মুনতাসির মইন

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দ্য সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর পাশে। হালকা থেকে গাঢ় হতে থাকল নীল। অদ্ভুত রং-বেরঙের নাম না জানা মাছ ছুটে বেড়াচ্ছে কোরাল বাগানে। চোখধাঁধানো রঙের সেই বাগান। কী সুন্দর, কী রহস্যময়! একসময় সাবমেরিন কোরাল রিফের শেষ প্রান্তে এসে পড়ল, তার নিচে গভীর খাদ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমাদের হলুদ সাবমেরিন কচুরিপানার মতো বিশাল সমুদ্রে ভাসতে লাগল। এভারেস্টের নিচে দাঁড়িয়ে যেমন গভীর শূন্যতা অনুভব করেছিলাম, এখানেও তা-ই হলো। গভীর ঘোর লেগে গেল। ছেলে ধাক্কা দিয়ে ঘোর ভাঙাল। ‘বাবা, এই মাছের নাম কী?’ আমি ফ্যালফ্যাল করে বললাম, ‘সি ফিশ!’ আজ আমাদের মালদ্বীপের দ্বিতীয় দিন।
প্লেনের ককপিটে যখন ক্যাপ্টেন বললেন, ‘আমরা আর কিছুক্ষণের মধ্যে মালদ্বীপে ল্যান্ড করব’, তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে এক অপার্থিব সৌন্দর্য দেখলাম। গাঢ় নীল একটি আর্টিস্ট প্লেটের মধ্যে যেন আকাশি, ফিরোজা, সাদা আর সবুজের রঙের প্রলেপ। এ রকম ছোট-বড় হাজার হাজার রঙের প্রলেপ প্লেটজুড়ে। এগুলো একেকটা দ্বীপ। ঠিক যেন রঙের মালা। কিছু কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মালদ্বীপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘মালা দ্বীপ’ থেকে, যার অর্থ ফুলের মালার দ্বীপ। তবে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে এই দ্বীপকে বলা হয়েছে ‘লাক্ষাদ্বীপ’ বা শত হাজার দ্বীপ। তবে মালদ্বীপে হাজারের বেশি দ্বীপ থাকলেও ১ লাখ দ্বীপ নেই। বর্তমান মালদ্বীপে ১ হাজার ১৮৪টি দ্বীপ ও ২৮টি প্রাকৃতিক অ্যাটল আছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮৭টি দ্বীপ বসবাসের উপযোগী।
আমাদের রিসোর্টটি ছিল এমনই এক দ্বীপে। রিসোর্টের নাম হার্ড রক হোটেল মালদ্বীপ। সাউথ মালে এটলে এটি অবস্থিত। এটল হচ্ছে দীর্ঘ বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীর। প্রবালপ্রাচীরের পার ঘেঁষে রিসোর্টগুলো গড়ে উঠেছে। মালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ২০ মিনিটে স্পিডবোটে করে রিসোর্টে পৌঁছানো যায়।
মালদ্বীপের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টটা বেশ মজার। অন্য দেশের মতো নয়। অন্য যেকোনো দেশে আমরা এয়ারপোর্টে নেমে রাস্তা মাপি আর মালদ্বীপে মাপতে হয় সমুদ্র। এয়ারপোর্টে নেমেই বিশাল সমুদ্র। রিসোর্টে যেতে চাইলে উঠে পড়তে হয় স্পিডবোটে অথবা সি প্লেনে। আমাদের রিসোর্টের সদা হাস্যোজ্জ্বল ভুবন আমাদের রিসিভ করার জন্য এসেছিল। চমৎকার ইংরেজিতে বলল, ‘ওয়েলকাম টু দ্য হ্যাভেন।’ ছোট্ট এই লাইন জীবনতৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে তুলল। কী চমৎকার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি! প্লেনের চার ঘণ্টার বিরক্তিকর ভ্রমণ শেষে গাঢ় নীল সমুদ্র যেন ইফতারের শরবতের গ্লাস। নোনা বাতাসে ঝরঝরে লাগল শরীর, নোনা স্বাদও যেন পেল জিহ্বা। স্পিডবোট চলতে শুরু করল।
ছেলের চোখে আনন্দ আর মেয়ের চোখে উৎকণ্ঠা। কারণ, ততক্ষণে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল আমাদের স্পিডবোটে। সেটি বাম্প করতে লাগল রোলার কোস্টারের মতো। ২০ মিনিট পর শান্ত হলো স্পিডবোট। আমরা ততক্ষণে গভীর সমুদ্র থেকে রিফে পৌঁছে গেছি। ধীরে ধীরে ল্যান্ডিং জেটি চোখে পড়ল। গাঢ় নীলের পর পান্না সবুজ পানি, তার ওপর সাদা দ্বীপ। জেটি সামনে আসতেই চোখে পড়ল, রিসোর্টের সাতজন স্টাফ হাত নেড়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। তাদের দলপতি স্বর্ণকেশী রাশিয়ান আলিশা। চমৎকার হেসে সম্ভাষণ জানাল আর বলল, ‘মইন ফ্যামিলিকে পেয়ে আমরা আনন্দিত।’ মনে হচ্ছিল কত দিনের চেনা।
রিসেপশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো কাঙ্ক্ষিত ওয়াটার বাংলোতে। আমাদের বাংলোটি স্বচ্ছ নীল পানির ওপর দুই রুমের কুঁড়েঘর। একটি মাস্টার বেডরুম আর একটি ড্রেসিং রুম। মাস্টার বেডরুমের সঙ্গে লাগোয়া একটি টেরেস। টেরেসের এক পাশে আছে সিঁড়ি, যা দিয়ে সরাসরি রিফে নেমে পড়া যায়। আর টেরেসের আরেক পাশে মোটা সাদা দড়ি দিয়ে বানানো হয়েছে বিশাল ট্রাম্পোলিন এবং তার ঠিক নিচে সমুদ্র। বাচ্চারা লাফালাফি শুরু করল ট্রাম্পোলিনে। আমরাও যোগ দিলাম তাদের সঙ্গে। আহা সে কী আনন্দ!
আসলে নামে কুঁড়েঘর হলেও আধুনিক বসবাসের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মেলে এই বাংলোগুলোতে। স্টার রেটিং ভেদে বাড়তে থাকে সুযোগ-সুবিধার পরিধি। কিন্তু কিছু ম্যাজিক স্টার রেটিং মানে না। এই ম্যাজিকের ম্যাজিশিয়ান হলো রিফের বাসিন্দা বেবি সার্ক, স্টিং রে, সি টার্টল আর অসংখ্য নাম না জানা রংবেরঙের মাছ। তারা ম্যাজিক দেখাতে হঠাৎ হঠাৎ চলে আসে বাংলোগুলোর ঠিক নিচে। ওপর থেকে বসে তাদের খেলাধুলা দেখতে বেশ লাগে। সহজ-স্বাভাবিকভাবে তারা ঘুরে বেড়ায় বাংলোর আশপাশে। যেন আমাদের মতো তারাও ঘুরতে এসেছে মালদ্বীপে। এ রকম মানুষের সঙ্গে প্রাণীদের সহাবস্থান দেখতে আমার বেশ লাগে। নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ তকমা লাগিয়ে অহংকার করা আমার মোটেও ভালো লাগে না। পুরো ইকোসিস্টেমে সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি থেকে ক্ষুদ্র মৌমাছিকে বাদ দিলে কয়েক বছরের মধ্যে বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে সবুজ পৃথিবী। তখন কী হবে চিন্তা করা যায়?
আমরা মালদ্বীপে গিয়েছিলাম ৭ জানুয়ারি। তখন মাত্র ক্রিসমাস শেষ হয়েছে। কিন্তু রিসোর্টজুড়ে ছিল ক্রিসমাসের সাজসজ্জা আর আমেজ। গোলাপি আলোয় আলোকিত পুরো রিসোর্ট। সেদিনই ছিল তাদের ক্রিসমাস ডিনারের শেষ আয়োজন। সমুদ্রতটের সাদা বালুর ওপর বিছানো হয়েছে টেবিল। তার ওপর মোমবাতি। সাগরের মৃদুমন্দ হাওয়া তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্রাজিলিয়ান এক ব্যান্ড দল বাজিয়ে চলেছে ‘আভা মারিয়া’। করুণ আভা মারিয়া কেন যেন যিশুর লাস্ট সাপারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। জীবনের শেষ নৈশভোজে বসেছেন যিশু তাঁর বারোজন শিষ্য নিয়ে। ভীষণ শান্ত স্বরে যিশু বললেন, ‘কাল তোমাদের মধ্যেই একজন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, ধরিয়ে দেবে আমাকে।’ যিশুর মুখে এই কথা শুনে বারোজনের কারও মুখে ভয়, কারও আগ্রহ, কারও সন্দেহ, কারও মুখে কৌতূহল, করো মুখে ঘৃণা, কারও মুখে উদ্বেগ ফুটে উঠেছিল। কী অদ্ভুত!
এ নিয়ে একটি বিখ্যাত চিত্র আছে লেওনার্দ দ্য ভিঞ্চির, নাম ‘দ্য লাস্ট সাপার’। আঁকা হয়েছিল মিলানের সান্তা মারিয়া দেল্লে গ্র্যাছে। একবার এই ছবি দেখতে গিয়েছিলাম; কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি পনেরো মিনিটের জন্য। গির্জায় ঢোকার শেষ সময় ছয়টা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। আমাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাতটা বেজে গিয়েছিল। সেই আফসোস আমার আজও গেল না!
ক্রিসমাসের শেষ ডিনারের আয়োজনটা ছিল হুলুস্থুল রকমের। শুরুতেই এক গ্লাস শ্যাম্পেইন হাতে ধরিয়ে দিয়ে রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার অনিত বলল, ‘আজ ডায়েটের কথা ভুলে যাও। যা মন চায়, খাও।’ নাম না জানা অসংখ্য খাবারে পরিপূর্ণ ব্যুফে, কমলা আলাস্কান ক্র্যাব লেগ, খরগোশের নরম মাংসের ফ্রেঞ্চ টেরিন, সদ্য তোলা নীল রিফের ওয়েস্টার, চিজ হুইলে মাখানো গরম-গরম পাস্তা—আরও কত কী! অনিতের সঙ্গে খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল, মালদ্বীপের প্রথম দিকের জনবসতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তামিলরা, যারা প্রাচীন তামিলকাম থেকে এসেছিল। এই তামিলকামই বর্তমানে ভারতের তামিলনাড়ু। সেই সময় যেসব পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছিল, তারা সবাই রানিশাসিত এই রাজ্যের কথা উল্লেখ করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রাচীন সাহিত্য ‘মহাবংশ’-এ মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘মহিলাদ্বীপ’ বা নারীদের দ্বীপ। তার মানে বোঝা যায়, মাতৃতান্ত্রিক এক সমাজব্যবস্থা ছিল এই মালদ্বীপে। লুইস মরগানের একটি চমৎকার বই আছে, নাম ‘অ্যানশায়েন্ট সোসাইটি’। সেখানে লেখকের দাবি, আদিমকালে সব গোষ্ঠী নাকি ছিল মাতৃতান্ত্রিক। কী মজার একটা ব্যাপার, মায়েদের চোখরাঙানি খেয়ে বাবারা চুপ করে বসে থাকত! এরপর সম্রাট অশোকের সময় বুদ্ধ ভিক্ষুরা গিয়ে মালদ্বীপে বসবাস শুরু করেন। তখনই বৌদ্ধধর্ম প্রসার পায়। এখনো তার প্রচুর নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক দ্বীপে। বারো শতকের দিকে মুসলিম বণিকেরা ব্যবসা করতে ভারত সাগরে এসে ঘাঁটি গাড়ে মালদ্বীপে। শুরু হয় দীর্ঘ ইসলামি যুগের।

গল্প শেষে বিদায় নিয়ে চলে এলাম স্বপ্নের সেই কুটিরে। বাচ্চারা কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাদের বিছানায় রেখে আমরা শুয়ে রইলাম নেটের তৈরি টেরেসের সেই ট্রাম্পোলিনে। আকাশে তখন অনন্ত নক্ষত্রবীথি। তারায় পরিপূর্ণ আকাশ। এমন আকাশের দিকে তাকিয়ে অনন্ত জীবন বেঁচে থাকার লোভ জাগে। তখন ঠিক বারোটা। ঠিক সেই মুহূর্তেই আমাদের বিয়ের বারো বছর পূর্ণ হলো।
সকালে ঘুম ভাঙল মৃদু ঠকঠক শব্দে। উঠে দেখি ঘরে বেড়াতে এসেছে দুটো সাদা ড্রিল। ড্রিল হচ্ছে ছোট সাদা শামুক। হাঁটার সময় টালির সঙ্গে শক্ত খোলসের ঠক্করে শব্দ হচ্ছিল ঠকঠক। কিছুক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে শামুকদের সঙ্গে খেলে বললাম তাদের রিফে ফিরিয়ে দিতে। মালদ্বীপসহ প্রাচীন পৃথিবীর বেশ কিছু অঞ্চলের মুদ্রা ছিল একধরনের শামুক, যা আমরা কড়ি নামে চিনি। ১৩৪৪ সালে ইবনে বতুতা মালদ্বীপে এসে দেখেছিলেন, প্রতিবছর মালদ্বীপ ৪০ জাহাজ কড়ি রপ্তানি করত। প্রশ্ন জাগে, কেমন ছিল সেই কড়ির আর্থিক মান? তখন ৪ লাখ কড়ি দিয়ে একটি সোনার দিনার পাওয়া যেত।
এবার রিফে নামার পালা। রুমের সামনে টেরেসের সিঁড়ি দিয়ে নেমে পড়লাম স্বচ্ছ পানিতে। পানির তাপমাত্রা চমৎকার আরামদায়ক। কোমর পর্যন্ত পানিতে অনায়াসে হাঁটা যায় অনেক দূর পর্যন্ত। লাইফ জ্যাকেট পরে নিলাম। নরম বালিতে কিছুক্ষণ হাঁটার পর শরীর ভাসিয়ে দিলাম পানিতে। সাদা বালির ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য কোরাল। তার মাঝে মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট রংবেরঙের মাছ। হাত দিয়ে ধরতে গেলে তারা দৌড়ে পালায়। ততক্ষণে ছেলে কোরাল সংগ্রহে নেমে পড়েছে। রংবেরঙের কোরাল সংগ্রহ করে পকেটে পুরে রাখছে। ছেলে শুনে অবাক হলো, এই কোরলগুলোরও একসময় প্রাণ ছিল। পরে বুড়ো হয়ে মরে গিয়ে তারা জমতে শুরু করে সাগরের তলদেশে। মরে যাওয়ার পর তাদের দেহের চারপাশে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের একটি পাথুরে স্তর তৈরি হয়। সেটাকেই আমরা প্রবাল বলি। এই প্রবালগুলো এভাবে লাখ লাখ বছর জমে একেকটি পাথরের আকৃতি নেয়। আর কোটি কোটি বছর জমে একটি দ্বীপ সৃষ্টি করে। কী অদ্ভুত প্রকৃতির খেয়াল!

ছেলেকে বললাম, ‘কোটি কোটি বছর পুরোনো এই পাথরবাগান কোনোভাবেই নষ্ট করা উচিত নয়। এরা খুবই দুর্লভ। পৃথিবীতে অল্প কিছু আছে, যার মধ্যে একটি আছে আমাদের দেশে। যাকে আমরা সেন্ট মার্টিন বলে জানি।’ সেন্ট মার্টিনের কথা বলতে বলতে মন খারাপ হয়ে গেল। দেশে এত সুন্দর একটা দ্বীপ আছে, যাকে ইচ্ছে করলেই এমন মালদ্বীপের মতো করা যেত। কিন্তু আমরা চরম অবহেলায় ফেলে রেখেছি। গুনগুন করে গাইতে লাগলাম—
জনম গেল বৃথা কাজে
আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে
তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে, শক্তিদাতা
ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা।
রিফে সাঁতার কাটতে কাটতে আমরা সাবমেরিনের প্রোগ্রাম করলাম। রিসোর্টে একটি ছোট সাবমেরিন আছে। সেটা ঠিক সাবমেরিন নয়। সাবমেরিন আকৃতির নৌকা বলা যায়। নিচের দিকে ফাঁকা একটি জায়গায় ছয়-সাতজন বসতে পারে, চারদিক স্বচ্ছ জানালা দিয়ে ঘেরা। রিফের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে এই সাবমেরিনের জুড়ি নেই। স্নোরকেলিং করে অল্প একটু জায়গা ঘুরে দেখা যেতে পারে। ভালো ডাইভিংয়ের জন্য দরকার ট্রেনিং। এই দুটোর মাঝে সাবমেরিনে ভ্রমণ ভালো সুযোগ হতে পারে। সাবমেরিনের বর্ণনা প্রথমেই একটু বলেছিলাম। কিন্তু তার সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশের শব্দ আমার অভিধানে নেই।
আমাদের রিসোর্টে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট পনেরোটি রেস্টুরেন্ট ছিল। তার মধ্যে কিছু ইন্টারন্যাশনাল চেইন রেস্টুরেন্ট। মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব তেমনি এক রেস্টুরেন্ট। আজ ডিনারের জন্য আমরা সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। এই মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব এশিয়ার ছয়টি দেশে তাদের রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছে। ওয়ার্ল্ডস ফিফটি বেস্ট রেস্টুরেন্টের তালিকায় তাদের অবস্থান পঁচিশ। বড় বড় কাঁকড়াই তাদের প্রধান আকর্ষণ। তাদের প্রধান নীতি হলো, তারা হিমায়িত খাবার পরিবেশন করে না। এ জন্য তাদের বিশাল ঝামেলা পোহাতে হয়। মালদ্বীপের এই রেস্টুরেন্টে তাদের কাঁকড়াগুলো আসে প্রাইভেট প্লেনে করে, শ্রীলঙ্কা থেকে। তারপর তাদের বসবাস উপযোগী একটি চৌবাচ্চায় জ্যান্ত সংরক্ষণ করা হয় প্লেটে পরিবেশন করার আগ পর্যন্ত। ক্রেতাদের চাহিদামতো জ্যান্ত কাঁকড়া নিয়ে আসা হয় তার আকৃতি ঠিক আছে কি না, দেখানোর জন্য। এখানে প্রায় দশ আকারের কাঁকড়া পাওয়া যায়। ছোটটা আধা কেজি আর বড়টা দুই কেজি ওজনের। তারা প্রায় পাঁচ রকমভাবে কাঁকড়া রান্না করতে পারে। এর মধ্যে পিপার ক্র্যাব অসম্ভব জনপ্রিয়।
আমরা পিপার ক্র্যাব অর্ডার করেছিলাম, সঙ্গে ছিল ক্র্যাব লিভার পাটে, এপেটাইজারে। ছোট্ট একটি বিস্কুটের ওপর এই ক্র্যাব লিভার পেস্ট জেলির মতো লাগিয়ে তার ওপরে ম্যাপেল সিরাপ দিয়ে কুট্টুস করে কামড় দিয়ে খেতে হয়। দুই কেজির বিশাল পিপার ক্র্যাব খাবার জন্য ঘাম ঝরানো জরুরি। রীতিমতো ছেনি-বাটাল নিয়ে ভাঙতে হয় ক্র্যাবের শক্ত খোল। তারপর বের হয় কাঙ্ক্ষিত সাদা মাংস। পিপার সসে ডুবিয়ে সেই মাংস মুখে পুরে অনায়াসে ভুলে যাওয়া যায় জগৎ-সংসার। ডেজার্টে ছিল নারকেলের খোলে তৈরি ফ্রেঞ্চ ক্রিম ব্রুলে। এবার ঘুম।

আজ ঘুম ভাঙল বৃষ্টির শব্দে। সে কী বৃষ্টি! গতকালের ভেজা কাপড়গুলো শুকাতে দেওয়া হয়েছিল টেরেসে। সেগুলো আবার ভিজে গেল। রুমের দরজা খুলে টেরেসে গিয়ে নতুন রঙের আভা দেখলাম। সবুজ সমুদ্র আরও সবুজ দেখা যাচ্ছে আর ওপরে কালো আকাশ। সে অপরূপ ব্যাপার! সমুদ্র ভয়ংকর হতে লাগল। বাড়তে লাগল বৃষ্টির তেজ। মালদ্বীপের বৃষ্টি নাকি ভয়ংকর—একবার শুরু হলে এক সপ্তাহ। মন খারাপ হয়ে গেল। আরও দুই দিন যে থাকতে হবে! কিন্তু কিছুক্ষণ পরই মেঘ কেটে গিয়ে চমৎকার এক সূর্যের দেখা পেলাম। পুরো পরিবার নিয়ে রিফে নেমে গেলাম। গতকাল নাকি এক বিশাল মান্তা রে ঢুকেছে রিফে।
এই প্রাণীটা বেশ মজার। এরা নাকি তেইশ ফুট পর্যন্ত চওড়া হতে পারে! অদ্ভুত দর্শনের জন্য এদের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে ভীষণ ভয় পেত। প্রাচীনকালে নাবিকেরা বিশ্বাস করতেন যে, তারা মানুষের জন্য বিপজ্জনক এবং নোঙরে টান দিয়ে নৌকা ডোবাতে পারে। পরে যখন ডাইভিং জনপ্রিয় হয়, তখন মানুষ বুঝতে শেখে, এরা নিরীহ গোছের প্রাণী আর শুরু করে তাদের ওপর অত্যাচার। তাদের ফুলকা চায়নিজ ওষুধের এক দুর্মূল্য উপাদান। এই ফুলকার জন্য হাজার হাজার মান্তা রে প্রতি বছর মারা হয়। সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় গত বছরই তাদের বিপদাপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
দুপুরে যখন আমরা পানি থেকে উঠে খাবার খাচ্ছিলাম, তখনই দেখা মিলল সেই বিশাল কালো মান্তা রের। প্রবল দাপটে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে রিফে। মাছেদের খেলা দেখতে দেখতে বিকেল নামল। বেগুনি হয়ে উঠল আকাশ। রিফের সেই আকাশি পানি তখনো আকাশি। তবে কিছুটা কালচে। চমৎকার বেগুনি আকাশের নিচে কালচে আকাশি সমুদ্র ঠিক যেন মনভোলা এক চিত্রকরের হাতে আঁকা ছবি। প্রকৃতির এমন রূপ দেখে যেকোনো শিল্পীর মনে হতে বাধ্য, এখানে বাকি জীবন কাটালে মন্দ হতো না। সারা দিন শুধু ছবি আঁকব, ফিরব না আর যান্ত্রিক নগরে। সত্যি সত্যি এমন পাগলামি কিন্তু একজন করেছিলেন—তাঁর নাম পল গগাঁ। ফরাসি এই শিল্পী তাহিতি নামের এক দ্বীপে গিয়ে তার প্রেমে পড়ে যান। তারপর সবকিছু ছেড়েছুড়ে আমৃত্যু বসবাস করতে থাকেন সেই দ্বীপে।
মালদ্বীপের এই তটে বসে গগাঁর মনের অবস্থা টের পাচ্ছিলাম। এই ক্ষুদ্র জীবনে খুব বেশি কিছু কি দরকার? তবু ফিরে যেতে হবে কাল। মন খারাপ হয়ে গেল। আকাশে তখন তারা ফুটে উঠছে। বেগুনি থেকে গাঢ় নীল হচ্ছে পৃথিবী।
পৃথিবী এত সুন্দর কেন?

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দ্য সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর পাশে। হালকা থেকে গাঢ় হতে থাকল নীল। অদ্ভুত রং-বেরঙের নাম না জানা মাছ ছুটে বেড়াচ্ছে কোরাল বাগানে। চোখধাঁধানো রঙের সেই বাগান। কী সুন্দর, কী রহস্যময়! একসময় সাবমেরিন কোরাল রিফের শেষ প্রান্তে এসে পড়ল, তার নিচে গভীর খাদ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমাদের হলুদ সাবমেরিন কচুরিপানার মতো বিশাল সমুদ্রে ভাসতে লাগল। এভারেস্টের নিচে দাঁড়িয়ে যেমন গভীর শূন্যতা অনুভব করেছিলাম, এখানেও তা-ই হলো। গভীর ঘোর লেগে গেল। ছেলে ধাক্কা দিয়ে ঘোর ভাঙাল। ‘বাবা, এই মাছের নাম কী?’ আমি ফ্যালফ্যাল করে বললাম, ‘সি ফিশ!’ আজ আমাদের মালদ্বীপের দ্বিতীয় দিন।
প্লেনের ককপিটে যখন ক্যাপ্টেন বললেন, ‘আমরা আর কিছুক্ষণের মধ্যে মালদ্বীপে ল্যান্ড করব’, তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে এক অপার্থিব সৌন্দর্য দেখলাম। গাঢ় নীল একটি আর্টিস্ট প্লেটের মধ্যে যেন আকাশি, ফিরোজা, সাদা আর সবুজের রঙের প্রলেপ। এ রকম ছোট-বড় হাজার হাজার রঙের প্রলেপ প্লেটজুড়ে। এগুলো একেকটা দ্বীপ। ঠিক যেন রঙের মালা। কিছু কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মালদ্বীপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘মালা দ্বীপ’ থেকে, যার অর্থ ফুলের মালার দ্বীপ। তবে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে এই দ্বীপকে বলা হয়েছে ‘লাক্ষাদ্বীপ’ বা শত হাজার দ্বীপ। তবে মালদ্বীপে হাজারের বেশি দ্বীপ থাকলেও ১ লাখ দ্বীপ নেই। বর্তমান মালদ্বীপে ১ হাজার ১৮৪টি দ্বীপ ও ২৮টি প্রাকৃতিক অ্যাটল আছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮৭টি দ্বীপ বসবাসের উপযোগী।
আমাদের রিসোর্টটি ছিল এমনই এক দ্বীপে। রিসোর্টের নাম হার্ড রক হোটেল মালদ্বীপ। সাউথ মালে এটলে এটি অবস্থিত। এটল হচ্ছে দীর্ঘ বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীর। প্রবালপ্রাচীরের পার ঘেঁষে রিসোর্টগুলো গড়ে উঠেছে। মালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ২০ মিনিটে স্পিডবোটে করে রিসোর্টে পৌঁছানো যায়।
মালদ্বীপের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টটা বেশ মজার। অন্য দেশের মতো নয়। অন্য যেকোনো দেশে আমরা এয়ারপোর্টে নেমে রাস্তা মাপি আর মালদ্বীপে মাপতে হয় সমুদ্র। এয়ারপোর্টে নেমেই বিশাল সমুদ্র। রিসোর্টে যেতে চাইলে উঠে পড়তে হয় স্পিডবোটে অথবা সি প্লেনে। আমাদের রিসোর্টের সদা হাস্যোজ্জ্বল ভুবন আমাদের রিসিভ করার জন্য এসেছিল। চমৎকার ইংরেজিতে বলল, ‘ওয়েলকাম টু দ্য হ্যাভেন।’ ছোট্ট এই লাইন জীবনতৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে তুলল। কী চমৎকার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি! প্লেনের চার ঘণ্টার বিরক্তিকর ভ্রমণ শেষে গাঢ় নীল সমুদ্র যেন ইফতারের শরবতের গ্লাস। নোনা বাতাসে ঝরঝরে লাগল শরীর, নোনা স্বাদও যেন পেল জিহ্বা। স্পিডবোট চলতে শুরু করল।
ছেলের চোখে আনন্দ আর মেয়ের চোখে উৎকণ্ঠা। কারণ, ততক্ষণে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল আমাদের স্পিডবোটে। সেটি বাম্প করতে লাগল রোলার কোস্টারের মতো। ২০ মিনিট পর শান্ত হলো স্পিডবোট। আমরা ততক্ষণে গভীর সমুদ্র থেকে রিফে পৌঁছে গেছি। ধীরে ধীরে ল্যান্ডিং জেটি চোখে পড়ল। গাঢ় নীলের পর পান্না সবুজ পানি, তার ওপর সাদা দ্বীপ। জেটি সামনে আসতেই চোখে পড়ল, রিসোর্টের সাতজন স্টাফ হাত নেড়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। তাদের দলপতি স্বর্ণকেশী রাশিয়ান আলিশা। চমৎকার হেসে সম্ভাষণ জানাল আর বলল, ‘মইন ফ্যামিলিকে পেয়ে আমরা আনন্দিত।’ মনে হচ্ছিল কত দিনের চেনা।
রিসেপশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো কাঙ্ক্ষিত ওয়াটার বাংলোতে। আমাদের বাংলোটি স্বচ্ছ নীল পানির ওপর দুই রুমের কুঁড়েঘর। একটি মাস্টার বেডরুম আর একটি ড্রেসিং রুম। মাস্টার বেডরুমের সঙ্গে লাগোয়া একটি টেরেস। টেরেসের এক পাশে আছে সিঁড়ি, যা দিয়ে সরাসরি রিফে নেমে পড়া যায়। আর টেরেসের আরেক পাশে মোটা সাদা দড়ি দিয়ে বানানো হয়েছে বিশাল ট্রাম্পোলিন এবং তার ঠিক নিচে সমুদ্র। বাচ্চারা লাফালাফি শুরু করল ট্রাম্পোলিনে। আমরাও যোগ দিলাম তাদের সঙ্গে। আহা সে কী আনন্দ!
আসলে নামে কুঁড়েঘর হলেও আধুনিক বসবাসের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মেলে এই বাংলোগুলোতে। স্টার রেটিং ভেদে বাড়তে থাকে সুযোগ-সুবিধার পরিধি। কিন্তু কিছু ম্যাজিক স্টার রেটিং মানে না। এই ম্যাজিকের ম্যাজিশিয়ান হলো রিফের বাসিন্দা বেবি সার্ক, স্টিং রে, সি টার্টল আর অসংখ্য নাম না জানা রংবেরঙের মাছ। তারা ম্যাজিক দেখাতে হঠাৎ হঠাৎ চলে আসে বাংলোগুলোর ঠিক নিচে। ওপর থেকে বসে তাদের খেলাধুলা দেখতে বেশ লাগে। সহজ-স্বাভাবিকভাবে তারা ঘুরে বেড়ায় বাংলোর আশপাশে। যেন আমাদের মতো তারাও ঘুরতে এসেছে মালদ্বীপে। এ রকম মানুষের সঙ্গে প্রাণীদের সহাবস্থান দেখতে আমার বেশ লাগে। নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ তকমা লাগিয়ে অহংকার করা আমার মোটেও ভালো লাগে না। পুরো ইকোসিস্টেমে সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি থেকে ক্ষুদ্র মৌমাছিকে বাদ দিলে কয়েক বছরের মধ্যে বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে সবুজ পৃথিবী। তখন কী হবে চিন্তা করা যায়?
আমরা মালদ্বীপে গিয়েছিলাম ৭ জানুয়ারি। তখন মাত্র ক্রিসমাস শেষ হয়েছে। কিন্তু রিসোর্টজুড়ে ছিল ক্রিসমাসের সাজসজ্জা আর আমেজ। গোলাপি আলোয় আলোকিত পুরো রিসোর্ট। সেদিনই ছিল তাদের ক্রিসমাস ডিনারের শেষ আয়োজন। সমুদ্রতটের সাদা বালুর ওপর বিছানো হয়েছে টেবিল। তার ওপর মোমবাতি। সাগরের মৃদুমন্দ হাওয়া তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্রাজিলিয়ান এক ব্যান্ড দল বাজিয়ে চলেছে ‘আভা মারিয়া’। করুণ আভা মারিয়া কেন যেন যিশুর লাস্ট সাপারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। জীবনের শেষ নৈশভোজে বসেছেন যিশু তাঁর বারোজন শিষ্য নিয়ে। ভীষণ শান্ত স্বরে যিশু বললেন, ‘কাল তোমাদের মধ্যেই একজন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, ধরিয়ে দেবে আমাকে।’ যিশুর মুখে এই কথা শুনে বারোজনের কারও মুখে ভয়, কারও আগ্রহ, কারও সন্দেহ, কারও মুখে কৌতূহল, করো মুখে ঘৃণা, কারও মুখে উদ্বেগ ফুটে উঠেছিল। কী অদ্ভুত!
এ নিয়ে একটি বিখ্যাত চিত্র আছে লেওনার্দ দ্য ভিঞ্চির, নাম ‘দ্য লাস্ট সাপার’। আঁকা হয়েছিল মিলানের সান্তা মারিয়া দেল্লে গ্র্যাছে। একবার এই ছবি দেখতে গিয়েছিলাম; কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি পনেরো মিনিটের জন্য। গির্জায় ঢোকার শেষ সময় ছয়টা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। আমাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাতটা বেজে গিয়েছিল। সেই আফসোস আমার আজও গেল না!
ক্রিসমাসের শেষ ডিনারের আয়োজনটা ছিল হুলুস্থুল রকমের। শুরুতেই এক গ্লাস শ্যাম্পেইন হাতে ধরিয়ে দিয়ে রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার অনিত বলল, ‘আজ ডায়েটের কথা ভুলে যাও। যা মন চায়, খাও।’ নাম না জানা অসংখ্য খাবারে পরিপূর্ণ ব্যুফে, কমলা আলাস্কান ক্র্যাব লেগ, খরগোশের নরম মাংসের ফ্রেঞ্চ টেরিন, সদ্য তোলা নীল রিফের ওয়েস্টার, চিজ হুইলে মাখানো গরম-গরম পাস্তা—আরও কত কী! অনিতের সঙ্গে খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল, মালদ্বীপের প্রথম দিকের জনবসতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তামিলরা, যারা প্রাচীন তামিলকাম থেকে এসেছিল। এই তামিলকামই বর্তমানে ভারতের তামিলনাড়ু। সেই সময় যেসব পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছিল, তারা সবাই রানিশাসিত এই রাজ্যের কথা উল্লেখ করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রাচীন সাহিত্য ‘মহাবংশ’-এ মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘মহিলাদ্বীপ’ বা নারীদের দ্বীপ। তার মানে বোঝা যায়, মাতৃতান্ত্রিক এক সমাজব্যবস্থা ছিল এই মালদ্বীপে। লুইস মরগানের একটি চমৎকার বই আছে, নাম ‘অ্যানশায়েন্ট সোসাইটি’। সেখানে লেখকের দাবি, আদিমকালে সব গোষ্ঠী নাকি ছিল মাতৃতান্ত্রিক। কী মজার একটা ব্যাপার, মায়েদের চোখরাঙানি খেয়ে বাবারা চুপ করে বসে থাকত! এরপর সম্রাট অশোকের সময় বুদ্ধ ভিক্ষুরা গিয়ে মালদ্বীপে বসবাস শুরু করেন। তখনই বৌদ্ধধর্ম প্রসার পায়। এখনো তার প্রচুর নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক দ্বীপে। বারো শতকের দিকে মুসলিম বণিকেরা ব্যবসা করতে ভারত সাগরে এসে ঘাঁটি গাড়ে মালদ্বীপে। শুরু হয় দীর্ঘ ইসলামি যুগের।

গল্প শেষে বিদায় নিয়ে চলে এলাম স্বপ্নের সেই কুটিরে। বাচ্চারা কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাদের বিছানায় রেখে আমরা শুয়ে রইলাম নেটের তৈরি টেরেসের সেই ট্রাম্পোলিনে। আকাশে তখন অনন্ত নক্ষত্রবীথি। তারায় পরিপূর্ণ আকাশ। এমন আকাশের দিকে তাকিয়ে অনন্ত জীবন বেঁচে থাকার লোভ জাগে। তখন ঠিক বারোটা। ঠিক সেই মুহূর্তেই আমাদের বিয়ের বারো বছর পূর্ণ হলো।
সকালে ঘুম ভাঙল মৃদু ঠকঠক শব্দে। উঠে দেখি ঘরে বেড়াতে এসেছে দুটো সাদা ড্রিল। ড্রিল হচ্ছে ছোট সাদা শামুক। হাঁটার সময় টালির সঙ্গে শক্ত খোলসের ঠক্করে শব্দ হচ্ছিল ঠকঠক। কিছুক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে শামুকদের সঙ্গে খেলে বললাম তাদের রিফে ফিরিয়ে দিতে। মালদ্বীপসহ প্রাচীন পৃথিবীর বেশ কিছু অঞ্চলের মুদ্রা ছিল একধরনের শামুক, যা আমরা কড়ি নামে চিনি। ১৩৪৪ সালে ইবনে বতুতা মালদ্বীপে এসে দেখেছিলেন, প্রতিবছর মালদ্বীপ ৪০ জাহাজ কড়ি রপ্তানি করত। প্রশ্ন জাগে, কেমন ছিল সেই কড়ির আর্থিক মান? তখন ৪ লাখ কড়ি দিয়ে একটি সোনার দিনার পাওয়া যেত।
এবার রিফে নামার পালা। রুমের সামনে টেরেসের সিঁড়ি দিয়ে নেমে পড়লাম স্বচ্ছ পানিতে। পানির তাপমাত্রা চমৎকার আরামদায়ক। কোমর পর্যন্ত পানিতে অনায়াসে হাঁটা যায় অনেক দূর পর্যন্ত। লাইফ জ্যাকেট পরে নিলাম। নরম বালিতে কিছুক্ষণ হাঁটার পর শরীর ভাসিয়ে দিলাম পানিতে। সাদা বালির ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য কোরাল। তার মাঝে মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট রংবেরঙের মাছ। হাত দিয়ে ধরতে গেলে তারা দৌড়ে পালায়। ততক্ষণে ছেলে কোরাল সংগ্রহে নেমে পড়েছে। রংবেরঙের কোরাল সংগ্রহ করে পকেটে পুরে রাখছে। ছেলে শুনে অবাক হলো, এই কোরলগুলোরও একসময় প্রাণ ছিল। পরে বুড়ো হয়ে মরে গিয়ে তারা জমতে শুরু করে সাগরের তলদেশে। মরে যাওয়ার পর তাদের দেহের চারপাশে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের একটি পাথুরে স্তর তৈরি হয়। সেটাকেই আমরা প্রবাল বলি। এই প্রবালগুলো এভাবে লাখ লাখ বছর জমে একেকটি পাথরের আকৃতি নেয়। আর কোটি কোটি বছর জমে একটি দ্বীপ সৃষ্টি করে। কী অদ্ভুত প্রকৃতির খেয়াল!

ছেলেকে বললাম, ‘কোটি কোটি বছর পুরোনো এই পাথরবাগান কোনোভাবেই নষ্ট করা উচিত নয়। এরা খুবই দুর্লভ। পৃথিবীতে অল্প কিছু আছে, যার মধ্যে একটি আছে আমাদের দেশে। যাকে আমরা সেন্ট মার্টিন বলে জানি।’ সেন্ট মার্টিনের কথা বলতে বলতে মন খারাপ হয়ে গেল। দেশে এত সুন্দর একটা দ্বীপ আছে, যাকে ইচ্ছে করলেই এমন মালদ্বীপের মতো করা যেত। কিন্তু আমরা চরম অবহেলায় ফেলে রেখেছি। গুনগুন করে গাইতে লাগলাম—
জনম গেল বৃথা কাজে
আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে
তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে, শক্তিদাতা
ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা।
রিফে সাঁতার কাটতে কাটতে আমরা সাবমেরিনের প্রোগ্রাম করলাম। রিসোর্টে একটি ছোট সাবমেরিন আছে। সেটা ঠিক সাবমেরিন নয়। সাবমেরিন আকৃতির নৌকা বলা যায়। নিচের দিকে ফাঁকা একটি জায়গায় ছয়-সাতজন বসতে পারে, চারদিক স্বচ্ছ জানালা দিয়ে ঘেরা। রিফের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে এই সাবমেরিনের জুড়ি নেই। স্নোরকেলিং করে অল্প একটু জায়গা ঘুরে দেখা যেতে পারে। ভালো ডাইভিংয়ের জন্য দরকার ট্রেনিং। এই দুটোর মাঝে সাবমেরিনে ভ্রমণ ভালো সুযোগ হতে পারে। সাবমেরিনের বর্ণনা প্রথমেই একটু বলেছিলাম। কিন্তু তার সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশের শব্দ আমার অভিধানে নেই।
আমাদের রিসোর্টে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট পনেরোটি রেস্টুরেন্ট ছিল। তার মধ্যে কিছু ইন্টারন্যাশনাল চেইন রেস্টুরেন্ট। মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব তেমনি এক রেস্টুরেন্ট। আজ ডিনারের জন্য আমরা সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। এই মিনিস্ট্রি অব ক্র্যাব এশিয়ার ছয়টি দেশে তাদের রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছে। ওয়ার্ল্ডস ফিফটি বেস্ট রেস্টুরেন্টের তালিকায় তাদের অবস্থান পঁচিশ। বড় বড় কাঁকড়াই তাদের প্রধান আকর্ষণ। তাদের প্রধান নীতি হলো, তারা হিমায়িত খাবার পরিবেশন করে না। এ জন্য তাদের বিশাল ঝামেলা পোহাতে হয়। মালদ্বীপের এই রেস্টুরেন্টে তাদের কাঁকড়াগুলো আসে প্রাইভেট প্লেনে করে, শ্রীলঙ্কা থেকে। তারপর তাদের বসবাস উপযোগী একটি চৌবাচ্চায় জ্যান্ত সংরক্ষণ করা হয় প্লেটে পরিবেশন করার আগ পর্যন্ত। ক্রেতাদের চাহিদামতো জ্যান্ত কাঁকড়া নিয়ে আসা হয় তার আকৃতি ঠিক আছে কি না, দেখানোর জন্য। এখানে প্রায় দশ আকারের কাঁকড়া পাওয়া যায়। ছোটটা আধা কেজি আর বড়টা দুই কেজি ওজনের। তারা প্রায় পাঁচ রকমভাবে কাঁকড়া রান্না করতে পারে। এর মধ্যে পিপার ক্র্যাব অসম্ভব জনপ্রিয়।
আমরা পিপার ক্র্যাব অর্ডার করেছিলাম, সঙ্গে ছিল ক্র্যাব লিভার পাটে, এপেটাইজারে। ছোট্ট একটি বিস্কুটের ওপর এই ক্র্যাব লিভার পেস্ট জেলির মতো লাগিয়ে তার ওপরে ম্যাপেল সিরাপ দিয়ে কুট্টুস করে কামড় দিয়ে খেতে হয়। দুই কেজির বিশাল পিপার ক্র্যাব খাবার জন্য ঘাম ঝরানো জরুরি। রীতিমতো ছেনি-বাটাল নিয়ে ভাঙতে হয় ক্র্যাবের শক্ত খোল। তারপর বের হয় কাঙ্ক্ষিত সাদা মাংস। পিপার সসে ডুবিয়ে সেই মাংস মুখে পুরে অনায়াসে ভুলে যাওয়া যায় জগৎ-সংসার। ডেজার্টে ছিল নারকেলের খোলে তৈরি ফ্রেঞ্চ ক্রিম ব্রুলে। এবার ঘুম।

আজ ঘুম ভাঙল বৃষ্টির শব্দে। সে কী বৃষ্টি! গতকালের ভেজা কাপড়গুলো শুকাতে দেওয়া হয়েছিল টেরেসে। সেগুলো আবার ভিজে গেল। রুমের দরজা খুলে টেরেসে গিয়ে নতুন রঙের আভা দেখলাম। সবুজ সমুদ্র আরও সবুজ দেখা যাচ্ছে আর ওপরে কালো আকাশ। সে অপরূপ ব্যাপার! সমুদ্র ভয়ংকর হতে লাগল। বাড়তে লাগল বৃষ্টির তেজ। মালদ্বীপের বৃষ্টি নাকি ভয়ংকর—একবার শুরু হলে এক সপ্তাহ। মন খারাপ হয়ে গেল। আরও দুই দিন যে থাকতে হবে! কিন্তু কিছুক্ষণ পরই মেঘ কেটে গিয়ে চমৎকার এক সূর্যের দেখা পেলাম। পুরো পরিবার নিয়ে রিফে নেমে গেলাম। গতকাল নাকি এক বিশাল মান্তা রে ঢুকেছে রিফে।
এই প্রাণীটা বেশ মজার। এরা নাকি তেইশ ফুট পর্যন্ত চওড়া হতে পারে! অদ্ভুত দর্শনের জন্য এদের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে ভীষণ ভয় পেত। প্রাচীনকালে নাবিকেরা বিশ্বাস করতেন যে, তারা মানুষের জন্য বিপজ্জনক এবং নোঙরে টান দিয়ে নৌকা ডোবাতে পারে। পরে যখন ডাইভিং জনপ্রিয় হয়, তখন মানুষ বুঝতে শেখে, এরা নিরীহ গোছের প্রাণী আর শুরু করে তাদের ওপর অত্যাচার। তাদের ফুলকা চায়নিজ ওষুধের এক দুর্মূল্য উপাদান। এই ফুলকার জন্য হাজার হাজার মান্তা রে প্রতি বছর মারা হয়। সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় গত বছরই তাদের বিপদাপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
দুপুরে যখন আমরা পানি থেকে উঠে খাবার খাচ্ছিলাম, তখনই দেখা মিলল সেই বিশাল কালো মান্তা রের। প্রবল দাপটে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে রিফে। মাছেদের খেলা দেখতে দেখতে বিকেল নামল। বেগুনি হয়ে উঠল আকাশ। রিফের সেই আকাশি পানি তখনো আকাশি। তবে কিছুটা কালচে। চমৎকার বেগুনি আকাশের নিচে কালচে আকাশি সমুদ্র ঠিক যেন মনভোলা এক চিত্রকরের হাতে আঁকা ছবি। প্রকৃতির এমন রূপ দেখে যেকোনো শিল্পীর মনে হতে বাধ্য, এখানে বাকি জীবন কাটালে মন্দ হতো না। সারা দিন শুধু ছবি আঁকব, ফিরব না আর যান্ত্রিক নগরে। সত্যি সত্যি এমন পাগলামি কিন্তু একজন করেছিলেন—তাঁর নাম পল গগাঁ। ফরাসি এই শিল্পী তাহিতি নামের এক দ্বীপে গিয়ে তার প্রেমে পড়ে যান। তারপর সবকিছু ছেড়েছুড়ে আমৃত্যু বসবাস করতে থাকেন সেই দ্বীপে।
মালদ্বীপের এই তটে বসে গগাঁর মনের অবস্থা টের পাচ্ছিলাম। এই ক্ষুদ্র জীবনে খুব বেশি কিছু কি দরকার? তবু ফিরে যেতে হবে কাল। মন খারাপ হয়ে গেল। আকাশে তখন তারা ফুটে উঠছে। বেগুনি থেকে গাঢ় নীল হচ্ছে পৃথিবী।
পৃথিবী এত সুন্দর কেন?

বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে
২ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া
৪ ঘণ্টা আগে
আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।
৪ ঘণ্টা আগে
আমাদের প্রত্যেকের ত্বক তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্য। সুস্থ, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ত্বক পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো আপনার ত্বকের ধরন বা ‘স্কিন টাইপ’ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা। অনেকে ত্বকের ধরন না জেনে বিভিন্ন প্রসাধন ব্যবহার করেন; যা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। আপনার ত্বক ঠিক কী চাইছে, তা বুঝতে পারাটাই হলো
৬ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্রী উদ্যোগ কিংবা ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্নদর্শী প্রকল্প। এই সবকটি স্থাপনা আজ বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নগর সভ্যতার মাইলফলক। তাদের মূল সার্থকতা এখানেই যে, তারা বইকে কেবল তাকে সাজিয়ে রাখেনি বরং বইকে রূপান্তরিত করেছে এক একটি জীবন্ত পরিসরে। বইপ্রেমীদের জন্য পৃথিবীর সেরা সেই পাঁচটি লাইব্রেরি যেন পাঠ-স্বর্গের গল্প বলে। এই পাঁচটি লাইব্রেরি কেবল পড়ার জায়গা নয় বরং প্রতিটি বইপ্রেমীর জন্য একবার হলেও ঘুরে আসার মতো তীর্থস্থান।
অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানীর হৃদপিণ্ডে অবস্থিত এই গ্রন্থাগারটি জ্ঞানের এক বিশাল বাতিঘর। ১৮৫৬ সাল থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটি সংস্কৃতির অবাধ অধিকারের এক মূর্ত প্রতীক। এর মূল আকর্ষণ হলো ১৯১৩ সালে নির্মিত ’ট্রোব রিডিং রুম’। এক বিশাল ৩৫ মিটারের অষ্টভুজাকার গম্বুজের নিচে দাঁড়িয়ে মনে হবে আপনি কোনো এক আধুনিক উপাসনালয়ে আছেন। সরু সিঁড়ি দিয়ে যুক্ত এর উঁচু গ্যালারিগুলো কক্ষটির গম্ভীরতাকে এক অনন্য উচ্চতা দান করেছে। এডওয়ার্ডিয়ান স্থাপত্যের এই শ্রেষ্ঠ নিদর্শনটি গত এক শতাব্দী ধরে জ্ঞান বিনিময়ের এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দৃষ্টিভ্রম নাকি কোনো মায়াবী জগত? ২০১৭ সালে চীনে নির্মিত এই লাইব্রেরিটি পড়ার ঘরের চিরাচরিত ধারণা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। এখানে সবকিছুই শুভ্র। এর বইয়ের তাকগুলো ঢেউয়ের মতো খেলে গেছে পুরো দেয়াল জুড়ে, যা কখনও সিঁড়ি আবার কখনও বসার আসনে পরিণত হয়েছে। তাকিয়ে থাকলে মনে হবে তাকগুলো বুঝি মিশে গেছে ছাদের কোনো অলীক শিল্পকর্মে। স্থাপত্যের ঠিক মাঝখানে রয়েছে এক বিশাল স্বচ্ছ গোলক, যার নাম দেওয়া হয়েছে ’দ্য আই’ বা ’চক্ষু’। ৩৩ হাজার বর্গমিটারের এই রেট্রো-ফিউচারিস্টিক প্রাঙ্গণে ১০ লক্ষেরও বেশি বই রয়েছে। ডাচ সংস্থা MVRDV-এর তৈরি এই স্থাপত্যটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে মাত্র তিন বছর।
আমেরিকার সবচেয়ে গম্ভীর এবং আভিজাত্যপূর্ণ স্থান হলো এর জেফারসন উইং। মার্বেল পাথরের কারুকাজ আর সোনালি রঙের ছটায় এখানে তৈরি হয়েছে এক রাজকীয় পরিবেশ। ঐতিহাসিক চরিত্রদের আবক্ষ মূর্তি আর মোজাইকের পথ ধরে যখন আপনি অষ্টভুজাকার রিডিং রুমে প্রবেশ করবেন, তখন চারপাশের বিশালাকার গম্বুজ আর নরম আলো আপনাকে এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ফেলে দেবে। ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ নথি ও বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে এটি বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগার। বিরল পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে কমিক বই কিংবা বিজ্ঞানের জটিল কাজ—সবই এখানে সাজানো আছে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত তাকে। পাথরের গায়ে এখানে খোদাই করা আছে আমেরিকার উচ্চাভিলাষের গল্প।

অস্ট্রিয়ার স্টাইরিয়া অঞ্চলের পাহাড়ি জনপদে ১৭৭৬ সাল থেকে টিকে আছে এই বারোক স্থাপত্যের বিস্ময়। সাতটি বিশাল গম্বুজের নিচে শিল্পী বার্তোলোমিও আলতোমন্তের আঁকা ফ্রেস্কো বা দেয়ালচিত্রগুলো লাইব্রেরিটিকে এক স্বর্গীয় রূপ দিয়েছে। ৪৮টি জানালা দিয়ে আসা আলো যখন বাঁকানো তাকগুলোতে সাজানো লুথারের বাইবেলসহ প্রায় ৭০ হাজার বইয়ের ওপর পড়ে, তখন এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি হয়। শিল্পী জোসেফ স্টামেলের খোদাই করা মূর্তি আর সাদা-কালো মার্বেলের মেঝে জ্ঞান আর শিল্পের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটিয়েছে এখানে।
এই গ্রন্থাগারের জন্ম হয়েছিল নির্বাসনের ইতিহাস থেকে। ১৮১০ সালে পর্তুগিজ রাজদরবার যখন লিসবন থেকে পালিয়ে রিওতে আশ্রয় নেয়, তখন তারা সাথে করে নিয়ে আসে বিশাল বইয়ের ভাণ্ডার। সেই সংগ্রহের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে নতুন বিশ্বের প্রথম বড় এই গ্রন্থাগার। বর্তমানে এখানে নথির সংখ্যা প্রায় ৯০ লক্ষ। ১৯১০ সালে রিও ব্রাঙ্কো অ্যাভিনিউতে নির্মিত হয় এর বিশাল নিওক্লাসিক্যাল ভবনটি। এর ভেতরে লোহার কারুকার্যময় ব্যালকনি, বিশালাকার থামের সারি আর সুউচ্চ অলিন্দগুলো আপনাকে মনে করিয়ে দেবে সেই রাজকীয় ঐতিহ্যের কথা।
সূত্র: ইএনভোলস

বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্রী উদ্যোগ কিংবা ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্নদর্শী প্রকল্প। এই সবকটি স্থাপনা আজ বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নগর সভ্যতার মাইলফলক। তাদের মূল সার্থকতা এখানেই যে, তারা বইকে কেবল তাকে সাজিয়ে রাখেনি বরং বইকে রূপান্তরিত করেছে এক একটি জীবন্ত পরিসরে। বইপ্রেমীদের জন্য পৃথিবীর সেরা সেই পাঁচটি লাইব্রেরি যেন পাঠ-স্বর্গের গল্প বলে। এই পাঁচটি লাইব্রেরি কেবল পড়ার জায়গা নয় বরং প্রতিটি বইপ্রেমীর জন্য একবার হলেও ঘুরে আসার মতো তীর্থস্থান।
অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানীর হৃদপিণ্ডে অবস্থিত এই গ্রন্থাগারটি জ্ঞানের এক বিশাল বাতিঘর। ১৮৫৬ সাল থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটি সংস্কৃতির অবাধ অধিকারের এক মূর্ত প্রতীক। এর মূল আকর্ষণ হলো ১৯১৩ সালে নির্মিত ’ট্রোব রিডিং রুম’। এক বিশাল ৩৫ মিটারের অষ্টভুজাকার গম্বুজের নিচে দাঁড়িয়ে মনে হবে আপনি কোনো এক আধুনিক উপাসনালয়ে আছেন। সরু সিঁড়ি দিয়ে যুক্ত এর উঁচু গ্যালারিগুলো কক্ষটির গম্ভীরতাকে এক অনন্য উচ্চতা দান করেছে। এডওয়ার্ডিয়ান স্থাপত্যের এই শ্রেষ্ঠ নিদর্শনটি গত এক শতাব্দী ধরে জ্ঞান বিনিময়ের এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দৃষ্টিভ্রম নাকি কোনো মায়াবী জগত? ২০১৭ সালে চীনে নির্মিত এই লাইব্রেরিটি পড়ার ঘরের চিরাচরিত ধারণা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। এখানে সবকিছুই শুভ্র। এর বইয়ের তাকগুলো ঢেউয়ের মতো খেলে গেছে পুরো দেয়াল জুড়ে, যা কখনও সিঁড়ি আবার কখনও বসার আসনে পরিণত হয়েছে। তাকিয়ে থাকলে মনে হবে তাকগুলো বুঝি মিশে গেছে ছাদের কোনো অলীক শিল্পকর্মে। স্থাপত্যের ঠিক মাঝখানে রয়েছে এক বিশাল স্বচ্ছ গোলক, যার নাম দেওয়া হয়েছে ’দ্য আই’ বা ’চক্ষু’। ৩৩ হাজার বর্গমিটারের এই রেট্রো-ফিউচারিস্টিক প্রাঙ্গণে ১০ লক্ষেরও বেশি বই রয়েছে। ডাচ সংস্থা MVRDV-এর তৈরি এই স্থাপত্যটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে মাত্র তিন বছর।
আমেরিকার সবচেয়ে গম্ভীর এবং আভিজাত্যপূর্ণ স্থান হলো এর জেফারসন উইং। মার্বেল পাথরের কারুকাজ আর সোনালি রঙের ছটায় এখানে তৈরি হয়েছে এক রাজকীয় পরিবেশ। ঐতিহাসিক চরিত্রদের আবক্ষ মূর্তি আর মোজাইকের পথ ধরে যখন আপনি অষ্টভুজাকার রিডিং রুমে প্রবেশ করবেন, তখন চারপাশের বিশালাকার গম্বুজ আর নরম আলো আপনাকে এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ফেলে দেবে। ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ নথি ও বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে এটি বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগার। বিরল পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে কমিক বই কিংবা বিজ্ঞানের জটিল কাজ—সবই এখানে সাজানো আছে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত তাকে। পাথরের গায়ে এখানে খোদাই করা আছে আমেরিকার উচ্চাভিলাষের গল্প।

অস্ট্রিয়ার স্টাইরিয়া অঞ্চলের পাহাড়ি জনপদে ১৭৭৬ সাল থেকে টিকে আছে এই বারোক স্থাপত্যের বিস্ময়। সাতটি বিশাল গম্বুজের নিচে শিল্পী বার্তোলোমিও আলতোমন্তের আঁকা ফ্রেস্কো বা দেয়ালচিত্রগুলো লাইব্রেরিটিকে এক স্বর্গীয় রূপ দিয়েছে। ৪৮টি জানালা দিয়ে আসা আলো যখন বাঁকানো তাকগুলোতে সাজানো লুথারের বাইবেলসহ প্রায় ৭০ হাজার বইয়ের ওপর পড়ে, তখন এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি হয়। শিল্পী জোসেফ স্টামেলের খোদাই করা মূর্তি আর সাদা-কালো মার্বেলের মেঝে জ্ঞান আর শিল্পের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটিয়েছে এখানে।
এই গ্রন্থাগারের জন্ম হয়েছিল নির্বাসনের ইতিহাস থেকে। ১৮১০ সালে পর্তুগিজ রাজদরবার যখন লিসবন থেকে পালিয়ে রিওতে আশ্রয় নেয়, তখন তারা সাথে করে নিয়ে আসে বিশাল বইয়ের ভাণ্ডার। সেই সংগ্রহের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে নতুন বিশ্বের প্রথম বড় এই গ্রন্থাগার। বর্তমানে এখানে নথির সংখ্যা প্রায় ৯০ লক্ষ। ১৯১০ সালে রিও ব্রাঙ্কো অ্যাভিনিউতে নির্মিত হয় এর বিশাল নিওক্লাসিক্যাল ভবনটি। এর ভেতরে লোহার কারুকার্যময় ব্যালকনি, বিশালাকার থামের সারি আর সুউচ্চ অলিন্দগুলো আপনাকে মনে করিয়ে দেবে সেই রাজকীয় ঐতিহ্যের কথা।
সূত্র: ইএনভোলস

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দি সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর
০৮ এপ্রিল ২০২২
প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া
৪ ঘণ্টা আগে
আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।
৪ ঘণ্টা আগে
আমাদের প্রত্যেকের ত্বক তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্য। সুস্থ, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ত্বক পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো আপনার ত্বকের ধরন বা ‘স্কিন টাইপ’ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা। অনেকে ত্বকের ধরন না জেনে বিভিন্ন প্রসাধন ব্যবহার করেন; যা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। আপনার ত্বক ঠিক কী চাইছে, তা বুঝতে পারাটাই হলো
৬ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া লাগলেই এই তুষার প্রাসাদগুলো নিভৃতে গলে যায়। তখন তারা ফিরে যায় আপন উৎস, নদীর বুকে। আপনি কি কখনো হিমাঙ্কের নিচে এমন বরফের বিছানায় রাত কাটানোর অদম্য রোমাঞ্চ অনুভব করতে চেয়েছেন?
অনেকে ভাবেন, বরফের ঘরে ঘুমানো মানেই জমে যাওয়া। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রুমের তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে পর্যটকদের দেওয়া হয় বিশেষ থার্মাল স্লিপিং ব্যাগ এবং রেইনডিয়ারের চামড়া, যা শরীরের স্বাভাবিক উষ্ণতা ধরে রাখে। বাথরুম বা পোশাক পরিবর্তনের জন্য পাশেই থাকে উত্তপ্ত আধুনিক ভবন। ২০২৫ সালের এই হাড়কাঁপানো মৌসুমেও সুইডেন, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড আর কানাডায় ফিরে এসেছে এই অনন্য ‘বরফবিলাস’।

আইস হোটেল ৩৬
বিশ্বের বিখ্যাত বরফ হোটেল আইস হোটেল ৩৬। প্রতিবছর এটি নতুন করে তৈরি করা হয় এবং এর প্রধান আকর্ষণ হলো বরফের ভাস্কর্য, বরফের ঘর, বরফের বার এবং আর্কটিক কার্যকলাপ; যেমন ডগ স্লেডিং ও নর্দান লাইট দেখা। সুইডিশ ল্যাপল্যান্ডের জুকাসজারভি ভিলেজে এ বছর উদ্বোধন করা হয়েছে আইস হোটেল ৩৬। নামের সংখ্যাটিই বলে দেয়, এটি তাদের ৩৬তম সংস্করণ। এবার এখানে ১২টি আর্ট স্যুট, আইস রুম, একটি প্রধান হল এবং সেরিমনি হল থাকবে। প্রতিবছর টোর্নে নদী থেকে বরফ সংগ্রহ করে হোটেলটি তৈরি করা হয়। বসন্তে এটি গলে নদীতে ফিরে যায়। এ বছরের সবচেয়ে বড় চমক হলো বরফ দিয়ে খোদাই করা একটি পূর্ণাঙ্গ গ্র্যান্ড পিয়ানো। অদ্ভুত শোনালেও সত্যি, এটি শুধু প্রদর্শনের জন্য নয়, রীতিমতো বাজানোর যোগ্য। ১২টি দেশের ৩৩ জন তুখোড় শিল্পী তাঁদের তুলির বদলে ছেনি-হাতুড়ির কারুকার্যে ফুটিয়ে তুলেছেন একেকটি কক্ষ বা আর্ট স্যুট। কোথাও দেয়ালে খোদাই করা হিমায়িত লাইব্রেরি, আবার কোথাও গোলকগুলো মাথার ওপর ভেসে থাকার বিভ্রম তৈরি করছে। জেনে রাখুন, এই হোটেলে দুজনের জন্য এক রাত কাটানোর খরচ পড়বে প্রায় ৬০০ ইউরো।

উত্তর মেরুর অন্যান্য বরফস্বর্গ
সুইডেনের বাইরেও ফিনল্যান্ড থেকে কানাডা পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে এই হিমাঙ্ক-বিজয়ীদের আস্তানা।
ফিনল্যান্ডের আপুক্কা রিসোর্ট: ল্যাপল্যান্ডের রোভানিয়েনিতে কাচের তৈরি ইগলুতে শুয়ে আকাশের ‘নর্দান লাইটস’ বা মেরুজ্যোতি দেখা এক স্বর্গীয় অনুভূতি। কাচের ছাদের ইগলু থেকে শুরু করে তুষারাবৃত বনের মধ্য দিয়ে রেইনডিয়ারের যাত্রা পর্যন্ত, আপুক্কা রিসোর্ট আপনার আর্কটিক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়। আগস্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চলবে। এখানে খরচ শুরু হয় ৪০০ ইউরো থেকে।
সুইজারল্যান্ডের ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট: আল্পস পর্বতমালার ২ হাজার ৭০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই ইগলু ভিলেজ। এই ইগলু গ্রামের অবস্থান এতটাই চমৎকার যে আপনি যখন এর রোদ-ঝলমলে বারান্দায় বসে কফি খাবেন কিংবা খোলা আকাশের নিচে উষ্ণ পানিতে হট টব বা ঘূর্ণি জলধারায় গা এলিয়ে দিতে পারবেন। আর আপনার ঠিক চোখের সামনে ধরা দেবে সুইজারল্যান্ডের সব থেকে আইকনিক পাহাড় ‘ম্যাটারহর্ন’। এখানে রাত কাটাতে লাগবে ৪৫০ ইউরো।
কানাডার হোটেল ডি গ্লেস: উত্তর আমেরিকার একমাত্র বরফ হোটেল এটি। এখানে কেবল থাকার ঘর নয়, রয়েছে বরফ-বার, হট টব এবং শরীর চাঙা করার সাউনা। পশমি চাদর, মেরুজ্যোতির আভা আর স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ নিস্তব্ধতার মাঝে হাতে খোদাই করা একটি স্যুটে রাত কাটানোর রোমাঞ্চই আলাদা। এখানে থাকার খরচ শুরু হয় ৫০০ ইউরো থেকে।

যেভাবে গড়া হয় তুষার প্রাসাদ
একটি আইস হোটেল তৈরি করা আর এক মহাকাব্য রচনা করা প্রায় একই কথা। এর প্রস্তুতি শুরু হয় সাত-আট মাস আগে থেকে। প্রথমে বরফ সংগ্রহের পালা। বসন্তের শেষে যখন বরফ সবচেয়ে স্বচ্ছ ও পুরু থাকে, তখন টর্ন রিভারের মতো নদীগুলো থেকে বিশাল বিশাল বরফের চাঁই কেটে নেওয়া হয়। এরপর সেগুলো সোলার পাওয়ারড হ্যাঙ্গারে যত্ন করে রাখা হয় পরবর্তী শীত পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় নির্মাণযজ্ঞ। নভেম্বর মাসে যখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে স্থির হয়, তখন প্রায় ৯০ জন শিল্পী, ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিকের এক অমানুষিক পরিশ্রমে মাত্র ৬ সপ্তাহে গড়ে ওঠে এই স্থাপত্য। নির্মাণের গোপন উপাদান ‘সনিস’। এটি তৈরিতে শত শত টন স্বচ্ছ বরফের পাশাপাশি ব্যবহৃত হয় এই বিশেষ উপাদান। এটি তুষার ও বরফের এমন এক বিশেষ মিশ্রণ, যা দেয়াল ও ছাদকে পাথরের মতো মজবুত করে।
সূত্র: আফ্রিকা নিউজ, আপুক্কা রিসোর্ট ডটকম, ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট ডটকম, হোটেল ডি গ্লেস ডটকম

প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া লাগলেই এই তুষার প্রাসাদগুলো নিভৃতে গলে যায়। তখন তারা ফিরে যায় আপন উৎস, নদীর বুকে। আপনি কি কখনো হিমাঙ্কের নিচে এমন বরফের বিছানায় রাত কাটানোর অদম্য রোমাঞ্চ অনুভব করতে চেয়েছেন?
অনেকে ভাবেন, বরফের ঘরে ঘুমানো মানেই জমে যাওয়া। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রুমের তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে পর্যটকদের দেওয়া হয় বিশেষ থার্মাল স্লিপিং ব্যাগ এবং রেইনডিয়ারের চামড়া, যা শরীরের স্বাভাবিক উষ্ণতা ধরে রাখে। বাথরুম বা পোশাক পরিবর্তনের জন্য পাশেই থাকে উত্তপ্ত আধুনিক ভবন। ২০২৫ সালের এই হাড়কাঁপানো মৌসুমেও সুইডেন, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড আর কানাডায় ফিরে এসেছে এই অনন্য ‘বরফবিলাস’।

আইস হোটেল ৩৬
বিশ্বের বিখ্যাত বরফ হোটেল আইস হোটেল ৩৬। প্রতিবছর এটি নতুন করে তৈরি করা হয় এবং এর প্রধান আকর্ষণ হলো বরফের ভাস্কর্য, বরফের ঘর, বরফের বার এবং আর্কটিক কার্যকলাপ; যেমন ডগ স্লেডিং ও নর্দান লাইট দেখা। সুইডিশ ল্যাপল্যান্ডের জুকাসজারভি ভিলেজে এ বছর উদ্বোধন করা হয়েছে আইস হোটেল ৩৬। নামের সংখ্যাটিই বলে দেয়, এটি তাদের ৩৬তম সংস্করণ। এবার এখানে ১২টি আর্ট স্যুট, আইস রুম, একটি প্রধান হল এবং সেরিমনি হল থাকবে। প্রতিবছর টোর্নে নদী থেকে বরফ সংগ্রহ করে হোটেলটি তৈরি করা হয়। বসন্তে এটি গলে নদীতে ফিরে যায়। এ বছরের সবচেয়ে বড় চমক হলো বরফ দিয়ে খোদাই করা একটি পূর্ণাঙ্গ গ্র্যান্ড পিয়ানো। অদ্ভুত শোনালেও সত্যি, এটি শুধু প্রদর্শনের জন্য নয়, রীতিমতো বাজানোর যোগ্য। ১২টি দেশের ৩৩ জন তুখোড় শিল্পী তাঁদের তুলির বদলে ছেনি-হাতুড়ির কারুকার্যে ফুটিয়ে তুলেছেন একেকটি কক্ষ বা আর্ট স্যুট। কোথাও দেয়ালে খোদাই করা হিমায়িত লাইব্রেরি, আবার কোথাও গোলকগুলো মাথার ওপর ভেসে থাকার বিভ্রম তৈরি করছে। জেনে রাখুন, এই হোটেলে দুজনের জন্য এক রাত কাটানোর খরচ পড়বে প্রায় ৬০০ ইউরো।

উত্তর মেরুর অন্যান্য বরফস্বর্গ
সুইডেনের বাইরেও ফিনল্যান্ড থেকে কানাডা পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে এই হিমাঙ্ক-বিজয়ীদের আস্তানা।
ফিনল্যান্ডের আপুক্কা রিসোর্ট: ল্যাপল্যান্ডের রোভানিয়েনিতে কাচের তৈরি ইগলুতে শুয়ে আকাশের ‘নর্দান লাইটস’ বা মেরুজ্যোতি দেখা এক স্বর্গীয় অনুভূতি। কাচের ছাদের ইগলু থেকে শুরু করে তুষারাবৃত বনের মধ্য দিয়ে রেইনডিয়ারের যাত্রা পর্যন্ত, আপুক্কা রিসোর্ট আপনার আর্কটিক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়। আগস্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চলবে। এখানে খরচ শুরু হয় ৪০০ ইউরো থেকে।
সুইজারল্যান্ডের ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট: আল্পস পর্বতমালার ২ হাজার ৭০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই ইগলু ভিলেজ। এই ইগলু গ্রামের অবস্থান এতটাই চমৎকার যে আপনি যখন এর রোদ-ঝলমলে বারান্দায় বসে কফি খাবেন কিংবা খোলা আকাশের নিচে উষ্ণ পানিতে হট টব বা ঘূর্ণি জলধারায় গা এলিয়ে দিতে পারবেন। আর আপনার ঠিক চোখের সামনে ধরা দেবে সুইজারল্যান্ডের সব থেকে আইকনিক পাহাড় ‘ম্যাটারহর্ন’। এখানে রাত কাটাতে লাগবে ৪৫০ ইউরো।
কানাডার হোটেল ডি গ্লেস: উত্তর আমেরিকার একমাত্র বরফ হোটেল এটি। এখানে কেবল থাকার ঘর নয়, রয়েছে বরফ-বার, হট টব এবং শরীর চাঙা করার সাউনা। পশমি চাদর, মেরুজ্যোতির আভা আর স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ নিস্তব্ধতার মাঝে হাতে খোদাই করা একটি স্যুটে রাত কাটানোর রোমাঞ্চই আলাদা। এখানে থাকার খরচ শুরু হয় ৫০০ ইউরো থেকে।

যেভাবে গড়া হয় তুষার প্রাসাদ
একটি আইস হোটেল তৈরি করা আর এক মহাকাব্য রচনা করা প্রায় একই কথা। এর প্রস্তুতি শুরু হয় সাত-আট মাস আগে থেকে। প্রথমে বরফ সংগ্রহের পালা। বসন্তের শেষে যখন বরফ সবচেয়ে স্বচ্ছ ও পুরু থাকে, তখন টর্ন রিভারের মতো নদীগুলো থেকে বিশাল বিশাল বরফের চাঁই কেটে নেওয়া হয়। এরপর সেগুলো সোলার পাওয়ারড হ্যাঙ্গারে যত্ন করে রাখা হয় পরবর্তী শীত পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় নির্মাণযজ্ঞ। নভেম্বর মাসে যখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে স্থির হয়, তখন প্রায় ৯০ জন শিল্পী, ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিকের এক অমানুষিক পরিশ্রমে মাত্র ৬ সপ্তাহে গড়ে ওঠে এই স্থাপত্য। নির্মাণের গোপন উপাদান ‘সনিস’। এটি তৈরিতে শত শত টন স্বচ্ছ বরফের পাশাপাশি ব্যবহৃত হয় এই বিশেষ উপাদান। এটি তুষার ও বরফের এমন এক বিশেষ মিশ্রণ, যা দেয়াল ও ছাদকে পাথরের মতো মজবুত করে।
সূত্র: আফ্রিকা নিউজ, আপুক্কা রিসোর্ট ডটকম, ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট ডটকম, হোটেল ডি গ্লেস ডটকম

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দি সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর
০৮ এপ্রিল ২০২২
বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে
২ ঘণ্টা আগে
আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।
৪ ঘণ্টা আগে
আমাদের প্রত্যেকের ত্বক তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্য। সুস্থ, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ত্বক পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো আপনার ত্বকের ধরন বা ‘স্কিন টাইপ’ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা। অনেকে ত্বকের ধরন না জেনে বিভিন্ন প্রসাধন ব্যবহার করেন; যা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। আপনার ত্বক ঠিক কী চাইছে, তা বুঝতে পারাটাই হলো
৬ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।
বৃষ
আজকের মূল মনোযোগ থাকবে পেটের দিকে। বিদেশের কোনো কাজ বা দূরে ভ্রমণের সুযোগ আসতে পারে, কিন্তু মন পড়ে থাকবে বিরিয়ানির হাঁড়িতে। আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো, তবে খরচ কমাতে আজ বন্ধুর পকেটের দিকে নজর রাখুন! মনে রাখবেন, বাজেট মানে শুধুই ডায়েরির পাতা নয়, মানিব্যাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা।
মিথুন
আজ মনে হবে আপনি একই সঙ্গে পঞ্চগড় আর লালপুরে আছেন। পরস্পরবিরোধী আবেগ আপনাকে ভোগাবে। একদিকে মনে হবে খুব কাজ করি, অন্যদিকে লেপ ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করবে না। বিবাহিতদের জন্য দিনটি ‘জি হুজুর’ বলে কাটানোই নিরাপদ। সাতটি বিষাদ ও বিচ্ছেদের গান শুনুন, আর না হলে অন্তত সাতবার দীর্ঘশ্বাস ফেলুন।
কর্কট
আজ আপনার আবেগ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়বে। তুচ্ছ কারণে চোখে পানি আসতে পারে। ব্যবসায় বড় বিনিয়োগের প্ল্যান আজ ড্রয়ারেই থাক। কারণ, আপনার বিচারবুদ্ধি আজ আবেগের বন্যায় ভাসছে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, কিন্তু ঝগড়া করবেন না। ফেসবুক বা ইনস্টায় ইমোশনাল স্ট্যাটাস দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
সিংহ
আজ যেখানেই যাবেন, লাইমলাইট আপনার ওপর থাকবে। গ্রহ বলছে আপনি প্রচুর আত্মবিশ্বাসী। তবে অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় একটু ‘ভলিউম’ কমিয়ে রাখুন, নতুবা তারা আপনার রাজকীয় গর্জনে ভয় পেয়ে ছুটি নিয়ে নিতে পারে! বড়দের সম্মান দিন, আর ছোটদের চকলেট খাইয়ে শান্ত রাখুন।
কন্যা
পারিপার্শ্বিক অস্থিরতা আপনাকে আজ একটু খিটখিটে করে তুলতে পারে। চাইবেন সবকিছু একদম নিখুঁত হোক, কিন্তু পৃথিবীটা তো আপনার নোটবই নয়! সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরুন, সঙ্গীর ভুল ধরাটা আজকের মতো অফ রাখুন। ঘর গোছাতে গিয়ে নিজের মাথাটা বেশি অগোছালো করবেন না।
তুলা
শরীর আজ বেশ চনমনে থাকবে। অনেক দিন ধরে আটকে থাকা কাজ ঝটপট শেষ করে ফেলবেন। তবে সাবধান, সংসারের বিবাদ আজ আপনার শান্তির রাজ্যে হানা দিতে পারে। টাকাপয়সার যোগ ভালো হলেও পকেটে ফুটো যেন না হয় খেয়াল রাখুন। অহেতুক তর্কে ‘মৌনতাই শ্রেয়’।
বৃশ্চিক
আজ আপনি চার মাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে কনফিউজড বোধ করবেন—ডানে যাব না বাঁয়ে? রিয়েল এস্টেট বা জমি-সংক্রান্ত কাজে লাভের মুখ দেখতে পারেন। প্রেমে আজ রসপিঠার মতো মিষ্টি সম্পর্ক থাকবে, যদি না আপনি পুরোনো কোনো ঝগড়া টেনে আনেন। মনের কথা শুনুন, কিন্তু গুগল ম্যাপকেও একটু বিশ্বাস করুন।
ধনু
আজ আপনার রাশিতে গ্রহের মেলা বসেছে! আজ গোল্ডেন টাইম এনজয় করবেন। সৃজনশীল কাজে ফাটিয়ে দেবেন। টাকাপয়সা আসার প্রবল যোগ, কিন্তু সেই খুশিতে সবাইকে অকাতরে খাওয়াতে গিয়ে যেন নিজেকে উপোস করতে না হয়! মাজারে একটু শিরনি দিয়ে আসুন, মাথা ঠান্ডা থাকবে।
মকর
আজ আপনাকে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হতে পারে। তবে ফল হবে মিষ্টি। টাকা একদিকে পকেটে ঢুকবে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ গতিতে বেরিয়ে যাবে। বিদেশি কোম্পানি বা দূরপাল্লার যোগাযোগ থেকে লাভের খবর আসতে পারে। উপার্জনের খাতাটা একটু আড়াল করে রাখুন।
কুম্ভ
আজ নতুন লোকজনের সঙ্গে আলাপ হবে, যা জীবনের মানে বদলে দিতে পারে। সাধারণ কাজও আপনি অসাধারণভাবে করবেন। তবে অতিরিক্ত উৎসাহে যেন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসটা অন্তত আজকের জন্য ট্রাই করুন।
মীন
মীন রাশির জাতকেরা আজ কল্পনার জগতে ভাসবেন। ক্যারিয়ারে বড় কিছু করার সুযোগ আসবে। তবে বাস্তবে পা রাখাটা জরুরি। আর্থিক হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে পারেন। বন্ধুর সাহায্য নিলে কাজ সহজ হবে। আকাশকুসুম চিন্তা না করে হাতের কাজটা আগে শেষ করুন।

মেষ
আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।
বৃষ
আজকের মূল মনোযোগ থাকবে পেটের দিকে। বিদেশের কোনো কাজ বা দূরে ভ্রমণের সুযোগ আসতে পারে, কিন্তু মন পড়ে থাকবে বিরিয়ানির হাঁড়িতে। আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো, তবে খরচ কমাতে আজ বন্ধুর পকেটের দিকে নজর রাখুন! মনে রাখবেন, বাজেট মানে শুধুই ডায়েরির পাতা নয়, মানিব্যাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা।
মিথুন
আজ মনে হবে আপনি একই সঙ্গে পঞ্চগড় আর লালপুরে আছেন। পরস্পরবিরোধী আবেগ আপনাকে ভোগাবে। একদিকে মনে হবে খুব কাজ করি, অন্যদিকে লেপ ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করবে না। বিবাহিতদের জন্য দিনটি ‘জি হুজুর’ বলে কাটানোই নিরাপদ। সাতটি বিষাদ ও বিচ্ছেদের গান শুনুন, আর না হলে অন্তত সাতবার দীর্ঘশ্বাস ফেলুন।
কর্কট
আজ আপনার আবেগ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়বে। তুচ্ছ কারণে চোখে পানি আসতে পারে। ব্যবসায় বড় বিনিয়োগের প্ল্যান আজ ড্রয়ারেই থাক। কারণ, আপনার বিচারবুদ্ধি আজ আবেগের বন্যায় ভাসছে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, কিন্তু ঝগড়া করবেন না। ফেসবুক বা ইনস্টায় ইমোশনাল স্ট্যাটাস দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
সিংহ
আজ যেখানেই যাবেন, লাইমলাইট আপনার ওপর থাকবে। গ্রহ বলছে আপনি প্রচুর আত্মবিশ্বাসী। তবে অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় একটু ‘ভলিউম’ কমিয়ে রাখুন, নতুবা তারা আপনার রাজকীয় গর্জনে ভয় পেয়ে ছুটি নিয়ে নিতে পারে! বড়দের সম্মান দিন, আর ছোটদের চকলেট খাইয়ে শান্ত রাখুন।
কন্যা
পারিপার্শ্বিক অস্থিরতা আপনাকে আজ একটু খিটখিটে করে তুলতে পারে। চাইবেন সবকিছু একদম নিখুঁত হোক, কিন্তু পৃথিবীটা তো আপনার নোটবই নয়! সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরুন, সঙ্গীর ভুল ধরাটা আজকের মতো অফ রাখুন। ঘর গোছাতে গিয়ে নিজের মাথাটা বেশি অগোছালো করবেন না।
তুলা
শরীর আজ বেশ চনমনে থাকবে। অনেক দিন ধরে আটকে থাকা কাজ ঝটপট শেষ করে ফেলবেন। তবে সাবধান, সংসারের বিবাদ আজ আপনার শান্তির রাজ্যে হানা দিতে পারে। টাকাপয়সার যোগ ভালো হলেও পকেটে ফুটো যেন না হয় খেয়াল রাখুন। অহেতুক তর্কে ‘মৌনতাই শ্রেয়’।
বৃশ্চিক
আজ আপনি চার মাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে কনফিউজড বোধ করবেন—ডানে যাব না বাঁয়ে? রিয়েল এস্টেট বা জমি-সংক্রান্ত কাজে লাভের মুখ দেখতে পারেন। প্রেমে আজ রসপিঠার মতো মিষ্টি সম্পর্ক থাকবে, যদি না আপনি পুরোনো কোনো ঝগড়া টেনে আনেন। মনের কথা শুনুন, কিন্তু গুগল ম্যাপকেও একটু বিশ্বাস করুন।
ধনু
আজ আপনার রাশিতে গ্রহের মেলা বসেছে! আজ গোল্ডেন টাইম এনজয় করবেন। সৃজনশীল কাজে ফাটিয়ে দেবেন। টাকাপয়সা আসার প্রবল যোগ, কিন্তু সেই খুশিতে সবাইকে অকাতরে খাওয়াতে গিয়ে যেন নিজেকে উপোস করতে না হয়! মাজারে একটু শিরনি দিয়ে আসুন, মাথা ঠান্ডা থাকবে।
মকর
আজ আপনাকে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হতে পারে। তবে ফল হবে মিষ্টি। টাকা একদিকে পকেটে ঢুকবে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ গতিতে বেরিয়ে যাবে। বিদেশি কোম্পানি বা দূরপাল্লার যোগাযোগ থেকে লাভের খবর আসতে পারে। উপার্জনের খাতাটা একটু আড়াল করে রাখুন।
কুম্ভ
আজ নতুন লোকজনের সঙ্গে আলাপ হবে, যা জীবনের মানে বদলে দিতে পারে। সাধারণ কাজও আপনি অসাধারণভাবে করবেন। তবে অতিরিক্ত উৎসাহে যেন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসটা অন্তত আজকের জন্য ট্রাই করুন।
মীন
মীন রাশির জাতকেরা আজ কল্পনার জগতে ভাসবেন। ক্যারিয়ারে বড় কিছু করার সুযোগ আসবে। তবে বাস্তবে পা রাখাটা জরুরি। আর্থিক হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে পারেন। বন্ধুর সাহায্য নিলে কাজ সহজ হবে। আকাশকুসুম চিন্তা না করে হাতের কাজটা আগে শেষ করুন।

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দি সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর
০৮ এপ্রিল ২০২২
বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে
২ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া
৪ ঘণ্টা আগে
আমাদের প্রত্যেকের ত্বক তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্য। সুস্থ, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ত্বক পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো আপনার ত্বকের ধরন বা ‘স্কিন টাইপ’ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা। অনেকে ত্বকের ধরন না জেনে বিভিন্ন প্রসাধন ব্যবহার করেন; যা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। আপনার ত্বক ঠিক কী চাইছে, তা বুঝতে পারাটাই হলো
৬ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

আমাদের প্রত্যেকের ত্বক তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্য। সুস্থ, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ত্বক পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো আপনার ত্বকের ধরন বা ‘স্কিন টাইপ’ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা। অনেকে ত্বকের ধরন না জেনে বিভিন্ন প্রসাধন ব্যবহার করেন; যা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। আপনার ত্বক ঠিক কী চাইছে, তা বুঝতে পারাটাই হলো সঠিক রূপচর্চার মূলমন্ত্র।
আপনার ত্বক তৈলাক্ত হবে, নাকি শুষ্ক; তা মূলত কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এগুলোর মধ্যে প্রধান হলো বংশগতি বা জিন। এ ছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের ধরন বদলাতে পারে। হরমোনের পরিবর্তন, মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস, দৈনন্দিন শারীরিক পরিশ্রম এবং পরিবেশগত উপাদানও আপনার ত্বকের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। শরীরের বৃহত্তম এই অঙ্গের সঠিক যত্ন নিতে এর ধরন চেনা তাই অপরিহার্য। নিজের ত্বককে আপনার চেয়ে ভালো আর কেউ চেনে না। তাই কোনো নতুন পরামর্শ বা পণ্য ব্যবহারের আগে আপনার ত্বকের প্রয়োজনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন।
সিবাম একধরনের তৈলাক্ত উপাদান। ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে যখন পর্যাপ্ত সিবাম উৎপন্ন হয় না, তখন শুষ্ক হয়। আর একেই বলে শুষ্ক ত্বক। এমন ত্বকের অধিকারীদের জন্য খুব মৃদু ক্লিনজার ব্যবহার করা উচিত। ময়শ্চারাইজার হিসেবে এমন কিছু বেছে নিতে হবে, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় শুষ্ক ত্বকে নাক বা ভ্রুর আশপাশে ছত্রাকজনিত লালচে র্যাশ দেখা দিতে পারে, যাকে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বলা হয়; এর জন্য বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

যখন ত্বক অতিরিক্ত সিবাম উৎপাদন করে, তখন ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। এমন ত্বকে লোমকূপ বড় দেখায় এবং মুখ সব সময় চকচকে বা তেলতেলে থাকে। সিবাম বেশি হওয়ায় লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে, যা থেকে প্রায়ই ব্রণ হয়। তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা বেনজয়েল পারক্সাইড যুক্ত ক্লিনজার এবং ‘নন-কমেডোজেনিক’ (যা লোমকূপ বন্ধ করে না) পণ্য ব্যবহার করা ভালো। এ ছাড়া ব্যায়াম বা পরিশ্রমের পরপরই মুখ ধুয়ে ফেলা জরুরি।
এই ধরনের ত্বকে মুখের বিভিন্ন অংশ ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখায়। সাধারণত টি-জোন কপাল, নাক ও চিবুক তৈলাক্ত হয় এবং গাল শুষ্ক থাকে। এ ক্ষেত্রে মুখের প্রতিটি অংশকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী আলাদাভাবে যত্ন নিতে হয়।
একে ত্বকের আদর্শ অবস্থা বলা যেতে পারে। এই ত্বক খুব বেশি শুষ্কও নয়, আবার তৈলাক্তও নয়। এতে ব্রণের উপদ্রব বা সংবেদনশীলতা খুব একটা দেখা যায় না। সাধারণ ক্লিনজার দিয়ে দিনে দুবার মুখ ধোয়া এবং রাতে ও দিনে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করাই এই ত্বকের জন্য যথেষ্ট।

সংবেদনশীল ত্বক চেনার উপায় তেলের পরিমাণ নয়, বরং এর প্রতিক্রিয়া। এই ত্বক তৈলাক্ত বা শুষ্ক; যা-ই হোক না কেন, প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হয়। অনেক সময় একজিমা বা অ্যালার্জির মতো সমস্যাও থাকতে পারে। এমন ত্বকে রং, সুগন্ধি, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা বেনজয়েল পারক্সাইড যুক্ত কড়া পণ্য এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
আপনার ত্বকের ধরন নির্ধারণের জন্য কোনো ল্যাবরেটরি টেস্টের প্রয়োজন নেই। সহজ কিছু উপায়ে এটি বুঝতে পারেন। মুখ ধোয়ার ৩০ মিনিট পর লক্ষ করুন, ত্বক কেমন অনুভব করছে। এটি কি খুব তেলতেলে লাগছে, নাকি টান টান ও শুষ্ক মনে হচ্ছে? এভাবে বুঝবেন আপনার ত্বক শুষ্ক নাকি তৈলাক্ত। মুখ ধুয়ে শুকানোর ৩০ মিনিট পর একটি ব্লটিং পেপার নিয়ে গাল এবং টি-জোনে হালকা চাপ দিন। পেপারে তেলের পরিমাণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনার ত্বক তৈলাক্ত নাকি শুষ্ক।
দোকানে হাজারো প্রসাধনীর ভিড়ে বিভ্রান্ত না হয়ে সঠিক পণ্য বেছে নেওয়ার ক্ষমতা দেয় আপনার স্কিন টাইপ। আপনি অকালবার্ধক্য রোধ করতে চান, নাকি ব্রণ ও মেছতা দূর করতে চান। এটা আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া মেকআপ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এটি বড় ভূমিকা রাখে। সঠিক মেকআপ আপনার ত্বককে যেমন নিখুঁত দেখাবে, তেমনি ভুল পণ্য আপনার লোমকূপ বন্ধ করে ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। ত্বকের স্বাস্থ্যের ওপর আপনার ঘুমের মান, পানি পানের পরিমাণ এবং শরীরচর্চার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মনে রাখবেন, আপনার ত্বকের ধরন ঋতুভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন শীতে ত্বক বেশি শুষ্ক থাকে এবং গরমে তৈলাক্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনার রূপচর্চার রুটিনেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
সূত্র: আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি

আমাদের প্রত্যেকের ত্বক তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্য। সুস্থ, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ত্বক পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো আপনার ত্বকের ধরন বা ‘স্কিন টাইপ’ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা। অনেকে ত্বকের ধরন না জেনে বিভিন্ন প্রসাধন ব্যবহার করেন; যা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। আপনার ত্বক ঠিক কী চাইছে, তা বুঝতে পারাটাই হলো সঠিক রূপচর্চার মূলমন্ত্র।
আপনার ত্বক তৈলাক্ত হবে, নাকি শুষ্ক; তা মূলত কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এগুলোর মধ্যে প্রধান হলো বংশগতি বা জিন। এ ছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের ধরন বদলাতে পারে। হরমোনের পরিবর্তন, মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস, দৈনন্দিন শারীরিক পরিশ্রম এবং পরিবেশগত উপাদানও আপনার ত্বকের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। শরীরের বৃহত্তম এই অঙ্গের সঠিক যত্ন নিতে এর ধরন চেনা তাই অপরিহার্য। নিজের ত্বককে আপনার চেয়ে ভালো আর কেউ চেনে না। তাই কোনো নতুন পরামর্শ বা পণ্য ব্যবহারের আগে আপনার ত্বকের প্রয়োজনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন।
সিবাম একধরনের তৈলাক্ত উপাদান। ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে যখন পর্যাপ্ত সিবাম উৎপন্ন হয় না, তখন শুষ্ক হয়। আর একেই বলে শুষ্ক ত্বক। এমন ত্বকের অধিকারীদের জন্য খুব মৃদু ক্লিনজার ব্যবহার করা উচিত। ময়শ্চারাইজার হিসেবে এমন কিছু বেছে নিতে হবে, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় শুষ্ক ত্বকে নাক বা ভ্রুর আশপাশে ছত্রাকজনিত লালচে র্যাশ দেখা দিতে পারে, যাকে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বলা হয়; এর জন্য বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

যখন ত্বক অতিরিক্ত সিবাম উৎপাদন করে, তখন ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। এমন ত্বকে লোমকূপ বড় দেখায় এবং মুখ সব সময় চকচকে বা তেলতেলে থাকে। সিবাম বেশি হওয়ায় লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে, যা থেকে প্রায়ই ব্রণ হয়। তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা বেনজয়েল পারক্সাইড যুক্ত ক্লিনজার এবং ‘নন-কমেডোজেনিক’ (যা লোমকূপ বন্ধ করে না) পণ্য ব্যবহার করা ভালো। এ ছাড়া ব্যায়াম বা পরিশ্রমের পরপরই মুখ ধুয়ে ফেলা জরুরি।
এই ধরনের ত্বকে মুখের বিভিন্ন অংশ ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখায়। সাধারণত টি-জোন কপাল, নাক ও চিবুক তৈলাক্ত হয় এবং গাল শুষ্ক থাকে। এ ক্ষেত্রে মুখের প্রতিটি অংশকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী আলাদাভাবে যত্ন নিতে হয়।
একে ত্বকের আদর্শ অবস্থা বলা যেতে পারে। এই ত্বক খুব বেশি শুষ্কও নয়, আবার তৈলাক্তও নয়। এতে ব্রণের উপদ্রব বা সংবেদনশীলতা খুব একটা দেখা যায় না। সাধারণ ক্লিনজার দিয়ে দিনে দুবার মুখ ধোয়া এবং রাতে ও দিনে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করাই এই ত্বকের জন্য যথেষ্ট।

সংবেদনশীল ত্বক চেনার উপায় তেলের পরিমাণ নয়, বরং এর প্রতিক্রিয়া। এই ত্বক তৈলাক্ত বা শুষ্ক; যা-ই হোক না কেন, প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হয়। অনেক সময় একজিমা বা অ্যালার্জির মতো সমস্যাও থাকতে পারে। এমন ত্বকে রং, সুগন্ধি, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা বেনজয়েল পারক্সাইড যুক্ত কড়া পণ্য এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
আপনার ত্বকের ধরন নির্ধারণের জন্য কোনো ল্যাবরেটরি টেস্টের প্রয়োজন নেই। সহজ কিছু উপায়ে এটি বুঝতে পারেন। মুখ ধোয়ার ৩০ মিনিট পর লক্ষ করুন, ত্বক কেমন অনুভব করছে। এটি কি খুব তেলতেলে লাগছে, নাকি টান টান ও শুষ্ক মনে হচ্ছে? এভাবে বুঝবেন আপনার ত্বক শুষ্ক নাকি তৈলাক্ত। মুখ ধুয়ে শুকানোর ৩০ মিনিট পর একটি ব্লটিং পেপার নিয়ে গাল এবং টি-জোনে হালকা চাপ দিন। পেপারে তেলের পরিমাণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনার ত্বক তৈলাক্ত নাকি শুষ্ক।
দোকানে হাজারো প্রসাধনীর ভিড়ে বিভ্রান্ত না হয়ে সঠিক পণ্য বেছে নেওয়ার ক্ষমতা দেয় আপনার স্কিন টাইপ। আপনি অকালবার্ধক্য রোধ করতে চান, নাকি ব্রণ ও মেছতা দূর করতে চান। এটা আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া মেকআপ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এটি বড় ভূমিকা রাখে। সঠিক মেকআপ আপনার ত্বককে যেমন নিখুঁত দেখাবে, তেমনি ভুল পণ্য আপনার লোমকূপ বন্ধ করে ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। ত্বকের স্বাস্থ্যের ওপর আপনার ঘুমের মান, পানি পানের পরিমাণ এবং শরীরচর্চার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মনে রাখবেন, আপনার ত্বকের ধরন ঋতুভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন শীতে ত্বক বেশি শুষ্ক থাকে এবং গরমে তৈলাক্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনার রূপচর্চার রুটিনেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
সূত্র: আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি

সাবমেরিনের পেটে বসে নীল সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাবমেরিনটা হেলেদুলে ঠিক যেন পালকির মতো চলছিল। আমি ছোটবেলায় চলে গেলাম। একসময় পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে খুব জুলভার্ন পড়তাম। তখনকার পড়া ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগ আন্ডার দি সি’ যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল, আমি নোটিলাসে বসে আছি, ক্যাপ্টেন নিমোর
০৮ এপ্রিল ২০২২
বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে
২ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া
৪ ঘণ্টা আগে
আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।
৪ ঘণ্টা আগে