Ajker Patrika

মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলার আশঙ্কা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫, ১২: ৩২
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

ইরানে ইসরায়েলের হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে ইরানি হামলার আশঙ্কা তৈরি হওয়ার পর এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ কথা জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা না চালানোর জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরানের মার্কিন ঘাঁটি ও সেনাসদস্যদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানো উচিত নয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

বিবৃতিতে রুবিও বলেন, ‘ইরানে ইসরায়েলের হামলার সঙ্গে আমরা জড়িত নই। ইসরায়েল আমাদের জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ তাদের আত্মরক্ষার জন্য জরুরি ছিল। আমাদের কাছে ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিন সেনাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আর তা নিশ্চিতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমরা আমাদের আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তবে, একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই—ইরানের মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো উচিত হবে না।’

রুবিওর বক্তব্যের পরপরই ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি দিয়েছে। এতে এই হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেও দায়ী করা হয়েছে। ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী ইরানের ইসরায়েলি হামলার জবাব দেওয়ার আইনি ও বৈধ অধিকার রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের প্রিয় স্বদেশ ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের বিপজ্জনক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ভোগ করতে হবে জায়নবাদীদের। পাশাপাশি এর সম্পূর্ণ দায়ভার নিতে হবে তার মিত্রদেরও। ইরানের বিরুদ্ধে জায়নবাদী শাসনের এই আগ্রাসী কার্যকলাপ যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয় ও অনুমোদন ছাড়া সম্ভব নয়। সুতরাং, এই শাসনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও ইসরায়েলের এই দুঃসাহসিক অভিযানের বিপজ্জনক পরিণতির জন্য দায়ী থাকবে।’

এদিকে, বিশ্লেষকেরাও বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গত কয়েক দিনের কার্যকলাপই নিশ্চিত করে, ইরানে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে পুরোপুরি অবগত ছিল যুক্তরাষ্ট্র। আল-জাজিরার সাংবাদিক অ্যালেন ফিশার বলেন, ‘নিঃসন্দেহে, সব ইঙ্গিতই সেই দিকেই যায় যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আগে থেকেই হামলার ব্যাপারে জানানো হয়েছিল। হামলা শুরুর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল যে বাগদাদে তাদের দূতাবাস থেকে অপরিহার্য নয় এমন কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া শুরু হবে। একই সঙ্গে, অঞ্চলজুড়ে অন্যান্য দূতাবাসের কর্মীদেরও ইচ্ছে হলে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এসব পদক্ষেপ থেকেই মনে হচ্ছিল, কোনো না কোনো হামলা আসন্ন।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক ঘণ্টায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দিয়ে জানান যে, তিনি তাঁর সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে। তবে, তাঁর মূল বক্তব্য ছিল—তিনি চান না ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করুক, তবে তিনি আশা করেছিলেন আলোচনার সুযোগ থাকবে। ইসরায়েল যে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেছে, সেটি বোঝায়, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত না থাকলেও—যেমনটি এখন শোনা যাচ্ছে—তারা আগেই এ বিষয়ে অবহিত ছিল। বর্তমানে হোয়াইট হাউসের কংগ্রেসনাল পিকনিকে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চয়ই জানতেন ইসরায়েল কী করতে চলেছে। এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—ইরানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার মুখে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সাড়া দেবে?’

এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পও জানিয়েছেন তিনি এ হামলার ব্যাপারে জানতেন। তবে, মার্কিন সেনারা এই হামলায় কোনো ভূমিকা রাখেনি।

কয়েক দিন ধরেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েল হামলা চালাতে পারে। আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোরে সেই আশঙ্কা সত্যি করে ইরানের কমপক্ষে ছয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী আইডিএফ। এ হামলায় ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি এবং ২৫ বছর ধরে দেশটির পারমাণবিক শক্তিবিষয়ক সংস্থার প্রধানের দায়িত্বে থাকা ফারেদুন আব্বাসি নিহত হয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বহু বেসামরিকেরও প্রাণ গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝেই বড়দিনের আনন্দ খুঁজছে ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে

গাজা উপত্যকায় গত দুই বছর ধরে চলা ধ্বংসলীলা আর লাশের মিছিলের মাঝেও বড়দিনের আনন্দ ফিরে পাওয়ার এক বিষাদময় চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানকার ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়। একটি নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি কিছুটা স্বস্তি দিলেও, ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি আর বাস্তুচ্যুত মানুষের হাহাকার অনেক ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে।

৭৬ বছর বয়সী আত্তাল্লাহ তরাজি সম্প্রতি বড়দিনের উপহার হিসেবে এক জোড়া মোজা আর স্কার্ফ পেয়েছেন। গাজার কনকনে শীত থেকে বাঁচতে এগুলোই এখন তাঁর বড় সম্বল। গির্জার অন্যান্য সদস্যদের সাথে তরাজি যখন গাইলেন—‘খ্রিস্টের জন্ম হয়েছে, হালেলুইয়া’ (একটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ প্রভুর প্রশংসা), তখন কিছুক্ষণের জন্য হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বিভীষিকা ঢাকা পড়েছিল বিশ্বাসের সুরে।

গাজার সেন্ট্রাল সিটি এলাকার ‘হলি ফ্যামিলি চার্চ’ কম্পাউন্ডে আশ্রয় নেওয়া তরাজি বলেন, ‘আমরা এই পবিত্র মুহূর্তে যুদ্ধ, বিপদ আর বোমাবর্ষণের কথা ভুলে যেতে চাই। খ্রিস্টের জন্মের আনন্দ আমাদের সব তিক্ততাকে ছাপিয়ে যাক।’

তবে সবার জন্য উৎসবের অনুভূতি এক নয়। শাদি আবু দাউদের জন্য এবারের বড়দিনটি অত্যন্ত কষ্টের। গত জুলাই মাসে এই ক্যাথলিক চার্চ কম্পাউন্ডেই ইজরায়েলি হামলায় তাঁর মা নিহত হন ও ছেলে আহত হয়। ইজরায়েল একে ‘দুর্ঘটনা’ বলে দুঃখ প্রকাশ করলেও স্বজন হারানোর ক্ষত এখনও দগদগে। আবু দাউদ বলেন, জখম এখনও কাঁচা। এখানে কোনো উৎসব নেই, আমরা এখনও ‘না যুদ্ধ না শান্তি’র এক অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে বাস করছি।

গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে খ্রিস্টানদের সংখ্যা এখন নগণ্য। যুদ্ধের কারণে অনেক পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ২৩ বছর বয়সী ওয়াফা ইমাদ এলসায়েঘ জানান, বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়রা না থাকায় আগের মতো আমেজ নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবার নিয়ে সাজসজ্জা করছি ঠিকই, কিন্তু যাদের সাথে সব আনন্দ ভাগ করে নিতাম, তারা আজ গাজায় নেই। এই পরিবেশ আগের মতো করে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’

৩৫ বছর বয়সী মা এলিনোর আমাশ তাঁর সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে ঘরে বড়দিনের গাছ (ক্রিসমাস ট্রি) সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানেরা কিছু চকলেট আর মিষ্টি পেয়ে বোমার ভয় ছাড়া শ্বাস নিতে পারছে। কিন্তু তাবুগুলোতে বসবাসকারী মানুষের কষ্ট দেখে চোখে জল আসে।’

গাজার খ্রিস্টানরা মনে করেন, তাঁরা সংখ্যায় যত কমই হোক না কেন, এটি এই ভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের এক অটল সাক্ষ্য। আত্তাল্লাহ তরাজি প্রার্থনা করেন যেন তাঁর জাতি শান্তি ও স্বাধীনতা পায়। তিনি বিশ্বাস করেন, এই পরিস্থিতির চেয়েও বড়দিনের আনন্দ এবং তাঁদের বিশ্বাস অনেক বেশি শক্তিশালী।

গত অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর গাজায় হামলার তীব্রতা কমলেও মাঝেমধ্যেই প্রাণঘাতী আঘাত আসছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইজরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু।

অতিবৃষ্টিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের তাবুগুলো তলিয়ে গেছে, যা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মস্কোতে বিস্ফোরণ, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত তিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪২
মস্কোর ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: বিবিসি
মস্কোর ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: বিবিসি

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক বিস্ফোরণে দুজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা এবং আরেকজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার তদন্ত সংস্থাগুলোর বরাতে জানা গেছে, দক্ষিণ মস্কোর ইয়েলেতস্কায়া স্ট্রিট এলাকায় এই বিস্ফোরণ ঘটে স্থানীয় সময় বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোরে। ঘটনাস্থলটি সেই জায়গার কাছে, যেখানে চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক রুশ জেনারেল গাড়িবোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বিবৃতির বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটকের চেষ্টা করার সময় বিস্ফোরণটি ঘটে। পুলিশ কর্মকর্তারা যখন ওই ব্যক্তির কাছে যান, তখনই একটি বিস্ফোরক ডিভাইস সক্রিয় হয়ে যায়। বিস্ফোরণের ফলে ঘটনাস্থলেই দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারান। এ সময় তাঁদের পাশে থাকা আরেকজন ব্যক্তিও বিস্ফোরণে নিহত হন।

নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বয়স ছিল ২৪ ও ২৫ বছর। আল জাজিরার মস্কো প্রতিনিধি ইউলিয়া শাপোভালোভার তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে একজনের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি তাদের পরিবারের জন্য এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি।’ বিস্ফোরণের প্রকৃত উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণের শব্দ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। কাছাকাছি বসবাসকারী আলেক্সান্ডার নামের এক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘একটা ভয়ংকর শব্দ হয়েছিল, কয়েক দিন আগের গাড়ি বিস্ফোরণের মতোই।’ আরেক বাসিন্দা রোজা জানান, বিস্ফোরণের সময় তাঁদের পুরো ভবনটি কেঁপে ওঠে এবং তিনি ঘুম থেকে জেগে ওঠেন।

বিস্ফোরণের পরপরই এলাকাটি ঘিরে ফেলে পুলিশ বাহিনী। রুশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তদন্তকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করেছে।

এই বিস্ফোরণ ঘটেছে সেই এলাকার কাছে, যেখানে গত সোমবার রুশ জেনারেল ফানিল সারভারভ গাড়ির নিচে পেতে রাখা বিস্ফোরক ডিভাইসের মাধ্যমে নিহত হন। সারভারভ রুশ জেনারেল স্টাফের অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের জন্য সেনাদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

রাশিয়া জেনারেল সারভারভ হত্যার পেছনে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তবে ইউক্রেন এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়া ও দখল করা ইউক্রেনীয় অঞ্চলে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনায় রুশ সামরিক কর্মকর্তা এবং এই যুদ্ধের সমর্থক বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শানলিউরফা: নবীদের যে নগরে মিলেছে তিন ধর্মের মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তুরস্কের শানলিউরফা শহর। ছবি: সিএনএন
তুরস্কের শানলিউরফা শহর। ছবি: সিএনএন

দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের শানলিউরফা শহরকে বলা হয় ‘নবীদের নগরী’। সিরিয়া সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ মাইল উত্তরে অবস্থিত এই শহরটি হাজার বছরের ইতিহাস, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির এক অনন্য সংযোগস্থল। এখানে ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম—এই তিন একেশ্বরবাদী ধর্মের কাহিনি এসে মিলেছে।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, শানলিউরফার পুরোনো শহরের দেরগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত নীলাভ পানির ‘বালিক্লিগোল’ বা ‘মাছের হ্রদ’। মূলত এখানে আছে দুটি পুকুর। ধর্মীয় মতে, দুটি পুকুরের বড়টিতে নবী ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করেছিলেন মেসোপটেমিয়ার রাজা নমরুদ। আল্লাহ তৎক্ষণাৎ ওই আগুনকে পানি এবং জ্বলন্ত কাঠকে মাছে রূপান্তরিত করেছিলেন। এ ছাড়া ‘আইনজেলিহা’ নামের ছোট পুকুরটির নামকরণ করা হয়েছে নমরুদের কন্যা জেলিহার নামে। ইব্রাহিম নবীর প্রতি বিশ্বাসের কারণে এই পুকুরে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জেলিহা প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে বিশ্বাস।

দুটি পুকুরই কালো দাগওয়ালা কার্প মাছে ভরা। এগুলোকে পবিত্র মনে করা হয়। তাই এই মাছগুলোকে ধরা বা এগুলোর ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই কারণেই বালিক্লিগোল শুধু একটি পর্যটনস্থল নয়, বরং গভীর ধর্মীয় আবেগ ও ইতিহাসের প্রতীক। মাছের গায়ে থাকা কালো দাগগুলোকে আগুনের ছাইয়ের চিহ্ন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

বালিক্লিগোলে ভেসে বেড়ায় কালো দাগওয়ালা কার্প মাছ। ছবি: সিএনএন
বালিক্লিগোলে ভেসে বেড়ায় কালো দাগওয়ালা কার্প মাছ। ছবি: সিএনএন

ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে শানলিউরফা নানা নামে পরিচিত ছিল। আরামীয়রা একে ডাকত উরহাই, গ্রিক শাসনামলে নাম ছিল এডেসা, আরব বিজয়ের পর নাম হয় রোহা। অটোমানেরা ১৬০৭ সালে এই নগরীর নাম রাখে উরফা। পরে ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিরোধের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্ত হয় ‘শানলি’, অর্থাৎ ‘গৌরবময়’।

এই শহরটি ইব্রাহিম (আ.), আইয়ুব (আ.), নূহ (আ.) ও জেথ্রোর মতো নবীদের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিশ্বাস করা হয়। পুরোনো শহরের দেরগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত বালিক্লিগোল মুসলিম তীর্থযাত্রীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। এখানেই রয়েছে মেভলিদ-ই-হালিল গুহা। বিশ্বাস করা হয়, এখানেই জন্ম হয়েছিল ইব্রাহিম নবীর। নারীরা সন্তান কামনায় ও আরোগ্য লাভের আশায় এই গুহায় আসেন।

তবে শানলিউরফার ইতিহাস শুধু ধর্মগ্রন্থেই সীমাবদ্ধ নয়। শহরটি থেকে ১৪ মাইল দূরেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। প্রায় ১১-১২ হাজার বছরের পুরোনো এই স্থাপনাটি মানবসভ্যতার ধারণাকেই বদলে দিয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৯৬০০ সালের এই নিওলিথিক স্থাপনাটি কৃষি ও মৃৎশিল্পের আগেই নির্মিত—যা প্রমাণ করে, ধর্মীয় আচার হয়তো সভ্যতার সূচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখানে পাওয়া টি-আকৃতির স্তম্ভ ও খোদাই করা পশুর ভাস্কর্য বিশ্বব্যাপী বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। ছবি: সিএনএন
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। ছবি: সিএনএন

শানলিউরফা প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে ১০ হাজারের বেশি নিদর্শন। এর মধ্যে ‘উরফা ম্যান’ নামের ১১ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো মানব মূর্তিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাশেই হালেপলিবাহচে মোজাইক জাদুঘর ও কিজিলকয়ুন নেক্রোপলিস শহরের রোমান যুগের ইতিহাস তুলে ধরে।

ইতিহাস ও ধর্মের পাশাপাশি শানলিউরফা খাবার ও আতিথেয়তার জন্যও বিখ্যাত। উরফা কাবাব, পাটলিজান কাবাব, চি কফতে ও শিল্লিক তাতলিসি এখানকার জনপ্রিয় খাবার। স্থানীয়দের সঙ্গে ধীরে চা পান, পুরোনো বাজারে হাঁটা আর ‘সিরা গেসেসি’ নামের সাংস্কৃতিক আড্ডায় অংশ নিলে বোঝা যায়—এই শহর শুধু দেখার নয়, অনুভব করারও।

শানলিউরফা নগরীতে ‘সিরা গেসেসি’ নামে রাতের আড্ডা। ছবি: সিএনএন
শানলিউরফা নগরীতে ‘সিরা গেসেসি’ নামে রাতের আড্ডা। ছবি: সিএনএন

বলা যায়—শানলিউরফা যেন এক জীবন্ত জাদুঘর; যেখানে ধর্ম, ইতিহাস ও মানবসভ্যতার গল্প একসূত্রে গেঁথে পাশাপাশি হাঁটে অতীত ও বর্তমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৭ অক্টোবরের দায় এড়াতে ফন্দি খোঁজার দায়িত্ব দিয়েছিলেন নেতানিয়াহু: সাবেক মুখপাত্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এপির সৌজন্যে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এপির সৌজন্যে

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পরপরই প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেই ঘটনার দায় এড়ানোর উপায় খুঁজতে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখপাত্র ইলাই ফেল্ডস্টাইন গত সোমবার রাতে ইসরায়েলের ‘কান’ নিউজ চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিস্ফোরক দাবি করেছেন।

গোপন নথি ফাঁসের দায়ে বর্তমানে বিচারের মুখোমুখি হওয়া ফেল্ডস্টাইন এই প্রথম সরাসরি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনলেন।

ইলাই ফেল্ডস্টাইন জানান, ৭ অক্টোবরের সেই রক্তক্ষয়ী হামলার ঠিক পরেই নেতানিয়াহু তাঁকে ‘প্রথম কাজ’ হিসেবে দিয়েছিলেন—কীভাবে জবাবদিহি বা দায়বদ্ধতার প্রশ্ন থেকে রেহাই পাওয়া যায় তার উপায় বের করা। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘হামলার পর নেতানিয়াহু আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘এখন কী ধরনের সংবাদ প্রচার হচ্ছে? তারা কি এখনো দায়বদ্ধতার কথা বলছে?’’ তাঁকে তখন বেশ আতঙ্কিত দেখাচ্ছিল। নেতানিয়াহু চেয়েছিলেন এমন কিছু বলা হোক, যাতে গণমাধ্যমে তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে যে ঝড় উঠেছে, তা স্তিমিত হয়ে যায়।’

ফেল্ডস্টাইন আরও দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যেন যেকোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ‘দায়বদ্ধতা’ (Responsibility) শব্দটি ব্যবহার না করা হয়।

তবে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এই সাক্ষাৎকারকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। হিব্রু সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে এবং নিজের অপরাধ থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে এক ব্যক্তি এমন ডাহা মিথ্যা অভিযোগ করছেন।

কে এই ইলাই ফেল্ডস্টাইন

ইলাই ফেল্ডস্টাইন নেতানিয়াহুর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তবে বর্তমানে তিনি দুটি বড় কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। গোপন নথি ফাঁস—গত আগস্টে গাজায় ছয় জিম্মি নিহতের পর প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে একটি জার্মান সংবাদমাধ্যমে সামরিক গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগে তাঁর বিচার চলছে। কাতারগেট স্ক্যান্ডাল—নেতানিয়াহুর হয়ে কাজ করার সময় কাতারের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মধ্যে তিনি একজন।

উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবরের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জন অপহৃত হয়। এর জবাবে ইসরায়েলের টানা দুই বছরের যুদ্ধে গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হয়। অনেকে মনে করেন, এই ব্যর্থতার দায় ঠেকানোর জন্য নেতানিয়াহু বরাবরই স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনে বাধা দিয়ে আসছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত