Ajker Patrika

বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে ভারতের তোড়জোড়, মমতাকে ব্যাপক চাপ

আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৮: ০৪
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে জলপাইগুড়ি জেলার বড়শশী এলাকার একটি পিলার। সেখানে এখনো কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ শেষ করেনি ভারত। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে জলপাইগুড়ি জেলার বড়শশী এলাকার একটি পিলার। সেখানে এখনো কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ শেষ করেনি ভারত। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে চাপ দিয়েছে ভারতের কেন্দ্র সরকার। এ লক্ষ্যে অধিগৃহীত জমি দ্রুত কেন্দ্র সরকারের হাতে হস্তান্তর করারও অনুরোধ জানিয়েছে কেন্দ্র সরকার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব গোবিন্দ মোহন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্ত এবং রাজ্যের ভূমি ও সংস্কার বিভাগের সচিব বিবেক কুমারের সঙ্গে গত রোববার বৈঠক করেছেন। যাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ-সংক্রান্ত যেসব বাধা আছে, সেগুলো দূর করা সম্ভব হয়। এর আগেও একই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন গোবিন্দ মোহন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এই বিষয়ে ধারাবাহিক বৈঠকগুলো মূলত কেন্দ্রের অতি আগ্রহই তুলে ধরছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ্য সরকারকে প্রকল্পটি দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় জমি মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি রাজ্য সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য কেন্দ্র ইতিমধ্যে তহবিল বরাদ্দ করেছে।

রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মোট ২ হাজার ২১৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার সীমান্ত আছে। মোট সীমান্তের প্রায় ৮০ শতাংশই এরই মধ্যে বেড়া বা প্রযুক্তিগত সমাধানের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কেন্দ্র বাকি ২০ শতাংশেও বেড়া বসাতে চায় এবং মনে করছে যে রাজ্য জমি হস্তান্তরে দেরি করছে।’

কেন্দ্র সরকারের এক কর্মকর্তার মতে, কেন্দ্রের কাছে এটি মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে এই প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কারণেই বিলম্বিত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্যকে জমি অধিগ্রহণের পরিবর্তে সরাসরি জমি ক্রয় করতে অনুমতি দিয়েছিল। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন জমি অধিগ্রহণ আইন গ্রহণ করেনি। প্রকল্পটি গত এক বছরে তেমন অগ্রগতি না হওয়ায়, কেন্দ্রের বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে, রাজ্য সরকার প্রকল্পটির জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালায়নি।’

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমি ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান। তিনি বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং আশা করি প্রক্রিয়াটি শিগগিরই সম্পন্ন হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন এবং আমরা তাঁকে আমাদের অগ্রগতির বিস্তারিত জানিয়েছি।’

রাজ্য সরকারের অপর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর তারকাঁটার বেড়া নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। কিন্তু জমি নিয়ে সমস্যার কারণে এই প্রকল্পটি থেমে যায়। এখন বেড়া নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে।

গত রোববার পশ্চিমবঙ্গ সফরের সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে পশ্চিমবঙ্গের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে অমিত শাহ বা তাঁর দল কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির তরফ থেকে এই অভিযোগ নতুন নয়। কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা অতীতেও বহুবার অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, প্রতিবেশী দেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করা কেন্দ্রের কাজ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেছেন, চলতি মাসে পরপর দুটি বৈঠক এই বিষয়ে কেন্দ্রের গুরুত্বের বিষয়টিই তুলে ধরে। প্রথমত, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত আক্রমণের কারণে বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর আগমন হতে পারে, যা নিয়ে কেন্দ্র উদ্বিগ্ন। দ্বিতীয়ত, ২০২৬ সালের রাজ্য নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র তৃণমূল কংগ্রেসকে দোষারোপ করতে চায় যে তৃণমূল সরকার সম্পূর্ণ বেড়া দেওয়ার জন্য জমি দেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৫
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ আইনপ্রণেতা। চিঠিতে তাঁরা কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা এটাও উল্লেখ করেছেন যে আওয়ামী আমলে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি এবং গত বছরের জুলাইয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এই অপরাধগুলো ব্যক্তিগত গণ্য করে গণতন্ত্রের স্বার্থে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

মার্কিন কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে এই চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে।

এই পাঁচ মার্কিন আইনপ্রণেতা হলেন গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস, বিল হুইজেঙ্গা, সিডনি কামলাগার-ডোভ, জুলি জনসন এবং থমাস আর সুওজি। তাঁরা চিঠিতে লিখেছেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত রাজনৈতিক অঙ্গনের সব দলের সঙ্গে মিলে কাজ করা। এর মাধ্যমেই বাংলাদেশের মানুষের কণ্ঠস্বর ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হওয়া সম্ভব।’

তাঁরা আরও বলেন, ‘সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সততা ও নিরপেক্ষতার ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনার সংস্কারগুলোও জরুরি। আমরা শঙ্কিত যে সরকার যদি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত করে কিংবা ত্রুটিপূর্ণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আবারও চালু করে, তবে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।’

২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তা উল্লেখ করে ওই আইনপ্রণেতারা বলেন, যদি কোনো একটি দলকে নিষিদ্ধ করা হয়, তবে আগামী নির্বাচনও অবাধ হবে না। চিঠিতে বলা হয়, ‘পররাষ্ট্র দপ্তর এবং অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক লক্ষ করেছেন, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না। এ ছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয়ের ফেব্রুয়ারি মাসের একটি তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনী প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে।’

আইনপ্রণেতারা মনে করেন, এই হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য ঘটনার প্রকৃত জবাবদিহি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আদলে হওয়া উচিত, প্রতিশোধের চক্র অব্যাহত রেখে নয়। তাঁরা লিখেছেন, ‘সংগঠন করার স্বাধীনতা এবং সামষ্টিক অপরাধের বদলে ব্যক্তিগত অপরাধের দায়বদ্ধতা হলো মৌলিক মানবাধিকার। আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর মনোযোগ না দিয়ে, কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড পুরোপুরি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত এই নীতিগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

চিঠির শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘আমরা আশা করি, আপনার সরকার অথবা পরবর্তী কোনো নির্বাচিত সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। দিন শেষে বাংলাদেশের মানুষ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে নিজেদের পছন্দমতো সরকার গঠনের অধিকার রাখে, যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারবে এবং মানুষের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হবে।’

আইনপ্রণেতারা আরও যোগ করেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সামনের মাসগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সমর্থন করতে আমরা আপনার ও আপনার সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত আছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েল আর ‘কখনোই গাজা ত্যাগ করবে না’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৩
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল আর ‘কখনোই গাজা ত্যাগ করবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। সেই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে অবৈধ বসতিগুলো পুনরায় স্থাপনের ধারণার কথাও বিবেচনা করছেন। তাঁর এই মন্তব্য ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে, যা কাৎজকে তাঁর দাবি থেকে কিছুটা পিছিয়ে আসতে বাধ্য করেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার অধিকৃত পশ্চিম তীরের বাইত আল বসতিতে ১, হাজার ২০০ নতুন ঘর নির্মাণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সময় মন্ত্রী এই বক্তব্য দেন। বক্তৃতায় কাৎজ ২০০৫ সালে ইসরায়েল কর্তৃক পরিত্যক্ত উত্তর গাজার বসতিগুলো পুনর্নির্মাণের অঙ্গীকার করেন।

কাৎজ বলেন, ‘আমরা গাজার অনেক গভীরে আছি এবং আমরা কখনোই গাজা ছেড়ে যাব না, এমন কিছু ঘটবে না।’

কাৎজ আরও যোগ করেন, ‘সময় এলে আমরা উত্তর গাজায় উচ্ছেদ হওয়া সম্প্রদায়গুলোর জায়গায় নাহাল আউটপোস্ট (সামরিক-কৃষি ফাঁড়ি) স্থাপন করব।’

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ইসরায়েল এবং ইসরায়েল-অধিকৃত উভয় অঞ্চলে দেশটির সৈন্যরা যে ধরনের সামরিক-কৃষি ফাঁড়ি স্থাপন করেছিল, মন্ত্রী মূলত সেই ধরনের আউটপোস্টের কথা উল্লেখ করছিলেন। এই আউটপোস্টগুলোর অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী বেসামরিক বসতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল।

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘোষিত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, গাজায় পুনরায় বসতি স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা পশ্চিম জেরুজালেমের নেই। কাৎজের এই বক্তব্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার সঙ্গেও সরাসরি সংঘাত তৈরি করে, যা যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিতে প্রবেশ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। মার্কিন পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলোতে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনি ছিটমহল থেকে প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে ‘ইসরায়েল গাজা দখল বা অ্যানেক্স (সংযুক্ত) করবে না।’

ইসরায়েলি মন্ত্রীর এই বক্তব্য বিভিন্ন মহলের সমালোচনা কুড়িয়েছে। সমালোচকেরা কাৎজের বিরুদ্ধে দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি ‘সঙ্কটময়’ মুহূর্তে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অবজ্ঞা করার অভিযোগ তুলেছেন। সাবেক চিফ অব স্টাফ গাদি আইজেনকোট এক্সে লিখেছেন, ‘সরকার যখন এক হাতে ট্রাম্প পরিকল্পনার পক্ষে ভোট দিচ্ছে, তখন অন্য হাতে তারা গাজা উপত্যকায় বিচ্ছিন্ন বসতি স্থাপনের রূপকথা বিক্রি করছে।’

এই ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে কাৎজ তাঁর মন্তব্য থেকে কিছুটা পিছু হটেছেন। তাঁর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ‘গাজা উপত্যকায় বসতি স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই’ এবং দাবি করা হয়েছে যে মন্তব্যগুলো ‘শুধু নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে’ করা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তুরস্কে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে লিবিয়ার ‘জাতীয় ঐক্যের সরকারের’ সেনাপ্রধান নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৩
জেনারেল হাদ্দাদ। ছবি: সংগৃহীত
জেনারেল হাদ্দাদ। ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার কাছে এক বিমান দুর্ঘটনায় লিবিয়ার জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকারের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ নিহত হয়েছেন। ব্যক্তিগত জেটে করে একটি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই এই দুর্ঘটনা ঘটে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় বিমানটিতে থাকা সবাই প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও চারজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা এবং তিনজন ক্রু ছিলেন।

তুর্কি কর্মকর্তারা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে নাশকতার আশঙ্কা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে যান্ত্রিক ত্রুটিকেই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দিবেইবাহ সেনাপ্রধান আল-হাদ্দাদ এবং অন্য চার কর্মকর্তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, প্রতিনিধি দলটি দেশে ফেরার পথে এই ‘মর্মান্তিক দুর্ঘটনা’ ঘটে।

আবদুল হামিদ দিবেইবাহ বলেন, ‘এই বিশাল ট্র্যাজেডি জাতি, সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা এমন কিছু মানুষকে হারিয়েছি, যাঁরা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে দেশের সেবা করেছেন এবং তাঁরা শৃঙ্খলা, দায়িত্ব ও জাতীয় অঙ্গীকারের এক অনন্য উদাহরণ ছিলেন।’

আল-হাদ্দাদ ছিলেন পশ্চিম লিবিয়ার শীর্ষ সামরিক কমান্ডার। ২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে বিভক্ত লিবিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় চলমান প্রচেষ্টায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন।

দুর্ঘটনায় নিহত অন্য চার কর্মকর্তা হলেন লিবিয়ার পদাতিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আল-ফিতুরি ঘারিবিলা; সামরিক উৎপাদন কর্তৃপক্ষের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদ আল-কাতাউই; সেনাপ্রধানের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আল-আসাবি দিয়াব এবং সেনাপ্রধানের কার্যালয়ের সামরিক আলোকচিত্রী মুহাম্মদ ওমর আহমেদ মাহজুব।

ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ স্বীকৃত ‘গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল ইউনিটি—জিএনইউ’ বা জাতীয় ঐক্যের সরকার দেশজুড়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং সব ধরনের সরকারি অনুষ্ঠান ও উদ্‌যাপন স্থগিত থাকবে।

তুর্কি কর্মকর্তাদের মতে, দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের প্রতিরক্ষা আলোচনায় অংশ নিতে লিবীয় প্রতিনিধিদলটি আঙ্কারায় ছিল।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে জানান, আল-হাদ্দাদকে বহনকারী বিমানটি স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৮টা ১০ মিনিটে আঙ্কারার এসেনবোগা বিমানবন্দর থেকে ত্রিপোলির উদ্দেশে যাত্রা করে। এর প্রায় ৪০ মিনিট পর রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

আলী ইয়ারলিকায়া বলেন, আঙ্কারার হ্যায়মানা জেলার কেসিককাভাক গ্রামের কাছে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তিনি জানান, দাসো ফ্যালকন-৫০ মডেলের জেটটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে হ্যায়মানার ওপর দিয়ে উড্ডয়নকালে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানিয়েছিল।

তুর্কি প্রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিকেশন অফিসের প্রধান বুরহানেত্তিন দুরান জানান, বিমানটি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কথা জানিয়ে জরুরি অবতরণের অনুরোধ করেছিল। বিমানটিকে পুনরায় এসেনবোগা বিমানবন্দরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সেখানে অবতরণের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। তবে জরুরি অবতরণের জন্য নিচে নামার সময়ই বিমানটি রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

স্থানীয় টেলিভিশনে প্রচারিত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হ্যায়মানার রাতের আকাশে হঠাৎ একটি বিস্ফোরণের মতো আলো জ্বলে ওঠে।

তুরস্কের বিচারমন্ত্রী ইলমাজ তুনচ জানিয়েছেন, আঙ্কারার প্রধান প্রসিকিউটরের কার্যালয় এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

আল জাজিরাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে একজন তুর্কি কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে লিবীয় সেনাপ্রধানের বিমান দুর্ঘটনায় নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক কারণ হিসেবে যান্ত্রিক ত্রুটিকেই দায়ী করা হচ্ছে।’

লিবিয়ার সরকার (জিএনইউ) জানিয়েছে, দুর্ঘটনার তদন্তে তুর্কি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করার জন্য লিবিয়া থেকে একটি দল আঙ্কারায় পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিলিস্তিনপন্থী প্ল্যাকার্ড হাতে এবার লন্ডনে গ্রেপ্তার গ্রেটা থুনবার্গ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লন্ডনে গ্রেপ্তারের মুহূর্তে গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
লন্ডনে গ্রেপ্তারের মুহূর্তে গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থী এক বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে গ্রেপ্তার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে (২৩ ডিসেম্বর) লন্ডনের ফেনচার্চ স্ট্রিটে একটি বিমা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২২ বছর বয়সী গ্রেটা থুনবার্গ বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি মাটিতে বসে একটি প্ল্যাকার্ড ধরে ছিলেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশন বন্দীদের সমর্থন করি। আমি গণহত্যার বিরোধিতা করি।’

পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেটা থুনবার্গের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডের বার্তাটি সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০০-এর ১৩ ধারায় নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতি সমর্থন প্রকাশের শামিল।

এর আগে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরও দুই কর্মীকে ‘অপরাধমূলক ক্ষতিসাধনের’ অভিযোগে আটক করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে অ্যাসপেন ইন্স্যুরেন্স নামের ওই ভবনের সামনের অংশে লাল রং ছিটিয়ে দেন। পুলিশ জানায়, হাতুড়ি ও লাল রং ব্যবহার করে ভবনটির ক্ষতি করা হয়েছে।

‘প্রিজনার্স ফর প্যালেস্টাইন’ নামের একটি প্রচারগোষ্ঠী জানিয়েছে, অ্যাসপেন ইন্স্যুরেন্সকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি ইসরায়েলি অস্ত্র প্রস্তুতকারক এলবিট সিস্টেমসের যুক্তরাজ্য শাখাকে বিমা সেবা দিচ্ছিল। সংগঠনটি আরও জানায়, প্যালেস্টাইন অ্যাকশন-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বন্দী বর্তমানে অনশন কর্মসূচিতে রয়েছেন। মোট ৮ জন বন্দী অনশন শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে দুজন ৫২ তম দিনে পৌঁছেছেন এবং তাঁদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আশঙ্কাজনক। গুরুতর ঝুঁকির কারণে তিনজন অনশন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেটা থুনবার্গকে পরে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে আগামী মার্চ মাসে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। তবে অধিকারকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন—গত এক বছরে হাজারো মানুষ ‘আই সাপোর্ট প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করলেও, গ্রেটার ক্ষেত্রেই কেন সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করা হলো।

এদিকে অনশনরত বন্দীদের পরিবার ও সমর্থকেরা ব্রিটেনের বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, অনশন সংকট নিরসনে বৈঠক না করে সরকার নিজস্ব নীতিমালা লঙ্ঘন করছে। গ্রেটা থুনবার্গ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তিসংগত এই দাবিগুলো মেনে নিলে বন্দীদের মুক্তির পথ তৈরি হবে। গণহত্যা থামাতে যারা নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করছে, রাষ্ট্রের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।’

উল্লেখ্য, এর আগে অ্যালিয়াঞ্জ ও অ্যাভিভা নামে দুটি বড় বিমা প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমসের যুক্তরাজ্য শাখার সঙ্গে তাদের বিমা চুক্তি বাতিল করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি অস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে চাপ বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত