Ajker Patrika

শ্রীলঙ্কার পরিণতির ঝুঁকিতে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৪ দেশ, আইএমএফপ্রধানের সতর্কবার্তা

আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২২, ২০: ২৮
শ্রীলঙ্কার পরিণতির ঝুঁকিতে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৪ দেশ, আইএমএফপ্রধানের সতর্কবার্তা

শ্রীলঙ্কা ছাড়াও এশিয়ার কয়েকটি দেশ একই রকম সংকটে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল–আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, শ্রীলঙ্কার দশা হতে পারে লাওস, মালদ্বীপ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। 

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা গত শনিবার বিবিসিকে বলেন, ‘যেসব দেশের ঋণের পরিমাণ বেশি এবং নীতিনির্ধারণী সক্ষমতা কম সেসব দেশ অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়বে। সতর্কতা হিসেবে বলা যায় এই দেশগুলোর অবস্থা শ্রীলঙ্কার চেয়ে খুব একটা ভালো নয়।’

আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর পুঁজি টানা চার মাস ধরে একই হারে বাইরে চলে যাচ্ছে। এর ফলে, এই দেশগুলোর উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন ঝুঁকিতে পড়ছে।

শ্রীলঙ্কা বর্তমানে তার ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের জন্য জরুরি খাদ্যসামগ্রী, জ্বালানি এবং ওষুধ আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার ভয়াবহ সংকটে দেশটি। মূল্যস্ফীতি প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে, আগের বছরের তুলনায় খাদ্যের দাম ৮০ শতাংশ বেশি। মার্কিন ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কান রুপির বিনিময় হারে রেকর্ড পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক অন্যান্য মুদ্রার দরপতন। 

অনেকে এর জন্য পলাতক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের ভুল নীতিকে দোষ দিচ্ছেন। তাঁর সরকারের নীতির ব্যর্থতা প্রকাশ পায় কেবল করোনা মহামারির সময়। এর আগে বড় বড় প্রকল্প দেখিয়ে দেশবাসীকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল তাঁর সরকার। বহু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গত কয়েক বছরে শ্রীলঙ্কা অস্বাভাবিক বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে। গত মাসে দেশটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২০ বছরের মধ্যে প্রথম দেউলিয়া দেশে পরিণত হয়। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করার মতো অবস্থায় নেই সেটিও আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে।

কর্মকর্তারা অর্থনীতির উদ্ধার তহবিল হিসেবে আইএমএফের কাছ থেকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ পেতে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটের কারণে সেই আলোচনা স্থবির হয়ে গেছে। 

বিশ্বব্যাপী একই ধরনের সংকট—মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রার দরপতন, বিপুল ঋণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্য দেশগুলোকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। 

এসব উন্নয়নশীল দেশের অন্যতম ঋণদাতা দেশ চীন। ফলে এই সংকট মুহূর্তে তাদের ভাগ্য নিয়ন্তার অবস্থানেও চীনই রয়েছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। তবে এই ঋণ পুনর্গঠন বা ঋণের শর্ত পুনর্বিবেচনায় বেইজিং কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।

আইএমএফ জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কা চূড়ান্ত সংকটে পড়ার আগে যেসব লক্ষণ দেখা গিয়েছিল এসব দেশেও সেসব লক্ষণের অনেকগুলোই স্পষ্ট। সংস্থাটি যে চারটি দেশের নাম উল্লেখ করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে লাওস, মালদ্বীপ এবং পাকিস্তান। 

বাংলাদেশ
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—চলতি বছরের মে নাগাদ বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ (৭.৪২)। যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

তবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার রিজার্ভ হ্রাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি কমিয়েছে। রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে প্রবাসীদের আকৃষ্ট করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর কমিয়েছে। 

মার্কিন ক্রেডিট রেটিং সংস্থা এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল রেটিংয়ের বিশ্লেষক কিম অ্যাং তান বলেছেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো ভর্তুকি বৃদ্ধির মতো বিষয় নিয়ে বড় ধরনের মাথাব্যথার মধ্যে রয়েছে। পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা এরই মধ্যে সংকট কাটাতে অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে।’ 

কিম অ্যাং তান আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে সরকারি ব্যয় এবং ভোক্তা কার্যক্রম হ্রাস বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।’ 

লাওস 
৭৫ লাখ মানুষের ভূ-বেষ্টিত দেশ লাওস বিগত কয়েক মাস ধরেই বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও খাদ্যসংকট দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। বর্তমানে দেশটির এক-তৃতীয়াংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচ বাস করছে। 

দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর—দেশটিতে এখনই জ্বালানি তেল, খাদ্য কিনতে শ্রীলঙ্কার মতো লম্বা লাইন নিয়মিতই দেখা যাচ্ছে। অনেকে আবারও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যও কিনতে পারছে না। দেশটির মুদ্রা কিপের দাম ডলারের বিপরীতে প্রায় ৩ গুণ কমেছে। মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে ডলারে ঋণ পরিশোধ করা দেশটির জন্য কষ্টকর করে তুলেছে। এ ছাড়া আমদানিও পড়েছে ঝুঁকির মুখে। 
 
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে—গত বছরেরই ডিসেম্বর মাসে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা স্বাভাবিকভাবেই কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, লাওস প্রতিবছর যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করে তার পরিমাণই ওই রিজার্ভের সমপরিমাণ। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই হারে ঋণ পরিশোধ করার কথা রয়েছে দেশটির। 

নিউইয়র্কভিত্তিক বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান মুডি’স লাওসের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতর প্রেক্ষাপটে দেশটিকে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ‘উচ্চ ঝুঁকির’ মধ্যে রয়েছে বলে ঘোষণা করেছে। বিগত কয়েক বছরে চীন লাওসে বেশ কয়েকটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্য কেবল গত বছরই ৮১৩টি প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্যমতে, লাওসের মোট ঋণের পরিমাণ দেশটির ২০২১ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের ৮৮ শতাংশেরও বেশি। 

পাকিস্তান 
গত মে নাগাদ পাকিস্তানের জ্বালানি তেলের মূল্য ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশটি খাদ্যদ্রব্যেরও উচ্চমূল্যের সঙ্গে লড়াই করছে। গত জুন মাসেও দেশটির মূল্যস্ফীতি ছিল ২১ শতাংশেরও বেশি। যা বিগত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

পাকিস্তানও শ্রীলঙ্কা এবং লাওসের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে ভুগছে। দেশটি ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের তফাত ঘুচাতে ভারী শিল্পগুলোর ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। যদিও এটি ছিল আইএমএফ প্রদত্ত শর্ত। 

বৈশ্বিক বাজার বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু উড বিবিসিকে বলেছেন, ‘আইএমএফের শর্ত পূরণের পরও যদি আইএমএফ ঋণ না দেয় সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ত্রাতা হতে পারে সৌদি ও আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো।’ 

মালদ্বীপ 
সাম্প্রতিক বছরগুলো মালদ্বীপের মোট ঋণ এতই বেড়েছে যে তা দেশটির মোট জিডিপির সমান। শ্রীলঙ্কার মতো মালদ্বীপের প্রধান আয়ের খাত পর্যটন করোনা মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

বিশ্বব্যাংক বলেছে, পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও এই দেশটি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান বলেছে, ২০২৩ সাল নাগাদ মালদ্বীপ ঋণখেলাপি হতে পারে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ শহরে চলন্ত গাড়িতে ২৮ বছর বয়সী এক নারীকে তুলে নিয়ে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

গত সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবাহিত ওই নারী রাতে বাড়ি যাওয়ার জন্য যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় একটি গাড়ি থামে এবং দুজন যুবক তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলেন। কিন্তু গাড়িটি তাঁর গন্তব্যের বদলে গুড়গাঁও সড়কের দিকে যেতে শুরু করে।

অভিযোগ অনুযায়ী, ওই নারী দুই ঘণ্টা গাড়িটির ভেতরে আটকে ছিলেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত তাঁকে ধর্ষণ করেন। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা থামেননি, উল্টো তাঁকে হুমকি দেন। এরপর এস জি এম নগরের রাজা চকের কাছে ওই নারীকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে তাঁর মুখে গুরুতর আঘাত লাগে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

এ সময় ভুক্তভোগী নারী বারবার তাঁর বোনকে ফোন করছিলেন। পরে তাঁর বোন যখন ফিরতি ফোন করেন, তখন তিনি পুরো বিষয়টি জানতে পারেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁর মুখে ১০ থেকে ১২টি সেলাই দিতে হয়েছে।

বর্তমানে ওই নারীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও ট্রমায় ভুগছেন। এ জন্য এখন পর্যন্ত তাঁর জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ভুক্তভোগীর বোন অভিযোগে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর বোন তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন, মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হওয়ায় তিনি বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছেন। তিন ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসবেন বলেও বোনকে জানিয়েছিলেন তিনি।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই নারী বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জননী। পারিবারিক কলহের কারণে তিনি স্বামী থেকে আলাদা থাকেন।

পুলিশ এরই মধ্যে অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার ও অপরাধে ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জার্মানিতে হলিউড স্টাইলে ডাকাতি, ব্যাংকের ভল্ট কেটে ৩ কোটি ইউরো লুট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা। ছবি: গেলসেনকির্শেন পুলিশ
ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা। ছবি: গেলসেনকির্শেন পুলিশ

হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা-সিরিজে হরহামেশাই ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তেমন হওয়াটা অসম্ভব মনে হলেও এমন সিনেমাটিক স্টাইলে ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে জার্মানির এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায়। ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা।

পশ্চিম জার্মানির গেলসেনকির্শেন শহরের স্পারকাসে সেভিংস ব্যাংকে এ ঘটনা ঘটেছে। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বড় ড্রিল ব্যবহার করে আনুমানিক ৩ কোটি ইউরো (৪৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা) নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এই ঘটনাকে ডাকাতির কাহিনিনির্ভর হলিউডের সিনেমা ‘ওশানস ইলেভেন’-এর সঙ্গে তুলনা করে এএফপি বার্তা সংস্থাকে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটি অত্যন্ত পেশাদারভাবে করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই ডাকাতির সময় অর্থ, স্বর্ণ ও গহনা রাখা ৩ হাজারেরও বেশি সেফ ডিপোজিট বক্স ভেঙে ফেলা হয়েছে।

গেলসেনকির্শেন পুলিশ জানায়, গত সোমবার ভোররাতে ফায়ার অ্যালার্ম সক্রিয় হলে তারা ঘটনার বিষয়ে জানতে পারে। তখন ক্রিসমাসের ছুটি চলছিল। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বুয়ের জেলায় নিয়েনহোফস্ট্রাসে অবস্থিত ওই ভবনে ডাকাতি চালায়।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তারা পাশের একটি পার্কিং গ্যারেজ ব্যবহার করে ব্যাংকে ঢোকে এবং সেখান দিয়েই পালিয়ে যায়।

তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বিবিসি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত শনিবার রাত থেকে গত রোববার ভোর পর্যন্ত ওই ভবনটির গ্যারেজের সিঁড়িঘরে কয়েকজন পুরুষকে বড় বড় ব্যাগ বহন করতে দেখা গেছে।

পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজে সোমবার ভোরে ডে-লা-শেভালারি-স্ট্রাসে অবস্থিত গ্যারেজ থেকে একটি কালো অডি আরএস ৬ গাড়িকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। সোমবার ভোররাতে একটি ফায়ার-অ্যালার্ম বাজলে ভূগর্ভস্থ ভল্ট রুমে ঢোকার জন্য করা গর্তটি ধরা পড়ে। এরপর পুলিশ ও দমকল বাহিনী ভবনটিতে তল্লাশি চালায়।

চুরির ঘটনায় ব্যাংকের শাখাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রাহকদের প্রায় ৯৫ শতাংশ সেফ ডিপোজিট বক্স খুলে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজা-পশ্চিম তীরের ৩৭ ত্রাণ সংস্থার লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করেছে ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।

বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যাকশনএইড, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এবং নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মতো পরিচিত আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (আইএনজিও) গুলোর লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করা হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যসহ ১০টি দেশ। তারা বলছে, নতুন নিয়মগুলো ‘অতিরিক্তভাবে কঠোর’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’।

এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রম জোরপূর্বক বন্ধ করে দিলে স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখনো ‘বিপর্যয়কর’ উল্লেখ করে তাঁরা ইসরায়েল সরকারকে আহ্বান জানান, যাতে এনজিওগুলো টেকসই এবং আগের মতো কাজ করতে পারে।

এদিকে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই পদক্ষেপগুলোর ফলে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহে কোনো প্রভাব পড়বে না। মন্ত্রণালয়টি জানায়, জাতিসংঘের সংস্থা, দ্বিপক্ষীয় অংশীদার এবং মানবিক সংগঠনসহ ‘অনুমোদিত ও যাচাইকৃত চ্যানেল’ দিয়ে সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।

তাদের দাবি, সহায়তা সংস্থাগুলোর লাইসেন্স বাতিলের প্রধান কারণ হলো, তাদের কর্মীদের বিষয়ে সম্পূর্ণ ও যাচাইযোগ্য তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো যা মানবিক কাঠামোয় ‘সন্ত্রাসী অপারেটিভদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইসরায়েল।

এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা বলেন, অক্টোবর মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় পুষ্টি ও খাদ্য সরবরাহে কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে পরের মাসেও প্রায় ১ লাখ মানুষ ‘চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মুখোমুখি ছিল।

তবে গাজার সীমান্ত ক্রসিংগুলো নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাত দাবি করেছে, যেসব সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করা হবে, তারা বর্তমান যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় কোনো সহায়তা আনেনি। সংস্থাটি আরও জানায়, অতীতেও তাদের সম্মিলিত অবদান মোট সহায়তার মাত্র প্রায় ১ শতাংশ ছিল।

ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশেরও কম নতুন নিয়ন্ত্রক কাঠামো লঙ্ঘন করেছে।

ওই নিয়ন্ত্রক কাঠামোতে লাইসেন্স বাতিলের একাধিক ভিত্তি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—

১. ইসরায়েলকে একটি ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার না করা

২. হলোকাস্ট বা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো হামলা অস্বীকার করা

৩. শত্রু রাষ্ট্র বা সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকে সমর্থন করা

৪. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অবৈধতা আরোপের প্রচারণা’ চালানো

৫. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান জানানো বা তাতে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করা

৬. বিদেশি বা আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাকে সমর্থন করা

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের সংস্থা এবং ২০০টিরও বেশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম আগেই সতর্ক করে বলেছিল, নতুন নিবন্ধন নীতিমালা গাজা ও পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রমকে মৌলিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

তাদের ভাষায়, ‘এই ব্যবস্থা অস্পষ্ট, খামখেয়ালি ও অত্যন্ত রাজনৈতিক মানদণ্ডের ওপর নির্ভরশীল এবং এমন সব শর্ত আরোপ করছে, যা মানবিক সংস্থাগুলোর পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন না করে বা মানবিক নীতির মূল ভিত্তি ক্ষুণ্ন না করে পূরণ করা সম্ভব নয়।’

হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিমের মতে, বর্তমানে গাজায় অধিকাংশ ফিল্ড হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা বা সহায়তা, জরুরি আশ্রয় কার্যক্রম, পানি ও স্যানিটেশন সেবা, তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য পুষ্টি স্থিতিশীলকরণ কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইন অপসারণ কার্যক্রম আইএনজিওগুলোর মাধ্যমেই পরিচালিত বা সমর্থিত হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক ও ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা বিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই চিকলি বলেন, ‘বার্তাটি স্পষ্ট: মানবিক সহায়তা স্বাগত কিন্তু সন্ত্রাসবাদের জন্য মানবিক কাঠামোর অপব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।’

কার্যক্রম স্থগিত হতে যাচ্ছে এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে কেয়ার, মেডিকো ইন্টারন্যাশনাল এবং মেডিক্যাল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইয়েমেন সংঘাতে মুখোমুখি অবস্থানে সৌদি ও আরব আমিরাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৬
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।

অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত