মুনতাসির মইন

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দ্য সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর পাশে। হালকা থেকে গাঢ় হতে থাকল নীল। অদ্ভুত রং-বেরঙের নাম না জানা মাছ ছুটে বেড়াচ্ছে কোরাল বাগানে। চোখধাঁধানো রঙের সেই বাগান। কী সুন্দর, কী রহস্যময়! একসময় সাবমেরিন কোরাল রিফের শেষ প্রান্তে এসে পড়ল, তার নিচে গভীর খাদ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমাদের হলুদ সাবমেরিন কচুরিপানার মতো বিশাল সমুদ্রে ভাসতে লাগল। এভারেস্টের নিচে দাঁড়িয়ে যেমন গভীর শূন্যতা অনুভব করেছিলাম, এখানেও তা-ই হলো। গভীর ঘোর লেগে গেল। ছেলে ধাক্কা দিয়ে ঘোর ভাঙাল। ‘বাবা, এই মাছের নাম কী?’ আমি ফ্যালফ্যাল করে বললাম, ‘সি ফিশ!’ আজ আমাদের মালদ্বীপের দ্বিতীয় দিন।
প্লেনের ককপিটে যখন ক্যাপ্টেন বললেন, ‘আমরা আর কিছুক্ষণের মধ্যে মালদ্বীপে ল্যান্ড করব’, তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে এক অপার্থিব সৌন্দর্য দেখলাম। গাঢ় নীল একটি আর্টিস্ট প্লেটের মধ্যে যেন আকাশি, ফিরোজা, সাদা আর সবুজের রঙের প্রলেপ। এ রকম ছোট-বড় হাজার হাজার রঙের প্রলেপ প্লেটজুড়ে। এগুলো একেকটা দ্বীপ। ঠিক যেন রঙের মালা। কিছু কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মালদ্বীপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘মালা দ্বীপ’ থেকে, যার অর্থ ফুলের মালার দ্বীপ। তবে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে এই দ্বীপকে বলা হয়েছে ‘লাক্ষাদ্বীপ’ বা শত হাজার দ্বীপ। তবে মালদ্বীপে হাজারের বেশি দ্বীপ থাকলেও ১ লাখ দ্বীপ নেই। বর্তমান মালদ্বীপে ১ হাজার ১৮৪টি দ্বীপ ও ২৮টি প্রাকৃতিক অ্যাটল আছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮৭টি দ্বীপ বসবাসের উপযোগী।
আমাদের রিসোর্টটি ছিল এমনই এক দ্বীপে। রিসোর্টের নাম হার্ড রক হোটেল মালদ্বীপ। সাউথ মালে এটলে এটি অবস্থিত। এটল হচ্ছে দীর্ঘ বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীর। প্রবালপ্রাচীরের পার ঘেঁষে রিসোর্টগুলো গড়ে উঠেছে। মালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ২০ মিনিটে স্পিডবোটে করে রিসোর্টে পৌঁছানো যায়।
মালদ্বীপের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টটা বেশ মজার। অন্য দেশের মতো নয়। অন্য যেকোনো দেশে আমরা এয়ারপোর্টে নেমে রাস্তা মাপি আর মালদ্বীপে মাপতে হয় সমুদ্র। এয়ারপোর্টে নেমেই বিশাল সমুদ্র। রিসোর্টে যেতে চাইলে উঠে পড়তে হয় স্পিডবোটে অথবা সি প্লেনে। আমাদের রিসোর্টের সদা হাস্যোজ্জ্বল ভুবন আমাদের রিসিভ করার জন্য এসেছিল। চমৎকার ইংরেজিতে বলল, ‘ওয়েলকাম টু দ্য হ্যাভেন।’ ছোট্ট এই লাইন জীবনতৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে তুলল। কী চমৎকার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি! প্লেনের চার ঘণ্টার বিরক্তিকর ভ্রমণ শেষে গাঢ় নীল সমুদ্র যেন ইফতারের শরবতের গ্লাস। নোনা বাতাসে ঝরঝরে লাগল শরীর, নোনা স্বাদও যেন পেল জিহ্বা। স্পিডবোট চলতে শুরু করল।
ছেলের চোখে আনন্দ আর মেয়ের চোখে উৎকণ্ঠা। কারণ, ততক্ষণে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল আমাদের স্পিডবোটে। সেটি বাম্প করতে লাগল রোলার কোস্টারের মতো। ২০ মিনিট পর শান্ত হলো স্পিডবোট। আমরা ততক্ষণে গভীর সমুদ্র থেকে রিফে পৌঁছে গেছি। ধীরে ধীরে ল্যান্ডিং জেটি চোখে পড়ল। গাঢ় নীলের পর পান্না সবুজ পানি, তার ওপর সাদা দ্বীপ। জেটি সামনে আসতেই চোখে পড়ল, রিসোর্টের সাতজন স্টাফ হাত নেড়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। তাদের দলপতি স্বর্ণকেশী রাশিয়ান আলিশা। চমৎকার হেসে সম্ভাষণ জানাল আর বলল, ‘মইন ফ্যামিলিকে পেয়ে আমরা আনন্দিত।’ মনে হচ্ছিল কত দিনের চেনা।
রিসেপশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো কাঙ্ক্ষিত ওয়াটার বাংলোতে। আমাদের বাংলোটি স্বচ্ছ নীল পানির ওপর দুই রুমের কুঁড়েঘর। একটি মাস্টার বেডরুম আর একটি ড্রেসিং রুম। মাস্টার বেডরুমের সঙ্গে লাগোয়া একটি টেরেস। টেরেসের এক পাশে আছে সিঁড়ি, যা দিয়ে সরাসরি রিফে নেমে পড়া যায়। আর টেরেসের আরেক পাশে মোটা সাদা দড়ি দিয়ে বানানো হয়েছে বিশাল ট্রাম্পোলিন এবং তার ঠিক নিচে সমুদ্র। বাচ্চারা লাফালাফি শুরু করল ট্রাম্পোলিনে। আমরাও যোগ দিলাম তাদের সঙ্গে। আহা সে কী আনন্দ!
আসলে নামে কুঁড়েঘর হলেও আধুনিক বসবাসের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মেলে এই বাংলোগুলোতে। স্টার রেটিং ভেদে বাড়তে থাকে সুযোগ-সুবিধার পরিধি। কিন্তু কিছু ম্যাজিক স্টার রেটিং মানে না। এই ম্যাজিকের ম্যাজিশিয়ান হলো রিফের বাসিন্দা বেবি সার্ক, স্টিং রে, সি টার্টল আর অসংখ্য নাম না জানা রংবেরঙের মাছ। তারা ম্যাজিক দেখাতে হঠাৎ হঠাৎ চলে আসে বাংলোগুলোর ঠিক নিচে। ওপর থেকে বসে তাদের খেলাধুলা দেখতে বেশ লাগে। সহজ-স্বাভাবিকভাবে তারা ঘুরে বেড়ায় বাংলোর আশপাশে। যেন আমাদের মতো তারাও ঘুরতে এসেছে মালদ্বীপে। এ রকম মানুষের সঙ্গে প্রাণীদের সহাবস্থান দেখতে আমার বেশ লাগে। নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ তকমা লাগিয়ে অহংকার করা আমার মোটেও ভালো লাগে না। পুরো ইকোসিস্টেমে সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি থেকে ক্ষুদ্র মৌমাছিকে বাদ দিলে কয়েক বছরের মধ্যে বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে সবুজ পৃথিবী। তখন কী হবে চিন্তা করা যায়?
আমরা মালদ্বীপে গিয়েছিলাম ৭ জানুয়ারি। তখন মাত্র ক্রিসমাস শেষ হয়েছে। কিন্তু রিসোর্টজুড়ে ছিল ক্রিসমাসের সাজসজ্জা আর আমেজ। গোলাপি আলোয় আলোকিত পুরো রিসোর্ট। সেদিনই ছিল তাদের ক্রিসমাস ডিনারের শেষ আয়োজন। সমুদ্রতটের সাদা বালুর ওপর বিছানো হয়েছে টেবিল। তার ওপর মোমবাতি। সাগরের মৃদুমন্দ হাওয়া তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্রাজিলিয়ান এক ব্যান্ড দল বাজিয়ে চলেছে ‘আভা মারিয়া’। করুণ আভা মারিয়া কেন যেন যিশুর লাস্ট সাপারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। জীবনের শেষ নৈশভোজে বসেছেন যিশু তাঁর বারোজন শিষ্য নিয়ে। ভীষণ শান্ত স্বরে যিশু বললেন, ‘কাল তোমাদের মধ্যেই একজন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, ধরিয়ে দেবে আমাকে।’ যিশুর মুখে এই কথা শুনে বারোজনের কারও মুখে ভয়, কারও আগ্রহ, কারও সন্দেহ, কারও মুখে কৌতূহল, করো মুখে ঘৃণা, কারও মুখে উদ্বেগ ফুটে উঠেছিল। কী অদ্ভুত!
এ নিয়ে একটি বিখ্যাত চিত্র আছে লেওনার্দ দ্য ভিঞ্চির, নাম ‘দ্য লাস্ট সাপার’। আঁকা হয়েছিল মিলানের সান্তা মারিয়া দেল্লে গ্র্যাছে। একবার এই ছবি দেখতে গিয়েছিলাম; কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি পনেরো মিনিটের জন্য। গির্জায় ঢোকার শেষ সময় ছয়টা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। আমাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাতটা বেজে গিয়েছিল। সেই আফসোস আমার আজও গেল না!
ক্রিসমাসের শেষ ডিনারের আয়োজনটা ছিল হুলুস্থুল রকমের। শুরুতেই এক গ্লাস শ্যাম্পেইন হাতে ধরিয়ে দিয়ে রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার অনিত বলল, ‘আজ ডায়েটের কথা ভুলে যাও। যা মন চায়, খাও।’ নাম না জানা অসংখ্য খাবারে পরিপূর্ণ ব্যুফে, কমলা আলাস্কান ক্র্যাব লেগ, খরগোশের নরম মাংসের ফ্রেঞ্চ টেরিন, সদ্য তোলা নীল রিফের ওয়েস্টার, চিজ হুইলে মাখানো গরম-গরম পাস্তা—আরও কত কী! অনিতের সঙ্গে খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল, মালদ্বীপের প্রথম দিকের জনবসতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তামিলরা, যারা প্রাচীন তামিলকাম থেকে এসেছিল। এই তামিলকামই বর্তমানে ভারতের তামিলনাড়ু। সেই সময় যেসব পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছিল, তারা সবাই রানিশাসিত এই রাজ্যের কথা উল্লেখ করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রাচীন সাহিত্য ‘মহাবংশ’-এ মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘মহিলাদ্বীপ’ বা নারীদের দ্বীপ। তার মানে বোঝা যায়, মাতৃতান্ত্রিক এক সমাজব্যবস্থা ছিল এই মালদ্বীপে। লুইস মরগানের একটি চমৎকার বই আছে, নাম ‘অ্যানশায়েন্ট সোসাইটি’। সেখানে লেখকের দাবি, আদিমকালে সব গোষ্ঠী নাকি ছিল মাতৃতান্ত্রিক। কী মজার একটা ব্যাপার, মায়েদের চোখরাঙানি খেয়ে বাবারা চুপ করে বসে থাকত! এরপর সম্রাট অশোকের সময় বুদ্ধ ভিক্ষুরা গিয়ে মালদ্বীপে বসবাস শুরু করেন। তখনই বৌদ্ধধর্ম প্রসার পায়। এখনো তার প্রচুর নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক দ্বীপে। বারো শতকের দিকে মুসলিম বণিকেরা ব্যবসা করতে ভারত সাগরে এসে ঘাঁটি গাড়ে মালদ্বীপে। শুরু হয় দীর্ঘ ইসলামি যুগের।

গল্প শেষে বিদায় নিয়ে চলে এলাম স্বপ্নের সেই কুটিরে। বাচ্চারা কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাদের বিছানায় রেখে আমরা শুয়ে রইলাম নেটের তৈরি টেরেসের সেই ট্রাম্পোলিনে। আকাশে তখন অনন্ত নক্ষত্রবীথি। তারায় পরিপূর্ণ আকাশ। এমন আকাশের দিকে তাকিয়ে অনন্ত জীবন বেঁচে থাকার লোভ জাগে। তখন ঠিক বারোটা। ঠিক সেই মুহূর্তেই আমাদের বিয়ের বারো বছর পূর্ণ হলো।
সকালে ঘুম ভাঙল মৃদু ঠকঠক শব্দে। উঠে দেখি ঘরে বেড়াতে এসেছে দুটো সাদা ড্রিল। ড্রিল হচ্ছে ছোট সাদা শামুক। হাঁটার সময় টালির সঙ্গে শক্ত খোলসের ঠক্করে শব্দ হচ্ছিল ঠকঠক। কিছুক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে শামুকদের সঙ্গে খেলে বললাম তাদের রিফে ফিরিয়ে দিতে। মালদ্বীপসহ প্রাচীন পৃথিবীর বেশ কিছু অঞ্চলের মুদ্রা ছিল একধরনের শামুক, যা আমরা কড়ি নামে চিনি। ১৩৪৪ সালে ইবনে বতুতা মালদ্বীপে এসে দেখেছিলেন, প্রতিবছর মালদ্বীপ ৪০ জাহাজ কড়ি রপ্তানি করত। প্রশ্ন জাগে, কেমন ছিল সেই কড়ির আর্থিক মান? তখন ৪ লাখ কড়ি দিয়ে একটি সোনার দিনার পাওয়া যেত।
এবার রিফে নামার পালা। রুমের সামনে টেরেসের সিঁড়ি দিয়ে নেমে পড়লাম স্বচ্ছ পানিতে। পানির তাপমাত্রা চমৎকার আরামদায়ক। কোমর পর্যন্ত পানিতে অনায়াসে হাঁটা যায় অনেক দূর পর্যন্ত। লাইফ জ্যাকেট পরে নিলাম। নরম বালিতে কিছুক্ষণ হাঁটার পর শরীর ভাসিয়ে দিলাম পানিতে। সাদা বালির ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য কোরাল। তার মাঝে মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট রংবেরঙের মাছ। হাত দিয়ে ধরতে গেলে তারা দৌড়ে পালায়। ততক্ষণে ছেলে কোরাল সংগ্রহে নেমে পড়েছে। রংবেরঙের কোরাল সংগ্রহ করে পকেটে পুরে রাখছে। ছেলে শুনে অবাক হলো, এই কোরলগুলোরও একসময় প্রাণ ছিল। পরে বুড়ো হয়ে মরে গিয়ে তারা জমতে শুরু করে সাগরের তলদেশে। মরে যাওয়ার পর তাদের দেহের চারপাশে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের একটি পাথুরে স্তর তৈরি হয়। সেটাকেই আমরা প্রবাল বলি। এই প্রবালগুলো এভাবে লাখ লাখ বছর জমে একেকটি পাথরের আকৃতি নেয়। আর কোটি কোটি বছর জমে একটি দ্বীপ সৃষ্টি করে। কী অদ্ভুত প্রকৃতির খেয়াল!

ছেলেকে বললাম, ‘কোটি কোটি বছর পুরোনো এই পাথরবাগান কোনোভাবেই নষ্ট করা উচিত নয়। এরা খুবই দুর্লভ। পৃথিবীতে অল্প কিছু আছে, যার মধ্যে একটি আছে আমাদের দেশে। যাকে আমরা সেন্ট মার্টিন বলে জানি।’ সেন্ট মার্টিনের কথা বলতে বলতে মন খারাপ হয়ে গেল। দেশে এত সুন্দর একটা দ্বীপ আছে, যাকে ইচ্ছে করলেই এমন মালদ্বীপের মতো করা যেত। কিন্তু আমরা চরম অবহেলায় ফেলে রেখেছি। গুনগুন করে গাইতে লাগলাম—
জনম গেল বৃথা কাজে
আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে
তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে, শক্তিদাতা
ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা।
রিফে সাঁতার কাটতে কাটতে আমরা সাবমেরিনের প্রোগ্রাম করলাম। রিসোর্টে একটি ছোট সাবমেরিন আছে। সেটা ঠিক সাবমেরিন নয়। সাবমেরিন আকৃতির নৌকা বলা যায়। নিচের দিকে ফাঁকা একটি জায়গায় ছয়-সাতজন বসতে পারে, চারদিক স্বচ্ছ জানালা দিয়ে ঘেরা। রিফের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে এই সাবমেরিনের জুড়ি নেই। স্নোরকেলিং করে অল্প একটু জায়গা ঘুরে দেখা যেতে পারে। ভালো ডাইভিংয়ের জন্য দরকার ট্রেনিং। এই দুটোর মাঝে সাবমেরিনে ভ্রমণ ভালো সুযোগ হতে পারে। সাবমেরিনের বর্ণনা প্রথমেই একটু বলেছিলাম। কিন্তু তার সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশের শব্দ আমার অভিধানে নেই।
আমাদের রিসোর্টে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট পনেরোটি রেস্টুরেন্ট ছিল। তার মধ্যে কিছু ইন্টারন্যাশনাল চেইন রেস্টুরেন্ট। মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব তেমনি এক রেস্টুরেন্ট। আজ ডিনারের জন্য আমরা সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। এই মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব এশিয়ার ছয়টি দেশে তাদের রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছে। ওয়ার্ল্ডস ফিফটি বেস্ট রেস্টুরেন্টের তালিকায় তাদের অবস্থান পঁচিশ। বড় বড় কাঁকড়াই তাদের প্রধান আকর্ষণ। তাদের প্রধান নীতি হলো, তারা হিমায়িত খাবার পরিবেশন করে না। এ জন্য তাদের বিশাল ঝামেলা পোহাতে হয়। মালদ্বীপের এই রেস্টুরেন্টে তাদের কাঁকড়াগুলো আসে প্রাইভেট প্লেনে করে, শ্রীলঙ্কা থেকে। তারপর তাদের বসবাস উপযোগী একটি চৌবাচ্চায় জ্যান্ত সংরক্ষণ করা হয় প্লেটে পরিবেশন করার আগ পর্যন্ত। ক্রেতাদের চাহিদামতো জ্যান্ত কাঁকড়া নিয়ে আসা হয় তার আকৃতি ঠিক আছে কি না, দেখানোর জন্য। এখানে প্রায় দশ আকারের কাঁকড়া পাওয়া যায়। ছোটটা আধা কেজি আর বড়টা দুই কেজি ওজনের। তারা প্রায় পাঁচ রকমভাবে কাঁকড়া রান্না করতে পারে। এর মধ্যে পিপার ক্র্যাব অসম্ভব জনপ্রিয়।
আমরা পিপার ক্র্যাব অর্ডার করেছিলাম, সঙ্গে ছিল ক্র্যাব লিভার পাটে, এপেটাইজারে। ছোট্ট একটি বিস্কুটের ওপর এই ক্র্যাব লিভার পেস্ট জেলির মতো লাগিয়ে তার ওপরে ম্যাপেল সিরাপ দিয়ে কুট্টুস করে কামড় দিয়ে খেতে হয়। দুই কেজির বিশাল পিপার ক্র্যাব খাবার জন্য ঘাম ঝরানো জরুরি। রীতিমতো ছেনি-বাটাল নিয়ে ভাঙতে হয় ক্র্যাবের শক্ত খোল। তারপর বের হয় কাঙ্ক্ষিত সাদা মাংস। পিপার সসে ডুবিয়ে সেই মাংস মুখে পুরে অনায়াসে ভুলে যাওয়া যায় জগৎ-সংসার। ডেজার্টে ছিল নারকেলের খোলে তৈরি ফ্রেঞ্চ ক্রিম ব্রুলে। এবার ঘুম।

আজ ঘুম ভাঙল বৃষ্টির শব্দে। সে কী বৃষ্টি! গতকালের ভেজা কাপড়গুলো শুকাতে দেওয়া হয়েছিল টেরেসে। সেগুলো আবার ভিজে গেল। রুমের দরজা খুলে টেরেসে গিয়ে নতুন রঙের আভা দেখলাম। সবুজ সমুদ্র আরও সবুজ দেখা যাচ্ছে আর ওপরে কালো আকাশ। সে অপরূপ ব্যাপার! সমুদ্র ভয়ংকর হতে লাগল। বাড়তে লাগল বৃষ্টির তেজ। মালদ্বীপের বৃষ্টি নাকি ভয়ংকর—একবার শুরু হলে এক সপ্তাহ। মন খারাপ হয়ে গেল। আরও দুই দিন যে থাকতে হবে! কিন্তু কিছুক্ষণ পরই মেঘ কেটে গিয়ে চমৎকার এক সূর্যের দেখা পেলাম। পুরো পরিবার নিয়ে রিফে নেমে গেলাম। গতকাল নাকি এক বিশাল মান্তা রে ঢুকেছে রিফে।
এই প্রাণীটা বেশ মজার। এরা নাকি তেইশ ফুট পর্যন্ত চওড়া হতে পারে! অদ্ভুত দর্শনের জন্য এদের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে ভীষণ ভয় পেত। প্রাচীনকালে নাবিকেরা বিশ্বাস করতেন যে, তারা মানুষের জন্য বিপজ্জনক এবং নোঙরে টান দিয়ে নৌকা ডোবাতে পারে। পরে যখন ডাইভিং জনপ্রিয় হয়, তখন মানুষ বুঝতে শেখে, এরা নিরীহ গোছের প্রাণী আর শুরু করে তাদের ওপর অত্যাচার। তাদের ফুলকা চায়নিজ ওষুধের এক দুর্মূল্য উপাদান। এই ফুলকার জন্য হাজার হাজার মান্তা রে প্রতি বছর মারা হয়। সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় গত বছরই তাদের বিপদাপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
দুপুরে যখন আমরা পানি থেকে উঠে খাবার খাচ্ছিলাম, তখনই দেখা মিলল সেই বিশাল কালো মান্তা রের। প্রবল দাপটে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে রিফে। মাছেদের খেলা দেখতে দেখতে বিকেল নামল। বেগুনি হয়ে উঠল আকাশ। রিফের সেই আকাশি পানি তখনো আকাশি। তবে কিছুটা কালচে। চমৎকার বেগুনি আকাশের নিচে কালচে আকাশি সমুদ্র ঠিক যেন মনভোলা এক চিত্রকরের হাতে আঁকা ছবি। প্রকৃতির এমন রূপ দেখে যেকোনো শিল্পীর মনে হতে বাধ্য, এখানে বাকি জীবন কাটালে মন্দ হতো না। সারা দিন শুধু ছবি আঁকব, ফিরব না আর যান্ত্রিক নগরে। সত্যি সত্যি এমন পাগলামি কিন্তু একজন করেছিলেন—তাঁর নাম পল গগাঁ। ফরাসি এই শিল্পী তাহিতি নামের এক দ্বীপে গিয়ে তার প্রেমে পড়ে যান। তারপর সবকিছু ছেড়েছুড়ে আমৃত্যু বসবাস করতে থাকেন সেই দ্বীপে।
মালদ্বীপের এই তটে বসে গগাঁর মনের অবস্থা টের পাচ্ছিলাম। এই ক্ষুদ্র জীবনে খুব বেশি কিছু কি দরকার? তবু ফিরে যেতে হবে কাল। মন খারাপ হয়ে গেল। আকাশে তখন তারা ফুটে উঠছে। বেগুনি থেকে গাঢ় নীল হচ্ছে পৃথিবী।
পৃথিবী এত সুন্দর কেন?

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দ্য সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর পাশে। হালকা থেকে গাঢ় হতে থাকল নীল। অদ্ভুত রং-বেরঙের নাম না জানা মাছ ছুটে বেড়াচ্ছে কোরাল বাগানে। চোখধাঁধানো রঙের সেই বাগান। কী সুন্দর, কী রহস্যময়! একসময় সাবমেরিন কোরাল রিফের শেষ প্রান্তে এসে পড়ল, তার নিচে গভীর খাদ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমাদের হলুদ সাবমেরিন কচুরিপানার মতো বিশাল সমুদ্রে ভাসতে লাগল। এভারেস্টের নিচে দাঁড়িয়ে যেমন গভীর শূন্যতা অনুভব করেছিলাম, এখানেও তা-ই হলো। গভীর ঘোর লেগে গেল। ছেলে ধাক্কা দিয়ে ঘোর ভাঙাল। ‘বাবা, এই মাছের নাম কী?’ আমি ফ্যালফ্যাল করে বললাম, ‘সি ফিশ!’ আজ আমাদের মালদ্বীপের দ্বিতীয় দিন।
প্লেনের ককপিটে যখন ক্যাপ্টেন বললেন, ‘আমরা আর কিছুক্ষণের মধ্যে মালদ্বীপে ল্যান্ড করব’, তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে এক অপার্থিব সৌন্দর্য দেখলাম। গাঢ় নীল একটি আর্টিস্ট প্লেটের মধ্যে যেন আকাশি, ফিরোজা, সাদা আর সবুজের রঙের প্রলেপ। এ রকম ছোট-বড় হাজার হাজার রঙের প্রলেপ প্লেটজুড়ে। এগুলো একেকটা দ্বীপ। ঠিক যেন রঙের মালা। কিছু কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মালদ্বীপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘মালা দ্বীপ’ থেকে, যার অর্থ ফুলের মালার দ্বীপ। তবে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে এই দ্বীপকে বলা হয়েছে ‘লাক্ষাদ্বীপ’ বা শত হাজার দ্বীপ। তবে মালদ্বীপে হাজারের বেশি দ্বীপ থাকলেও ১ লাখ দ্বীপ নেই। বর্তমান মালদ্বীপে ১ হাজার ১৮৪টি দ্বীপ ও ২৮টি প্রাকৃতিক অ্যাটল আছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮৭টি দ্বীপ বসবাসের উপযোগী।
আমাদের রিসোর্টটি ছিল এমনই এক দ্বীপে। রিসোর্টের নাম হার্ড রক হোটেল মালদ্বীপ। সাউথ মালে এটলে এটি অবস্থিত। এটল হচ্ছে দীর্ঘ বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীর। প্রবালপ্রাচীরের পার ঘেঁষে রিসোর্টগুলো গড়ে উঠেছে। মালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ২০ মিনিটে স্পিডবোটে করে রিসোর্টে পৌঁছানো যায়।
মালদ্বীপের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টটা বেশ মজার। অন্য দেশের মতো নয়। অন্য যেকোনো দেশে আমরা এয়ারপোর্টে নেমে রাস্তা মাপি আর মালদ্বীপে মাপতে হয় সমুদ্র। এয়ারপোর্টে নেমেই বিশাল সমুদ্র। রিসোর্টে যেতে চাইলে উঠে পড়তে হয় স্পিডবোটে অথবা সি প্লেনে। আমাদের রিসোর্টের সদা হাস্যোজ্জ্বল ভুবন আমাদের রিসিভ করার জন্য এসেছিল। চমৎকার ইংরেজিতে বলল, ‘ওয়েলকাম টু দ্য হ্যাভেন।’ ছোট্ট এই লাইন জীবনতৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে তুলল। কী চমৎকার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি! প্লেনের চার ঘণ্টার বিরক্তিকর ভ্রমণ শেষে গাঢ় নীল সমুদ্র যেন ইফতারের শরবতের গ্লাস। নোনা বাতাসে ঝরঝরে লাগল শরীর, নোনা স্বাদও যেন পেল জিহ্বা। স্পিডবোট চলতে শুরু করল।
ছেলের চোখে আনন্দ আর মেয়ের চোখে উৎকণ্ঠা। কারণ, ততক্ষণে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল আমাদের স্পিডবোটে। সেটি বাম্প করতে লাগল রোলার কোস্টারের মতো। ২০ মিনিট পর শান্ত হলো স্পিডবোট। আমরা ততক্ষণে গভীর সমুদ্র থেকে রিফে পৌঁছে গেছি। ধীরে ধীরে ল্যান্ডিং জেটি চোখে পড়ল। গাঢ় নীলের পর পান্না সবুজ পানি, তার ওপর সাদা দ্বীপ। জেটি সামনে আসতেই চোখে পড়ল, রিসোর্টের সাতজন স্টাফ হাত নেড়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। তাদের দলপতি স্বর্ণকেশী রাশিয়ান আলিশা। চমৎকার হেসে সম্ভাষণ জানাল আর বলল, ‘মইন ফ্যামিলিকে পেয়ে আমরা আনন্দিত।’ মনে হচ্ছিল কত দিনের চেনা।
রিসেপশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো কাঙ্ক্ষিত ওয়াটার বাংলোতে। আমাদের বাংলোটি স্বচ্ছ নীল পানির ওপর দুই রুমের কুঁড়েঘর। একটি মাস্টার বেডরুম আর একটি ড্রেসিং রুম। মাস্টার বেডরুমের সঙ্গে লাগোয়া একটি টেরেস। টেরেসের এক পাশে আছে সিঁড়ি, যা দিয়ে সরাসরি রিফে নেমে পড়া যায়। আর টেরেসের আরেক পাশে মোটা সাদা দড়ি দিয়ে বানানো হয়েছে বিশাল ট্রাম্পোলিন এবং তার ঠিক নিচে সমুদ্র। বাচ্চারা লাফালাফি শুরু করল ট্রাম্পোলিনে। আমরাও যোগ দিলাম তাদের সঙ্গে। আহা সে কী আনন্দ!
আসলে নামে কুঁড়েঘর হলেও আধুনিক বসবাসের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মেলে এই বাংলোগুলোতে। স্টার রেটিং ভেদে বাড়তে থাকে সুযোগ-সুবিধার পরিধি। কিন্তু কিছু ম্যাজিক স্টার রেটিং মানে না। এই ম্যাজিকের ম্যাজিশিয়ান হলো রিফের বাসিন্দা বেবি সার্ক, স্টিং রে, সি টার্টল আর অসংখ্য নাম না জানা রংবেরঙের মাছ। তারা ম্যাজিক দেখাতে হঠাৎ হঠাৎ চলে আসে বাংলোগুলোর ঠিক নিচে। ওপর থেকে বসে তাদের খেলাধুলা দেখতে বেশ লাগে। সহজ-স্বাভাবিকভাবে তারা ঘুরে বেড়ায় বাংলোর আশপাশে। যেন আমাদের মতো তারাও ঘুরতে এসেছে মালদ্বীপে। এ রকম মানুষের সঙ্গে প্রাণীদের সহাবস্থান দেখতে আমার বেশ লাগে। নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ তকমা লাগিয়ে অহংকার করা আমার মোটেও ভালো লাগে না। পুরো ইকোসিস্টেমে সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি থেকে ক্ষুদ্র মৌমাছিকে বাদ দিলে কয়েক বছরের মধ্যে বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে সবুজ পৃথিবী। তখন কী হবে চিন্তা করা যায়?
আমরা মালদ্বীপে গিয়েছিলাম ৭ জানুয়ারি। তখন মাত্র ক্রিসমাস শেষ হয়েছে। কিন্তু রিসোর্টজুড়ে ছিল ক্রিসমাসের সাজসজ্জা আর আমেজ। গোলাপি আলোয় আলোকিত পুরো রিসোর্ট। সেদিনই ছিল তাদের ক্রিসমাস ডিনারের শেষ আয়োজন। সমুদ্রতটের সাদা বালুর ওপর বিছানো হয়েছে টেবিল। তার ওপর মোমবাতি। সাগরের মৃদুমন্দ হাওয়া তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্রাজিলিয়ান এক ব্যান্ড দল বাজিয়ে চলেছে ‘আভা মারিয়া’। করুণ আভা মারিয়া কেন যেন যিশুর লাস্ট সাপারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। জীবনের শেষ নৈশভোজে বসেছেন যিশু তাঁর বারোজন শিষ্য নিয়ে। ভীষণ শান্ত স্বরে যিশু বললেন, ‘কাল তোমাদের মধ্যেই একজন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, ধরিয়ে দেবে আমাকে।’ যিশুর মুখে এই কথা শুনে বারোজনের কারও মুখে ভয়, কারও আগ্রহ, কারও সন্দেহ, কারও মুখে কৌতূহল, করো মুখে ঘৃণা, কারও মুখে উদ্বেগ ফুটে উঠেছিল। কী অদ্ভুত!
এ নিয়ে একটি বিখ্যাত চিত্র আছে লেওনার্দ দ্য ভিঞ্চির, নাম ‘দ্য লাস্ট সাপার’। আঁকা হয়েছিল মিলানের সান্তা মারিয়া দেল্লে গ্র্যাছে। একবার এই ছবি দেখতে গিয়েছিলাম; কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি পনেরো মিনিটের জন্য। গির্জায় ঢোকার শেষ সময় ছয়টা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। আমাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাতটা বেজে গিয়েছিল। সেই আফসোস আমার আজও গেল না!
ক্রিসমাসের শেষ ডিনারের আয়োজনটা ছিল হুলুস্থুল রকমের। শুরুতেই এক গ্লাস শ্যাম্পেইন হাতে ধরিয়ে দিয়ে রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার অনিত বলল, ‘আজ ডায়েটের কথা ভুলে যাও। যা মন চায়, খাও।’ নাম না জানা অসংখ্য খাবারে পরিপূর্ণ ব্যুফে, কমলা আলাস্কান ক্র্যাব লেগ, খরগোশের নরম মাংসের ফ্রেঞ্চ টেরিন, সদ্য তোলা নীল রিফের ওয়েস্টার, চিজ হুইলে মাখানো গরম-গরম পাস্তা—আরও কত কী! অনিতের সঙ্গে খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল, মালদ্বীপের প্রথম দিকের জনবসতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তামিলরা, যারা প্রাচীন তামিলকাম থেকে এসেছিল। এই তামিলকামই বর্তমানে ভারতের তামিলনাড়ু। সেই সময় যেসব পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছিল, তারা সবাই রানিশাসিত এই রাজ্যের কথা উল্লেখ করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রাচীন সাহিত্য ‘মহাবংশ’-এ মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘মহিলাদ্বীপ’ বা নারীদের দ্বীপ। তার মানে বোঝা যায়, মাতৃতান্ত্রিক এক সমাজব্যবস্থা ছিল এই মালদ্বীপে। লুইস মরগানের একটি চমৎকার বই আছে, নাম ‘অ্যানশায়েন্ট সোসাইটি’। সেখানে লেখকের দাবি, আদিমকালে সব গোষ্ঠী নাকি ছিল মাতৃতান্ত্রিক। কী মজার একটা ব্যাপার, মায়েদের চোখরাঙানি খেয়ে বাবারা চুপ করে বসে থাকত! এরপর সম্রাট অশোকের সময় বুদ্ধ ভিক্ষুরা গিয়ে মালদ্বীপে বসবাস শুরু করেন। তখনই বৌদ্ধধর্ম প্রসার পায়। এখনো তার প্রচুর নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক দ্বীপে। বারো শতকের দিকে মুসলিম বণিকেরা ব্যবসা করতে ভারত সাগরে এসে ঘাঁটি গাড়ে মালদ্বীপে। শুরু হয় দীর্ঘ ইসলামি যুগের।

গল্প শেষে বিদায় নিয়ে চলে এলাম স্বপ্নের সেই কুটিরে। বাচ্চারা কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাদের বিছানায় রেখে আমরা শুয়ে রইলাম নেটের তৈরি টেরেসের সেই ট্রাম্পোলিনে। আকাশে তখন অনন্ত নক্ষত্রবীথি। তারায় পরিপূর্ণ আকাশ। এমন আকাশের দিকে তাকিয়ে অনন্ত জীবন বেঁচে থাকার লোভ জাগে। তখন ঠিক বারোটা। ঠিক সেই মুহূর্তেই আমাদের বিয়ের বারো বছর পূর্ণ হলো।
সকালে ঘুম ভাঙল মৃদু ঠকঠক শব্দে। উঠে দেখি ঘরে বেড়াতে এসেছে দুটো সাদা ড্রিল। ড্রিল হচ্ছে ছোট সাদা শামুক। হাঁটার সময় টালির সঙ্গে শক্ত খোলসের ঠক্করে শব্দ হচ্ছিল ঠকঠক। কিছুক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে শামুকদের সঙ্গে খেলে বললাম তাদের রিফে ফিরিয়ে দিতে। মালদ্বীপসহ প্রাচীন পৃথিবীর বেশ কিছু অঞ্চলের মুদ্রা ছিল একধরনের শামুক, যা আমরা কড়ি নামে চিনি। ১৩৪৪ সালে ইবনে বতুতা মালদ্বীপে এসে দেখেছিলেন, প্রতিবছর মালদ্বীপ ৪০ জাহাজ কড়ি রপ্তানি করত। প্রশ্ন জাগে, কেমন ছিল সেই কড়ির আর্থিক মান? তখন ৪ লাখ কড়ি দিয়ে একটি সোনার দিনার পাওয়া যেত।
এবার রিফে নামার পালা। রুমের সামনে টেরেসের সিঁড়ি দিয়ে নেমে পড়লাম স্বচ্ছ পানিতে। পানির তাপমাত্রা চমৎকার আরামদায়ক। কোমর পর্যন্ত পানিতে অনায়াসে হাঁটা যায় অনেক দূর পর্যন্ত। লাইফ জ্যাকেট পরে নিলাম। নরম বালিতে কিছুক্ষণ হাঁটার পর শরীর ভাসিয়ে দিলাম পানিতে। সাদা বালির ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য কোরাল। তার মাঝে মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট রংবেরঙের মাছ। হাত দিয়ে ধরতে গেলে তারা দৌড়ে পালায়। ততক্ষণে ছেলে কোরাল সংগ্রহে নেমে পড়েছে। রংবেরঙের কোরাল সংগ্রহ করে পকেটে পুরে রাখছে। ছেলে শুনে অবাক হলো, এই কোরলগুলোরও একসময় প্রাণ ছিল। পরে বুড়ো হয়ে মরে গিয়ে তারা জমতে শুরু করে সাগরের তলদেশে। মরে যাওয়ার পর তাদের দেহের চারপাশে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের একটি পাথুরে স্তর তৈরি হয়। সেটাকেই আমরা প্রবাল বলি। এই প্রবালগুলো এভাবে লাখ লাখ বছর জমে একেকটি পাথরের আকৃতি নেয়। আর কোটি কোটি বছর জমে একটি দ্বীপ সৃষ্টি করে। কী অদ্ভুত প্রকৃতির খেয়াল!

ছেলেকে বললাম, ‘কোটি কোটি বছর পুরোনো এই পাথরবাগান কোনোভাবেই নষ্ট করা উচিত নয়। এরা খুবই দুর্লভ। পৃথিবীতে অল্প কিছু আছে, যার মধ্যে একটি আছে আমাদের দেশে। যাকে আমরা সেন্ট মার্টিন বলে জানি।’ সেন্ট মার্টিনের কথা বলতে বলতে মন খারাপ হয়ে গেল। দেশে এত সুন্দর একটা দ্বীপ আছে, যাকে ইচ্ছে করলেই এমন মালদ্বীপের মতো করা যেত। কিন্তু আমরা চরম অবহেলায় ফেলে রেখেছি। গুনগুন করে গাইতে লাগলাম—
জনম গেল বৃথা কাজে
আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে
তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে, শক্তিদাতা
ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা।
রিফে সাঁতার কাটতে কাটতে আমরা সাবমেরিনের প্রোগ্রাম করলাম। রিসোর্টে একটি ছোট সাবমেরিন আছে। সেটা ঠিক সাবমেরিন নয়। সাবমেরিন আকৃতির নৌকা বলা যায়। নিচের দিকে ফাঁকা একটি জায়গায় ছয়-সাতজন বসতে পারে, চারদিক স্বচ্ছ জানালা দিয়ে ঘেরা। রিফের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে এই সাবমেরিনের জুড়ি নেই। স্নোরকেলিং করে অল্প একটু জায়গা ঘুরে দেখা যেতে পারে। ভালো ডাইভিংয়ের জন্য দরকার ট্রেনিং। এই দুটোর মাঝে সাবমেরিনে ভ্রমণ ভালো সুযোগ হতে পারে। সাবমেরিনের বর্ণনা প্রথমেই একটু বলেছিলাম। কিন্তু তার সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশের শব্দ আমার অভিধানে নেই।
আমাদের রিসোর্টে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট পনেরোটি রেস্টুরেন্ট ছিল। তার মধ্যে কিছু ইন্টারন্যাশনাল চেইন রেস্টুরেন্ট। মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব তেমনি এক রেস্টুরেন্ট। আজ ডিনারের জন্য আমরা সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। এই মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব এশিয়ার ছয়টি দেশে তাদের রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছে। ওয়ার্ল্ডস ফিফটি বেস্ট রেস্টুরেন্টের তালিকায় তাদের অবস্থান পঁচিশ। বড় বড় কাঁকড়াই তাদের প্রধান আকর্ষণ। তাদের প্রধান নীতি হলো, তারা হিমায়িত খাবার পরিবেশন করে না। এ জন্য তাদের বিশাল ঝামেলা পোহাতে হয়। মালদ্বীপের এই রেস্টুরেন্টে তাদের কাঁকড়াগুলো আসে প্রাইভেট প্লেনে করে, শ্রীলঙ্কা থেকে। তারপর তাদের বসবাস উপযোগী একটি চৌবাচ্চায় জ্যান্ত সংরক্ষণ করা হয় প্লেটে পরিবেশন করার আগ পর্যন্ত। ক্রেতাদের চাহিদামতো জ্যান্ত কাঁকড়া নিয়ে আসা হয় তার আকৃতি ঠিক আছে কি না, দেখানোর জন্য। এখানে প্রায় দশ আকারের কাঁকড়া পাওয়া যায়। ছোটটা আধা কেজি আর বড়টা দুই কেজি ওজনের। তারা প্রায় পাঁচ রকমভাবে কাঁকড়া রান্না করতে পারে। এর মধ্যে পিপার ক্র্যাব অসম্ভব জনপ্রিয়।
আমরা পিপার ক্র্যাব অর্ডার করেছিলাম, সঙ্গে ছিল ক্র্যাব লিভার পাটে, এপেটাইজারে। ছোট্ট একটি বিস্কুটের ওপর এই ক্র্যাব লিভার পেস্ট জেলির মতো লাগিয়ে তার ওপরে ম্যাপেল সিরাপ দিয়ে কুট্টুস করে কামড় দিয়ে খেতে হয়। দুই কেজির বিশাল পিপার ক্র্যাব খাবার জন্য ঘাম ঝরানো জরুরি। রীতিমতো ছেনি-বাটাল নিয়ে ভাঙতে হয় ক্র্যাবের শক্ত খোল। তারপর বের হয় কাঙ্ক্ষিত সাদা মাংস। পিপার সসে ডুবিয়ে সেই মাংস মুখে পুরে অনায়াসে ভুলে যাওয়া যায় জগৎ-সংসার। ডেজার্টে ছিল নারকেলের খোলে তৈরি ফ্রেঞ্চ ক্রিম ব্রুলে। এবার ঘুম।

আজ ঘুম ভাঙল বৃষ্টির শব্দে। সে কী বৃষ্টি! গতকালের ভেজা কাপড়গুলো শুকাতে দেওয়া হয়েছিল টেরেসে। সেগুলো আবার ভিজে গেল। রুমের দরজা খুলে টেরেসে গিয়ে নতুন রঙের আভা দেখলাম। সবুজ সমুদ্র আরও সবুজ দেখা যাচ্ছে আর ওপরে কালো আকাশ। সে অপরূপ ব্যাপার! সমুদ্র ভয়ংকর হতে লাগল। বাড়তে লাগল বৃষ্টির তেজ। মালদ্বীপের বৃষ্টি নাকি ভয়ংকর—একবার শুরু হলে এক সপ্তাহ। মন খারাপ হয়ে গেল। আরও দুই দিন যে থাকতে হবে! কিন্তু কিছুক্ষণ পরই মেঘ কেটে গিয়ে চমৎকার এক সূর্যের দেখা পেলাম। পুরো পরিবার নিয়ে রিফে নেমে গেলাম। গতকাল নাকি এক বিশাল মান্তা রে ঢুকেছে রিফে।
এই প্রাণীটা বেশ মজার। এরা নাকি তেইশ ফুট পর্যন্ত চওড়া হতে পারে! অদ্ভুত দর্শনের জন্য এদের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে ভীষণ ভয় পেত। প্রাচীনকালে নাবিকেরা বিশ্বাস করতেন যে, তারা মানুষের জন্য বিপজ্জনক এবং নোঙরে টান দিয়ে নৌকা ডোবাতে পারে। পরে যখন ডাইভিং জনপ্রিয় হয়, তখন মানুষ বুঝতে শেখে, এরা নিরীহ গোছের প্রাণী আর শুরু করে তাদের ওপর অত্যাচার। তাদের ফুলকা চায়নিজ ওষুধের এক দুর্মূল্য উপাদান। এই ফুলকার জন্য হাজার হাজার মান্তা রে প্রতি বছর মারা হয়। সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় গত বছরই তাদের বিপদাপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
দুপুরে যখন আমরা পানি থেকে উঠে খাবার খাচ্ছিলাম, তখনই দেখা মিলল সেই বিশাল কালো মান্তা রের। প্রবল দাপটে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে রিফে। মাছেদের খেলা দেখতে দেখতে বিকেল নামল। বেগুনি হয়ে উঠল আকাশ। রিফের সেই আকাশি পানি তখনো আকাশি। তবে কিছুটা কালচে। চমৎকার বেগুনি আকাশের নিচে কালচে আকাশি সমুদ্র ঠিক যেন মনভোলা এক চিত্রকরের হাতে আঁকা ছবি। প্রকৃতির এমন রূপ দেখে যেকোনো শিল্পীর মনে হতে বাধ্য, এখানে বাকি জীবন কাটালে মন্দ হতো না। সারা দিন শুধু ছবি আঁকব, ফিরব না আর যান্ত্রিক নগরে। সত্যি সত্যি এমন পাগলামি কিন্তু একজন করেছিলেন—তাঁর নাম পল গগাঁ। ফরাসি এই শিল্পী তাহিতি নামের এক দ্বীপে গিয়ে তার প্রেমে পড়ে যান। তারপর সবকিছু ছেড়েছুড়ে আমৃত্যু বসবাস করতে থাকেন সেই দ্বীপে।
মালদ্বীপের এই তটে বসে গগাঁর মনের অবস্থা টের পাচ্ছিলাম। এই ক্ষুদ্র জীবনে খুব বেশি কিছু কি দরকার? তবু ফিরে যেতে হবে কাল। মন খারাপ হয়ে গেল। আকাশে তখন তারা ফুটে উঠছে। বেগুনি থেকে গাঢ় নীল হচ্ছে পৃথিবী।
পৃথিবী এত সুন্দর কেন?
মুনতাসির মইন

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দ্য সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর পাশে। হালকা থেকে গাঢ় হতে থাকল নীল। অদ্ভুত রং-বেরঙের নাম না জানা মাছ ছুটে বেড়াচ্ছে কোরাল বাগানে। চোখধাঁধানো রঙের সেই বাগান। কী সুন্দর, কী রহস্যময়! একসময় সাবমেরিন কোরাল রিফের শেষ প্রান্তে এসে পড়ল, তার নিচে গভীর খাদ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমাদের হলুদ সাবমেরিন কচুরিপানার মতো বিশাল সমুদ্রে ভাসতে লাগল। এভারেস্টের নিচে দাঁড়িয়ে যেমন গভীর শূন্যতা অনুভব করেছিলাম, এখানেও তা-ই হলো। গভীর ঘোর লেগে গেল। ছেলে ধাক্কা দিয়ে ঘোর ভাঙাল। ‘বাবা, এই মাছের নাম কী?’ আমি ফ্যালফ্যাল করে বললাম, ‘সি ফিশ!’ আজ আমাদের মালদ্বীপের দ্বিতীয় দিন।
প্লেনের ককপিটে যখন ক্যাপ্টেন বললেন, ‘আমরা আর কিছুক্ষণের মধ্যে মালদ্বীপে ল্যান্ড করব’, তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে এক অপার্থিব সৌন্দর্য দেখলাম। গাঢ় নীল একটি আর্টিস্ট প্লেটের মধ্যে যেন আকাশি, ফিরোজা, সাদা আর সবুজের রঙের প্রলেপ। এ রকম ছোট-বড় হাজার হাজার রঙের প্রলেপ প্লেটজুড়ে। এগুলো একেকটা দ্বীপ। ঠিক যেন রঙের মালা। কিছু কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মালদ্বীপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘মালা দ্বীপ’ থেকে, যার অর্থ ফুলের মালার দ্বীপ। তবে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে এই দ্বীপকে বলা হয়েছে ‘লাক্ষাদ্বীপ’ বা শত হাজার দ্বীপ। তবে মালদ্বীপে হাজারের বেশি দ্বীপ থাকলেও ১ লাখ দ্বীপ নেই। বর্তমান মালদ্বীপে ১ হাজার ১৮৪টি দ্বীপ ও ২৮টি প্রাকৃতিক অ্যাটল আছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮৭টি দ্বীপ বসবাসের উপযোগী।
আমাদের রিসোর্টটি ছিল এমনই এক দ্বীপে। রিসোর্টের নাম হার্ড রক হোটেল মালদ্বীপ। সাউথ মালে এটলে এটি অবস্থিত। এটল হচ্ছে দীর্ঘ বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীর। প্রবালপ্রাচীরের পার ঘেঁষে রিসোর্টগুলো গড়ে উঠেছে। মালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ২০ মিনিটে স্পিডবোটে করে রিসোর্টে পৌঁছানো যায়।
মালদ্বীপের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টটা বেশ মজার। অন্য দেশের মতো নয়। অন্য যেকোনো দেশে আমরা এয়ারপোর্টে নেমে রাস্তা মাপি আর মালদ্বীপে মাপতে হয় সমুদ্র। এয়ারপোর্টে নেমেই বিশাল সমুদ্র। রিসোর্টে যেতে চাইলে উঠে পড়তে হয় স্পিডবোটে অথবা সি প্লেনে। আমাদের রিসোর্টের সদা হাস্যোজ্জ্বল ভুবন আমাদের রিসিভ করার জন্য এসেছিল। চমৎকার ইংরেজিতে বলল, ‘ওয়েলকাম টু দ্য হ্যাভেন।’ ছোট্ট এই লাইন জীবনতৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে তুলল। কী চমৎকার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি! প্লেনের চার ঘণ্টার বিরক্তিকর ভ্রমণ শেষে গাঢ় নীল সমুদ্র যেন ইফতারের শরবতের গ্লাস। নোনা বাতাসে ঝরঝরে লাগল শরীর, নোনা স্বাদও যেন পেল জিহ্বা। স্পিডবোট চলতে শুরু করল।
ছেলের চোখে আনন্দ আর মেয়ের চোখে উৎকণ্ঠা। কারণ, ততক্ষণে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল আমাদের স্পিডবোটে। সেটি বাম্প করতে লাগল রোলার কোস্টারের মতো। ২০ মিনিট পর শান্ত হলো স্পিডবোট। আমরা ততক্ষণে গভীর সমুদ্র থেকে রিফে পৌঁছে গেছি। ধীরে ধীরে ল্যান্ডিং জেটি চোখে পড়ল। গাঢ় নীলের পর পান্না সবুজ পানি, তার ওপর সাদা দ্বীপ। জেটি সামনে আসতেই চোখে পড়ল, রিসোর্টের সাতজন স্টাফ হাত নেড়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। তাদের দলপতি স্বর্ণকেশী রাশিয়ান আলিশা। চমৎকার হেসে সম্ভাষণ জানাল আর বলল, ‘মইন ফ্যামিলিকে পেয়ে আমরা আনন্দিত।’ মনে হচ্ছিল কত দিনের চেনা।
রিসেপশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো কাঙ্ক্ষিত ওয়াটার বাংলোতে। আমাদের বাংলোটি স্বচ্ছ নীল পানির ওপর দুই রুমের কুঁড়েঘর। একটি মাস্টার বেডরুম আর একটি ড্রেসিং রুম। মাস্টার বেডরুমের সঙ্গে লাগোয়া একটি টেরেস। টেরেসের এক পাশে আছে সিঁড়ি, যা দিয়ে সরাসরি রিফে নেমে পড়া যায়। আর টেরেসের আরেক পাশে মোটা সাদা দড়ি দিয়ে বানানো হয়েছে বিশাল ট্রাম্পোলিন এবং তার ঠিক নিচে সমুদ্র। বাচ্চারা লাফালাফি শুরু করল ট্রাম্পোলিনে। আমরাও যোগ দিলাম তাদের সঙ্গে। আহা সে কী আনন্দ!
আসলে নামে কুঁড়েঘর হলেও আধুনিক বসবাসের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মেলে এই বাংলোগুলোতে। স্টার রেটিং ভেদে বাড়তে থাকে সুযোগ-সুবিধার পরিধি। কিন্তু কিছু ম্যাজিক স্টার রেটিং মানে না। এই ম্যাজিকের ম্যাজিশিয়ান হলো রিফের বাসিন্দা বেবি সার্ক, স্টিং রে, সি টার্টল আর অসংখ্য নাম না জানা রংবেরঙের মাছ। তারা ম্যাজিক দেখাতে হঠাৎ হঠাৎ চলে আসে বাংলোগুলোর ঠিক নিচে। ওপর থেকে বসে তাদের খেলাধুলা দেখতে বেশ লাগে। সহজ-স্বাভাবিকভাবে তারা ঘুরে বেড়ায় বাংলোর আশপাশে। যেন আমাদের মতো তারাও ঘুরতে এসেছে মালদ্বীপে। এ রকম মানুষের সঙ্গে প্রাণীদের সহাবস্থান দেখতে আমার বেশ লাগে। নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ তকমা লাগিয়ে অহংকার করা আমার মোটেও ভালো লাগে না। পুরো ইকোসিস্টেমে সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি থেকে ক্ষুদ্র মৌমাছিকে বাদ দিলে কয়েক বছরের মধ্যে বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে সবুজ পৃথিবী। তখন কী হবে চিন্তা করা যায়?
আমরা মালদ্বীপে গিয়েছিলাম ৭ জানুয়ারি। তখন মাত্র ক্রিসমাস শেষ হয়েছে। কিন্তু রিসোর্টজুড়ে ছিল ক্রিসমাসের সাজসজ্জা আর আমেজ। গোলাপি আলোয় আলোকিত পুরো রিসোর্ট। সেদিনই ছিল তাদের ক্রিসমাস ডিনারের শেষ আয়োজন। সমুদ্রতটের সাদা বালুর ওপর বিছানো হয়েছে টেবিল। তার ওপর মোমবাতি। সাগরের মৃদুমন্দ হাওয়া তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্রাজিলিয়ান এক ব্যান্ড দল বাজিয়ে চলেছে ‘আভা মারিয়া’। করুণ আভা মারিয়া কেন যেন যিশুর লাস্ট সাপারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। জীবনের শেষ নৈশভোজে বসেছেন যিশু তাঁর বারোজন শিষ্য নিয়ে। ভীষণ শান্ত স্বরে যিশু বললেন, ‘কাল তোমাদের মধ্যেই একজন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, ধরিয়ে দেবে আমাকে।’ যিশুর মুখে এই কথা শুনে বারোজনের কারও মুখে ভয়, কারও আগ্রহ, কারও সন্দেহ, কারও মুখে কৌতূহল, করো মুখে ঘৃণা, কারও মুখে উদ্বেগ ফুটে উঠেছিল। কী অদ্ভুত!
এ নিয়ে একটি বিখ্যাত চিত্র আছে লেওনার্দ দ্য ভিঞ্চির, নাম ‘দ্য লাস্ট সাপার’। আঁকা হয়েছিল মিলানের সান্তা মারিয়া দেল্লে গ্র্যাছে। একবার এই ছবি দেখতে গিয়েছিলাম; কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি পনেরো মিনিটের জন্য। গির্জায় ঢোকার শেষ সময় ছয়টা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। আমাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাতটা বেজে গিয়েছিল। সেই আফসোস আমার আজও গেল না!
ক্রিসমাসের শেষ ডিনারের আয়োজনটা ছিল হুলুস্থুল রকমের। শুরুতেই এক গ্লাস শ্যাম্পেইন হাতে ধরিয়ে দিয়ে রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার অনিত বলল, ‘আজ ডায়েটের কথা ভুলে যাও। যা মন চায়, খাও।’ নাম না জানা অসংখ্য খাবারে পরিপূর্ণ ব্যুফে, কমলা আলাস্কান ক্র্যাব লেগ, খরগোশের নরম মাংসের ফ্রেঞ্চ টেরিন, সদ্য তোলা নীল রিফের ওয়েস্টার, চিজ হুইলে মাখানো গরম-গরম পাস্তা—আরও কত কী! অনিতের সঙ্গে খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল, মালদ্বীপের প্রথম দিকের জনবসতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তামিলরা, যারা প্রাচীন তামিলকাম থেকে এসেছিল। এই তামিলকামই বর্তমানে ভারতের তামিলনাড়ু। সেই সময় যেসব পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছিল, তারা সবাই রানিশাসিত এই রাজ্যের কথা উল্লেখ করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রাচীন সাহিত্য ‘মহাবংশ’-এ মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘মহিলাদ্বীপ’ বা নারীদের দ্বীপ। তার মানে বোঝা যায়, মাতৃতান্ত্রিক এক সমাজব্যবস্থা ছিল এই মালদ্বীপে। লুইস মরগানের একটি চমৎকার বই আছে, নাম ‘অ্যানশায়েন্ট সোসাইটি’। সেখানে লেখকের দাবি, আদিমকালে সব গোষ্ঠী নাকি ছিল মাতৃতান্ত্রিক। কী মজার একটা ব্যাপার, মায়েদের চোখরাঙানি খেয়ে বাবারা চুপ করে বসে থাকত! এরপর সম্রাট অশোকের সময় বুদ্ধ ভিক্ষুরা গিয়ে মালদ্বীপে বসবাস শুরু করেন। তখনই বৌদ্ধধর্ম প্রসার পায়। এখনো তার প্রচুর নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক দ্বীপে। বারো শতকের দিকে মুসলিম বণিকেরা ব্যবসা করতে ভারত সাগরে এসে ঘাঁটি গাড়ে মালদ্বীপে। শুরু হয় দীর্ঘ ইসলামি যুগের।

গল্প শেষে বিদায় নিয়ে চলে এলাম স্বপ্নের সেই কুটিরে। বাচ্চারা কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাদের বিছানায় রেখে আমরা শুয়ে রইলাম নেটের তৈরি টেরেসের সেই ট্রাম্পোলিনে। আকাশে তখন অনন্ত নক্ষত্রবীথি। তারায় পরিপূর্ণ আকাশ। এমন আকাশের দিকে তাকিয়ে অনন্ত জীবন বেঁচে থাকার লোভ জাগে। তখন ঠিক বারোটা। ঠিক সেই মুহূর্তেই আমাদের বিয়ের বারো বছর পূর্ণ হলো।
সকালে ঘুম ভাঙল মৃদু ঠকঠক শব্দে। উঠে দেখি ঘরে বেড়াতে এসেছে দুটো সাদা ড্রিল। ড্রিল হচ্ছে ছোট সাদা শামুক। হাঁটার সময় টালির সঙ্গে শক্ত খোলসের ঠক্করে শব্দ হচ্ছিল ঠকঠক। কিছুক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে শামুকদের সঙ্গে খেলে বললাম তাদের রিফে ফিরিয়ে দিতে। মালদ্বীপসহ প্রাচীন পৃথিবীর বেশ কিছু অঞ্চলের মুদ্রা ছিল একধরনের শামুক, যা আমরা কড়ি নামে চিনি। ১৩৪৪ সালে ইবনে বতুতা মালদ্বীপে এসে দেখেছিলেন, প্রতিবছর মালদ্বীপ ৪০ জাহাজ কড়ি রপ্তানি করত। প্রশ্ন জাগে, কেমন ছিল সেই কড়ির আর্থিক মান? তখন ৪ লাখ কড়ি দিয়ে একটি সোনার দিনার পাওয়া যেত।
এবার রিফে নামার পালা। রুমের সামনে টেরেসের সিঁড়ি দিয়ে নেমে পড়লাম স্বচ্ছ পানিতে। পানির তাপমাত্রা চমৎকার আরামদায়ক। কোমর পর্যন্ত পানিতে অনায়াসে হাঁটা যায় অনেক দূর পর্যন্ত। লাইফ জ্যাকেট পরে নিলাম। নরম বালিতে কিছুক্ষণ হাঁটার পর শরীর ভাসিয়ে দিলাম পানিতে। সাদা বালির ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য কোরাল। তার মাঝে মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট রংবেরঙের মাছ। হাত দিয়ে ধরতে গেলে তারা দৌড়ে পালায়। ততক্ষণে ছেলে কোরাল সংগ্রহে নেমে পড়েছে। রংবেরঙের কোরাল সংগ্রহ করে পকেটে পুরে রাখছে। ছেলে শুনে অবাক হলো, এই কোরলগুলোরও একসময় প্রাণ ছিল। পরে বুড়ো হয়ে মরে গিয়ে তারা জমতে শুরু করে সাগরের তলদেশে। মরে যাওয়ার পর তাদের দেহের চারপাশে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের একটি পাথুরে স্তর তৈরি হয়। সেটাকেই আমরা প্রবাল বলি। এই প্রবালগুলো এভাবে লাখ লাখ বছর জমে একেকটি পাথরের আকৃতি নেয়। আর কোটি কোটি বছর জমে একটি দ্বীপ সৃষ্টি করে। কী অদ্ভুত প্রকৃতির খেয়াল!

ছেলেকে বললাম, ‘কোটি কোটি বছর পুরোনো এই পাথরবাগান কোনোভাবেই নষ্ট করা উচিত নয়। এরা খুবই দুর্লভ। পৃথিবীতে অল্প কিছু আছে, যার মধ্যে একটি আছে আমাদের দেশে। যাকে আমরা সেন্ট মার্টিন বলে জানি।’ সেন্ট মার্টিনের কথা বলতে বলতে মন খারাপ হয়ে গেল। দেশে এত সুন্দর একটা দ্বীপ আছে, যাকে ইচ্ছে করলেই এমন মালদ্বীপের মতো করা যেত। কিন্তু আমরা চরম অবহেলায় ফেলে রেখেছি। গুনগুন করে গাইতে লাগলাম—
জনম গেল বৃথা কাজে
আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে
তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে, শক্তিদাতা
ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা।
রিফে সাঁতার কাটতে কাটতে আমরা সাবমেরিনের প্রোগ্রাম করলাম। রিসোর্টে একটি ছোট সাবমেরিন আছে। সেটা ঠিক সাবমেরিন নয়। সাবমেরিন আকৃতির নৌকা বলা যায়। নিচের দিকে ফাঁকা একটি জায়গায় ছয়-সাতজন বসতে পারে, চারদিক স্বচ্ছ জানালা দিয়ে ঘেরা। রিফের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে এই সাবমেরিনের জুড়ি নেই। স্নোরকেলিং করে অল্প একটু জায়গা ঘুরে দেখা যেতে পারে। ভালো ডাইভিংয়ের জন্য দরকার ট্রেনিং। এই দুটোর মাঝে সাবমেরিনে ভ্রমণ ভালো সুযোগ হতে পারে। সাবমেরিনের বর্ণনা প্রথমেই একটু বলেছিলাম। কিন্তু তার সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশের শব্দ আমার অভিধানে নেই।
আমাদের রিসোর্টে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট পনেরোটি রেস্টুরেন্ট ছিল। তার মধ্যে কিছু ইন্টারন্যাশনাল চেইন রেস্টুরেন্ট। মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব তেমনি এক রেস্টুরেন্ট। আজ ডিনারের জন্য আমরা সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। এই মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব এশিয়ার ছয়টি দেশে তাদের রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছে। ওয়ার্ল্ডস ফিফটি বেস্ট রেস্টুরেন্টের তালিকায় তাদের অবস্থান পঁচিশ। বড় বড় কাঁকড়াই তাদের প্রধান আকর্ষণ। তাদের প্রধান নীতি হলো, তারা হিমায়িত খাবার পরিবেশন করে না। এ জন্য তাদের বিশাল ঝামেলা পোহাতে হয়। মালদ্বীপের এই রেস্টুরেন্টে তাদের কাঁকড়াগুলো আসে প্রাইভেট প্লেনে করে, শ্রীলঙ্কা থেকে। তারপর তাদের বসবাস উপযোগী একটি চৌবাচ্চায় জ্যান্ত সংরক্ষণ করা হয় প্লেটে পরিবেশন করার আগ পর্যন্ত। ক্রেতাদের চাহিদামতো জ্যান্ত কাঁকড়া নিয়ে আসা হয় তার আকৃতি ঠিক আছে কি না, দেখানোর জন্য। এখানে প্রায় দশ আকারের কাঁকড়া পাওয়া যায়। ছোটটা আধা কেজি আর বড়টা দুই কেজি ওজনের। তারা প্রায় পাঁচ রকমভাবে কাঁকড়া রান্না করতে পারে। এর মধ্যে পিপার ক্র্যাব অসম্ভব জনপ্রিয়।
আমরা পিপার ক্র্যাব অর্ডার করেছিলাম, সঙ্গে ছিল ক্র্যাব লিভার পাটে, এপেটাইজারে। ছোট্ট একটি বিস্কুটের ওপর এই ক্র্যাব লিভার পেস্ট জেলির মতো লাগিয়ে তার ওপরে ম্যাপেল সিরাপ দিয়ে কুট্টুস করে কামড় দিয়ে খেতে হয়। দুই কেজির বিশাল পিপার ক্র্যাব খাবার জন্য ঘাম ঝরানো জরুরি। রীতিমতো ছেনি-বাটাল নিয়ে ভাঙতে হয় ক্র্যাবের শক্ত খোল। তারপর বের হয় কাঙ্ক্ষিত সাদা মাংস। পিপার সসে ডুবিয়ে সেই মাংস মুখে পুরে অনায়াসে ভুলে যাওয়া যায় জগৎ-সংসার। ডেজার্টে ছিল নারকেলের খোলে তৈরি ফ্রেঞ্চ ক্রিম ব্রুলে। এবার ঘুম।

আজ ঘুম ভাঙল বৃষ্টির শব্দে। সে কী বৃষ্টি! গতকালের ভেজা কাপড়গুলো শুকাতে দেওয়া হয়েছিল টেরেসে। সেগুলো আবার ভিজে গেল। রুমের দরজা খুলে টেরেসে গিয়ে নতুন রঙের আভা দেখলাম। সবুজ সমুদ্র আরও সবুজ দেখা যাচ্ছে আর ওপরে কালো আকাশ। সে অপরূপ ব্যাপার! সমুদ্র ভয়ংকর হতে লাগল। বাড়তে লাগল বৃষ্টির তেজ। মালদ্বীপের বৃষ্টি নাকি ভয়ংকর—একবার শুরু হলে এক সপ্তাহ। মন খারাপ হয়ে গেল। আরও দুই দিন যে থাকতে হবে! কিন্তু কিছুক্ষণ পরই মেঘ কেটে গিয়ে চমৎকার এক সূর্যের দেখা পেলাম। পুরো পরিবার নিয়ে রিফে নেমে গেলাম। গতকাল নাকি এক বিশাল মান্তা রে ঢুকেছে রিফে।
এই প্রাণীটা বেশ মজার। এরা নাকি তেইশ ফুট পর্যন্ত চওড়া হতে পারে! অদ্ভুত দর্শনের জন্য এদের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে ভীষণ ভয় পেত। প্রাচীনকালে নাবিকেরা বিশ্বাস করতেন যে, তারা মানুষের জন্য বিপজ্জনক এবং নোঙরে টান দিয়ে নৌকা ডোবাতে পারে। পরে যখন ডাইভিং জনপ্রিয় হয়, তখন মানুষ বুঝতে শেখে, এরা নিরীহ গোছের প্রাণী আর শুরু করে তাদের ওপর অত্যাচার। তাদের ফুলকা চায়নিজ ওষুধের এক দুর্মূল্য উপাদান। এই ফুলকার জন্য হাজার হাজার মান্তা রে প্রতি বছর মারা হয়। সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় গত বছরই তাদের বিপদাপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
দুপুরে যখন আমরা পানি থেকে উঠে খাবার খাচ্ছিলাম, তখনই দেখা মিলল সেই বিশাল কালো মান্তা রের। প্রবল দাপটে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে রিফে। মাছেদের খেলা দেখতে দেখতে বিকেল নামল। বেগুনি হয়ে উঠল আকাশ। রিফের সেই আকাশি পানি তখনো আকাশি। তবে কিছুটা কালচে। চমৎকার বেগুনি আকাশের নিচে কালচে আকাশি সমুদ্র ঠিক যেন মনভোলা এক চিত্রকরের হাতে আঁকা ছবি। প্রকৃতির এমন রূপ দেখে যেকোনো শিল্পীর মনে হতে বাধ্য, এখানে বাকি জীবন কাটালে মন্দ হতো না। সারা দিন শুধু ছবি আঁকব, ফিরব না আর যান্ত্রিক নগরে। সত্যি সত্যি এমন পাগলামি কিন্তু একজন করেছিলেন—তাঁর নাম পল গগাঁ। ফরাসি এই শিল্পী তাহিতি নামের এক দ্বীপে গিয়ে তার প্রেমে পড়ে যান। তারপর সবকিছু ছেড়েছুড়ে আমৃত্যু বসবাস করতে থাকেন সেই দ্বীপে।
মালদ্বীপের এই তটে বসে গগাঁর মনের অবস্থা টের পাচ্ছিলাম। এই ক্ষুদ্র জীবনে খুব বেশি কিছু কি দরকার? তবু ফিরে যেতে হবে কাল। মন খারাপ হয়ে গেল। আকাশে তখন তারা ফুটে উঠছে। বেগুনি থেকে গাঢ় নীল হচ্ছে পৃথিবী।
পৃথিবী এত সুন্দর কেন?

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দ্য সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর পাশে। হালকা থেকে গাঢ় হতে থাকল নীল। অদ্ভুত রং-বেরঙের নাম না জানা মাছ ছুটে বেড়াচ্ছে কোরাল বাগানে। চোখধাঁধানো রঙের সেই বাগান। কী সুন্দর, কী রহস্যময়! একসময় সাবমেরিন কোরাল রিফের শেষ প্রান্তে এসে পড়ল, তার নিচে গভীর খাদ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমাদের হলুদ সাবমেরিন কচুরিপানার মতো বিশাল সমুদ্রে ভাসতে লাগল। এভারেস্টের নিচে দাঁড়িয়ে যেমন গভীর শূন্যতা অনুভব করেছিলাম, এখানেও তা-ই হলো। গভীর ঘোর লেগে গেল। ছেলে ধাক্কা দিয়ে ঘোর ভাঙাল। ‘বাবা, এই মাছের নাম কী?’ আমি ফ্যালফ্যাল করে বললাম, ‘সি ফিশ!’ আজ আমাদের মালদ্বীপের দ্বিতীয় দিন।
প্লেনের ককপিটে যখন ক্যাপ্টেন বললেন, ‘আমরা আর কিছুক্ষণের মধ্যে মালদ্বীপে ল্যান্ড করব’, তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে এক অপার্থিব সৌন্দর্য দেখলাম। গাঢ় নীল একটি আর্টিস্ট প্লেটের মধ্যে যেন আকাশি, ফিরোজা, সাদা আর সবুজের রঙের প্রলেপ। এ রকম ছোট-বড় হাজার হাজার রঙের প্রলেপ প্লেটজুড়ে। এগুলো একেকটা দ্বীপ। ঠিক যেন রঙের মালা। কিছু কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মালদ্বীপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘মালা দ্বীপ’ থেকে, যার অর্থ ফুলের মালার দ্বীপ। তবে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে এই দ্বীপকে বলা হয়েছে ‘লাক্ষাদ্বীপ’ বা শত হাজার দ্বীপ। তবে মালদ্বীপে হাজারের বেশি দ্বীপ থাকলেও ১ লাখ দ্বীপ নেই। বর্তমান মালদ্বীপে ১ হাজার ১৮৪টি দ্বীপ ও ২৮টি প্রাকৃতিক অ্যাটল আছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮৭টি দ্বীপ বসবাসের উপযোগী।
আমাদের রিসোর্টটি ছিল এমনই এক দ্বীপে। রিসোর্টের নাম হার্ড রক হোটেল মালদ্বীপ। সাউথ মালে এটলে এটি অবস্থিত। এটল হচ্ছে দীর্ঘ বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীর। প্রবালপ্রাচীরের পার ঘেঁষে রিসোর্টগুলো গড়ে উঠেছে। মালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ২০ মিনিটে স্পিডবোটে করে রিসোর্টে পৌঁছানো যায়।
মালদ্বীপের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টটা বেশ মজার। অন্য দেশের মতো নয়। অন্য যেকোনো দেশে আমরা এয়ারপোর্টে নেমে রাস্তা মাপি আর মালদ্বীপে মাপতে হয় সমুদ্র। এয়ারপোর্টে নেমেই বিশাল সমুদ্র। রিসোর্টে যেতে চাইলে উঠে পড়তে হয় স্পিডবোটে অথবা সি প্লেনে। আমাদের রিসোর্টের সদা হাস্যোজ্জ্বল ভুবন আমাদের রিসিভ করার জন্য এসেছিল। চমৎকার ইংরেজিতে বলল, ‘ওয়েলকাম টু দ্য হ্যাভেন।’ ছোট্ট এই লাইন জীবনতৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে তুলল। কী চমৎকার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি! প্লেনের চার ঘণ্টার বিরক্তিকর ভ্রমণ শেষে গাঢ় নীল সমুদ্র যেন ইফতারের শরবতের গ্লাস। নোনা বাতাসে ঝরঝরে লাগল শরীর, নোনা স্বাদও যেন পেল জিহ্বা। স্পিডবোট চলতে শুরু করল।
ছেলের চোখে আনন্দ আর মেয়ের চোখে উৎকণ্ঠা। কারণ, ততক্ষণে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল আমাদের স্পিডবোটে। সেটি বাম্প করতে লাগল রোলার কোস্টারের মতো। ২০ মিনিট পর শান্ত হলো স্পিডবোট। আমরা ততক্ষণে গভীর সমুদ্র থেকে রিফে পৌঁছে গেছি। ধীরে ধীরে ল্যান্ডিং জেটি চোখে পড়ল। গাঢ় নীলের পর পান্না সবুজ পানি, তার ওপর সাদা দ্বীপ। জেটি সামনে আসতেই চোখে পড়ল, রিসোর্টের সাতজন স্টাফ হাত নেড়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। তাদের দলপতি স্বর্ণকেশী রাশিয়ান আলিশা। চমৎকার হেসে সম্ভাষণ জানাল আর বলল, ‘মইন ফ্যামিলিকে পেয়ে আমরা আনন্দিত।’ মনে হচ্ছিল কত দিনের চেনা।
রিসেপশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো কাঙ্ক্ষিত ওয়াটার বাংলোতে। আমাদের বাংলোটি স্বচ্ছ নীল পানির ওপর দুই রুমের কুঁড়েঘর। একটি মাস্টার বেডরুম আর একটি ড্রেসিং রুম। মাস্টার বেডরুমের সঙ্গে লাগোয়া একটি টেরেস। টেরেসের এক পাশে আছে সিঁড়ি, যা দিয়ে সরাসরি রিফে নেমে পড়া যায়। আর টেরেসের আরেক পাশে মোটা সাদা দড়ি দিয়ে বানানো হয়েছে বিশাল ট্রাম্পোলিন এবং তার ঠিক নিচে সমুদ্র। বাচ্চারা লাফালাফি শুরু করল ট্রাম্পোলিনে। আমরাও যোগ দিলাম তাদের সঙ্গে। আহা সে কী আনন্দ!
আসলে নামে কুঁড়েঘর হলেও আধুনিক বসবাসের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মেলে এই বাংলোগুলোতে। স্টার রেটিং ভেদে বাড়তে থাকে সুযোগ-সুবিধার পরিধি। কিন্তু কিছু ম্যাজিক স্টার রেটিং মানে না। এই ম্যাজিকের ম্যাজিশিয়ান হলো রিফের বাসিন্দা বেবি সার্ক, স্টিং রে, সি টার্টল আর অসংখ্য নাম না জানা রংবেরঙের মাছ। তারা ম্যাজিক দেখাতে হঠাৎ হঠাৎ চলে আসে বাংলোগুলোর ঠিক নিচে। ওপর থেকে বসে তাদের খেলাধুলা দেখতে বেশ লাগে। সহজ-স্বাভাবিকভাবে তারা ঘুরে বেড়ায় বাংলোর আশপাশে। যেন আমাদের মতো তারাও ঘুরতে এসেছে মালদ্বীপে। এ রকম মানুষের সঙ্গে প্রাণীদের সহাবস্থান দেখতে আমার বেশ লাগে। নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ তকমা লাগিয়ে অহংকার করা আমার মোটেও ভালো লাগে না। পুরো ইকোসিস্টেমে সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি থেকে ক্ষুদ্র মৌমাছিকে বাদ দিলে কয়েক বছরের মধ্যে বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে সবুজ পৃথিবী। তখন কী হবে চিন্তা করা যায়?
আমরা মালদ্বীপে গিয়েছিলাম ৭ জানুয়ারি। তখন মাত্র ক্রিসমাস শেষ হয়েছে। কিন্তু রিসোর্টজুড়ে ছিল ক্রিসমাসের সাজসজ্জা আর আমেজ। গোলাপি আলোয় আলোকিত পুরো রিসোর্ট। সেদিনই ছিল তাদের ক্রিসমাস ডিনারের শেষ আয়োজন। সমুদ্রতটের সাদা বালুর ওপর বিছানো হয়েছে টেবিল। তার ওপর মোমবাতি। সাগরের মৃদুমন্দ হাওয়া তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্রাজিলিয়ান এক ব্যান্ড দল বাজিয়ে চলেছে ‘আভা মারিয়া’। করুণ আভা মারিয়া কেন যেন যিশুর লাস্ট সাপারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। জীবনের শেষ নৈশভোজে বসেছেন যিশু তাঁর বারোজন শিষ্য নিয়ে। ভীষণ শান্ত স্বরে যিশু বললেন, ‘কাল তোমাদের মধ্যেই একজন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, ধরিয়ে দেবে আমাকে।’ যিশুর মুখে এই কথা শুনে বারোজনের কারও মুখে ভয়, কারও আগ্রহ, কারও সন্দেহ, কারও মুখে কৌতূহল, করো মুখে ঘৃণা, কারও মুখে উদ্বেগ ফুটে উঠেছিল। কী অদ্ভুত!
এ নিয়ে একটি বিখ্যাত চিত্র আছে লেওনার্দ দ্য ভিঞ্চির, নাম ‘দ্য লাস্ট সাপার’। আঁকা হয়েছিল মিলানের সান্তা মারিয়া দেল্লে গ্র্যাছে। একবার এই ছবি দেখতে গিয়েছিলাম; কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি পনেরো মিনিটের জন্য। গির্জায় ঢোকার শেষ সময় ছয়টা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। আমাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাতটা বেজে গিয়েছিল। সেই আফসোস আমার আজও গেল না!
ক্রিসমাসের শেষ ডিনারের আয়োজনটা ছিল হুলুস্থুল রকমের। শুরুতেই এক গ্লাস শ্যাম্পেইন হাতে ধরিয়ে দিয়ে রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার অনিত বলল, ‘আজ ডায়েটের কথা ভুলে যাও। যা মন চায়, খাও।’ নাম না জানা অসংখ্য খাবারে পরিপূর্ণ ব্যুফে, কমলা আলাস্কান ক্র্যাব লেগ, খরগোশের নরম মাংসের ফ্রেঞ্চ টেরিন, সদ্য তোলা নীল রিফের ওয়েস্টার, চিজ হুইলে মাখানো গরম-গরম পাস্তা—আরও কত কী! অনিতের সঙ্গে খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল, মালদ্বীপের প্রথম দিকের জনবসতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তামিলরা, যারা প্রাচীন তামিলকাম থেকে এসেছিল। এই তামিলকামই বর্তমানে ভারতের তামিলনাড়ু। সেই সময় যেসব পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছিল, তারা সবাই রানিশাসিত এই রাজ্যের কথা উল্লেখ করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রাচীন সাহিত্য ‘মহাবংশ’-এ মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘মহিলাদ্বীপ’ বা নারীদের দ্বীপ। তার মানে বোঝা যায়, মাতৃতান্ত্রিক এক সমাজব্যবস্থা ছিল এই মালদ্বীপে। লুইস মরগানের একটি চমৎকার বই আছে, নাম ‘অ্যানশায়েন্ট সোসাইটি’। সেখানে লেখকের দাবি, আদিমকালে সব গোষ্ঠী নাকি ছিল মাতৃতান্ত্রিক। কী মজার একটা ব্যাপার, মায়েদের চোখরাঙানি খেয়ে বাবারা চুপ করে বসে থাকত! এরপর সম্রাট অশোকের সময় বুদ্ধ ভিক্ষুরা গিয়ে মালদ্বীপে বসবাস শুরু করেন। তখনই বৌদ্ধধর্ম প্রসার পায়। এখনো তার প্রচুর নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক দ্বীপে। বারো শতকের দিকে মুসলিম বণিকেরা ব্যবসা করতে ভারত সাগরে এসে ঘাঁটি গাড়ে মালদ্বীপে। শুরু হয় দীর্ঘ ইসলামি যুগের।

গল্প শেষে বিদায় নিয়ে চলে এলাম স্বপ্নের সেই কুটিরে। বাচ্চারা কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাদের বিছানায় রেখে আমরা শুয়ে রইলাম নেটের তৈরি টেরেসের সেই ট্রাম্পোলিনে। আকাশে তখন অনন্ত নক্ষত্রবীথি। তারায় পরিপূর্ণ আকাশ। এমন আকাশের দিকে তাকিয়ে অনন্ত জীবন বেঁচে থাকার লোভ জাগে। তখন ঠিক বারোটা। ঠিক সেই মুহূর্তেই আমাদের বিয়ের বারো বছর পূর্ণ হলো।
সকালে ঘুম ভাঙল মৃদু ঠকঠক শব্দে। উঠে দেখি ঘরে বেড়াতে এসেছে দুটো সাদা ড্রিল। ড্রিল হচ্ছে ছোট সাদা শামুক। হাঁটার সময় টালির সঙ্গে শক্ত খোলসের ঠক্করে শব্দ হচ্ছিল ঠকঠক। কিছুক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে শামুকদের সঙ্গে খেলে বললাম তাদের রিফে ফিরিয়ে দিতে। মালদ্বীপসহ প্রাচীন পৃথিবীর বেশ কিছু অঞ্চলের মুদ্রা ছিল একধরনের শামুক, যা আমরা কড়ি নামে চিনি। ১৩৪৪ সালে ইবনে বতুতা মালদ্বীপে এসে দেখেছিলেন, প্রতিবছর মালদ্বীপ ৪০ জাহাজ কড়ি রপ্তানি করত। প্রশ্ন জাগে, কেমন ছিল সেই কড়ির আর্থিক মান? তখন ৪ লাখ কড়ি দিয়ে একটি সোনার দিনার পাওয়া যেত।
এবার রিফে নামার পালা। রুমের সামনে টেরেসের সিঁড়ি দিয়ে নেমে পড়লাম স্বচ্ছ পানিতে। পানির তাপমাত্রা চমৎকার আরামদায়ক। কোমর পর্যন্ত পানিতে অনায়াসে হাঁটা যায় অনেক দূর পর্যন্ত। লাইফ জ্যাকেট পরে নিলাম। নরম বালিতে কিছুক্ষণ হাঁটার পর শরীর ভাসিয়ে দিলাম পানিতে। সাদা বালির ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য কোরাল। তার মাঝে মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট রংবেরঙের মাছ। হাত দিয়ে ধরতে গেলে তারা দৌড়ে পালায়। ততক্ষণে ছেলে কোরাল সংগ্রহে নেমে পড়েছে। রংবেরঙের কোরাল সংগ্রহ করে পকেটে পুরে রাখছে। ছেলে শুনে অবাক হলো, এই কোরলগুলোরও একসময় প্রাণ ছিল। পরে বুড়ো হয়ে মরে গিয়ে তারা জমতে শুরু করে সাগরের তলদেশে। মরে যাওয়ার পর তাদের দেহের চারপাশে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের একটি পাথুরে স্তর তৈরি হয়। সেটাকেই আমরা প্রবাল বলি। এই প্রবালগুলো এভাবে লাখ লাখ বছর জমে একেকটি পাথরের আকৃতি নেয়। আর কোটি কোটি বছর জমে একটি দ্বীপ সৃষ্টি করে। কী অদ্ভুত প্রকৃতির খেয়াল!

ছেলেকে বললাম, ‘কোটি কোটি বছর পুরোনো এই পাথরবাগান কোনোভাবেই নষ্ট করা উচিত নয়। এরা খুবই দুর্লভ। পৃথিবীতে অল্প কিছু আছে, যার মধ্যে একটি আছে আমাদের দেশে। যাকে আমরা সেন্ট মার্টিন বলে জানি।’ সেন্ট মার্টিনের কথা বলতে বলতে মন খারাপ হয়ে গেল। দেশে এত সুন্দর একটা দ্বীপ আছে, যাকে ইচ্ছে করলেই এমন মালদ্বীপের মতো করা যেত। কিন্তু আমরা চরম অবহেলায় ফেলে রেখেছি। গুনগুন করে গাইতে লাগলাম—
জনম গেল বৃথা কাজে
আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে
তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে, শক্তিদাতা
ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা।
রিফে সাঁতার কাটতে কাটতে আমরা সাবমেরিনের প্রোগ্রাম করলাম। রিসোর্টে একটি ছোট সাবমেরিন আছে। সেটা ঠিক সাবমেরিন নয়। সাবমেরিন আকৃতির নৌকা বলা যায়। নিচের দিকে ফাঁকা একটি জায়গায় ছয়-সাতজন বসতে পারে, চারদিক স্বচ্ছ জানালা দিয়ে ঘেরা। রিফের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে এই সাবমেরিনের জুড়ি নেই। স্নোরকেলিং করে অল্প একটু জায়গা ঘুরে দেখা যেতে পারে। ভালো ডাইভিংয়ের জন্য দরকার ট্রেনিং। এই দুটোর মাঝে সাবমেরিনে ভ্রমণ ভালো সুযোগ হতে পারে। সাবমেরিনের বর্ণনা প্রথমেই একটু বলেছিলাম। কিন্তু তার সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশের শব্দ আমার অভিধানে নেই।
আমাদের রিসোর্টে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট পনেরোটি রেস্টুরেন্ট ছিল। তার মধ্যে কিছু ইন্টারন্যাশনাল চেইন রেস্টুরেন্ট। মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব তেমনি এক রেস্টুরেন্ট। আজ ডিনারের জন্য আমরা সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। এই মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব এশিয়ার ছয়টি দেশে তাদের রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছে। ওয়ার্ল্ডস ফিফটি বেস্ট রেস্টুরেন্টের তালিকায় তাদের অবস্থান পঁচিশ। বড় বড় কাঁকড়াই তাদের প্রধান আকর্ষণ। তাদের প্রধান নীতি হলো, তারা হিমায়িত খাবার পরিবেশন করে না। এ জন্য তাদের বিশাল ঝামেলা পোহাতে হয়। মালদ্বীপের এই রেস্টুরেন্টে তাদের কাঁকড়াগুলো আসে প্রাইভেট প্লেনে করে, শ্রীলঙ্কা থেকে। তারপর তাদের বসবাস উপযোগী একটি চৌবাচ্চায় জ্যান্ত সংরক্ষণ করা হয় প্লেটে পরিবেশন করার আগ পর্যন্ত। ক্রেতাদের চাহিদামতো জ্যান্ত কাঁকড়া নিয়ে আসা হয় তার আকৃতি ঠিক আছে কি না, দেখানোর জন্য। এখানে প্রায় দশ আকারের কাঁকড়া পাওয়া যায়। ছোটটা আধা কেজি আর বড়টা দুই কেজি ওজনের। তারা প্রায় পাঁচ রকমভাবে কাঁকড়া রান্না করতে পারে। এর মধ্যে পিপার ক্র্যাব অসম্ভব জনপ্রিয়।
আমরা পিপার ক্র্যাব অর্ডার করেছিলাম, সঙ্গে ছিল ক্র্যাব লিভার পাটে, এপেটাইজারে। ছোট্ট একটি বিস্কুটের ওপর এই ক্র্যাব লিভার পেস্ট জেলির মতো লাগিয়ে তার ওপরে ম্যাপেল সিরাপ দিয়ে কুট্টুস করে কামড় দিয়ে খেতে হয়। দুই কেজির বিশাল পিপার ক্র্যাব খাবার জন্য ঘাম ঝরানো জরুরি। রীতিমতো ছেনি-বাটাল নিয়ে ভাঙতে হয় ক্র্যাবের শক্ত খোল। তারপর বের হয় কাঙ্ক্ষিত সাদা মাংস। পিপার সসে ডুবিয়ে সেই মাংস মুখে পুরে অনায়াসে ভুলে যাওয়া যায় জগৎ-সংসার। ডেজার্টে ছিল নারকেলের খোলে তৈরি ফ্রেঞ্চ ক্রিম ব্রুলে। এবার ঘুম।

আজ ঘুম ভাঙল বৃষ্টির শব্দে। সে কী বৃষ্টি! গতকালের ভেজা কাপড়গুলো শুকাতে দেওয়া হয়েছিল টেরেসে। সেগুলো আবার ভিজে গেল। রুমের দরজা খুলে টেরেসে গিয়ে নতুন রঙের আভা দেখলাম। সবুজ সমুদ্র আরও সবুজ দেখা যাচ্ছে আর ওপরে কালো আকাশ। সে অপরূপ ব্যাপার! সমুদ্র ভয়ংকর হতে লাগল। বাড়তে লাগল বৃষ্টির তেজ। মালদ্বীপের বৃষ্টি নাকি ভয়ংকর—একবার শুরু হলে এক সপ্তাহ। মন খারাপ হয়ে গেল। আরও দুই দিন যে থাকতে হবে! কিন্তু কিছুক্ষণ পরই মেঘ কেটে গিয়ে চমৎকার এক সূর্যের দেখা পেলাম। পুরো পরিবার নিয়ে রিফে নেমে গেলাম। গতকাল নাকি এক বিশাল মান্তা রে ঢুকেছে রিফে।
এই প্রাণীটা বেশ মজার। এরা নাকি তেইশ ফুট পর্যন্ত চওড়া হতে পারে! অদ্ভুত দর্শনের জন্য এদের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে ভীষণ ভয় পেত। প্রাচীনকালে নাবিকেরা বিশ্বাস করতেন যে, তারা মানুষের জন্য বিপজ্জনক এবং নোঙরে টান দিয়ে নৌকা ডোবাতে পারে। পরে যখন ডাইভিং জনপ্রিয় হয়, তখন মানুষ বুঝতে শেখে, এরা নিরীহ গোছের প্রাণী আর শুরু করে তাদের ওপর অত্যাচার। তাদের ফুলকা চায়নিজ ওষুধের এক দুর্মূল্য উপাদান। এই ফুলকার জন্য হাজার হাজার মান্তা রে প্রতি বছর মারা হয়। সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় গত বছরই তাদের বিপদাপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
দুপুরে যখন আমরা পানি থেকে উঠে খাবার খাচ্ছিলাম, তখনই দেখা মিলল সেই বিশাল কালো মান্তা রের। প্রবল দাপটে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে রিফে। মাছেদের খেলা দেখতে দেখতে বিকেল নামল। বেগুনি হয়ে উঠল আকাশ। রিফের সেই আকাশি পানি তখনো আকাশি। তবে কিছুটা কালচে। চমৎকার বেগুনি আকাশের নিচে কালচে আকাশি সমুদ্র ঠিক যেন মনভোলা এক চিত্রকরের হাতে আঁকা ছবি। প্রকৃতির এমন রূপ দেখে যেকোনো শিল্পীর মনে হতে বাধ্য, এখানে বাকি জীবন কাটালে মন্দ হতো না। সারা দিন শুধু ছবি আঁকব, ফিরব না আর যান্ত্রিক নগরে। সত্যি সত্যি এমন পাগলামি কিন্তু একজন করেছিলেন—তাঁর নাম পল গগাঁ। ফরাসি এই শিল্পী তাহিতি নামের এক দ্বীপে গিয়ে তার প্রেমে পড়ে যান। তারপর সবকিছু ছেড়েছুড়ে আমৃত্যু বসবাস করতে থাকেন সেই দ্বীপে।
মালদ্বীপের এই তটে বসে গগাঁর মনের অবস্থা টের পাচ্ছিলাম। এই ক্ষুদ্র জীবনে খুব বেশি কিছু কি দরকার? তবু ফিরে যেতে হবে কাল। মন খারাপ হয়ে গেল। আকাশে তখন তারা ফুটে উঠছে। বেগুনি থেকে গাঢ় নীল হচ্ছে পৃথিবী।
পৃথিবী এত সুন্দর কেন?

বিজয় দিবসে লাল-সবুজের ফ্যাশন এখন দারুণ ট্রেন্ড। পতাকার এই রং ছড়িয়ে থাকে আমাদের মন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজগোজে। তবে হিম হিম শীতে কোন ধরনের লাল-সবুজ পোশাক বেছে নেবেন এবং এর সঙ্গে সাজ কেমন হবে, সেসব নিয়ে অনেকে আছেন দ্বিধায়। তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। দেখে নিতে পারেন এখানে।
৪ ঘণ্টা আগে
আজ আপনার পকেট হঠাৎ করে গরম হতে পারে। জ্যোতিষ বলছে, ‘হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।’ কিন্তু এই অর্থ হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার আশপাশে থাকা ‘নারী বন্ধু’ (বা পুরুষ বন্ধু, লিঙ্গভেদ নেই) আপনাকে কফি, বিরিয়ানি বা নতুন সিরিজের সাবস্ক্রিপশনের জন্য অনুরোধ করতে পারে।
৫ ঘণ্টা আগে
চাকরির কারণে প্রতিদিন বাইরে বের হতে হয়। শীতে ধুলোবালির পরিমাণ বেশি। পথের ধারে বিভিন্ন জিনিসপত্র পোড়ানোয় ধোঁয়ার গন্ধও হয়। সব মিলিয়ে চুলের তরতাজা ভাব নষ্ট হয়ে যায়। সে জন্য প্রতিদিন শ্য়াম্পু করি। যদিও তা চুলের জন্য ভালো নয়।
৫ ঘণ্টা আগে
সারা বছর সবার ঘরে, ভ্যানিটি ব্যাগে এমনকি অফিসের ডেস্কে যে প্রসাধনী থাকে, তা হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি শুধু ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করে, তা-ই নয়, রূপচর্চায় আরও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
৬ ঘণ্টা আগেনিশাত তামান্না

বিজয় দিবসে লাল-সবুজের ফ্যাশন এখন দারুণ ট্রেন্ড। পতাকার এই রং ছড়িয়ে থাকে আমাদের মন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজগোজে। তবে হিম হিম শীতে কোন ধরনের লাল-সবুজ পোশাক বেছে নেবেন এবং এর সঙ্গে সাজ কেমন হবে, সেসব নিয়ে অনেকে আছেন দ্বিধায়। তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। দেখে নিতে পারেন এখানে।
পোশাক
বিজয় দিবসের পোশাকের রং লাল-সবুজ। সাধারণত সবুজকে বেছে নেওয়া হয় পোশাকের মূল রং হিসেবে। এরপর শাড়ি হলে পাড়ে, কামিজের সঙ্গে ওড়না, পাঞ্জাবির কলার ও হাত—এসব জায়গায় উজ্জ্বল আভা ছড়ায় লাল রং। এসব নকশায় সাধারণত থাকে দেশীয় আলপনা, বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছাপচিত্র, জাতীয় ফুল কিংবা জাতীয় পাখি, লতাপাতাসহ নানা রকম দেশীয় আবহ। এসব পোশাকের মধ্যে শাড়ি, কুর্তি, সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট, টপ, পাঞ্জাবি বা টি-শার্টই হয়ে উঠবে একখণ্ড ক্যানভাস। তবে ডিসেম্বর মাস মানে গায়ে অল্প হলেও শীতের পোশাক তুলতে হচ্ছে। ফলে বিজয় উৎসবের পোশাকের সঙ্গে ম্যাড়মেড়ে শীতের পোশাক যে একেবারেই মানানসই নয়, তা সবার জানা। রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস বলেন, ‘পোশাক পরার ক্ষেত্রে শীতের হিম আবহাওয়াকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাই এমন পোশাক বেছে নিতে হবে, যা আরামদায়ক কিন্তু একই সঙ্গে হালকা শীত এড়ানো যায়।’
সৌমিক দাস আরও বলেন, ‘বিজয় দিবসের পোশাকের নকশায় ডিজাইনাররা সুতি কাপড়কেই বেশি প্রাধান্য দেন। পোশাকে মার্জিত ভাব বজায় রাখতে ব্লক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, সুই-সুতার কাজ বেশি হয়। লাল-সবুজের শাড়ি, পাঞ্জাবি, কুর্তি, উত্তরীয়সহ নানা রকম পোশাক যেন হালকা শীতও মোকাবিলা করতে পারে, সেভাবে নকশা করা হয়েছে। পাশাপাশি ম্যাচিং করে পরার জন্য চাদরও নকশা করেছে রঙ বাংলাদেশ।’
সৌমিক দাস আরও বলেন, এ ধরনের উৎসবে পরিবারের সবাই মিলে একই পোশাক পরার ব্যাপারেও আগ্রহ দেখা যায়। তাই পরিবারের সবার জন্য কম্বো সেটও এনেছে এই ব্র্যান্ড।
সাজ
এই দিনে ঘোরাঘুরির আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ঠিক কেমন করে কাটাতে চাইছেন দিনটি। দল বেঁধে দূরে কোথাও যেতে চাইলে কিংবা কাছাকাছি এদিক-ওদিক ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতে হলে সাজের ধরনেও আসবে ভিন্নতা। সাজ তো কেবল পোশাক নয়, এর সঙ্গে থাকে আনুষঙ্গিক আরও অনেক কিছুর সমন্বয়। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না, চোখের সাজ, মুখের সাজ, চুলের সাজ— বাদ যায় না হাতে বা কাঁধে বহনের ব্যাগটিও। তাই একটু ভেবেচিন্তে পরিকল্পনা করে নিলে সাজ ও ঘোরাঘুরির আনন্দ হবে ঠিকঠাক।

বিজয় দিবসের দিনটিতে সাজ কেমন হলে ভালো হয়, এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহা। তিনি বলেন, ‘বিজয় দিবসে পোশাকের রং লাল-সবুজ থাকে। কমবেশি সবাই এই রঙেই জড়িয়ে নেন নিজেদের। যেহেতু এটি গৌরবময় দিন, তাই সাজটিও হতে হবে মার্জিত ও স্নিগ্ধ। পাশাপাশি যেহেতু শীত, তাই ত্বক যেন মেকআপের ফলে অতিরিক্ত শুষ্ক না হয়ে ওঠে, সেদিকেও নজর দেওয়া চাই।’
শোভন সাহার মতে, সাজের আগে খেয়াল রাখতে হবে ত্বকের ধরনের বিষয়টি। শুষ্ক, মিশ্র ও স্বাভাবিক—ত্বক এই তিন ধরনের হয়। তবে ত্বক যেমনই হোক না কেন, প্রথমে মুখ পরিষ্কার করে ক্রিম বা ময়শ্চারাইজার দিতে হবে। প্রাইমার ব্যবহার করলে দীর্ঘ সময় ত্বক সুন্দর দেখাবে।
এদিন সাজের ধরন ভারী না হলেই বরং ভালো। মুখের ত্বকে দাগ, ছোপ লুকিয়ে হালকা করে লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ভালোভাবে ত্বকের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার হালকা ফেস পাউডার দিয়ে তার ওপর পিচ বা গোলাপি ব্লাশন বুলিয়ে নিলেই ত্বকের সাজ পূর্ণ হবে।
চোখের সাজের ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, চোখে গাঢ় করে ওয়াটারপ্রুফ কাজল দিন। পোশাকের রং যেহেতু লাল-সবুজ থাকবে, তাই ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপস্টিক ব্যবহার না করে ন্যুড কিংবা হালকা রঙের লিপস্টিক পরে নিলে ভালো দেখাবে। তবে শাড়ি পরলে চুলে গুঁজে দেওয়া যেতে পারে তাজা ফুল। সবশেষে ম্যাচিং চুড়ি, গয়না ও টিপ পরলেই সাজ পুরোপুরি সম্পন্ন।

বিজয় দিবসে লাল-সবুজের ফ্যাশন এখন দারুণ ট্রেন্ড। পতাকার এই রং ছড়িয়ে থাকে আমাদের মন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজগোজে। তবে হিম হিম শীতে কোন ধরনের লাল-সবুজ পোশাক বেছে নেবেন এবং এর সঙ্গে সাজ কেমন হবে, সেসব নিয়ে অনেকে আছেন দ্বিধায়। তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। দেখে নিতে পারেন এখানে।
পোশাক
বিজয় দিবসের পোশাকের রং লাল-সবুজ। সাধারণত সবুজকে বেছে নেওয়া হয় পোশাকের মূল রং হিসেবে। এরপর শাড়ি হলে পাড়ে, কামিজের সঙ্গে ওড়না, পাঞ্জাবির কলার ও হাত—এসব জায়গায় উজ্জ্বল আভা ছড়ায় লাল রং। এসব নকশায় সাধারণত থাকে দেশীয় আলপনা, বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছাপচিত্র, জাতীয় ফুল কিংবা জাতীয় পাখি, লতাপাতাসহ নানা রকম দেশীয় আবহ। এসব পোশাকের মধ্যে শাড়ি, কুর্তি, সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট, টপ, পাঞ্জাবি বা টি-শার্টই হয়ে উঠবে একখণ্ড ক্যানভাস। তবে ডিসেম্বর মাস মানে গায়ে অল্প হলেও শীতের পোশাক তুলতে হচ্ছে। ফলে বিজয় উৎসবের পোশাকের সঙ্গে ম্যাড়মেড়ে শীতের পোশাক যে একেবারেই মানানসই নয়, তা সবার জানা। রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস বলেন, ‘পোশাক পরার ক্ষেত্রে শীতের হিম আবহাওয়াকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাই এমন পোশাক বেছে নিতে হবে, যা আরামদায়ক কিন্তু একই সঙ্গে হালকা শীত এড়ানো যায়।’
সৌমিক দাস আরও বলেন, ‘বিজয় দিবসের পোশাকের নকশায় ডিজাইনাররা সুতি কাপড়কেই বেশি প্রাধান্য দেন। পোশাকে মার্জিত ভাব বজায় রাখতে ব্লক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, সুই-সুতার কাজ বেশি হয়। লাল-সবুজের শাড়ি, পাঞ্জাবি, কুর্তি, উত্তরীয়সহ নানা রকম পোশাক যেন হালকা শীতও মোকাবিলা করতে পারে, সেভাবে নকশা করা হয়েছে। পাশাপাশি ম্যাচিং করে পরার জন্য চাদরও নকশা করেছে রঙ বাংলাদেশ।’
সৌমিক দাস আরও বলেন, এ ধরনের উৎসবে পরিবারের সবাই মিলে একই পোশাক পরার ব্যাপারেও আগ্রহ দেখা যায়। তাই পরিবারের সবার জন্য কম্বো সেটও এনেছে এই ব্র্যান্ড।
সাজ
এই দিনে ঘোরাঘুরির আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ঠিক কেমন করে কাটাতে চাইছেন দিনটি। দল বেঁধে দূরে কোথাও যেতে চাইলে কিংবা কাছাকাছি এদিক-ওদিক ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতে হলে সাজের ধরনেও আসবে ভিন্নতা। সাজ তো কেবল পোশাক নয়, এর সঙ্গে থাকে আনুষঙ্গিক আরও অনেক কিছুর সমন্বয়। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না, চোখের সাজ, মুখের সাজ, চুলের সাজ— বাদ যায় না হাতে বা কাঁধে বহনের ব্যাগটিও। তাই একটু ভেবেচিন্তে পরিকল্পনা করে নিলে সাজ ও ঘোরাঘুরির আনন্দ হবে ঠিকঠাক।

বিজয় দিবসের দিনটিতে সাজ কেমন হলে ভালো হয়, এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহা। তিনি বলেন, ‘বিজয় দিবসে পোশাকের রং লাল-সবুজ থাকে। কমবেশি সবাই এই রঙেই জড়িয়ে নেন নিজেদের। যেহেতু এটি গৌরবময় দিন, তাই সাজটিও হতে হবে মার্জিত ও স্নিগ্ধ। পাশাপাশি যেহেতু শীত, তাই ত্বক যেন মেকআপের ফলে অতিরিক্ত শুষ্ক না হয়ে ওঠে, সেদিকেও নজর দেওয়া চাই।’
শোভন সাহার মতে, সাজের আগে খেয়াল রাখতে হবে ত্বকের ধরনের বিষয়টি। শুষ্ক, মিশ্র ও স্বাভাবিক—ত্বক এই তিন ধরনের হয়। তবে ত্বক যেমনই হোক না কেন, প্রথমে মুখ পরিষ্কার করে ক্রিম বা ময়শ্চারাইজার দিতে হবে। প্রাইমার ব্যবহার করলে দীর্ঘ সময় ত্বক সুন্দর দেখাবে।
এদিন সাজের ধরন ভারী না হলেই বরং ভালো। মুখের ত্বকে দাগ, ছোপ লুকিয়ে হালকা করে লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ভালোভাবে ত্বকের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার হালকা ফেস পাউডার দিয়ে তার ওপর পিচ বা গোলাপি ব্লাশন বুলিয়ে নিলেই ত্বকের সাজ পূর্ণ হবে।
চোখের সাজের ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, চোখে গাঢ় করে ওয়াটারপ্রুফ কাজল দিন। পোশাকের রং যেহেতু লাল-সবুজ থাকবে, তাই ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপস্টিক ব্যবহার না করে ন্যুড কিংবা হালকা রঙের লিপস্টিক পরে নিলে ভালো দেখাবে। তবে শাড়ি পরলে চুলে গুঁজে দেওয়া যেতে পারে তাজা ফুল। সবশেষে ম্যাচিং চুড়ি, গয়না ও টিপ পরলেই সাজ পুরোপুরি সম্পন্ন।

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দি সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর
০৮ এপ্রিল ২০২২
আজ আপনার পকেট হঠাৎ করে গরম হতে পারে। জ্যোতিষ বলছে, ‘হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।’ কিন্তু এই অর্থ হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার আশপাশে থাকা ‘নারী বন্ধু’ (বা পুরুষ বন্ধু, লিঙ্গভেদ নেই) আপনাকে কফি, বিরিয়ানি বা নতুন সিরিজের সাবস্ক্রিপশনের জন্য অনুরোধ করতে পারে।
৫ ঘণ্টা আগে
চাকরির কারণে প্রতিদিন বাইরে বের হতে হয়। শীতে ধুলোবালির পরিমাণ বেশি। পথের ধারে বিভিন্ন জিনিসপত্র পোড়ানোয় ধোঁয়ার গন্ধও হয়। সব মিলিয়ে চুলের তরতাজা ভাব নষ্ট হয়ে যায়। সে জন্য প্রতিদিন শ্য়াম্পু করি। যদিও তা চুলের জন্য ভালো নয়।
৫ ঘণ্টা আগে
সারা বছর সবার ঘরে, ভ্যানিটি ব্যাগে এমনকি অফিসের ডেস্কে যে প্রসাধনী থাকে, তা হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি শুধু ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করে, তা-ই নয়, রূপচর্চায় আরও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
৬ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
আজ আপনার পকেট হঠাৎ করে গরম হতে পারে। জ্যোতিষ বলছে, ‘হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।’ কিন্তু এই অর্থ হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার আশপাশে থাকা ‘নারী বন্ধু’ (বা পুরুষ বন্ধু, লিঙ্গভেদ নেই) আপনাকে কফি, বিরিয়ানি বা নতুন সিরিজের সাবস্ক্রিপশনের জন্য অনুরোধ করতে পারে। সাবধান! এই অর্থ আপনার একার, মহাজাগতিক ঋণের নয়। সারা দিন জনসেবার ইচ্ছা জাগবে, ভালো কথা। কিন্তু তার আগে নিজের বিলগুলো মেটানো জরুরি। ভাগ্য আজ আপনাকে দেখাবে—টাকা উপার্জন করা যতটা সহজ, সেটা ধরে রাখা তার চেয়েও কঠিন! আজকের মন্ত্র হোক: কফি খাব, তবে বিল দেব না।
বৃষ
সকাল থেকে একটা অদ্ভুত মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তি আপনাকে তাড়া করবে। এর কারণ সম্ভবত গভীর রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্টুন দেখা। জ্যোতিষ বলছে, ‘কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু আপনাকে ঠকানোর চেষ্টা করবেন।’ সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুটি আর কেউ নয়—সে হলো আপনার ফ্রিজের ভেতরে রাখা সেই মিষ্টির বাক্স, যেটি আপনাকে ডায়েট ভাঙতে উৎসাহিত করবে। ধ্যানের মাধ্যমে একাগ্রতা আনার চেষ্টা করুন। বস যদি সকালে কাজে ভুল ধরেন, তখন যোগাভ্যাস শুরু করে দিতে পারেন, হয়তো বস ভয় পাবেন। পেটের সমস্যা এড়াতে আজ অতিরিক্ত মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। কিন্তু যদি দেখেন বন্ধু বিরিয়ানি খাওয়াতে চাচ্ছে, তাহলে এই উপদেশ ভুলে যান। মন খারাপ? মনকে বলুন, ‘বিকেলের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে, তার আগে ঘুমাও।’
মিথুন
সকালের দিকে মেজাজ এমন খিটখিটে থাকবে যে, পোষা প্রাণীটাও আপনাকে এড়িয়ে চলবে। তবে চিন্তা নেই, বিকেলের দিকে মুড ফ্রেশ হবে—যদি না কোনো অপ্রত্যাশিত ফোন কল আসে। কর্মক্ষেত্রে সুনাম হতে পারে, যা আপনার অহংবোধকে একধাপ বাড়িয়ে দেবে। আজ কিছু নতুন পোশাক, মোবাইল ফোন ইত্যাদি কেনার যোগ রয়েছে। আপনার সম্মান বৃদ্ধির মূল কারণ হতে পারে নতুন ফোনের ক্যামেরা। তাই নিজেকে প্রমাণ করতে নয়, বরং ভালো সেলফি তোলার জন্য আজ মন দিন। সাবধানে অর্থ ব্যয় করুন। যদি অনলাইনে কোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস চোখে পড়ে, মনে রাখবেন—ওটা কালকেও থাকবে।
কর্কট
আজকের দিনটি আপনার জন্য বেশ ব্যয়বহুল হতে চলেছে। এর মানে এই নয় যে দামি কিছু কিনবেন, বরং মানে হলো—হয়তো অফিসের কলিগদের জন্য চা-কফি কিনে নিজের মাসকাবারি বাজেট শেষ করবেন। বসের কাছে প্রশংসা পাবেন, কারণ আপনি কাজের প্রতি খুবই দায়িত্বশীল। এই দায়িত্বশীলতা আপনাকে আরও বেশি কাজ এনে দেবে, যা ভবিষ্যতে মানসিক ভারসাম্য নষ্টের কারণ হবে। সরকারি কাজে অসুবিধা দেখা দেবে—কারণ সরকারি কাজ সব সময়ই অসুবিধা সৃষ্টি করে। ভদ্র থাকুন, নইলে টাকা শেষ হয়ে গেলে ধার চাওয়ার মুখ থাকবে না।
সিংহ
প্রতিদিনের স্বাভাবিক রুটিন বদলানোর চেষ্টা কেউ একজন করবে। সেই ‘কেউ একজন’ আর কেউ নয়, তিনি হলেন আপনার জীবনসঙ্গী, যিনি আপনাকে দিয়ে ঘরের কাজ করানোর চেষ্টা করবেন। সেদিকে বিশেষ নজর রাখুন। তবে দিনের শেষে রোমান্সের যোগ রয়েছে, যদি আপনি রুটিন বদলের এই চ্যালেঞ্জে হেরে যান এবং বশ্যতা স্বীকার করেন। আজ ব্যবসা বা পেশার জন্য অর্থ সংগ্রহে আপনি সফল হবেন। ঘরের কাজকে প্রেমের খেলা মনে করুন। হারলেও লাভ, জিতলেও!
কন্যা
সারা দিন আপনার কোনো বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। চেষ্টা করলেও, ভেতরের কণ্ঠস্বর আপনাকে মনে করিয়ে দেবে—কত কাজ বাকি আছে। আজ আপনার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা দরকার। সামান্য সর্দি-কাশিকে কঠিন ব্যামো ভেবে সারা দিন গুগল করতে পারেন। অফিসে পদোন্নতির যোগ রয়েছে, তবে এর মানে হলো—আপনার ওপর চাপ আরও বাড়বে। ব্যবসায়ীরা আজ আর্থিক বিষয়ে হতাশ হতে পারেন। সন্তানদের বিষয়ে একটু সতর্ক থাকুন। আজ হয়তো তারা আপনার গোপনে জমানো চকলেট খুঁজে পেতে পারে।
তুলা
ব্যবসায় খুব বেশি লাভ দেখতে পাওয়ার যোগ রয়েছে। এই লাভকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্যের আগের থেকে উন্নতি দেখা যাবে। আজকের দিনে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভদ্র থাকবেন এবং মানসিকভাবে ভারসাম্য বজায় রাখবেন। তবে সাবধান, এই ভদ্রতা যেন অতিরিক্ত বিনয়ে রূপ না নেয়। না হলে সবাই আপনাকে দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নেবে। অতিরিক্ত লাভের খবর পেয়ে রাতে ঘুম ভাঙতে পারে। চিন্তা করবেন না, এটা শুধু গ্যাস।
বৃশ্চিক
আজকের দিনটি আপনার জন্য ফলপ্রসূ হতে চলেছে। তবে এই ‘ফল’ হয়তো আপনার ই-মেইল ইনবক্সে জমা হওয়া হাজারো নতুন ই-মেইলের স্তূপ! কর্মজীবনের দিক থেকে নতুন সুযোগ পেতে পারেন। এটি হতে পারে—বসের নতুন প্রজেক্ট, যা আপনি একা সামলাবেন। অর্থের দিক থেকে দিনটি শুভ, কারণ আপনি আজ বুদ্ধি করে একটি অপ্রয়োজনীয় অনলাইন শপিং অর্ডার বাতিল করবেন। অর্থের দিক থেকে শুভ, মানে আপনি আজ অন্তত এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
ধনু
আপনার জন্য আজ একটি শুভ দিন হতে চলেছে। এতটা শুভ যে, হয়তো সকালে উঠে জুতা পরার সময় মোজা পরতে ভুলে যাবেন। ক্যারিয়ারে লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পনা করুন। দিনের মূল প্ল্যানিং হবে, কীভাবে এই পরিকল্পনাকে আবার পরের দিনের জন্য স্থগিত করা যায়। গাড়ি চালানোর সময় অসতর্কতা থেকে বিরত থাকুন। বিশেষত যখন আপনি ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের চিন্তায় মগ্ন থাকবেন। আপনার ভাগ্য আজ ভালো, শুধু নিজেকে বেশি সিরিয়াস না নিলেই হলো।
মকর
জ্যোতিষ বলছে, ‘সব জায়গায় ইতিবাচক মনোভাব দেখালে চলবে না।’ সত্যি কথা! আপনার ইতিবাচকতা দেখে অন্যরা ভয় পেতে পারে। রাস্তায় কারও সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। ঝামেলার কারণ—আপনাকে দেখিয়ে কেউ যদি ভুল করে হাসে! বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন, যেমন—সকালের নাশতায় কী খাবেন, পাউরুটি নাকি পরোটা? আপনি মানসিক চাপে ভুগতে পারেন। রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন। যদি দেখেন কেউ আলু-পেঁয়াজ নিয়ে তর্ক করছে, সেখানে জড়াবেন না।
কুম্ভ
শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রচুর দায়িত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে। এর মানে শুধু একটাই—আপনার ছুটি বাতিল। রাজনৈতিক কোনো কাজ করার আগে খুব ভাবনাচিন্তা করার দরকার আছে। সামনে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ আসবে, কিন্তু আপনি এমন দায়িত্বশীল যে সেই সুযোগ নিতে পারবেন না। যদিও মন চাইবে, ‘যাই হোক, একটু ফাঁকি দেওয়া যাক।’ এই দোটানা মানসিক চাপ বাড়াবে। ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ এলেও, যদি দেখেন বস আপনার দিকে তাকিয়ে হাসছেন, তবে সেই সুযোগ হাতছাড়া করুন।
মীন
আজ সৃজনশীল শক্তিতে পূর্ণ একটি দিন কাটাবেন। আপনার এই সৃজনশীলতা হয়তো কাজে লাগতে পারে—বাড়িতে ভেঙে যাওয়া দামি জিনিসটি মেরামত করার জন্য। অর্থের দিক থেকে ভাগ্যবান প্রমাণিত হতে পারেন। হয়তো পুরোনো কোনো প্যান্টের পকেটে একটি পাঁচশ টাকার নোট খুঁজে পাবেন। কেউ কোনো দায়িত্ব দিলে একেবারেই নেবেন না, কারণ এটা আপনার জন্য একটি ফাঁদ হতে পারে। আজ উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে—কারণ আপনি ওই দায়িত্বটি না নিতে পারার অপরাধবোধে ভুগবেন। দাম্পত্য জীবন শান্ত ও সুখকর থাকবে। কারণ সঙ্গী আজ আপনার সৃজনশীলতা দেখে কথা বলার সাহস পাবেন না।

মেষ
আজ আপনার পকেট হঠাৎ করে গরম হতে পারে। জ্যোতিষ বলছে, ‘হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।’ কিন্তু এই অর্থ হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার আশপাশে থাকা ‘নারী বন্ধু’ (বা পুরুষ বন্ধু, লিঙ্গভেদ নেই) আপনাকে কফি, বিরিয়ানি বা নতুন সিরিজের সাবস্ক্রিপশনের জন্য অনুরোধ করতে পারে। সাবধান! এই অর্থ আপনার একার, মহাজাগতিক ঋণের নয়। সারা দিন জনসেবার ইচ্ছা জাগবে, ভালো কথা। কিন্তু তার আগে নিজের বিলগুলো মেটানো জরুরি। ভাগ্য আজ আপনাকে দেখাবে—টাকা উপার্জন করা যতটা সহজ, সেটা ধরে রাখা তার চেয়েও কঠিন! আজকের মন্ত্র হোক: কফি খাব, তবে বিল দেব না।
বৃষ
সকাল থেকে একটা অদ্ভুত মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তি আপনাকে তাড়া করবে। এর কারণ সম্ভবত গভীর রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্টুন দেখা। জ্যোতিষ বলছে, ‘কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু আপনাকে ঠকানোর চেষ্টা করবেন।’ সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুটি আর কেউ নয়—সে হলো আপনার ফ্রিজের ভেতরে রাখা সেই মিষ্টির বাক্স, যেটি আপনাকে ডায়েট ভাঙতে উৎসাহিত করবে। ধ্যানের মাধ্যমে একাগ্রতা আনার চেষ্টা করুন। বস যদি সকালে কাজে ভুল ধরেন, তখন যোগাভ্যাস শুরু করে দিতে পারেন, হয়তো বস ভয় পাবেন। পেটের সমস্যা এড়াতে আজ অতিরিক্ত মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। কিন্তু যদি দেখেন বন্ধু বিরিয়ানি খাওয়াতে চাচ্ছে, তাহলে এই উপদেশ ভুলে যান। মন খারাপ? মনকে বলুন, ‘বিকেলের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে, তার আগে ঘুমাও।’
মিথুন
সকালের দিকে মেজাজ এমন খিটখিটে থাকবে যে, পোষা প্রাণীটাও আপনাকে এড়িয়ে চলবে। তবে চিন্তা নেই, বিকেলের দিকে মুড ফ্রেশ হবে—যদি না কোনো অপ্রত্যাশিত ফোন কল আসে। কর্মক্ষেত্রে সুনাম হতে পারে, যা আপনার অহংবোধকে একধাপ বাড়িয়ে দেবে। আজ কিছু নতুন পোশাক, মোবাইল ফোন ইত্যাদি কেনার যোগ রয়েছে। আপনার সম্মান বৃদ্ধির মূল কারণ হতে পারে নতুন ফোনের ক্যামেরা। তাই নিজেকে প্রমাণ করতে নয়, বরং ভালো সেলফি তোলার জন্য আজ মন দিন। সাবধানে অর্থ ব্যয় করুন। যদি অনলাইনে কোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস চোখে পড়ে, মনে রাখবেন—ওটা কালকেও থাকবে।
কর্কট
আজকের দিনটি আপনার জন্য বেশ ব্যয়বহুল হতে চলেছে। এর মানে এই নয় যে দামি কিছু কিনবেন, বরং মানে হলো—হয়তো অফিসের কলিগদের জন্য চা-কফি কিনে নিজের মাসকাবারি বাজেট শেষ করবেন। বসের কাছে প্রশংসা পাবেন, কারণ আপনি কাজের প্রতি খুবই দায়িত্বশীল। এই দায়িত্বশীলতা আপনাকে আরও বেশি কাজ এনে দেবে, যা ভবিষ্যতে মানসিক ভারসাম্য নষ্টের কারণ হবে। সরকারি কাজে অসুবিধা দেখা দেবে—কারণ সরকারি কাজ সব সময়ই অসুবিধা সৃষ্টি করে। ভদ্র থাকুন, নইলে টাকা শেষ হয়ে গেলে ধার চাওয়ার মুখ থাকবে না।
সিংহ
প্রতিদিনের স্বাভাবিক রুটিন বদলানোর চেষ্টা কেউ একজন করবে। সেই ‘কেউ একজন’ আর কেউ নয়, তিনি হলেন আপনার জীবনসঙ্গী, যিনি আপনাকে দিয়ে ঘরের কাজ করানোর চেষ্টা করবেন। সেদিকে বিশেষ নজর রাখুন। তবে দিনের শেষে রোমান্সের যোগ রয়েছে, যদি আপনি রুটিন বদলের এই চ্যালেঞ্জে হেরে যান এবং বশ্যতা স্বীকার করেন। আজ ব্যবসা বা পেশার জন্য অর্থ সংগ্রহে আপনি সফল হবেন। ঘরের কাজকে প্রেমের খেলা মনে করুন। হারলেও লাভ, জিতলেও!
কন্যা
সারা দিন আপনার কোনো বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। চেষ্টা করলেও, ভেতরের কণ্ঠস্বর আপনাকে মনে করিয়ে দেবে—কত কাজ বাকি আছে। আজ আপনার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা দরকার। সামান্য সর্দি-কাশিকে কঠিন ব্যামো ভেবে সারা দিন গুগল করতে পারেন। অফিসে পদোন্নতির যোগ রয়েছে, তবে এর মানে হলো—আপনার ওপর চাপ আরও বাড়বে। ব্যবসায়ীরা আজ আর্থিক বিষয়ে হতাশ হতে পারেন। সন্তানদের বিষয়ে একটু সতর্ক থাকুন। আজ হয়তো তারা আপনার গোপনে জমানো চকলেট খুঁজে পেতে পারে।
তুলা
ব্যবসায় খুব বেশি লাভ দেখতে পাওয়ার যোগ রয়েছে। এই লাভকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্যের আগের থেকে উন্নতি দেখা যাবে। আজকের দিনে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভদ্র থাকবেন এবং মানসিকভাবে ভারসাম্য বজায় রাখবেন। তবে সাবধান, এই ভদ্রতা যেন অতিরিক্ত বিনয়ে রূপ না নেয়। না হলে সবাই আপনাকে দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নেবে। অতিরিক্ত লাভের খবর পেয়ে রাতে ঘুম ভাঙতে পারে। চিন্তা করবেন না, এটা শুধু গ্যাস।
বৃশ্চিক
আজকের দিনটি আপনার জন্য ফলপ্রসূ হতে চলেছে। তবে এই ‘ফল’ হয়তো আপনার ই-মেইল ইনবক্সে জমা হওয়া হাজারো নতুন ই-মেইলের স্তূপ! কর্মজীবনের দিক থেকে নতুন সুযোগ পেতে পারেন। এটি হতে পারে—বসের নতুন প্রজেক্ট, যা আপনি একা সামলাবেন। অর্থের দিক থেকে দিনটি শুভ, কারণ আপনি আজ বুদ্ধি করে একটি অপ্রয়োজনীয় অনলাইন শপিং অর্ডার বাতিল করবেন। অর্থের দিক থেকে শুভ, মানে আপনি আজ অন্তত এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
ধনু
আপনার জন্য আজ একটি শুভ দিন হতে চলেছে। এতটা শুভ যে, হয়তো সকালে উঠে জুতা পরার সময় মোজা পরতে ভুলে যাবেন। ক্যারিয়ারে লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পনা করুন। দিনের মূল প্ল্যানিং হবে, কীভাবে এই পরিকল্পনাকে আবার পরের দিনের জন্য স্থগিত করা যায়। গাড়ি চালানোর সময় অসতর্কতা থেকে বিরত থাকুন। বিশেষত যখন আপনি ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের চিন্তায় মগ্ন থাকবেন। আপনার ভাগ্য আজ ভালো, শুধু নিজেকে বেশি সিরিয়াস না নিলেই হলো।
মকর
জ্যোতিষ বলছে, ‘সব জায়গায় ইতিবাচক মনোভাব দেখালে চলবে না।’ সত্যি কথা! আপনার ইতিবাচকতা দেখে অন্যরা ভয় পেতে পারে। রাস্তায় কারও সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। ঝামেলার কারণ—আপনাকে দেখিয়ে কেউ যদি ভুল করে হাসে! বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন, যেমন—সকালের নাশতায় কী খাবেন, পাউরুটি নাকি পরোটা? আপনি মানসিক চাপে ভুগতে পারেন। রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন। যদি দেখেন কেউ আলু-পেঁয়াজ নিয়ে তর্ক করছে, সেখানে জড়াবেন না।
কুম্ভ
শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রচুর দায়িত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে। এর মানে শুধু একটাই—আপনার ছুটি বাতিল। রাজনৈতিক কোনো কাজ করার আগে খুব ভাবনাচিন্তা করার দরকার আছে। সামনে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ আসবে, কিন্তু আপনি এমন দায়িত্বশীল যে সেই সুযোগ নিতে পারবেন না। যদিও মন চাইবে, ‘যাই হোক, একটু ফাঁকি দেওয়া যাক।’ এই দোটানা মানসিক চাপ বাড়াবে। ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ এলেও, যদি দেখেন বস আপনার দিকে তাকিয়ে হাসছেন, তবে সেই সুযোগ হাতছাড়া করুন।
মীন
আজ সৃজনশীল শক্তিতে পূর্ণ একটি দিন কাটাবেন। আপনার এই সৃজনশীলতা হয়তো কাজে লাগতে পারে—বাড়িতে ভেঙে যাওয়া দামি জিনিসটি মেরামত করার জন্য। অর্থের দিক থেকে ভাগ্যবান প্রমাণিত হতে পারেন। হয়তো পুরোনো কোনো প্যান্টের পকেটে একটি পাঁচশ টাকার নোট খুঁজে পাবেন। কেউ কোনো দায়িত্ব দিলে একেবারেই নেবেন না, কারণ এটা আপনার জন্য একটি ফাঁদ হতে পারে। আজ উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে—কারণ আপনি ওই দায়িত্বটি না নিতে পারার অপরাধবোধে ভুগবেন। দাম্পত্য জীবন শান্ত ও সুখকর থাকবে। কারণ সঙ্গী আজ আপনার সৃজনশীলতা দেখে কথা বলার সাহস পাবেন না।

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দি সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর
০৮ এপ্রিল ২০২২
বিজয় দিবসে লাল-সবুজের ফ্যাশন এখন দারুণ ট্রেন্ড। পতাকার এই রং ছড়িয়ে থাকে আমাদের মন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজগোজে। তবে হিম হিম শীতে কোন ধরনের লাল-সবুজ পোশাক বেছে নেবেন এবং এর সঙ্গে সাজ কেমন হবে, সেসব নিয়ে অনেকে আছেন দ্বিধায়। তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। দেখে নিতে পারেন এখানে।
৪ ঘণ্টা আগে
চাকরির কারণে প্রতিদিন বাইরে বের হতে হয়। শীতে ধুলোবালির পরিমাণ বেশি। পথের ধারে বিভিন্ন জিনিসপত্র পোড়ানোয় ধোঁয়ার গন্ধও হয়। সব মিলিয়ে চুলের তরতাজা ভাব নষ্ট হয়ে যায়। সে জন্য প্রতিদিন শ্য়াম্পু করি। যদিও তা চুলের জন্য ভালো নয়।
৫ ঘণ্টা আগে
সারা বছর সবার ঘরে, ভ্যানিটি ব্যাগে এমনকি অফিসের ডেস্কে যে প্রসাধনী থাকে, তা হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি শুধু ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করে, তা-ই নয়, রূপচর্চায় আরও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
৬ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

প্রশ্ন: চাকরির কারণে প্রতিদিন বাইরে বের হতে হয়। শীতে ধুলোবালির পরিমাণ বেশি। পথের ধারে বিভিন্ন জিনিসপত্র পোড়ানোয় ধোঁয়ার গন্ধও হয়। সব মিলিয়ে চুলের তরতাজা ভাব নষ্ট হয়ে যায়। সে জন্য প্রতিদিন শ্য়াম্পু করি। যদিও তা চুলের জন্য ভালো নয়। চুলের যত্নে কীভাবে এর তরতাজা ভাব ধরে রাখা যায়?
স্নিগ্ধা বাহার, ঢাকা
উত্তর: হেয়ার ডিটক্স আপনার জন্য ভালো সমাধান। এর মাধ্যমে চুল পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু হেয়ার ডিটক্স ট্রিটমেন্ট বাড়িতে শতভাগ সম্ভব নয়। তবে হেয়ার ডিটক্স প্যাক লাগানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে, প্রথমে চুলে হট অয়েল ম্যাসাজ করে নিন। এরপর কোনো হারবাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এই শ্যাম্পু তৈরি করে নিতে হবে আপেল সিডার ভিনেগার, নারকেলের দুধ, একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এবং অল্প পরিমাণে কোনো মাইল্ড শ্যাম্পু ভালো করে মিশিয়ে। এটি ব্যবহারে মাথার ত্বকে জমা হওয়া ধুলোবালি, ময়লা ও অতিরিক্ত তেল ধুয়ে যাবে।
এ ছাড়া এখন বাজারে সি-সল্ট পাওয়া যায়। একটি বাটিতে অ্যালোভেরা জেল, আপেল সিডার ভিনেগার এবং অল্প পরিমাণে সি-সল্ট একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগিয়ে ম্যাসাজ করে রাখতে হবে আধা ঘণ্টা। এরপর যেকোনো প্রোটিন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
প্রশ্ন: চুলের মসৃণ ভাব ফিরে পেতে ঘরে তৈরি হেয়ার রিপেয়ারিং মাস্কের পরামর্শ চাই। উপকরণগুলো সহজলভ্য হলে ভালো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, দিনাজপুর
উত্তর: বাড়িতে যত্ন নেওয়া গেলে পারলারে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। একটি বাটিতে ডিম ভেঙে নিন। এর সঙ্গে টক দই ও অ্যালোভেরা জেল ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। এই মিশ্রণ শ্যাম্পু করা মাথার ত্বকে ও চুলে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রাখতে হবে। এরপর আবার শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এই প্যাক ব্যবহার করলে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং চুল সিল্কি হয়।
প্রশ্ন: শীতে পুরুষের ত্বক মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখতে সহজ এবং সাধারণ কিছু টিপস প্রয়োজন। জানালে বিশেষ উপকৃত হব।
নীল মজুমদার, সোনারগাঁ
উত্তর: ত্বক পেলব রাখতে এখন থেকে প্রতিদিন রাতে অলিভ অয়েল ও গোলাপজল ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে মেখে নেবেন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে পাকা টমেটোর প্যাক খুবই উপকারী। পাকা টমেটো পেস্টের সঙ্গে ২ চামচ টক দই এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। আধা শুকনো হয়ে এলে কিছুটা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
প্রশ্ন: শীতে সব সময় পা ঢাকা জুতা ব্যবহার করি। এর সঙ্গে মোজা তো পরতেই হয়। কিন্তু এ ধরনের জুতা পরার পর পায়ে গন্ধ হয়। এ ছাড়া শীতে পায়ের আঙুলের ফাঁকে খুব চুলকানি হয়। এর জন্য ট্যালকম পাউডার ও ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করি। পা ফ্রেশ রাখতে ভালো সমাধান দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।
পম্পা শেখ, লক্ষ্মীপুর
উত্তর: দীর্ঘক্ষণ পরিধান করার কারণে জুতার ভেতরে পা ঘেমে যেতে পারে। তাই কিছুক্ষণ পরপর জুতা খুলে রাখুন। সুতির মোজা ব্যবহার করুন। এ ধরনের মোজা পায়ের ঘাম শুষে নিতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ধোয়া পরিষ্কার মোজা ব্যবহার করুন। অফিসে গিয়ে সম্ভব হলে জুতা-মোজা খুলে খোলা স্যান্ডেল পায়ে দিন। জুতা যদি পায়ে দিতেই হয়, তাহলে চামড়া বা কাপড়ের জুতা ব্যবহার করুন। এতে বাইরের বাতাস জুতার ভেতর যাওয়া-আসা করতে পারবে, এর ফলে পা ঘামবে কম। বাড়ি ফিরে হালকা গরম পানিতে সাবানের ফেনা করে পা ধুয়ে নিন। এতে ত্বকে থাকা জীবাণুর সংখ্যা কমে যাবে।
পরামর্শ দিয়েছেন: শারমিন কচি, রূপবিশেষজ্ঞ এবং স্বত্বাধিকারী বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ কেয়ার

প্রশ্ন: চাকরির কারণে প্রতিদিন বাইরে বের হতে হয়। শীতে ধুলোবালির পরিমাণ বেশি। পথের ধারে বিভিন্ন জিনিসপত্র পোড়ানোয় ধোঁয়ার গন্ধও হয়। সব মিলিয়ে চুলের তরতাজা ভাব নষ্ট হয়ে যায়। সে জন্য প্রতিদিন শ্য়াম্পু করি। যদিও তা চুলের জন্য ভালো নয়। চুলের যত্নে কীভাবে এর তরতাজা ভাব ধরে রাখা যায়?
স্নিগ্ধা বাহার, ঢাকা
উত্তর: হেয়ার ডিটক্স আপনার জন্য ভালো সমাধান। এর মাধ্যমে চুল পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু হেয়ার ডিটক্স ট্রিটমেন্ট বাড়িতে শতভাগ সম্ভব নয়। তবে হেয়ার ডিটক্স প্যাক লাগানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে, প্রথমে চুলে হট অয়েল ম্যাসাজ করে নিন। এরপর কোনো হারবাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এই শ্যাম্পু তৈরি করে নিতে হবে আপেল সিডার ভিনেগার, নারকেলের দুধ, একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এবং অল্প পরিমাণে কোনো মাইল্ড শ্যাম্পু ভালো করে মিশিয়ে। এটি ব্যবহারে মাথার ত্বকে জমা হওয়া ধুলোবালি, ময়লা ও অতিরিক্ত তেল ধুয়ে যাবে।
এ ছাড়া এখন বাজারে সি-সল্ট পাওয়া যায়। একটি বাটিতে অ্যালোভেরা জেল, আপেল সিডার ভিনেগার এবং অল্প পরিমাণে সি-সল্ট একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগিয়ে ম্যাসাজ করে রাখতে হবে আধা ঘণ্টা। এরপর যেকোনো প্রোটিন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
প্রশ্ন: চুলের মসৃণ ভাব ফিরে পেতে ঘরে তৈরি হেয়ার রিপেয়ারিং মাস্কের পরামর্শ চাই। উপকরণগুলো সহজলভ্য হলে ভালো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, দিনাজপুর
উত্তর: বাড়িতে যত্ন নেওয়া গেলে পারলারে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। একটি বাটিতে ডিম ভেঙে নিন। এর সঙ্গে টক দই ও অ্যালোভেরা জেল ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। এই মিশ্রণ শ্যাম্পু করা মাথার ত্বকে ও চুলে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রাখতে হবে। এরপর আবার শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এই প্যাক ব্যবহার করলে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং চুল সিল্কি হয়।
প্রশ্ন: শীতে পুরুষের ত্বক মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখতে সহজ এবং সাধারণ কিছু টিপস প্রয়োজন। জানালে বিশেষ উপকৃত হব।
নীল মজুমদার, সোনারগাঁ
উত্তর: ত্বক পেলব রাখতে এখন থেকে প্রতিদিন রাতে অলিভ অয়েল ও গোলাপজল ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে মেখে নেবেন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে পাকা টমেটোর প্যাক খুবই উপকারী। পাকা টমেটো পেস্টের সঙ্গে ২ চামচ টক দই এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। আধা শুকনো হয়ে এলে কিছুটা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
প্রশ্ন: শীতে সব সময় পা ঢাকা জুতা ব্যবহার করি। এর সঙ্গে মোজা তো পরতেই হয়। কিন্তু এ ধরনের জুতা পরার পর পায়ে গন্ধ হয়। এ ছাড়া শীতে পায়ের আঙুলের ফাঁকে খুব চুলকানি হয়। এর জন্য ট্যালকম পাউডার ও ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করি। পা ফ্রেশ রাখতে ভালো সমাধান দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।
পম্পা শেখ, লক্ষ্মীপুর
উত্তর: দীর্ঘক্ষণ পরিধান করার কারণে জুতার ভেতরে পা ঘেমে যেতে পারে। তাই কিছুক্ষণ পরপর জুতা খুলে রাখুন। সুতির মোজা ব্যবহার করুন। এ ধরনের মোজা পায়ের ঘাম শুষে নিতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ধোয়া পরিষ্কার মোজা ব্যবহার করুন। অফিসে গিয়ে সম্ভব হলে জুতা-মোজা খুলে খোলা স্যান্ডেল পায়ে দিন। জুতা যদি পায়ে দিতেই হয়, তাহলে চামড়া বা কাপড়ের জুতা ব্যবহার করুন। এতে বাইরের বাতাস জুতার ভেতর যাওয়া-আসা করতে পারবে, এর ফলে পা ঘামবে কম। বাড়ি ফিরে হালকা গরম পানিতে সাবানের ফেনা করে পা ধুয়ে নিন। এতে ত্বকে থাকা জীবাণুর সংখ্যা কমে যাবে।
পরামর্শ দিয়েছেন: শারমিন কচি, রূপবিশেষজ্ঞ এবং স্বত্বাধিকারী বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ কেয়ার

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দি সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর
০৮ এপ্রিল ২০২২
বিজয় দিবসে লাল-সবুজের ফ্যাশন এখন দারুণ ট্রেন্ড। পতাকার এই রং ছড়িয়ে থাকে আমাদের মন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজগোজে। তবে হিম হিম শীতে কোন ধরনের লাল-সবুজ পোশাক বেছে নেবেন এবং এর সঙ্গে সাজ কেমন হবে, সেসব নিয়ে অনেকে আছেন দ্বিধায়। তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। দেখে নিতে পারেন এখানে।
৪ ঘণ্টা আগে
আজ আপনার পকেট হঠাৎ করে গরম হতে পারে। জ্যোতিষ বলছে, ‘হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।’ কিন্তু এই অর্থ হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার আশপাশে থাকা ‘নারী বন্ধু’ (বা পুরুষ বন্ধু, লিঙ্গভেদ নেই) আপনাকে কফি, বিরিয়ানি বা নতুন সিরিজের সাবস্ক্রিপশনের জন্য অনুরোধ করতে পারে।
৫ ঘণ্টা আগে
সারা বছর সবার ঘরে, ভ্যানিটি ব্যাগে এমনকি অফিসের ডেস্কে যে প্রসাধনী থাকে, তা হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি শুধু ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করে, তা-ই নয়, রূপচর্চায় আরও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
৬ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

সারা বছর সবার ঘরে, ভ্যানিটি ব্যাগে এমনকি অফিসের ডেস্কে যে প্রসাধনী থাকে, তা হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি শুধু ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করে, তা-ই নয়, রূপচর্চায় আরও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
বাড়িতে মেকআপ রিমুভার না থাকলে পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে দারুণভাবে মেকআপ তোলার কাজটি সেরে নিতে পারেন। পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়ে পুরো মুখে ম্যাসাজ করুন। এরপর তুলা দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। চোখের মতো স্পর্শকাতর ত্বকের মেকআপ তুলতেও এটি ব্যবহার করা যায়।
নখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ভঙ্গুরতা কমাতে জাদুকরি সমাধান পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি ব্যবহারে নখ সুস্থ থাকে।
যেখানে সুগন্ধি দেবেন, সেই জায়গায় আগে কিছুটা পেট্রোলিয়াম জেলি মালিশ করে নিন। এরপর সেখানে সুগন্ধি স্প্রে করুন। এতে দীর্ঘ সময় ত্বকে ঘ্রাণ স্থায়ী হবে।
অনেকের ভ্রু ঝরে পড়ে। এর ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে পেট্রোলিয়াম জেলি। রাতে ঘুমানোর আগে একটা আইব্রো ব্রাশে কিছুটা জেলি নিয়ে ভ্রু যুগলে লাগিয়ে নিন। ধীরে ধীরে ভ্রু ঘন হবে।

মেকআপের পূর্ণতায় এখন প্রায় সবাই হাইলাইটার ব্যবহার করেন। গালে এবং ভ্রুর নিচের ত্বকে কিছুটা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে সেটা হাইলাইটার হিসেবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
ত্বকে আঘাত পেলে বা ঘা হলে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটির ব্যবহারে ক্ষত দ্রুততম সময়ে শুকিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া এটি তেলতেলে হওয়ায় ত্বক আর্দ্র থাকে। তাই ক্ষত শুকিয়ে ফেটে যায় না।
সূত্র: ফেমিনা ও অন্যান্য

সারা বছর সবার ঘরে, ভ্যানিটি ব্যাগে এমনকি অফিসের ডেস্কে যে প্রসাধনী থাকে, তা হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি শুধু ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করে, তা-ই নয়, রূপচর্চায় আরও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
বাড়িতে মেকআপ রিমুভার না থাকলে পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে দারুণভাবে মেকআপ তোলার কাজটি সেরে নিতে পারেন। পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়ে পুরো মুখে ম্যাসাজ করুন। এরপর তুলা দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। চোখের মতো স্পর্শকাতর ত্বকের মেকআপ তুলতেও এটি ব্যবহার করা যায়।
নখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ভঙ্গুরতা কমাতে জাদুকরি সমাধান পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি ব্যবহারে নখ সুস্থ থাকে।
যেখানে সুগন্ধি দেবেন, সেই জায়গায় আগে কিছুটা পেট্রোলিয়াম জেলি মালিশ করে নিন। এরপর সেখানে সুগন্ধি স্প্রে করুন। এতে দীর্ঘ সময় ত্বকে ঘ্রাণ স্থায়ী হবে।
অনেকের ভ্রু ঝরে পড়ে। এর ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে পেট্রোলিয়াম জেলি। রাতে ঘুমানোর আগে একটা আইব্রো ব্রাশে কিছুটা জেলি নিয়ে ভ্রু যুগলে লাগিয়ে নিন। ধীরে ধীরে ভ্রু ঘন হবে।

মেকআপের পূর্ণতায় এখন প্রায় সবাই হাইলাইটার ব্যবহার করেন। গালে এবং ভ্রুর নিচের ত্বকে কিছুটা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে সেটা হাইলাইটার হিসেবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
ত্বকে আঘাত পেলে বা ঘা হলে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটির ব্যবহারে ক্ষত দ্রুততম সময়ে শুকিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া এটি তেলতেলে হওয়ায় ত্বক আর্দ্র থাকে। তাই ক্ষত শুকিয়ে ফেটে যায় না।
সূত্র: ফেমিনা ও অন্যান্য

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দি সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর
০৮ এপ্রিল ২০২২
বিজয় দিবসে লাল-সবুজের ফ্যাশন এখন দারুণ ট্রেন্ড। পতাকার এই রং ছড়িয়ে থাকে আমাদের মন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজগোজে। তবে হিম হিম শীতে কোন ধরনের লাল-সবুজ পোশাক বেছে নেবেন এবং এর সঙ্গে সাজ কেমন হবে, সেসব নিয়ে অনেকে আছেন দ্বিধায়। তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। দেখে নিতে পারেন এখানে।
৪ ঘণ্টা আগে
আজ আপনার পকেট হঠাৎ করে গরম হতে পারে। জ্যোতিষ বলছে, ‘হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।’ কিন্তু এই অর্থ হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার আশপাশে থাকা ‘নারী বন্ধু’ (বা পুরুষ বন্ধু, লিঙ্গভেদ নেই) আপনাকে কফি, বিরিয়ানি বা নতুন সিরিজের সাবস্ক্রিপশনের জন্য অনুরোধ করতে পারে।
৫ ঘণ্টা আগে
চাকরির কারণে প্রতিদিন বাইরে বের হতে হয়। শীতে ধুলোবালির পরিমাণ বেশি। পথের ধারে বিভিন্ন জিনিসপত্র পোড়ানোয় ধোঁয়ার গন্ধও হয়। সব মিলিয়ে চুলের তরতাজা ভাব নষ্ট হয়ে যায়। সে জন্য প্রতিদিন শ্য়াম্পু করি। যদিও তা চুলের জন্য ভালো নয়।
৫ ঘণ্টা আগে