Ajker Patrika

তরুণ-যুবকদের যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করছে আরাকান আর্মি, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ মে ২০২৫, ১৫: ১৫
একটি ক্যাম্পে আরাকান আর্মির অফিসার্স ট্রেইনিং শেষের অনুষ্ঠান। ছবি: এএ
একটি ক্যাম্পে আরাকান আর্মির অফিসার্স ট্রেইনিং শেষের অনুষ্ঠান। ছবি: এএ

মিয়ানমারের বাংলাদেশ সংলগ্ন রাজ্য রাখাইনের তরুণ-যুবাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অঞ্চলটির কার্যত নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। গত বৃহস্পতিবার জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছে, ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারীরা রাখাইন রাজ্য ছাড়তে পারবে না। চলমান সংঘাতের কারণে সৃষ্ট জরুরি অবস্থা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। এই বয়সীদের জন্য এএ-তে কমপক্ষে ২ বছর সামরিক সেবা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আরাকান রাজ্যের এক মানবাধিকার কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মাকে (ডিভিবি) বলেছেন, ‘যারা সামরিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে অনিচ্ছুক, তাদের জোর করা ব্যক্তিগত অধিকারের লঙ্ঘন। মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধু নির্যাতন বা হত্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞাও লঙ্ঘন।’

তবে এএ দাবি করেছে, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা একটি সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা। তারা শাসকগোষ্ঠী জান্তাবাহিনীর হাতে স্থানীয়দের গ্রেপ্তার, চাঁদাবাজি, সহিংসতা বা জোরপূর্বক নিয়োগের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে এই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে জানিয়েছে। এএ গত ১৮ মার্চ প্রণীত তাদের নতুন ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা জরুরি বিধান’—এর কথাও উল্লেখ করেছে।

আরাকানের বাসিন্দা হান বলেন, ‘এ ধরনের নীতি বাস্তবায়নের সময় কর্তৃপক্ষকে তা স্পষ্টভাবে এবং পদ্ধতিগতভাবে বর্ণনা করতে হবে। অন্যথায়, এর ফলে মাঠপর্যায়ে (তাদের সদস্যরা) জোরপূর্বক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে পারে।’ এএ রাখাইনে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে শাসকগোষ্ঠীর ফেলে যাওয়া ল্যান্ডমাইনগুলোকেও উল্লেখ করেছে। শাসকগোষ্ঠী মিয়ানমারের সর্ব পশ্চিমের এই রাজ্যে স্থল বা সমুদ্রপথে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে।

গত মার্চ মাস থেকে এএ-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় জোরপূর্বক নিয়োগের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। এখন গোষ্ঠীটি নিয়োগের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের অঞ্চলটি থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়াও নিষিদ্ধ করেছে। কেবল যাদের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন এবং এএ-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেই চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করা হবে।

মিয়ানমার সংঘাতের স্বাধীন বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন ডিভিবিকে বলেছেন, ‘বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা একটি ভুল পদ্ধতি, সেটি যে সশস্ত্র গোষ্ঠীই আরোপ করুক না কেন।’ তিনি বলেন, ‘এএ স্পষ্টতই প্রশাসন, পুলিশ এবং সম্ভবত ভবিষ্যতের লড়াইয়ের জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন অনুভব করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, এটি মিয়ানমারের কখনো শেষ না হওয়া সহিংসতার আবর্তে পড়ার আরও একটি লক্ষণ।’

এএ-এর সমালোচকেরা বলেছেন, এই জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর উচিত তাদের আদেশ বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা। যেমন, এটি কীভাবে কার্যকর করা হবে এবং যারা এটি লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমালোচকেরা আরও বলেছেন, তাদের আদেশের সঠিক সময়কাল এবং ভবিষ্যতে এটি তুলে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মানদণ্ডও উল্লেখ করা উচিত।

২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং রেস্টোরেশন কাউন্সিল অব শান স্টেট/শান স্টেট আর্মি (আরসিএসএস/এসএসএ)—এর মতো অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কর্তৃক জোরপূর্বক নিয়োগের খবর পাওয়া গেছে।

শাসকগোষ্ঠী মিয়ানমার জান্তা ২০২৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তাদের সামরিক বাধ্যতামূলক আইন কার্যকর করেছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে সমালোচিত হয়েছে। জানুয়ারিতে নেপিদো কঠোর সামরিক আইনের নিয়ম জারি করে। তারা সামরিক সেবার বয়সের পুরুষদের দেশ ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

এদিকে, ২০০৯ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠিত এএ এবং এর রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লীগ অব আরাকান (ইউএলএ) মিয়ানমারের অন্যতম শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এএ মিয়ানমারের সর্ব উত্তরের কাচিন রাজ্যের কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মির (কেআইএ) সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৫ সাল পর্যন্ত তারা আরাকানে বড় ধরনের সামরিক কার্যকলাপ শুরু করেনি।

এরপর, ২০১৬-২১ সাল পর্যন্ত অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সরকারের সময় এএ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর অপারেশন ১০২৭-এর পর ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের আরও দুই গোষ্ঠী টিএনএলএ এবং এমএনডিএএ উত্তর শান রাজ্যে দ্রুত অগ্রগতির পরপরই এএ ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর রাখাইনজুড়ে আক্রমণ শুরু করে।

হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ফোরাম ফাউন্ডেশনের এপ্রিলের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এএ-এর এখন ৩০ হাজারের বেশি সৈন্য রয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই ২০২১ সাল থেকে যোগ দিয়েছে বলে মনে করা হয়। এএ আরাকানের ১৭টি জনপদের মধ্যে ১৪টি এবং পার্শ্ববর্তী চিনল্যান্ডের পালেতওয়া জনপদ নিয়ন্ত্রণ করে। রাজ্যের রাজধানী সিত্তে, কিয়াউকফিউয়ের গভীর সমুদ্রবন্দর এবং মানাউং দ্বীপ এখনো জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে।

আরাকান আর্মি এক সদস্য ডিভিবিকে বলেন, ‘এটি (এএ-এর জোরপূর্বক সামরিক সেবা) সঠিক কাজ। আমরা আমাদের মুক্তির জন্য লড়ছি। তরুণদের দায়িত্ব এবং নেতৃত্বের ভূমিকা নেওয়া উচিত। তাদের অংশগ্রহণে আমরা দ্রুত এবং আরও কার্যকরভাবে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।’

এএ এখন একাধিক ফ্রন্টে লড়ছে। কারণ গত বছর থেকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এর হামলার শিকারও হচ্ছে গোষ্ঠীটি। জানুয়ারিতে এএ আরাকান অভিযান পার্শ্ববর্তী আইয়ারওয়াদি, মগওয়ে এবং বাগো অঞ্চলে প্রসারিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল

দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে—অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার কবলেও পড়েছিলেন। তবে সৌভাগ্য এই যে, দুই ঘটনায়ই তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন!

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বন্ডাই বিচে আহত অস্ত্রোভস্কি একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী। রক্তে ভেজা শরীর ও ব্যান্ডেজে মোড়ানো অবস্থায় তিনি অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে এখানে এসেছিলাম। চারদিকে শিশু, বৃদ্ধ, পরিবার—সবাই আনন্দ করছিল। হঠাৎ করেই সবকিছু বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। চারদিকে গুলির শব্দ, মানুষ দৌড়াচ্ছে, লুকোচ্ছে—পুরো জায়গা জুড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক।’

অস্ত্রোভস্কি জানান, কোন দিক থেকে গুলি আসছিল, তা কেউ বুঝতে পারছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি এক বন্দুকধারী চারদিকে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। শিশুদের মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখেছি, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের আহত হতে দেখেছি—এটা ছিল এক রক্তাক্ত বিভীষিকা।’

অস্ত্রোভস্কি এটাও জানান, তিনি ১৩ বছর ইসরায়েলে ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও তাঁর আছে। তাঁর ভাষায়, ‘সেই ঘটনার পর আবার এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখলাম। কখনো ভাবিনি অস্ট্রেলিয়ায়, তাও আবার বন্ডাই বিচের মতো জায়গায় এমন কিছু ঘটবে।’

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকা উদ্‌যাপনের সময় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৯ জন। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ‘চানুকাহ বাই দ্য সি’ নামে একটি অনুষ্ঠানের মাঝেই এই হামলা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পবেল প্যারেড এলাকায় একটি গাড়ি থেকে নেমে দুই সশস্ত্র ব্যক্তি এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যেই উৎসবের আনন্দ রূপ নেয় বিভীষিকায়। পর্যটন এলাকা জুড়ে একের পর এক গুলির শব্দ শোনা যায়।

ঘটনাস্থলে বহু মানুষকে আহত অবস্থায় ঘাসের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের একজনকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অপরজন আহত অবস্থায় আটক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৩
বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সশস্ত্র হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন এক পথচারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সেই পথচারী হাজারো মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।

ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরা ওই পথচারী পার্কিং লট থেকে দৌড়ে গিয়ে রাইফেল হাতে থাকা হামলাকারীকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। এরপর তিনি হামলাকারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং সেটি হামলাকারীর দিকেই তাক করেন।

অকস্মাৎ পেছন থেকে জাপটে ধরায় হামলাকারী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পিছু হটেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পথচারীর এমন সাহসী পদক্ষেপে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।

যদিও ওই পথচারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে তাঁর এই অবিশ্বাস্য সাহসিকতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হিরো (একজন সাধারণ বেসামরিক) হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন। কেউ কেউ সাহসী আর কেউ কেউ...এই ধরনের।’ অন্য একজন বলেছেন, ‘এই অস্ট্রেলিয়ান বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসীদের একজনকে নিরস্ত্র করে অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছেন। হিরো।’

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স এটিকে তাঁর দেখা ‘সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই লোকটি একজন প্রকৃত হিরো। তিনি নির্ভয়ে হামলাকারীর দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করলেন এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করলেন। আমি নিশ্চিত যে, ওই ব্যক্তির সাহসিকতার জন্যই অনেক মানুষ বেঁচে আছেন।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও হামলার সময় অন্যদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা নাগরিকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই অস্ট্রেলীয়রা বিপদেও ছুটে গেছেন অন্যদের রক্ষা করতে। তাঁদের সাহসিকতাই অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

উল্লেখ্য, গুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত হামলাকারীসহ ১২ জন নিহত বলে জানা গেছে। দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। এ ঘটনায় তৃতীয় কোনো বন্দুকধারী জড়িত ছিলেন কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তির জন্য ন্যাটোর আশা ছাড়ার ইঙ্গিত দিল ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৬
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসানে শান্তি আলোচনার পথ সুগম করতে গিয়ে ন্যাটো জোটে যোগদানের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জার্মানির বার্লিনে বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি জানান—ন্যাটো সদস্যপদের বদলে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে শক্তিশালী ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেলে সেটিকে একটি সমঝোতা হিসেবে বিবেচনা করতে প্রস্তুত কিয়েভ।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জেলেনস্কি বলেন, শুরু থেকেই ইউক্রেনের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ন্যাটো সদস্যপদ, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর গ্যারান্টি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই পথে সমর্থন না দেওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হচ্ছে। তাঁর ভাষায়—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘আর্টিকেল ফাইভ’-এর মতো প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি এবং ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব নিশ্চয়তা অবশ্যই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হতে হবে।

এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। কারণ দেশটির সংবিধানেই ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে এটি রাশিয়ার যুদ্ধলক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল রুশ বাহিনী। তবে বর্তমানে তারা ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের দখলও নিতে চাইছে। তবে মস্কোর কাছে ভূখণ্ড ছাড় না দিতে এখনো অনড় রয়েছে ইউক্রেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার দাবি করে আসছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে হবে এবং সেখানে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করা যাবে না।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের চাপের মুখে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বার্লিনে আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রায় চার বছর আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের অবসানে অগ্রগতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন—ইউক্রেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে একটি ২০ দফা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যার শেষ ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, ইউক্রেন সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা করছে না।

ইউরোপীয় মিত্ররা এই সময়টিকে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য একটি ‘সংকটজনক মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছে। একই সঙ্গে রুশ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, তাপ ও পানিসেবা অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানবিক সংকটও গভীর হচ্ছে। জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে ইউক্রেনের জনগণের ওপর সর্বোচ্চ ক্ষতি চাপিয়ে দিতে চাইছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঁচে ফেরা ২ শিক্ষার্থী বেঁচেছিলেন স্কুল জীবনেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ফাইনাল পরীক্ষার সময় সংঘটিত এই হামলায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার জন্য অনেক শিক্ষার্থী ডেস্কের নিচে লুকিয়ে পড়েছিলেন। তবে ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা অন্তত দুই শিক্ষার্থীর কাছে নতুন কিছু ছিল না। এর আগেও তাঁরা স্কুল জীবনে এই ধরনের গোলাগুলির মুখে পড়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২১ বছর বয়সী মিয়া ট্রেটা এবং ২০ বছর বয়সী জোয়ে ওয়েইসম্যান—দুজনেই অতীতে ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে বন্দুক হামলার শিকার হয়েছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বেশি যে অনুভূতিটা হচ্ছে তা হলো—এই দেশ কীভাবে আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে দিল?’

শনিবার কালো পোশাক পরা এক বন্দুকধারী ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে গুলি চালানো শুরু করলে ক্যাম্পাসে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহভাজন হামলাকারী দীর্ঘ সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় শত শত পুলিশ রাতভর ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায়।

ওয়েইসম্যান তখন নিজের ডরমিটরিতেই ছিলেন। এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তিনি জানতে পারেন ক্যাম্পাসে গুলিবর্ষণ চলছে। প্রথমে ভয় পেলেও সেই আতঙ্ক দ্রুত ক্ষোভে রূপ নেয়। এনবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, জীবনে আর কখনো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে না। আট বছর পর আবারও সেই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।’

২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে নিজের মিডল স্কুলের পাশের একটি হাইস্কুলে ভয়াবহ শুটিং প্রত্যক্ষ করেছিলেন ওয়েইসম্যান। ওই ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছিল।

অন্যদিকে, মিয়া ট্রেটা ২০১৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে সগাস হাইস্কুলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তখন ১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করে, যাদের একজন ছিলেন ট্রেটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গুলিতে ট্রেটার পেট গুরুতরভাবে জখম হয়েছিল।

শনিবারের ঘটনার সময় নিজের ডরমিটরিতে পড়াশোনা করছিলেন ট্রেটা। তিনি মূলত যে ভবনে হামলাটি ঘটে সেখানে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ক্লান্ত বোধ করায় শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান—যা কার্যত তার প্রাণ বাঁচায়।

এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘদিনের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্যমতে, চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৯টি গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫০০-এর বেশি।

ট্রেটা ও ওয়েইসম্যান দুজনই বলছেন, তাঁরা কখনো ভাবেননি দ্বিতীয়বার এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমি নিজেকে বোঝাতাম—পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা আর কখনো ঘটবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আর কেউই এমন নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত