Ajker Patrika

সান্তোরিনি দ্বীপে ভূমিকম্পের আশঙ্কা, দ্বীপ ছাড়ছে হাজারো মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
সাদা-নীল বাড়িঘরের জন্য বিশ্বখ্যাত সান্তোরিনি দ্বীপ। ছবি: এএফপি
সাদা-নীল বাড়িঘরের জন্য বিশ্বখ্যাত সান্তোরিনি দ্বীপ। ছবি: এএফপি

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা সান্তোরিনি দ্বীপে একের পর এক ভূমিকম্পের ঘটনায় দ্বীপ ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে সেখানকার হাজার হাজার বাসিন্দা। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত রোববার থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার মানুষ ফেরিতে দ্বীপ ছেড়েছে। এ ছাড়া আজ মঙ্গলবারও জরুরি ফ্লাইটে বহু মানুষ দ্বীপ ছাড়ছে।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৪৮ ঘণ্টায় সান্তোরিনির আশপাশে ৩০০টির বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কম্পন আরও কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দ্বীপের স্কুলগুলো এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করাসহ জনসমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার ভোরে সান্তোরিনির উত্তর-পূর্ব অংশে ৪ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। যদিও এখনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি, তবে প্রশাসন জরুরি সতর্কতা অবলম্বন করছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ ভোরের দিকে দ্বীপের শত শত মানুষ ফেরিতে মূল ভূখণ্ডে চলে যায়।

স্থানীয় এক তরুণ বাসিন্দা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে আর কেউ নেই। পুরো দ্বীপ খালি হয়ে যাচ্ছে।’

এজিয়ান এয়ারলাইনস জানিয়েছে, সোমবার ও মঙ্গলবার মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ যাত্রী সান্তোরিনি থেকে এথেন্সে চলে গেছে। গ্রিসের জলবায়ু সংকট ও নাগরিক সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে তিনটি জরুরি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সান্তোরিনির মেয়র নিকোস জর্জোস জানিয়েছেন, দ্বীপটি দীর্ঘস্থায়ী ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত। তিনি জনগণকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তিনি জানান, যদি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়, তাহলে দ্বীপে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি ও খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা থাকবে।

দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগ্নেয়গিরির কারণে এই ভূমিকম্প নয়; মূলত টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার ফলে এমনটা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ভূমিকম্পের প্রকৃত সময়, মাত্রা বা অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়।

তবে ভূমিধসের আশঙ্কা থাকায় আমৌদি, আরমেনি ও ফিরার পুরোনো বন্দর এলাকা থেকে সাধারণ জনগণকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গ্রিসের দক্ষিণ এজিয়ান অঞ্চলের ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং দ্বীপে উদ্ধারকারী দল মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি মেডিকেল টিমও রয়েছে, যাতে প্রয়োজনে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া যায়।

সান্তোরিনি দ্বীপ সাদা-নীল বাড়িঘরের জন্য বিশ্বখ্যাত। এটি আগ্নেয়গিরির দ্বীপগুলোর মধ্যে অবস্থিত, যা হেলেনিক ভলকানিক আর্ক নামে পরিচিত। দ্বীপটিতে সর্বশেষ বড় ধরনের অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল ১৯৫০-এর দশকে।

গ্রিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমান ভূমিকম্পগুলোর উৎপত্তি সান্তোরিনির উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপ আনিদ্রোসের আশপাশ থেকে।

বিশ্বের কিছু অঞ্চলে ভূমিকম্প বেশি হয় এবং এসব অঞ্চলের সরকার সাধারণত পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে থাকে। তবে বিজ্ঞানীরা এখনো নির্ভুলভাবে ভূমিকম্পের সময়, মাত্রা ও অবস্থান নির্ধারণ করতে পারেন না। তাই ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ করা এবং প্রয়োজন হলে জনগণকে সরিয়ে নেওয়াই সবচেয়ে কার্যকর উপায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সাধারণত টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়ার ফলে ভূমিকম্প হয়। প্লেটের নড়াচড়ার ফলে এর সীমানা বরাবর বা তার কাছাকাছি অঞ্চলে চাপ সৃষ্টি হয় এবং এর থেকে ভূমিকম্প হয়। সান্তোরিনি ও গ্রিক দ্বীপপুঞ্জ এমন একটি সীমানার কাছাকাছি অবস্থিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত