আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি আগামী সপ্তাহে হতে পারে বলে ‘আশাবাদী’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রতি ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে’ বলে ঘোষণা করার পর গত শুক্রবার ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এটি শেষ করতে হবে। গাজা নিয়ে আমাদের কিছু করতে হবে।’
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান সংঘাতের কারণে এর আগে মধ্যস্থতাকারীরা কোনো সমাধান আনতে পারেননি। তবে এবার উভয় পক্ষই সংশোধিত প্রস্তাবে সম্মত হওয়ায়, কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি চুক্তি হাতের নাগালে বলে মনে হচ্ছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর নতুন করে এই প্রচেষ্টা গতি পেয়েছে। একই সঙ্গে মার্কিন চাপ এবং ইসরায়েলের যুদ্ধের লক্ষ্য পরিবর্তনও এর পেছনে কাজ করেছে।
গত ২৪ জুন ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির পর থেকে মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে গাজা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জোরদার করেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ইরান চুক্তি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সর্বশেষ আলোচনায় ‘গতি’ এনেছে।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতার কারণে চলমান দুর্ভোগের জন্য নেতানিয়াহুর সরকার ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে।
গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। মে মাসে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা যখন শত শত মানুষের অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কার বিষয়ে সতর্ক করেন, তখন ইসরায়েল আংশিকভাবে অবরোধ শিথিল করে।
সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় গাজায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, ত্রাণ বিতরণের সময়ও অভুক্ত মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। মে মাসের শেষ থেকে বিতর্কিত মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ উদ্যোগ ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ থেকে খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করার সময় গুলিতে শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন।
নেতানিয়াহুর ওপর ইসরায়েলের ভেতর থেকেও চাপ বাড়ছে। তাঁর সরকারে রয়েছেন গাজায় যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী ও সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী কট্টর-ডানপন্থী রাজনীতিকেরা। তবে বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ গত বুধবার বলেছেন, জিম্মি চুক্তি সম্ভব করার জন্য তিনি জোট সরকারে যোগ দেবেন। জনমত জরিপে বারবার দেখা গেছে, ইসরায়েলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি চুক্তি চায়, এমনকি যদি এর অর্থ হয় যুদ্ধের সমাপ্তি, তবুও।
ইসরায়েল কী চায়?
জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য ছাড়াও, নেতানিয়াহু তাঁর চরমপন্থী লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি: গাজা নিরস্ত্রীকরণ এবং হামাসের সামরিক সক্ষমতা ও শাসনক্ষমতা ধ্বংস করা।
তবে গত সপ্তাহান্তে প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের লক্ষ্যগুলো নির্ধারণে বক্তব্যে পরিবর্তন এনেছেন—প্রথমবারের মতো হামাসকে পরাজিত করার ‘সর্বোচ্চ লক্ষ্য’-এর আগে জিম্মিদের ফেরানোকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের পর ‘অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে’, যার মধ্যে হামাসের হাতে এখনো বন্দী থাকা সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, জিম্মিদের উদ্ধার করা। অবশ্যই, আমাদের গাজা সমস্যার সমাধান করতে হবে, হামাসকে পরাজিত করতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা উভয় মিশনই সম্পন্ন করব।’
এই মন্তব্যকে গাজায় বন্দী জিম্মিদের পরিবার স্বাগত জানিয়েছে। প্রিয়জনদের মুক্তিকে ইসরায়েলের প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে স্পষ্টভাবে নির্ধারণ না করার জন্য তাঁরা এত দিন সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। যেখানে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে খুব কমসংখ্যক জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে, বেশির ভাগই যুদ্ধবিরতির অধীনে মুক্তি পেয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় একাধিক জিম্মির মৃত্যুও হয়েছে।
প্রায় দুই বছর ধরে নিয়মিত নির্বিচার হামলা এবং হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের বেশির ভাগকে হত্যার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত সপ্তাহে গাজায় একটি কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করার সুপারিশ করেছে।
গত মঙ্গলবার, একজন সামরিক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধের সমস্ত লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি, তবে হামাস বাহিনী ছোট হয়ে আসায় এবং আত্মগোপন করায়, জঙ্গি গোষ্ঠীর অবশিষ্ট অংশকে কার্যকরভাবে লক্ষ্যবস্তু করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন।’
হামাসের অবস্থান
হামাস গত শুক্রবার ঘোষণা করেছে, তারা ‘মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে এবং আন্দোলন এই কাঠামো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কিত আলোচনার একটি পর্বে অবিলম্বে প্রবেশ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
হামাসের তিনটি প্রধান দাবি রয়েছে: যুদ্ধের স্থায়ী অবসান, জাতিসংঘের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা বিতরণ এবং গত ২ মার্চের আগে ইসরায়েলি বাহিনী যে অবস্থানে ছিল, সেখানে ফিরে যাওয়া। ২ মার্চের পর ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পুনরায় আক্রমণ শুরু করে এবং গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল দখল করে নেয়।
গত মে মাসের শেষের দিকে একজন সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছিলেন, তারা একদিনের মধ্যে জিম্মিদের ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত। শুধু তারা এই নিশ্চয়তা চায় যে, এরপর আর যুদ্ধ হবে না।
হামাসের হাতে আলোচনায় দর-কষাকষির মূল হাতিয়ার জিম্মিরা। যুদ্ধের সমাপ্তি ছাড়া জিম্মিদের মুক্তি দিতে তারা রাজি নয়।
গত মে মাসে ট্রাম্প প্রশাসন সমর্থিত পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জবাবে, হামাস মার্কিন আশ্বাস চেয়েছিল যে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং ৬০ দিনের বিরতির পর যুদ্ধ আবার শুরু হবে না।
যুদ্ধবিরতি অস্থায়ী হবে নাকি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ খুলবে, সেটিই এখন পক্ষগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিতর্কের বিষয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে গাজায় অভিযান শুরু করে। কিন্তু গাজায় রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থান ছেড়ে দিতে রাজি নয় হামাস।
হামাসের কর্মকর্তারা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় তাদের ভূমিকা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, তাঁরা ‘ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে নেই’ এবং ‘পরবর্তী পর্যায়ে’ গাজায় কোনো শাসন ব্যবস্থার অংশ তাঁরা হতে চান না।
প্রস্তাবিত চুক্তিতে কী আছে?
প্রস্তাবের বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে এটি স্পষ্ট যে, সংশোধিত পরিকল্পনাটি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য দূর করার একটি প্রচেষ্টা।
আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, সর্বশেষ প্রস্তাবের টাইমলাইন অনুযায়ী, মোট ৬০ দিনের মধ্যে ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি এবং ১৮ জন মৃত জিম্মির মরদেহ হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। ইসরায়েল সরকারের মতে, গাজায় এখনো বন্দী ৫০ জন জিম্মির মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত রয়েছে।
পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির মতোই, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে হামাস আটজন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে, ইসরায়েল অনির্দিষ্ট সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দী ও আটককৃতদের মুক্তি দেবে এবং উত্তর গাজার দখলকৃত স্থানগুলো থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েল ও হামাস একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা শুরু করবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলের অনুরোধে জিম্মিদের কোনো আনুষ্ঠানিকতা বা আড়ম্বর ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হবে। যেখানে শেষ যুদ্ধবিরতির সময় হামাস জিম্মি হস্তান্তরের সময় প্রচারমূলক ইভেন্ট করেছিল বলে অভিযোগ করে ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতির শুরুতে গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রবেশ শুরু হবে, যার মধ্যে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাগুলোর সহায়তাও থাকবে। গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির মতোই ত্রাণ পাবেন গাজাবাসী। এতে মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ এবং গাজায় তাদের ভূমিকা কী হবে সেটি অস্পষ্ট।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারীরা হালনাগাদ করা প্রস্তাবের অংশ হিসেবে গাজায় যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি নিষ্পত্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে আরও দৃঢ় আশ্বাস দিয়েছেন। এটি নীতিগতভাবে হামাসের মূল উদ্বেগগুলোর একটির সমাধান দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা নথিতে নির্দিষ্ট ভাষার বিস্তারিত দেননি, তবে বলেছেন যে, শব্দগুলো পূর্ববর্তী আশ্বাসের চেয়ে শক্তিশালী।
উভয় পক্ষ প্রস্তাবটি গ্রহণ করলেও, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার আগে আরও আলোচনা হতে হবে। এই আলোচনায়, মধ্যস্থতাকারীরা চুক্তির চূড়ান্ত বিবরণগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ করবেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গতকাল শনিবার ঘোষণা করেছে, দোহায় আলোচনায় অংশ নিতে ইসরায়েল একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। তবে বলা হয়েছে, হামাস সর্বশেষ কাতারের প্রস্তাবে যে পরিবর্তনগুলো চাচ্ছে তা ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল আজ রোববার কাতারে রওনা হওয়ার কথা। তার মানে শিগগিরই আলোচনা শুরু হবে।
হামাস গত শুক্রবার রাতে বলেছে, তারা প্রস্তাবের ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ জমা দিয়েছে। তবে আলোচনায় জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস কিছু ‘সংশোধনী’ দিয়েছে।
তবে হামাস প্রকাশ্যে বলেনি যে এই সপ্তাহের শুরুতে কাতারের প্রস্তাবে তারা কী পরিবর্তন চেয়েছিল। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধের একটি সমাপ্তি, পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের দৃঢ় আশ্বাস চেয়ে আসছে। হামাস বিতর্কিত মার্কিন এবং ইসরায়েলি-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে নয়, বরং জাতিসংঘের প্রচলিত পদ্ধতির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের পক্ষে।
আগের যুদ্ধবিরতি
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ২১ মাসের যুদ্ধে, আগের যুদ্ধবিরতি মোট নয় সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এই যুদ্ধে গাজায় ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৭ হাজারেরও বেশি শিশু।
প্রথম যুদ্ধবিরতি ২০২৩ সালের নভেম্বরে কার্যকর হয়, তবে তা মাত্র এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। সে সময়, ১০৫ জন জিম্মিকে গাজা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, বিনিময়ে ইসরায়েল বেশ কিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়।
দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতি ২০২৫ সালের জানুয়ারির আগে হয়নি। এই যুদ্ধবিরতি আট সপ্তাহেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়, ইসরায়েল প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে প্রায় ৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়।
দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে, ইসরায়েলের একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েল ১৮ মার্চ চুক্তি ভেঙে আক্রমণ শুরু করে। নেতানিয়াহু প্রশাসন আলোচনা ভেস্তে দেয়। ইসরায়েল তখন বলেছিল, অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই তারা আবার আক্রমণ করেছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি আগামী সপ্তাহে হতে পারে বলে ‘আশাবাদী’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রতি ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে’ বলে ঘোষণা করার পর গত শুক্রবার ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এটি শেষ করতে হবে। গাজা নিয়ে আমাদের কিছু করতে হবে।’
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান সংঘাতের কারণে এর আগে মধ্যস্থতাকারীরা কোনো সমাধান আনতে পারেননি। তবে এবার উভয় পক্ষই সংশোধিত প্রস্তাবে সম্মত হওয়ায়, কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি চুক্তি হাতের নাগালে বলে মনে হচ্ছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর নতুন করে এই প্রচেষ্টা গতি পেয়েছে। একই সঙ্গে মার্কিন চাপ এবং ইসরায়েলের যুদ্ধের লক্ষ্য পরিবর্তনও এর পেছনে কাজ করেছে।
গত ২৪ জুন ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির পর থেকে মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে গাজা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জোরদার করেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ইরান চুক্তি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সর্বশেষ আলোচনায় ‘গতি’ এনেছে।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতার কারণে চলমান দুর্ভোগের জন্য নেতানিয়াহুর সরকার ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে।
গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। মে মাসে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা যখন শত শত মানুষের অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কার বিষয়ে সতর্ক করেন, তখন ইসরায়েল আংশিকভাবে অবরোধ শিথিল করে।
সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় গাজায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, ত্রাণ বিতরণের সময়ও অভুক্ত মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। মে মাসের শেষ থেকে বিতর্কিত মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ উদ্যোগ ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ থেকে খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করার সময় গুলিতে শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন।
নেতানিয়াহুর ওপর ইসরায়েলের ভেতর থেকেও চাপ বাড়ছে। তাঁর সরকারে রয়েছেন গাজায় যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী ও সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী কট্টর-ডানপন্থী রাজনীতিকেরা। তবে বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ গত বুধবার বলেছেন, জিম্মি চুক্তি সম্ভব করার জন্য তিনি জোট সরকারে যোগ দেবেন। জনমত জরিপে বারবার দেখা গেছে, ইসরায়েলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি চুক্তি চায়, এমনকি যদি এর অর্থ হয় যুদ্ধের সমাপ্তি, তবুও।
ইসরায়েল কী চায়?
জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য ছাড়াও, নেতানিয়াহু তাঁর চরমপন্থী লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি: গাজা নিরস্ত্রীকরণ এবং হামাসের সামরিক সক্ষমতা ও শাসনক্ষমতা ধ্বংস করা।
তবে গত সপ্তাহান্তে প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের লক্ষ্যগুলো নির্ধারণে বক্তব্যে পরিবর্তন এনেছেন—প্রথমবারের মতো হামাসকে পরাজিত করার ‘সর্বোচ্চ লক্ষ্য’-এর আগে জিম্মিদের ফেরানোকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের পর ‘অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে’, যার মধ্যে হামাসের হাতে এখনো বন্দী থাকা সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, জিম্মিদের উদ্ধার করা। অবশ্যই, আমাদের গাজা সমস্যার সমাধান করতে হবে, হামাসকে পরাজিত করতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা উভয় মিশনই সম্পন্ন করব।’
এই মন্তব্যকে গাজায় বন্দী জিম্মিদের পরিবার স্বাগত জানিয়েছে। প্রিয়জনদের মুক্তিকে ইসরায়েলের প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে স্পষ্টভাবে নির্ধারণ না করার জন্য তাঁরা এত দিন সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। যেখানে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে খুব কমসংখ্যক জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে, বেশির ভাগই যুদ্ধবিরতির অধীনে মুক্তি পেয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় একাধিক জিম্মির মৃত্যুও হয়েছে।
প্রায় দুই বছর ধরে নিয়মিত নির্বিচার হামলা এবং হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের বেশির ভাগকে হত্যার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত সপ্তাহে গাজায় একটি কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করার সুপারিশ করেছে।
গত মঙ্গলবার, একজন সামরিক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধের সমস্ত লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি, তবে হামাস বাহিনী ছোট হয়ে আসায় এবং আত্মগোপন করায়, জঙ্গি গোষ্ঠীর অবশিষ্ট অংশকে কার্যকরভাবে লক্ষ্যবস্তু করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন।’
হামাসের অবস্থান
হামাস গত শুক্রবার ঘোষণা করেছে, তারা ‘মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে এবং আন্দোলন এই কাঠামো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কিত আলোচনার একটি পর্বে অবিলম্বে প্রবেশ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
হামাসের তিনটি প্রধান দাবি রয়েছে: যুদ্ধের স্থায়ী অবসান, জাতিসংঘের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা বিতরণ এবং গত ২ মার্চের আগে ইসরায়েলি বাহিনী যে অবস্থানে ছিল, সেখানে ফিরে যাওয়া। ২ মার্চের পর ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পুনরায় আক্রমণ শুরু করে এবং গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল দখল করে নেয়।
গত মে মাসের শেষের দিকে একজন সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছিলেন, তারা একদিনের মধ্যে জিম্মিদের ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত। শুধু তারা এই নিশ্চয়তা চায় যে, এরপর আর যুদ্ধ হবে না।
হামাসের হাতে আলোচনায় দর-কষাকষির মূল হাতিয়ার জিম্মিরা। যুদ্ধের সমাপ্তি ছাড়া জিম্মিদের মুক্তি দিতে তারা রাজি নয়।
গত মে মাসে ট্রাম্প প্রশাসন সমর্থিত পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জবাবে, হামাস মার্কিন আশ্বাস চেয়েছিল যে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং ৬০ দিনের বিরতির পর যুদ্ধ আবার শুরু হবে না।
যুদ্ধবিরতি অস্থায়ী হবে নাকি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ খুলবে, সেটিই এখন পক্ষগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিতর্কের বিষয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে গাজায় অভিযান শুরু করে। কিন্তু গাজায় রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থান ছেড়ে দিতে রাজি নয় হামাস।
হামাসের কর্মকর্তারা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় তাদের ভূমিকা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, তাঁরা ‘ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে নেই’ এবং ‘পরবর্তী পর্যায়ে’ গাজায় কোনো শাসন ব্যবস্থার অংশ তাঁরা হতে চান না।
প্রস্তাবিত চুক্তিতে কী আছে?
প্রস্তাবের বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে এটি স্পষ্ট যে, সংশোধিত পরিকল্পনাটি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য দূর করার একটি প্রচেষ্টা।
আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, সর্বশেষ প্রস্তাবের টাইমলাইন অনুযায়ী, মোট ৬০ দিনের মধ্যে ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি এবং ১৮ জন মৃত জিম্মির মরদেহ হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। ইসরায়েল সরকারের মতে, গাজায় এখনো বন্দী ৫০ জন জিম্মির মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত রয়েছে।
পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির মতোই, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে হামাস আটজন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে, ইসরায়েল অনির্দিষ্ট সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দী ও আটককৃতদের মুক্তি দেবে এবং উত্তর গাজার দখলকৃত স্থানগুলো থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েল ও হামাস একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা শুরু করবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলের অনুরোধে জিম্মিদের কোনো আনুষ্ঠানিকতা বা আড়ম্বর ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হবে। যেখানে শেষ যুদ্ধবিরতির সময় হামাস জিম্মি হস্তান্তরের সময় প্রচারমূলক ইভেন্ট করেছিল বলে অভিযোগ করে ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতির শুরুতে গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রবেশ শুরু হবে, যার মধ্যে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাগুলোর সহায়তাও থাকবে। গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির মতোই ত্রাণ পাবেন গাজাবাসী। এতে মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ এবং গাজায় তাদের ভূমিকা কী হবে সেটি অস্পষ্ট।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারীরা হালনাগাদ করা প্রস্তাবের অংশ হিসেবে গাজায় যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি নিষ্পত্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে আরও দৃঢ় আশ্বাস দিয়েছেন। এটি নীতিগতভাবে হামাসের মূল উদ্বেগগুলোর একটির সমাধান দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা নথিতে নির্দিষ্ট ভাষার বিস্তারিত দেননি, তবে বলেছেন যে, শব্দগুলো পূর্ববর্তী আশ্বাসের চেয়ে শক্তিশালী।
উভয় পক্ষ প্রস্তাবটি গ্রহণ করলেও, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার আগে আরও আলোচনা হতে হবে। এই আলোচনায়, মধ্যস্থতাকারীরা চুক্তির চূড়ান্ত বিবরণগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ করবেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গতকাল শনিবার ঘোষণা করেছে, দোহায় আলোচনায় অংশ নিতে ইসরায়েল একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। তবে বলা হয়েছে, হামাস সর্বশেষ কাতারের প্রস্তাবে যে পরিবর্তনগুলো চাচ্ছে তা ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল আজ রোববার কাতারে রওনা হওয়ার কথা। তার মানে শিগগিরই আলোচনা শুরু হবে।
হামাস গত শুক্রবার রাতে বলেছে, তারা প্রস্তাবের ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ জমা দিয়েছে। তবে আলোচনায় জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস কিছু ‘সংশোধনী’ দিয়েছে।
তবে হামাস প্রকাশ্যে বলেনি যে এই সপ্তাহের শুরুতে কাতারের প্রস্তাবে তারা কী পরিবর্তন চেয়েছিল। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধের একটি সমাপ্তি, পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের দৃঢ় আশ্বাস চেয়ে আসছে। হামাস বিতর্কিত মার্কিন এবং ইসরায়েলি-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে নয়, বরং জাতিসংঘের প্রচলিত পদ্ধতির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের পক্ষে।
আগের যুদ্ধবিরতি
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ২১ মাসের যুদ্ধে, আগের যুদ্ধবিরতি মোট নয় সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এই যুদ্ধে গাজায় ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৭ হাজারেরও বেশি শিশু।
প্রথম যুদ্ধবিরতি ২০২৩ সালের নভেম্বরে কার্যকর হয়, তবে তা মাত্র এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। সে সময়, ১০৫ জন জিম্মিকে গাজা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, বিনিময়ে ইসরায়েল বেশ কিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়।
দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতি ২০২৫ সালের জানুয়ারির আগে হয়নি। এই যুদ্ধবিরতি আট সপ্তাহেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়, ইসরায়েল প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে প্রায় ৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়।
দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে, ইসরায়েলের একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েল ১৮ মার্চ চুক্তি ভেঙে আক্রমণ শুরু করে। নেতানিয়াহু প্রশাসন আলোচনা ভেস্তে দেয়। ইসরায়েল তখন বলেছিল, অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই তারা আবার আক্রমণ করেছে।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি আগামী সপ্তাহে হতে পারে বলে ‘আশাবাদী’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রতি ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে’ বলে ঘোষণা করার পর গত শুক্রবার ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এটি শেষ করতে হবে। গাজা নিয়ে আমাদের কিছু করতে হবে।’
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান সংঘাতের কারণে এর আগে মধ্যস্থতাকারীরা কোনো সমাধান আনতে পারেননি। তবে এবার উভয় পক্ষই সংশোধিত প্রস্তাবে সম্মত হওয়ায়, কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি চুক্তি হাতের নাগালে বলে মনে হচ্ছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর নতুন করে এই প্রচেষ্টা গতি পেয়েছে। একই সঙ্গে মার্কিন চাপ এবং ইসরায়েলের যুদ্ধের লক্ষ্য পরিবর্তনও এর পেছনে কাজ করেছে।
গত ২৪ জুন ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির পর থেকে মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে গাজা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জোরদার করেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ইরান চুক্তি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সর্বশেষ আলোচনায় ‘গতি’ এনেছে।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতার কারণে চলমান দুর্ভোগের জন্য নেতানিয়াহুর সরকার ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে।
গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। মে মাসে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা যখন শত শত মানুষের অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কার বিষয়ে সতর্ক করেন, তখন ইসরায়েল আংশিকভাবে অবরোধ শিথিল করে।
সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় গাজায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, ত্রাণ বিতরণের সময়ও অভুক্ত মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। মে মাসের শেষ থেকে বিতর্কিত মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ উদ্যোগ ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ থেকে খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করার সময় গুলিতে শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন।
নেতানিয়াহুর ওপর ইসরায়েলের ভেতর থেকেও চাপ বাড়ছে। তাঁর সরকারে রয়েছেন গাজায় যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী ও সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী কট্টর-ডানপন্থী রাজনীতিকেরা। তবে বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ গত বুধবার বলেছেন, জিম্মি চুক্তি সম্ভব করার জন্য তিনি জোট সরকারে যোগ দেবেন। জনমত জরিপে বারবার দেখা গেছে, ইসরায়েলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি চুক্তি চায়, এমনকি যদি এর অর্থ হয় যুদ্ধের সমাপ্তি, তবুও।
ইসরায়েল কী চায়?
জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য ছাড়াও, নেতানিয়াহু তাঁর চরমপন্থী লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি: গাজা নিরস্ত্রীকরণ এবং হামাসের সামরিক সক্ষমতা ও শাসনক্ষমতা ধ্বংস করা।
তবে গত সপ্তাহান্তে প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের লক্ষ্যগুলো নির্ধারণে বক্তব্যে পরিবর্তন এনেছেন—প্রথমবারের মতো হামাসকে পরাজিত করার ‘সর্বোচ্চ লক্ষ্য’-এর আগে জিম্মিদের ফেরানোকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের পর ‘অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে’, যার মধ্যে হামাসের হাতে এখনো বন্দী থাকা সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, জিম্মিদের উদ্ধার করা। অবশ্যই, আমাদের গাজা সমস্যার সমাধান করতে হবে, হামাসকে পরাজিত করতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা উভয় মিশনই সম্পন্ন করব।’
এই মন্তব্যকে গাজায় বন্দী জিম্মিদের পরিবার স্বাগত জানিয়েছে। প্রিয়জনদের মুক্তিকে ইসরায়েলের প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে স্পষ্টভাবে নির্ধারণ না করার জন্য তাঁরা এত দিন সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। যেখানে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে খুব কমসংখ্যক জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে, বেশির ভাগই যুদ্ধবিরতির অধীনে মুক্তি পেয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় একাধিক জিম্মির মৃত্যুও হয়েছে।
প্রায় দুই বছর ধরে নিয়মিত নির্বিচার হামলা এবং হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের বেশির ভাগকে হত্যার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত সপ্তাহে গাজায় একটি কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করার সুপারিশ করেছে।
গত মঙ্গলবার, একজন সামরিক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধের সমস্ত লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি, তবে হামাস বাহিনী ছোট হয়ে আসায় এবং আত্মগোপন করায়, জঙ্গি গোষ্ঠীর অবশিষ্ট অংশকে কার্যকরভাবে লক্ষ্যবস্তু করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন।’
হামাসের অবস্থান
হামাস গত শুক্রবার ঘোষণা করেছে, তারা ‘মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে এবং আন্দোলন এই কাঠামো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কিত আলোচনার একটি পর্বে অবিলম্বে প্রবেশ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
হামাসের তিনটি প্রধান দাবি রয়েছে: যুদ্ধের স্থায়ী অবসান, জাতিসংঘের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা বিতরণ এবং গত ২ মার্চের আগে ইসরায়েলি বাহিনী যে অবস্থানে ছিল, সেখানে ফিরে যাওয়া। ২ মার্চের পর ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পুনরায় আক্রমণ শুরু করে এবং গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল দখল করে নেয়।
গত মে মাসের শেষের দিকে একজন সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছিলেন, তারা একদিনের মধ্যে জিম্মিদের ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত। শুধু তারা এই নিশ্চয়তা চায় যে, এরপর আর যুদ্ধ হবে না।
হামাসের হাতে আলোচনায় দর-কষাকষির মূল হাতিয়ার জিম্মিরা। যুদ্ধের সমাপ্তি ছাড়া জিম্মিদের মুক্তি দিতে তারা রাজি নয়।
গত মে মাসে ট্রাম্প প্রশাসন সমর্থিত পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জবাবে, হামাস মার্কিন আশ্বাস চেয়েছিল যে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং ৬০ দিনের বিরতির পর যুদ্ধ আবার শুরু হবে না।
যুদ্ধবিরতি অস্থায়ী হবে নাকি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ খুলবে, সেটিই এখন পক্ষগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিতর্কের বিষয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে গাজায় অভিযান শুরু করে। কিন্তু গাজায় রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থান ছেড়ে দিতে রাজি নয় হামাস।
হামাসের কর্মকর্তারা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় তাদের ভূমিকা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, তাঁরা ‘ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে নেই’ এবং ‘পরবর্তী পর্যায়ে’ গাজায় কোনো শাসন ব্যবস্থার অংশ তাঁরা হতে চান না।
প্রস্তাবিত চুক্তিতে কী আছে?
প্রস্তাবের বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে এটি স্পষ্ট যে, সংশোধিত পরিকল্পনাটি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য দূর করার একটি প্রচেষ্টা।
আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, সর্বশেষ প্রস্তাবের টাইমলাইন অনুযায়ী, মোট ৬০ দিনের মধ্যে ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি এবং ১৮ জন মৃত জিম্মির মরদেহ হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। ইসরায়েল সরকারের মতে, গাজায় এখনো বন্দী ৫০ জন জিম্মির মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত রয়েছে।
পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির মতোই, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে হামাস আটজন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে, ইসরায়েল অনির্দিষ্ট সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দী ও আটককৃতদের মুক্তি দেবে এবং উত্তর গাজার দখলকৃত স্থানগুলো থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েল ও হামাস একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা শুরু করবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলের অনুরোধে জিম্মিদের কোনো আনুষ্ঠানিকতা বা আড়ম্বর ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হবে। যেখানে শেষ যুদ্ধবিরতির সময় হামাস জিম্মি হস্তান্তরের সময় প্রচারমূলক ইভেন্ট করেছিল বলে অভিযোগ করে ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতির শুরুতে গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রবেশ শুরু হবে, যার মধ্যে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাগুলোর সহায়তাও থাকবে। গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির মতোই ত্রাণ পাবেন গাজাবাসী। এতে মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ এবং গাজায় তাদের ভূমিকা কী হবে সেটি অস্পষ্ট।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারীরা হালনাগাদ করা প্রস্তাবের অংশ হিসেবে গাজায় যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি নিষ্পত্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে আরও দৃঢ় আশ্বাস দিয়েছেন। এটি নীতিগতভাবে হামাসের মূল উদ্বেগগুলোর একটির সমাধান দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা নথিতে নির্দিষ্ট ভাষার বিস্তারিত দেননি, তবে বলেছেন যে, শব্দগুলো পূর্ববর্তী আশ্বাসের চেয়ে শক্তিশালী।
উভয় পক্ষ প্রস্তাবটি গ্রহণ করলেও, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার আগে আরও আলোচনা হতে হবে। এই আলোচনায়, মধ্যস্থতাকারীরা চুক্তির চূড়ান্ত বিবরণগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ করবেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গতকাল শনিবার ঘোষণা করেছে, দোহায় আলোচনায় অংশ নিতে ইসরায়েল একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। তবে বলা হয়েছে, হামাস সর্বশেষ কাতারের প্রস্তাবে যে পরিবর্তনগুলো চাচ্ছে তা ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল আজ রোববার কাতারে রওনা হওয়ার কথা। তার মানে শিগগিরই আলোচনা শুরু হবে।
হামাস গত শুক্রবার রাতে বলেছে, তারা প্রস্তাবের ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ জমা দিয়েছে। তবে আলোচনায় জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস কিছু ‘সংশোধনী’ দিয়েছে।
তবে হামাস প্রকাশ্যে বলেনি যে এই সপ্তাহের শুরুতে কাতারের প্রস্তাবে তারা কী পরিবর্তন চেয়েছিল। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধের একটি সমাপ্তি, পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের দৃঢ় আশ্বাস চেয়ে আসছে। হামাস বিতর্কিত মার্কিন এবং ইসরায়েলি-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে নয়, বরং জাতিসংঘের প্রচলিত পদ্ধতির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের পক্ষে।
আগের যুদ্ধবিরতি
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ২১ মাসের যুদ্ধে, আগের যুদ্ধবিরতি মোট নয় সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এই যুদ্ধে গাজায় ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৭ হাজারেরও বেশি শিশু।
প্রথম যুদ্ধবিরতি ২০২৩ সালের নভেম্বরে কার্যকর হয়, তবে তা মাত্র এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। সে সময়, ১০৫ জন জিম্মিকে গাজা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, বিনিময়ে ইসরায়েল বেশ কিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়।
দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতি ২০২৫ সালের জানুয়ারির আগে হয়নি। এই যুদ্ধবিরতি আট সপ্তাহেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়, ইসরায়েল প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে প্রায় ৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়।
দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে, ইসরায়েলের একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েল ১৮ মার্চ চুক্তি ভেঙে আক্রমণ শুরু করে। নেতানিয়াহু প্রশাসন আলোচনা ভেস্তে দেয়। ইসরায়েল তখন বলেছিল, অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই তারা আবার আক্রমণ করেছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি আগামী সপ্তাহে হতে পারে বলে ‘আশাবাদী’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রতি ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে’ বলে ঘোষণা করার পর গত শুক্রবার ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এটি শেষ করতে হবে। গাজা নিয়ে আমাদের কিছু করতে হবে।’
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান সংঘাতের কারণে এর আগে মধ্যস্থতাকারীরা কোনো সমাধান আনতে পারেননি। তবে এবার উভয় পক্ষই সংশোধিত প্রস্তাবে সম্মত হওয়ায়, কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি চুক্তি হাতের নাগালে বলে মনে হচ্ছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর নতুন করে এই প্রচেষ্টা গতি পেয়েছে। একই সঙ্গে মার্কিন চাপ এবং ইসরায়েলের যুদ্ধের লক্ষ্য পরিবর্তনও এর পেছনে কাজ করেছে।
গত ২৪ জুন ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির পর থেকে মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে গাজা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জোরদার করেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ইরান চুক্তি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সর্বশেষ আলোচনায় ‘গতি’ এনেছে।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতার কারণে চলমান দুর্ভোগের জন্য নেতানিয়াহুর সরকার ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে।
গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। মে মাসে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা যখন শত শত মানুষের অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কার বিষয়ে সতর্ক করেন, তখন ইসরায়েল আংশিকভাবে অবরোধ শিথিল করে।
সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় গাজায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, ত্রাণ বিতরণের সময়ও অভুক্ত মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। মে মাসের শেষ থেকে বিতর্কিত মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ উদ্যোগ ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ থেকে খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করার সময় গুলিতে শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন।
নেতানিয়াহুর ওপর ইসরায়েলের ভেতর থেকেও চাপ বাড়ছে। তাঁর সরকারে রয়েছেন গাজায় যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী ও সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী কট্টর-ডানপন্থী রাজনীতিকেরা। তবে বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ গত বুধবার বলেছেন, জিম্মি চুক্তি সম্ভব করার জন্য তিনি জোট সরকারে যোগ দেবেন। জনমত জরিপে বারবার দেখা গেছে, ইসরায়েলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি চুক্তি চায়, এমনকি যদি এর অর্থ হয় যুদ্ধের সমাপ্তি, তবুও।
ইসরায়েল কী চায়?
জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য ছাড়াও, নেতানিয়াহু তাঁর চরমপন্থী লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি: গাজা নিরস্ত্রীকরণ এবং হামাসের সামরিক সক্ষমতা ও শাসনক্ষমতা ধ্বংস করা।
তবে গত সপ্তাহান্তে প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের লক্ষ্যগুলো নির্ধারণে বক্তব্যে পরিবর্তন এনেছেন—প্রথমবারের মতো হামাসকে পরাজিত করার ‘সর্বোচ্চ লক্ষ্য’-এর আগে জিম্মিদের ফেরানোকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের পর ‘অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে’, যার মধ্যে হামাসের হাতে এখনো বন্দী থাকা সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, জিম্মিদের উদ্ধার করা। অবশ্যই, আমাদের গাজা সমস্যার সমাধান করতে হবে, হামাসকে পরাজিত করতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা উভয় মিশনই সম্পন্ন করব।’
এই মন্তব্যকে গাজায় বন্দী জিম্মিদের পরিবার স্বাগত জানিয়েছে। প্রিয়জনদের মুক্তিকে ইসরায়েলের প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে স্পষ্টভাবে নির্ধারণ না করার জন্য তাঁরা এত দিন সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। যেখানে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে খুব কমসংখ্যক জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে, বেশির ভাগই যুদ্ধবিরতির অধীনে মুক্তি পেয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় একাধিক জিম্মির মৃত্যুও হয়েছে।
প্রায় দুই বছর ধরে নিয়মিত নির্বিচার হামলা এবং হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের বেশির ভাগকে হত্যার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত সপ্তাহে গাজায় একটি কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করার সুপারিশ করেছে।
গত মঙ্গলবার, একজন সামরিক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধের সমস্ত লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি, তবে হামাস বাহিনী ছোট হয়ে আসায় এবং আত্মগোপন করায়, জঙ্গি গোষ্ঠীর অবশিষ্ট অংশকে কার্যকরভাবে লক্ষ্যবস্তু করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন।’
হামাসের অবস্থান
হামাস গত শুক্রবার ঘোষণা করেছে, তারা ‘মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে এবং আন্দোলন এই কাঠামো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কিত আলোচনার একটি পর্বে অবিলম্বে প্রবেশ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
হামাসের তিনটি প্রধান দাবি রয়েছে: যুদ্ধের স্থায়ী অবসান, জাতিসংঘের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা বিতরণ এবং গত ২ মার্চের আগে ইসরায়েলি বাহিনী যে অবস্থানে ছিল, সেখানে ফিরে যাওয়া। ২ মার্চের পর ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পুনরায় আক্রমণ শুরু করে এবং গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল দখল করে নেয়।
গত মে মাসের শেষের দিকে একজন সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছিলেন, তারা একদিনের মধ্যে জিম্মিদের ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত। শুধু তারা এই নিশ্চয়তা চায় যে, এরপর আর যুদ্ধ হবে না।
হামাসের হাতে আলোচনায় দর-কষাকষির মূল হাতিয়ার জিম্মিরা। যুদ্ধের সমাপ্তি ছাড়া জিম্মিদের মুক্তি দিতে তারা রাজি নয়।
গত মে মাসে ট্রাম্প প্রশাসন সমর্থিত পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জবাবে, হামাস মার্কিন আশ্বাস চেয়েছিল যে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং ৬০ দিনের বিরতির পর যুদ্ধ আবার শুরু হবে না।
যুদ্ধবিরতি অস্থায়ী হবে নাকি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ খুলবে, সেটিই এখন পক্ষগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিতর্কের বিষয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে গাজায় অভিযান শুরু করে। কিন্তু গাজায় রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থান ছেড়ে দিতে রাজি নয় হামাস।
হামাসের কর্মকর্তারা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় তাদের ভূমিকা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, তাঁরা ‘ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে নেই’ এবং ‘পরবর্তী পর্যায়ে’ গাজায় কোনো শাসন ব্যবস্থার অংশ তাঁরা হতে চান না।
প্রস্তাবিত চুক্তিতে কী আছে?
প্রস্তাবের বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে এটি স্পষ্ট যে, সংশোধিত পরিকল্পনাটি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য দূর করার একটি প্রচেষ্টা।
আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, সর্বশেষ প্রস্তাবের টাইমলাইন অনুযায়ী, মোট ৬০ দিনের মধ্যে ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি এবং ১৮ জন মৃত জিম্মির মরদেহ হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। ইসরায়েল সরকারের মতে, গাজায় এখনো বন্দী ৫০ জন জিম্মির মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত রয়েছে।
পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির মতোই, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে হামাস আটজন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে, ইসরায়েল অনির্দিষ্ট সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দী ও আটককৃতদের মুক্তি দেবে এবং উত্তর গাজার দখলকৃত স্থানগুলো থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েল ও হামাস একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা শুরু করবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলের অনুরোধে জিম্মিদের কোনো আনুষ্ঠানিকতা বা আড়ম্বর ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হবে। যেখানে শেষ যুদ্ধবিরতির সময় হামাস জিম্মি হস্তান্তরের সময় প্রচারমূলক ইভেন্ট করেছিল বলে অভিযোগ করে ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতির শুরুতে গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রবেশ শুরু হবে, যার মধ্যে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাগুলোর সহায়তাও থাকবে। গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির মতোই ত্রাণ পাবেন গাজাবাসী। এতে মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ এবং গাজায় তাদের ভূমিকা কী হবে সেটি অস্পষ্ট।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারীরা হালনাগাদ করা প্রস্তাবের অংশ হিসেবে গাজায় যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি নিষ্পত্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে আরও দৃঢ় আশ্বাস দিয়েছেন। এটি নীতিগতভাবে হামাসের মূল উদ্বেগগুলোর একটির সমাধান দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা নথিতে নির্দিষ্ট ভাষার বিস্তারিত দেননি, তবে বলেছেন যে, শব্দগুলো পূর্ববর্তী আশ্বাসের চেয়ে শক্তিশালী।
উভয় পক্ষ প্রস্তাবটি গ্রহণ করলেও, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার আগে আরও আলোচনা হতে হবে। এই আলোচনায়, মধ্যস্থতাকারীরা চুক্তির চূড়ান্ত বিবরণগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ করবেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গতকাল শনিবার ঘোষণা করেছে, দোহায় আলোচনায় অংশ নিতে ইসরায়েল একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। তবে বলা হয়েছে, হামাস সর্বশেষ কাতারের প্রস্তাবে যে পরিবর্তনগুলো চাচ্ছে তা ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল আজ রোববার কাতারে রওনা হওয়ার কথা। তার মানে শিগগিরই আলোচনা শুরু হবে।
হামাস গত শুক্রবার রাতে বলেছে, তারা প্রস্তাবের ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ জমা দিয়েছে। তবে আলোচনায় জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস কিছু ‘সংশোধনী’ দিয়েছে।
তবে হামাস প্রকাশ্যে বলেনি যে এই সপ্তাহের শুরুতে কাতারের প্রস্তাবে তারা কী পরিবর্তন চেয়েছিল। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধের একটি সমাপ্তি, পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের দৃঢ় আশ্বাস চেয়ে আসছে। হামাস বিতর্কিত মার্কিন এবং ইসরায়েলি-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে নয়, বরং জাতিসংঘের প্রচলিত পদ্ধতির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের পক্ষে।
আগের যুদ্ধবিরতি
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ২১ মাসের যুদ্ধে, আগের যুদ্ধবিরতি মোট নয় সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এই যুদ্ধে গাজায় ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৭ হাজারেরও বেশি শিশু।
প্রথম যুদ্ধবিরতি ২০২৩ সালের নভেম্বরে কার্যকর হয়, তবে তা মাত্র এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। সে সময়, ১০৫ জন জিম্মিকে গাজা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, বিনিময়ে ইসরায়েল বেশ কিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়।
দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতি ২০২৫ সালের জানুয়ারির আগে হয়নি। এই যুদ্ধবিরতি আট সপ্তাহেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়, ইসরায়েল প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে প্রায় ৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়।
দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে, ইসরায়েলের একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েল ১৮ মার্চ চুক্তি ভেঙে আক্রমণ শুরু করে। নেতানিয়াহু প্রশাসন আলোচনা ভেস্তে দেয়। ইসরায়েল তখন বলেছিল, অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই তারা আবার আক্রমণ করেছে।

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।
৭ ঘণ্টা আগে
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়।
১ দিন আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
১ দিন আগে
তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।
অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।
এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।
এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।
অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।
এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।
এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান সংঘাতের কারণে এর আগে মধ্যস্থতাকারীরা কোনো সমাধান আনতে পারেননি। তবে এবার উভয় পক্ষই সংশোধিত প্রস্তাবে সম্মত হওয়ায়, কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি চুক্তি হাতের নাগালে বলে মনে হচ্ছে।
০৬ জুলাই ২০২৫
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়।
১ দিন আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
১ দিন আগে
তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।
এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।
একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।
তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।
জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।
তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।
গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।
এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।
একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।
তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।
জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।
তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।
গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান সংঘাতের কারণে এর আগে মধ্যস্থতাকারীরা কোনো সমাধান আনতে পারেননি। তবে এবার উভয় পক্ষই সংশোধিত প্রস্তাবে সম্মত হওয়ায়, কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি চুক্তি হাতের নাগালে বলে মনে হচ্ছে।
০৬ জুলাই ২০২৫
ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।
৭ ঘণ্টা আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
১ দিন আগে
তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’
জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।
এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।
রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’
জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।
এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।
রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান সংঘাতের কারণে এর আগে মধ্যস্থতাকারীরা কোনো সমাধান আনতে পারেননি। তবে এবার উভয় পক্ষই সংশোধিত প্রস্তাবে সম্মত হওয়ায়, কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি চুক্তি হাতের নাগালে বলে মনে হচ্ছে।
০৬ জুলাই ২০২৫
ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।
৭ ঘণ্টা আগে
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়।
১ দিন আগে
তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।
চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।
এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।
চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।
এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান সংঘাতের কারণে এর আগে মধ্যস্থতাকারীরা কোনো সমাধান আনতে পারেননি। তবে এবার উভয় পক্ষই সংশোধিত প্রস্তাবে সম্মত হওয়ায়, কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি চুক্তি হাতের নাগালে বলে মনে হচ্ছে।
০৬ জুলাই ২০২৫
ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।
৭ ঘণ্টা আগে
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়।
১ দিন আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
১ দিন আগে