Ajker Patrika

মিয়ানমারের খনিজ পেতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনায় ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়ানমারে বিরল খনিজের খনি। ছবি: ডয়েচে ভেলে
মিয়ানমারে বিরল খনিজের খনি। ছবি: ডয়েচে ভেলে

ভারত মিয়ানমারের শক্তিশালী এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সহায়তায় দেশটি থেকে বিরল খনিজ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে অবগত চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চীনের কড়া নিয়ন্ত্রণে থাকা এ কৌশলগত সম্পদের বিকল্প উৎস খুঁজছে দিল্লি। ভারতের খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খনিগুলো থেকে বিরল খনিজের নমুনা সংগ্রহ ও পরিবহনের উদ্যোগ নিতে বলেছে। অপর তিনটি সূত্র জানিয়েছে, এসব খনি মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মির (কেআইএ) নিয়ন্ত্রণে।

খবরে বলা হয়েছে, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইআরইএল ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিডওয়েস্ট অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস কেআইএ—এর সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছিল বলে জানান ওই তিন সূত্র। মিডওয়েস্ট অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস গত বছর বিরল খনিজ চুম্বক বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য ভারত সরকারের তহবিল পেয়েছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আশা করছে—নমুনাগুলো দেশে এনে পরীক্ষা করে দেখা হবে, সেগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে ভারী বিরল খনিজ আছে কি না। কাচিনে ভারতীয় কোম্পানিগুলো যেসব খনিজের নমুনা সংগ্রহ করেছে সেগুলো সাধারণত বৈদ্যুতিক যানবাহন ও উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির জন্য চুম্বক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

দুটি সূত্রের দাবি, ভারতের খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গত জুলাইয়ে এই অনুরোধ জানায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে। সে সময় এক অনলাইন বৈঠকে আইআরইএল, মিডওয়েস্ট ও অন্তত আরও একটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কাচিন আর্মির এক কর্মকর্তা জানান, ভারতীয়দের বিশ্লেষণ করতে দেওয়ার জন্য নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে বিদ্রোহীরা। তারা ভারতে খনিজের ব্যাপক রপ্তানি সম্ভব কি না, তা মূল্যায়ন করতেও রাজি হয়েছে।

কেআইএ-এর সঙ্গে ভারতের এই যোগাযোগের খবর প্রথমবারের মতো প্রকাশ করল রয়টার্স। ভারতের পররাষ্ট্র ও খনিজ মন্ত্রণালয় রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি। আইআরইএল ও মিডওয়েস্টের পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কেআইএ-র মুখপাত্র ফোন ও বার্তায় সাড়া দেননি।

বিরল খনিজ তুলনামূলক প্রচুর থাকলেও এগুলোকে চুম্বকে রূপান্তরের প্রযুক্তি প্রায় পুরোপুরি চীনের নিয়ন্ত্রণে। চীন এ বছর ভারতসহ বড় বড় অর্থনীতির কাছে প্রক্রিয়াজাত খনিজ রপ্তানি কড়াভাবে সীমিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে কৌশলগত চাপ বজায় রাখতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সরবরাহ নিশ্চিত করতে দিল্লি সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ৩১ আগস্ট জানান, চীনে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং-এর সঙ্গে বৈঠকে তিনি বিরল খনিজ খনন নিয়ে আলোচনা করেছেন। হ্লাইং-এর সেনারা বর্তমানে কেআইএ-এর সঙ্গে কাচিনের নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই করছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। তবে এই বিষয়ে কোনো চুক্তি প্রকাশ্যে ঘোষণা হয়নি এবং মিয়ানমার সেনা সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য আসেনি।

শিল্পোৎপাদন পর্যায়ে বিরল খনিজকে উচ্চমানের বিশুদ্ধতায় প্রক্রিয়াকরণে ভারতের সক্ষমতা এখনো অত্যন্ত সীমিত। আইআরইএল জাপানি ও কোরিয়ান কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারত্ব খুঁজছে বিরল খনিজ চুম্বক বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য।

কেআইএ-র সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আলোচনায় জড়িত এক ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজে ভারতের আগ্রহ গোপন কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বব্যাপী সম্ভাব্য সরবরাহকারীদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সহযোগিতার মাধ্যমে বিরল খনিজ নিশ্চিত করার পক্ষে।’ তবে সরাসরি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগের প্রসঙ্গে কিছু বলেননি।

রয়টার্স আগে জানিয়েছিল, গত ডিসেম্বরে আইআরইএল-এর একটি দল মিয়ানমারের কাচিনে গিয়ে খনিজসম্পদ প্রাপ্যতার বিষয়টি যাচাই করেছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনও মিয়ানমারের বিরল খনিজ আহরণের প্রস্তাব পেয়েছিল, যার মধ্যে ভারতের সহযোগিতার প্রস্তাবও ছিল।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিশ্লেষক অংশুমান চৌধুরী জানান, চীনের কেআইএ-এর সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে এবং কেআইএ চীনকেও খনিজ সরবরাহ করে। তিনি বলেন, ‘যদি চীন বিরল খনিজ নিশ্চিত করতে কেআইএ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে, তবে ভারত কেন পিছিয়ে থাকবে? প্রতিযোগিতার বাস্তবতাই এ যোগাযোগকে ব্যাখ্যা করে।’

রয়টার্সকে দেওয়া এক প্রশ্নে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, বেইজিং জানে না কেআইএ ভারতের সঙ্গে কাজ করছে কি না। তবে তিনি বলেন, ‘উত্তর মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চীনের গঠনমূলক ভূমিকাকে প্রশংসা ও ধন্যবাদ জানায়।’

কেআইএ ১৯৬১ সালে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু কাচিন জনগোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত হয়। ধীরে ধীরে এটি দেশের অন্যতম শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করার পর দেশজুড়ে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় কেআইএ চীন-সমর্থিত জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মূল স্তম্ভে পরিণত হয়।

গত বছর কেআইএ জান্তাপন্থী বাহিনীর কাছ থেকে কাচিন অঙ্গরাজ্যের চিপওয়ে-পাংওয়া খনি এলাকা দখল করে, যা বিশ্বে ভারী বিরল খনিজ—ডিসপ্রোসিয়াম ও টার্বিয়ামের—বৃহত্তম সরবরাহকারী। যদিও কেআইএ চীনকে এসব খনিজের সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছে, তবু তাদের সম্পর্ক অচলাবস্থায় পড়েছে জান্তা সেনাদের সঙ্গে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভামো শহরের লড়াই নিয়ে।

চীন জান্তাকে নিজের প্রভাব বলয়ে স্থিতিশীলতার রক্ষক হিসেবে দেখে এবং কেআইএ-কে পিছিয়ে আসার চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে, কেআইএ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। দিল্লির কর্মকর্তারা কেআইএ-এর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে বিরল খনিজ সরবরাহপথ তৈরি করতে আগ্রহী। তবে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের কারণে বিপুল পরিমাণ খনিজ ভারতে আনা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ আছে বলে জানান দুই সূত্র।

খনিজ চীনে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী সড়কপথে। আলোচনায় আইআরইএল জড়িত থাকলেও পরিবহনের দায়ভার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর দেওয়া হোক, এমনটাই চায় সংস্থাটি বলে জানিয়েছেন অবগত তিনটি সূত্র। তবে ভারত ও কেআইএ খনিজ সরবরাহে সমঝোতায় এলেও চীনের সাহায্য ছাড়া সেগুলো প্রক্রিয়াকরণ বড় চ্যালেঞ্জ হবে, জানান বেলজিয়ামভিত্তিক খনিজ বিশেষজ্ঞ নাবিল মানচেরি।

তিনি বলেন, ‘তাত্ত্বিকভাবে ভারত এ খনিজ পেলে তা আলাদা করে ব্যবহারযোগ্য পণ্য তৈরি করতে পারবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে উল্লেখযোগ্য সরবরাহ দিতে এ উৎপাদন সক্ষমতায় পৌঁছাতে সময় লাগবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জার্মানিতে হলিউড স্টাইলে ডাকাতি, ব্যাংকের ভল্ট কেটে ৩ কোটি ইউরো লুট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা। ছবি: গেলসেনকির্শেন পুলিশ
ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা। ছবি: গেলসেনকির্শেন পুলিশ

হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা-সিরিজে হরহামেশাই ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তেমন হওয়াটা অসম্ভব মনে হলেও এমন সিনেমাটিক স্টাইলে ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে জার্মানির এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায়। ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা।

পশ্চিম জার্মানির গেলসেনকির্শেন শহরের স্পারকাসে সেভিংস ব্যাংকে এ ঘটনা ঘটেছে। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বড় ড্রিল ব্যবহার করে আনুমানিক ৩ কোটি ইউরো (৪৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা) নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এই ঘটনাকে ডাকাতির কাহিনিনির্ভর হলিউডের সিনেমা ‘ওশানস ইলেভেন’-এর সঙ্গে তুলনা করে এএফপি বার্তা সংস্থাকে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটি অত্যন্ত পেশাদারভাবে করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই ডাকাতির সময় অর্থ, স্বর্ণ ও গহনা রাখা ৩ হাজারেরও বেশি সেফ ডিপোজিট বক্স ভেঙে ফেলা হয়েছে।

গেলসেনকির্শেন পুলিশ জানায়, গত সোমবার ভোররাতে ফায়ার অ্যালার্ম সক্রিয় হলে তারা ঘটনার বিষয়ে জানতে পারে। তখন ক্রিসমাসের ছুটি চলছিল। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বুয়ের জেলায় নিয়েনহোফস্ট্রাসে অবস্থিত ওই ভবনে ডাকাতি চালায়।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তারা পাশের একটি পার্কিং গ্যারেজ ব্যবহার করে ব্যাংকে ঢোকে এবং সেখান দিয়েই পালিয়ে যায়।

তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বিবিসি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত শনিবার রাত থেকে গত রোববার ভোর পর্যন্ত ওই ভবনটির গ্যারেজের সিঁড়িঘরে কয়েকজন পুরুষকে বড় বড় ব্যাগ বহন করতে দেখা গেছে।

পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজে সোমবার ভোরে ডে-লা-শেভালারি-স্ট্রাসে অবস্থিত গ্যারেজ থেকে একটি কালো অডি আরএস ৬ গাড়িকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। সোমবার ভোররাতে একটি ফায়ার-অ্যালার্ম বাজলে ভূগর্ভস্থ ভল্ট রুমে ঢোকার জন্য করা গর্তটি ধরা পড়ে। এরপর পুলিশ ও দমকল বাহিনী ভবনটিতে তল্লাশি চালায়।

চুরির ঘটনায় ব্যাংকের শাখাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রাহকদের প্রায় ৯৫ শতাংশ সেফ ডিপোজিট বক্স খুলে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজা-পশ্চিম তীরের ৩৭ ত্রাণ সংস্থার লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করেছে ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।

বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যাকশনএইড, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এবং নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মতো পরিচিত আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (আইএনজিও) গুলোর লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করা হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যসহ ১০টি দেশ। তারা বলছে, নতুন নিয়মগুলো ‘অতিরিক্তভাবে কঠোর’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’।

এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রম জোরপূর্বক বন্ধ করে দিলে স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখনো ‘বিপর্যয়কর’ উল্লেখ করে তাঁরা ইসরায়েল সরকারকে আহ্বান জানান, যাতে এনজিওগুলো টেকসই এবং আগের মতো কাজ করতে পারে।

এদিকে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই পদক্ষেপগুলোর ফলে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহে কোনো প্রভাব পড়বে না। মন্ত্রণালয়টি জানায়, জাতিসংঘের সংস্থা, দ্বিপক্ষীয় অংশীদার এবং মানবিক সংগঠনসহ ‘অনুমোদিত ও যাচাইকৃত চ্যানেল’ দিয়ে সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।

তাদের দাবি, সহায়তা সংস্থাগুলোর লাইসেন্স বাতিলের প্রধান কারণ হলো, তাদের কর্মীদের বিষয়ে সম্পূর্ণ ও যাচাইযোগ্য তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো যা মানবিক কাঠামোয় ‘সন্ত্রাসী অপারেটিভদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইসরায়েল।

এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা বলেন, অক্টোবর মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় পুষ্টি ও খাদ্য সরবরাহে কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে পরের মাসেও প্রায় ১ লাখ মানুষ ‘চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মুখোমুখি ছিল।

তবে গাজার সীমান্ত ক্রসিংগুলো নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাত দাবি করেছে, যেসব সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করা হবে, তারা বর্তমান যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় কোনো সহায়তা আনেনি। সংস্থাটি আরও জানায়, অতীতেও তাদের সম্মিলিত অবদান মোট সহায়তার মাত্র প্রায় ১ শতাংশ ছিল।

ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশেরও কম নতুন নিয়ন্ত্রক কাঠামো লঙ্ঘন করেছে।

ওই নিয়ন্ত্রক কাঠামোতে লাইসেন্স বাতিলের একাধিক ভিত্তি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—

১. ইসরায়েলকে একটি ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার না করা

২. হলোকাস্ট বা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো হামলা অস্বীকার করা

৩. শত্রু রাষ্ট্র বা সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকে সমর্থন করা

৪. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অবৈধতা আরোপের প্রচারণা’ চালানো

৫. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান জানানো বা তাতে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করা

৬. বিদেশি বা আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাকে সমর্থন করা

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের সংস্থা এবং ২০০টিরও বেশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম আগেই সতর্ক করে বলেছিল, নতুন নিবন্ধন নীতিমালা গাজা ও পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রমকে মৌলিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

তাদের ভাষায়, ‘এই ব্যবস্থা অস্পষ্ট, খামখেয়ালি ও অত্যন্ত রাজনৈতিক মানদণ্ডের ওপর নির্ভরশীল এবং এমন সব শর্ত আরোপ করছে, যা মানবিক সংস্থাগুলোর পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন না করে বা মানবিক নীতির মূল ভিত্তি ক্ষুণ্ন না করে পূরণ করা সম্ভব নয়।’

হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিমের মতে, বর্তমানে গাজায় অধিকাংশ ফিল্ড হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা বা সহায়তা, জরুরি আশ্রয় কার্যক্রম, পানি ও স্যানিটেশন সেবা, তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য পুষ্টি স্থিতিশীলকরণ কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইন অপসারণ কার্যক্রম আইএনজিওগুলোর মাধ্যমেই পরিচালিত বা সমর্থিত হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক ও ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা বিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই চিকলি বলেন, ‘বার্তাটি স্পষ্ট: মানবিক সহায়তা স্বাগত কিন্তু সন্ত্রাসবাদের জন্য মানবিক কাঠামোর অপব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।’

কার্যক্রম স্থগিত হতে যাচ্ছে এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে কেয়ার, মেডিকো ইন্টারন্যাশনাল এবং মেডিক্যাল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইয়েমেন সংঘাতে মুখোমুখি অবস্থানে সৌদি ও আরব আমিরাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৬
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।

অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত