Ajker Patrika

এক বাবার ডায়েরিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহ 

আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২২, ০০: ৩৫
এক বাবার ডায়েরিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহ 

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। সময় যত যাচ্ছে, এই যুদ্ধের ভয়াবহতা তত বাড়ছে। এই যুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে ইউক্রেনীয় এক বাবার ডায়েরিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সেই ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো—

২৪ ফেব্রুয়ারি-যুদ্ধের প্রথম দিন
হামলার প্রথম দিনটি ছিল আমার ১৫ তম বিয়ে বার্ষিকী। আমরা বন্ধুদের সঙ্গে একটি পার্টির পরিকল্পনা করেছিলাম। আমরা একটি রেস্তোরাঁয় একটি টেবিলও বুক করেছিলাম। কিন্তু খুব সকালে ৫টার মতো হবে তখন—আমার পরিবার এবং ১০ বছরের শিশু রুশ রকেটের শব্দে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। প্রথম চিন্তা ছিল, আমরা যা নিতে পারি, তা নিয়ে চলে যাব। কিন্তু সমস্ত রাস্তা যানবাহনে অবরুদ্ধ ছিল, এবং তারা সারাক্ষণ আমাদের ওপর গোলাবর্ষণ করছিল। এটা ভয়ংকর ছিল। পরে আমরা কাছাকাছি একটি আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কে গিয়েছিলাম এবং সেখানে সারা দিন কাটিয়েছিলাম। 

প্রথম দিনে সেখানে প্রায় ৬০ জন লোক ছিল। সেখানে ঠান্ডা ছিল। সেখানে কোনো গরম হওয়ার উপায় ছিল না এবং মানুষ মেঝের ওপর শুয়ে ছিল। মাঝেমধ্যে আমরা বিভিন্ন জিনিস নিতে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাই। আমরা ১৪ তলায় থাকতাম এবং লিফটটি তখনো কাজ করছিল। সেই প্রথম দিন আমরা কুকিজ এবং ক্রিস্পের মতো জিনিস খাচ্ছিলাম। আমরা ওই দিন আমাদের গাড়িতে পার্কিংয়ে ঘুমিয়েছিলাম। আমার ছেলে পেছনের সিটে, আমার স্ত্রী এবং আমি সামনে, অর্ধেক বসে এবং অর্ধেক শুয়ে ঘুমিয়েছিলাম। আমি ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা। এটি আমার জন্য আরামদায়ক ছিল না। 

ওই সময় আমরা আমাদের বিয়ে বার্ষিকী সম্পর্কে চিন্তা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের একসঙ্গে থাকা দুর্দান্ত ১৫ বছর সম্পর্কে ভাবছিলাম। আমাদের ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট ১০ বছরের ছেলে রয়েছে, যাকে আমরা খুব ভালোবাসি। কিন্তু যুদ্ধের প্রথম দিনটি ছিল শুধু ভয়ের। 

২৫ ফেব্রুয়ারি
গাড়িতে ঘুম থেকে উঠে ভয়ংকর অনুভূতি হয়েছিল। আমার পিঠে এমন ব্যথা হচ্ছিল, যা আগে কখনো হয়নি। সকালে বোমা বিস্ফোরণ ছিল না। প্রায় শান্তই ছিল। ‘শান্ত’ শব্দের অর্থ হলো—তখন ১০ টির বদলে মাত্র দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল। এই সুযোগে আমরা বাড়িতে গিয়ে তাড়াতাড়ি সকালের নাশতা করে নিলাম। ইউক্রেনীয়রা বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ এবং আমরা আমাদের প্রায় সব প্রতিবেশীকে খুব ভালোভাবে চিনি। তাই যারা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেনি, তাদের জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা শুরু করি। এই কাজের মধ্যে ছিল অ্যাপার্টমেন্টে পানির বোতল ভর্তি করা, খাবার আনা, মায়েরা যাতে শিশুদের খাওয়াতে পারে, তার জন্য গাড়ির পার্কিংয়ে জায়গা তৈরি করা এবং নারীদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য জায়গা তৈরি করা। 

ওই দিনই আমরা বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু ট্রাফিকের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আর আমরা ভাবছিলাম, হয়তো এই পাগলামি বন্ধ হবে। কিন্তু সেই রাতে আমরা আবার আন্ডারগ্রাউন্ডে ঘুমালাম। 

 হামলার পর কিয়েভে তীব্র যানজট২৬ ফেব্রুয়ারি
তৃতীয় দিন কিছু বন্ধু গাড়ি পার্কে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাওয়ার এবং স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা গোসল করতে, খাবার রান্না করতে, ছেলেকে পড়াতে এবং তাকে অনলাইনে দাবা খেলতে দিতে চেয়েছি। আমরা আমাদের জানালা টেপ দিয়ে আবৃত করে দিই। এদিন থেকে লিফট আর কাজ করছিল না। আমার ছেলে খুব সাহসী। সে কান্না না করার চেষ্টা করছে। সে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যতবারই জানালার বাইরে থেকে সাইরেন বাজছে, আমরা ততবারই আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ছুটছিলাম। আমি দেখতে পাচ্ছি আমার ছেলে ভয় পেয়েছে। কিন্তু সে আতঙ্কিত হচ্ছে না। 

সেদিন আমি আমাদের উঠোনের বাইরে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমরা কাছাকাছি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। পরে আমি টেলিগ্রামের মাধ্যমে খবরটি পড়লাম যে, রুশ সেনারা শহরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। তাতে বলা হয়েছিল যে, রুশ সেনারা শহরের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। 

যে মুহূর্তে আপনি গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন, আপনি ভয় পাচ্ছেন না। কারণ, আপনার ভয় পাওয়ার সময় নেই। আপনাকে কেবল আপনার ছেলেকে গাড়ির পার্কে নিরাপদে নিয়ে যেতে হবে। 

২৭ ফেব্রুয়ারি
রোববার নাগাদ আশপাশের কিছু ছোট দোকান আবার খুলেছে। এই যুদ্ধ আমাদের বাস্তবতাকে রূপান্তরিত করেছিল। ওই সময় একটি খোলা দোকান বা গ্যাস স্টেশনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো মনে হয়েছিল। কিন্তু আপনি এসব স্থানে যখন সারিবদ্ধ হন, তখন আপনাকে হত্যা করা হতে পারে। 
 

দোকানগুলোতে সরবরাহ কম ছিল। কিন্তু শেলফগুলো খালি ছিল না। পূর্ববর্তী গ্রাহকদের ধন্যবাদ। তবে যারা এখনো সারিবদ্ধ রয়েছে, তাদের জন্য চিন্তা হচ্ছে। আমি গাড়ির পার্কিংয়ে এসে আমাদের পরিবার এবং অন্যান্য লোকেদের মধ্যে খাবার ভাগ করে নিলাম। এখন মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। আমি প্রত্যেকের জন্য আরও খাবার, পানি, টয়লেট পেপার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে শুরু করেছি। 

ওই রাতে আমরা আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের সবাইকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছি যে, তারা নিরাপদে রয়েছে কি না। আমার স্ত্রী এবং ছেলে আমাদের বেডরুমে শুয়েছিল, এবং আমি আমার ছেলের ঘরে শুয়েছিলাম। আমরা ছেলের ঘরের কাছেই সাইরেন ছিল। আমি যে এটি শুনছিলাম সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি ঘুমানোর সময় জানালা খোলা রেখেছিলাম। ঠিক আছে, কিন্তু আপনি এটিকে সত্যিই ঘুম বলতে পারবেন না। কারণ, তখন আপনি শুধু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। আপনি নথি এবং খাবারসহ একটি ব্যাগের পাশে ঘুমের পোশাক পরে ঘুমাচ্ছেন। এখানে সবাই ক্লান্ত। 

২৮ ফেব্রুয়ারি
সোমবার শহরের কয়েকটি বড় দোকান কয়েক ঘণ্টা খোলা ছিল। আমি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলাম। একা গিয়েছিলাম। তবে আমার স্ত্রীর ফোনে সংযুক্ত ছিলাম, যাতে ক্রমাগত আমার ফোন থেকে আমার অবস্থান ট্র্যাক করতে পারে। 

প্রতিবারই পরিচয়পত্র পরীক্ষার জন্য একটি রাস্তার মোড়ে আমাকে থামানো হয়েছিল। আমি আমাদের সেনাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনাদের কী দরকার?’ আমি তাদের জন্য সিগারেট এবং পানি এনেছিলাম। এই লোকেদের আমি ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাদের রক্ষা করছেন, ইউক্রেনকে রক্ষা করছেন। ঠান্ডায় বাইরে ঘুম ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছেন। 

রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেন ছোট এবং আমাদের সেনাবাহিনী অনেক ছোট। তবে এখানকার মানুষের সাহস বেশি। তারা দেখিয়েছে যে, তারা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত দেশকে রক্ষা করতে প্রস্তুত। এটি আমার আশা জোগাচ্ছে। 

ইউক্রেনের শরণার্থী১ মার্চ
মঙ্গলবার আমি যখন গ্যাস নিয়ে ফিরছিলাম, তখন আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করে। সে আমাকে বলে, আমরা হলোকাস্ট মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স থেকে ধোঁয়া আসতে দেখেছি। আমি এ খবর শুনে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ি। কারণ, আমি ইহুদি। আমার বাবার বয়স ৮৩। তিনি হলোকাস্ট থেকে বেঁচে গেছেন। ওই ঘটনায় আমার পরিবারের অর্ধেক সদস্যই মারা যান। আমরা প্রায়ই স্মৃতিসৌধে যেতাম কারণ, আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলে ইতিহাস জানুক। 

আমার বাবার বোমা থেকে বাঁচার জন্য মাঠ পেরিয়ে দৌড়ানোর স্মৃতি রয়েছে। এখন আমার ছেলেরও এমন স্মৃতি হবে। তবে এবার হিটলার নয়, এবার মারছে পুতিন। আমি সম্পূর্ণ হতবাক এবং বিষণ্ন। এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, ইউক্রেনে আমাদের প্রেসিডেন্ট একজন ইহুদি। আমরা সবাই আমাদের প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করি। আমরা তাঁকে নিয়ে খুব গর্বিত। 

আমি রাশিয়ার লোকদের চিনি। তাদের অর্ধেকই আর আমার বন্ধু নয়। তাদের মধ্যে অনেকেই আমাকে বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমাদের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আমি তাদের ব্লক করে দিয়েছি। তারা যে ফালতু লেখা লিখছে, তা আমি পড়তে চাই না। রাশিয়ার টিভি চ্যানেল তাদের মস্তিষ্ক ধুয়ে দিয়েছে। যেমন, এক বন্ধু আমাকে বলেছিল, ‘এটি টিভি নয়, এটি বিকিরণ।’ 

২ মার্চ
বুধবার রুশ সেনারা আমাদের বলে যে, কিয়েভ ছেড়ে গেলে ভালো হয়। আমি আর আমার স্ত্রী তখনো যাব কি না, ভাবছিলাম। আমাদের দুটি বিষয় আটকাচ্ছিল। প্রথমটি হলো—আমার স্ত্রীর বাবা-মা চেরনিহাইভে আছেন। আমরা তাদের সেই নরক থেকে বের করে আনার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিলাম, যাতে তারা আমাদের সঙ্গে আসতে পারে। দ্বিতীয়ত, আমি এখনো এখানে লোকেদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। 

আমি খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ। তারা যদি আমার বাড়িতে আসে তবে আমার লড়াই করার একমাত্র উপায়—আমি আমার পরিবারকে রক্ষা করব। যারা আমাদের রক্ষা করে এবং যাদের সাহায্যের প্রয়োজন, তাদের সাহায্য করার জন্য আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলাম। 

আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, যদি আমাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে যেতে আমরা যদি পশ্চিম ইউরোপে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে আমাদের আলাদা পোশাক দরকার। সেখানে স্কিইং জ্যাকেট এবং শীতের জামাকাপড় লাগবে না। এগুলো আমরা প্রথম দিনে প্যাক করেছিলাম। লিফটটি অকেজো থাকায় আমাকে এক এক করে ১৪ তলায় সিঁড়ি বেয়ে চারটি স্যুটকেস নিয়ে যেতে হয়েছিল। 

৩ মার্চ
আমরা অবশেষে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি স্নায়ুচাপে পীড়িত ছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার (ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট) ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে (রুশ প্রেসিডেন্ট) ভ্লাদিমির পুতিনের কথোপকথনের পর এবং সমস্ত ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে শুনে আমরা এখন বুঝতে পেরেছি যে, তিনি এই সমস্ত দেশকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত থামবেন না। আমরা পুতিনের রাশিয়ায় থাকতে প্রস্তুত নই।

তবে সিদ্ধান্তটি বিশেষত আমার ছেলে এবং স্ত্রীর সুরক্ষার জন্য নেওয়া। আমরা তাকে আর যুদ্ধ দেখতে দিতে চাই না। আর চাই না যে, সে বোমা ও গোলার শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠুক। তার নানা-নানিকে ছাড়া চলে যাওয়ায় তিনি খুব দুঃখিত ছিলেন। আমরা তাদের ছেড়ে যেতে চাইনি, তবে আমার ছেলের যত্ন নেওয়া দরকার। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন ইয়াসিন আরাফাত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার পক্ষে খেলবেন ইউক্রেনীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোফিয়ার, বাতিল হচ্ছে সব পুরস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।

গত বছর রোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় অ্যাকুয়াটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার সিঙ্ক্রো ইভেন্টে সোনা জেতেন ইউক্রেনীয় ডাইভার সোফিয়া লাইসকুন (২৩)। তবে সম্প্রতি আকস্মিকভাবে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য দেখানোর পর তাঁকে চরম শাস্তির মুখে পড়তে হলো। ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশন (ইউডিএফ) ফেডারেশনের অধীনে পাওয়া তাঁর সমস্ত খেতাব, পদক ও পুরস্কার প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

ইউডিএফ জানিয়েছে, লাইসকুন দেশের ক্রীড়া মহলের কোনো পক্ষকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ দলবদলের বিষয়ে ফেডারেশন, কোচিং স্টাফ এমনকি ইউক্রেনের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেও অবগত করেননি। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত দলবদলের ঘটনায় ফেডারেশন ‘তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা’ জানিয়েছে।

ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে: ‘এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্যই নয়, এগুলো জাতীয় দল এবং ইউক্রেনের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। যে মুহূর্তে পুরো ইউক্রেনীয় দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারের জন্য নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করছে, ঠিক তখনই একজন চ্যাম্পিয়নের এমন পদক্ষেপ পুরো প্রচেষ্টাকেই হেয় করে।’

ইউক্রেনীয় ফেডারেশনের এই সমালোচনার বিপরীতে লাইসকুন তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। রাশিয়ার সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেনে তিনি তাঁর কোচদের অধীনে আর পেশাদারভাবে ‘উন্নতি’ করতে পারছিলেন না।

লাইসকুন অভিযোগ করেন, তাঁর ইউক্রেনীয় কোচিং স্টাফে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ‘সবাই জিমন্যাস্ট বা ট্রাম্পোলিন ক্রীড়াবিদ ছিলেন’, এটি আন্তর্জাতিক ডাইভিং-এর মতো বিশেষায়িত খেলার জন্য অনুকূল ছিল না। তাঁর মতে, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের অভাবই তাঁকে দলবদলে উৎসাহিত করেছে।

লাইসকুনের দলবদলের পর ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির এক জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ইউক্রেন জাতীয় দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি, ফেডারেশনের অধীনে সোফিয়া লাইসকুনের অর্জিত সমস্ত খেতাব ও পুরস্কার বাতিল করার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফেডারেশন জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবে, যাতে বর্তমান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই ক্রীড়াবিদের ওপর ‘স্পোর্টস কোয়ারেন্টাইন’ আরোপ করা হয়। এর অর্থ হলো, ইউক্রেন চাচ্ছে, লাইসকুন যেন কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর রাশিয়া এবং বেলারুশের ক্রীড়াবিদদের ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিক্স ইভেন্টগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ ছিল। তবে সেই বিধিনিষেধগুলো সম্প্রতি শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে রুশ এবং বেলারুশীয় ক্রীড়াবিদদের তাঁদের জাতীয় পতাকা বা প্রতীক ছাড়াই নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকে তাঁরা দলগত ইভেন্টেও নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশ নিতে পারবেন। লাইসকুন-এর এই দলবদল এমন এক সময়ে ঘটল, যখন রাশিয়ার ক্রীড়াবিদেরা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন বাহিনীর প্রধান হয়েই পাকিস্তানকে ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছানোর ঘোষণা আসিম মুনিরের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৬
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছেন, পাকিস্তান এখন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় আওয়াইন-ই-সদরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

আসিম মুনির বলেন, ‘সবই তো ঠিক আছে, আপনাদের চোখের সামনেই তো সব। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, আর এখন থেকে পাকিস্তান আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।’ তাঁর এই মন্তব্য এল ঠিক এমন এক সময়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি নোট প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির কাছে পাঠিয়েছিলেন। তাতে সেনাপ্রধান মুনিরকে পাকিস্তানের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসেবে নিয়োগ করার সুপারিশ করা হয়। এরপরই প্রেসিডেন্ট এই অনুমোদন দেন।

সত্তরের দশকের পর দেশটির সামরিক কমান্ডে এটি হলো সবচেয়ে বড় ও ব্যাপক পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এই নিয়োগে অনুমোদন দেন। খবর দ্য ডনের

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে পাঁচ বছরের জন্য সেনাপ্রধানের (সিওএএস) সঙ্গে সমান্তরালভাবে সিডিএফ হিসেবেও নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন।’ এই বিবৃতি বহুদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাল। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজই প্রেসিডেন্টকে এই নতুন দ্বৈত দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে সেনাবাহিনীর প্রধান এবং চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবে নিয়োগের সারসংক্ষেপ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।’

এই নতুন ব্যবস্থা পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীতে ২৪৩ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে একটি অফিসের অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল, প্রশাসনিক ও কৌশলগত ক্ষমতাকে একত্র করা হয়েছে। সংশোধিত ২৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করবেন, যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবেও কাজ করবেন।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৬ সাল থেকে চালু থাকা তিন বাহিনীর সমন্বয় ব্যবস্থা—চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) অফিস বিলুপ্ত করা হয়। এর ফলে যৌথ কমান্ডের ইন্টিগ্রেশন সিডিএফের হাতে চলে এল।

সাংবিধানিক এই আমূল পরিবর্তনকে সামরিক বাহিনীর আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য সরকার ২৭তম সংশোধনীর পরপরই ১৯৫২ সালের পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টেও (পিএএ) সংশোধন আনে। পিএএর ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (১) এখন জানাচ্ছে, ‘প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর প্রধান যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হবেন [...], তাঁর মেয়াদ এই ধারার অধীনে ওই পদের বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে শুরু হবে।’

আরও বলা হয়েছে, এই প্রথম সিওএএসসহ-সিডিএফের বিজ্ঞপ্তি জারি হলে ‘বর্তমান সেনাপ্রধানের বিদ্যমান মেয়াদ ওই বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে বলে গণ্য হবে।’ ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (৩) অনুযায়ী, সিওএএস যিনি একই সঙ্গে সিডিএফেরও দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর ‘শর্তাবলি ও নিয়ম’ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট স্থির করবেন।

ফিল্ড মার্শাল মুনির ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর ১৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সরকার পিএএ-তে পরিবর্তন আনে, যেখানে সিজেসিএসসির মেয়াদ তিন বছর অপরিবর্তিত রেখে বাকি তিন বাহিনীর প্রধানদের মেয়াদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়। একই সংশোধনীতে সার্ভিস চিফদের পুনর্নিয়োগ বা তাঁদের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়, যা আগে সর্বোচ্চ তিন বছর ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ায় ইউরোভিশন বয়কট ৪ দেশের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউরোভিশনে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি গায়িকা ইউভাল রাফায়েল। ছবি: এএফপি
ইউরোভিশনে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি গায়িকা ইউভাল রাফায়েল। ছবি: এএফপি

আগামী বছরের অর্থাৎ, ২০২৬ সালের ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা বয়কট করবে আয়ারল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও স্লোভেনিয়া। কারণ আয়োজকেরা ইসরায়েলকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দিয়েছে। দেশগুলোর অভিযোগ, গাজায় গণহত্যা চালানো ইসরায়েলকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া ঠিক হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধ এবং নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে এসব দেশ ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার দাবি করেছিল। জেনেভায় এক বৈঠকে গোপন ভোটের দাবি তোলে স্পেনের সম্প্রচার সংস্থা আরটিভিই। তারা জানায়, আয়োজনকারীরা সেই দাবি মানেনি। এতে উৎসবের প্রতি তাদের অবিশ্বাস আরও বেড়েছে।

আয়ারল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম আরটিই জানায়, গাজার ভয়াবহ প্রাণহানি এবং চলমান মানবিক সংকটের সময়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। স্পেন ইউরোভিশনের ‘বিগ ফাইভ’ দেশের একটি। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে স্পেনের শিল্পীরা সরাসরি ফাইনালে ওঠে। কারণ এসব দেশের সম্প্রচার সংস্থা ইবিইউকে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রায় ৫০টি সম্প্রচার সংস্থা—যার মধ্যে বিবিসিও আছে—ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নের (ইবিইউ) বৈঠকে যোগ দেয়। প্রতিবছর ১৫ কোটির বেশি দর্শক এই প্রতিযোগিতা দেখে, তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। ইসরায়েল তাদের অংশগ্রহণকারী ইউভাল রাফায়েলের পক্ষে ভোট বাড়াতে অন্যদের সাহায্য নিয়েছে, এমন অভিযোগের পর সরকার ও তৃতীয় পক্ষের প্রভাব ঠেকাতে নতুন নিয়মে সম্মতি চাইছিল ইবিইউ।

বিবিসি জানায়, এই নিয়ম মানার ভোটের সঙ্গে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। সদস্যরা রাজি হলে ইসরায়েলকে নিয়ে আর কোনো ভোট হবে না। ইবিইউ জানায়, যারা নতুন নিয়ম মানতে সম্মত, তারা ইউরোভিশন ২০২৬-এ অংশ নিতে পারবে। ইউরোভিশন পরিচালক মার্টিন গ্রিন বলেন, সদস্যরা ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিয়ে খোলামেলা বিতর্কের সুযোগ পেয়েছে। ভোটে দেখা গেছে, অধিকাংশই চায় এই প্রতিযোগিতা রাজনৈতিক মঞ্চ না হোক, নিরপেক্ষতা বজায় থাকুক।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এটি সংহতি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতীক। ইসরায়েল বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার যোগ্য। ইসরায়েলের সম্প্রচার সংস্থা কান–এর প্রধান গলান ইয়োখপাজ বলেন, ইসরায়েলকে সরাতে চাওয়া সংস্কৃতিগত বয়কট ছাড়া কিছু নয়। আজ বয়কট শুরু হলে কাল অন্যদেরও ক্ষতি হতে পারে। ইউরোভিশনের ৭০ তম বছরে কি এমন স্মৃতি আমরা চাই?

যুক্তরাজ্যে ইউরোভিশন দেখায় বিবিসি। তারা জানায়, ইবিইউর নিয়ম কার্যকরে তারা সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। তবে এই সিদ্ধান্ত ইউরোভিশন সম্প্রদায়ের ভেতর বড় বিভাজন তৈরি করেছে। ডাচ সম্প্রচার সংস্থা অ্যাভরোট্রস জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণ তাদের মূল মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না।

স্পেনের আরটিভিই জানায়, গত সেপ্টেম্বরেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল—ইসরায়েল থাকলে স্পেন ইউরোভিশন থেকে সরে দাঁড়াবে। এই কারণে ২০২৬ সালের ফাইনাল ও সেমিফাইনাল তারা সম্প্রচারও করবে না। স্লোভেনিয়ার আরটিভিও জানায়, তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত। নিয়ম বদলালেও মত বদলায়নি। ন্যায়নীতি রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। বেলজিয়ামের সম্প্রচার সংস্থা বলেছে, তারা কয়েক দিনের মধ্যে অবস্থান জানাবে।

অন্যদিকে নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ডসহ নর্ডিক দেশগুলো নিয়ম সংশোধনকে সমর্থন করেছে। তবে আইসল্যান্ড এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। জার্মানি, যারা আগে বলেছিল ইসরায়েল বাদ গেলে তারাও সরে দাঁড়াবে, সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের সংস্থা এআরডি জানায়, তারা পরের বছর অংশ নিতে আগ্রহী এবং বৈচিত্র্য ও সংহতির উৎসব হিসেবে এটিকে দেখে। তবে যারা সরে দাঁড়িয়েছে, তাদের সিদ্ধান্তকে তারা সম্মান করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুবই সাধারণ খাবার খান পুতিন, দেশে-বিদেশে খাদ্যতালিকায় যা থাকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে যখন ভ্লাদিমির পুতিনের ৪-৫ ডিসেম্বরের রাষ্ট্রীয় সফর ও ২৩ তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তখন কূটনৈতিক আলোচনার বাইরেও একটি বিষয় নজর কেড়েছে—রুশ প্রেসিডেন্টের খাবার সংক্রান্ত অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্য বিশ্বনেতাদের মতো তিনিও আনুষ্ঠানিক ভোজসভায় অংশ নেন, তবে তাঁর খাবার সবচেয়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

পুতিন হোটেল বা আয়োজক দেশের কর্মীদের তৈরি খাবার গ্রহণ করেন না। তাঁর খাবারের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করা হয়।

বিদেশ সফরে পুতিনের খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রায় সামরিক নির্ভুলতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কঠোরতার মূল কারণ হলো নিরাপত্তা—বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্য বিষক্রিয়া বা গুপ্তহত্যার চেষ্টা এড়াতে এই ব্যবস্থা অপরিহার্য। পুতিনের জন্য খাবার পরিবেশনের আগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়:

বিশেষ শেফ ও লজিস্টিকস: প্রশিক্ষিত রুশ শেফ, পুষ্টিবিদ এবং সহযোগী কর্মীরা তাঁর সঙ্গে ফ্লাইটে আসেন। তাঁরাই বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত রান্নাঘরে পুতিনের খাবার তৈরি করেন।

মোবাইল পরীক্ষাগার: তিনি ভ্রমণের সময় একটি অত্যাধুনিক মোবাইল খাদ্য পরীক্ষাগারও সঙ্গে রাখেন। এই ল্যাব পরিবেশনের আগে প্রতিটি খাদ্য এবং পানীয়ের উপাদান দ্রুত পরীক্ষা করে সম্ভাব্য বিষ বা ক্ষতিকারক বস্তুর উপস্থিতি যাচাই করে।

নিয়ন্ত্রিত উপাদান: খাবারের উপাদান হয় সরাসরি রাশিয়া থেকে আনা হয়, নতুবা আয়োজক দেশে দীর্ঘ পরীক্ষার মাধ্যমে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। শুধু অনুমোদিত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা উপাদানই তাঁর রান্নাঘরে প্রবেশাধিকার পায়।

বিশেষ পরিবেশন: আনুষ্ঠানিক ভোজসভার ক্ষেত্রেও এই সতর্কতা বজায় থাকে। যদিও তিনি উপস্থিত থাকেন, কিন্তু সাধারণত তাঁর প্লেটে পরিবেশিত খাবারটি নিজস্ব শেফদের দ্বারা পৃথকভাবে প্রস্তুতকৃত হয়। খাদ্য পরিবেশনের আগে প্রশিক্ষিত পরীক্ষকদের দ্বারা চূড়ান্ত যাচাই করা হয়। এই প্রক্রিয়া মস্কো এবং বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা হয়।

পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস

খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে এত কড়াকড়ি থাকলেও, পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা কিন্তু বেশ সাধারণ। তাঁর জীবনযাপনও সুশৃঙ্খল। তিনি জমকালো ভোজের পরিবর্তে পুষ্টিকর ও সহজলভ্য খাবার পছন্দ করেন।

সকালের নাশতা: তাঁর সকাল শুরু হয় উচ্চ-প্রোটিন এবং কম-চিনিযুক্ত খাবার দিয়ে। সাধারণত মধুসহ ভরোগ (Tvorog, রুশ কটেজ চিজ) অথবা পরিজ (স্টার্চ ও পানি বা দুধ সহযোগে তৈরি) প্রধান খাদ্য। এ ছাড়া তিনি তাজা ফলের রস এবং মাঝে মাঝে কাঁচা কোয়েলের ডিম বা অমলেট গ্রহণ করেন। তাঁর খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত মিষ্টি বা চর্বিযুক্ত খাবারের স্থান নেই।

দুপুরের ও রাতের খাবার: পুতিন লাল মাংসের চেয়ে মাছ বেশি পছন্দ করেন, বিশেষত গ্রিলড বা স্মোকড মাছের পদ। ভেড়ার মাংসও তাঁর প্রিয়। তবে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত রান্না তিনি এড়িয়ে চলেন। তাঁর বেশির ভাগ খাবারেই টমেটো, শসা এবং অন্যান্য সাধারণ সবজির সালাদ বাধ্যতামূলক। এই সবজিগুলো ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান দেয়।

পানীয় ও ডেজার্ট: পুতিন মিষ্টি বেক করা সামগ্রী, কেক বা বাটারি পেস্ট্রি একদম পছন্দ করেন না। পানীয়ের ক্ষেত্রে তাজা জুস, সাধারণ ভেষজ পানীয় এবং কেফির (এক প্রকার ফার্মেন্টেড দুগ্ধজাত পানীয়) পান করেন। তবে তাঁর সুশৃঙ্খল রুটিনের মাঝেও একটি ছোট দুর্বলতা রয়েছে—তা হলো পেস্তা আইসক্রিম!

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুতিনের এই খাদ্যাভ্যাস তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ: সংযত, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ঐতিহ্যমুখী। পুষ্টি, প্রোটিন এবং সহজলভ্যতা ওপর তাঁর এই জোর, তাঁর দীর্ঘ ও অনিয়মিত কর্মঘণ্টার জন্য প্রয়োজনীয় স্থিতিশীল ক্যালরির জোগান নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত