Ajker Patrika

দালাই লামা কে, তিনি ভারতে নির্বাসিত কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৫, ২৩: ৩২
তিব্বতিদের আধ্যাত্মিক গুরু দালাই লামা। ছবি: এএফপি
তিব্বতিদের আধ্যাত্মিক গুরু দালাই লামা। ছবি: এএফপি

সাল ১৯৫৯। চীনা সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে ব্যর্থ তিব্বতিদের বিদ্রোহ। সে সময় রাতের অন্ধকারে তিব্বত ছেড়ে যান এক ভিক্ষু। তিনি আর কেউই নন, মালভূমিটির ১৪তম দালাই লামা তেনজিন গিয়াৎসো। বিশের কোঠার মাঝামাঝিতে তখন তাঁর বয়স।

তিব্বতের ওপর চীনের এই আগ্রাসন দেখে চুপ ছিল বিশ্ব। তিব্বতিদের সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিকতা আর ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব এসে পড়ে এই তরুণের কাঁধে। সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, কিন্তু তাঁর ভেতরে ছিল অদম্য দৃঢ়তা।

এরপর কেটে গেছে কয়েক দশক। ভারতে নির্বাসনে থেকেও দালাই লামার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে তিব্বতের গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বে। তিনি কেবল তিব্বতিদের আধ্যাত্মিক গুরুই নন, বরং মাতৃভূমি ফিরে পেতে চাওয়া এক জাতির আশা-ভরসার প্রতীক।

অহিংসার পক্ষে অটল অবস্থান নেওয়ায় ১৯৮৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন দালাই লামা। তাঁর দাবি স্পষ্ট, তিব্বতের পূর্ণ স্বাধীনতা নয়, বরং স্বশাসন ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার অধিকার।

কিন্তু বেইজিং বরাবরই তাঁকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে দেখে এসেছে। চীন-তিব্বত সম্পর্কের বহু দশকের জটিলতার কেন্দ্রে থেকেও দালাই লামা কখনো তাঁর শান্তিপূর্ণ পথচলা থেকে বিচ্যুত হননি।

এ বছরের জুনে ৯০ বছরে পা রেখে তিনি ঘোষণা দেন, তাঁর মৃত্যুর পর উত্তরসূরি অবশ্যই আসবেন। ছয় শতাব্দী পুরোনো এই বৌদ্ধপ্রতিষ্ঠান যেন থেমে না যায়, সে আশ্বাসেই যেন নতুন করে প্রাণ পান তাঁর অনুসারীরা।

জীবনের শেষ অধ্যায়ে দাঁড়িয়েও তিনি ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন তাঁর উত্তরাধিকার, তাঁর জাতি এবং এক শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর স্বপ্ন নিয়ে।

শৈশব ও নির্বাসনের শুরু

দালাই লামা ১৯৩৫ সালের ৬ জুলাই তিব্বতের বর্তমান সীমানার ঠিক বাইরে একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

কৃষক বাবা-মা তাঁদের এই নবজাতক ছেলের নাম দেন ‘লহামো ধোন্দুব’।

মাত্র দুই বছর বয়সে একদল বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও অনুসন্ধানী কর্মকর্তা তাঁকে পূর্ববর্তী ১৩ জন দালাই লামার পুনর্জন্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং বয়স চার বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তাঁকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করা হয়। তখনোই তাঁর নাম দেওয়া হয় ‘তেনজিন গিয়াৎসো’।

দালাই লামার শিক্ষা শুরু হয় এক বৌদ্ধ মঠে। সেখানেই কঠোর সাধনা ও অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে তিনি অর্জন করেন গেশে লহারাম্পা ডিগ্রি—বৌদ্ধ দর্শনে সর্বোচ্চ সম্মানজনক ডক্টরেট ডিগ্রি।

১৯৫০ সালে তাঁর বয়স যখন ১৫, চীনের নবগঠিত কমিউনিস্ট সরকার তাদের সেনাবাহিনী নিয়ে প্রবেশ করে তিব্বতে। এরপর ১৯৫১ সালে চীন একতরফাভাবে তৈরি করে ১৭ দফা চুক্তি; যা তিব্বতকে চীনের অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা দেয়।

১৯৫৯ সালের ১০ মার্চ এক চীনা জেনারেল দালাই লামাকে আমন্ত্রণ জানান একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। কিন্তু তিব্বতের জনতার মনে গভীর শঙ্কা—একি কোনো চক্রান্ত? অপহরণ বা হত্যার আশঙ্কায় হাজারো মানুষ ভিড় করেন তাঁর প্রাসাদের সামনে।

সেই জনসমাবেশ রূপ নেয় বিক্ষোভে। চীনা সেনাবাহিনী নেমে আসে দমন-পীড়নে। প্রচণ্ড সহিংসতায় প্রাণ হারান বহু তিব্বতি। ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক অধ্যায়ে রচিত হয় নির্বাসনের সূচনা।

দালাই লামা রাতে ছদ্মবেশে তিব্বত ছেড়ে যান। এক সৈনিকের পোশাকে ভিড়ে মিশে যান তিনি। তাঁর কথায়, এই সিদ্ধান্ত আসে তাঁর ব্যক্তিগত দেবদূতের দিব্য বার্তা থেকে।

১৫ দিন ধরে কঠিন হিমালয় পেরিয়ে অবশেষে তিনি পৌঁছান ভারতের সীমান্তে। ভারত সরকার তাঁকে আশ্রয় দেয়। তাঁর নতুন ঠিকানা হয় উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ অঙ্গরাজ্যের ধরমশালা শহরে; যা পরিণত হয় তিব্বতের নির্বাসিত সরকারের ঘাঁটিতে।

দালাই লামার সঙ্গে প্রায় ৮০ হাজার তিব্বতি পাড়ি জমান নির্বাসনে। তাঁদের অনেকে আশ্রয় নেন ধরমশালাতেই—যেখানে গড়ে ওঠে এক নতুন তিব্বত।

ভারতের হিমাচল প্রদেশের ধরমশালা শহর তিব্বতের নির্বাসিত সরকারের ঘাঁটি হয়। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের হিমাচল প্রদেশের ধরমশালা শহর তিব্বতের নির্বাসিত সরকারের ঘাঁটি হয়। ছবি: সংগৃহীত

শান্তিতে-বিতর্কে দালাই লামা

নির্বাসনে এসেই তিব্বতের প্রাচীন সংস্কৃতি ও পরিচয় রক্ষার পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে তিব্বতবাসীর দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন দালাই লামা।

তিনি জাতিসংঘের দ্বারস্থ হন, বারবার আহ্বান জানান তিব্বতবাসীর সুরক্ষার জন্য। তাঁর প্রচেষ্টাতেই ১৯৫৯, ১৯৬১ ও ১৯৬৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় একাধিক প্রস্তাব; যেখানে তিব্বতিদের মানবাধিকার রক্ষার দাবি জানানো হয়।

তবে তাঁর অবস্থান সব সময় ছিল মধ্যপন্থার দিকে—স্বাধীনতা নয়, বরং চীনের আওতায় থেকেই তিব্বতের জন্য প্রকৃত স্বশাসনের দাবি। এটি ছিল এক বাস্তববাদী ও অহিংস পথ, যা তিনি নিরলসভাবে অনুসরণ করে গেছেন।

১৯৮৭ সালে তিব্বতে হান চীনাদের বড় আকারের স্থানান্তরের বিরুদ্ধে লাসা শহরে প্রতিবাদের মধ্যে দালাই লামা পাঁচ দফা পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন, যেখানে তিনি তিব্বতকে একটি শান্তিময় অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।

দমন-পীড়ন, নির্বাসন ও অপমান সত্ত্বেও দালাই লামা কখনো সরে আসেননি অহিংস পন্থায় প্রতিরোধ থেকে। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৯ সালে তাঁকে দেওয়া হয় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার।

নোবেল কমিটির ভাষায়, ‘যে জাতি বছরের পর বছর ধরে দুঃসহ নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের নেতা হয়ে তিনি যে শান্তিপূর্ণ পথে থেকেছেন, তা এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত।’

বৈশ্বিক নানা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দালাই লামা। ক্যাথলিক খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সাবেক সর্বোচ্চ যাজক (পোপ) প্রয়াত দ্বিতীয় জন পলের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার ডেসমন্ড টুটুর সঙ্গে যৌথভাবে লেখেন একটি বই। তাঁর যাত্রাপথে পাশে পান হলিউডের রিচার্ড গিয়ার, মার্টিন স্করসেজি বা লেডি গাগার মতো সমর্থকদের।

তবে এই শান্তিপন্থী অবস্থান, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাঁকে খ্যাতি এনে দিয়েছে, তা কখনো কখনো হয়ে ওঠে তিব্বতের কিছু অংশের মানুষের হতাশার কারণ। তাঁরা মনে করেন, চীনের বিরুদ্ধে খুবই নরম ছিলেন দালাই লামা।

২০০৮ সালে চীনা শাসনের বিরুদ্ধে লাসায় সহিংস দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাবে, এতে বহু তিব্বতি প্রাণ হারান।

শান্তির দূত হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেলেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি দালাই লামার।

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি ঘটে ২০২৩ সালে, যখন এক ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি এক শিশুকে ‘জিব চুষতে’ বলছেন।

এ ঘটনার পর দালাই লামার দপ্তর জানায়, তিনি প্রায়ই খেলাচ্ছলে এমন আচরণ করেন। যদিও পরে তিনি ক্ষমা চান।

২০১৯ সালেও তিনি বিতর্কে জড়ান, যখন বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভবিষ্যতের কোনো নারী দালাই লামা হলে তাঁকে ‘আকর্ষণীয়’ হতে হবে। সেই মন্তব্যের পরও দুঃখ প্রকাশ করে তাঁর দপ্তর।

বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দালাই লামা। ছবি: এএফপি
বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দালাই লামা। ছবি: এএফপি

উত্তরাধিকার প্রশ্ন

তিব্বতের ইতিহাসে দালাই লামা শুধু আধ্যাত্মিক নেতা নন, রাজনীতিরও সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব। কিন্তু ২০১১ সালের মার্চ মাসে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে দালাই লামা তাঁর রাজনৈতিক দায়িত্ব হস্তান্তর করেন নির্বাসিত তিব্বত সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে।

তাঁর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে একটি প্রশ্ন ক্রমশ তীব্র হয়ে ওঠে—এই দীর্ঘ পথচলার পর কে হবেন উত্তরসূরি।

দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়, যখন দালাই লামা ইঙ্গিত দেন, তাঁর কোনো পুনর্জন্মপ্রাপ্ত উত্তরসূরি না-ও থাকতে পারে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত তিব্বতের মানুষের হাতেই থাকবে।

তবে এ বছর ৯০ বছরে পা রেখে তিনি বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দেন।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘অনেক অনুরোধ ও মতামত বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দালাই লামার প্রতিষ্ঠান চলমান থাকবে।’ এই ঘোষণায় যেন নতুন আশার আলো দেখেন তাঁর অনুসারীরা।

বিশ্লেষকদের মতে, দালাই লামার এ বক্তব্য কেবল অনুসারীদের জন্যই নয়, বরং বেইজিংয়ের উদ্দেশেও এক কড়া বার্তা—তাঁর নেতৃত্ব জনগণের সম্মতির ওপর প্রতিষ্ঠিত; শক্তি ও দখলের ওপর নয়।

দালাই লামা বলেছেন, ভবিষ্যৎ দালাই লামার পুনর্জন্ম চিহ্নিত করার অধিকার একমাত্র তাঁর দপ্তরের।

‘এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অন্য কারও নেই’—এই ঘোষণা কার্যত চীনের দাবির প্রতি এক দৃঢ় প্রত্যাখ্যান।

চীন দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, দালাই লামার উত্তরসূরি নির্ধারণের চূড়ান্ত ক্ষমতা তাদেরই।

চীন ওই ঘোষণা শুনে জানায়, ভবিষ্যৎ দালাই লামার অনুমোদন দেওয়ার অধিকার কেবল বেইজিংয়ের।

এদিকে দালাই লামা আগেই বলে রেখেছেন, তাঁর উত্তরসূরি জন্ম নেবেন ‘এক মুক্ত দেশে’, চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের বাইরে।

তবে সেই ব্যক্তি কে হবেন, তা এখনো রহস্যই থেকে গেছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুবই সাধারণ খাবার খান পুতিন, দেশে-বিদেশে খাদ্যতালিকায় যা থাকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে যখন ভ্লাদিমির পুতিনের ৪-৫ ডিসেম্বরের রাষ্ট্রীয় সফর ও ২৩ তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তখন কূটনৈতিক আলোচনার বাইরেও একটি বিষয় নজর কেড়েছে—রুশ প্রেসিডেন্টের খাবার সংক্রান্ত অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্য বিশ্বনেতাদের মতো তিনিও আনুষ্ঠানিক ভোজসভায় অংশ নেন, তবে তাঁর খাবার সবচেয়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

পুতিন হোটেল বা আয়োজক দেশের কর্মীদের তৈরি খাবার গ্রহণ করেন না। তাঁর খাবারের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করা হয়।

বিদেশ সফরে পুতিনের খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রায় সামরিক নির্ভুলতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কঠোরতার মূল কারণ হলো নিরাপত্তা—বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্য বিষক্রিয়া বা গুপ্তহত্যার চেষ্টা এড়াতে এই ব্যবস্থা অপরিহার্য। পুতিনের জন্য খাবার পরিবেশনের আগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়:

বিশেষ শেফ ও লজিস্টিকস: প্রশিক্ষিত রুশ শেফ, পুষ্টিবিদ এবং সহযোগী কর্মীরা তাঁর সঙ্গে ফ্লাইটে আসেন। তাঁরাই বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত রান্নাঘরে পুতিনের খাবার তৈরি করেন।

মোবাইল পরীক্ষাগার: তিনি ভ্রমণের সময় একটি অত্যাধুনিক মোবাইল খাদ্য পরীক্ষাগারও সঙ্গে রাখেন। এই ল্যাব পরিবেশনের আগে প্রতিটি খাদ্য এবং পানীয়ের উপাদান দ্রুত পরীক্ষা করে সম্ভাব্য বিষ বা ক্ষতিকারক বস্তুর উপস্থিতি যাচাই করে।

নিয়ন্ত্রিত উপাদান: খাবারের উপাদান হয় সরাসরি রাশিয়া থেকে আনা হয়, নতুবা আয়োজক দেশে দীর্ঘ পরীক্ষার মাধ্যমে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। শুধু অনুমোদিত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা উপাদানই তাঁর রান্নাঘরে প্রবেশাধিকার পায়।

বিশেষ পরিবেশন: আনুষ্ঠানিক ভোজসভার ক্ষেত্রেও এই সতর্কতা বজায় থাকে। যদিও তিনি উপস্থিত থাকেন, কিন্তু সাধারণত তাঁর প্লেটে পরিবেশিত খাবারটি নিজস্ব শেফদের দ্বারা পৃথকভাবে প্রস্তুতকৃত হয়। খাদ্য পরিবেশনের আগে প্রশিক্ষিত পরীক্ষকদের দ্বারা চূড়ান্ত যাচাই করা হয়। এই প্রক্রিয়া মস্কো এবং বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা হয়।

পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস

খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে এত কড়াকড়ি থাকলেও, পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা কিন্তু বেশ সাধারণ। তাঁর জীবনযাপনও সুশৃঙ্খল। তিনি জমকালো ভোজের পরিবর্তে পুষ্টিকর ও সহজলভ্য খাবার পছন্দ করেন।

সকালের নাশতা: তাঁর সকাল শুরু হয় উচ্চ-প্রোটিন এবং কম-চিনিযুক্ত খাবার দিয়ে। সাধারণত মধুসহ ভরোগ (Tvorog, রুশ কটেজ চিজ) অথবা পরিজ (স্টার্চ ও পানি বা দুধ সহযোগে তৈরি) প্রধান খাদ্য। এ ছাড়া তিনি তাজা ফলের রস এবং মাঝে মাঝে কাঁচা কোয়েলের ডিম বা অমলেট গ্রহণ করেন। তাঁর খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত মিষ্টি বা চর্বিযুক্ত খাবারের স্থান নেই।

দুপুরের ও রাতের খাবার: পুতিন লাল মাংসের চেয়ে মাছ বেশি পছন্দ করেন, বিশেষত গ্রিলড বা স্মোকড মাছের পদ। ভেড়ার মাংসও তাঁর প্রিয়। তবে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত রান্না তিনি এড়িয়ে চলেন। তাঁর বেশির ভাগ খাবারেই টমেটো, শসা এবং অন্যান্য সাধারণ সবজির সালাদ বাধ্যতামূলক। এই সবজিগুলো ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান দেয়।

পানীয় ও ডেজার্ট: পুতিন মিষ্টি বেক করা সামগ্রী, কেক বা বাটারি পেস্ট্রি একদম পছন্দ করেন না। পানীয়ের ক্ষেত্রে তাজা জুস, সাধারণ ভেষজ পানীয় এবং কেফির (এক প্রকার ফার্মেন্টেড দুগ্ধজাত পানীয়) পান করেন। তবে তাঁর সুশৃঙ্খল রুটিনের মাঝেও একটি ছোট দুর্বলতা রয়েছে—তা হলো পেস্তা আইসক্রিম!

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুতিনের এই খাদ্যাভ্যাস তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ: সংযত, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ঐতিহ্যমুখী। পুষ্টি, প্রোটিন এবং সহজলভ্যতা ওপর তাঁর এই জোর, তাঁর দীর্ঘ ও অনিয়মিত কর্মঘণ্টার জন্য প্রয়োজনীয় স্থিতিশীল ক্যালরির জোগান নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বলল স্টেট ডিপার্টমেন্ট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বলল স্টেট ডিপার্টমেন্ট

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বা স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভেনেজুয়েলায় ভ্রমণ নিয়ে নতুন করে কঠোর সতর্কতা জারি করেছে। দেশটিতে থাকা সব মার্কিন নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের অবিলম্বে দেশটি ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। নিরাপত্তা হুমকি দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই নির্দেশনা দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় ভুলভাবে আটক হওয়া, আটক অবস্থায় নির্যাতন, সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ, স্থানীয় আইনের স্বেচ্ছাচারী প্রয়োগ, অপরাধ, নাগরিক অস্থিরতা এবং দুর্বল স্বাস্থ্যসেবার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তাই দেশটিতে ভ্রমণ না করতে এবং সেখানে অবস্থান না করতে মার্কিন নাগরিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

ঘোষণায় আরও বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় থাকা সব মার্কিন নাগরিক ও আইনগত স্থায়ী বাসিন্দাদের অবিলম্বে দেশ ছাড়তে জোরালো পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই সতর্কবার্তা এল এমন এক সময়, যার কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রাণঘাতী হামলায় অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে একটি নৌকা লক্ষ্য করে মার্কিন বাহিনী হামলা চালায়। এতে চারজন নিহত হয়েছেন বলে ইউএস সাউদার্ন কমান্ড এক বিবৃতিতে জানায়।

সামরিক কর্মকর্তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী এই নৌযানটি একটি ‘সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত সংগঠনের’ সঙ্গে যুক্ত। গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, নৌকাটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর পথে অবৈধ মাদক পরিবহন করছিল। এক্সে দেওয়া পোস্টে সাউদার্ন কমান্ড জানায়, নৌকায় থাকা চার পুরুষ ‘মাদকসন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বহু ইঞ্জিনবিশিষ্ট দ্রুতগতির নৌকাটি আচমকা একটি প্রবল বিস্ফোরণে আঘাত পেয়ে আগুনে ঘিরে যায়।

ঘটনাটি অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তৃত মাদকবিরোধী সামরিক অভিযানের অংশ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই অভিযান নিয়ে সমালোচনা বেড়েছে, কারণ এতে নিহতের সংখ্যা এখন ৮৫–এর বেশি ছাড়িয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তে থাকা সামরিক উত্তেজনার জেরে একযোগে ছয়টি বড় আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনের অবতরণ ও উড্ডয়নের অনুমতি বাতিল করেছে ভেনেজুয়েলা। এর আগে মার্কিন সতর্কবার্তার প্রেক্ষিতে ভেনেজুয়েলার কারাকাসগামী ফ্লাইটগুলো স্থগিত করেছিল এই এয়ারলাইনগুলো। পরে ভেনেজুয়েলা তাদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় ২৭ নভেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ হওয়া এয়ারলাইনগুলো হলো—আইবেরিয়া, টিএপি পর্তুগাল, গোল, লাতাম, অ্যাভিয়াঙ্কা এবং টার্কিশ এয়ারলাইনস। ভেনেজুয়েলার এই সিদ্ধান্তে হাজারো যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। তবে কিছু ছোট ছোট এয়ারলাইন এখনো দেশটিতে যাতায়াত করছে।

সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ঘিরে এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপকূলীয় এলাকায় ১৫ হাজার সেনা এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড মোতায়েন করেছে। ওয়াশিংটন বলছে, এই অভিযান মাদকবিরোধী তৎপরতার অংশ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকবিরোধী অভিযানে এত বড় সামরিক উপস্থিতি সাধারণত দেখা যায় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরও ক্ষমতাধর আসিম মুনির, হলেন পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে দেশের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সত্তরের দশকের পর দেশটির সামরিক কমান্ডে এটি হলো সবচেয়ে বড়ো ও ব্যাপক পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এই নিয়োগে অনুমোদন দেন। খবর দ্য ডনের।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে পাঁচ বছরের জন্য সেনাপ্রধানের (সিওএএস) সঙ্গে সমান্তরালভাবে সিডিএফ হিসাবেও নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন।’ এই বিবৃতি বহুদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাল। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজই প্রেসিডেন্টকে এই নতুন দ্বৈত-দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে সেনাবাহিনী প্রধান এবং চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসাবে নিয়োগের সারসংক্ষেপ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।’

এই নতুন ব্যবস্থা পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীতে ২৪৩ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে, একটি মাত্র অফিসের অধীনে সশস্ত্রবাহিনীর অপারেশনাল, প্রশাসনিক ও কৌশলগত ক্ষমতাকে একত্র করা হয়েছে। সংশোধিত ২৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করবেন, যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসাবেও কাজ করবেন।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৬ সাল থেকে চালু থাকা তিনবাহিনী সমন্বয় ব্যবস্থা—চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) অফিস বিলুপ্ত করা হয়। এর ফলে যৌথ কমান্ডের ইন্টিগ্রেশন সিডিএফ-এর হাতে চলে এল।

সাংবিধানিক এই আমূল পরিবর্তনকে সামরিক বাহিনীর আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য সরকার ২৭ তম সংশোধনীর পরপরই ১৯৫২ সালের পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টেও (পিএএ) সংশোধন আনে। পিএএ-এর ৮এ অনুচ্ছেদের উপ-ধারা (১) এখন জানাচ্ছে যে, ‘প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী প্রধান যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হবেন […], তাঁর মেয়াদ এই ধারার অধীনে ওই পদের বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে শুরু হবে।’

আরও বলা হয়েছে, এই প্রথম সিওএএসসহ-সিডিএফ-এর বিজ্ঞপ্তি জারি হলে ‘বর্তমান সেনাপ্রধানের বিদ্যমান মেয়াদ ওই বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে বলে গণ্য হবে।’ ৮এ অনুচ্ছেদের উপ-ধারা (৩) অনুযায়ী, সিওএএস যিনি একই সঙ্গে সিডিএফ-এরও দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর ‘শর্তাবলি ও নিয়ম’ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট স্থির করবেন।

ফিল্ড মার্শাল মুনির ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর ১৭ তম সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সরকার পিএএ-তে পরিবর্তন আনে, যেখানে সিজেসিএসসি-এর মেয়াদ তিন বছর অপরিবর্তিত রেখে বাকি তিন বাহিনীর প্রধানদের মেয়াদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়। একই সংশোধনীতে সার্ভিস চিফদের পুনঃ নিয়োগ বা তাঁদের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়, যা আগে সর্বোচ্চ তিন বছর ছিল।

ফলস্বরূপ, ২৭ তম সংশোধনীর অধীনে এই পুনর্গঠনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে, পিএএ-এর সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলি প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সিওএএসসহ-সিডিএফ-কে আরও পাঁচ বছরের জন্য পুনঃ নিয়োগ বা তাঁর মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ দিচ্ছে। এর ফলে তিনি ২০৩৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্তও পদে থাকতে পারেন।

এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা ব্যাপক জল্পনা বাড়িয়েছিল। বিশেষ করে, যখন ২৭ নভেম্বর জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা অবসর নেওয়ার পর সিজেসিএসসি পদটি বিলুপ্ত হয়। ফিল্ড মার্শাল মুনির-এর আসল তিন বছরের সেনাপ্রধানের মেয়াদ (গত বছরের সংশোধনীর আগে) ২৯ নভেম্বরে শেষ হয়, কিন্তু সেদিনও কোনো বিজ্ঞপ্তি না আসায় আরও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। অনেকে মনে করেন, সরকার হয়তো আসন্ন চার-তারকা পদের নিয়োগ নিয়ে দর-কষাকষির জন্য এই নিয়োগ আটকে রেখেছিল।

রাজনৈতিক মহল থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের নতুন কমান্ডার (সিএনএসসি), ভাইস চিফ অব দ্য আর্মি স্টাফ (ভিসিওএএস) এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আইএসআই প্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে দরদাম করতেই এই দেরি। সেনাবাহিনী আগেই স্পষ্ট করেছিল যে, কোনো ভিসিওএএস নিয়োগ করা হচ্ছে না। তবে সংশোধিত আইন অনুযায়ী, সিএনএসসি এবং যেকোনো ভিসিওএএস-এর নিয়োগ সিডিএফ-এর সুপারিশের সঙ্গে যুক্ত।

সরকারি কর্মকর্তারা বারবার সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো উত্তেজনার কথা অস্বীকার করেছেন, জানিয়েছেন যে প্রক্রিয়াগত প্রয়োজনীয়তা ও প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সূচি সময়রেখা নির্ধারণ করেছে। তবুও, ২৭ তম সংশোধনী যেভাবে তাড়াহুড়ো করে সংসদে পাশ করানো হয়েছিল, তার পরে এমন নীরবতাকে অনেকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেছেন। এই সংশোধনী কেন্দ্রীয় সরকারকে সিডিএফ-এর কার্যাবলি নির্ধারণের ক্ষমতাও দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বহু-ডোমেন ইন্টিগ্রেশন, পুনর্গঠন এবং সার্ভিসগুলোর মধ্যে যৌথতা বাড়ানো।

এদিকে, আইনসচিব আজম নাজির তারার জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সিডিএফ-এর জন্য একটি নতুন অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত করছে এবং এর খসড়া একদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সিডিএফ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কোনো মতপার্থক্যের ধারণা তিনি নাকচ করে দেন, জোর দিয়ে বলেন যে প্রধানমন্ত্রীর দেশের বাইরে থাকার কারণেই এই বিলম্ব। কর্মকর্তারা বলছেন, এই অর্গানোগ্রামেই সিডিএফ, সার্ভিস চিফ ও নতুন প্রতিষ্ঠিত কৌশলগত কমান্ডের মধ্যে কমান্ডের প্রবাহ কেমন হবে, তা উল্লেখ করা থাকবে।

সিডিএফ-এর নিয়োগ অনুমোদনের পাশাপাশি, প্রেসিডেন্ট জারদারি বিমানবাহিনীর নেতৃত্বের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শও অনুমোদন করেছেন। প্রেসিডেন্ট ভবন জানিয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমদ বাবর সিধুর জন্য ২০২৬ সালের ১৯ মার্চ থেকে দুই বছরের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছেন।’

এই মেয়াদ বৃদ্ধিটি আগামী বছরের মার্চে তাঁর বর্তমান পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কার্যকর হবে, যা তাঁকে ২০২৮ সালের মার্চ পর্যন্ত পদে বহাল রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জ্বালানি কিনতে পারলে, ভারত কেন পারবে না—প্রশ্ন পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৮
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে এসেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমানবন্দরে তাঁকে আলিঙ্গন করে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর পরই পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র যদি রাশিয়া থেকে জ্বালানি কিনতে পারে, তবে ভারত কেন তা পারবে না।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে অবতরণের কয়েক ঘণ্টা পর পুতিন ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেতে এই মন্তব্য মন্তব্য করেন। এই সফরের সময় উভয় দেশ পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতকে রাশিয়াকে এড়িয়ে চলতে চাপ দিচ্ছে, ঠিক তখন চার বছরে পুতিনের এই প্রথম ভারত সফরের লক্ষ্য হলো রাশিয়ার তেল, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং যুদ্ধবিমানের বিক্রি বাড়ানো, এবং জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বাইরেও ব্যবসায়িক সম্পর্ক প্রসারিত করা।

নয়াদিল্লি এবং মস্কোর মধ্যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় থেকে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে এবং বহু দশক ধরে রাশিয়া ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহের উৎস। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কো ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারত সমুদ্রপথে আসা রাশিয়ার তেলের শীর্ষ ক্রেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যখন বলছে যে ভারতের সস্তায় রুশ তেল কেনা মস্কোর ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়নে সাহায্য করছে, তখন ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তিমূলক শুল্ক এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কঠোর হওয়ার ফলে এই মাসে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হতে চলেছে।

পুতিন ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখনো তার নিজস্ব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য আমাদের কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানি কেনে। সেটিও তো জ্বালানি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের জ্বালানি কেনার অধিকার থাকে, তবে ভারতের কেন একই সুযোগ থাকবে না? এই প্রশ্নটির পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা প্রয়োজন, এবং আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।’

ভারত বলেছে যে ট্রাম্পের শুল্ক অন্যায্য এবং অযৌক্তিক এবং মস্কোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্যের দিকে ইঙ্গিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে শুরু করে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পর্যন্ত কোটি কোটি ডলারের রাশিয়ান জ্বালানি ও পণ্য আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

পশ্চিমাদের চাপের কারণে ভারতীয় তেলের ক্রয় কমেছে কি না জানতে চাইলে পুতিন বলেন, ‘এই বছরের প্রথম ৯ মাসে সামগ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণে কিছুটা হ্রাস দেখা গেছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘এটা কেবল একটি সামান্য সমন্বয়। সামগ্রিকভাবে, আমাদের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় আগের মতোই আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং অপরিশোধিত তেল... রাশিয়ার তেলের বাণিজ্য ভারতে মসৃণভাবে চলছে।’

ভারত ও রাশিয়ার ট্রাম্প এবং তাঁর শুল্কের সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা উচিত জানতে চাইলে পুতিন বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন কিছু উপদেষ্টা আছেন, যাঁরা বিশ্বাস করেন যে এই ধরনের শুল্কনীতি বাস্তবায়ন চূড়ান্তভাবে মার্কিন অর্থনীতির জন্য উপকারী। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি যে শেষ পর্যন্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সকল নিয়ম লঙ্ঘন সংশোধন করা হবে।’

এর কয়েক ঘণ্টা আগে নরেন্দ্র মোদি দিল্লিতে বিমানবন্দরে পুতিনকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরের রানওয়েতে লালগালিচার ওপর তাঁরা একে অপরকে আলিঙ্গন করেন এবং তারপর প্রধানমন্ত্রী মোদি আয়োজিত একটি ব্যক্তিগত নৈশভোজের জন্য একই গাড়িতে চলে যান।

পুতিনের এই সফরে রাশিয়ার ঊর্ধ্বতন মন্ত্রী এবং একটি বড় রাশিয়ান ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল নয়াদিল্লিতে উপস্থিত ছিল। শুক্রবার দুই নেতা শীর্ষ বৈঠক করবেন, যেখানে একাধিক চুক্তি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত