Ajker Patrika

বাংলাদেশে মৌলবাদ কোনোদিনও বিজয়ী হতে পারবে না

মন্টি বৈষ্ণব
বাংলাদেশে মৌলবাদ কোনোদিনও বিজয়ী হতে পারবে না

আপনার জন্ম ব্রিটিশ শাসনামলে, আর বড় হয়েছেন পাকিস্তান শাসনামলে। এই সময়ে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেছেন?
রনো: আমি আমার জীবনে তিনটি রাজত্ব, তিনটি পতাকা দেখেছি। ১৯৪২ সালে আমার জন্ম। তাই ব্রিটিশ ভারতকে আমি দেখেছি মাত্র পাঁচ বছর। সে সময় মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষ বসু, বাঘা যতীন, সূর্য সেনসহ আরও অনেকেই লড়াই করে ব্রিটিশকে তাড়িয়েছেন। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের বিষয়টি অনেক দুঃখজনক। ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলো। একই সঙ্গে তৈরি হলো দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তান। তারপর আমি প্রায় ২৪ বছর কাটিয়েছি পাকিস্তানে।

রাজনীতিতে যুক্ত হলেন কীভাবে?
রনো: দেশভাগের ঘটনাপ্রবাহে ১৯৫৪ সালের আগস্ট মাসে ঢাকায় আসি। ফলে বড় হয়েছি পাকিস্তান শাসনামলে। ১৯৫৪ সালে আমি সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। এই স্কুল থেকে আমি পরে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষায় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে মেধা তালিকায় ১২তম স্থান লাভও করেছিলাম। ১৯৬০ সালে ঢাকার নটর ডেম কলেজ হতে আইএসসি পাস করি। এর পর ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হই। তখন দেশে সামরিক শাসন চলছিল। প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল না। ওই বছরই গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হই। বলা যেতে পারে, সেই সময় থেকেই আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। ১৯৬১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ ছিল আমার জীবনের প্রথম রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ। এ ছাড়া ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় যে ছাত্রসভা হয়েছিল, সেখানে একজন বক্তা ছিলাম আমি।

প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নকে সংগঠিত করা যেমন, তেমনি এর ভাঙনেও আপনি জড়িত ছিলেন। এই বিষয়ে যদি কিছু বলতেন।
রনো: আমি দীর্ঘদিন ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ছাত্রদের মধ্যেই শুরু হয় আমার প্রথম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। পঞ্চাশের দশকে ছাত্র ইউনিয়ন অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৬৩ সালে ছাত্র ইউনিয়ন দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়। সে বছরের শেষের দিকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনে আমাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। একই বছর আমাদের দেশের কমিউনিস্ট দলগুলোর মধ্যে চীন-সোভিয়েত বিতর্ক জমে ওঠে। ফলে কমিউনিস্টরা যে যার মতো করে সোভিয়েত বা চীনের পার্টির লাইনের সমর্থন করতে থাকে। ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বের মধ্যেও এর প্রভাব পড়ে। একাংশের নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ ফরহাদ। অন্য অংশে ছিলেন কাজী জাফর আহমদ, রাশেদ খান মেনন, মহিউদ্দিন আহমদ, আবদুল হালিম ও আমি।

সে সময় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক উভয় দিক দিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে বিভাজন ও সংকট বাড়তে থাকে। ১৯৬৫ সাল আমার জীবন তো বটেই, এ দেশে বাম আন্দোলনের ইতিহাসে একটি বেদনাদায়ক ঘটনার জন্য স্মরণীয় ছিল। কারণ, সেই বছরের এপ্রিল মাসে তৎকালীন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ইউনিয়ন দ্বিধাবিভক্ত হয়। ছাত্র ইউনিয়নের বিভক্তির পরপরই কারাগার থেকে বের হয়ে আমি মেনন গ্রুপকে সমর্থন করি এবং মেনন গ্রুপের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করি।

তখনকার ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে এখনকার ছাত্র আন্দোলনের পার্থক্য করতে বললে কী বলবেন?
রনো: তখনকার ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। সেটা শুধু শিক্ষা আন্দোলন নয়, একী সঙ্গে আইয়ুব শাসন বিরোধী আন্দোলন, পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার আন্দোলন, দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনও ছিল। পাশাপাশি সেই সময় আমরা কিছু ভালো শিক্ষকও পেয়েছিলাম। সেই সময়কার ছাত্ররা জেলে গেছে, মার খেয়েছে, পুলিশের সঙ্গে লড়াই করেছে। আর এসব আন্দোলনের মূল কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেটা ১৯৫২ সালে, ১৯৬২ সালে ও পরবর্তীকালে ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানেও দেখা গেছে। এখনকার ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে আগেকার সংগ্রামী মনোভাব খুঁজে পাওয়া যায় না। আগেকার ছাত্র আন্দোলনে যে রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল, সেটা এখন অনুপস্থিত বলে ছাত্ররা আজ নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করতে পারছে না।

আপনি তো বহুবার কারাবরণ করেছেন। শুনেছি কারাগারে থাকা অবস্থায় আপনি আইন বিষয়ে পরীক্ষাও দিয়েছেন।
রনো: আমি চার থেকে পাঁচবার কারাগারে গেছি। আমি ছিলাম বিজ্ঞানের ছাত্র। জেল থেকে বিজ্ঞানের কোনো বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়া চলত না। কারণ, বিজ্ঞান মানেই ল্যাবরেটরির কাজ, যা জেলে থেকে সম্ভব নয়। একমাত্র ল’ পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনো পরীক্ষা জেল থেকে দেওয়া সম্ভব ছিল না। ১৯৬৪ সালে আমি যখন জেলে যাই, তখন ঠিক করি, জেল থেকে আইন শাস্ত্রের পরীক্ষা দেব। পরে আমি কারাগার থেকেই আইন বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি পাই। আমার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া বিজ্ঞানে হলেও আইনে ডিগ্রি পাস ও ওকালতির সনদ নিয়েছি। এসব ডিগ্রি ও সনদ ভবিষ্যতে কোনো কাজে লাগেনি। তবে পৃথিবীর পাঠশালা থেকে যে বিদ্যার্জন করছি, তা এই ৭৮ বছরেও সমাপ্ত হয়নি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই—এ নিয়ে কিছু বলবেন?
রনো: ১৯৭১ সাল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। আমার মনে হয়, আমি খুব ভাগ্যবান। ইতিহাসের এমন এক অধ্যায় আমি সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি বলে। যুদ্ধে গেছি, সেটা আমার জন্য গৌরবের বিষয়। তবে বলে রাখি, আমি সরাসরি বন্দুক নিয়ে সম্মুখ সমরে অংশ নিইনি। আমি সংগঠক ও রাজনীতিকের ভূমিকা পালন করেছি।

১৯৬৯ সালে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করি ‘কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি’। ১৯৭১ সালে ‘কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি’ এই নামে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। আমাদের ১৪টি ঘাঁটি ছিল। আমাদের সশস্ত্র সৈনিক ছিল ৩০ হাজারেরও বেশি। ১৯৭১ সালে পাক-হানাদার বাহিনীর যে নৃশংস গণহত্যা ও বর্বরতা দেখেছি, তার তুলনা বোধ হয় সমকালীন ইতিহাসে নাই। তবে এর বিপরীতে আরেকটি চিত্র আছে। তা হলো সাধারণ মানুষের দেশের জন্য যুদ্ধ। কী অপরিসীম সেই বীরত্ব, কী অসামান্য সেই আত্মত্যাগ।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আপনার পরিবারের সেই বেদনাদায়ক অধ্যায় নিয়ে—
রনো: বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছি। কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই যে খবর পেলাম, তাতে আনন্দ কষ্টে পরিণত হয়ে গেল। আমার খালাতো বোন ডোরা পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হন; তাও আবার ঠিক বিজয় দিবসেই, মানে ১৬ ডিসেম্বর। ঘটনাটি হলো—পাকিস্তানি বাহিনী মুজিব পরিবারকে গৃহবন্দী করে রেখেছিল ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের এক বাড়িতে। বাড়ির ছাদেও ছিল পাক সেনাদের বাংকার। সেদিন ডোরাসহ আমার পরিবারের সদস্যরা ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে দেখতে যান। সেখানে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলি করে বসে। তাদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই আমার খালাতো বোন ডোরা মারা যান। একটা গুলি আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর মাথার চামড়া ছিঁড়ে বেরিয়ে যায়। আরেকটি গুলি আমার মায়ের হাতের ভেতর দিয়ে কাঁধের ভেতরেও ঢোকে। পরে জেনেছি এ রকম মৃত্যুর ঘটনা সেদিন আরও অনেক হয়েছে।

লেখার অনুপ্রেরণার উৎস সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
রনো: আমি স্কুলজীবন থেকে লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। যেমন—ইলা মিত্রের ঘটনা যখন ঘটে, তখন আমি স্কুলছাত্র। সেই ঘটনা শুনে আমি একটা লেখা লিখি। কোনো পত্রিকার সেই লেখা ছাপা হয়নি। তারপর আলজেরিয়ার যুদ্ধের এক নেত্রী জামিলা; তাঁকে নিয়েও একটা লেখা লিখেছিলাম। আমি যখন নবম কি দশম শ্রেণিতে পড়ি, তখন স্কুল ম্যাগাজিনে রবীন্দ্রনাথের ওপর লেখা লিখেছিলাম। পরে আমি বেশ অবাক হলাম, যখন দেখলাম স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের ৫০ বছর পূর্তির ম্যাগাজিনে আমার সেই পুরোনো লেখা পুনর্মুদ্রণ করেছে।

রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ওই বয়সেই লিখেছেন?
রনো: হ্যাঁ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ আমাদের গর্ব। বাঙালি জীবনে রবীন্দ্রনাথ তো অনেক বড় কিছু। পৃথিবীর আর কোনো দেশের কবি, সমাজজীবনকে এত বেশি প্রভাবিত করতে পারেননি, যা রবীন্দ্রনাথ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ একজন বিশাল মাপের প্রতিভাসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। কবি, ছোট গল্পকার, গীতিকার, সুরকার, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস কোনদিকে ওনার দখল নেই? কোনো দিকেই তিনি স্টার মার্কের কম নম্বর পাবেন না। পাকিস্তানিরা রবীন্দ্রনাথকে হিন্দু বলে পরিত্যাগ করেছিল। তিনি ছোট গল্পে ইংরেজ, জমিদারদের অত্যাচার তুলে ধরেছিলেন। আবার তিনি তাঁর লেখাতে নারীকে যেভাবে সম্মান করেছেন, সেটা অনেক প্রশংসনীয়। সবদিক মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথকে বলা হবে বিশ্বমানবতার কবি।

বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানের বিষয় সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন? 
রনো: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে তিনি ধর্ম নিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিলেন। এইবার আসি জিয়াউর রহমানের কথায়। তিনি সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তিনি দেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি করে গেছেন, সেটা অতুলনীয়। তিনি ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে দিলেন। পাশাপাশি যেসব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল, সে দলগুলোকে তিনি পুনর্জীবিত করলেন। ফলে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী ইত্যাদি দলগুলো প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ পেল। পরে এই দলগুলোকে বাতাস দিয়েছেন এরশাদ। বিএনপি এই দলগুলোর সঙ্গে মন্ত্রিত্বও ভাগাভাগি করল। ফলে মৌলবাদের যে আস্ফালন ঘটল, সেটা কিন্তু আমাদের ছাত্রদের প্রগতিশীল আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল। 

যে উদ্দেশ্য আর লক্ষ্য নিয়ে আমরা পাকিস্তানকে পরাজিত করেছিলাম। সে লক্ষ্য কিন্তু এখন বহুলাংশে ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও আমি বলব, বাংলাদেশের মাটিতে মৌলবাদ কোনো দিনও বিজয়ী হতে পারবে না। তবে আপাতত তাদের যে আস্ফালন, সেটা অনেক ভয়াবহ। সকল অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মৌলবাদকে প্রতিরোধ করতে হবে। 

এই তো কয়েক বছর আগে গণজাগরণ মঞ্চ হলো। এটা কী প্রমাণ করে?
এটা প্রমাণ করে আমাদের ভেতরে এখনো পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী চেতনা আছে। সেদিন মৌলবাদের বিরুদ্ধে শাহবাগের মোড়ে লক্ষ মানুষের সমাবেশ হয়েছিল। সেই আন্দোলনের ফলেই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানোও গেছে। এ জন্য অবশ্যই শেখ হাসিনাকে সাধুবাদ জানানো উচিত বলে মনে করি। কারণ, শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের আর কোনো নেতার পক্ষে এই ফাঁসি দেওয়া সম্ভব হতো কিনা জানি না। 

আবার এই সরকার অন্যদিকে নিজেদের সুবিধার জন্য হেফাজতে ইসলামকে হাতে রাখার জন্য কৌশলও অবলম্বন করল। আমাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া হলো রবীন্দ্রনাথ, শরৎ চন্দ্রসহ অনেক নামকরা সাহিত্যিকের রচনাগুলো। এগুলো ছিল হেফাজত ইসলামের দাবি। সেই হেফাজত ইসলাম এখন দেশের বিভিন্ন স্থানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলছে। এটা হলো আওয়ামী লীগের হেফাজত ইসলামের সঙ্গে কৌশল করার পরিণতি। তাই বলতে হয় কৌশলে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া আসলে এক প্রকারের দুর্বলতা। 

আর্থসামাজিক অবস্থায় আমাদের দেশের নারীদের অবস্থান কেমন? 
রনো: এখনকার নারীরা কেবল আন্দোলন করছে না। পাশাপাশি নারী মুক্তির ক্ষেত্রে পথে বিরাট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারা দলবদ্ধভাবে কারখানায় যাচ্ছে, অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে রাস্তায় মারামারি করেছ। দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের পরও অতিরিক্ত কাজ করেছ। আবার ঘরে সংসার সামলাচ্ছে। তারা কিন্তু গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। তাদের সমাজে টিকে থাকার যে লড়াই, সেটা আবার উচ্চবিত্তের নারীরা পারেনি। উচ্চবিত্তের নারীদের সন্তুষ্ট রাখা হয় গাড়ি, বাড়ি, আর গয়না দিয়ে। গার্মেন্টসের নারী শ্রমিকদের কারণে, নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন আগে ছিল না, যেটা এখন আছে। এ ছাড়া সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা নির্বাচিত হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করেছ, উদ্যোক্তা হচ্ছে, শহর-গ্রামের অনেক নারী স্বাবলম্বীও হচ্ছে। এটা বর্তমানে নারীর ক্ষমতায়নের পথকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। 

তারপরও এ দেশে নারী নির্যাতন কমছে না কেন? 
রনো: আজকের পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ বা বিশ্বায়ন ভোগবাদকে প্রাধান্য দেয় বেশি। আমরা তাদের মিডিয়া দ্বারা প্রভাবিত হই। তাই বলতে হয়, একমাত্র সমাজতন্ত্র ছাড়া পিতৃতন্ত্রের অবসান হবে না। ইউরোপে পুঁজিবাদ নারীকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসছে। কারণ, কলকারখানায় নারীদের দরকার। কিন্তু সেখানে পিতৃতান্ত্রিকতা রয়ে গেছে। তাই বলতে হয়, একমাত্র সমাজতন্ত্র নারীর পরিপূর্ণ মুক্তি দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফরাসি বিপ্লব হয়ে গেছে। ইংল্যান্ডে পুঁজিবাদ গেড়ে বসছে। তাদের শিল্প-সাহিত্য কতই না উন্নত। কিন্তু সেখানে মেয়েদের ভোটাধিকার ছিল না। আমেরিকার প্রথম সংবিধানে সবার ভোটের অধিকার ছিল। শুধুমাত্র ভোটের অধিকার ছিল না নারী আর নিগ্রোদের। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম নারীরা ভোটের অধিকার পেয়েছে রাশিয়ায় অক্টোবর বিপ্লবের পরে। তাই বলতে হয় সমাজতন্ত্র ছাড়া নারীদের পরিপূর্ণ মুক্তি সম্ভব না। 

আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন? 
রনো: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটা প্রথমত হওয়া উচিত সেক্যুলার। আমাদের সময় কিন্তু ধর্ম শিক্ষা বলতে কিছু ছিল না। পাকিস্তান আমলেও ধর্ম শিক্ষা বলে কিছু ছিল না। এখন বিভিন্ন শ্রেণিতে ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ কারণে মৌলবাদীরা বেশ মাথা চাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম শিক্ষা যে যার যার বাড়িতে শিখবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার কাঠামো বিজ্ঞানমনস্ক করতে হবে। আমি পাঠ্যপুস্তকে এমন শিক্ষা দিলাম, যার কারণে কুসংস্কারটা আমার মনের ভেতর গেড়ে বসে। তাহলে তো সেটা হবে না। তৃতীয়ত, ইতিহাসের বিকৃতি করা যাবে না। আমাদের এখানে কিন্তু ইতিহাস বিকৃত হয়। যে যখন ক্ষমতায় থাকে, সে তখন তার সুবিধামতো ইতিহাস তৈরি করে। ইংরেজরা যেমন এই কাজটা করেছে। তেমনি আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও সময়ে-সময়ে ইতিহাস বিকৃত করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের শিক্ষকেরাও পাঠদানের বিষয়ে খুব বেশি মনোযোগী না। আবার অনেক স্কুলশিক্ষকের বেতনও কম। এখনকার ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে বেশি পড়ালেখা করে কোচিং সেন্টারগুলোতে। আমার মতে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করিয়ে দিয়ে শিক্ষকদের বেতন ভাতা বাড়ানো উচিত। 

আরেকটা কারণ হলো বহু ধারাতে বিভক্ত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ইংরেজি ধারার শিক্ষাব্যবস্থা তুলে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, সবাই বাংলা মিডিয়ামে পড়ালেখা করবে। শিক্ষাব্যবস্থা যদি বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত থাকে। যেমন—এক শ্রেণির ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে বাংলায়, আরেক শ্রেণির ছেলেমেয়েরা পড়বে ইংরেজি মিডিয়ামে। আরও আছে মাদ্রাসা শিক্ষা, সেখানেও আবার দুই ধারার শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থায় এত বিভাজন হওয়া চলবে না। শিক্ষাব্যবস্থা হবে একমুখী। এরশাদের শাসন আমলে ছাত্রদের যে আন্দোলন হয়েছিল, সেখানে তাদের দাবির মধ্যে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা ছিল। তখন তো শেখ হাসিনা, আর খালেদা জিয়া এটাকে সমর্থনও দিয়েছিলেন। সেই একমুখী শিক্ষা তো চালু করতে পারে। আবার এই ক্ষেত্রে যদি আপস করতে হয়। শরৎ চন্দ্র, রবীন্দ্রনাথের লেখা যদি হেফাজতের কথায় পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিতে হয়—এটা তো ঠিক না। 

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেন ভেঙে পড়ল? 
রনো: সময়টা ১৯৫৬ সাল। ক্রুশ্চেভ নেতৃত্বাধীন সোভিয়েত পার্টির বিশতম কংগ্রেসে শুধু স্তালিনের বিরুদ্ধেই কুৎসা করা হয়নি, সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু সংশোধনবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটানো হয়। পরে বিশেষ করে সোভিয়েত পার্টির ২২ তম কংগ্রেসে সংশোধনবাদী ধারণাসমূহ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পৃথিবীর কমিউনিস্ট ও ওয়ার্কার্স পার্টিগুলোর মধ্যে পার্থক্য দূর করে একটি সাধারণ লাইন ঠিক করার জন্য ১৯৬০ সালে ৮৬টি পার্টির এক সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয় মস্কোতে। বস্তুত কয়েকটি পার্টি তাদের নাম গোপন রাখে বলে এটা ৮১ পার্টির সম্মেলন বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু এই আপসরফার দলিল পরবর্তীকালে টেকেনি। সে সম্মেলনে তখনকার অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন গোপাল নাগ। তিনি চীনের পার্টি সমর্থন করেন। কিন্তু মণি সিংহসহ অনেকে সমর্থন করেছেন সোভিয়েত লাইন। পরে চীন ও সোভিয়েত পার্টির মধ্যে লেটার অব এক্সচেঞ্জ হয় সাতবার। ১৯৬৩ সালের ১৪ জুলাই চীনের পার্টি যে চিঠি লিখেছিল, তার মর্মবস্তুর আলোকে আমরা আমিসহ আরও অনেকে সঠিক বলে মনে করে চীনা লাইন সমর্থন করি। আজকের বাস্তবতা হলো, চীন সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। আর সোভিয়েত তো নেই-ই। 

আমাদের দেশে বামপন্থীদের মধ্যে এত বিভক্তি কেন? 
রনো: বামদের মধ্যে যে ভাঙন, সেটা একটা তো হয়েছিল সারা পৃথিবীব্যাপী। সেটা হয়তো এড়িয়ে যাওয়া যেত না। কারণ, এই ভাঙনের রেশ সারা পৃথিবীতে হয়েছিল। চীনপন্থী, আর রুশপন্থী। এখন তো আর সোভিয়েতও নেই, আর চীনও সেই জায়গা নেই। এটা একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। ‘পন্থী’ বিষয়টা চলে গেল। তা না হলে আমাদের দেশের বাম রাজনৈতিক দলগুলো পরের দিকে তাকিয়ে থাকত। ওরা যা বলত, সেটা মেনে নিত। 

অন্যদিকে আমরা শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারিনি। আমাদের মধ্যে পেটি বুর্জোয়া ক্যারিয়ার, উচ্চাভিলাষ, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আকাঙ্ক্ষা—এগুলোই কাজ করছে। এ কারণে কাজী জাফর, এক সময়কার তুখোড় ছাত্রনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি এরশাদের মন্ত্রী হয়ে গেলেন। আমার বন্ধু রাশেদ খান মেনন। তাঁর সম্পর্কে বলতে খারাপ লাগে, তিনিও যেভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে গিয়ে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করলেন। সেটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি। 

শেষে বিশেষ কিছু বলবেন? 
রনো: ইতিহাসের এক বিশেষ সময়ে আমি জন্মেছিলাম বলে, অনেক বিপ্লবী মুহূর্ত কেটেছে আমার জীবনে। তবে সারা জীবন কী করতে পেরেছি জানি না। সব সময় এক অস্থিরতা আমার মধ্যে কাজ করেছে এই ভেবে যে, আমাদের এই দেশ অনেক রাজনৈতিক-সামাজিক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে যে জায়গাটায় এসে পৌঁছেছে, তা খুব একটা ভালো না। আজ দেশের সাধারণ মানুষেরা ভালো নেই। পাশাপাশি দেশের কমিউনিস্ট ও প্রগতির শক্তি অনেক দুর্বল। তবে, একদিন না একদিন শ্রমিক শ্রেণির জয় হবে। 

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 
রনো: আপনাদেরও। 

***হায়দার আকবর খান রনোর এ পর্যন্ত ২৫ টির মতো বই প্রকাশিত প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘শতাব্দী পেরিয়ে’, ‘মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা’, ‘উত্তাল ষাটের দশক’, ‘ফরাসি বিপ্লব থেকে অক্টোবর বিপ্লব’, ‘রবীন্দ্রনাথ-শ্রেণি দৃষ্টিকোণ থেকে’, ‘মানুষের কবি রবীন্দ্রনাথ’, ‘মার্কসবাদের প্রথম পাঠ’, ‘মার্ক্সীয় অর্থনীতি’, ‘মার্কসবাদ ও সশস্ত্র সংগ্রাম’, ‘বাংলা সাহিত্যে প্রগতির ধারা’ (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), ‘সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের সত্তর বছর’, ‘পুঁজিবাদের মৃত্যুঘণ্টা’, ‘কোয়ান্টাম জগৎ: কিছু বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক প্রশ্ন’, ‘পলাশী থেকে মুক্তিযুদ্ধ’ (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ (প্রথম খণ্ড) ও ‘গ্রাম শহরের গরিব মানুষ জোট বাঁধো’।

২০০৯ সালে রাশেদ খান মেনন; অর্থাৎ, ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে গেলে রনো ওয়ার্কার্স পার্টির একাংশ নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। দুচোখের দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও আপাদমস্তক এই কমিউনিস্টের কাজ থেমে নেই। তিনি গত দুই থেকে তিন বছরে শ্রুতিলেখকের মাধ্যমে তিনটি বইয়ের কাজ সম্পাদন করছেন। বইগুলো হলো ‘সুবিধাবাদ ও সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লেনিন’, ‘স্তালিন’ এবং ‘নারী ও নারীমুক্তি’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাক্ষাৎকার

মানুষ ভেতরে ভেতরে খুব একা, ভাসানে উজান সেই একাকিত্বের আয়না

মানুষ ভেতরে ভেতরে খুব একা, ভাসানে উজান সেই একাকিত্বের আয়না

নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান। নাটকটি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন এই অভিনেতা।

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

‘ভাসানে উজান’ নাটকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতাটা কেমন?

দস্তয়ভস্কির বিখ্যাত ছোটগল্প দ্য জেন্টেল স্পিরিট অবলম্বনে এই নাটক। দস্তয়ভস্কি মানেই মানুষের অন্তর্লোকের গভীরতম স্তরে প্রবেশ। ভাসানে উজান আমার জন্য শুধুই একটি নাটক নয়, এটি একধরনের আত্মসংলাপ। এই গল্পে ঢুকতে গিয়ে আমাকে বারবার নিজের ভেতরের অচেনা কোণগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ ছাড়া অপূর্বদার নাট্যরূপে সাহিত্যের সৌন্দর্য যেমন অটুট আছে, তেমনি আছে মঞ্চের ভাষা। আর শুভাশীষদার নির্দেশনা ছিল ধ্যানের মতো—নীরব, গভীর এবং সংযত। এই দুজনের সমন্বয় আমাকে অভিনয়ে আরও সংযমী করেছে।

ভাসানে উজানের চরিত্রটি উপস্থাপনে মানসিকভাবে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?

এই চরিত্রটি বাহিরের নয়, ভেতরের অভিনয় দাবি করে। এখানে কান্না নেই, চিৎকার নেই—আছে চাপা অপরাধবোধ আর নীরব অনুশোচনা। এই নীরবতাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। আমি মনে করি, আজকের মানুষ ভেতরে ভেতরে খুব একা। ভাসানে উজান সেই একাকিত্বের আয়না। দর্শক যদি নিজের ছায়াটা একটু দেখতে পান, সেটাই আমাদের সাফল্য।

চতুর্থ প্রদর্শনীতে এসে ভাসানে উজান নাটকে কি কোনো পরিবর্তন বা পরিণতি এসেছে?

প্রতিটি প্রদর্শনীতেই নাটকটা একটু একটু করে বদলায়। আমি নিজেও বদলাই। দর্শকের নিশ্বাস, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে নাটকটি আরও পরিণত হয়ে ওঠে।

একক অভিনয়ে দীর্ঘ সময় মঞ্চে থাকতে হয়, সঙ্গ দেওয়ার কেউ থাকে না। এই একাকিত্বকে কীভাবে অনুভব করেন?

একাকিত্ব এখানে শূন্যতা নয়, বরং একধরনের গভীর উপস্থিতি। দর্শক, আলো, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে এক অদৃশ্য সংলাপ তৈরি হয়। সেই সংলাপই আমাকে টেনে নেয় পুরো সময়জুড়ে।

দীর্ঘ দুই দশকের নাট্যচর্চার পরেও কি নাট্যমঞ্চে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নতুন করে ভয় বা উত্তেজনা কাজ করে?

ভয় না থাকলে অভিনয় মৃত হয়ে যায়। প্রতিটি প্রদর্শনীর আগে আমি নতুন করে ভয় পাই, এই ভয় আমাকে সৎ রাখে, জীবিত রাখে একজন অভিনেতা হিসেবে।

ভবিষ্যতে একক নাটক ও থিয়েটার নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?

আমি চাই, থিয়েটার আরও স্থির হোক, আরও গভীর হোক। একক নাটক নিয়ে আরও গবেষণাধর্মী কাজ করতে চাই, যেখানে অভিনয় হবে আত্মানুসন্ধানের একটি মাধ্যম।

মঞ্চ ও টেলিভিশনের আসন্ন কাজ নিয়ে দর্শকদের জন্য কী বলতে চান?

আমার অভিনীত নাটকগুলোর নিয়মিত প্রদর্শনী চলছে। পাশাপাশি নতুন একটি রেপার্টরি নাটকে যুক্ত হচ্ছি। এ ছাড়া কয়েকটি টেলিভিশন নাটকের কাজও শেষের পথে। নাটকগুলো শিগগির দর্শকদের সামনে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাক্ষাৎকার

সংবাদ উপস্থাপনায় সময় ব্যবস্থাপনা সবার আগে

সংবাদ উপস্থাপনায় সময় ব্যবস্থাপনা সবার আগে

টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে পর্দার আড়ালের সেই অভিজ্ঞতাগুলোই তুলে ধরেছেন মনিরুল ইসলাম

মনিরুল ইসলাম 
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১

কীভাবে আপনি সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন?

প্রতিটি স্বপ্নের পেছনে একটি করে গল্প থাকে। আমার সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণারও তেমনি একটি গল্প আছে। সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার আগেও ছোটবেলা থেকে আমার বড় মামাকে দেখেছি, তাঁর কথা বলার স্টাইল ছিল ভীষণ হৃদয়গ্রাহী, যা মানুষকে খুব কাছে টানত। ঠিক তখন থেকেই বড় মামা হয়ে যান আমার সুপার হিরো। আমিও চেষ্টা করতাম তেমন করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তারপর দেখলাম এর সেরা উপায় হলো সংবাদ উপস্থাপক হওয়া। তাঁদের সুন্দর করে কথা বলাটা আমার পছন্দ হতো। সেখান থেকেই মূলত অনুপ্রাণিত হওয়া। তা ছাড়া আমার মরহুম আব্বুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা এবং আমার আম্মুর নীরব সমর্থন আমাকে এ পেশায় আসতে সহযোগিতা করেছে।

শুরুতে সংবাদ উপস্থাপনার প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি কেমন ছিল?

ছোটবেলা থেকেই কবিতা আবৃত্তি করতাম। সেটাও বড় মামার হাত ধরেই। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন নিউজ প্রেজেন্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, তখন থেকেই চিন্তা করতাম এখানে শুদ্ধ উচ্চারণের বিকল্প নেই। তাই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে টিএসসিভিত্তিক একটি আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেখানেও নিউজ প্রেজেন্টেশনের ক্লাস হতো। তারপর শুধু নিউজ প্রেজেন্টেশনের জন্য একটা একাডেমিতে ভর্তি হই। সেখানে ভর্তি ফি ছিল ৭ হাজার টাকা। পুরোটা দেওয়ার সামর্থ্য তখন ছিল না। তাই তাদের বলেছিলাম, ইনশা আল্লাহ একদিন নিউজ প্রেজেন্টার হয়ে আপনাদের এখানে ফ্রি ক্লাস নেব। সেই থেকে মনের মধ্যে ইচ্ছাটাও প্রবল হয়েছিল।

প্রথমবার লাইভ নিউজ উপস্থাপন করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

প্রথমবার একটা অনলাইন টিভিতে নিউজ পড়েছিলাম। তাদেরও অভিষেক হয়েছিল আমাকে দিয়ে। তাই উচ্ছ্বাসটা দু’পক্ষেরই একটু বেশি ছিল। আমি তাদের গ্রুমিং করা প্রেজেন্টারদের মধ্যে প্রথম ছিলাম। নিজেকে প্রথম কোনো পর্দায় দেখে কি যে ভালো লেগেছিল, তা বলার ভাষা নেই।

উপস্থাপনায় ভাষা, উচ্চারণ ও টোন কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?

এ পেশাটা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে একটু আলাদা। এমনকি বাচিক যেকোনো পেশার চেয়েও। যেমন কাস্টমার কেয়ার, কিংবা কল সেন্টার থেকেও। এখানে ভুল উচ্চারণের কোনো মার্সি বা ক্ষমা নেই। তবে এখানে সংবাদের ভিন্নতার কারণে টোনের পরিবর্তন করতে হয়। নিউজের ভিন্ন ভিন্ন আবেদন টোনের ওঠানামায় ফুটিয়ে তুলতে হয়। টোনের ভেরিয়েশনের কারণে দর্শকের কানও প্রশান্তি পায়।

সংবাদ উপস্থাপনায় সময় ব্যবস্থাপনা বা কলাকৌশল কীভাবে পালন করেন?

এখানে সময় ব্যবস্থাপনাটা সবার আগে। প্রতিটি ন্যানো সেকেন্ডের মূল্য এখানে দিতে হয়। নিউজ শুরুর অনেক আগেই একজন প্রেজেন্টারকে স্টেশনে হাজির থাকতে হয়। সবকিছু বুঝে নিতে হয়। নিউজ শুরু হলে তো তাঁকে আরও বেশি প্রস্তুত থাকতে হয় সময় সম্পর্কে। কারণ প্রতিটি টাইমফ্রেম এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

লাইভ সম্প্রচারে হঠাৎ সময় পরিবর্তন হলে কীভাবে সামলান?

লাইভ নিউজে যেকোনো কিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রেজেন্টারদের কানে একটা গোপন টকব্যাক লাগানো থাকে। যার সঙ্গে পিসিআর অর্থাৎ প্রডিউসার কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। প্রডিউসার যেকোনো আপডেট নিউজ টকব্যাকে জানিয়ে দেন। সেটার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। খুব ঠান্ডা মাথায় যেকোনো ব্রেকিং বুঝে তারপর ডেলিভারি দিতে হয়।

উপস্থাপনার সময় ঘড়ি বা প্রম্পটার দেখে কীভাবে সময় নিয়ন্ত্রণ করেন?

পুরো নিউজটা একটা টাইমফ্রেমে বাঁধা থাকে। বিশেষ কারণ ছাড়া এর বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি নিউজের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ থাকে। সেটা বিবেচনা করেই নিউজ পড়ার গতি নির্ধারণ করতে হয়। সময় কন্ট্রোল করার জন্য পিসিআর এবং এমসিআর-মাস্টার কন্ট্রোল রুম সদা তৎপর থাকে। সেভাবেই একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে চলতে হয়।

ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার কৌশল কী?

আত্মবিশ্বাসটা অনেক কিছুর সমন্বিত একটা রূপ। যেকোনো ভালো প্রিপারেশন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এখানে একজন নিউজ প্রেজেন্টারের ভালো প্রিপারেশন অনেক কিছুর সমন্বয়ে হয়ে থাকে। যেমন তাঁর উচ্চারণ, নিউজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা। নিউজ রুম, পিসিআর, এমসিআর, রানডাউন (যেখানে নিউজের ধারাবাহিকতা সাজানো থাকে) সম্পর্কে ধারণা থাকলে তাঁর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে।

ভুল হয়ে গেলে কীভাবে পরিস্থিতি সামলান?

লাইভ নিউজে ভুল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বারবার একই ভুল যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। ভুল হলে দর্শকের কাছে বিনয়ের সঙ্গে সেটি উপস্থাপন করাটাও ভালো প্রেজেন্টারের কাজ। দর্শকের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে হয়।

লাইভ নিউজে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এলে আপনার মানসিক কৌশল কেমন থাকে?

লাইভ নিউজে প্রতিটি সেকেন্ডই চ্যালেঞ্জের। যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে মাথা সম্পূর্ণ ঠান্ডা রেখে সামলাতে হয়। মানসিকভাবে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। আমি সব সময় একটা কথা বলি, একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে একটা লোকাল বাসের ড্রাইভারের ভূমিকা পালন করতে হয়। লোকাল বাসের ড্রাইভারকে যেমনিভাবে হরেক রকমের যাত্রীর কথা শুনেও হেলপারের সহযোগিতায় সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে হয়, তেমনি প্রেজেন্টারকেও পিসিআরের শত কথা কানে নিয়েও প্রডিউসারের সঠিক দিকনির্দেশনায় টিভি স্টেশন চালাতে হয়। মনে রাখতে হয়, একজন নিউজ প্রেজেন্টার একটি নিউজ বুলেটিনের লাস্ট গেটওয়ে। তাই তাঁকে অনেক সতর্ক থাকতে হয়।

দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে আপনি কীভাবে সংবাদ উপস্থাপন করেন?

আমি তো ভাবি, আমি একজন দর্শকের ঘরের লোক। ভাবি নিউজের মাধ্যমে আমি গ্রামের একজন চাষি থেকে শুরু করে দেশের প্রধানের সঙ্গেও নিউজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকি। প্রতিটি সংবাদের আলাদা আবেদন আছে। চেষ্টা করি সেটাকে সেভাবেই উপস্থাপনের। দর্শক যেমন আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে করে, তেমনি সেভাবেই তার মনোজগতের কথা চিন্তা করে সংবাদ পরিবেশনের চেষ্টা করি।

সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে আপনি কতটা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেন?

শিশু আর পাগল ছাড়া সবারই নিজস্ব মতাদর্শ আছে। এটা যেমন সঠিক, তেমনি সংবাদিকদেরও নিজস্ব মতাদর্শ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাঁকে শতভাগ সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কারণ দর্শক পক্ষপাতদুষ্ট নিউজ প্রেজেন্টার কিংবা সাংবাদিক কাউকেই পছন্দ করেন না। সচেতন দর্শকও চান না তাঁর দলের হয়ে সাংবাদিক কথা বলুক। তিনিও চান সাংবাদিক তাঁর নিউজে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখুক। তাই এসব ব্যাপার মাথায় রেখেই আমাদের চলতে হয়।

যারা ভবিষ্যতে সংবাদ উপস্থাপক হতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। আমার মনে আছে, যখন থেকে সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য মনস্থির করেছি, তখন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও নিউজের লিংক পড়তাম। চেষ্টা করতাম কতটা হৃদয়গ্রাহী করে একটা সংবাদ উপস্থাপন করা যায়। তাই আমার কাছে মনে হয়, সঠিক রাস্তা চিনে লেগে থাকতে পারলে সফলতা আসবেই। সেটা ভিন্নভাবে হলেও। তবে পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। সেটা কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগে।

সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কোন গুণ বা দক্ষতা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন?

সবার আগে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে মনস্থির করা। শখের বসে নয়। আপনাকে কোনো একটি পেশায় টিকে থাকতে হলে সে পেশার উপযোগী যত গুণ আছে, সেগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন নিজের উচ্চারণ ঠিক রাখ, আঞ্চলিকতা পরিহার করা। সর্বোপরি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাক্ষাৎকার

আমরা কেউ রাজনীতির বাইরে নই

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’। আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশে প্যানোরামা বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে বর্ষণ অভিনীত দুটি সিনেমা। ইমতিয়াজ বর্ষণের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাব আহমেদ

শিহাব আহমেদ 

দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে ওয়েব ফিল্ম অমীমাংসিত। কেমন লাগছে?

আমরা অভিনয়শিল্পীরা কাজ করি দর্শকের জন্য। সেই কাজটা অনেক দিন আটকে থাকা অবশ্যই কষ্টের। অবশেষে ওয়েব ফিল্মটি দর্শক দেখতে পারবেন, এটাই সবচেয়ে ভালো লাগার। সিনেমাটিতে রহস্যের গন্ধ রয়েছে। রহস্যজনকভাবে কে বা কারা খুন করেছে, এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এটি বানিয়েছেন রায়হান রাফী। ভিজ্যুয়াল লুকেও দর্শক নতুনত্ব পাবেন।

ওটিটি কনটেন্ট হওয়ার পরেও গত বছর তৎকালীন সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছিল সিনেমাটি। অনেকেই বলছেন এটি নির্মিত হয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আপনিও কি মনে করেন এই কারণেই এটি আটকে দেওয়া হয়েছিল?

একদম তাই। সবাই যেটা ধারণা করেছে, সেই কারণেই সিনেমাটি এত দিন আটকে ছিল। তৎকালীন সেন্সর বোর্ড গল্পটি সেনসেটিভ ভেবে সিনেমাটি আটকে দিয়েছিল। মুক্তির আগে এর বেশি এখন বলতে চাই না।

এটা নিয়ে প্রথম থেকেই অনেক আলোচনা। দর্শকেরও আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন?

প্রতিটি কাজই শিল্পী ও নির্মাতাদের একধরনের প্রেশার ক্রিয়েট করে। আমি নিজেও যেকোনো কাজ মুক্তির আগে চাপ অনুভব করি। দর্শক কীভাবে নেবেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। আমরা তো আসলে দর্শকদের ভালো লাগার জন্য, তাঁদের বিনোদন দেওয়ার জন্য কাজ করি। দর্শকের সন্তুষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। অভিনেতা হিসেবে সব সময় আশা রাখি আমার কাজটি যেন দর্শকের ভালো লাগে, গুণে মানে যেন সবার মনঃপূত হয়।

ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহেও আপনার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সেই সিনেমা নিয়ে কিছু বলুন।

‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’ নামের সিনেমাটি বানিয়েছেন আহমেদ হাসান সানি। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন, এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের গল্প নিয়ে সিনেমা। আমাদের দেশের রাজনীতির হালচাল দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফুটে উঠেছে রাজনীতি নিয়ে মানুষের ভাবনা। আমাদের দেশে অনেক রেস্টুরেন্ট বা আড্ডার স্থানে লেখা থাকে এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ বা করা যাবে না। আমি মনে করি, এটা মিস কনসেপ্ট। রাজনৈতিক আলাপ প্রতিটি জায়গায় হওয়া উচিত। কারণ, আমরা কেউ রাজনীতির বাইরে নই। প্রতিটি মানুষ রাজনীতির অংশ। সেটা সচেতনভাবে হোক কিংবা অসচেতনভাবে। যারা সচেতন, তারা একটু দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সক্রিয় থাকে। কিন্তু যারা রাজনৈতিকভাবে অসচেতন বা কেয়ারলেস, তাদেরও একটা ভূমিকা থাকে।

এটা আহমেদ হাসান সানির প্রথম সিনেমা। নির্মাতা হিসেবে কেমন লাগল তাঁকে?

এর আগে আহমেদ হাসান সানির নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। তবে নির্মাতা হিসেবে আগে থেকেই তাঁকে চিনি। উনি একজন আধুনিক নির্মাতা, তাঁর ভাবনাও আধুনিক। ছোটখাটো বিষয়েও সমান খেয়াল রাখেন তিনি। চিত্রনাট্য, অ্যাক্টিং, সেট—সব ব্যাপারেই তিনি খুঁতখুঁতে। এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি সিনেমাটি দেখার সময় দর্শক তাঁর যত্নের ছাপ দেখতে পাবেন। আমি বিশ্বাস করি, ওনার কাছ থেকে ভালো মানের আরও কাজ পাওয়া যাবে।

সম্প্রতি ছাড়পত্র পেয়েছে আপনার আরেক সিনেমা ‘যাপিত জীবন’। সেই সিনেমার গল্প কী নিয়ে?

এটি একটি পিরিয়ডিকাল সিনেমা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গল্প। এই সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, রোকেয়া প্রাচী, আশনা হাবিব ভাবনা প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব।

এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি এবং যাপিত জীবন সিনেমা দুটি ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে প্রদর্শিত হবে। কেমন অনুভূতি?

২০২০ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছর ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার কোনো না কোনো সিনেমা প্রদর্শিত হয়। এটা আমার জন্য আনন্দের ও গর্বের। এ বছর দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে। শুনছি দুটি সিনেমাই ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে। এটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ভিন্ন সময়ে সিনেমা দুটি মুক্তি পেলে ভালো হতো।

সিনেমা মুক্তি নিয়ে এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন নির্মাতাদের?

এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি নিয়ে নির্মাতার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ওনারা সিনেমার মুক্তি ও প্রমোশন নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনার কথা আমাকে জানিয়েছেন। যাপিত জীবন নিয়ে আমি অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানি না। তাই কথা হয়নি।

‘রবি ইন ঢাকা’ নামের সিনেমার শুটিং করছেন। এ সিনেমাটি নিয়ে বলুন।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই সিনেমার শুটিং শিডিউল আছে। এরপর একটা বিরতি নিয়ে শুরু হবে পরের লটের শুটিং। এই সিনেমার গল্পটিও সমকালীন। নতুন প্রজন্মের কথা আছে। আসলে আমরা যেই সময়েই বসবাস করি না কেন, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। এই শহরে অনেক মানুষ দেখি যাদের দূর থেকে দেখলে মনে হয় সুখে আছে। কিন্তু আসলে তাদের ভেতরে অনেক কষ্ট। নানা ধরনের কষ্টের মাঝেও আমরা এই শহরে আনন্দ খুঁজে বেড়াই। এমন একটা গল্প নিয়েই রবি ইন ঢাকা। গল্পে মিস্ট্রি আছে, সাসপেন্সও আছে। পরিচালনা করছেন রাজীব সালেহীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাক্ষাৎকার

সিজিপিএ ৪–এ ৪, নিলয়ের গলায় ওআইসি স্বর্ণপদক

স্নাতকের সনদ গ্রহণ করছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। ছবি: সংগৃহীত

ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। নিলয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি নিজের অসামান্য কৃতিত্বের নেপথ্যের গল্প জানিয়েছেন আজকের পত্রিকাকে। তার কথাগুলো শুনেছেন ইলিয়াস শান্ত

ইলিয়াস শান্ত

গত ২৭ অক্টোবর আইইউটির ৩৭ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপনি এতে অংশ নিয়েছেন। আপনার বিভাগ ও ফলাফল সম্পর্কে বলুন।

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে আমি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। প্রথম সেমিস্টারে একটি কোর্সে এ‍+ পাইনি। তাই সেই সেমিস্টারে আমার জিপিএ ছিল ৩.৯৭। তবে এরপরের সাতটি সেমিস্টারেই আমি ধারাবাহিকভাবে ৪.০০ পেয়েছি।

দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর আমার সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৯৮। তৃতীয় সেমিস্টারের পর হয় ৩.৯৯। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেমিস্টারে ৪ ধরে রাখতে পারলেও সিজিপিএ তখনও ৩.৯৯ ছিল। শেষ পর্যন্ত সপ্তম সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর সিজিপিএ অবশেষে ৪–এ পৌঁছায়। তখন সত্যিই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। এরপর শেষ বা অষ্টম সেমিস্টারেও একই পারফরম্যান্স ধরে রাখার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ সেটাও সম্ভব হয়। ফলে আমি সিজিপিএ ৪ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পেরেছি।

এমন সাফল্যের কৃতিত্ব কাকে দিতে চান?

সবার আগে আমি আমার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ জানাচ্ছি। তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছে। প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এরপর আমার শিক্ষকদের কথা, যাদের দিকনির্দেশনা ও আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে প্রতিটি ধাপে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আর আমার বন্ধুদের কথাও বলতে হবে। এই চার বছরের যাত্রায় আমার বন্ধুরা সবসময় পাশে থেকেছে–কখনো সহায়তায়, কখনো বা মোটিভেশনে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা আর আমার প্রচেষ্টায় এ জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।

আপনার বড় বোনের কথা শুনেছি। তাঁর অবদান কতটুকু?

হ্যাঁ, আমার দুজন বড় বোন আছেন। একজন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। অন্যজন আইইউটির ছাত্রী ছিলেন। তিনি আইইউটির ১৭ তম ব্যাচের বিজনেস টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার একজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি আমাকে পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াস থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি আমাকে বোঝাতেন নিয়মিত উপস্থিতি বজায় রাখা, কুইজ ও মিডটার্মের মতো মূল্যায়নগুলো গুরুত্ব সহকারে দেওয়া কতটা জরুরি। এগুলোই আসলে একটি ভালো ফলের ভিত্তি তৈরি করেছে। তার দেওয়া পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা আমার পুরো চার বছরের যাত্রায় দারুণভাবে কাজে দিয়েছে।

স্বর্ণপদক পাওয়ার খবরে আপনার বাবা–মা কী বলেছিলেন?

তারা উভয়েই খুব খুশি হয়েছিলেন। তাঁদের মুখে আনন্দের হাসিটা দেখে মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তের জন্যই হয়তো তারা এত বছর ধরে পরিশ্রম আর ত্যাগ স্বীকার করে এসেছেন। আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। জীবনে তিনি সবসময় নিয়ম, অধ্যবসায় আর সততার মূল্য শিখিয়েছেন। আর মা একজন গৃহিণী। মা আমাদের পরিবারের মূল শক্তি। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাদেরকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন। সবসময় পাশে থেকেছেন, কখনো ক্লান্ত হননি।

এমন অসামান্য ফলাফল অর্জনে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন, পড়ালেখার ধরন কেমন ছিল?

প্রথম থেকেই আমি জানতাম সিএসই এমন একটি বিষয়, যেখানে ধারাবাহিক পরিশ্রম ও মনোযোগ ছাড়া ভালো ফল করা সম্ভব নয়। যেহেতু ভর্তি হওয়ার আগে আমার কোডিং নিয়ে তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমি নিজের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা শুরু করেছি। ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে প্রোগ্রামিংয়ের বেসিকগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করে নিয়েছি। আর সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছি।

আমার পড়ালেখার ধরনটা ছিল বেশ দলভিত্তিক। আমি সবসময় বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতাম। এতে করে অনেক কঠিন বিষয় সহজে বোঝা যেত। আর কাউকে কোনো বিষয় বুঝিয়ে বলতে গিয়ে নিজের বোঝাটাও আরও মজবুত হতো। এই সহযোগিতামূলক পরিবেশটাই আসলে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। এ ছাড়া আমি ক্লাসের উপস্থিতি, কুইজ ও মিডটার্ম পরীক্ষাগুলোতে বেশ গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ এগুলোই মূলত চূড়ান্ত ফলে বড় ভূমিকা রাখে। সিনিয়র ভাইদের তৈরি করা নোটগুলোও অনেক সময় কাজে দিয়েছে, বিশেষ করে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে। সবশেষে, প্রতিটি প্রজেক্টও আমি সমান গুরুত্ব দিয়ে করতাম। যেন শুধু নম্বরের জন্য নয়, শেখার জন্যও কাজটা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।

সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়ে আপনি এখন গ্র্যাজুয়েট। আপনি ওআইসি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। অন্য শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে এমন ফল করতে পারতেন, তাদের প্রস্তুতির কোন কোন জায়গায় ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়?

আসলে প্রত্যেকের পড়ার ধরনটা আলাদা হয়। এখানে যে ধরন একজনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর, সেটা অন্য কারও জন্য নাও হতে পারে। তাই একেবারে নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন যে, কে কীভাবে পড়লে এমন ফল করতে পারতেন। তবুও আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কয়েকটা জিনিস নিয়মিতভাবে মেনে চললে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সবচেয়ে আগে, ক্লাসের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপর কুইজ আর মিডটার্ম। অনেকে এগুলোকে হালকাভাবে নেন। আমি মনে করি ফলাফলে এগুলোই আসলে মূল ভিত্তি তৈরি করে দেয়। যদি আগে থেকেই কুইজ ও মিডটার্মে ভালো করা যায়, তাহলে ফাইনাল পরীক্ষার সময় চাপ অনেকটাই কমে যায়। আমার গ্রুপ স্টাডির কথা তো আগেই বলেছি। গ্রুপ স্টাডি শেখার পরিবেশটাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। কেউ নির্দিষ্ট কোনো বিষয় না বুঝলে অন্য সেটা কেউ বুঝিয়ে দিতে পারছে। এতে পারস্পরিকভাবে সবারই উপকার হয়।

আপনার শৈশব, মাধ্যমিক–উচ্চ মাধ্যমিক ও পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।

আমাদের পারিবারিক শেকড় বরিশালে। তবে আমার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে ফরিদপুরে। সেখানে আমি সানরাইজ স্কুলে পড়ালেখা করেছি। পরে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসি। উত্তরায় আসার পর আমি ক্লাস ৩–৫ শ্রেণি পর্যন্ত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে পড়েছি। এরপর ৬–৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। পরবর্তীতে আমি আবার মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি হই এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি। এখানে আমার কলেজ জীবনের সুন্দর দুইটি বছর কেটেছে।

ছোটবেলায় আপনার কি হওয়ার স্বপ্ন ছিল?

ছোটবেলায় আকাশে প্লেন উড়তে দেখলেই মনে হতো, ‘ইশ! একদিন যদি আমিও এমন করে উড়তে পারতাম!’ তখন পাইলট হওয়ার স্বপ্নটাই ছিল সবচেয়ে বড়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, আর বাস্তবতা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করার পর সেই স্বপ্নটা বদলে গেছে। এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়। এখন আমার স্বপ্ন একটু অন্যরকম।

পরবর্তী লক্ষ্য কী, কেমন জব অফার পাচ্ছেন?

এখন আমার মূল লক্ষ্য হলো আইইউটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা। এজন্যই আমি নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছি। যাতে ক্লাসে পড়ানো এবং গবেষণার কাজ–দুটোই ভালোভাবে করতে পারি। একইসঙ্গে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাই। শেখা আর শেখানোর এই প্রক্রিয়াটার ভেতরেই আমি এখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ খুঁজে পাই। দূরদৃষ্টি হিসেবে আমার আরও বড় লক্ষ্য হলো–ভবিষ্যতে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে পিএইচডি করা। আমি গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় জানা ও শেখার সুযোগকে আরও প্রসারিত করতে চাই। আমার বিশ্বাস, এই প্রচেষ্টা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজে দেবে।

আইইউটিতে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদানে আগ্রহীদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয়?

আমার জানা মতে, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: একাডেমিক রেজাল্ট, অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পূর্ববর্তী ফলাফল। এছাড়া গবেষণার অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

দেশের বাস্তবতায় সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির সুযোগ কেমন?

বর্তমান বাজারে সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চাকরি সুযোগ খুবই প্রশস্ত। তবে এতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমি বলবো, প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে চাকরি পাওয়া কঠিন কিছু নয়। আমার বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পেয়ে গেছেন। এটা আইইউটির ঐতিহ্য। আইইউটি শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই চাকরির অফার পাওয়ার বেশ নজির আছে। এটা ভালো একাডেমিক পরিবেশ, যুগোপযোগী সিলেবাস এবং শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি এন্ট্রি লেভেলের চাকরির জন্যেও আইইউটি গ্র্যাজুয়েটদের ভালো বেতন অফার করে থাকে।

উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি আইইউটিকে কেন বেছে নিয়েছিলেন?

কলেজ লাইফ শুরুর আগে আমার স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। তবে তখনো নির্দিষ্ট করে ভাবিনি কোন বিষয়ে পড়বো। এইচএসসির পর আইইউটিতে পরীক্ষা দিয়ে সিএসই বিভাগে চান্স পাই। এরপর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায়ও সাফল্য আসে। সেখানে পেয়েছিলাম ইইই বিভাগ। কিন্তু ততদিন বুয়েটের ক্লাস শুরু করতে করতে আইইউটিতে আমার প্রথম সেমিস্টারের বেশিরভাগ সময় পার যায়। ওই সময়টায় আমি উপলব্ধি করি, কম্পিউটার সায়েন্সের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। আমি এতে ভালোও করছি। আইইউটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো দীর্ঘ সেশনজট নেই। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিগ্রি সম্পন্ন করা যায়। একাডেমিক জীবনটা অনেক বেশি সুসংগঠিত থাকে। সবমিলিয়ে আমি বুঝতে পারি, একটি বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং একটি অনুকূল একাডেমিক পরিবেশই সর্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বুয়েটের ইইই–এর পরিবর্তে আইইউটির সিএসইতে স্থির হয়ে যাই।

স্নাতকের পুরো জার্নিতে পড়ালেখার পাশাপাশি আপনি আর কি কি করেছিলেন?

পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি। নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখেছি। মাঝে মাঝে ফুটবল, ক্যারমের মতো খেলা খেলেছি। এছাড়া কম্পিউটারে গেমও খেলেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু সময় টিউশনি করেছি। যা নিজের ধারণাকে পরিষ্কার করতে এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়ক হয়েছে।

সিএসই নিয়ে পড়তে আসা নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার কি বার্তা থাকবে?

নিজেকে শুধুমাত্র একাডেমিক সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রথম থেকেই নিজের মধ্যে বাড়তি শেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে। কোড ফোর্স, হ্যাকার র‍্যাঙ্ক–এর মতো প্ল্যাটফর্মের কনটেস্টে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। এ ছাড়া কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে মনোযোগ দিলে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি যুক্তির গভীরতাও শাণিত হবে। ইউটিউবেও পছন্দের বিষয়গুলোর অসংখ্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, চাকরির ক্ষেত্রে যে স্কিলগুলো সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে, তা অনেক সময় একাডেমিক পড়ালেখার চেয়ে কিছুটা আলাদা। একাডেমিক প্রোজেক্টগুলোও কখনই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এগুলো যতটা সম্ভব ভালোভাবে করতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে সেগুলোই সিভিতে স্থান করবে এবং দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।

আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকার জন্যেও শুভকামনা রইলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত