Ajker Patrika

ইউটিউবে যে ধরনের কনটেন্টে আয় বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ০৭
ইউটিউবের আয়ের মূল উৎস হলো বিজ্ঞাপন। ছবি: স্টারজসফট
ইউটিউবের আয়ের মূল উৎস হলো বিজ্ঞাপন। ছবি: স্টারজসফট

সব ধরনের ইউটিউব ভিডিও একই পরিমাণে অর্থ আয় করে না। তাই বিভিন্ন ধরনের ইউটিউব কনটেন্টের আয়ও ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে। এটি নির্ভর করে দর্শকের আগ্রহ, বিজ্ঞাপনদাতার চাহিদা, এমনকি দর্শক কোন দেশের তার ওপরও।

ইউটিউবের আয়ের মূল উৎস হলো বিজ্ঞাপন। সাধারণত, নির্দিষ্ট দর্শক শ্রেণিকে লক্ষ্য করে উচ্চ মূল্যের বিজ্ঞাপনযুক্ত কনটেন্ট থেকে বেশি আয় করা যায়। উদাহরণস্বরূপ: ধনী বা ক্রয়ক্ষম দর্শকদের জন্য তৈরি কনটেন্ট—যেমন লাক্সারি ট্রাভেল বা হাই-এন্ড জুয়েলারি—প্রায়শই বড় বাজেটের বিজ্ঞাপনদাতাদের লক্ষ্য হয়, তাই এই ধরনের ভিডিও সাধারণত বেশি লাভজনক। অর্থাৎ এই ধরনের ভিডিওতে সিপিএম বেশি। সিপিএম বেশি হলে আয়ও বেশি হবে।

উল্লেখ্য, সিপিএম হলো, একটি ভিডিওতে ১ হাজার বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য বিজ্ঞাপনদাতারা কত অর্থ দেবে, তা-ই সিপিএম। এটি শুধু বিজ্ঞাপন থেকে যে আয় হচ্ছে, তা পরিমাপ করে; অন্য আয়ের উৎস যেমন মার্চেন্ডাইজ বিক্রি বা চ্যানেল মেম্বারশিপকে গণনায় নেয় না।

এসব কারণে ইউটিউবের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জানতে হবে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের ভিডিওগুলোতে সিপিএম বেশি হয়।

১. বিনোদন ও পপ কালচার

দর্শকদের বিনোদন দেওয়া ইউটিউবে বড় আয় করতে সাহায্য করে। ইউটিউবের কোটি কোটি দৈনন্দিন ভিউ আসে এমন ভিডিও থেকে, যা দর্শকদের আনন্দ দেয় বা জনপ্রিয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। নতুন সিনেমা, টিভি শো বা সংগীত রিভিউ, সেলিব্রিটি গসিপ বা আলোচনা নিয়ে ভিডিওগুলোতে সিপিএম বেশি হয়।

২. বিউটি ও ফ্যাশন

বিউটি ও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির একটি অংশ নিজের করা যায়। বহু ব্র্যান্ড রয়েছে, যারা ইউটিউবের ট্রেন্ড অনুসারী দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে চায়। হাই-এন্ড প্রোডাক্ট ও লাক্সারি ব্র্যান্ড সাধারণত বেশি দর্শক আকর্ষণ করে। জনপ্রিয় ফরম্যাট যেমন ফ্যাশন হাল দেখানো বা বিউটি প্রোডাক্ট রিভিউ বড় দর্শক আকর্ষণ করতে পারে।

৩. প্রযুক্তিবিষয়ক কনটেন্ট

সর্বদা নতুন গ্যাজেট ও সফটওয়্যার খুঁজছেন প্রযুক্তিপ্রেমীরা। প্রযুক্তিবিষয়ক কনটেন্টে অর্থ আয়ের সুযোগ অনেক। প্রযুক্তি-সম্পর্কিত ভিডিও যেমন—স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ক্যামেরা রিভিউ বা গ্যাজেট আনবক্সিং ভিডিওতে সাধারণত উচ্চ সিপিএম দেয়। কারণ বিজ্ঞাপনদাতারা এই ধরনের দর্শককে ‘প্রিমিয়াম’ শ্রোতা মনে করে—তারা ক্রয়ক্ষম, নিত্যনতুন প্রযুক্তি অনুসরণ করে। বিভিন্ন গ্যাজেটের রিভিউ ও আনবক্সিং ভিডিও ক্রিয়েটরদের জন্য বড় দর্শক আকর্ষণ করতে পারে।

৪. বিজনেস-টু-বিজনেস (বি ২ বি) কনটেন্ট

ব্যবসায়িক পেশাজীবীদের জন্য তৈরি ভিডিও যেমন—সফটওয়্যার রিভিউ, মার্কেটিং কৌশল বা ব্যবসায়িক টিপসে সিপিএম বেশি দেখা যায়। এই ধরনের কনটেন্ট দেখার দর্শকেরা সাধারণ ভিউয়ারের তুলনায় বেশি ক্রয়ক্ষম ও ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেন।

৫. ফিন্যান্স ও বিনিয়োগ

দর্শকদের টাকা উপার্জনের কৌশল শেখালে নিজের আয়ও বাড়ে। অর্থনীতি, বিনিয়োগ, স্টক মার্কেট, ক্রিপ্টোকারেন্সি বা সঞ্চয়-সম্পর্কিত ভিডিও ইউটিউবের সবচেয়ে লাভজনক বিভাগগুলোর মধ্যে। এখানে বিজ্ঞাপনদাতারা বেশি অর্থ দেয়, কারণ, দর্শকেরা প্রায়শই পণ্য বা সেবা কিনতে সক্ষম।

৬. স্বাস্থ্য ও ফিটনেস

ডায়েট, ফিটনেস, সুস্থ জীবনধারা, মেডিটেশন বা মানসিক স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত ভিডিওতে বিজ্ঞাপনদাতারা বেশি অর্থ দেয়। কারণ, দর্শকেরা এখানে স্বাস্থ্যকর জীবনধারায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। ফিটনেস সরঞ্জাম, স্বাস্থ্য সাপ্লিমেন্ট বা অ্যাকটিভওয়্যার ব্র্যান্ডের সঙ্গে কনটেন্ট যুক্ত করলে লাভজনক হতে পারে।

৭. রিয়েল এস্টেট

রিয়েল এস্টেট-সম্পর্কিত ভিডিওগুলো বড় আয় করতে পারে। প্রোপার্টি মার্কেট, বিনিয়োগ ও হোম ইমপ্রুভমেন্টের কনটেন্ট বিজ্ঞাপনদাতাদের আকৃষ্ট করে। রিয়েল এস্টেট থেকে টাকা উপার্জনের কৌশল ব্যাখ্যা করা বেশি লাভজনক।

৮. ভ্রমণ ও জীবনধারা

দর্শকেরা অবসর সময়ে ভ্রমণবিষয়ক কনটেন্ট দেখেন। ট্রাভেল ব্র্যান্ডগুলো দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে আগ্রহী। সারা পৃথিবী ঘুরে না দেখেও স্থানীয় কনটেন্ট তৈরি করা যায়।

৯. আইনি ও ইনস্যুরেন্স পরামর্শ

আইনি ও ইনস্যুরেন্স-সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রায়শই জটিল এবং বোঝা কঠিন মনে হয়। তাই যদি এগুলোকে সহজ ও সংক্ষেপে বোঝাতে পারলে দর্শকেরা সহজেই এসব কনটেন্টের প্রতি আকৃষ্ট হবেন। এই ধরনের কনটেন্ট মূলত সেই দর্শকদের জন্য উপযোগী, যারা আইনি পরামর্শ খুঁজছেন বা বিমাসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে চাচ্ছেন। এমন দর্শকেরা সাধারণ বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান, কারণ, তাঁরা সচেতন এবং প্রফেশনাল সিদ্ধান্ত নিতে আগ্রহী।

১০. বিলাসবহুল জীবনধারা

লাক্সারি ব্র্যান্ডগুলো ধনী দর্শককে টার্গেট করে। বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ি বা ভ্রমণের পরিকল্পনা দেখালে দামি বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়।

১১. শিক্ষা ও অনলাইন টিউটোরিয়াল

নতুন কিছু শেখার বা দ্রুত টিউটোরিয়াল খোঁজার জন্য দর্শক ইউটিউব ব্যবহার করেন। কোডিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ফটোগ্রাফি, ভাষা শেখা বা একাডেমিক টিউটোরিয়াল—এগুলো দীর্ঘমেয়াদি ভিউ ধরে রাখে। শিক্ষামূলক ভিডিওতে দর্শকেরা সচরাচর বেশি সময় ভিডিও দেখেন, ফলে এডসেন্স থেকে আয়ও বেশি হয়।

১২. গেমিং ভিডিও

গেমপ্লে, লাইভ স্ট্রিমিং, গেম রিভিউ—বিশেষ করে গেমিং কমিউনিটিতে বড় ফ্যান ফলোয়িং থাকলে এডসেন্স ও স্পন্সর উভয় থেকে ভালো আয় হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উজ্জ্বল ত্বক পেতে ঘরেই বানান চকলেট ফেস মাস্ক

ফারিয়া রহমান খান
উজ্জ্বল ত্বক পেতে ঘরেই বানানো যায় চকলেট ফেস মাস্ক। ছবি: ফ্রিপিক
উজ্জ্বল ত্বক পেতে ঘরেই বানানো যায় চকলেট ফেস মাস্ক। ছবি: ফ্রিপিক

অবাক লাগলেও সত্য, চকলেট কেবল মনই ভালো করে না, এটি ত্বকের জন্যও সমান উপকারী। ডার্ক চকলেটে আছে ক্যাটেকিনস, পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনলস। এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বড় উৎস। চকলেট সূর্যের ক্ষতিকর আলো থেকে ত্বক রক্ষা করে, ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায় এবং বলিরেখা কমিয়ে বয়সের ছাপ কমায়। চকলেট ফেস মাস্ক আপনার ত্বকে এনে দিতে পারে উজ্জ্বলতা। তবে এটা করতে সব সময় স্যালনে যেতে হবে, তেমনটা নয়। এটি ঘরেও করা যাবে। ঘরে তৈরি কিছু চকলেট ফেস মাস্ক সম্পর্কে জেনে নিন এখানে।

অ্যান্টি-অ্যাকনে চকলেট মাস্ক

তৈলাক্ত ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য এই মাস্ক কার্যকর। এটি তৈরি করতে ১ টেবিল চামচ চিনি, ডার্ক কোকো পাউডার, এক চিমটি দারুচিনি পাউডার এবং ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট মুখে ও গলায় লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। মধু ও কোকোর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক শুষ্ক না করেই ব্রণ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করে।

কোকো-দই ব্রাইটেনিং মাস্ক

উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য এক কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ কোকো পাউডার, ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, ২ টেবিল চামচ টক দই, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস এবং ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস ও টক দই ত্বকের দাগ দূর করে এবং কোকো ও নারকেল তেল ত্বক মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।

হাইড্রেটিং কোকো-ক্রিম মাস্ক

১ টেবিল চামচ কোকো পাউডারের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ দুধের সর মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এই মাস্ক ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ২০ থেকে ৩০ মিনিট। পরে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বকে নরম, মসৃণ ও স্নিগ্ধ একটা ভাব এসেছে।

চকলেট সূর্যের ক্ষতিকর আলো থেকে ত্বক রক্ষা করে, ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায় এবং বলিরেখা কমিয়ে বয়সের ছাপ কমায়। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস
চকলেট সূর্যের ক্ষতিকর আলো থেকে ত্বক রক্ষা করে, ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায় এবং বলিরেখা কমিয়ে বয়সের ছাপ কমায়। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস

চকলেট-কলা গ্লো প্যাক

উজ্জ্বল ও নরম ত্বক পেতে প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি তৈরি করতে ১ টেবিল চামচ কোকো পাউডার, ১ টেবিল চামচ মধু, আধা কাপ পেস্ট করা পাকা কলা এবং ১ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট মতো রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কোকো ও কলা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং টক দই মসৃণতা বাড়ায়।

ওটমিল-কোকো প্যাক

এটি তৈরি করতে আধা কাপ কোকো পাউডার, ৩ টেবিল চামচ ওটমিল, ১ টেবিল চামচ দুধের সর এবং ১ টেবিল চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট বানান। এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ওটমিল ত্বক মৃদু এক্সফোলিয়েট করে পরিষ্কার করে সতেজ করে তোলে।

ডিমের কুসুম-কোকো হাইড্রেশন মাস্ক

আধা কাপ কোকো পাউডারের সঙ্গে ১টি ডিমের কুসুম এবং ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের রুক্ষতা দূর করে আর্দ্রতা বজায় রাখে।

অ্যাভোকাডো-কোকো ফেস মাস্ক

চেহারায় বলিরেখা ও বার্ধক্যের ছাপ কমাতে মাস্কটি বেশ কার্যকরী। এর জন্য ১ টেবিল চামচ কোকো পাউডার, ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ পেস্ট করা অ্যাভোকাডো, ২ টেবিল চামচ নারকেলের দুধ এবং ২ টেবিল চামচ জলপাই বা তিসির তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটি মুখে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

বেসন-লেবু চকলেট মাস্ক

১ টেবিল চামচ বেসন, ১ টেবিল চামচ টক দই, আধা কাপ কোকো পাউডার এবং অর্ধেক লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। বেসন ও লেবু ত্বকের দাগ দূর করে এবং টক দই ত্বকে উজ্জ্বলতা আনে।

সূত্র: স্টাইলক্রেজ ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শুরু হয়েছে জেন জেড প্রজন্মের স্ক্রিন আসক্তি থেকে মুক্তির লড়াই

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৭
জেনারেশন জেডের দৈনন্দিন জীবনের বড় একটি অংশ স্ক্রিনের সঙ্গে জড়িত। আবার এই প্রজন্মের তরুণেরাই এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বেছে নিচ্ছেন বিকল্প পথ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
জেনারেশন জেডের দৈনন্দিন জীবনের বড় একটি অংশ স্ক্রিনের সঙ্গে জড়িত। আবার এই প্রজন্মের তরুণেরাই এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বেছে নিচ্ছেন বিকল্প পথ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাপন জেন জেড প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য। ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই তরুণেরা শৈশব থেকে স্মার্টফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং দ্রুতগতির কনটেন্টের মধ্যে বড় হয়েছে। ফলে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের বড় একটি অংশ স্ক্রিনের সঙ্গে জড়িত। একে বলা হচ্ছে ‘ডিজিটাল ব্রেন রট’। এটি তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য, মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।

ডিজিটাল ব্রেন রট: সমস্যা কোথায়

ডিজিটাল ব্রেন রট বা অতিরিক্ত স্ক্রিন আসক্তির ফলে মস্তিষ্কের মনোযোগ কমে যায়, দ্রুত ক্লান্তিবোধ হয়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয় এবং গভীর চিন্তার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে ছোট ভিডিওর হঠাৎ উত্তেজনা, উজ্জ্বল ভিজ্যুয়াল এবং দ্রুত তথ্যের স্রোত মস্তিষ্কে ধারাবাহিকভাবে ডোপামিন তৈরি করে। এতে মস্তিষ্ক স্বল্প সময়ে দ্রুত আনন্দের প্রতি আরও নির্ভর হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অভ্যাসের ফলে—

  • মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়
  • দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা বা কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে
  • স্মৃতিশক্তি স্বল্প মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়
  • উদ্বেগ ও ঘুমের ব্যাঘাত বাড়ে
  • ধৈর্য কমে যায়

ডিজিটাল ফিডের নিয়মিত উত্তেজনার কারণে মস্তিষ্ক স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। যাকে ‘ব্রেন রট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন গবেষকেরা।

গবেষণা ও মেডিকেল দৃষ্টিভঙ্গি

স্ক্রিন টাইম কমানোর জন্য জেনারেশন জেড নতুন সংস্কৃতি তৈরি করছে। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
স্ক্রিন টাইম কমানোর জন্য জেনারেশন জেড নতুন সংস্কৃতি তৈরি করছে। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্র এই বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা চালিয়েছে।

মনোযোগ কমে যাওয়ার প্রমাণ: স্ট্যানফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারকারীদের মনোযোগ ২০০০ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। দ্রুত কনটেন্ট দেখার অভ্যাসের ফলে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

স্মৃতিশক্তির ক্ষতি: এমআইটির গবেষকেরা দেখিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের টানা উত্তেজনায় মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশ কম সক্রিয় হয়ে পড়ে। এই অংশ স্মৃতিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মস্তিষ্ক বার্ধক্য: মস্তিষ্কে নিয়মিত ডোপামিন ওঠা নামার কারণে নিউরাল কানেকশন দুর্বল হতে থাকে। কিছু নিউরোসায়েন্টিস্ট এটিকে ‘অ্যাক্সেলারেটেড ব্রেন এজিং’ অর্থাৎ স্বাভাবিক বয়সের তুলনায় দ্রুত স্নায়বিক ক্ষয় হিসেবে উল্লেখ করছেন।

মানসিক চাপ বৃদ্ধি: ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর গবেষণায় দেখা গেছে, ডুমস্ক্রলিং উদ্বেগ, হতাশা এবং ঘুমের ব্যাঘাত তৈরি করে, যা পরে চিন্তার স্থিতিশীলতা কমিয়ে দেয়।

জেন জেডই আবার রুখে দাঁড়াচ্ছে

অদ্ভুত বিষয় হলো, যে প্রজন্মের মধ্যে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে, তাঁরাই আবার এ বিষয়ে বেশি সচেতন। তাঁরা সাংস্কৃতিকভাবে একধরনের নতুন ডিজিটাল সচেতনতার পথ তৈরি করছেন।

বিপরীত আন্দোলন

অনেক জনপ্রিয় টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম নির্মাতা নিয়মিত ‘অ্যান্টি-ব্রেন রট’ সিরিজ করছেন। তাঁদের ভিডিওতে থাকে—

  • সকালবেলা স্ক্রিন ছাড়াই দিন শুরু করার পরামর্শ
  • নোটিফিকেশন বন্ধ রাখার টেকনিক
  • দৈনিক ৩০ থেকে ৬০ মিনিট পড়াশোনার লক্ষ্য ঠিক করা
  • ফোন ছাড়া হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম
  • ঘুমের আগে অন্তত এক ঘণ্টা ফোন বন্ধ রাখা

তরুণেরা এসব ভিডিও শেয়ার করছেন, একে অপরকে উৎসাহ দিচ্ছেন। মোবাইল ফোননির্ভর জীবনের বিরুদ্ধে একধরনের যৌথ চর্চা গড়ে উঠেছে তাঁদের মধ্যে।

মাসিক ব্যক্তিগত কারিকুলাম

জেন জেডের মধ্যে জনপ্রিয় একটি ট্রেন্ড হলো নিজস্ব ‘মাসিক কারিকুলাম’ তৈরি করা। তাঁরা মাসজুড়ে কোন বই পড়বেন, কোন কাজে দক্ষতা অর্জন করবেন, কোন রুটিন মেনে চলবেন— এসব তালিকা তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন।

একটি মাসিক কারিকুলামে থাকে সাধারণত—

  • অন্তত দুটি বই পড়ার টার্গেট
  • সপ্তাহে ৩ দিন ব্যায়াম
  • স্ক্রিন টাইমের সীমা নির্ধারণ
  • নতুন কোনো শখ পূরণ
  • একদিন সম্পূর্ণ অফলাইন থাকা

এই ট্রেন্ড দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে; কারণ, এটি বাস্তবসম্মত এবং তরুণেরা নিজেরাই একে অনুসরণযোগ্য মনে করছেন।

টেক ফ্রি সামাজিক পরিবেশ

যেকোনো আড্ডায় মোবাইল ফোন দূরে রাখা এখন তরুণদের মধ্যে একটি নতুন নিয়ম হয়ে উঠছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইল ফোন ফ্রি রেস্টুরেন্ট দিন দিন বাড়ছে। বন্ধুরা একসঙ্গে বসে গল্প করছে, বোর্ড গেম খেলছে বা কফি পানের সময় মোবাইল ফোন জমা রাখছে।

অ্যাপ দিয়ে অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ

জেন জেড এমনকি প্রযুক্তিকেও ব্যবহার করছে প্রযুক্তির বিরুদ্ধে। তাঁরা স্ক্রিন টাইম সীমা সেট করা, নোটিফিকেশন বন্ধ করা বা ফোকাস মোড চালানোর জন্য বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করছেন। ফরেস্ট, ওপাল, ওয়ান সেক, ফ্রিডম—এসব অ্যাপ মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় কমাতে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

ডিজিটাল যুগে যেকোনো ধরনের স্ক্রিন এড়ানো কঠিন। কিন্তু জেন জেড এসবের মধ্য থেকেই নিজেদের সমাধানের পথ খুঁজে নিচ্ছেন। এই সংস্কৃতি বদল পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হয়ে থাকবে বলে আশা করছেন গবেষকেরা।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রহস্যময় আগুন পাহাড়

সুমন্ত গুপ্ত
রহস্যময় আগুন পাহাড়

বন-পাহাড়ে ঘেরা জলের মঞ্চে আগুনের উৎসব! পোড়া পাহাড়ের বুকে অসংখ্য আগুনের চুল্লি থেকে সাপের মতো জিহ্বা নাড়ছে লেলিহান আগুন। সিলেটের পথে পথে সৌন্দর্যের ভিড়ে নিজেকে আলাদা করে যেন রহস্যপুরী হয়ে উঠেছে উৎলার পাড়। তাই তো রহস্যপিয়াসি পর্যটকদের পদধ্বনিতে মুখর উৎলার পাড়ের পোড়ামাটির পথ।

গ্রামের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছে পোড়ামাটির একটি টিলা। স্থানীয়দের কাছে সেটি আগুন পাহাড় নামে পরিচিত। টিলার গায়ে অনেক ছোট-বড় গর্ত। এসব গর্ত দিয়ে অনবরত গ্যাস বের হচ্ছে। দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালালেই দপ করে আগুন জ্বলে। শোনা গেল, ৭০ বছর ধরে গ্যাস এভাবেই নির্গমন হচ্ছে এই টিলা দিয়ে।

টিলা থেকে ১০ মিনিট হাঁটলেই দেখা মিলবে আরও একটি তাক লাগানো পুকুরের। ৭০ বছর ধরে এই পুকুরের পানি দিয়ে বুদ্‌বুদ করে গ্যাস বের হচ্ছে। বুদ্‌বুদ থেকে সৃষ্ট ফেনা জমিয়ে আগুন দিলে পুকুরের পানিতেও আগুন জ্বলে ওঠে! সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকার উৎলার পাড় গ্রামে গেলে দেখা মিলবে এই টিলার।

২. ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা। ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর মাঝে মোবাইল ফোন বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখলাম, আমাদের ভ্রমণের জন্য তৈরি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নক দিচ্ছেন একজন। ক্রমে অন্য ভ্রমণসঙ্গীরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সক্রিয় হয়ে উঠলেন। সবাই আশপাশে হলেও ঘুরতে যেতে চান। এরপর মাথায় এল সিলেটের হরিপুরের আগুন পাহাড়ের কথা। ছোটবেলায় অনেক শুনেছি তার গল্প। আমার প্রস্তাবে সবাই একবাক্যে রাজি। ঠিক হলো, দুপুরের পর রওনা দেওয়া হবে।

পরদিন যথাসময়ে ভ্রমণ গ্রুপের সবাই এসে উপস্থিত। নাগরিক পরিবেশ ছেড়ে চার চাকার বাহন এগিয়ে চলল আগুন পাহাড় পানে। সময় যেন ফুরাচ্ছিল না। প্রায় এক ঘণ্টা পর আমরা উপস্থিত হলাম কাছাকাছি। সামনে গেলেই আগুন পাহাড়। তার প্রায় আধা কিলোমিটার এগিয়ে গেলে পাওয়া যাবে সেই বিস্ময়কর পুকুরের দেখা, যেখানে পানিতে আগুন জ্বলে।

আগুন-পাহাড়-(4)

আমরা গাড়ির থেকে নেমে পদব্রজে এগিয়ে যেতে লাগলাম। বাঁ পাশে সবুজ ধানখেত, তার পাশে আগুন পাহাড়। সূর্যে প্রভায় আগুনের রূপ দেখা যাচ্ছিল না ঠিকমতো। তবে আগুনের উষ্ণতা ঠাহর করা যাচ্ছে। ভ্রমণসঙ্গীরা যে যার মতো ছবি তোলায় মগ্ন হয়ে পড়লেন। আমি আর বাকি থাকি কেন! দিন ছোট, তাই এখনই পুকুরপানে না গেলে রাত হয়ে যাবে। তাই আমরা দৌড় লাগালাম সেদিকে।

১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পায় তৎকালীন পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (পিপিএল)। গ্যাস তোলার জন্য সে বছরেই কূপ খননের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। সে জন্য অনুসন্ধানে ব্যবহৃত সব যন্ত্রপাতি এবং নির্মিত ভবন ভূগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভূমিধসে ওই জায়গায় পুকুরের মতো গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে গর্তের পানিতে সব সময় বুদ্‌বুদ দেখা যায়। সেখানে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালালেই পানিতে আগুন ধরে যায়।

অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, এখানে শাহ আহমদ আলী নামের একজন কামেল পীরের মাজার রয়েছে। গ্যাস কূপ খননের সময় তিনি নিষেধ করে অন্য জায়গা থেকে গ্যাস তোলার কথা বলেন। না হলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলেও তিনি সাবধান করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই পীরের কথা না শুনে কূপ খনন করায় সময় বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে মাটি উড়ে গিয়ে এবং মাটি ধসে পুকুর আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়। এই পুকুরের গভীরতা আজও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। বিস্ফোরণের পর বেশ কিছুদিন পুরো এলাকায় আগুন জ্বলতে থাকে। কোনোভাবে সেই আগুন নেভাতে না পেরে সেই পীরের দ্বারস্থ হয় গ্যাস কর্তৃপক্ষ। কামেল পীরের ‘ফুঁ’ দেওয়া বালু ছিটানো হলে জ্বলন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে!

আগুন-পাহাড়-(1)

গল্প যা-ই হোক। বিস্ফোরণের পর থেকে গর্তে বুদ্‌বুদ দেখা দেওয়ায় ওই গ্রামের নামকরণ হয় উৎলার পাড়। পানি থেকে গ্যাস উথলে ওঠার কারণে এই নামকরণ। আমরা এগিয়ে চলেছি পুকুরপানে। পথিমধ্যে দোকান থেকে দেশলাই বক্স কিনে নেওয়া হলো পুকুরের পানিতে আগুন জ্বালানোর জন্য। আমি মনে মনে ভাবলাম, পানিতে আবার কীভাবে আগুন জ্বলবে!

পুকুরের কাছে পৌঁছতেই শোঁ শোঁ শব্দ কানে এল। পানিতে দেখা গেল বুদ্‌বুদ। আমাদের মতো অনেকে এসেছেন এখানে। কেউ কেউ আবার ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে পানিতে ফেলে দেখার চেষ্টা করছেন, আগুন কি ঠিকই জ্বলে পানিতে! সবার মতো আমরাও বেশ চেষ্টা করলাম। কিন্তু অন্য সবার মতো বিফল হলাম।

আগুন-পাহাড়-(10)

এর মাঝে দেখা হলো কিশোর মহসিনের সঙ্গে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, ঠিকই কি পানিতে আগুন জ্বলে? আমরা তো জ্বালাতে পারলাম না। পানিতে ম্যাচের কাঠি পড়ার আগেই নিভে যায়। এবার মহসিন পানিতে নেমে আমাদের দেখাল কীভাবে পানিতে আগুন জ্বলে। এদিকে সূর্য পাটে যাচ্ছে। মহসিনের ম্যাজিক দেখে আমরা আগুন পাহাড়ের দিকে ফিরে চললাম। সেখানে ধানখেতের পাশে মানুষের জটলা দেখা গেল। আমরা এগিয়ে গেলাম সেদিকে। দেখা গেল, সেখানে মাটিতে আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে! আঁধার ঘনিয়ে আসায় আগুনের আলোর ছটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। আগুন পাহাড়ের গর্তগুলোর ভেতরে আগুন জ্বলছে। আমি চেষ্টা করলাম মোবাইল ফোনে ছবি তোলার। এ এক অন্য রকমের অভিজ্ঞতা।

কীভাবে যাবেন

সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট কিংবা ধোপাদীঘির পাড় থেকে জাফলং অভিমুখী বাস, অটোরিকশা ও লেগুনায় উঠে নামতে হবে হরিপুর বাজারে। সময় লাগবে ৫০-৫৫ মিনিট। এরপর হরিপুর বাজারে থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যেতে হবে উৎলার পাড়ে। জাফলং বা লালাখাল ঘুরতে গেলে হরিপুর হয়েই যেতে হয়। চাইলে খুব অল্প সময়ে জাফলং ভ্রমণের সঙ্গে আগুন পাহাড় ঘুরে দেখতে পারবেন সহজে।

সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট কিংবা ধোপাদীঘির পাড় থেকে জাফলং অভিমুখী বাস, অটোরিকশা ও লেগুনায় উঠে নামতে হবে হরিপুর বাজারে। সময় লাগবে ৫০-৫৫ মিনিট। এরপর হরিপুর বাজারে থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যেতে হবে উৎলার পাড়ে। জাফলং বা লালাখাল ঘুরতে গেলে হরিপুর হয়েই যেতে হয়। চাইলে খুব অল্প সময়ে জাফলং ভ্রমণের সঙ্গে আগুন পাহাড় ঘুরে দেখতে পারবেন সহজে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভিয়েতনামের পর্যটনশিল্প পুনরুদ্ধারের গতি দ্রুত

ফিচার ডেস্ক
ভিয়েতনামের পর্যটনশিল্প পুনরুদ্ধারের গতি দ্রুত

কয়েক দিন আগে ভিয়েতনামে হয়ে গেল ভয়াবহ বন্যা। এই বন্যা ভিয়েতনামের গত ৫০ বছরের ইতিহাসে মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে জানা গেছে। বৈশ্বিক পর্যটনের অন্যতম জনপ্রিয় এই দেশের পর্যটনশিল্পে এর বড় প্রভাব পড়েছে। তবে স্যাভিলস হোটেলস এবং আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা ওয়াটসন ফারলে অ্যান্ড উইলিয়ামস প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশটির পর্যটন পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে ইতিবাচক তথ্য জানানো হয়েছে। তাদের বক্তব্য, নিজ দেশে ভিয়েতনামের অধিবাসীদের ভ্রমণ এবং দেশটিতে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগমন বন্যা-পরবর্তী বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে।

পর্যটকদের আগমন ও প্রবৃদ্ধির চিত্র

২০২৪ সালে ভিয়েতনাম ভ্রমণ করেছে ১৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক। এর ধারাবাহিকতায়, ২০২৫ সালের প্রথম ৯ মাসে ১৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক দেশটি ঘুরে গেছে। বছর শেষে ২৫ মিলিয়ন পর্যটকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে রয়েছে ভিয়েতনাম। তবে গত এক দশকে ভিয়েতনামের মিডস্কেল থেকে বিলাসবহুল হোটেলের কক্ষের সংখ্যা ১০ দশমিক ৯ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধির হারে উন্নীত হয়েছে। এই সংখ্যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। দেশটিতে মোট হোটেল কক্ষের প্রায় ৬০ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত, যা রিসোর্টভিত্তিক পর্যটনকে বেশ শক্তিশালী করেছে। এদিকে দেশটির মূল গন্তব্যগুলোতে হোটেলের কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

দা নাং এবং নাহা ট্রাং-এর রিসোর্টগুলোতে নিয়মিতভাবে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশের বেশি বুকিং হচ্ছে। এ ছাড়া ফু কোওক-এ বার্ষিক বুকিং বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।

বিনিয়োগের সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের আকর্ষণ

ভিয়েতনামে পর্যটনের শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন, নতুন সরবরাহের ধীরগতি এবং প্রিমিয়াম অফারগুলোর দিকে চাহিদা স্থানান্তরিত হওয়ায়, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছে স্যাভিলস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ভিয়েতনামের দেশীয় ডেভেলপাররা এখনো প্রায় ৯০ শতাংশ স্টক নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রায় ৬৮ শতাংশ হোটেলমালিকদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটি সংস্কার, পুনঃস্থাপন কিংবা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে ব্যবস্থাপনা চুক্তি স্থাপনের জন্য প্রচুর সুযোগ তৈরি করছে। বর্তমানে ভিয়েতনামে প্রায় ৯০টি আন্তর্জাতিক হোটেল ব্র্যান্ড কাজ করছে। আগামী তিন বছরে এই সংখ্যা ১৩০টির বেশি হতে পারে। স্থানীয় এবং বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীই উপকূলীয় জমি, পুনর্নির্মাণের সম্ভাবনাসহ সম্পদ কেনার দিকে ঝুঁকছেন।

অবকাঠামো উন্নয়ন

ভিয়েতনামের পর্যটন ও আতিথেয়তা খাতের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধিকে সাহায্য করছে বড় আকারের অবকাঠামো প্রকল্পগুলো। এসব প্রকল্প আঞ্চলিক সংযোগ বাড়াতে সহায়তা করছে। লং থান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নোই বাই এর সম্প্রসারণ এবং নতুন গিয়া বিন বিমানবন্দরের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে ভিয়েতনামে। নর্থ-সাউথ এক্সপ্রেসওয়ের মতো প্রকল্পগুলো দেশের আঞ্চলিক যোগাযোগ আরও সহজ করে তুলছে। স্যাভিলস হোটেলস এশিয়া প্যাসিফিকের সিনিয়র ডিরেক্টর মাউরো গ্যাসপারোত্তি বলেছেন, ‘চাহিদার মৌলিক উন্নতি এবং হো চি মিন সিটি ও হ্যানয়ের মতো শহরগুলোতে বিভিন্ন পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায় ভিয়েতনাম এখন পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য উচ্চ রিটার্ন সুযোগ সন্ধানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত