
ঢাকা: ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। আগামীকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। তবে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলছেন, ভারতের নির্বাচনে যা হচ্ছে, তা শুধু একটি অঞ্চলের অতীত পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এর অনেকটাই নির্ভর করে সাংগঠনিক সুবিধাদির ওপর। আজ শুক্রবার ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সুনেত্রা চৌধুরীর নেওয়া এ সাক্ষাৎকারের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হলো।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কতটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
অমর্ত্য সেন: আমি এখন যেখানে (হার্ভার্ড) থাকি, তার থেকে কলকাতার সময়ের বিস্তর ফারাক। তাই যতটা সম্ভব, এই নির্বাচনগুলোর দিকে নজর রাখছি।
এ নির্বাচনে বাংলার আত্মা নিয়ে লড়াই হচ্ছে। প্রতিটি দল নিজেদের বাংলার প্রকৃত প্রতিনিধি বলে দাবি করছে। এই নির্বাচনী লড়াইকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ, এক ভীষণ লড়াই চলছে। কেন্দ্র সরকার যখন কোনো একটি রাজ্যের নির্বাচনের ওপর এত অস্বাভাবিক মাত্রার গুরুত্বারোপ করে, তখন এ নিয়ে ব্যাপক মাত্রার আগ্রহ তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর জন্য বাড়তি উপলক্ষের আর প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে, এও অস্বাভাবিক নয় যে, স্থানীয় বাঙালিরা এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। এই দুটি বিষয় একসঙ্গে একে যুদ্ধের রূপ দিয়েছে, যা বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
বাংলার নির্বাচনে সহিংসতা ঘটে কেন? নির্বাচন কমিশনও (ইসি) আট ধাপেই সহিংসতা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
অমর্ত্য সেন: বাংলা বেশি সহিংস—এমন কিছু এর পেছনে নেই বলেই মনে হয়। আমার মনে হয়, ইসি বিভাজন টানতে চাইছে। নির্বাচনের ঘটনাগুলোর দিকে যদি তাকান, তবে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী নিজের দায়িত্ব খুব অল্পই পালন করছেন এবং নির্বাচনের কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এর মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার সুস্পষ্টভাবে সব ধরনের কাজে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করছে, যা এক বা দুদিনে নির্বাচন হলে সম্ভব হতো না। এখন ইসি এই কারণেই এভাবে (নির্বাচন) করছে কিনা, তা আমি জানি না। আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা, তাতে বাংলার বহু মানুষ নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করছেন। এমনকি (চতুর্থ ধাপে ভোট গ্রহণের সময়) গোলাগুলিতেও চার বাঙালি নিহত হলো, যাদের সবাই মুসলমান। আমি সে গল্পের ভেতরে যাচ্ছি না। কিন্তু একে শুধু বাংলার শান্তির ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না বা এর অনুপস্থিতি হিসেবেও নয়, যা আট ধাপের নির্বাচনে বাংলায় ঝুঁকি তৈরি করেছে। বরং প্রায় একই বিস্তৃতির অঞ্চলে এক বা দুদিনের মধ্যে এটি (গোলাগুলি) ঘটেছে। এর সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, যা আমাদের আলোচনা করা দরকার।
আমি জানি না, বাংলায় নির্বাচনের সময় এর চেয়ে বেশি রক্ত ঝরার ঐতিহ্য রয়েছে কিনা। যদি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়ের কথা ভাবেন, তবে বাংলায় বহু বছর ধরে বহু লড়াই হয়েছে। পলাশির যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পত্তন হয়েছিল। সেখানে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ–উদ–দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশের যুদ্ধ হয়েছিল। এর পর ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ব্রিটিশদের তাড়ানোর চেষ্টা থেকে বহু লড়াই হয়েছে, যার মূল ছিল বাংলায়। ফলে ঐতিহাসিক একটা প্রবণতা অবশ্যই আছে।
বাংলা ভাগ হয়েছিল হিন্দু ও মুসলিম বিবেচনায়, যা ঐতিহ্যগতভাবে খুব বড় বিভাজন ছিল না। বিপরীত দিক থেকে, যদি দশম শতকে বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির গোড়ার দিকে তাকানো যায়, তবে হিন্দু–মুসলিমের ঐক্যের দেখাই মিলবে। মূল দুই মহাকাব্য রামায়ন ও মহাভারত অনুবাদের মূল উদ্যোগটি এসেছিল মুসলমান রাজার দিক থেকে, যিনি মহাকাব্যের খুব ভক্ত ছিলেন। সময়ে সময়ে হিন্দু–মুসলিম ঐক্যের ঐতিহ্যের দেখাই মিলবে। ব্রিটিশরা হিন্দু–মুসলিমদের বিভাজিত করতে উদ্গ্রিব ছিল। একে মোটাদাগে ভাগ করে শাসন করার নীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নতুন নাগরিকত্ব আইনের দিকে তাকালে সেই নীতিরই নবরূপায়ণ চোখে পড়বে। এই আইন মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় নয়। কারণ, এতে হিন্দুদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা তাদের দেওয়া হয়নি। এটি শুধু মুসলিমদেরই নয়, অনেক হিন্দুর মধ্যেও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থা রাখে।
শেষব্দি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বাংলা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই এর যেকোনো ব্যাত্যয়ের বিরোধিতা আসে, যেখানে পুলিশ সংশ্লিষ্ট যেকোনো ঘটনায় যখন শুধু মুসলিমই গুলিবিদ্ধ হয়, বা নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাওয়া কোনো বড় দলের নেতা যখন বলেন, ‘আমরা চাই না মুসলিমরা আমাদের ভোট দিক।’
কেন নয়? এটি সব ধরনের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে। তাই উত্তেজনার পেছনে অনেক কারণ আছে, যা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। এই ভাবনা বাংলার সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর নয়। বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতা অনেক বড় বিষয়। আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তারপরই তো কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি (নজরুল) যে ম্যাগাজিনে লিখতেন, তার মাস্টহেডে (পত্রিকার প্রথম পাতায় নাম যেখানে লেখা থাকে) ১৫ শতকের যে কবিতার পঙ্ক্তি লেখা থাকত, তা হচ্ছে—সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই। ধর্মনিরপেক্ষতার ইস্যুটি বরাবরই এখানে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক যেমন এই নির্বাচনগুলোর লড়াইয়ের ময়দানে হাজির রয়েছে।
কোনো সন্দেহ নেই বিজেপি মেরুকরণকে ব্যবহার করছে। কিন্তু নির্বাচন কৌশলি প্রশান্ত কিশোর বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস মুসলিমদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। আর এখন হিন্দুরা এমন এক দলকে ভোট দিতে চাইছে, যারা তাদের স্বার্থের দিকে তাকাবে। এর সঙ্গে কি আপনি একমত?
অমর্ত্য সেন: একে অনুমাননির্ভর ইতিহাস বলা যায়। বাংলা দীর্ঘদিন ধরেই বিভাজিত ময়দান। ব্রিটিশরা ২০ শতকের শুরুর দিকে যখন একে ভাগ করল এবং চাইল যে, মুসলিমরা আলাদা হোক, তখন তাদের প্রত্যাশা ছিল—বাংলার মুসলিমরা একে সমর্থন করবে, যেহেতু তারা এমন একটি অংশ পাবে, যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। কিন্তু বাঙালিরা কী করল? বাঙালিরা, হিন্দু, মুসলিম—দুই–ই এর বিরোধিতা করল। বাংলার ঐক্য সম্পর্কিত একটি কবিতা—আমার সোনার বাংলা, পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা তথ্যকে সত্য মেনে যদি ধরা হয়, বাংলায় দরিদ্র হিন্দুর তুলনায় দরিদ্র মুসলিমের সংখ্যা বেশি ছিল, তবে ন্যায্যতার প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা জরুরি। ন্যায্যতার বিবেচনায় পিরামিডের প্রান্তে থাকা মানুষদের জন্য কিছু করাটা জরুরি। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বরাবরই এই প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। একটি অঞ্চলে কারা দরিদ্র এবং তাদের জন্য কী করা প্রয়োজন, সেদিকে নজর রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন মতুয়া, নমশূদ্র, নিম্ন শ্রেণির হিন্দু বা বাংলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো করেই মুসলিমদের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে। এ ক্ষেত্রে একই কারণ কাজ করেছে।
তাই আমার মনে হয়, এই মুসলিম বিষয়ক আলোচনা অনেক হয়েছে। এবার হিন্দুদের উচিত এটা উপলব্ধি করা যে, এটি হিন্দুত্ববাদী ধারণায় উজ্জীবিত একটি দলের প্রচারকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন যে–ই এ কথা বলুক, তিনি ভুল করছেন। কারণ, আপনাকে মানুষের দিকে তাকাতে হবে সুবিধাপ্রাপ্ত ও সুবিধাহীন শ্রেণি হিসেবে। ভারত সরকার নিজেই মুসলিমদের সুবিধাবঞ্চিত করেছে, যাতে ভারতের বাইরে আপনি নির্যাতিত হলেও একজন হিন্দুর মতো করে ভারতে আপনি আশ্রয় চাইতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনাকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে হবে।
আপনি নিম্নবর্গ ও নিম্ন শ্রেণির হিন্দুদের কথা বললেন। তাদের বিজেপি নিজেদের ভোটার বলে মনে করে। ২০১৯ সালে উত্তর প্রদেশে নির্বাচনে তারা তাদেরই ভোট দিয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী?
অমর্ত্য সেন: এটা খুবই মজার প্রশ্ন। একটি অঞ্চলের ন্যায্যতার ইতিহাস একটি নির্বাচনে কী ঘটবে তা নির্ধারণ করে না। এটি সাংগঠনিক সুবিধার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে। বাংলা বা উত্তর প্রদেশের বদলে কেরালার দিকে তাকালে মজার বিষয় পাওয়া যাবে। ভারতের যেকোনো জায়গার তুলনায় কেরালায় অস্পৃষ্যতার সংকট, জাত বিচার অনেক বেশি। তারপরও শক্ত সংগঠনের কারণে (এ ক্ষেত্রে বামদের) এই পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে রাতারাতি বদলে গেল। কমিউনিস্ট পার্টি বলেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যারা সব জাতির কাছ থেকে ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে এই জাতি সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যে ভূমিকা নিতে পারে, তাকে আমাদের অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
হিন্দুত্ববাদ খুবই গতিশীল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। আমি তাদের সঙ্গে একমত না হতেই পারি। কিন্তু তাদের সাংগঠনিক অনেক কিছুকে আমার সম্মান জানাতেই হবে। সব নির্বাচনে না হলেও তারা সফল। কিছু আদিবাসী অধ্যূষিত এলাকায়, বিশেষত ত্রিপুরার মতো এলাকায় বিজেপি আধিপত্য বিরাজ করতে পারত। আমাদের এই সাংগঠনিক দিকটির দিকে তাকাতে হবে। এই কারণে আপনার প্রশ্ন করা উচিত যে, বাংলা যদি এতটাই ধর্মনিরপেক্ষ হয়, তবে একটি হিন্দু দল জিতুক বা না জিতুক কী করে এতটা সম্ভাবনা তৈরি করল? সংগঠনের কারণেই। আমার মনে হয় না এমন আর কোনো নির্বাচন আমরা দেখেছি, যেখানে কেন্দ্র থেকে এতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সবচেয়ে বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘুরে ঘুরে আসছেন এখানে। শুধু তাই নয়, বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। বিজেপির হাতে খরচা করার মতো বিস্তর অর্থ আছে, আর তারা এর ভালো ব্যবহারও করছে। ফলে আমার মনে হয় এর দিকে এভাবেই তাকানো উচিত। আমাদের কিছুই করার নেই—এমন আশাহত কথা বলবার কিছু নেই। আপনি যদি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম–ন্যায্যতার নীতিতে অটল থাকেন, তবে আপনার এর জন্য কাজ করা উচিত। এমনভাবে কাজ করা উচিত, যাতে এর দ্বারা হিন্দু, মুসলিম, দলিত বা যারা দলিত নয়, সবাই উদ্বেলিত হয়।
রাজ্য সরকার কোনো গুরুতর ভূল করেছে বলে মনে করেন কি?
অমর্ত্য সেন: হতে পারে অনেক আছে। আমি আলাদা করে গবেষণা করিনি। অনেক অর্জনও আছে। দরিদ্র হলেও গুজরাটের কৃষকদের চেয়ে বাংলার কৃষকদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এখনো অনেক ভালো। সরবরাহ সম্পর্কিত কিছু বিষয় থাকলেও বণ্টনের বিষয়টি বেশ ভালো। এমন অনেক কিছু আছে। অনেক ভুলও হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতে যেভাবে কৃষকদের সঙ্গে আচরণ করা হয়, তার কথা বলা যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কেন্দ্র সরকারের বিবেচনা থেকে কৃষকেরা একেবারে হারিয়ে গেছে। কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য এখনো তাদের দরকার। ফলে এটি এতটা সরল নয়। কারণ ভুল শনাক্ত করা খুব সহজ। কিন্তু যখন আমরা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করতে বসি, তখন আমাদের সত্যের অনুসন্ধান করার সঙ্গে সঙ্গে মানবিক বোধও থাকতে হবে। যাকে এই মুহূর্তে একটি উত্তর বলে মনে হচ্ছে, তা উত্তর নাও হতে পারে।

ঢাকা: ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। আগামীকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। তবে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলছেন, ভারতের নির্বাচনে যা হচ্ছে, তা শুধু একটি অঞ্চলের অতীত পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এর অনেকটাই নির্ভর করে সাংগঠনিক সুবিধাদির ওপর। আজ শুক্রবার ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সুনেত্রা চৌধুরীর নেওয়া এ সাক্ষাৎকারের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হলো।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কতটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
অমর্ত্য সেন: আমি এখন যেখানে (হার্ভার্ড) থাকি, তার থেকে কলকাতার সময়ের বিস্তর ফারাক। তাই যতটা সম্ভব, এই নির্বাচনগুলোর দিকে নজর রাখছি।
এ নির্বাচনে বাংলার আত্মা নিয়ে লড়াই হচ্ছে। প্রতিটি দল নিজেদের বাংলার প্রকৃত প্রতিনিধি বলে দাবি করছে। এই নির্বাচনী লড়াইকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ, এক ভীষণ লড়াই চলছে। কেন্দ্র সরকার যখন কোনো একটি রাজ্যের নির্বাচনের ওপর এত অস্বাভাবিক মাত্রার গুরুত্বারোপ করে, তখন এ নিয়ে ব্যাপক মাত্রার আগ্রহ তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর জন্য বাড়তি উপলক্ষের আর প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে, এও অস্বাভাবিক নয় যে, স্থানীয় বাঙালিরা এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। এই দুটি বিষয় একসঙ্গে একে যুদ্ধের রূপ দিয়েছে, যা বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
বাংলার নির্বাচনে সহিংসতা ঘটে কেন? নির্বাচন কমিশনও (ইসি) আট ধাপেই সহিংসতা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
অমর্ত্য সেন: বাংলা বেশি সহিংস—এমন কিছু এর পেছনে নেই বলেই মনে হয়। আমার মনে হয়, ইসি বিভাজন টানতে চাইছে। নির্বাচনের ঘটনাগুলোর দিকে যদি তাকান, তবে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী নিজের দায়িত্ব খুব অল্পই পালন করছেন এবং নির্বাচনের কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এর মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার সুস্পষ্টভাবে সব ধরনের কাজে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করছে, যা এক বা দুদিনে নির্বাচন হলে সম্ভব হতো না। এখন ইসি এই কারণেই এভাবে (নির্বাচন) করছে কিনা, তা আমি জানি না। আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা, তাতে বাংলার বহু মানুষ নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করছেন। এমনকি (চতুর্থ ধাপে ভোট গ্রহণের সময়) গোলাগুলিতেও চার বাঙালি নিহত হলো, যাদের সবাই মুসলমান। আমি সে গল্পের ভেতরে যাচ্ছি না। কিন্তু একে শুধু বাংলার শান্তির ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না বা এর অনুপস্থিতি হিসেবেও নয়, যা আট ধাপের নির্বাচনে বাংলায় ঝুঁকি তৈরি করেছে। বরং প্রায় একই বিস্তৃতির অঞ্চলে এক বা দুদিনের মধ্যে এটি (গোলাগুলি) ঘটেছে। এর সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, যা আমাদের আলোচনা করা দরকার।
আমি জানি না, বাংলায় নির্বাচনের সময় এর চেয়ে বেশি রক্ত ঝরার ঐতিহ্য রয়েছে কিনা। যদি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়ের কথা ভাবেন, তবে বাংলায় বহু বছর ধরে বহু লড়াই হয়েছে। পলাশির যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পত্তন হয়েছিল। সেখানে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ–উদ–দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশের যুদ্ধ হয়েছিল। এর পর ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ব্রিটিশদের তাড়ানোর চেষ্টা থেকে বহু লড়াই হয়েছে, যার মূল ছিল বাংলায়। ফলে ঐতিহাসিক একটা প্রবণতা অবশ্যই আছে।
বাংলা ভাগ হয়েছিল হিন্দু ও মুসলিম বিবেচনায়, যা ঐতিহ্যগতভাবে খুব বড় বিভাজন ছিল না। বিপরীত দিক থেকে, যদি দশম শতকে বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির গোড়ার দিকে তাকানো যায়, তবে হিন্দু–মুসলিমের ঐক্যের দেখাই মিলবে। মূল দুই মহাকাব্য রামায়ন ও মহাভারত অনুবাদের মূল উদ্যোগটি এসেছিল মুসলমান রাজার দিক থেকে, যিনি মহাকাব্যের খুব ভক্ত ছিলেন। সময়ে সময়ে হিন্দু–মুসলিম ঐক্যের ঐতিহ্যের দেখাই মিলবে। ব্রিটিশরা হিন্দু–মুসলিমদের বিভাজিত করতে উদ্গ্রিব ছিল। একে মোটাদাগে ভাগ করে শাসন করার নীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নতুন নাগরিকত্ব আইনের দিকে তাকালে সেই নীতিরই নবরূপায়ণ চোখে পড়বে। এই আইন মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় নয়। কারণ, এতে হিন্দুদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা তাদের দেওয়া হয়নি। এটি শুধু মুসলিমদেরই নয়, অনেক হিন্দুর মধ্যেও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থা রাখে।
শেষব্দি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বাংলা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই এর যেকোনো ব্যাত্যয়ের বিরোধিতা আসে, যেখানে পুলিশ সংশ্লিষ্ট যেকোনো ঘটনায় যখন শুধু মুসলিমই গুলিবিদ্ধ হয়, বা নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাওয়া কোনো বড় দলের নেতা যখন বলেন, ‘আমরা চাই না মুসলিমরা আমাদের ভোট দিক।’
কেন নয়? এটি সব ধরনের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে। তাই উত্তেজনার পেছনে অনেক কারণ আছে, যা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। এই ভাবনা বাংলার সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর নয়। বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতা অনেক বড় বিষয়। আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তারপরই তো কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি (নজরুল) যে ম্যাগাজিনে লিখতেন, তার মাস্টহেডে (পত্রিকার প্রথম পাতায় নাম যেখানে লেখা থাকে) ১৫ শতকের যে কবিতার পঙ্ক্তি লেখা থাকত, তা হচ্ছে—সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই। ধর্মনিরপেক্ষতার ইস্যুটি বরাবরই এখানে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক যেমন এই নির্বাচনগুলোর লড়াইয়ের ময়দানে হাজির রয়েছে।
কোনো সন্দেহ নেই বিজেপি মেরুকরণকে ব্যবহার করছে। কিন্তু নির্বাচন কৌশলি প্রশান্ত কিশোর বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস মুসলিমদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। আর এখন হিন্দুরা এমন এক দলকে ভোট দিতে চাইছে, যারা তাদের স্বার্থের দিকে তাকাবে। এর সঙ্গে কি আপনি একমত?
অমর্ত্য সেন: একে অনুমাননির্ভর ইতিহাস বলা যায়। বাংলা দীর্ঘদিন ধরেই বিভাজিত ময়দান। ব্রিটিশরা ২০ শতকের শুরুর দিকে যখন একে ভাগ করল এবং চাইল যে, মুসলিমরা আলাদা হোক, তখন তাদের প্রত্যাশা ছিল—বাংলার মুসলিমরা একে সমর্থন করবে, যেহেতু তারা এমন একটি অংশ পাবে, যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। কিন্তু বাঙালিরা কী করল? বাঙালিরা, হিন্দু, মুসলিম—দুই–ই এর বিরোধিতা করল। বাংলার ঐক্য সম্পর্কিত একটি কবিতা—আমার সোনার বাংলা, পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা তথ্যকে সত্য মেনে যদি ধরা হয়, বাংলায় দরিদ্র হিন্দুর তুলনায় দরিদ্র মুসলিমের সংখ্যা বেশি ছিল, তবে ন্যায্যতার প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা জরুরি। ন্যায্যতার বিবেচনায় পিরামিডের প্রান্তে থাকা মানুষদের জন্য কিছু করাটা জরুরি। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বরাবরই এই প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। একটি অঞ্চলে কারা দরিদ্র এবং তাদের জন্য কী করা প্রয়োজন, সেদিকে নজর রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন মতুয়া, নমশূদ্র, নিম্ন শ্রেণির হিন্দু বা বাংলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো করেই মুসলিমদের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে। এ ক্ষেত্রে একই কারণ কাজ করেছে।
তাই আমার মনে হয়, এই মুসলিম বিষয়ক আলোচনা অনেক হয়েছে। এবার হিন্দুদের উচিত এটা উপলব্ধি করা যে, এটি হিন্দুত্ববাদী ধারণায় উজ্জীবিত একটি দলের প্রচারকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন যে–ই এ কথা বলুক, তিনি ভুল করছেন। কারণ, আপনাকে মানুষের দিকে তাকাতে হবে সুবিধাপ্রাপ্ত ও সুবিধাহীন শ্রেণি হিসেবে। ভারত সরকার নিজেই মুসলিমদের সুবিধাবঞ্চিত করেছে, যাতে ভারতের বাইরে আপনি নির্যাতিত হলেও একজন হিন্দুর মতো করে ভারতে আপনি আশ্রয় চাইতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনাকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে হবে।
আপনি নিম্নবর্গ ও নিম্ন শ্রেণির হিন্দুদের কথা বললেন। তাদের বিজেপি নিজেদের ভোটার বলে মনে করে। ২০১৯ সালে উত্তর প্রদেশে নির্বাচনে তারা তাদেরই ভোট দিয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী?
অমর্ত্য সেন: এটা খুবই মজার প্রশ্ন। একটি অঞ্চলের ন্যায্যতার ইতিহাস একটি নির্বাচনে কী ঘটবে তা নির্ধারণ করে না। এটি সাংগঠনিক সুবিধার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে। বাংলা বা উত্তর প্রদেশের বদলে কেরালার দিকে তাকালে মজার বিষয় পাওয়া যাবে। ভারতের যেকোনো জায়গার তুলনায় কেরালায় অস্পৃষ্যতার সংকট, জাত বিচার অনেক বেশি। তারপরও শক্ত সংগঠনের কারণে (এ ক্ষেত্রে বামদের) এই পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে রাতারাতি বদলে গেল। কমিউনিস্ট পার্টি বলেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যারা সব জাতির কাছ থেকে ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে এই জাতি সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যে ভূমিকা নিতে পারে, তাকে আমাদের অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
হিন্দুত্ববাদ খুবই গতিশীল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। আমি তাদের সঙ্গে একমত না হতেই পারি। কিন্তু তাদের সাংগঠনিক অনেক কিছুকে আমার সম্মান জানাতেই হবে। সব নির্বাচনে না হলেও তারা সফল। কিছু আদিবাসী অধ্যূষিত এলাকায়, বিশেষত ত্রিপুরার মতো এলাকায় বিজেপি আধিপত্য বিরাজ করতে পারত। আমাদের এই সাংগঠনিক দিকটির দিকে তাকাতে হবে। এই কারণে আপনার প্রশ্ন করা উচিত যে, বাংলা যদি এতটাই ধর্মনিরপেক্ষ হয়, তবে একটি হিন্দু দল জিতুক বা না জিতুক কী করে এতটা সম্ভাবনা তৈরি করল? সংগঠনের কারণেই। আমার মনে হয় না এমন আর কোনো নির্বাচন আমরা দেখেছি, যেখানে কেন্দ্র থেকে এতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সবচেয়ে বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘুরে ঘুরে আসছেন এখানে। শুধু তাই নয়, বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। বিজেপির হাতে খরচা করার মতো বিস্তর অর্থ আছে, আর তারা এর ভালো ব্যবহারও করছে। ফলে আমার মনে হয় এর দিকে এভাবেই তাকানো উচিত। আমাদের কিছুই করার নেই—এমন আশাহত কথা বলবার কিছু নেই। আপনি যদি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম–ন্যায্যতার নীতিতে অটল থাকেন, তবে আপনার এর জন্য কাজ করা উচিত। এমনভাবে কাজ করা উচিত, যাতে এর দ্বারা হিন্দু, মুসলিম, দলিত বা যারা দলিত নয়, সবাই উদ্বেলিত হয়।
রাজ্য সরকার কোনো গুরুতর ভূল করেছে বলে মনে করেন কি?
অমর্ত্য সেন: হতে পারে অনেক আছে। আমি আলাদা করে গবেষণা করিনি। অনেক অর্জনও আছে। দরিদ্র হলেও গুজরাটের কৃষকদের চেয়ে বাংলার কৃষকদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এখনো অনেক ভালো। সরবরাহ সম্পর্কিত কিছু বিষয় থাকলেও বণ্টনের বিষয়টি বেশ ভালো। এমন অনেক কিছু আছে। অনেক ভুলও হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতে যেভাবে কৃষকদের সঙ্গে আচরণ করা হয়, তার কথা বলা যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কেন্দ্র সরকারের বিবেচনা থেকে কৃষকেরা একেবারে হারিয়ে গেছে। কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য এখনো তাদের দরকার। ফলে এটি এতটা সরল নয়। কারণ ভুল শনাক্ত করা খুব সহজ। কিন্তু যখন আমরা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করতে বসি, তখন আমাদের সত্যের অনুসন্ধান করার সঙ্গে সঙ্গে মানবিক বোধও থাকতে হবে। যাকে এই মুহূর্তে একটি উত্তর বলে মনে হচ্ছে, তা উত্তর নাও হতে পারে।

ঢাকা: ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। আগামীকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। তবে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলছেন, ভারতের নির্বাচনে যা হচ্ছে, তা শুধু একটি অঞ্চলের অতীত পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এর অনেকটাই নির্ভর করে সাংগঠনিক সুবিধাদির ওপর। আজ শুক্রবার ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সুনেত্রা চৌধুরীর নেওয়া এ সাক্ষাৎকারের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হলো।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কতটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
অমর্ত্য সেন: আমি এখন যেখানে (হার্ভার্ড) থাকি, তার থেকে কলকাতার সময়ের বিস্তর ফারাক। তাই যতটা সম্ভব, এই নির্বাচনগুলোর দিকে নজর রাখছি।
এ নির্বাচনে বাংলার আত্মা নিয়ে লড়াই হচ্ছে। প্রতিটি দল নিজেদের বাংলার প্রকৃত প্রতিনিধি বলে দাবি করছে। এই নির্বাচনী লড়াইকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ, এক ভীষণ লড়াই চলছে। কেন্দ্র সরকার যখন কোনো একটি রাজ্যের নির্বাচনের ওপর এত অস্বাভাবিক মাত্রার গুরুত্বারোপ করে, তখন এ নিয়ে ব্যাপক মাত্রার আগ্রহ তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর জন্য বাড়তি উপলক্ষের আর প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে, এও অস্বাভাবিক নয় যে, স্থানীয় বাঙালিরা এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। এই দুটি বিষয় একসঙ্গে একে যুদ্ধের রূপ দিয়েছে, যা বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
বাংলার নির্বাচনে সহিংসতা ঘটে কেন? নির্বাচন কমিশনও (ইসি) আট ধাপেই সহিংসতা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
অমর্ত্য সেন: বাংলা বেশি সহিংস—এমন কিছু এর পেছনে নেই বলেই মনে হয়। আমার মনে হয়, ইসি বিভাজন টানতে চাইছে। নির্বাচনের ঘটনাগুলোর দিকে যদি তাকান, তবে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী নিজের দায়িত্ব খুব অল্পই পালন করছেন এবং নির্বাচনের কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এর মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার সুস্পষ্টভাবে সব ধরনের কাজে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করছে, যা এক বা দুদিনে নির্বাচন হলে সম্ভব হতো না। এখন ইসি এই কারণেই এভাবে (নির্বাচন) করছে কিনা, তা আমি জানি না। আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা, তাতে বাংলার বহু মানুষ নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করছেন। এমনকি (চতুর্থ ধাপে ভোট গ্রহণের সময়) গোলাগুলিতেও চার বাঙালি নিহত হলো, যাদের সবাই মুসলমান। আমি সে গল্পের ভেতরে যাচ্ছি না। কিন্তু একে শুধু বাংলার শান্তির ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না বা এর অনুপস্থিতি হিসেবেও নয়, যা আট ধাপের নির্বাচনে বাংলায় ঝুঁকি তৈরি করেছে। বরং প্রায় একই বিস্তৃতির অঞ্চলে এক বা দুদিনের মধ্যে এটি (গোলাগুলি) ঘটেছে। এর সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, যা আমাদের আলোচনা করা দরকার।
আমি জানি না, বাংলায় নির্বাচনের সময় এর চেয়ে বেশি রক্ত ঝরার ঐতিহ্য রয়েছে কিনা। যদি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়ের কথা ভাবেন, তবে বাংলায় বহু বছর ধরে বহু লড়াই হয়েছে। পলাশির যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পত্তন হয়েছিল। সেখানে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ–উদ–দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশের যুদ্ধ হয়েছিল। এর পর ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ব্রিটিশদের তাড়ানোর চেষ্টা থেকে বহু লড়াই হয়েছে, যার মূল ছিল বাংলায়। ফলে ঐতিহাসিক একটা প্রবণতা অবশ্যই আছে।
বাংলা ভাগ হয়েছিল হিন্দু ও মুসলিম বিবেচনায়, যা ঐতিহ্যগতভাবে খুব বড় বিভাজন ছিল না। বিপরীত দিক থেকে, যদি দশম শতকে বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির গোড়ার দিকে তাকানো যায়, তবে হিন্দু–মুসলিমের ঐক্যের দেখাই মিলবে। মূল দুই মহাকাব্য রামায়ন ও মহাভারত অনুবাদের মূল উদ্যোগটি এসেছিল মুসলমান রাজার দিক থেকে, যিনি মহাকাব্যের খুব ভক্ত ছিলেন। সময়ে সময়ে হিন্দু–মুসলিম ঐক্যের ঐতিহ্যের দেখাই মিলবে। ব্রিটিশরা হিন্দু–মুসলিমদের বিভাজিত করতে উদ্গ্রিব ছিল। একে মোটাদাগে ভাগ করে শাসন করার নীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নতুন নাগরিকত্ব আইনের দিকে তাকালে সেই নীতিরই নবরূপায়ণ চোখে পড়বে। এই আইন মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় নয়। কারণ, এতে হিন্দুদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা তাদের দেওয়া হয়নি। এটি শুধু মুসলিমদেরই নয়, অনেক হিন্দুর মধ্যেও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থা রাখে।
শেষব্দি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বাংলা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই এর যেকোনো ব্যাত্যয়ের বিরোধিতা আসে, যেখানে পুলিশ সংশ্লিষ্ট যেকোনো ঘটনায় যখন শুধু মুসলিমই গুলিবিদ্ধ হয়, বা নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাওয়া কোনো বড় দলের নেতা যখন বলেন, ‘আমরা চাই না মুসলিমরা আমাদের ভোট দিক।’
কেন নয়? এটি সব ধরনের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে। তাই উত্তেজনার পেছনে অনেক কারণ আছে, যা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। এই ভাবনা বাংলার সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর নয়। বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতা অনেক বড় বিষয়। আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তারপরই তো কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি (নজরুল) যে ম্যাগাজিনে লিখতেন, তার মাস্টহেডে (পত্রিকার প্রথম পাতায় নাম যেখানে লেখা থাকে) ১৫ শতকের যে কবিতার পঙ্ক্তি লেখা থাকত, তা হচ্ছে—সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই। ধর্মনিরপেক্ষতার ইস্যুটি বরাবরই এখানে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক যেমন এই নির্বাচনগুলোর লড়াইয়ের ময়দানে হাজির রয়েছে।
কোনো সন্দেহ নেই বিজেপি মেরুকরণকে ব্যবহার করছে। কিন্তু নির্বাচন কৌশলি প্রশান্ত কিশোর বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস মুসলিমদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। আর এখন হিন্দুরা এমন এক দলকে ভোট দিতে চাইছে, যারা তাদের স্বার্থের দিকে তাকাবে। এর সঙ্গে কি আপনি একমত?
অমর্ত্য সেন: একে অনুমাননির্ভর ইতিহাস বলা যায়। বাংলা দীর্ঘদিন ধরেই বিভাজিত ময়দান। ব্রিটিশরা ২০ শতকের শুরুর দিকে যখন একে ভাগ করল এবং চাইল যে, মুসলিমরা আলাদা হোক, তখন তাদের প্রত্যাশা ছিল—বাংলার মুসলিমরা একে সমর্থন করবে, যেহেতু তারা এমন একটি অংশ পাবে, যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। কিন্তু বাঙালিরা কী করল? বাঙালিরা, হিন্দু, মুসলিম—দুই–ই এর বিরোধিতা করল। বাংলার ঐক্য সম্পর্কিত একটি কবিতা—আমার সোনার বাংলা, পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা তথ্যকে সত্য মেনে যদি ধরা হয়, বাংলায় দরিদ্র হিন্দুর তুলনায় দরিদ্র মুসলিমের সংখ্যা বেশি ছিল, তবে ন্যায্যতার প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা জরুরি। ন্যায্যতার বিবেচনায় পিরামিডের প্রান্তে থাকা মানুষদের জন্য কিছু করাটা জরুরি। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বরাবরই এই প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। একটি অঞ্চলে কারা দরিদ্র এবং তাদের জন্য কী করা প্রয়োজন, সেদিকে নজর রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন মতুয়া, নমশূদ্র, নিম্ন শ্রেণির হিন্দু বা বাংলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো করেই মুসলিমদের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে। এ ক্ষেত্রে একই কারণ কাজ করেছে।
তাই আমার মনে হয়, এই মুসলিম বিষয়ক আলোচনা অনেক হয়েছে। এবার হিন্দুদের উচিত এটা উপলব্ধি করা যে, এটি হিন্দুত্ববাদী ধারণায় উজ্জীবিত একটি দলের প্রচারকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন যে–ই এ কথা বলুক, তিনি ভুল করছেন। কারণ, আপনাকে মানুষের দিকে তাকাতে হবে সুবিধাপ্রাপ্ত ও সুবিধাহীন শ্রেণি হিসেবে। ভারত সরকার নিজেই মুসলিমদের সুবিধাবঞ্চিত করেছে, যাতে ভারতের বাইরে আপনি নির্যাতিত হলেও একজন হিন্দুর মতো করে ভারতে আপনি আশ্রয় চাইতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনাকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে হবে।
আপনি নিম্নবর্গ ও নিম্ন শ্রেণির হিন্দুদের কথা বললেন। তাদের বিজেপি নিজেদের ভোটার বলে মনে করে। ২০১৯ সালে উত্তর প্রদেশে নির্বাচনে তারা তাদেরই ভোট দিয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী?
অমর্ত্য সেন: এটা খুবই মজার প্রশ্ন। একটি অঞ্চলের ন্যায্যতার ইতিহাস একটি নির্বাচনে কী ঘটবে তা নির্ধারণ করে না। এটি সাংগঠনিক সুবিধার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে। বাংলা বা উত্তর প্রদেশের বদলে কেরালার দিকে তাকালে মজার বিষয় পাওয়া যাবে। ভারতের যেকোনো জায়গার তুলনায় কেরালায় অস্পৃষ্যতার সংকট, জাত বিচার অনেক বেশি। তারপরও শক্ত সংগঠনের কারণে (এ ক্ষেত্রে বামদের) এই পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে রাতারাতি বদলে গেল। কমিউনিস্ট পার্টি বলেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যারা সব জাতির কাছ থেকে ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে এই জাতি সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যে ভূমিকা নিতে পারে, তাকে আমাদের অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
হিন্দুত্ববাদ খুবই গতিশীল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। আমি তাদের সঙ্গে একমত না হতেই পারি। কিন্তু তাদের সাংগঠনিক অনেক কিছুকে আমার সম্মান জানাতেই হবে। সব নির্বাচনে না হলেও তারা সফল। কিছু আদিবাসী অধ্যূষিত এলাকায়, বিশেষত ত্রিপুরার মতো এলাকায় বিজেপি আধিপত্য বিরাজ করতে পারত। আমাদের এই সাংগঠনিক দিকটির দিকে তাকাতে হবে। এই কারণে আপনার প্রশ্ন করা উচিত যে, বাংলা যদি এতটাই ধর্মনিরপেক্ষ হয়, তবে একটি হিন্দু দল জিতুক বা না জিতুক কী করে এতটা সম্ভাবনা তৈরি করল? সংগঠনের কারণেই। আমার মনে হয় না এমন আর কোনো নির্বাচন আমরা দেখেছি, যেখানে কেন্দ্র থেকে এতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সবচেয়ে বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘুরে ঘুরে আসছেন এখানে। শুধু তাই নয়, বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। বিজেপির হাতে খরচা করার মতো বিস্তর অর্থ আছে, আর তারা এর ভালো ব্যবহারও করছে। ফলে আমার মনে হয় এর দিকে এভাবেই তাকানো উচিত। আমাদের কিছুই করার নেই—এমন আশাহত কথা বলবার কিছু নেই। আপনি যদি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম–ন্যায্যতার নীতিতে অটল থাকেন, তবে আপনার এর জন্য কাজ করা উচিত। এমনভাবে কাজ করা উচিত, যাতে এর দ্বারা হিন্দু, মুসলিম, দলিত বা যারা দলিত নয়, সবাই উদ্বেলিত হয়।
রাজ্য সরকার কোনো গুরুতর ভূল করেছে বলে মনে করেন কি?
অমর্ত্য সেন: হতে পারে অনেক আছে। আমি আলাদা করে গবেষণা করিনি। অনেক অর্জনও আছে। দরিদ্র হলেও গুজরাটের কৃষকদের চেয়ে বাংলার কৃষকদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এখনো অনেক ভালো। সরবরাহ সম্পর্কিত কিছু বিষয় থাকলেও বণ্টনের বিষয়টি বেশ ভালো। এমন অনেক কিছু আছে। অনেক ভুলও হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতে যেভাবে কৃষকদের সঙ্গে আচরণ করা হয়, তার কথা বলা যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কেন্দ্র সরকারের বিবেচনা থেকে কৃষকেরা একেবারে হারিয়ে গেছে। কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য এখনো তাদের দরকার। ফলে এটি এতটা সরল নয়। কারণ ভুল শনাক্ত করা খুব সহজ। কিন্তু যখন আমরা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করতে বসি, তখন আমাদের সত্যের অনুসন্ধান করার সঙ্গে সঙ্গে মানবিক বোধও থাকতে হবে। যাকে এই মুহূর্তে একটি উত্তর বলে মনে হচ্ছে, তা উত্তর নাও হতে পারে।

ঢাকা: ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। আগামীকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। তবে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলছেন, ভারতের নির্বাচনে যা হচ্ছে, তা শুধু একটি অঞ্চলের অতীত পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এর অনেকটাই নির্ভর করে সাংগঠনিক সুবিধাদির ওপর। আজ শুক্রবার ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সুনেত্রা চৌধুরীর নেওয়া এ সাক্ষাৎকারের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হলো।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কতটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
অমর্ত্য সেন: আমি এখন যেখানে (হার্ভার্ড) থাকি, তার থেকে কলকাতার সময়ের বিস্তর ফারাক। তাই যতটা সম্ভব, এই নির্বাচনগুলোর দিকে নজর রাখছি।
এ নির্বাচনে বাংলার আত্মা নিয়ে লড়াই হচ্ছে। প্রতিটি দল নিজেদের বাংলার প্রকৃত প্রতিনিধি বলে দাবি করছে। এই নির্বাচনী লড়াইকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ, এক ভীষণ লড়াই চলছে। কেন্দ্র সরকার যখন কোনো একটি রাজ্যের নির্বাচনের ওপর এত অস্বাভাবিক মাত্রার গুরুত্বারোপ করে, তখন এ নিয়ে ব্যাপক মাত্রার আগ্রহ তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর জন্য বাড়তি উপলক্ষের আর প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে, এও অস্বাভাবিক নয় যে, স্থানীয় বাঙালিরা এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। এই দুটি বিষয় একসঙ্গে একে যুদ্ধের রূপ দিয়েছে, যা বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
বাংলার নির্বাচনে সহিংসতা ঘটে কেন? নির্বাচন কমিশনও (ইসি) আট ধাপেই সহিংসতা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
অমর্ত্য সেন: বাংলা বেশি সহিংস—এমন কিছু এর পেছনে নেই বলেই মনে হয়। আমার মনে হয়, ইসি বিভাজন টানতে চাইছে। নির্বাচনের ঘটনাগুলোর দিকে যদি তাকান, তবে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী নিজের দায়িত্ব খুব অল্পই পালন করছেন এবং নির্বাচনের কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এর মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার সুস্পষ্টভাবে সব ধরনের কাজে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করছে, যা এক বা দুদিনে নির্বাচন হলে সম্ভব হতো না। এখন ইসি এই কারণেই এভাবে (নির্বাচন) করছে কিনা, তা আমি জানি না। আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা, তাতে বাংলার বহু মানুষ নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করছেন। এমনকি (চতুর্থ ধাপে ভোট গ্রহণের সময়) গোলাগুলিতেও চার বাঙালি নিহত হলো, যাদের সবাই মুসলমান। আমি সে গল্পের ভেতরে যাচ্ছি না। কিন্তু একে শুধু বাংলার শান্তির ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না বা এর অনুপস্থিতি হিসেবেও নয়, যা আট ধাপের নির্বাচনে বাংলায় ঝুঁকি তৈরি করেছে। বরং প্রায় একই বিস্তৃতির অঞ্চলে এক বা দুদিনের মধ্যে এটি (গোলাগুলি) ঘটেছে। এর সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, যা আমাদের আলোচনা করা দরকার।
আমি জানি না, বাংলায় নির্বাচনের সময় এর চেয়ে বেশি রক্ত ঝরার ঐতিহ্য রয়েছে কিনা। যদি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়ের কথা ভাবেন, তবে বাংলায় বহু বছর ধরে বহু লড়াই হয়েছে। পলাশির যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পত্তন হয়েছিল। সেখানে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ–উদ–দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশের যুদ্ধ হয়েছিল। এর পর ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ব্রিটিশদের তাড়ানোর চেষ্টা থেকে বহু লড়াই হয়েছে, যার মূল ছিল বাংলায়। ফলে ঐতিহাসিক একটা প্রবণতা অবশ্যই আছে।
বাংলা ভাগ হয়েছিল হিন্দু ও মুসলিম বিবেচনায়, যা ঐতিহ্যগতভাবে খুব বড় বিভাজন ছিল না। বিপরীত দিক থেকে, যদি দশম শতকে বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির গোড়ার দিকে তাকানো যায়, তবে হিন্দু–মুসলিমের ঐক্যের দেখাই মিলবে। মূল দুই মহাকাব্য রামায়ন ও মহাভারত অনুবাদের মূল উদ্যোগটি এসেছিল মুসলমান রাজার দিক থেকে, যিনি মহাকাব্যের খুব ভক্ত ছিলেন। সময়ে সময়ে হিন্দু–মুসলিম ঐক্যের ঐতিহ্যের দেখাই মিলবে। ব্রিটিশরা হিন্দু–মুসলিমদের বিভাজিত করতে উদ্গ্রিব ছিল। একে মোটাদাগে ভাগ করে শাসন করার নীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নতুন নাগরিকত্ব আইনের দিকে তাকালে সেই নীতিরই নবরূপায়ণ চোখে পড়বে। এই আইন মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় নয়। কারণ, এতে হিন্দুদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা তাদের দেওয়া হয়নি। এটি শুধু মুসলিমদেরই নয়, অনেক হিন্দুর মধ্যেও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থা রাখে।
শেষব্দি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বাংলা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই এর যেকোনো ব্যাত্যয়ের বিরোধিতা আসে, যেখানে পুলিশ সংশ্লিষ্ট যেকোনো ঘটনায় যখন শুধু মুসলিমই গুলিবিদ্ধ হয়, বা নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাওয়া কোনো বড় দলের নেতা যখন বলেন, ‘আমরা চাই না মুসলিমরা আমাদের ভোট দিক।’
কেন নয়? এটি সব ধরনের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে। তাই উত্তেজনার পেছনে অনেক কারণ আছে, যা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। এই ভাবনা বাংলার সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর নয়। বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতা অনেক বড় বিষয়। আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তারপরই তো কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি (নজরুল) যে ম্যাগাজিনে লিখতেন, তার মাস্টহেডে (পত্রিকার প্রথম পাতায় নাম যেখানে লেখা থাকে) ১৫ শতকের যে কবিতার পঙ্ক্তি লেখা থাকত, তা হচ্ছে—সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই। ধর্মনিরপেক্ষতার ইস্যুটি বরাবরই এখানে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক যেমন এই নির্বাচনগুলোর লড়াইয়ের ময়দানে হাজির রয়েছে।
কোনো সন্দেহ নেই বিজেপি মেরুকরণকে ব্যবহার করছে। কিন্তু নির্বাচন কৌশলি প্রশান্ত কিশোর বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস মুসলিমদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। আর এখন হিন্দুরা এমন এক দলকে ভোট দিতে চাইছে, যারা তাদের স্বার্থের দিকে তাকাবে। এর সঙ্গে কি আপনি একমত?
অমর্ত্য সেন: একে অনুমাননির্ভর ইতিহাস বলা যায়। বাংলা দীর্ঘদিন ধরেই বিভাজিত ময়দান। ব্রিটিশরা ২০ শতকের শুরুর দিকে যখন একে ভাগ করল এবং চাইল যে, মুসলিমরা আলাদা হোক, তখন তাদের প্রত্যাশা ছিল—বাংলার মুসলিমরা একে সমর্থন করবে, যেহেতু তারা এমন একটি অংশ পাবে, যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। কিন্তু বাঙালিরা কী করল? বাঙালিরা, হিন্দু, মুসলিম—দুই–ই এর বিরোধিতা করল। বাংলার ঐক্য সম্পর্কিত একটি কবিতা—আমার সোনার বাংলা, পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা তথ্যকে সত্য মেনে যদি ধরা হয়, বাংলায় দরিদ্র হিন্দুর তুলনায় দরিদ্র মুসলিমের সংখ্যা বেশি ছিল, তবে ন্যায্যতার প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা জরুরি। ন্যায্যতার বিবেচনায় পিরামিডের প্রান্তে থাকা মানুষদের জন্য কিছু করাটা জরুরি। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বরাবরই এই প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। একটি অঞ্চলে কারা দরিদ্র এবং তাদের জন্য কী করা প্রয়োজন, সেদিকে নজর রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন মতুয়া, নমশূদ্র, নিম্ন শ্রেণির হিন্দু বা বাংলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো করেই মুসলিমদের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে। এ ক্ষেত্রে একই কারণ কাজ করেছে।
তাই আমার মনে হয়, এই মুসলিম বিষয়ক আলোচনা অনেক হয়েছে। এবার হিন্দুদের উচিত এটা উপলব্ধি করা যে, এটি হিন্দুত্ববাদী ধারণায় উজ্জীবিত একটি দলের প্রচারকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন যে–ই এ কথা বলুক, তিনি ভুল করছেন। কারণ, আপনাকে মানুষের দিকে তাকাতে হবে সুবিধাপ্রাপ্ত ও সুবিধাহীন শ্রেণি হিসেবে। ভারত সরকার নিজেই মুসলিমদের সুবিধাবঞ্চিত করেছে, যাতে ভারতের বাইরে আপনি নির্যাতিত হলেও একজন হিন্দুর মতো করে ভারতে আপনি আশ্রয় চাইতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনাকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে হবে।
আপনি নিম্নবর্গ ও নিম্ন শ্রেণির হিন্দুদের কথা বললেন। তাদের বিজেপি নিজেদের ভোটার বলে মনে করে। ২০১৯ সালে উত্তর প্রদেশে নির্বাচনে তারা তাদেরই ভোট দিয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী?
অমর্ত্য সেন: এটা খুবই মজার প্রশ্ন। একটি অঞ্চলের ন্যায্যতার ইতিহাস একটি নির্বাচনে কী ঘটবে তা নির্ধারণ করে না। এটি সাংগঠনিক সুবিধার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে। বাংলা বা উত্তর প্রদেশের বদলে কেরালার দিকে তাকালে মজার বিষয় পাওয়া যাবে। ভারতের যেকোনো জায়গার তুলনায় কেরালায় অস্পৃষ্যতার সংকট, জাত বিচার অনেক বেশি। তারপরও শক্ত সংগঠনের কারণে (এ ক্ষেত্রে বামদের) এই পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে রাতারাতি বদলে গেল। কমিউনিস্ট পার্টি বলেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যারা সব জাতির কাছ থেকে ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে এই জাতি সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যে ভূমিকা নিতে পারে, তাকে আমাদের অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
হিন্দুত্ববাদ খুবই গতিশীল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। আমি তাদের সঙ্গে একমত না হতেই পারি। কিন্তু তাদের সাংগঠনিক অনেক কিছুকে আমার সম্মান জানাতেই হবে। সব নির্বাচনে না হলেও তারা সফল। কিছু আদিবাসী অধ্যূষিত এলাকায়, বিশেষত ত্রিপুরার মতো এলাকায় বিজেপি আধিপত্য বিরাজ করতে পারত। আমাদের এই সাংগঠনিক দিকটির দিকে তাকাতে হবে। এই কারণে আপনার প্রশ্ন করা উচিত যে, বাংলা যদি এতটাই ধর্মনিরপেক্ষ হয়, তবে একটি হিন্দু দল জিতুক বা না জিতুক কী করে এতটা সম্ভাবনা তৈরি করল? সংগঠনের কারণেই। আমার মনে হয় না এমন আর কোনো নির্বাচন আমরা দেখেছি, যেখানে কেন্দ্র থেকে এতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সবচেয়ে বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘুরে ঘুরে আসছেন এখানে। শুধু তাই নয়, বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। বিজেপির হাতে খরচা করার মতো বিস্তর অর্থ আছে, আর তারা এর ভালো ব্যবহারও করছে। ফলে আমার মনে হয় এর দিকে এভাবেই তাকানো উচিত। আমাদের কিছুই করার নেই—এমন আশাহত কথা বলবার কিছু নেই। আপনি যদি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম–ন্যায্যতার নীতিতে অটল থাকেন, তবে আপনার এর জন্য কাজ করা উচিত। এমনভাবে কাজ করা উচিত, যাতে এর দ্বারা হিন্দু, মুসলিম, দলিত বা যারা দলিত নয়, সবাই উদ্বেলিত হয়।
রাজ্য সরকার কোনো গুরুতর ভূল করেছে বলে মনে করেন কি?
অমর্ত্য সেন: হতে পারে অনেক আছে। আমি আলাদা করে গবেষণা করিনি। অনেক অর্জনও আছে। দরিদ্র হলেও গুজরাটের কৃষকদের চেয়ে বাংলার কৃষকদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এখনো অনেক ভালো। সরবরাহ সম্পর্কিত কিছু বিষয় থাকলেও বণ্টনের বিষয়টি বেশ ভালো। এমন অনেক কিছু আছে। অনেক ভুলও হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতে যেভাবে কৃষকদের সঙ্গে আচরণ করা হয়, তার কথা বলা যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কেন্দ্র সরকারের বিবেচনা থেকে কৃষকেরা একেবারে হারিয়ে গেছে। কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য এখনো তাদের দরকার। ফলে এটি এতটা সরল নয়। কারণ ভুল শনাক্ত করা খুব সহজ। কিন্তু যখন আমরা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করতে বসি, তখন আমাদের সত্যের অনুসন্ধান করার সঙ্গে সঙ্গে মানবিক বোধও থাকতে হবে। যাকে এই মুহূর্তে একটি উত্তর বলে মনে হচ্ছে, তা উত্তর নাও হতে পারে।

গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে...
২১ মিনিট আগে
ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়।
২ দিন আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যাকশনএইড, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এবং নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মতো পরিচিত আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (আইএনজিও) গুলোর লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করা হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যসহ ১০টি দেশ। তারা বলছে, নতুন নিয়মগুলো ‘অতিরিক্তভাবে কঠোর’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’।
এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রম জোরপূর্বক বন্ধ করে দিলে স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখনো ‘বিপর্যয়কর’ উল্লেখ করে তাঁরা ইসরায়েল সরকারকে আহ্বান জানান, যাতে এনজিওগুলো টেকসই এবং আগের মতো কাজ করতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই পদক্ষেপগুলোর ফলে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহে কোনো প্রভাব পড়বে না। মন্ত্রণালয়টি জানায়, জাতিসংঘের সংস্থা, দ্বিপক্ষীয় অংশীদার এবং মানবিক সংগঠনসহ ‘অনুমোদিত ও যাচাইকৃত চ্যানেল’ দিয়ে সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
তাদের দাবি, সহায়তা সংস্থাগুলোর লাইসেন্স বাতিলের প্রধান কারণ হলো, তাদের কর্মীদের বিষয়ে সম্পূর্ণ ও যাচাইযোগ্য তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো যা মানবিক কাঠামোয় ‘সন্ত্রাসী অপারেটিভদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইসরায়েল।
এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা বলেন, অক্টোবর মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় পুষ্টি ও খাদ্য সরবরাহে কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে পরের মাসেও প্রায় ১ লাখ মানুষ ‘চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মুখোমুখি ছিল।
তবে গাজার সীমান্ত ক্রসিংগুলো নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাত দাবি করেছে, যেসব সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করা হবে, তারা বর্তমান যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় কোনো সহায়তা আনেনি। সংস্থাটি আরও জানায়, অতীতেও তাদের সম্মিলিত অবদান মোট সহায়তার মাত্র প্রায় ১ শতাংশ ছিল।
ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশেরও কম নতুন নিয়ন্ত্রক কাঠামো লঙ্ঘন করেছে।
ওই নিয়ন্ত্রক কাঠামোতে লাইসেন্স বাতিলের একাধিক ভিত্তি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
১. ইসরায়েলকে একটি ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার না করা
২. হলোকাস্ট বা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো হামলা অস্বীকার করা
৩. শত্রু রাষ্ট্র বা সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকে সমর্থন করা
৪. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অবৈধতা আরোপের প্রচারণা’ চালানো
৫. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান জানানো বা তাতে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করা
৬. বিদেশি বা আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাকে সমর্থন করা
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের সংস্থা এবং ২০০টিরও বেশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম আগেই সতর্ক করে বলেছিল, নতুন নিবন্ধন নীতিমালা গাজা ও পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রমকে মৌলিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
তাদের ভাষায়, ‘এই ব্যবস্থা অস্পষ্ট, খামখেয়ালি ও অত্যন্ত রাজনৈতিক মানদণ্ডের ওপর নির্ভরশীল এবং এমন সব শর্ত আরোপ করছে, যা মানবিক সংস্থাগুলোর পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন না করে বা মানবিক নীতির মূল ভিত্তি ক্ষুণ্ন না করে পূরণ করা সম্ভব নয়।’
হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিমের মতে, বর্তমানে গাজায় অধিকাংশ ফিল্ড হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা বা সহায়তা, জরুরি আশ্রয় কার্যক্রম, পানি ও স্যানিটেশন সেবা, তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য পুষ্টি স্থিতিশীলকরণ কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইন অপসারণ কার্যক্রম আইএনজিওগুলোর মাধ্যমেই পরিচালিত বা সমর্থিত হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক ও ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা বিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই চিকলি বলেন, ‘বার্তাটি স্পষ্ট: মানবিক সহায়তা স্বাগত কিন্তু সন্ত্রাসবাদের জন্য মানবিক কাঠামোর অপব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।’
কার্যক্রম স্থগিত হতে যাচ্ছে এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে কেয়ার, মেডিকো ইন্টারন্যাশনাল এবং মেডিক্যাল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস।

গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যাকশনএইড, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এবং নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মতো পরিচিত আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (আইএনজিও) গুলোর লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করা হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যসহ ১০টি দেশ। তারা বলছে, নতুন নিয়মগুলো ‘অতিরিক্তভাবে কঠোর’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’।
এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রম জোরপূর্বক বন্ধ করে দিলে স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখনো ‘বিপর্যয়কর’ উল্লেখ করে তাঁরা ইসরায়েল সরকারকে আহ্বান জানান, যাতে এনজিওগুলো টেকসই এবং আগের মতো কাজ করতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই পদক্ষেপগুলোর ফলে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহে কোনো প্রভাব পড়বে না। মন্ত্রণালয়টি জানায়, জাতিসংঘের সংস্থা, দ্বিপক্ষীয় অংশীদার এবং মানবিক সংগঠনসহ ‘অনুমোদিত ও যাচাইকৃত চ্যানেল’ দিয়ে সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
তাদের দাবি, সহায়তা সংস্থাগুলোর লাইসেন্স বাতিলের প্রধান কারণ হলো, তাদের কর্মীদের বিষয়ে সম্পূর্ণ ও যাচাইযোগ্য তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো যা মানবিক কাঠামোয় ‘সন্ত্রাসী অপারেটিভদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইসরায়েল।
এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা বলেন, অক্টোবর মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় পুষ্টি ও খাদ্য সরবরাহে কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে পরের মাসেও প্রায় ১ লাখ মানুষ ‘চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মুখোমুখি ছিল।
তবে গাজার সীমান্ত ক্রসিংগুলো নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাত দাবি করেছে, যেসব সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করা হবে, তারা বর্তমান যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় কোনো সহায়তা আনেনি। সংস্থাটি আরও জানায়, অতীতেও তাদের সম্মিলিত অবদান মোট সহায়তার মাত্র প্রায় ১ শতাংশ ছিল।
ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশেরও কম নতুন নিয়ন্ত্রক কাঠামো লঙ্ঘন করেছে।
ওই নিয়ন্ত্রক কাঠামোতে লাইসেন্স বাতিলের একাধিক ভিত্তি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
১. ইসরায়েলকে একটি ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার না করা
২. হলোকাস্ট বা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো হামলা অস্বীকার করা
৩. শত্রু রাষ্ট্র বা সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকে সমর্থন করা
৪. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অবৈধতা আরোপের প্রচারণা’ চালানো
৫. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান জানানো বা তাতে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করা
৬. বিদেশি বা আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাকে সমর্থন করা
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের সংস্থা এবং ২০০টিরও বেশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম আগেই সতর্ক করে বলেছিল, নতুন নিবন্ধন নীতিমালা গাজা ও পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রমকে মৌলিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
তাদের ভাষায়, ‘এই ব্যবস্থা অস্পষ্ট, খামখেয়ালি ও অত্যন্ত রাজনৈতিক মানদণ্ডের ওপর নির্ভরশীল এবং এমন সব শর্ত আরোপ করছে, যা মানবিক সংস্থাগুলোর পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন না করে বা মানবিক নীতির মূল ভিত্তি ক্ষুণ্ন না করে পূরণ করা সম্ভব নয়।’
হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিমের মতে, বর্তমানে গাজায় অধিকাংশ ফিল্ড হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা বা সহায়তা, জরুরি আশ্রয় কার্যক্রম, পানি ও স্যানিটেশন সেবা, তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য পুষ্টি স্থিতিশীলকরণ কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইন অপসারণ কার্যক্রম আইএনজিওগুলোর মাধ্যমেই পরিচালিত বা সমর্থিত হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক ও ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা বিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই চিকলি বলেন, ‘বার্তাটি স্পষ্ট: মানবিক সহায়তা স্বাগত কিন্তু সন্ত্রাসবাদের জন্য মানবিক কাঠামোর অপব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।’
কার্যক্রম স্থগিত হতে যাচ্ছে এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে কেয়ার, মেডিকো ইন্টারন্যাশনাল এবং মেডিক্যাল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস।

ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
১৬ এপ্রিল ২০২১
ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়।
২ দিন আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।
অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।
এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।
এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।
অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।
এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।
এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
১৬ এপ্রিল ২০২১
গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে...
২১ মিনিট আগে
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়।
২ দিন আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।
এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।
একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।
তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।
জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।
তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।
গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।
এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।
একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।
তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।
জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।
তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।
গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
১৬ এপ্রিল ২০২১
গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে...
২১ মিনিট আগে
ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’
জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।
এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।
রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’
জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।
এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।
রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
১৬ এপ্রিল ২০২১
গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে...
২১ মিনিট আগে
ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়।
২ দিন আগে