Ajker Patrika

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে আর ভাবছে না যুক্তরাষ্ট্র: ইসরায়েলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি। ছবি: জেএনএস
ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি। ছবি: জেএনএস

‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অনুসরণ করছে না’। এমন মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি।

ব্লুমবার্গ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাকাবিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এখনো কি যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত এই প্রাক্তন আর্কানসাস গভর্নর আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কথা ভাবা হলে তা যেন ইসরায়েলের কোনো ভূখণ্ড ছাড়াই হয়। তিনি এমনকি প্রস্তাব দেন, ‘একটি মুসলিম দেশের’ কিছু অংশ নিয়ে সেই রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে।

বিবিসিকে দেওয়া পৃথক এক সাক্ষাৎকারে মাইক হাকাবি বলেন, ‘মুসলিম দেশগুলোর মোট ভূমির পরিমাণ ইসরায়েলের চেয়ে ৬৪৪ গুণ বেশি। সুতরাং যদি সত্যিই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের এত আগ্রহ থাকে, তাহলে হয়তো কেউ বলবে—আমরা এর জন্য জায়গা দিতে চাই।’

এদিকে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, হাকাবির এই বক্তব্য দীর্ঘদিনের মধ্যপ্রাচ্যনীতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট সরে আসাকে তুলে ধরছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে এ সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে অনেক বেশি অনীহা দেখিয়েছিলেন, যদিও এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মধ্যপ্রাচ্যনীতি। দ্বিতীয় মেয়াদে এই বিষয়ে তাঁর অবস্থান কী—তা এখনো স্পষ্ট নয়।

হাকাবির এই বক্তব্য প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে—এই মন্তব্যে তা প্রকাশ্যেই উঠে এসেছে।

গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে যা দেখা যাচ্ছে—গাজা থেকে জনগণকে উচ্ছেদের প্রতি প্রশাসনের প্রকাশ্য সমর্থন, ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ ও দখল নীতিকে বৈধতা দেওয়া—এসবের পর হাকাবির মন্তব্য মোটেও অপ্রত্যাশিত নয় বলে মনে করেন জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর কনটেম্পোরারি আরব স্টাডিজের গবেষক ও ফিলিস্তিনি আলোচকদের সাবেক উপদেষ্টা খালেদ এলগিন্ডি।

তিনি বলেন, “এই প্রশাসন ফিলিস্তিনের শারীরিক ও রাজনৈতিক অস্তিত্ব—দুটোই মুছে দিতে বদ্ধপরিকর। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই এর ইঙ্গিত ছিল, যেখানে তারা এমন এক ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র’ সমর্থন করেছিল, যার ছিল না কোনো সার্বভৌমতা, বরং যা চিরকাল ইসরায়েলের দখলে থাকার মতোই পরিকল্পিত ছিল। এখন অন্তত তারা সেই ভানটুকুও করছে না।”

আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসির ফিলিস্তিন/ইসরায়েল প্রোগ্রামের প্রধান ইউসুফ মুনায়ার মনে করেন, হাকাবির বক্তব্য আসলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতিকেই প্রকাশ্যে উচ্চারণ করেছে।

মুনায়ার বলেন, ‘মাইক হাকাবি যা বলছেন, তা আসলে বহু দশক ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রমে প্রকাশ পেয়ে আসছে। এটি বিভিন্ন প্রশাসনের সময়ও অব্যাহত থেকেছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে যত প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তব নীতি কখনোই সেসব প্রতিশ্রুতির সঙ্গে মেলেনি; বরং তা সবসময় সেগুলোর ভিত্তি দুর্বল করেছে।’

রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবির এ অবস্থান নতুন নয়; এটি ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে তাঁর দীর্ঘদিনের সমর্থনেরই প্রতিফলন। ২০০৮ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে তিনি বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনি বলে কিছু নেই।’

মুনায়ারের মতে, হাকাবির বিশেষত্ব হলো তিনি যা অনেক নীতিনির্ধারক মুখে বলেন না, সেটাই নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্যে বলেন। তিনি বলেন, ‘হাকাবিকে আলাদা করেছে এই বিষয়টাই। তিনি এতটাই নির্লজ্জ যে, ফিলিস্তিনি জনগণকে সম্পূর্ণ মুছে দেওয়ার লক্ষ্যটিকে প্রকাশ্যেই স্বীকার করতে পারেন।’

বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় চলমান যুদ্ধে যখন বহু হাজার ফিলিস্তিনি নিহত ও ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন—তখন হাকাবির পক্ষ থেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্পষ্ট বিরোধিতা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের জন্য কূটনৈতিক জটিলতা তৈরি করতে পারে।

গবেষক খালেদ এলগিন্ডি বলেন, এটি ইউরোপ ও আরব দেশগুলোর জন্য এক ধরনের সংকট তৈরি করবে। তারা এখনো দুই রাষ্ট্র সমাধানে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যদিও সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকেই প্রাধান্য দিয়েছে।

এদিকে হাকাবির মন্তব্য প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র একটি ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা ‘আদদামির’ এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের আরও পাঁচটি দাতব্য সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এসব সংস্থা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সহায়তা দেয় বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আদদামিরের মূল কাজ হচ্ছে, দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েল বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে আটক ফিলিস্তিনিদের জন্য আইনি সহায়তা দেওয়া।

মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, আদদামির দীর্ঘদিন ধরে পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি)-কে সমর্থন ও সহযোগিতা করছে। পিএফএলপিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পিএফএলপির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ ইসরায়েল ২০২২ সালে পশ্চিম তীরে ‘আদদামির’ কার্যালয়সহ আরও কয়েকটি সংগঠনে অভিযান চালায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেক্সিকোতে যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ১৩ জনের মৃত্যু, আহত শতাধিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মেক্সিকোর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ওয়াহাকা রাজ্যে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। ছবি: বিবিসি
মেক্সিকোর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ওয়াহাকা রাজ্যে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। ছবি: বিবিসি

মেক্সিকোতে যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে অন্তত ১৩ জন নিহত এবং প্রায় ১০০ জন আহত হয়েছেন। দেশটির নৌবাহিনীর বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ওয়াহাকা রাজ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নৌবাহিনী জানিয়েছে, মেক্সিকো উপসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যবর্তী রুটে চলাচল করে ওই ট্রেনটি। ট্রেনে ২৪১ জন যাত্রী ও ৯ জন ক্রু ছিলেন। আহতদের মধ্যে ৩৬ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, নিজান্দা শহরের কাছে একটি বাঁক ঘোরার সময় ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়।

ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন মেক্সিকোর অ্যাটর্নি জেনারেল।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম বলেন, আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি আরও জানান, নেভির সেক্রেটারিসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন।

দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, উদ্ধারকর্মীরা লাইনচ্যুত ট্রেন থেকে যাত্রীদের নামতে সহায়তা করছেন। ট্রেনটি রেললাইন থেকে ছিটকে পড়ে আংশিকভাবে একটি খাদের পাশে কাত হয়ে যায়।

নৌবাহিনী জানিয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরের বন্দর সালিনা ক্রুজকে উপসাগরীয় উপকূলের কোয়াটজাকোয়ালকোসের সঙ্গে যুক্ত করা ‘ইন্টারওশেনিক’ (Interoceanic) ট্রেনটি দুটি লোকোমোটিভ এবং চারটি যাত্রীবাহী বগি ছিল। মেক্সিকোর নৌবাহিনী দেশটির রেলওয়ে নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে।

ওয়াহাকা রাজ্যের গভর্নর সলোমোন জারা ক্রুজ এক বিবৃতিতে দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় রাজ্য সরকার ফেডারেল সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।

আঞ্চলিক অর্থনীতি চাঙা করতে সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদরের উদ্যোগে দুই বছর আগে ইন্টারওশেনিক রেল সংযোগটি উদ্বোধন করা হয়েছিল।

আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যবর্তী দূরত্ব কমিয়ে আনতে তেহুয়ান্তেপেক ইস্থমাস এলাকা জুড়ে রেল যোগাযোগ আধুনিকায়নের লক্ষ্যে অঞ্চলটিকে একটি কৌশলগত বাণিজ্য করিডোরে রূপ দিতে চেয়েছে মেক্সিকো সরকার। এর অংশ হিসেবে বন্দর, রেলপথ ও শিল্প অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এই রেল পরিষেবাটি দক্ষিণ মেক্সিকোতে যাত্রী ও পণ্যবাহী রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বড় অংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইন্দোনেশিয়ায় নার্সিং হোমে আগুনে ১৬ জনের মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইন্দোনেশিয়ায় একটি নার্সিং হোমে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: সংগৃহীত
ইন্দোনেশিয়ায় একটি নার্সিং হোমে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ায় একটি নার্সিং হোমে আগুন লেগে ১৬ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার এএফপির প্রতিবেদনে স্থানীয় এক কর্মকর্তার বরাতে জানানো হয়, উত্তর সুলাওয়েসি প্রদেশের রাজধানী মানাদোর একটি নার্সিং হোমে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

শহরটির ফায়ার অ্যান্ড রেস্কিউ এজেন্সির প্রধান জিমি রোটিনসুলু জানান, নার্সিং হোমটিতে স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টা ৩১ মিনিটে আগুন লাগার খবর পান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ৩ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।

জিমি জানান, ভুক্তভোগীদের অনেক দেহ তাঁদের ঘরের ভেতরেই পাওয়া গেছে। তিনি আরও যোগ করেন, সন্ধ্যায় যখন আগুন ছড়িয়ে পড়ে তখন বয়স্ক বাসিন্দাদের অনেকেই সম্ভবত তাদের নিজ নিজ ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

কর্তৃপক্ষ ১২ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে এবং তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

স্থানীয় সম্প্রচার মাধ্যম মেট্রো টিভি-তে প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, আগুন নার্সিং হোমটিকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিয়েছে এবং স্থানীয়রা এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে সরিয়ে নিতে সাহায্য করছেন।

১৭ হাজারেরও বেশি দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এই দ্বীপরাষ্ট্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা খুব একটা বিরল নয়। চলতি মাসেই ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় একটি সাততলা অফিস ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২২ জন নিহত হন। ২০২৩ সালে দেশটির পূর্বাঞ্চলে একটি নিকেল প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাঁজা চাষে লাইসেন্স ফি কমাল পাকিস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাঁজা চাষের লাইসেন্স ফি ৬ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করা হয়েছে। ছবি: এএফপি
গাঁজা চাষের লাইসেন্স ফি ৬ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করা হয়েছে। ছবি: এএফপি

গাঁজা চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের লাইসেন্স ফি কমানোর অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তানের সরকার। দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, খাইবার পাখতুনখোয়া এলাকায় গাঁজা চাষের এই ফি কমাচ্ছে ক্যানাবিস রেগুলেটরি অথরিটি (সিআরএ)।

এছাড়া, শিল্পজাত হেম্প ও হেম্প বীজের তেলের ওপর থেকে আবগারি শুল্ক তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফুল-স্পেকট্রাম ক্যানাবিডিওল (CBD) ও টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (THC)-এর ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সরকারি নথি বরাতে দ্য ডন জানিয়েছে, সিআরএ গাঁজা চাষের লাইসেন্স ফি ৬ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করেছে এবং গাঁজা প্রক্রিয়াকরণের লাইসেন্স ফি ১৫ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ১০ লাখ রুপি নির্ধারণ করেছে।

এছাড়া হেম্প প্রক্রিয়াকরণের লাইসেন্স ফি ৭ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ফুল-স্পেকট্রাম ক্যানাবিডিওল ও টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনলের ওপর আবগারি শুল্ক প্রতি কেজিতে ৩ হাজার রুপি থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার রুপি করা হয়েছে।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, ২২ ডিসেম্বর আবগারি, কর ও মাদকদ্রব্য বিষয়ক মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে আরও বলা হয়, ওই বৈঠকটি ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপ-কমিটির বৈঠকের ধারাবাহিকতা ছিল, যেখানে এসব পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছিল।

নথি অনুযায়ী, সিআরএ-এর বৈঠকে খাইবার পাখতুনখোয়ার জন্য প্রস্তাবিত হেম্প মডেল কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় আবগারি, কর ও মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য সচিব জোর দিয়ে বলেন, ব্যবসা পরিচালনাকে সহজ করা এবং বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দিতে প্রস্তাবিত মডেলটি আরও সরল করা প্রয়োজন।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, খাইবার পাখতুনখোয়ায় স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরীক্ষামূলকভাবে হেম্প চাষের লাইসেন্স দেওয়া হবে এবং এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান কৃষকদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করবে।

হেম্প চাষ ও প্রক্রিয়াকরণের লাইসেন্সের আবেদন ফরম, টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (টিএইচসি) নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ ফরম, পর্যায়ক্রমিক পরিদর্শন ফরমসহ অন্যান্য বাধ্যতামূলক রেজিস্টার অনুমোদন করেছে সিআরএ।

শিল্প ও কৃষকদের যৌথ উদ্যোগে বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট (বিওআই) এবং শিল্প বিভাগ সহায়তা প্রদানের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কৃষকদের নিবন্ধন ব্যক্তিগত বা সমবায় কোম্পানি হিসেবে উভয় ক্ষেত্রেই ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে।

হেম্প বীজ আমদানি ও এর শংসাপত্রের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সপ্রাপ্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত গাঁজা চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ আপাতত স্থগিত রাখা হবে এবং ওষুধ শিল্পের প্রয়োজনীয় গাঁজা নিয়ন্ত্রণ ও এর পণ্য ব্যবস্থাপনা পাকিস্তানের ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটির (ডিআরএপি) চাহিদা ও মানদণ্ডের আলোকে বিবেচনা করা হবে।

নথিতে আরও বলা হয়, ক্যানাবিস মডেল প্রণয়ন এবং ক্যানাবিস সংক্রান্ত বিধিবিধান পুনর্বিবেচনার জন্য ১৫ দিনের মধ্যে একটি উপকমিটি গঠন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে উত্তেজনা: শিখ ও হিন্দু বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হাতাহাতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিক্ষোভকারী শিখদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ওসমান হাদির ছবিও দেখা যায়। ছবি: এক্স
বিক্ষোভকারী শিখদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ওসমান হাদির ছবিও দেখা যায়। ছবি: এক্স

লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে গত শনিবার একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা তৈরি হয়। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কথিত নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত এই সমাবেশে স্বাধীন খালিস্তানপন্থী শিখ অধিকার কর্মী এবং একদল হিন্দু বিক্ষোভকারী মুখোমুখি হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্রিটিশ পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আয়োজকদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি দৈনিক ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আয়োজিত সমাবেশে খালিস্তান রেফারেন্ডাম অভিযানের সমন্বয়ক পরমজিৎ সিং পাম্মা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে হরদীপ সিং নিজ্জার এবং শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি দেখা গেছে। সমাবেশের একপর্যায়ে ভারতীয় এক হিন্দু বিক্ষোভকারীর সঙ্গে পাম্মার কথা-কাটাকাটি এবং পরে হাতাহাতি শুরু হয়। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সেখানে দায়িত্বরত মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং দুই পক্ষকে আলাদা করে দেন।

বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রবেশপথের কাছে একটি কর্ডন তৈরি করে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যান। এ সময় তাঁরা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান দেন। বিশেষ করে হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যা এবং অন্যান্য শিখ নেতাদের খুনের পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

উল্লেখ্য, ভারত সরকার পরমজিৎ সিং পাম্মাকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড টেররিস্ট’ বা অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করলেও পাম্মা ও তাঁর সমর্থকেরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।

গত বছরের জুনে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার খুন হওয়ার পর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চরম আকার ধারণ করেছে। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গেও ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে মার্কিন বিচার বিভাগ।

লন্ডনের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সেই বৈশ্বিক উত্তেজনার ছায়া দেখা গেছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, কোনো বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।

খালিস্তান আন্দোলনের শিকড় ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগ এবং পাঞ্জাব বিভাজনের সময় পর্যন্ত বিস্তৃত। স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের দাবিতে এই আন্দোলন দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে। এই আন্দোলন বর্তমানে বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারত-কানাডা এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সংবেদনশীল ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত