Ajker Patrika

সরকারি তহবিলে বাবরি মসজিদ গড়তে চেয়েছিলেন নেহরু: রাজনাথ সিং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ১৪
রাজনাথ সিং ও জওহরলাল নেহেরু। ছবি: সংগৃহীত
রাজনাথ সিং ও জওহরলাল নেহেরু। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু সরকারি তহবিল দিয়ে ‘বাবরি মসজিদ’ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সরদার বল্লভভাই প্যাটেল তাঁর সেই পরিকল্পনা সফল হতে দেননি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

রাজনাথ সিং আরও দাবি করেন, নেহরু সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্যাটেলের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য সংগ্রহ করা অর্থ কুয়া ও সড়ক নির্মাণে ব্যয় করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

গুজরাটের ভাদোদরার কাছে সাধলি গ্রামে সরদার প্যাটেলের ১৫০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত ‘ঐক্য যাত্রা’য় বক্তব্য দিতে গিয়ে রাজনাথ সিং প্যাটেলকে প্রকৃত উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন, যিনি কখনো তোষণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন না।

রাজনাথ সিং বলেন, ‘পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু অযোধ্যায় সরকারি অর্থে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। যদি কেউ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে থাকেন, তিনি ছিলেন সরদার বল্লভভাই প্যাটেল, এক গুজরাটি মায়ের সন্তান। তিনি সরকারি টাকায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ হতে দেননি।’

নেহরু যখন গুজরাটের সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের প্রসঙ্গ তোলেন, তখন প্যাটেল পরিষ্কার করে দেন যে এখানে বিষয়টি ভিন্ন। কারণ, মন্দির সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ৩০ লাখ রুপি সাধারণ মানুষ দান করেছিল, বলে তিনি যোগ করেন।

তিনি বলেন, একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছিল এবং সোমনাথ মন্দিরের কাজে সরকারের এক পয়সাও খরচ হয়নি। একইভাবে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণেও সরকার এক রুপি দেয়নি। পুরো অর্থ এসেছে দেশের মানুষের কাছ থেকে। এটাকেই প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা বলা যায়।

রাজনাথ সিং দাবি করেন, সরদার প্যাটেল চাইলে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন, কিন্তু জীবনে কোনো পদ-পদবি নিয়ে তিনি কখনো লোভ করেননি। নেহরুর সঙ্গে মতাদর্শগত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও তিনি কাজ করেছেন। কারণ, এ বিষয়ে তিনি মহাত্মা গান্ধীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তিনি দাবি করেন, ১৯৪৬ সালে কংগ্রেস সভাপতির পদে নেহরু নির্বাচিত হন শুধু এই কারণে যে গান্ধীর অনুরোধে প্যাটেল নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছিলেন। সিং বলেন, ‘১৯৪৬ সালে কংগ্রেস সভাপতির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কংগ্রেস কমিটির অধিকাংশ সদস্যই বল্লভভাই প্যাটেলের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু গান্ধীজি যখন প্যাটেলকে নেহরুকে সভাপতি হতে দেওয়ার অনুরোধ করেন এবং নিজের নাম প্রত্যাহার করতে বলেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে তা মেনে নেন।’

কারো নাম উল্লেখ না করেই সিং বলেন, কিছু রাজনৈতিক শক্তি প্যাটেলের উত্তরাধিকার মুছে ফেলতে চাইছিল। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের পাতায় প্যাটেলকে তাঁর যথাযথ জায়গায় ফিরিয়ে আনতে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘কিছু লোক’ প্যাটেলের ঐতিহ্য আড়াল করতে চেয়েছিল, কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত তারা সফল হবে না। সিং আরও বলেন, ‘প্যাটেলের মৃত্যুর পর সাধারণ মানুষ তাঁর স্মৃতিসৌধ গড়ার জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু এই খবর নেহরুজির কাছে পৌঁছালে তিনি বলেন, সরদার প্যাটেল কৃষকদের নেতা ছিলেন, তাই এই অর্থ দিয়ে গ্রামের কুয়া ও রাস্তা নির্মাণ করা উচিত।

কী অদ্ভুত কথা! কুয়া আর রাস্তা বানানো তো সরকারের কাজ। স্মৃতিসৌধের অর্থ সেখানে খরচ করতে বলাটা হাস্যকর।’

রাজনাথ সিং দাবি করেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে সে সময়কার সরকার যেকোনো মূল্যে প্যাটেলের ঐতিহ্য আড়াল করতে চেয়েছিল। সিং আরও বলেন, নেহরু নিজের জন্য ভারতরত্ন নিয়েছেন, কিন্তু তখন সরদার বল্লভভাই প্যাটেলকে কেন সেই সম্মান দেওয়া হয়নি? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ গড়ে প্যাটেলকে যথাযথ সম্মান দিয়েছেন। এটিকে তিনি মোদির অসাধারণ কাজ বলে উল্লেখ করেন।

সিং বলেন, প্যাটেলকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য বয়স বেশি ছিল, এ ধরনের যুক্তি সম্পূর্ণ ভুল। তাঁর ভাষায় ,‘মোরারজি দেশাই ৮০ বছরের বেশি বয়সে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, তাহলে ৮০-এর নিচে থাকা সরদার প্যাটেল কেন পারবেন না?’

কাশ্মীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সে সময়ে প্যাটেলের উত্থাপিত দাবিগুলো গুরুত্ব পেলে আজ এত দীর্ঘ সময় কাশ্মীর সমস্যায় ভারতকে ভুগতে হতো না।

তিনি বলেন, প্যাটেল সব সময় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে বিশ্বাস করতেন। সিং বলেন, ‘তবে সব পথ বন্ধ হয়ে গেলে তিনি কঠোর অবস্থান নিতে দ্বিধা করতেন না। হায়দরাবাদের সংযুক্তির সময় তিনি যে অবস্থান নিয়েছিলেন, তা না হলে হয়তো হায়দরাবাদ আজ ভারতের অংশ হতো না।’

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকারও অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে সেই মূল্যবোধ ধরে রেখেছে। তাঁর বক্তব্য, ‘অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারত বিশ্বকে দেখিয়েছে, শান্তি ও সম্প্রীতির ভাষা যারা বোঝে না, তাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ক্ষমতা ভারতের আছে। শুধু ভারতে নয়, পৃথিবীর নানা দেশেই অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

লন্ডনে চিকিৎসা যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ১৪ জন, তালিকায় ছয় চিকিৎসক ও দুই এসএসএফ

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

ঢাকার তিনটিসহ আরও ২৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি থাকল

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ