Ajker Patrika

ভারতের নাইটক্লাবে অগ্নিকাণ্ড: মালিক ভ্রাতৃদ্বয় থাইল্যান্ডে আটক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০০
থাইল্যান্ডের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ দেশটির একটি হোটেলের রুম থেকে ওই দুই ভাইকে আটক করে। ছবি: এনডিটিভি
থাইল্যান্ডের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ দেশটির একটি হোটেলের রুম থেকে ওই দুই ভাইকে আটক করে। ছবি: এনডিটিভি

ভারতের পর্যটন নগরী গোয়ার জনপ্রিয় নাইটক্লাব ‘বার্চ বাই রোমিও লেন’-এ অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ক্লাবটির মালিক দুই সহোদরকে থাইল্যান্ডে আটক করা হয়েছে। থাইল্যান্ডে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত নাগেশ সিংয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটির পরপরই ফুকেটে পালিয়ে যান দুই ভাই গৌরব ও সৌরভ লুথরা।

আজ বৃহস্পতিবার নাগেশ সিং জানান, তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এর এক দিন আগে দিল্লির একটি আদালত তাঁদের গ্রেপ্তার থেকে সুরক্ষা দেওয়ার আবেদন খারিজ করেন এবং গোয়া সরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তাঁদের পাসপোর্ট বাতিলের অনুরোধ জানায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, থাইল্যান্ডের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ দেশটির একটি হোটেলের রুম থেকে ওই দুই ভাইকে আটক করে। প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা যায়, অভিবাসন কর্মকর্তারা তাঁদের জিনিসপত্র পরীক্ষা করছেন এবং তাঁদের হাত বাঁধা রয়েছে।

এ ঘটনায় দুই ভাইয়ের কাছ থেকে মন্তব্য না পাওয়া গেলেও তাঁদের আইনজীবী আদালতে বলেন, তাঁদের এভাবে আটক করা ‘উইচ হান্ট’-এর শিকার বানানোর মতো হয়ে যাচ্ছে।

সিনিয়র অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ মীর আরও বলেন, দুই ভাই ব্যবসায়ী। তাঁরা সেই ধরনের ব্যক্তি নন, যারা ৫০০০ কোটি টাকার প্রতারণা করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

গত রোববার (৭ ডিসেম্বর) ভোরে ওই ক্লাবে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার মুহূর্তটিতে ক্লাবের জনপ্রিয় আয়োজন ‘বলিউড ব্যাঞ্জার নাইট’ উপভোগ করছিলেন প্রায় ১০০ পর্যটক। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মঞ্চে একজন নৃত্যশিল্পী বলিউডের বিখ্যাত গান ‘মেহবুবা ও মেহবুবা’-র তালে নাচছিলেন। হঠাৎই মঞ্চের পেছনে থাকা কনসোলের ওপর আগুনের শিখা দেখা যায়।

আগুন যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করে, তখনই টনক নড়ে শিল্পী ও দর্শকদের। আগুনের শিখা বাড়তে থাকলে সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী এবং দর্শকেরা আতঙ্কে চারদিকে সরে যেতে থাকেন।

মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই আগুন ক্লাবের ছাদজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই এই অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ২৫ জন। বেশির ভাগ নিহতই ছিলেন ক্লাবের কর্মী আর পাঁচজন ছিলেন পর্যটক। আহত হন আরও ৬ জন।

তদন্তকারীদের ধারণা, ক্লাবের ভেতরে আতশবাজি ফোটানোর কারণেই আগুনের সূত্রপাত হয়।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, আগুন লাগার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লিতে ওই দুই ভাইয়ের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ততক্ষণে তাঁরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। পরে পুলিশ তাঁদের খোঁজে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ক্লাবের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেওয়া সৌরভ লুথরা গত সোমবার এক বিবৃতির মাধ্যমে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, নিহত ব্যক্তিদের পরিবার এবং আহতদের পাশে অটল সংহতি প্রকাশ করছে নাইটক্লাব কর্তৃপক্ষ। শোকাহত পরিবারগুলোকে সহায়তা, সমর্থন ও সহযোগিতা দেবে কর্তৃপক্ষ।

গত বুধবার গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিগগিরই আরও গ্রেপ্তার হবে।’

আরব সাগরতীরের এক সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশ ভারতের পর্যটনসমৃদ্ধ রাজ্য গোয়া। এর প্রাণবন্ত সমুদ্রসৈকত ও রিসোর্টের কারণে প্রতিবছর লাখো পর্যটক সেখানে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতীয় কারিগরদের তৈরি চপ্পল লাখ টাকায় বিক্রি করবে প্রাডা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের ঐতিহ্যবাহী ‘কোলাপুরি’ চপ্পলের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত এটি তৈরি করছে প্রাডা। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের ঐতিহ্যবাহী ‘কোলাপুরি’ চপ্পলের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত এটি তৈরি করছে প্রাডা। ছবি: সংগৃহীত

ইতালির বিলাসবহুল ব্র্যান্ড প্রাডা ভারতের ঐতিহ্যবাহী ‘কোলাপুরি’ চপ্পলের অনুকরণে সীমিত সংস্করণের কিছু স্যান্ডেল বাজারে আনতে যাচ্ছে। প্রতিটি স্যান্ডেলের মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৮০০ ইউরো বা ৯৩০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। চলতি বছরের জুনে পেটেন্ট নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে প্রাডা ভারতীয় কারিগরদের সঙ্গে মিলে নতুন এই উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রাডার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী লোরেঞ্জো বেরতেল্লি এসব তথ্য জানিয়েছেন।

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেরতেল্লি জানান, প্রাডা প্রথম পর্যায়ে মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে ২ হাজার জোড়া স্যান্ডেল তৈরি করবে। সেখানে ভারতীয় কারিগরদের দক্ষতা ও ইতালিয়ান প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটবে। এ জন্য প্রাডা ভারতের দুটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো—লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড চর্মাকার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ও ড. বাবু জগজীবন রাম লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন।

বেরতেল্লি বলেন, ‘আমরা স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের ঐতিহ্যগত দক্ষতার সঙ্গে আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনিক যুক্ত করব।’ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বব্যাপী ৪০টি প্রাডা স্টোর ও অনলাইনে এই সংস্করণের বিক্রি শুরু হবে।

ছয় মাস আগে মিলানের শোতে প্রাডা একটি স্যান্ডেল প্রদর্শন করে, যা দেখতে অনেকটাই ১২শ শতকের ভারতীয় কোলাপুরি চপ্পলের মতো ছিল। সেই ছবি ভাইরাল হলে ভারতীয় কারিগর ও রাজনীতিবিদেরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। পরে প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করে যে তাদের নকশা ভারতীয় ঐতিহ্য থেকে অনুপ্রাণিত এবং এরপরই ভারতীয় কারিগরদের সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

চুক্তি অনুযায়ী, তিন বছরের অংশীদারত্বের আওতায় কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ভারতেই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থাকবে, পাশাপাশি কারিগরেরা স্বল্প সময়ের জন্য ইতালির প্রাডা একাডেমিতেও শেখার সুযোগ পাবেন।

মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে কোলাপুরি চপ্পলের উৎপত্তি। এগুলো মূলত এখনো ওই অঞ্চলের প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে তৈরি হয়। শিল্পীরা আশা করছেন, প্রাডার সহযোগিতা নতুন প্রজন্মকে কাজে আকৃষ্ট করবে এবং দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এই ঐতিহ্য নতুনভাবে বাঁচবে।

লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড চর্মাকার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রেরণা দেশভরত বলেন, ‘প্রাডা যখন এই কারুকর্মকে বিলাসবহুল পণ্যের মর্যাদা দেবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই এর চাহিদা বাড়বে।’

বেরতেল্লি জানান, এই প্রকল্পে কয়েক মিলিয়ন ইউরো ব্যয় হবে এবং কারিগরদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়া হবে।

যদিও প্রাডা এ বছর দিল্লিতে তাদের প্রথম বিউটি স্টোর খুলেছে। তবে বেরতেল্লি জানান, আগামী বছরে ভারতে নতুন কোনো রিটেইল ফ্যাশন আউটলেট বা কারখানা খোলার পরিকল্পনা নেই। তিন থেকে পাঁচ বছর পর বিষয়টি বিবেচনায় আসতে পারে।

বেরতেল্লি বলেন, ভারতে এখনই নতুন কোনো স্টোরের পরিকল্পনা নেই, তবে এটি নিয়ে আমরা গুরুত্বসহকারে ভাবছি। ভারতই আমাদের জন্য ‘পরবর্তী বড় সম্ভাবনাময় বাজার’।

বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট গ্লোবালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতের বিলাসবহুল পণ্যের বাজারের মূল্য ছিল প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। তবে এটি এখনো চীনের তুলনায় অনেক ছোট; যেখানে ২০২৪ সালে বাজারের আকার ছিল প্রায় ৪৯.৫ বিলিয়ন ডলার।

বেশির ভাগ গ্লোবাল ব্র্যান্ডই ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করেছে রিলায়েন্স বা আদিত্য বিরলা গ্রুপের মতো বড় কনগ্লোমারেটের অংশীদারত্বে। তবে বেশি সময় লাগলেও প্রাডা নিজেরাই ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে চায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গর্ভে সন্তান আছে কি না পরীক্ষা করে ভিসা দেবে যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ২৮
প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

অনেকে পর্যটক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী দেশটিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। তবে এবার এ ধরনের ভিসা পাওয়া কঠিন হতে যাচ্ছে। ভারতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এমনই সতর্ক বার্তা দিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে দূতাবাস জানায়, যদি কোনো আবেদনকারীর উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সন্তান জন্ম দেওয়া হয় এবং এর মাধ্যমে শিশুর মার্কিন নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হয়, তাহলে ওই আবেদন সরাসরি বাতিল করা হবে।

দূতাবাস তাদের বিবৃতিতে লিখেছে, ‘যদি কনস্যুলার কর্মকর্তারা মনে করেন যে ওই পর্যটকের ভিসার প্রধান উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান জন্ম দেওয়া, তাহলে আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে। এ ধরনের ভ্রমণ অনুমোদিত নয়।’

শুধু পর্যটক ভিসাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের অনলাইন উপস্থিতি ও সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইয়ের পরিধি আরও বাড়িয়েছে। এখন থেকে এই কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় আসছেন এইচ-১বি ও এইচ-৪ ভিসা আবেদনকারীরাও।

সম্প্রতি বহু ভারতীয় আবেদনকারী ইমেইল পেয়েছেন যে তাদের ভিসা সাক্ষাৎকারের সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরই বিষয়টি পরিষ্কার করতে দূতাবাসের পক্ষ থেকে এমন বিবৃতি দেওয়া হয়।

এক বিবৃতিতে মার্কিন দূতাবাস জানায়, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট ইতিমধ্যে শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ভিসার (এফ. এম. জে) ক্ষেত্রে অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করে থাকে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে এইচ-১বি ও এইচ-৪ ভিসা আবেদনকারীদের ক্ষেত্রেও।

ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি সব এইচ-১বি ও এইচ-৪ আবেদনকারীর ক্ষেত্রেই সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করেছে। ফলে হাজারো কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সামনে নতুন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

দূতাবাস জানায়, প্রতিটি আবেদনই বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘প্রতিটি ভিসার ক্ষেত্রে আমরা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে যাচাই করি যে আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নন এবং তিনি ভিসার শর্ত অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালনার বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোদি-ট্রাম্প ফোনালাপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে জল্পনা যখন তুঙ্গে, ঠিক সেই সময়ে টেলিফোনে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফোনালাপে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্বের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন এবং বাণিজ্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।

এনডিটিভি ভারত সরকারের দেওয়া এক বিবৃতির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মোদি ও ট্রাম্প ভারত-মার্কিন সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। দুই নেতা ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে চলমান প্রচেষ্টার গতি বজায় রাখার’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

ফোনালাপে দুই নেতা প্রযুক্তি, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণ নিয়েও মতবিনিময় করেন। আলোচনায় উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কমপ্যাক্ট (ক্যাটালাইজিং মিলিটারি পার্টনারশিপ, অ্যাকসেলারেটেড কমার্স অ্যান্ড টেকনোলজি) কাঠামোর বাস্তবায়নের বিষয়টি। এটি দুই দেশের সামরিক অংশীদারত্ব, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার একটি যৌথ উদ্যোগ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মোদি ও ট্রাম্প দুই দেশকে স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও পারস্পরিক অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।

ফোনালাপের পর এক্সে একটি বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে খুবই উষ্ণ ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেছি। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ করে যাবে।’

প্রসঙ্গত, ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর আগে চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া ২৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে এই নতুন শুল্ক যোগ হয়। এর ফলে ভারত থেকে আমদানি করা বহু পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের মোট শুল্কহার দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এবার ভারতের ওপর মেক্সিকোর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ, বিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএফপি
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএফপি

ভারতসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেক্সিকো। নতুন এই শুল্কে ভারতের প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের গাড়ি রপ্তানি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। চার মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। এবার মেক্সিকোর এমন পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির দেশটির ওপর নতুন চাপ তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেক্সিকোর এই শুল্ক ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

কোন কোন পণ্যে শুল্ক

ম্যাক্সিকান দৈনিক এল ইউনিভার্সালের তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক আরোপ করা হয়েছে অনেকগুলো পণ্যের ওপর। এর মধ্যে রয়েছে—অটো পার্টস, ছোট গাড়ি, পোশাক, প্লাস্টিক, স্টিল, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, খেলনা, টেক্সটাইল, আসবাব, জুতা, চামড়াজাত পণ্য, কাগজ ও কার্ডবোর্ড, মোটরসাইকেল, অ্যালুমিনিয়াম, কাচ, সাবান, সুগন্ধি ও কসমেটিকস।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার মতো যেসব দেশের সঙ্গে মেক্সিকোর কোনো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই, তারা এই শুল্কে প্রভাবিত হবে।

মেক্সিকো কেন শুল্ক বাড়াচ্ছে

মেক্সিকো সরকারের দাবি, দেশের স্থানীয় শিল্পকে রক্ষা এবং এশিয়া বিশেষ করে চীন থেকে অতিরিক্ত আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতেই এই পদক্ষেপ। চীনের সঙ্গে মেক্সিকোর বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে—শুধু ২০২৪ সালেই দেশটি চীন থেকে ১৩০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। সেই রপ্তানির পরিমাণ অনেক কম।

মেক্সিকো বলছে, নতুন শুল্ক আরোপে সরকারের অতিরিক্ত ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব পাওয়া যাবে। প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমের প্রশাসন স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং দেশের শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়াকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

মেক্সিকোর ক্ষমতাসীন মোরেনা দলের ডেপুটি রিকার্ডো মনরিয়াল বলেন, ‘ম্যাক্সিকান শিল্পকে সমর্থন দেওয়া মানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি।’ তবে বিশ্লেষকদের অনেকের মত, আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা (ইউএসএমসিএ) চুক্তি মাথায় রেখে ওয়াশিংটনকে খুশি করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভারতের ওপর প্রভাব কতটা

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেক্সিকোর সিদ্ধান্তে ভারতের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি ধাক্কা খাবে। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের প্রধান গাড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে রয়েছে—মারুতি সুজুকি, হুন্দাই, নিসান ও ভক্সওয়াগন।

গাড়ির আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করায় ভারতীয় অটোমোবাইল কোম্পানিগুলো তাদের অন্যতম বড় বাজারে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা ও সৌদি আরবের পর মেক্সিকো বর্তমানে ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ি রপ্তানি বাজার।

ভারতীয় গাড়ি নির্মাতাদের সংগঠনগুলো বলেছে, শুল্ক বৃদ্ধি সরাসরি রপ্তানি হ্রাস করবে। তারা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে মেক্সিকোর সঙ্গে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানিয়েছেন।

এদিকে চীন বলেছে, তারা সব ধরনের একতরফা শুল্ক বৃদ্ধির বিরোধী। তারা মেক্সিকোকে ‘ভুল সিদ্ধান্ত সংশোধন’ করার আহ্বান জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত