Ajker Patrika

নিরক্ষর কাশ্মীরি কবি, নিজেই উদ্ভাবন করেছেন বর্ণমালা

জাহাঙ্গীর আলম
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ২০: ০৯
নিরক্ষর কাশ্মীরি কবি, নিজেই উদ্ভাবন করেছেন বর্ণমালা

জারিফা জান (৬৫), উত্তর কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলায় বসবাসকারী একজন সুফি কবি। তিনি কখনো স্কুলে যাননি। স্থানীয় কাশ্মীরি ভাষায় সুন্দর কথা বলতে পারেন, কিন্তু এই ভাষা পড়তে বা লিখতে তিনি অপারগ। সোজা কথায় নিরক্ষর। 

অথচ অনর্গল লিখে যাচ্ছেন কবিতা। তাঁর এই লেখা তিনি ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ পড়তে পারেন না। নিরক্ষর জারিফা জান নিজের কবিতা সংরক্ষণের একটা উপায় নিজেই উদ্ভাবন করেছেন। তিনি কবিতা লেখেন নিজস্ব কোডেড ভাষায়। 

জারিফার কোড ভাষার হরফ বৃত্তের মতো। তাঁর কবিতার খাতার মধ্যে সারি সারি বৃত্ত। আরবি বা কাশ্মীরি লিপির মতো তিনিও লেখেন ডান থেকে বামে। 

সুফিবাদ হলো ইসলামের একটি আধ্যাত্মিক অতীন্দ্রিয় রূপ। আধ্যাত্মিকতা অনুশীলনের একটি অপ্রচলিত চিন্তা পদ্ধতি বলা যেতে পারে। এ ঘরানায় ধর্মীয় জীবনের গুপ্ত/নিগূঢ় বিষয়গুলোর ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। সুফিরা আল্লাহর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা লাভের জন্য আজীবন সাধনা করেন। 

 জারিফার কবিতার খাতা ভর্তি বৃত্তজারিফা জানকে নিয়ে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি তাঁর নিজস্ব কোডেড ভাষা বা নিজের উদ্ভাবিত হরফ সম্পর্কে বলেছেন, ‘এটি আমার ভাষা, চেনাশোনার ভাষা, আমি কয়েক বছর ধরে এটির উন্নয়ন করেছি।’ 

জারিফার কবিতায় দীক্ষা শুরু হয়েছিল বিয়ের কয়েক বছর পর। যখন তাঁর বয়স ত্রিশের কোটার শেষের দিকে। একদিন কাছাকাছি একটি স্রোতস্বিনী থেকে পানি আনতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ তাঁর মনে হলো যেন মাথার ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেল। এতদিনের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিমেষে যেন হাওয়া হয়ে গেল! এক গভীর খাদের মধ্যে পড়ে গেছেন বলে বোধ হতে শুরু করল। জ্ঞান ফিরে দেখেন পানির কলসটি নেই। নিজেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ বলে বোধ হতে শুরু করল! 

এটা জারিফা জানের দাবি। তিনি বলেন, ‘যখন আমার জ্ঞান ফিরল, তখন মুখ থেকে একটি গজল বেরিয়েছিল।’ 

উল্লেখ্য, ‘গজল’ হলো কবিতা বা গীতি কবিতা। আরবি কবিতা থেকে এই ধরন উদ্ভূত। গজল সাধারণত প্রেম, আকাঙ্ক্ষা ও বিচ্ছেদ বা বেদনার মতো বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। 

জারিফা জান বলেন, ‘তখন পর্যন্ত আমার কবিতা সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। কিন্তু এরপর থেকে আমি শত শত কবিতা ও গজল লিখেছি।’ 

স্বরচিত কবিতা থেকে কয়েকটি ছত্র পড়ে শোনান জারিফা জান, যেটির বাংলা তরজমা করলে মোটামুটি এ রকম দাঁড়ায়: 

 ‘আমি আমার যৌবনকে জলাঞ্জলি দিইনি, 

একটা আগুন, আমাকে বাঁচিয়ে রাখে, 

আমার যৌবন ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে অমূল্য।’ 

জারিফা যখন বুঝতে পারেন যে তিনি কবিই হবেন, তখন তাঁর সন্তানেরা সবে স্কুলে যেতে শুরু করেছে। তারা ইংরেজি ও উর্দুতে পড়তে এবং লিখতে শিখছিল। কিন্তু জারিফার হৃদয় বুঁদ হয়ে আছে কাশ্মীরি কবিতায়। এটি এমন এক ভাষা, যেটি অবহেলায় ক্ষয়ে যাচ্ছে, এমনকি খোদ কাশ্মীরেও এই ভাষা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। 

: জারিফা কবিতার খাতা তিনি ছাড়া কেউ পাঠোদ্ধার করতে পারে নাকাশ্মীরি ভাষা, বিষয় হিসেবে ইংরেজি ও উর্দুর মতো স্কুল পাঠ্যক্রমের অংশ নয়। তা ছাড়া জারিফা বুঝে উঠতে পারছিলেন না সন্তানদের তাঁর কবিতাগুলো শোনাবেন কি না। 

এই কবিতাগুলো সম্পর্কে প্রথমে তাঁর স্বামী এবং এরপর সন্তানদের জানান জারিফা। তবে এই সাহস সঞ্চয় করতে তাঁর বেশ কয়েক বছর লেগেছিল। কিন্তু জারিফাকে অবাক করে দিয়ে তাঁরা সবাই তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু দেখে বিস্মিত হয়েছিল। ততদিনে জারিফা তাঁর অনেক সৃষ্টিই হারিয়ে ফেলেছেন। কারণ কয়টা কবিতাই বা মুখস্থ করে রাখা যায়! 

সন্তানদের উৎসাহেই এরপর শুরু হয় সংরক্ষণের কাজ। প্রথমে বড় ছেলে শাফাত টেপে রেকর্ড করার চেষ্টা করেন। এরপর বড় মেয়ে কুলসুম তাঁর সামান্য কাশ্মীরি ভাষাজ্ঞান দিয়ে লিখে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই দুই পদ্ধতির কোনোটিতেই সন্তুষ্ট ছিলেন না জারিফা। 

তা ছাড়া কবিতা রেকর্ড করে বা লিখে রাখার জন্য তো সব সময় সন্তানদের কাছে পাওয়া যায় না। যখন কোনো কবিতার জন্য চিন্তা করেন বা মাথায় একটি কবিতা/কবিতাংশ হাজির হয়, তখন তো সব সময় সন্তানদের পাশে পান না। বা থাকলেও হয়তো সঙ্গে টেপরেকর্ডার বা এক টুকরা কাগজ ও কলম থাকে না।

এত সব যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে নিজেই একটি কৌশল উদ্ভাবন করেন জারিফা। বিভিন্ন পরিচিত প্রতীক দিয়ে, অনেকটা শর্টহ্যান্ডের মতো করে কবিতা লিখে রাখতে শুরু করেন। যেমন: কবিতায় আপেল শব্দ থাকলে হয়তো আপেল এঁকে রাখেন, আবার হৃদয় থাকলে একটি হার্ট এঁকে রাখেন। পরে মেয়ে কুলসুম যখন সময় পান, তখন জারিফা সেসব ডিকোড করে বলতেন আর মেয়ে সেগুলো প্রচলিত অক্ষরে লিখে রাখতেন। 

জারিফা বলেন, ‘কিন্তু আমি তো নিরক্ষর, আগে কখনো কলম ধরিনি। ফলে আমি যা-ই আঁকি, শেষ পর্যন্ত তা বিভিন্ন আকৃতি ও আকারের বৃত্তই হয়ে যায়। যেমন, আমি একটা কলা আঁকলেও সেটা বৃত্তাকার হয়ে যায়!’ 

তবু এই অদ্ভুত, বৃত্তাকার আকৃতিগুলো জারিফার জন্য খুব কার্যকর ছিল। এগুলো দিয়ে তিনি প্রায় নির্ভুলভাবেই তাঁর কবিতার লাইনগুলো স্মরণে রাখতে পারতেন। এই সংকেতগুলোর ওপর ভিত্তি করেই মেয়েকে তিনি ডিকোড করে শোনাতেন। বছর তিনেক আগে কুলসুমের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এভাবে জারিফার কবিতার সংরক্ষণকাজ চলেছে। মেয়ের মৃত্যুর পর শোকে মুহ্যমান জারিফা প্রায় সবকিছু ছেড়ে দেন। 

৩০০ কবিতার সঙ্কলন নিয়ে বই বের হলে জারিফাই হবেন বিশ্বের একমাত্র কবি যিনি নিজস্ব বর্ণমালায় লেখেন।  উদ্ভাবন করেছেন।এরপর আবার সেই বৃত্তগুলো নাড়াচাড়া করতে গিয়ে নতুন জিনিস আবিষ্কার করেন জারিফা। তিনি বুঝতে পারেন দীর্ঘ সময় ও বারবার ব্যবহারের ফলে এই বিভিন্ন আকার-আকৃতির বৃত্তগুলোই আসলে একগুচ্ছ বর্ণমালায় পরিণত হয়েছে। তিনি বৃত্তগুলো দিয়ে স্বচ্ছন্দেই মনের ভাব লিখতে পারছেন। সমস্যা একটাই, এই লেখার তিনি ছাড়া আর কেউ পাঠোদ্ধার করতে পারে না। 

এই বৃত্তের মধ্যেই জারিফার প্রায় ৩০০ কবিতা সংরক্ষিত রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে সেগুলো বই আকারে প্রকাশের চেষ্টা চলছে। 

অনেকে বলছেন, বইটি প্রকাশ পেলে জারিফা বিশ্বের প্রথম কবি হতে পারেন, যিনি তাঁর সৃষ্টি সংরক্ষণের জন্য নিজস্ব বর্ণমালা তৈরি করেছেন। 

যদিও অনেকে জারিফাকে সন্দেহ করেন। তাঁরা বলেন, নিজস্ব বর্ণমালায় লেখা কবিতা শুধু তিনিই পড়তে পারেন, এটা একটা ভণিতা ছাড়া কিছু নয়। তিনি সত্যিই এভাবে সংরক্ষণ করেন, নাকি বানিয়ে বানিয়ে বলেন কে জানে! 

তবে কাশ্মীরের বয়োবৃদ্ধ ও শ্রদ্ধেয় সুফি কবি আবদুল করিম পরওয়ানা জারিফাকে বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো কবিই তাঁর লেখা সবকিছু মনে রাখতে পারে না। আমি আমার জীবদ্দশায় এমন কাউকে দেখিনি বা শুনিনি যে তাঁর পুরো কবিতা সংকলন মনে রাখতে পারেন। জারিফা একজন আধ্যাত্মিক কবি। আর আধ্যাত্মিকতায় সবকিছুই সম্ভব!’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত