধীরে ধীরে রান্নার পাত্রের আয়ু কমিয়ে দেয়। অনেক গৃহিণী ও রান্নাপ্রেমী মনে করেন, গরম কাড়াই সরাসরি সিঙ্কে নিয়ে ঠান্ডা পানি ঢাললে পোড়া খাবারের অংশ সহজে উঠে যায়। কিন্তু অল-ক্ল্যাড ও ক্যালফালনের মতো নামকরা কুকওয়্যার ব্রান্ড সতর্ক করে বলছে, এটি কড়াই নষ্ট হওয়ার বড় কারণগুলোর একটি।

থার্মাল শক কীভাবে ক্ষতি করে

ধাতু গরম হলে প্রসারিত হয় এবং ঠান্ডা হলে সংকুচিত হয়। এটি পদার্থবিজ্ঞানের সাধারণ নিয়ম। যখন প্রায় ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার একটি কড়াই হঠাৎ ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসে, তখন ধাতব অণুগুলো দ্রুত সংকুচিত হয়। এই হঠাৎ পরিবর্তনই সৃষ্টি করে থার্মাল শক, যা কড়াইয়ের গঠনকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

কড়াই বাঁকা হয়ে যাওয়া

থার্মাল শকের সবচেয়ে সাধারণ ফল হলো কড়াই বাঁকা হয়ে যাওয়া। হঠাৎ ঠান্ডায় কড়াইয়ের নিচের অংশ সংকুচিত হয়ে ভাঁজ হয়ে যায়। ফলে কড়াই চুলার ওপর ঠিকভাবে বসে না এবং তাপ সমানভাবে ছড়ায় না। এর ফল হিসেবে রান্নার সময় এক পাশে খাবার পুড়ে যায়, অন্য পাশে ঠিকমতো রান্না হয় না।

নন-স্টিক কড়াই বাড়তি ঝুঁকি

নন-স্টিক কড়াইয়ের ক্ষেত্রে থার্মাল শক আরও বেশি ক্ষতিকর। কারণ, প্যানের ধাতু ও নন-স্টিক কোটিংয়ের প্রসারণ ও সংকোচনের হার এক নয়। হঠাৎ ঠান্ডা হলে কোটিং ফেটে যেতে বা উঠে যেতে পারে। এতে প্যানের নন-স্টিক ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং কোটিংয়ের ক্ষুদ্র কণা খাবারের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ক্ষতিগ্রস্ত নন-স্টিক কোটিং থেকে পিএফএএস জাতীয় ক্ষতিকর রাসায়নিক নির্গত হতে পারে। যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

ফাটল ধরার ঝুঁকি

কাস্ট আয়রন, স্টোনওয়্যার বা সিরামিক প্যানের ক্ষেত্রে থার্মাল শক কখনো কখনো তাৎক্ষণিক ফাটল ধরাতে পারে। এসব উপাদান স্টেইনলেস স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের তুলনায় বেশি ভঙ্গুর হওয়ায় হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন সহ্য করতে পারে না।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কড়াই রক্ষা করার নিয়ম

বিশেষজ্ঞদের মতে, কড়াই ভালো রাখার সহজ নিয়ম হলো ধৈর্য। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে—

রান্না শেষ হলে কড়াইটি চুলার ওপর বা পাশে রেখে স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডা হতে দিন।

পুরোপুরি ঠান্ডা হলে তারপর ধুয়ে ফেলুন।

তাড়াহুড়া থাকলে ঠান্ডা পানির বদলে গরম বা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন, যাতে তাপমাত্রার পার্থক্য কম থাকে।

আরও কিছু সাধারণ ভুল

বিশেষজ্ঞরা আরও কয়েকটি ভুলের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো—

ঠান্ডা পানিতে লবণ দিলে লবণের কণা তলায় জমে স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে ক্ষুদ্র গর্ত তৈরি করতে পারে। তাই পানি ফুটে ওঠার পর লবণ যোগ করা ভালো।

নন-স্টিক প্যান একটির ওপর আরেকটি রাখলে ওপরের প্যানের তলা নিচের প্যানের কোটিংয়ে আঁচড় ফেলতে পারে।

নন-স্টিক প্যানে ধাতব স্ক্রাবার বা শক্ত ঘষামাজা একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত।

কাস্ট আয়রন প্যান পরিষ্কারে সাবান কম ব্যবহার করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দ্রুত শুকিয়ে হালকা তেল মেখে রাখা ভালো, এতে মরিচা ধরবে না।

রান্নার পাত্রের যত্ন নেওয়া মানে শুধু খরচ বাঁচানো নয়; এটি খাবারের মান, স্বাদ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে। একটি ভালো পাত্র দীর্ঘদিন ভালো থাকলে সমানভাবে রান্না হয়। খাবার পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে এবং ক্ষতিকর পদার্থ খাবারের সঙ্গে মিশে যাওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। গরম প্যানে ঠান্ডা পানি ঢালার অভ্যাসটি ত্যাগ করলে কড়াইয়ের গঠন ও কোটিং অক্ষত এবং সেটি দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী থাকবে।

সূত্র: হাফ পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ারে অদ্ভুত ট্রেন্ডের জয়জয়কার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বিভিন্ন বিখ্যাত অভিধান বেছে নিয়েছে এ বছরের সেরা শব্দগুলো। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
বিভিন্ন বিখ্যাত অভিধান বেছে নিয়েছে এ বছরের সেরা শব্দগুলো। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

২০২৫ সাল প্রায় শেষের পথে। প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্বের খ্যাতনামা অভিধানগুলো তাদের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ বা বছরের সেরা শব্দ ঘোষণা করেছে। তবে এবারের নির্বাচনগুলোতে একটি বিশেষ সুর ফুটে উঠেছে। তা হলো ডিজিটাল জগতের প্রতি ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস ও অনিশ্চয়তা। যেমন একুশ শতকের প্রথম দশকে অর্থাৎ ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেটের প্রতি প্রবল উৎসাহের কারণে ব্লগ বা টুইটের মতো শব্দগুলো নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু ২০২৫-এর শব্দগুলো বলছে অন্য কথা। এবারের শব্দগুলোতে কৃত্রিমতা, আবেগীয় কারসাজি এবং অদ্ভুত সব ট্রেন্ডের জয়জয়কার।

২০২৫ সালের নির্বাচিত শব্দগুলোর মাধ্যমে মানুষের ডিজিটাল জীবনের একটি বিবর্তনমূলক চিত্র ফুটে উঠেছে। এ বছর এই শব্দগুলো একসঙ্গে বিশ্লেষণ করলে একটি বিশেষ মানসিক অবস্থার খোঁজ পাওয়া যায়। যাকে বলা হচ্ছে ডিজিটাল নিহিলিজম। ভুল তথ্য, এআই-জেনারেটেড ছবি এবং ষড়যন্ত্রতত্ত্বের এই ভিড়ে মানুষ এখন কাকে বিশ্বাস করবে, তা নিয়ে সন্দিহান। এই অনিশ্চয়তাকে একটি ইমোজি দিয়ে সবচেয়ে ভালো প্রকাশ করা যায়। আর তা হলো ‘কাঁধ ঝাঁকানো’ ইমোজি। অর্থাৎ, ডিজিটাল জীবনের এই অরাজকতায় মানুষ এখন কিছুটা উদাসীন এবং নিরুপায়।

অস্ট্রেলীয় ইংরেজি ভাষার প্রধান নির্দেশিকা ম্যাককুয়ারি ডিকশনারি। ছবি: উইকিপিডিয়া
অস্ট্রেলীয় ইংরেজি ভাষার প্রধান নির্দেশিকা ম্যাককুয়ারি ডিকশনারি। ছবি: উইকিপিডিয়া

ইন্টারনেটের নতুন জঞ্জাল এআই স্লপ

অস্ট্রেলীয় ইংরেজি ভাষার প্রধান নির্দেশিকা ম্যাককুয়ারি ডিকশনারি বছরের সেরা শব্দ হিসেবে বেছে নিয়েছে ‘এআই স্লপ’ শব্দটিকে। এটি মূলত জেনারেটিভ এআই দিয়ে তৈরি নিম্নমানের কনটেন্ট, যা ইন্টারনেটে না চাইতেই আমাদের সামনে চলে আসে। ত্রুটিপূর্ণ এআই ইমেজ থেকে শুরু করে লিঙ্কডইনে দেওয়া অদ্ভুত সব ক্যারিয়ার পরামর্শ সবই এই স্লপের অন্তর্ভুক্ত। এটি শুধু একটি শব্দ নয়, বরং ইন্টারনেটের অর্থহীন তথ্যের ভিড়ে প্রকৃত তথ্য খুঁজে পাওয়ার লড়াইকে ফুটিয়ে তোলে।

প্যারাসোশ্যাল (Parasocial): কৃত্রিম সম্পর্কের মায়া

‘কেমব্রিজ ডিকশনারি’ নির্বাচন করেছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি। এটি এমন এক ধরনের মানসিক সম্পর্ক, যেখানে একজন ব্যক্তি কোনো সেলিব্রিটি, কাল্পনিক চরিত্র, এমনকি এআই চ্যাটবটের প্রতি একতরফা টান অনুভব করেন। ১৯৫৬ সালে সমাজবিজ্ঞানীরা শব্দটি তৈরি করলেও ২০২৫ সালে এটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। গায়িকা টেলর সুইফট ও ট্র্যাভিস কেলসের বাগদান নিয়ে ভক্তদের অতি উৎসাহ কিংবা নিঃসঙ্গ মানুষের চ্যাটবটের প্রেমে পড়া—এই ঘটনাগুলো প্যারাস্যোশাল শব্দটির ব্যবহার বাড়ার পেছনে বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছে। মানুষ এখন রক্তমাংসের মানুষের চেয়ে স্ক্রিনের ওপারের চরিত্রের সঙ্গে বেশি মানসিক সংযোগ খুঁজছে।

রাগের কারসাজি রেজ বাইট (Rage Bait)

‘অক্সফোর্ড ডিকশনারি’ এ বছর বেছে নিয়েছে ‘রেজ বাইট’ শব্দটি। এটি এমন এক ধরনের কনটেন্টকে বোঝায়, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানুষকে রাগান্বিত বা উত্তেজিত করার জন্য তৈরি করা হয়। মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটে ট্রাফিক বা এনগেজমেন্ট বাড়ানো। ‘অ্যাটেনশন ইকোনমি’ বা মানুষের মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার এই নোংরা কৌশল রাজনৈতিক মেরুকরণকেও ত্বরান্বিত করছে। ২০২৫ সালে এই শব্দের ব্যবহার আগের বছরের তুলনায় তিন গুণ বেড়েছে। এ ঘটনা প্রমাণ করে, আমাদের আবেগ নিয়ে খেলা করার বিষয়টির প্রতি আমরা এখন অনেক বেশি সচেতন।

৬-৭ (6-7): অর্থহীনতার জয়জয়কার

এবার সবচেয়ে অদ্ভুত এবং বিতর্কিত নির্বাচনটি করেছে ‘ডিকশনারি ডট কম’। তারা কোনো শব্দ নয়, বরং সংখ্যাকে বছরের সেরা বলে ঘোষণা করেছে। তারা বেছে নিয়েছে ‘৬-৭’। জেনারেশন আলফার এই স্লাং মূলত অর্থহীন এবং অদ্ভুতুড়ে। র‍্যাপার স্ক্রিলার এর একটি গান থেকে এটি জনপ্রিয় হয়। এটি ব্যবহারের সময় দুই হাত দিয়ে দাঁড়িপাল্লার মতো একটি ভঙ্গি করা হয়। শুধু র‍্যাপার নন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকেও একটি স্কুল এই সাইন পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। মজার ব্যাপার হলো, এই শব্দের কোনো নির্দিষ্ট অর্থ নেই। মূলত কিশোর-কিশোরীরা বড়দের বিভ্রান্ত করতেই এটি বেশি ব্যবহার করে।

ভাইব কোডিং (Vibe Coding): প্রযুক্তির সহজ পাঠ

‘কোলিন্স ডিকশনারি’ বেছে নিয়েছে ‘ভাইব কোডিং’ শব্দটি। এটি মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সাধারণ ভাষায় কমান্ড দিয়ে কম্পিউটার কোড লেখানোর পদ্ধতি। ওপেন এআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রেজ কারপাথি শব্দটি জনপ্রিয় করেন। এর ফলে এখন কোডিংয়ের গভীর জ্ঞান না থাকলেও কেবল ‘ভাইব’ বা অনুভূতির মাধ্যমে সফটওয়্যার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে।

সূত্র: টাইমস ম্যাগাজিন, ইভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত