Ajker Patrika

নীল জলের দ্বীপের দেশে

মুনতাসির মইন
আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২২, ১৮: ০৩
নীল জলের দ্বীপের দেশে

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দ্য সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর পাশে। হালকা থেকে গাঢ় হতে থাকল নীল। অদ্ভুত রং-বেরঙের নাম না জানা মাছ ছুটে বেড়াচ্ছে কোরাল বাগানে। চোখধাঁধানো রঙের সেই বাগান। কী সুন্দর, কী রহস্যময়! একসময় সাবমেরিন কোরাল রিফের শেষ প্রান্তে এসে পড়ল, তার নিচে গভীর খাদ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমাদের হলুদ সাবমেরিন কচুরিপানার মতো বিশাল সমুদ্রে ভাসতে লাগল। এভারেস্টের নিচে দাঁড়িয়ে যেমন গভীর শূন্যতা অনুভব করেছিলাম, এখানেও তা-ই হলো। গভীর ঘোর লেগে গেল। ছেলে ধাক্কা দিয়ে ঘোর ভাঙাল। ‘বাবা, এই মাছের নাম কী?’ আমি ফ্যালফ্যাল করে বললাম, ‘সি ফিশ!’ আজ আমাদের মালদ্বীপের দ্বিতীয় দিন। 

প্লেনের ককপিটে যখন ক্যাপ্টেন বললেন, ‘আমরা আর কিছুক্ষণের মধ্যে মালদ্বীপে ল্যান্ড করব’, তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে এক অপার্থিব সৌন্দর্য দেখলাম। গাঢ় নীল একটি আর্টিস্ট প্লেটের মধ্যে যেন আকাশি, ফিরোজা, সাদা আর সবুজের রঙের প্রলেপ। এ রকম ছোট-বড় হাজার হাজার রঙের প্রলেপ প্লেটজুড়ে। এগুলো একেকটা দ্বীপ। ঠিক যেন রঙের মালা। কিছু কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মালদ্বীপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘মালা দ্বীপ’ থেকে, যার অর্থ ফুলের মালার দ্বীপ। তবে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে এই দ্বীপকে বলা হয়েছে ‘লাক্ষাদ্বীপ’ বা শত হাজার দ্বীপ। তবে মালদ্বীপে হাজারের বেশি দ্বীপ থাকলেও ১ লাখ দ্বীপ নেই। বর্তমান মালদ্বীপে ১ হাজার ১৮৪টি দ্বীপ ও ২৮টি প্রাকৃতিক অ্যাটল আছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮৭টি দ্বীপ বসবাসের উপযোগী। 

আমাদের রিসোর্টটি ছিল এমনই এক দ্বীপে। রিসোর্টের নাম হার্ড রক হোটেল মালদ্বীপ। সাউথ মালে এটলে এটি অবস্থিত। এটল হচ্ছে দীর্ঘ বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীর। প্রবালপ্রাচীরের পার ঘেঁষে রিসোর্টগুলো গড়ে উঠেছে। মালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ২০ মিনিটে স্পিডবোটে করে রিসোর্টে পৌঁছানো যায়। 

মালদ্বীপের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টটা বেশ মজার। অন্য দেশের মতো নয়। অন্য যেকোনো দেশে আমরা এয়ারপোর্টে নেমে রাস্তা মাপি আর মালদ্বীপে মাপতে হয় সমুদ্র। এয়ারপোর্টে নেমেই বিশাল সমুদ্র। রিসোর্টে যেতে চাইলে উঠে পড়তে হয় স্পিডবোটে অথবা সি প্লেনে। আমাদের রিসোর্টের সদা হাস্যোজ্জ্বল ভুবন আমাদের রিসিভ করার জন্য এসেছিল। চমৎকার ইংরেজিতে বলল, ‘ওয়েলকাম টু দ্য হ্যাভেন।’ ছোট্ট এই লাইন জীবনতৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে তুলল। কী চমৎকার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি! প্লেনের চার ঘণ্টার বিরক্তিকর ভ্রমণ শেষে গাঢ় নীল সমুদ্র যেন ইফতারের শরবতের গ্লাস। নোনা বাতাসে ঝরঝরে লাগল শরীর, নোনা স্বাদও যেন পেল জিহ্বা। স্পিডবোট চলতে শুরু করল। 

ছেলের চোখে আনন্দ আর মেয়ের চোখে উৎকণ্ঠা। কারণ, ততক্ষণে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল আমাদের স্পিডবোটে। সেটি বাম্প করতে লাগল রোলার কোস্টারের মতো। ২০ মিনিট পর শান্ত হলো স্পিডবোট। আমরা ততক্ষণে গভীর সমুদ্র থেকে রিফে পৌঁছে গেছি। ধীরে ধীরে ল্যান্ডিং জেটি চোখে পড়ল। গাঢ় নীলের পর পান্না সবুজ পানি, তার ওপর সাদা দ্বীপ। জেটি সামনে আসতেই চোখে পড়ল, রিসোর্টের সাতজন স্টাফ হাত নেড়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। তাদের দলপতি স্বর্ণকেশী রাশিয়ান আলিশা। চমৎকার হেসে সম্ভাষণ জানাল আর বলল, ‘মইন ফ্যামিলিকে পেয়ে আমরা আনন্দিত।’ মনে হচ্ছিল কত দিনের চেনা। 

সমুদ্রে ঘেরা মালদ্বীপ। রিসেপশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো কাঙ্ক্ষিত ওয়াটার বাংলোতে। আমাদের বাংলোটি স্বচ্ছ নীল পানির ওপর দুই রুমের কুঁড়েঘর। একটি মাস্টার বেডরুম আর একটি ড্রেসিং রুম। মাস্টার বেডরুমের সঙ্গে লাগোয়া একটি টেরেস। টেরেসের এক পাশে আছে সিঁড়ি, যা দিয়ে সরাসরি রিফে নেমে পড়া যায়। আর টেরেসের আরেক পাশে মোটা সাদা দড়ি দিয়ে বানানো হয়েছে বিশাল ট্রাম্পোলিন এবং তার ঠিক নিচে সমুদ্র। বাচ্চারা লাফালাফি শুরু করল ট্রাম্পোলিনে। আমরাও যোগ দিলাম তাদের সঙ্গে। আহা সে কী আনন্দ! 

আসলে নামে কুঁড়েঘর হলেও আধুনিক বসবাসের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মেলে এই বাংলোগুলোতে। স্টার রেটিং ভেদে বাড়তে থাকে সুযোগ-সুবিধার পরিধি। কিন্তু কিছু ম্যাজিক স্টার রেটিং মানে না। এই ম্যাজিকের ম্যাজিশিয়ান হলো রিফের বাসিন্দা বেবি সার্ক, স্টিং রে, সি টার্টল আর অসংখ্য নাম না জানা রংবেরঙের মাছ। তারা ম্যাজিক দেখাতে হঠাৎ হঠাৎ চলে আসে বাংলোগুলোর ঠিক নিচে। ওপর থেকে বসে তাদের খেলাধুলা দেখতে বেশ লাগে। সহজ-স্বাভাবিকভাবে তারা ঘুরে বেড়ায় বাংলোর আশপাশে। যেন আমাদের মতো তারাও ঘুরতে এসেছে মালদ্বীপে। এ রকম মানুষের সঙ্গে প্রাণীদের সহাবস্থান দেখতে আমার বেশ লাগে। নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ তকমা লাগিয়ে অহংকার করা আমার মোটেও ভালো লাগে না। পুরো ইকোসিস্টেমে সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি থেকে ক্ষুদ্র মৌমাছিকে বাদ দিলে কয়েক বছরের মধ্যে বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে সবুজ পৃথিবী। তখন কী হবে চিন্তা করা যায়? 

আমরা মালদ্বীপে গিয়েছিলাম ৭ জানুয়ারি। তখন মাত্র ক্রিসমাস শেষ হয়েছে। কিন্তু রিসোর্টজুড়ে ছিল ক্রিসমাসের সাজসজ্জা আর আমেজ। গোলাপি আলোয় আলোকিত পুরো রিসোর্ট। সেদিনই ছিল তাদের ক্রিসমাস ডিনারের শেষ আয়োজন। সমুদ্রতটের সাদা বালুর ওপর বিছানো হয়েছে টেবিল। তার ওপর মোমবাতি। সাগরের মৃদুমন্দ হাওয়া তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্রাজিলিয়ান এক ব্যান্ড দল বাজিয়ে চলেছে ‘আভা মারিয়া’। করুণ আভা মারিয়া কেন যেন যিশুর লাস্ট সাপারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। জীবনের শেষ নৈশভোজে বসেছেন যিশু তাঁর বারোজন শিষ্য নিয়ে। ভীষণ শান্ত স্বরে যিশু বললেন, ‘কাল তোমাদের মধ্যেই একজন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, ধরিয়ে দেবে আমাকে।’ যিশুর মুখে এই কথা শুনে বারোজনের কারও মুখে ভয়, কারও আগ্রহ, কারও সন্দেহ, কারও মুখে কৌতূহল, করো মুখে ঘৃণা, কারও মুখে উদ্বেগ ফুটে উঠেছিল। কী অদ্ভুত! 

এ নিয়ে একটি বিখ্যাত চিত্র আছে লেওনার্দ দ্য ভিঞ্চির, নাম ‘দ্য লাস্ট সাপার’। আঁকা হয়েছিল মিলানের সান্তা মারিয়া দেল্লে গ্র্যাছে। একবার এই ছবি দেখতে গিয়েছিলাম; কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি পনেরো মিনিটের জন্য। গির্জায় ঢোকার শেষ সময় ছয়টা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। আমাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাতটা বেজে গিয়েছিল। সেই আফসোস আমার আজও গেল না! 

ক্রিসমাসের শেষ ডিনারের আয়োজনটা ছিল হুলুস্থুল রকমের। শুরুতেই এক গ্লাস শ্যাম্পেইন হাতে ধরিয়ে দিয়ে রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার অনিত বলল, ‘আজ ডায়েটের কথা ভুলে যাও। যা মন চায়, খাও।’ নাম না জানা অসংখ্য খাবারে পরিপূর্ণ ব্যুফে, কমলা আলাস্কান ক্র্যাব লেগ, খরগোশের নরম মাংসের ফ্রেঞ্চ টেরিন, সদ্য তোলা নীল রিফের ওয়েস্টার, চিজ হুইলে মাখানো গরম-গরম পাস্তা—আরও কত কী! অনিতের সঙ্গে খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল, মালদ্বীপের প্রথম দিকের জনবসতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তামিলরা, যারা প্রাচীন তামিলকাম থেকে এসেছিল। এই তামিলকামই বর্তমানে ভারতের তামিলনাড়ু। সেই সময় যেসব পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছিল, তারা সবাই রানিশাসিত এই রাজ্যের কথা উল্লেখ করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রাচীন সাহিত্য ‘মহাবংশ’-এ মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘মহিলাদ্বীপ’ বা নারীদের দ্বীপ। তার মানে বোঝা যায়, মাতৃতান্ত্রিক এক সমাজব্যবস্থা ছিল এই মালদ্বীপে। লুইস মরগানের একটি চমৎকার বই আছে, নাম ‘অ্যানশায়েন্ট সোসাইটি’। সেখানে লেখকের দাবি, আদিমকালে সব গোষ্ঠী নাকি ছিল মাতৃতান্ত্রিক। কী মজার একটা ব্যাপার, মায়েদের চোখরাঙানি খেয়ে বাবারা চুপ করে বসে থাকত! এরপর সম্রাট অশোকের সময় বুদ্ধ ভিক্ষুরা গিয়ে মালদ্বীপে বসবাস শুরু করেন। তখনই বৌদ্ধধর্ম প্রসার পায়। এখনো তার প্রচুর নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক দ্বীপে। বারো শতকের দিকে মুসলিম বণিকেরা ব্যবসা করতে ভারত সাগরে এসে ঘাঁটি গাড়ে মালদ্বীপে। শুরু হয় দীর্ঘ ইসলামি যুগের। 

প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘লাক্ষাদ্বীপ’বা শত হাজার দ্বীপ।

গল্প শেষে বিদায় নিয়ে চলে এলাম স্বপ্নের সেই কুটিরে। বাচ্চারা কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাদের বিছানায় রেখে আমরা শুয়ে রইলাম নেটের তৈরি টেরেসের সেই ট্রাম্পোলিনে। আকাশে তখন অনন্ত নক্ষত্রবীথি। তারায় পরিপূর্ণ আকাশ। এমন আকাশের দিকে তাকিয়ে অনন্ত জীবন বেঁচে থাকার লোভ জাগে। তখন ঠিক বারোটা। ঠিক সেই মুহূর্তেই আমাদের বিয়ের বারো বছর পূর্ণ হলো। 

সকালে ঘুম ভাঙল মৃদু ঠকঠক শব্দে। উঠে দেখি ঘরে বেড়াতে এসেছে দুটো সাদা ড্রিল। ড্রিল হচ্ছে ছোট সাদা শামুক। হাঁটার সময় টালির সঙ্গে শক্ত খোলসের ঠক্করে শব্দ হচ্ছিল ঠকঠক। কিছুক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে শামুকদের সঙ্গে খেলে বললাম তাদের রিফে ফিরিয়ে দিতে। মালদ্বীপসহ প্রাচীন পৃথিবীর বেশ কিছু অঞ্চলের মুদ্রা ছিল একধরনের শামুক, যা আমরা কড়ি নামে চিনি। ১৩৪৪ সালে ইবনে বতুতা মালদ্বীপে এসে দেখেছিলেন, প্রতিবছর মালদ্বীপ ৪০ জাহাজ কড়ি রপ্তানি করত। প্রশ্ন জাগে, কেমন ছিল সেই কড়ির আর্থিক মান? তখন ৪ লাখ কড়ি দিয়ে একটি সোনার দিনার পাওয়া যেত। 

এবার রিফে নামার পালা। রুমের সামনে টেরেসের সিঁড়ি দিয়ে নেমে পড়লাম স্বচ্ছ পানিতে। পানির তাপমাত্রা চমৎকার আরামদায়ক। কোমর পর্যন্ত পানিতে অনায়াসে হাঁটা যায় অনেক দূর পর্যন্ত। লাইফ জ্যাকেট পরে নিলাম। নরম বালিতে কিছুক্ষণ হাঁটার পর শরীর ভাসিয়ে দিলাম পানিতে। সাদা বালির ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য কোরাল। তার মাঝে মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট রংবেরঙের মাছ। হাত দিয়ে ধরতে গেলে তারা দৌড়ে পালায়। ততক্ষণে ছেলে কোরাল সংগ্রহে নেমে পড়েছে। রংবেরঙের কোরাল সংগ্রহ করে পকেটে পুরে রাখছে। ছেলে শুনে অবাক হলো, এই কোরলগুলোরও একসময় প্রাণ ছিল। পরে বুড়ো হয়ে মরে গিয়ে তারা জমতে শুরু করে সাগরের তলদেশে। মরে যাওয়ার পর তাদের দেহের চারপাশে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের একটি পাথুরে স্তর তৈরি হয়। সেটাকেই আমরা প্রবাল বলি। এই প্রবালগুলো এভাবে লাখ লাখ বছর জমে একেকটি পাথরের আকৃতি নেয়। আর কোটি কোটি বছর জমে একটি দ্বীপ সৃষ্টি করে। কী অদ্ভুত প্রকৃতির খেয়াল! 

ওয়াটার বাংলো, হার্ড রক রিসোর্ট

ছেলেকে বললাম, ‘কোটি কোটি বছর পুরোনো এই পাথরবাগান কোনোভাবেই নষ্ট করা উচিত নয়। এরা খুবই দুর্লভ। পৃথিবীতে অল্প কিছু আছে, যার মধ্যে একটি আছে আমাদের দেশে। যাকে আমরা সেন্ট মার্টিন বলে জানি।’ সেন্ট মার্টিনের কথা বলতে বলতে মন খারাপ হয়ে গেল। দেশে এত সুন্দর একটা দ্বীপ আছে, যাকে ইচ্ছে করলেই এমন মালদ্বীপের মতো করা যেত। কিন্তু আমরা চরম অবহেলায় ফেলে রেখেছি। গুনগুন করে গাইতে লাগলাম—

জনম গেল বৃথা কাজে
আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে
তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে, শক্তিদাতা
ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা। 

রিফে সাঁতার কাটতে কাটতে আমরা সাবমেরিনের প্রোগ্রাম করলাম। রিসোর্টে একটি ছোট সাবমেরিন আছে। সেটা ঠিক সাবমেরিন নয়। সাবমেরিন আকৃতির নৌকা বলা যায়। নিচের দিকে ফাঁকা একটি জায়গায় ছয়-সাতজন বসতে পারে, চারদিক স্বচ্ছ জানালা দিয়ে ঘেরা। রিফের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে এই সাবমেরিনের জুড়ি নেই। স্নোরকেলিং করে অল্প একটু জায়গা ঘুরে দেখা যেতে পারে। ভালো ডাইভিংয়ের জন্য দরকার ট্রেনিং। এই দুটোর মাঝে সাবমেরিনে ভ্রমণ ভালো সুযোগ হতে পারে। সাবমেরিনের বর্ণনা প্রথমেই একটু বলেছিলাম। কিন্তু তার সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশের শব্দ আমার অভিধানে নেই। 

আমাদের রিসোর্টে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট পনেরোটি রেস্টুরেন্ট ছিল। তার মধ্যে কিছু ইন্টারন্যাশনাল চেইন রেস্টুরেন্ট। মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব তেমনি এক রেস্টুরেন্ট। আজ ডিনারের জন্য আমরা সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। এই মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব এশিয়ার ছয়টি দেশে তাদের রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছে। ওয়ার্ল্ডস ফিফটি বেস্ট রেস্টুরেন্টের তালিকায় তাদের অবস্থান পঁচিশ। বড় বড় কাঁকড়াই তাদের প্রধান আকর্ষণ। তাদের প্রধান নীতি হলো, তারা হিমায়িত খাবার পরিবেশন করে না। এ জন্য তাদের বিশাল ঝামেলা পোহাতে হয়। মালদ্বীপের এই রেস্টুরেন্টে তাদের কাঁকড়াগুলো আসে প্রাইভেট প্লেনে করে, শ্রীলঙ্কা থেকে। তারপর তাদের বসবাস উপযোগী একটি চৌবাচ্চায় জ্যান্ত সংরক্ষণ করা হয় প্লেটে পরিবেশন করার আগ পর্যন্ত। ক্রেতাদের চাহিদামতো জ্যান্ত কাঁকড়া নিয়ে আসা হয় তার আকৃতি ঠিক আছে কি না, দেখানোর জন্য। এখানে প্রায় দশ আকারের কাঁকড়া পাওয়া যায়। ছোটটা আধা কেজি আর বড়টা দুই কেজি ওজনের। তারা প্রায় পাঁচ রকমভাবে কাঁকড়া রান্না করতে পারে। এর মধ্যে পিপার ক্র্যাব অসম্ভব জনপ্রিয়। 

আমরা পিপার ক্র্যাব অর্ডার করেছিলাম, সঙ্গে ছিল ক্র্যাব লিভার পাটে, এপেটাইজারে। ছোট্ট একটি বিস্কুটের ওপর এই ক্র্যাব লিভার পেস্ট জেলির মতো লাগিয়ে তার ওপরে ম্যাপেল সিরাপ দিয়ে কুট্টুস করে কামড় দিয়ে খেতে হয়। দুই কেজির বিশাল পিপার ক্র্যাব খাবার জন্য ঘাম ঝরানো জরুরি। রীতিমতো ছেনি-বাটাল নিয়ে ভাঙতে হয় ক্র্যাবের শক্ত খোল। তারপর বের হয় কাঙ্ক্ষিত সাদা মাংস। পিপার সসে ডুবিয়ে সেই মাংস মুখে পুরে অনায়াসে ভুলে যাওয়া যায় জগৎ-সংসার। ডেজার্টে ছিল নারকেলের খোলে তৈরি ফ্রেঞ্চ ক্রিম ব্রুলে। এবার ঘুম। 

টেরেসের আরেক পাশে মোটা সাদা দড়ি দিয়ে বানানো হয়েছে বিশাল ট্রাম্পোলিন এবং তার ঠিক নিচে সমুদ্র

আজ ঘুম ভাঙল বৃষ্টির শব্দে। সে কী বৃষ্টি! গতকালের ভেজা কাপড়গুলো শুকাতে দেওয়া হয়েছিল টেরেসে। সেগুলো আবার ভিজে গেল। রুমের দরজা খুলে টেরেসে গিয়ে নতুন রঙের আভা দেখলাম। সবুজ সমুদ্র আরও সবুজ দেখা যাচ্ছে আর ওপরে কালো আকাশ। সে অপরূপ ব্যাপার! সমুদ্র ভয়ংকর হতে লাগল। বাড়তে লাগল বৃষ্টির তেজ। মালদ্বীপের বৃষ্টি নাকি ভয়ংকর—একবার শুরু হলে এক সপ্তাহ। মন খারাপ হয়ে গেল। আরও দুই দিন যে থাকতে হবে! কিন্তু কিছুক্ষণ পরই মেঘ কেটে গিয়ে চমৎকার এক সূর্যের দেখা পেলাম। পুরো পরিবার নিয়ে রিফে নেমে গেলাম। গতকাল নাকি এক বিশাল মান্তা রে ঢুকেছে রিফে। 

এই প্রাণীটা বেশ মজার। এরা নাকি তেইশ ফুট পর্যন্ত চওড়া হতে পারে! অদ্ভুত দর্শনের জন্য এদের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে ভীষণ ভয় পেত। প্রাচীনকালে নাবিকেরা বিশ্বাস করতেন যে, তারা মানুষের জন্য বিপজ্জনক এবং নোঙরে টান দিয়ে নৌকা ডোবাতে পারে। পরে যখন ডাইভিং জনপ্রিয় হয়, তখন মানুষ বুঝতে শেখে, এরা নিরীহ গোছের প্রাণী আর শুরু করে তাদের ওপর অত্যাচার। তাদের ফুলকা চায়নিজ ওষুধের এক দুর্মূল্য উপাদান। এই ফুলকার জন্য হাজার হাজার মান্তা রে প্রতি বছর মারা হয়। সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় গত বছরই তাদের বিপদাপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। 

দুপুরে যখন আমরা পানি থেকে উঠে খাবার খাচ্ছিলাম, তখনই দেখা মিলল সেই বিশাল কালো মান্তা রের। প্রবল দাপটে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে রিফে। মাছেদের খেলা দেখতে দেখতে বিকেল নামল। বেগুনি হয়ে উঠল আকাশ। রিফের সেই আকাশি পানি তখনো আকাশি। তবে কিছুটা কালচে। চমৎকার বেগুনি আকাশের নিচে কালচে আকাশি সমুদ্র ঠিক যেন মনভোলা এক চিত্রকরের হাতে আঁকা ছবি। প্রকৃতির এমন রূপ দেখে যেকোনো শিল্পীর মনে হতে বাধ্য, এখানে বাকি জীবন কাটালে মন্দ হতো না। সারা দিন শুধু ছবি আঁকব, ফিরব না আর যান্ত্রিক নগরে। সত্যি সত্যি এমন পাগলামি কিন্তু একজন করেছিলেন—তাঁর নাম পল গগাঁ। ফরাসি এই শিল্পী তাহিতি নামের এক দ্বীপে গিয়ে তার প্রেমে পড়ে যান। তারপর সবকিছু ছেড়েছুড়ে আমৃত্যু বসবাস করতে থাকেন সেই দ্বীপে। 

মালদ্বীপের এই তটে বসে গগাঁর মনের অবস্থা টের পাচ্ছিলাম। এই ক্ষুদ্র জীবনে খুব বেশি কিছু কি দরকার? তবু ফিরে যেতে হবে কাল। মন খারাপ হয়ে গেল। আকাশে তখন তারা ফুটে উঠছে। বেগুনি থেকে গাঢ় নীল হচ্ছে পৃথিবী। 

পৃথিবী এত সুন্দর কেন?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানের ‘অলিখিত নিয়ম’—যেগুলো না জানলে বিব্রত হতে পারেন পর্যটকেরা

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪২
জাপানের ‘অলিখিত নিয়ম’—যেগুলো না জানলে বিব্রত হতে পারেন পর্যটকেরা

নীরবতা পালন, সময়ের আগে পৌঁছানো এবং নিজের আবর্জনা নিজে বহন করা—এগুলো জাপানের এমন কিছু সামাজিক শিষ্টাচার, যা অনেক বিদেশি পর্যটক অজান্তেই ভঙ্গ করে বসেন।

জাপানি সমাজে ‘হারিয়ো’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা রয়েছে। এই সংস্কৃতিতে মানুষ সব সময় আশপাশের পরিবেশ ও অন্যের অনুভূতির প্রতি সচেতন; যাতে সামাজিক সৌহার্দ্য বজায় থাকে। তবে এই অলিখিত নিয়মগুলো বিদেশিদের জন্য অনেক সময় বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।

২০২৫ সালে মার্কিন ভ্রমণবিষয়ক ম্যাগাজিন কঁদে নাস্ত ট্রাভেলারের পাঠক জরিপে জাপান ‘বিশ্বের সেরা দেশ’ নির্বাচিত হওয়ার পর টোকিওতে বসবাসরত খাদ্য ও ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ টোকিও হালফি পর্যটকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আচরণগত পরামর্শ তুলে ধরেন।

নির্ধারিত সময়ের আগে পৌঁছানো

জাপানে সময়নিষ্ঠা শুধু ভদ্রতা নয়, এটি দায়িত্ববোধ। এখানে ‘ঠিক সময়ে পৌঁছানো’ বলতে বোঝায় ৫-১০ মিনিট আগে উপস্থিত হওয়া; বিশেষ করে রেস্তোরাঁয় বুকিং থাকলে। দেরি করাকে এখানে খুবই অসম্মানজনক হিসেবে দেখা হয়। তাই যাতায়াতের সময় সব ধরনের বিলম্বের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা জরুরি।

নীরব থাকা শিষ্টাচার

জাপানিরা শান্ত পরিবেশকে খুব গুরুত্ব দেন। ট্রেন, বাস, রেস্তোরাঁ বা যেকোনো পাবলিক স্থানে উচ্চ স্বরে কথা বলা উচিত নয়। ধীর ও শান্ত কণ্ঠে কথা বলাকে অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে ধরা হয়।

‘মোত্তাইনাই’ সংস্কৃতি বুঝুন

‘মোত্তাইনাই’ মানে অপচয় না করা। খাবার, সময় বা পরিশ্রম—কোনো কিছুই যেন নষ্ট না হয়। সেটাই এই দর্শনের মূল কথা। খাবারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্ডার না করা, প্রতিটি খাবারের পেছনের শ্রম ও উপাদানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। এসবই এই সংস্কৃতির অংশ।

খাবারের টেবিলে শালীনতা

জাপানে খাওয়া শুধু দৈনন্দিন কাজ নয়, এটি সাংস্কৃতিক আচারের অংশ। তাই কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি—

  • খাবারের ছবি তোলার আগে শেফের অনুমতি নিন
  • মোবাইল বা ক্যামেরা সরাসরি টেবিল বা কাউন্টারে রাখবেন না
  • হাতব্যাগ টেবিলের ওপর রাখা অশোভন, অধিকাংশ রেস্তোরাঁয় ব্যাগ রাখার আলাদা ব্যবস্থা থাকে
  • ছবি তুললে দ্রুত তুলুন, খাবার ঠান্ডা হলে শেফ অসম্মানিত বোধ করতে পারেন
  • পানীয়তে ‘চিয়ার্স’ করার সময় গ্লাসে গ্লাস ঠোকাবেন না
  • তীব্র সুগন্ধিযুক্ত পারফিউম বা হ্যান্ডক্রিম ব্যবহার এড়িয়ে চলুন

গণপরিবহনে শিষ্টাচার

জাপানের গণপরিবহনে চলাচল করার সময় নীরবতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ফোন সাইলেন্ট রাখতে হয়, উচ্চ স্বরে কথা বলা অনুচিত। সাধারণ ট্রেন বা বাসে খাবার খাওয়া নিষেধ। লাইনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে জাপানিরা খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ। আগে নামা যাত্রীদের নামতে দেওয়া হয়। এসকেলেটরেও নিয়ম আছে, টোকিওতে বাঁ পাশে দাঁড়ানো হয়, ওসাকায় ডান পাশে। স্থানীয়দের দেখে অনুসরণ করাই সবচেয়ে ভালো।

আবর্জনা নিজের দায়িত্ব

জাপানের রাস্তাঘাট পরিষ্কার হলেও সেখানে ডাস্টবিন খুব কম দেখা যায়। মানুষ সাধারণত নিজের আবর্জনা ব্যাগে রেখে দেয় এবং নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে আলাদা ভাগে (প্লাস্টিক, কাগজ, ধাতু ইত্যাদি) ফেলে।

ব্যক্তিগত পরিসরের প্রতি সম্মান

জাপানিরা ব্যক্তিগত পরিসরকে খুব গুরুত্ব দেন। অপরিচিত কাউকে জড়িয়ে ধরা বা স্পর্শ করা অস্বস্তিকর হতে পারে। করমর্দনের বদলে হালকা নত হয়ে অভিবাদন জানানোই প্রচলিত। প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠ আচরণও সাধারণত গ্রহণযোগ্য নয়।

ট্রাফিক আইন মানা

খালি রাস্তা হলেও জাপানিরা সবুজসংকেত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। নিয়ম মেনে চলাই এখানে সামাজিক দায়িত্বের অংশ। পর্যটকদেরও সেটি অনুসরণ করা উচিত।

কথার আড়ালের অর্থ বোঝা জরুরি

জাপানিরা সাধারণত সরাসরি ‘না’ বলেন না। ‘কঠিন হবে’ বা ‘পরে দেখা যাবে’—এ ধরনের কথার আড়ালে ভদ্রভাবে প্রত্যাখ্যান লুকিয়ে থাকতে পারে। এখানে ‘হোননে’ (মনের কথা) ও ‘তাতেমায়ে’ (সামাজিক মুখোশ) এই দুই ধারণা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সংঘাত এড়িয়ে সামাজিক সামঞ্জস্য বজায় রাখাই মুখ্য।

সূত্র: সিএন ট্রাভেলার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নতুন বছরে চুলের ছাঁটে বদল আনতে চাচ্ছেন? এই হেয়ারকাটগুলো বিবেচনায় রাখতে পারেন

ফারিয়া রহমান খান 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩০
চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস পলিশ ইয়ার’; যেখানে কৃত্রিমতার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিগত রুচি বেশি প্রাধান্য পাবে। ছবি: পেক্সেলস
চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস পলিশ ইয়ার’; যেখানে কৃত্রিমতার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিগত রুচি বেশি প্রাধান্য পাবে। ছবি: পেক্সেলস

২০২৬ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ড কী হতে চলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনাকল্পনা; বিশেষ করে চুলের জন্য কী হতে চলেছে ট্রেন্ডি, তা নিয়ে ফ্যাশন-সচেতনদের আগ্রহের যেন শেষ নেই। কানাঘুষা চলছে, চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস পলিশ ইয়ার’; যেখানে কৃত্রিমতার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিগত রুচি বেশি প্রাধান্য পাবে। তবে বছরের শুরুতে যাঁরা নতুন হেয়ারকাট নিয়ে সবার সামনে হাজির হতে চাইছেন, তাঁরা অপেক্ষা না করে এই হেয়ারকাটগুলোর যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন।

গ্র্যাজুয়েট বব

গতানুগতিক বব কাটের চিরচেনা রূপ ছাপিয়ে ২০২৬ সালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকতে পারে ‘গ্র্যাজুয়েট বব’। এতে পেছনের দিকের চুলগুলো কিছুটা ছোট ও সূক্ষ্ম টেক্সচারযুক্ত থাকে এবং সামনের দিকের চুলগুলো ক্রমান্বয়ে কিছুটা লম্বা হয়ে আসে। মানে, দুই কানের পাশের চুলগুলো মাথার পেছনের অংশের চুলের তুলনায় পয়েন্ট আকারে লম্বা হয়ে নামে। এই কাট চুলে চমৎকার ভলিউম যোগ করে। যাঁরা ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে—উভয় ক্ষেত্রে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী, স্মার্ট এবং একই সঙ্গে বেশ পরিপাটি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান, তাঁদের জন্য এই কাট হবে সেরা পছন্দ।

ডিসকানেক্টেড ফ্রিঞ্জ

যাঁরা একটু বোল্ড ও ব্যতিক্রম লুকে নিজেকে দেখতে চান, তাঁদের জন্য এই ডিসকানেক্টেড ফ্রিঞ্জ লুক। এই হেয়ারস্টাইলের মূল বিশেষত্ব হলো কপালের সামনের ছোট করে ছাঁটা চুলগুলো; যা বাকি চুলের সঙ্গে মিশে না গিয়ে কিছুটা আলাদা বা ‘ডিসকানেক্টেড’ অবস্থায় থাকে। এটি আপনার চেহারায় একটি আত্মবিশ্বাসী ও বোল্ড লুক নিয়ে আসবে।

সাইড ফ্রিঞ্জ

কোমল আর মায়াবী একটি লুকের জন্য সাইড ফ্রিঞ্জের আবেদন চিরন্তন। চুলের দৈর্ঘ্য যেমনই হোক, এক পাশে আলতো করে ঝুলে থাকা এই চুলগুলো চেহারায় একটি চমৎকার ‘ফেস-ফ্রেমিং’ ইফেক্ট তৈরি করে, যা মুখের গড়নকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। যাঁরা চুলে খুব বেশি কাটছাঁট না করে পরিবর্তন আনতে চান, এই স্টাইল তাঁদের জন্য।

প্রতিবছর বিভিন্ন হেয়ারকাট ট্রেন্ডে আসে। তবে ট্রেন্ডে থাকলে কিংবা ভালো লাগলেই যেকোনো হেয়ারকাট দেওয়াটা উচিত নয়। মুখের গড়ন ও চুলের ধরন বুঝে হেয়ারকাট বেছে নিতে হবে। না হলে পুরো লুকটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী

স্ক্যাল্পটেড কার্লস

যাঁদের চুল প্রাকৃতিকভাবেই কোঁকড়া, তাঁদের জন্য সুসংবাদ। আগামী বছরের ফ্যাশনে কৃত্রিমভাবে চুল সোজা করার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক টেক্সচার বা গঠনই বেশি গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট শেপ বা আকৃতিতে সাজানো এই ‘স্ক্যাল্পচারাল কার্লস’ আপনার পুরো লুকে যোগ করবে অনন্য এক মাত্রা। এটি চুলের স্বাভাবিক ভলিউম বজায় রেখে চুলে আনে প্রাণবন্ত ভাব। যাঁরা নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে একটু ভালোভাবে তুলে ধরতে চান, তাঁদের জন্য এই স্টাইল হবে আগামী বছরের সেরা পছন্দ।

যাঁরা ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে—উভয় ক্ষেত্রে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী, স্মার্ট এবং একই সঙ্গে বেশ পরিপাটি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান, তাঁদের জন্য গ্র‍্যাজুয়েট বব কাট হবে সেরা পছন্দ। ছবি: পেক্সেলস
যাঁরা ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে—উভয় ক্ষেত্রে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী, স্মার্ট এবং একই সঙ্গে বেশ পরিপাটি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান, তাঁদের জন্য গ্র‍্যাজুয়েট বব কাট হবে সেরা পছন্দ। ছবি: পেক্সেলস

সফট কার্ভ বব

হলিউডের পুরোনো সিনেমা দেখতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁরা বেছে নিতে পারেন এই হেয়ারকাট। ঘাড় পর্যন্ত কাটা চুলের আগার অংশ সামান্য কার্ভ করা থাকে এই হেয়ারস্টাইলে। শুধু এক পাশে সিঁথি কেটে পরিপাটি করে আঁচড়ে নিলেই চুল নিয়ে আর কোনো ভাবনা নেই।

যাঁরা নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে একটু ভালোভাবে তুলে ধরতে চান, তাঁদের জন্য স্ক্যাল্পটেড কার্লস স্টাইল হবে আগামী বছরের সেরা পছন্দ।
যাঁরা নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে একটু ভালোভাবে তুলে ধরতে চান, তাঁদের জন্য স্ক্যাল্পটেড কার্লস স্টাইল হবে আগামী বছরের সেরা পছন্দ।

চুলে প্রাধান্য পাবে চকচকে রঙ

চুলের রঙের ক্ষেত্রে আগামী বছর রাজত্ব করতে চলেছে গাঢ় বাদামি বা ল্যাভিস ব্রুনেট শেডের নানা বৈচিত্র্য। ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষ করে কফি মোকা বা এসপ্রেসোর মতো উজ্জ্বল ও চকচকে রংগুলো ফ্যাশন-সচেতনদের পছন্দের শীর্ষে থাকবে। এই শেডগুলোর বিশেষত্ব হলো এদের অসাধারণ উজ্জ্বলতা ও গ্লসি ফিনিশ, যা চুলে একটি প্রাকৃতিক কিন্তু অত্যন্ত ‘লাক্সারিয়াস’ বা বিলাসবহুল ভাব ফুটিয়ে তোলে। সেই সঙ্গে এই রংগুলো বাংলাদেশি স্কিন টোনগুলোর সঙ্গে খুব ভালো মানায় এবং চুলে একটা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভাব আনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: অন্যের নামে সঙ্গীকে ডেকে হুলুস্থুল বাধাবেন, হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১০
আজকের রাশিফল: অন্যের নামে সঙ্গীকে ডেকে হুলুস্থুল বাধাবেন, হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা

মেষ

আজ আপনার আত্মবিশ্বাস বুর্জ খলিফার সমান উঁচুতে থাকবে। অফিসে বসের সামনে এমন ভাব করবেন যেন পুরো কোম্পানি আপনার বুদ্ধিতেই চলছে, অথচ আপনি হয়তো ই-মেইল পাসওয়ার্ডটাই মনে করতে পারছেন না। বসের মুড আজ খিটখিটে হতে পারে, তাই অতিরিক্ত ক্রেডিট নিতে গিয়ে আবার অতিরিক্ত কাজ ঘাড়ে চাপিয়ে নেবেন না। কাজের ভান করাটাও একটা শিল্প, আজ সেটা রপ্ত করুন। রাস্তায় হাঁটার সময় ফোনের দিকে নয়, রাস্তার গর্তের দিকে তাকান।

বৃষ

আজ আপনার ‘রাজযোগ’ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা, তবে শর্ত হলো—বিছানা ছাড়তে হবে। আলস্য আজ আপনার প্রধান শত্রু। পুরোনো কোনো বন্ধুর হঠাৎ উদয় হতে পারে এবং ৯৯ পারসেন্ট সম্ভাবনা সে আপনার কাছে টাকা ধার চাইবে। টাকা দেওয়ার আগে আয়না দেখে ‘না’ বলার প্র্যাকটিস করে নিন। খাবার দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে মনে রাখবেন পকেট আপনারই। কাচ্চি বিরিয়ানির বদলে মৌসুমি সবজি খেয়ে পেটকে একটু শান্তি দিন।

মিথুন

আজ আপনার মুখে খই ফুটবে। যুক্তি দিয়ে বাড়ির লোকেদের এমনকি দেয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারকেও হার মানিয়ে দেবেন। কর্মক্ষেত্রে আপনার কথা শোনার চেয়ে সবাই আপনার টাইপিং মিসটেক ধরায় বেশি উৎসাহ দেখাবে। প্রেমজীবনে সামান্য ঝগড়ার যোগ আছে। কারণ, আপনি হয়তো সঙ্গীর নাম ভুল করে অন্য কারোর নামে ডেকে ফেলতে পারেন! কথা কম বলে কান খোলা রাখুন। ফোনের রিচার্জ শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় সব ঝগড়া মিটিয়ে নিন।

কর্কট

হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির যোগ আছে—হতে পারে আলমারির পুরোনো কোটের পকেটে বা ধোয়া প্যান্টের ভেতর থেকে একটা কড়কড়ে নোট পেয়ে যাবেন! ব্যবসায়ীদের জন্য দিনটি ভালো, তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মাথা খাটান, মন নয়। বাড়িতে হুটহাট অতিথির আগমনে পকেটে টান পড়তে পারে এবং প্রিয় খাবারটি তাদের পাতে চলে যেতে পারে। হাসিমুখে অতিথি বিদায় করাটাই আজকের প্রধান কাজ। মিষ্টি খাওয়ার আগে আপনার সুগার এবং প্যান্টের কোমরের মাপের কথা ভাবুন।

সিংহ

আজ নিজেকে বনের রাজা ভাবলেও বাড়িতে এসে দেখবেন আপনি বড়জোর ‘বিড়াল’। বাড়ির লোকের কাছে অকারণ ঝাড়ি খাওয়ার যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রে গাধার মতো পরিশ্রম করলেও ক্রেডিট নেওয়ার সময় দেখবেন অন্য কেউ ফিতা কাটছে। তবে বিকেলের দিকে প্রেমের ক্ষেত্রে কোনো চমক অপেক্ষা করছে—হয়তো কোনো ব্লক হওয়া আইডি থেকে আনব্লক হতে পারেন! গর্জন না করে বিড়ালের মতো মিউ মিউ করলে আজ শান্তি পাবেন। আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে বেশিক্ষণ হাসবেন না, লোকে পাগল ভাবতে পারে।

কন্যা

আজ আপনার সবকিছুতেই ‘পারফেকশন’ চাই। চায়ের কাপে এক ফোঁটা দাগ বা কার্পেটের এক কোণে সামান্য ধুলা দেখলে আপনার বিপি বেড়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতের চিন্তায় মগ্ন থেকে ডাল পুড়িয়ে ফেলার রেকর্ড আজ আপনি গড়তে পারেন। সমালোচনা করার স্বভাবটা আজ একটু কমানোর চেষ্টা করুন। ভুল ধরা বন্ধ করে নিজের ভুলগুলো একবার গুনুন। লজিক দিয়ে কথা বলুন, ম্যাজিক বা অতিপ্রাকৃত কিছু আশা করবেন না।

তুলা

আজ আপনার ভেতরকার ‘শপার’ বা ক্রেতা সত্তাটি জেগে উঠবে। পকেটে টাকা থাকুক বা না থাকুক, অনলাইন শপিং অ্যাপে উইশলিস্ট ভরিয়ে দেবেন। দামি জিনিস কিনতে গিয়ে সস্তা নকল জিনিস কিনে ঠকার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ। স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে মান-অভিমান চললে আজ একটা ডার্ক চকলেট দিয়েই সব মিটিয়ে নিতে পারেন। পকেটের ওজন বুঝেই পা ফেলুন, ক্রেডিট কার্ড আজ আপনার শত্রু। শপিং মলে ঢোকার আগে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিন।

বৃশ্চিক

আজ আপনার মধ্যে ফেলুদা বা শার্লক হোমস জেগে উঠবে। কে কার সঙ্গে চ্যাট করছে আর কার স্ট্যাটাস হাইড করা—সব খবর আজ রাখতে চাইবেন। গোপন শত্রুরা পেছনে কাঠি করার চেষ্টা করবে, কিন্তু আপনিও তো কম যান না! আজ পাল্টা হুল ফোটানোর জন্য আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। গোয়েন্দাগিরি ব্যক্তিগত জীবনে না করে কাজে লাগান। অন্যের ফোনে উঁকি মারা স্বাস্থ্যের জন্য (বিশেষ করে ঘাড়ের জন্য) ক্ষতিকর।

ধনু

বাবার সঙ্গে দীর্ঘদিনের আর্থিক বা সম্পত্তি-সংক্রান্ত ঝামেলা আজ এক কাপ চায়ের আড্ডায় মিটে যেতে পারে। বিকেলের দিকে আকাশকুসুম কল্পনা করবেন—গাড়ি কেনা বা বিদেশে সেটল হওয়া নিয়ে (ব্যাংকে ৫০০ টাকা ব্যালেন্স থাকলেও)। তবে জীবনসঙ্গীর আবদার মেটাতে গিয়ে আজ হাঁসফাঁস অবস্থা হতে পারে। স্বপ্ন দেখুন, কিন্তু বাস্তবের মাটিটা শক্ত করে ধরুন। বন্ধুদের পার্টি দেওয়ার চক্করে মাসের বাজেট শেষ করবেন না।

মকর

অফিসে কাজের চাপে আজ আপনার অবস্থা হতে পারে ‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন’ দেখার মতো। বসের ই-মেইল দেখলে মনে হতে পারে হিমালয়ে চলে যাই, কিন্তু পরক্ষণেই স্যালারির মেসেজটার কথা ভেবে কাজে মন দেবেন। আজ সহকর্মীদের সঙ্গে রাজনীতির বদলে কাজের আলোচনা করাই শ্রেয়। ধৈর্যই আজ আপনার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। অফিসের ফ্রি চা-কফি বেশি খাবেন না, অ্যাসিডিটি হতে পারে।

কুম্ভ

আজ ভীষণ সমাজসেবী ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন। বাড়ির ঝুল ঝাড়া থেকে শুরু করে পাড়ার মোড়ে আড্ডা দেওয়া—সবতেই আপনার সক্রিয় উপস্থিতি। পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে নস্টালজিয়ায় ভুগবেন। শেয়ার বাজারে টাকা থাকলে আজ একটু নজর রাখুন, গ্রাফ আপনার দিকে ঘুরতেও পারে। দায়িত্ব পালন করুন কিন্তু সেটা যেন লোকদেখানো না হয়। আলস্য ত্যাগ করুন, তবে কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাবেন না।

মীন

যাঁরা সিঙ্গেল আছেন, আজ তাঁদের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসার শুভ যোগ আছে। আর যাঁরা বিবাহিত, তাঁরা সঙ্গীর সঙ্গে কোনো পুরোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঝগড়া মিটিয়ে নিন। ব্যবসায় অংশীদারের সঙ্গে আজ সামান্য কারণে কথা-কাটাকাটি হতে পারে, তাই মুখে কুলুপ আঁটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কল্পনা আর বাস্তবের মাঝে একটা সীমারেখা টানুন। মাছের মতো শুধু পানি না খেয়ে মাঝে মাঝে লেবু-জলও খান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০২৫ সালের বিয়ের সাজে যা কিছু এল এবং গেল

ফারিয়া রহমান খান 
মডেল: সাবরিন ইসলাম। ছবি: অরুণ কুমার সিংহ
মডেল: সাবরিন ইসলাম। ছবি: অরুণ কুমার সিংহ

ডিসেম্বর মানেই বিয়ের মৌসুম। আর বিয়ে মানেই সাজগোজ। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার এই মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে বর-কনে বিয়ের সাজ নিয়ে কতই-না পরিকল্পনা করেন! বিয়ের সাজের সবকিছু অর্থাৎ কনের লেহেঙ্গা কিংবা শাড়ি বা বরের শেরওয়ানি—সবকিছুই হতে হবে নিখুঁত। খেয়াল করলে দেখবেন, প্রতিবছর বিয়ের পোশাক ও সাজে নতুন কিছু যোগ হয়েছে, আবার বাদ পড়েছে সাজের কিছু পুরোনো চল। ২০২৫ সালেও বিয়ের ট্রেন্ডে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহার সঙ্গে কথা বলে চলতি বছর বিয়ের সাজে কী কী বিষয় যোগ ও বিয়োগ হয়েছে, তা নিয়ে লিখেছেন ফারিয়া রহমান খান

এবার বিয়ের ট্রেন্ডে যা কিছু যোগ হয়েছে

তাজা ফুলের আভিজাত্য

বিগত কয়েক বছরে চুল সাজাতে এবং হলুদের গয়না হিসেবে নারীরা আর্টিফিশিয়াল ফুল ব্যবহার করেছেন। শাড়ি বা লেহেঙ্গার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে এসব গয়না ব্যবহারে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে নারীদের মধ্য়ে। কিন্তু এখন চুল ও গয়নায় তো বটেই, হলুদ বা মেহেদির অনুষ্ঠানে ফ্লোরাল ওড়নায়ও আর্টিফিশিয়াল ফুলের চেয়ে তাজা ফুল ব্যবহারে আগ্রহ দেখা গেছে। শোভন সাহা বলেন, ‘এ বছর বিয়ের ডেকোরেশনেও বড় জায়গা করে নিয়েছে বড় বড় ফুলের ঝাড়বাতি এবং ফুলের পাপড়ি বিছানো হাঁটার পথ সবার নজর কেড়েছে, যা আগামী বছরেও ট্রেন্ডে থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

আভিজাত্যের ছোঁয়া

বিয়েতে রাজকীয় সাজের প্রতি বাঙালির টান চিরন্তন। ২০২৫ সালের মতো আগামী বছরেও ট্রেন্ডে থাকবে মীনাকারি কাজ, ঐতিহ্যবাহী বেনারসি, জামদানি, কাঞ্জিভরম ও মসলিন শাড়ি। সেই সঙ্গে বরের সাজে রাজকীয় ভাব আনতে ভারী কাজের শেরওয়ানি বা জারদৌসি কাজের পাঞ্জাবি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

পরিবেশবান্ধব বিয়ে

বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে। ফলে প্লাস্টিকমুক্ত সাজসজ্জা, স্থানীয় খাবারের মেনু এবং মাটিতে রোপণ করা এমন ‘প্লান্টেবল’ নিমন্ত্রণপত্র এখন ট্রেন্ডে ইন হয়েছে। বরের জন্য সুতির পাঞ্জাবি-পায়জামা ও কনের জন্য পরিবেশবান্ধব কাপড়ে তৈরি পোশাক, যা অন্যান্য সময়েও পরার উপযোগী—এমন সাজপোশাকেও আগ্রহ বাড়ছে বর্তমান সময়ের তরুণদের।

কাস্টমাইজেশন ইজ বেস্ট

একঘেয়ে গতানুগতিক বিয়ের বদলে এখন মানুষ নিজের পছন্দ ও আরামকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। বিয়েতে নিজস্ব ‘হ্যাশট্যাগ’ এবং নিজেদের পরিচয় কিংবা ভালোবাসার গল্প দিয়ে বানানো ছোট ভিডিও বা স্লাইড শো এখন বিয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেকে বিয়ের সময়টাকে ছোট করায় আগ্রহী। ঘরোয়া চায়ের আড্ডাতেই সেরে নিচ্ছেন বিয়ের অনুষ্ঠান। এরপর বর-কনে মিলে বিকেলে বেরিয়ে পড়ছেন হানিমুন ট্রিপে। এতে খরচও কমছে, আনন্দও বাড়ছে।

রং ও উজ্জ্বলতা

এক রঙের পোশাকের দিন এখন শেষ। এবার বিয়েতে রঙের বৈচিত্র্য থাকবে তুঙ্গে। ফুশিয়া পিঙ্কের সঙ্গে পান্না সবুজ কিংবা হলুদ ও রাজকীয় বেগুনির সংমিশ্রণ পোশাকে যোগ করবে নতুন মাত্রা। এ ছাড়া কনের লেহেঙ্গা বা শাড়িতে সোনালি, রুপালি কিংবা ব্রোঞ্জ রঙের মেটালিক ছোঁয়া বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। তা ছাড়া বার্বি পিঙ্ক বা গোলাপি রঙের বিভিন্ন শেড এখন আবার ট্রেন্ড হিসেবে ফিরে আসছে।

মডেল: সাবরিন ইসলাম। ছবি: অরুণ কুমার সিংহ
মডেল: সাবরিন ইসলাম। ছবি: অরুণ কুমার সিংহ

সাজে মিলমিশ

বিয়ের সাজে এখন বিভিন্ন স্থানের সাজের মিলমিশ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেমন কনে হয়তো সাদা গাউন পরছেন, সঙ্গে হাতে পরছেন টকটকে লাল কাচের চুড়ি। আবার বাঙালি সাজের সঙ্গে মারাঠি সাজ ব্লেন্ড করেও বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দ্বিধা করছেন না কনেরা। এমনটাই জানান শোভন সাহা।

বাদ পড়েছে যেগুলো

অতিরিক্ত কারুকাজ ও ঝলকানি

একসময় বিয়েতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পাথরের কিংবা চুমকি-পুঁতির ভারী কাজের পোশাকের চল ছিল। কিন্তু বর্তমানে এসব ‘ওভার দ্য টপ’ সাজ একদমই ‘আউট’। তবে এখন সূক্ষ্ম সুতার কাজ অথবা মেশিন এমব্রয়ডারির চাহিদা অনেক বেশি। ডেকোরেশনের ক্ষেত্রেও সবকিছু একই রঙে করার দিন শেষ। ভিন্ন ভিন্ন রং ও টেক্সচারের ব্যবহারই এখন আধুনিকতা।

কনের ভারী ওড়না

২০২৫ বলছে, ভারী বিয়ের ওড়না এখন বাতিলের খাতায়। এর বদলে নেট, অরগাঞ্জা কিংবা হালকা লেসের কাজ করা লম্বা ওড়না একটা এলিগ্যান্ট লুক এনে দেয়।

বরের গতানুগতিক সাজ

বরের সেই ক্রিম রঙের শেরওয়ানি এখন একেবারেই সেকেলে। এখন বরদের পোশাকে গাঢ় রং ও প্রিন্টের কাপড় বেশি জনপ্রিয়। পাঞ্জাবির ওপর রঙিন বা ফ্লোরাল প্রিন্টের কটি বরের সাজে আভিজাত্য ও আধুনিকতা নিয়ে আসে।

ভারী গয়না

শোভন সাহা জানান, সেকেলে ভারী গয়নার বদলে এখন চিকন বা লেয়ারিং করা গয়নার ট্রেন্ড চলছে। কানে হালকা দুল, গলায় পাতলা হারের কয়েকটা লেয়ার আপনার সাজকে অনেক বেশি মার্জিত ও ফ্যাশনেবল করতে পারে। গয়নার ক্ষেত্রে এখন মূল ট্রেন্ডই হলো ‘লেস ইজ মোর।’

পরিশেষে বলা যায়, বিয়ে মানে শুধুই অন্যের চোখে সেরা হওয়া নয়, বরং নিজের ব্যক্তিত্ব ও রুচির প্রকাশ ঘটানো। ট্রেন্ড যা-ই হোক না কেন, স্বকীয়তা সব সময় বজায় রাখা দরকার। বিয়ে যেহেতু ‘ওয়ানস ইন আ লাইফটাইম’ একটা বিষয়, সেহেতু আনন্দ ও স্টাইলটাও হওয়া চাই একেবারেই অনন্য। তাই এই নতুন ধারাগুলো মাথায় রেখে আজই শুরু করে দিতে পারেন বিয়ের পরিকল্পনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত