Ajker Patrika

বিদ্রোহী ও চীনকে এক টেবিলে আনছে মিয়ানমারের বিরল মৃত্তিকা, সুযোগ খুঁজছে ভারতও

আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৫, ২৩: ৪৭
কাচিনের একটি খনিতে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: সংগৃহীত
কাচিনের একটি খনিতে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের বিরল মৃত্তিকা খনি অঞ্চলকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে এক জটিল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মধ্যে সংঘাত চলছে। এ সংঘাতে চীন ও ভারতের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলোর স্বার্থও জড়িয়ে পড়েছে।

এই সংঘাতের ফলে বিরল মৃত্তিকার সরবরাহব্যবস্থায় বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটেছে, যার প্রভাব পড়েছে বিশ্বব্যাপী। চীনের বাজারে এ খনিজগুলোর মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কাচিন রাজ্যে বিরল মৃত্তিকা খনন এবং বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেআইএ এবং চীনের মধ্যে আলোচনা চলছে। একই সময়ে ভারতও এই অঞ্চলের খনিজ সম্পদে আগ্রহ দেখাচ্ছে এবং কাচিন রাজ্যে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবরে উত্তর মিয়ানমারের বিরল মৃত্তিকা খনি অঞ্চল সশস্ত্র বিদ্রোহীরা দখল করে নেয়। এটি দেশটির বিপর্যস্ত সামরিক জান্তার জন্য ছিল ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।

কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) বিদ্রোহীরা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক ভারী বিরল মৃত্তিকা উৎপাদনকারী স্থানগুলো দখল করে নিয়েছে। ফলে বায়ু টারবাইন এবং বৈদ্যুতিক গাড়িতে ব্যবহৃত খনিজগুলোর সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদানের দাম এখন আকাশছোঁয়া।

বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত দুই ব্যক্তি জানিয়েছেন, কেআইএ প্রতিবেশী চীনের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। চীন জান্তাকে সমর্থন করে এবং মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে বিরল মৃত্তিকা খননে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে।

আগে প্রকাশিত হয়নি এমন চীনা কাস্টমস ডেটা অনুসারে, মিয়ানমার থেকে চীনের বিরল মৃত্তিকা অক্সাইড এবং যৌগ আমদানি ফেব্রুয়ারিতে ৩১১ টনে নেমে এসেছে। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৯ শতাংশ কম। চীনের আমদানিতে সবচেয়ে বড় পতন ঘটেছে অক্টোবরের পর।

মিয়ানমারের বিরল মৃত্তিকাশিল্প এবং এর চার বছরের গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে রয়টার্স ৯ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, খনি অঞ্চলে অস্থিরতা চলছে।

তাঁদের মধ্যে একজনের মতে, কেআইএর পদক্ষেপ জান্তা এবং চীনের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা।

কাচিন সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে অধ্যয়নকারী অলাভজনক সংস্থা কাচিনল্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ড্যান সেং লন বলেছেন, কেআইএ চীনের সঙ্গে তাঁদের আলোচনায় বিরল মৃত্তিকা মজুতকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।

এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন ব্যক্তি ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ২০২৪ সালের শেষের দিকে ভারতের একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিরল মৃত্তিকা খনন ও পরিশোধন সংস্থার কর্মকর্তারা কাচিনে গিয়েছিলেন।

কেআইএ মিয়ানমারের বৃহত্তম এবং প্রাচীনতম জাতিগত মিলিশিয়াগুলোর মধ্যে একটি। এটি খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী কাচিন সংখ্যালঘুদের স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করে। তারা দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ করে আসছে।

মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের বিরল মৃত্তিকা খনি। ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের বিরল মৃত্তিকা খনি। ছবি: সংগৃহীত

কাচিন রাজ্যের পানওয়া এবং চিপওয়ে শহরের আশপাশে কর্মরত বেশির ভাগ চীনা পরিচালিত বিরল মৃত্তিকা খনি থেকে কেআইএ মোটা অঙ্কের কর আরোপ করেছে বলে কাচিনল্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের ড্যান সেং লন এবং একজন চীনা খনি বিশ্লেষক জানিয়েছেন।

২০২১ সালে একটি বেসামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চীন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অন্যতম দৃঢ় আন্তর্জাতিক সমর্থক। বেইজিং এখনো জান্তাকে তাদের সীমান্তের স্থিতিশীলতার রক্ষক হিসেবে দেখে। যদিও ২০২৩ সালে একটি বড় বিদ্রোহী অভিযানের পর সামরিক বাহিনী বেশির ভাগ সীমান্ত অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তাঁরা খনি অঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে অবগত নয়। তবে তাঁরা উত্তর মিয়ানমারের শান্তি প্রক্রিয়াকে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করে এবং সম্ভাব্য সব সমর্থন ও সহায়তা দেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কেআইএ এবং জান্তার একজন মুখপাত্র রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি। মার্কিন সরকার আগে এই অঞ্চলের খনিগুলোর অপারেটর হিসেবে চিহ্নিত করা বাওন মিয়াং কোং লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

মূল্যবৃদ্ধি

সাংহাই মেটালস মার্কেটের তথ্য অনুসারে, কাচিনে উৎপাদিত সেই বিরল মৃত্তিকা টার্বিয়াম অক্সাইডের চীনা বাজারমূল্য সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ২১ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজিতে ৬ হাজার ৫৫০ ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে।

গত ৬ মাসে ডিসপ্রোসিয়াম অক্সাইডের চাহিদা কম ছিল। এ সময়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমে প্রতি কেজি ১ হাজার ৬৬৫ ইউয়ানে নেমে এসেছে।

কাচিন থেকে আসা বেশির ভাগ বিরল মৃত্তিকা চীনে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। তাই দীর্ঘ মেয়াদে সরবরাহ ব্যাহত হলে বৈশ্বিক প্রভাব হবে তীব্র।

গবেষণা সংস্থা অ্যাডামাস ইন্টেলিজেন্স ফেব্রুয়ারির একটি নোটে বলেছে, দীর্ঘ মেয়াদে সরবরাহ ব্যাহত হলে চীনে এ বিরল মৃত্তিকার মূল্য আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে।

মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের চিপওয়ে-পানওয়া অঞ্চলটি বৈদ্যুতিক যান এবং বায়ু টারবাইনগুলোতে ব্যবহৃত ভারী দুর্লভ মৃত্তিকার অন্যতম প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের চিপওয়ে-পানওয়া অঞ্চলটি বৈদ্যুতিক যান এবং বায়ু টারবাইনগুলোতে ব্যবহৃত ভারী দুর্লভ মৃত্তিকার অন্যতম প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

রপ্তানিতে ধস

বেইজিং অভ্যন্তরীণ খনিগুলোর ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার পর একুশ শতকের প্রথম দশকে চীনা খনিশ্রমিকেরা কাচিনে বড় ধরনের কার্যক্রম শুরু করেন।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল উইটনেসের মতে, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর জান্তার নীরব সম্মতিতে কাচিনের অনিয়ন্ত্রিত খনিগুলো ক্রমাগত প্রসারিত হয়েছে।

কিন্তু এই প্রবৃদ্ধি একটি বড় মূল্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এবং স্যাটেলাইট চিত্র অনুসারে, পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে এবং কাচিনের পাহাড়গুলো লিচিং পুলে ভরে গেছে।

দখলের পর কেআইএ বিদ্রোহীরা ২০ শতাংশ কর আরোপ করায় স্থানীয় অপারেটররা লাভের মুখ দেখছেন না। ড্যান সেং লন বলেন, কেআইএ চায়, চীন যেন জান্তার কাছে অস্ত্র জমা দিতে তাঁদের ওপর চাপ দেওয়া বন্ধ করে এবং বিদ্রোহীদের সীমান্ত অঞ্চলের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দেয়। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দলগুলোর মধ্যে অন্তত দুবার বৈঠক হয়েছে।

কেআইএ দখল করা অঞ্চলগুলোর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। জান্তাবিরোধী গোষ্ঠীগুলো মিয়ানমারের বাকি সীমান্ত অঞ্চলের বেশির ভাগ অংশ শাসন করে।

ড্যান সেং লন বলেন, বেইজিং কেআইএর দাবিগুলো মেনে নিতে অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে। তবে চীন এ ক্ষেত্রে বাস্তব অবস্থান না নিলে মিয়ানমারের বিরল মৃত্তিকা সংগ্রহ ও মজুতে দেশটির একচেটিয়া আধিপত্য ঝুঁকির মুখে পড়বে।

কেআইএ বিদ্রোহীরা খনিজ খাতকে নিজেদের আওতায় পুনরায় চালু করলে এটি তাঁদের সবচেয়ে বড় আর্থিক খাত হবে। গ্লোবাল উইটনেসের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে মিয়ানমারের ভারী বিরল মৃত্তিকার বাণিজ্য প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ছিল।

রয়টার্স গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, কেআইএ কাচিনের খনিশ্রমিকদের চীনে বিদ্যমান বিরল মৃত্তিকার মজুত পাঠানোর অনুমতি দেবে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিরল মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞ থমাস ক্রুমের বলেন, পূর্ণ সক্ষমতায় খনির কার্যক্রম আবার শুরু করতে চীনের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে কেআইএকে। কেননা এখানে হাজারো দক্ষ চীনা কর্মী রয়েছেন। তাঁদের ছাড়া এটা কোনোভাবেই কাজ করবে না।

ভারতের বিকল্প?

চলমান টানাপোড়েনের মধ্যে ভারত কাচিনে প্রভাব বাড়াতে চেষ্টা করেছে। ড্যান সেং লন এবং ভারতীয় কর্মকর্তাদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিচিত দুজন ব্যক্তি এমনটিই জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ভারতীয় সূত্র অনুসারে, ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খনি ও পরিশোধন সংস্থা আইআরইএল ডিসেম্বরে কাচিনের খনিজ সম্পদ অধ্যয়নের জন্য সেখানে একটি দল পাঠিয়েছে।

ভারতীয় সূত্রটি জানিয়েছে, সশস্ত্র বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অরাষ্ট্রীয় অঞ্চলে কাজ করার বিষয়ে আপত্তি রয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের। তবে কাচিনের চীনবিমুখতা ও নয়াদিল্লির সম্পদের প্রয়োজনে দুই পক্ষকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করেছে।

এ বিষয়ে আইআরইএল রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ড্যান সেং লন বলেন, আইআরইএলসহ একটি ভারতীয় প্রতিনিধিদল ডিসেম্বরে কাচিনদের সঙ্গে বিরল মৃত্তিকা খাত আবার চালু করার বিষয়ে তাদের আগ্রহ নিয়ে একটি অনলাইন বৈঠকও করেছে। তারা (ভারত) চীনের চেয়ে বেশি দাম দিতে ইচ্ছুক ছিল।

তবে ক্রুমের এবং ড্যান সেং লন বলেন, ভারতের যেকোনো চুক্তিতে একাধিক বাধা রয়েছে। পাহাড়ি এবং জনবসতিহীন কাচিন-ভারত সীমান্তে অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। এ কারণে মিয়ানমার থেকে প্রতিবেশী ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহন করা কঠিন। সেই রাজ্যগুলো ভারতের দক্ষিণ ও পশ্চিমের উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে অনেক দূরে অবস্থিত।

ক্রুমের এবং ভারতীয় সূত্র অনুসারে, ভারতের ভারী বিরল মৃত্তিকা বাণিজ্যিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করার এবং শিল্পে ব্যবহৃত চুম্বকে রূপান্তর করার ক্ষমতাও নেই।

বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ বিরল মৃত্তিকার চুম্বক চীনে উৎপাদিত হয়। এ খাতকে কঠোর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অধীনে নিয়ে এসেছে সি প্রশাসন। এ খাতে চীনের পরই রয়েছে জাপান।

ড্যান সেং লন বলেন, তবু বেইজিং ‘ক্ষমতার তাল’ ধরতে না পারলে কেআইএ ‘বিকল্প পথ’ খুলতে বাধ্য হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বেঙ্গালুরুতে ‘বুলডোজার রাজ’: ৪০০ মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ, তোপের মুখে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রায় ২০০টি ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার ফলে অন্তত ৪০০ মুসলিম পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ছবি: এক্স
প্রায় ২০০টি ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার ফলে অন্তত ৪০০ মুসলিম পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ছবি: এক্স

কর্ণাটক সরকারের এক বিশাল উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজনীতিতে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে প্রায় ২০০টি ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার ফলে অন্তত ৪০০ মুসলিম পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস এবং কেরালার বাম ফ্রন্টের মধ্যে শুরু হয়েছে নজিরবিহীন বাগ্‌যুদ্ধ। বিরোধীদের দাবি, উত্তর ভারতের বিতর্কিত ‘বুলডোজার রাজ’ এখন কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারও অনুসরণ করছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ ডিসেম্বর (সোমবার) ভোর ৪টার সময় বেঙ্গালুরুর কোগিলু গ্রামের ফকির কলোনি ও ওয়াসিম লেআউটে এই অভিযান চালায় বেঙ্গালুরু সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। ৪টি জেসিবি (এক্সকাভেটর) এবং ১৫০ জনের বেশি পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে এই উচ্ছেদ চালানো হয়।

বর্তমানে কয়েক শ মানুষ তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তার ওপর অস্থায়ী তাঁবু বা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। ছবি: এক্স
বর্তমানে কয়েক শ মানুষ তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তার ওপর অস্থায়ী তাঁবু বা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। ছবি: এক্স

বেঙ্গালুরুতে যখন বছরের সবচেয়ে বেশি শীত বিরাজ করছে, ঠিক তখনই এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের দাবি, কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই পুলিশ তাদের জোরপূর্বক বের করে দিয়েছে। অনেক পরিবার তাদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং আসবাব সরিয়ে নেওয়ারও সময় পায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তারা প্রায় ২৫ বছর ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছে। তাদের প্রত্যেকের কাছে বৈধ আধার কার্ড এবং ভোটার আইডি রয়েছে।

উচ্ছেদ হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই শ্রমজীবী ও অভিবাসী। বর্তমানে কয়েক শ মানুষ তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তার ওপর অস্থায়ী তাঁবু বা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সবচেয়ে সোচ্চার হয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়ন। তিনি কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুবিরোধী রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘দুঃখজনক, কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারের অধীনে এখন সংখ্যালঘুবিরোধী রাজনীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে। যখন কোনো সরকার ভয় এবং পাশবিক শক্তির মাধ্যমে শাসন করে, তখন সাংবিধানিক মূল্যবোধ ও মানবিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়।’

কেরালার আরেক মন্ত্রী ভি শিবনকুট্টি এই ঘটনাকে ১৯৭৫ সালের ‘জরুরি অবস্থা’র ক্রূরতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। সিপিআইয়ের (এম) একটি প্রতিনিধিদল উচ্ছেদস্থল পরিদর্শন করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় একটি ‘উচ্ছেদবিরোধী কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

সমালোচনার মুখে কর্ণাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার তাঁর সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তিনি বলেছেন, এলাকাটি মূলত একটি আবর্জনা ফেলার ভাগাড় ছিল এবং ভূমি মাফিয়ারা এটিকে বস্তিতে রূপান্তরের চেষ্টা করছিল।

শিবকুমার দাবি করেন, তাঁরা কাউকে কষ্ট দিতে চান না, বরং সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে চান। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বুলডোজার সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না। পিনরাই বিজয়নের মতো প্রবীণ নেতাদের মাঠের বাস্তবতা না জেনে মন্তব্য করা উচিত নয়।’

তবে অনেকেই বলছেন, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ক্ষমতায় আসা কংগ্রেস সরকারের এমন ‘বুলডোজার’ নীতি তাদের ভাবমূর্তিকে সংকটে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন বন্ধুপ্রতিম দলগুলোই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় হামলা: ‘বড়দিনের উপহার’ বলে উদ্‌যাপন ট্রাম্প প্রশাসনের, স্থানীয়রা বলছেন—‘কখনো আইএস দেখিনি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের ছোড়া মিসাইল নাইজেরিয়ার জাবো গ্রামের একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কয়েক মিটার দূরে আছড়ে পড়েছিল। ছবি: এপির সৌজন্যে
যুক্তরাষ্ট্রের ছোড়া মিসাইল নাইজেরিয়ার জাবো গ্রামের একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কয়েক মিটার দূরে আছড়ে পড়েছিল। ছবি: এপির সৌজন্যে

নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যের জাবো গ্রামের মানুষের কাছে এবারের বড়দিনের রাতটি ছিল এক বিভীষিকার নাম। যুক্তরাষ্ট্রের ছোড়া একটি মিসাইল গ্রামের একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাত্র কয়েক মিটার দূরে আছড়ে পড়ার পর থেকে ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা চরম আতঙ্ক ও বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে সন্ত্রাসীদের জন্য ‘বড়দিনের উপহার’ হিসেবে অভিহিত করলেও স্থানীয়রা বলছেন, তাঁর এলাকায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম-গন্ধও নেই। তাঁরা কখনো আইএস দেখেননি।

সোকোটো রাজ্যের তাম্বুওয়াল জেলার মুসলিমপ্রধান কৃষিভিত্তিক জনপদ জাবোর বাসিন্দা সুলেমান কাগারা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তিনি একটি বিকট শব্দ শোনেন এবং মাথার ওপর দিয়ে আগুনের গোলার মতো কিছু একটা উড়ে যেতে দেখেন। মুহূর্তের মধ্যেই সেটি সশব্দে মাটিতে আছড়ে পড়ে এবং ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ভয়ে গ্রামবাসীরা দিগ্‌বিদিক জ্ঞান হারিয়ে পালাতে শুরু করেন।

কাগারা বলেন, ‘আমরা কাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমাদের জীবনে আমরা এমন ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি।’

এদিকে হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অভিযান চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, এই জঙ্গিরা বছরের পর বছর ধরে নিরীহ খ্রিষ্টানদের হত্যা করছে। তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে জাবোর মানুষ আকাশ থেকে পড়েছে।

সুলেমান কাগারা জানান, জাবো গ্রামে মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিষ্টানরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। তাদের মধ্যে কোনো ধর্মীয় সংঘাত নেই। সোকোটো রাজ্যের তাম্বুওয়াল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বাশার ইসাহ জাবো বলেন, ‘এটি একটি শান্ত এলাকা। এখানে আইএস, লাকুরাওয়া বা অন্য কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কার্যক্রমের কোনো ইতিহাস নেই।’

বাশার ইসাহ আরও বলেন, মিসাইলটি গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে একটি খোলা মাঠে আঘাত হানে। এতে কেউ হতাহত না হলেও পুরো জনপদে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

নাইজেরিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয় পরে এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও নাইজেরিয়া যৌথভাবে সোকোটোর তানগাজা জেলার জঙ্গলে আইএসের আস্তানা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে তারা স্বীকার করেছে, অভিযানের সময় ব্যবহৃত গোলার ধ্বংসাবশেষ বা ‘ডেব্রিস’ জাবো গ্রাম এবং উত্তর-কেন্দ্রীয় কওয়ারা রাজ্যের কিছু এলাকায় গিয়ে পড়েছে। তারা এটাও দাবি করেছে, এতে কোনো বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়নি।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা নামদি ওবাসি মনে করেন, এই বিমান হামলা হয়তো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে কিছুটা দুর্বল করবে, কিন্তু নাইজেরিয়ার বহুমাত্রিক সহিংসতা শুধু সামরিক শক্তি দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, সুশাসনের অভাব, চারণভূমি ও পানির দখল নিয়ে কৃষক-পশুপালকদের জাতিগত দাঙ্গা এবং গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বই এই অস্থিরতার মূল কারণ।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ তুগার সিএনএনকে জানিয়েছেন, হামলার আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু এই অভিযানের অনুমতি দিয়েছেন। তবে নাইজেরিয়ার সাধারণ মানুষ মনে করছে, সন্ত্রাস দমনের নামে সাধারণ জনপদে এ ধরনের হামলা তাদের জীবনকে আরও অনিরাপদ করে তুলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দ্বিতীয়বার যুদ্ধবিরতিতে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাথফন নার্কফানিট ও কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী চা সেইহা সীমান্তবর্তী একটি চেকপয়েন্টে তিন দিন আলোচনার পর এই চুক্তিতে সই করেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাথফন নার্কফানিট ও কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী চা সেইহা সীমান্তবর্তী একটি চেকপয়েন্টে তিন দিন আলোচনার পর এই চুক্তিতে সই করেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার তিন সপ্তাহের ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষের পর অবশেষে একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের স্বাক্ষরিত একটি যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী—থাইল্যান্ডের নাথফন নার্কফানিট এবং কম্বোডিয়ার চা সেইহা সীমান্তবর্তী একটি চেকপয়েন্টে তিন দিন আলোচনার পর এই চুক্তিতে সই করেন। চুক্তির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো—উভয় পক্ষ বর্তমানে যে অবস্থানে রয়েছে, সেখানেই অবস্থান করবে। কোনো পক্ষই নতুন করে সেনা মোতায়েন বা অগ্রসর হতে পারবে না। যুদ্ধবিরতি টানা ৭২ ঘণ্টা টিকে থাকলে থাইল্যান্ড তাদের কাছে বন্দী ১৮ জন কম্বোডীয় সেনাকে মুক্তি দেবে।

সীমান্ত এলাকার বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিরাপদে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরার সুযোগ করে দেওয়া হবে এবং ল্যান্ডমাইন অপসারণে সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি কোনো পক্ষই সামরিক উদ্দেশে অন্যের আকাশসীমা ব্যবহার বা লঙ্ঘন করতে পারবে না।

গত জুলাই মাসেও প্রতিবেশী দুই দেশের সীমান্তে সংঘাত হয়েছিল। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সাময়িকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ট্রাম্প এই চুক্তির নাম দেন ‘কুয়ালালামপুর শান্তিচুক্তি’। এতে বিতর্কিত এলাকা থেকে ভারী অস্ত্র প্রত্যাহার এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি অন্তর্বর্তী পর্যবেক্ষক দল গঠনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতে সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায় এবং সংঘাত নতুন মাত্রা পায়।

থাই কর্তৃপক্ষের মতে, ৭ ডিসেম্বরের পর থেকে তাদের ২৬ জন সেনা এবং অন্তত ৪৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, কম্বোডিয়া জানিয়েছে তাদের ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, তবে সামরিক হতাহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি। দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সংঘাত চলাকালে থাইল্যান্ড এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে বিমান হামলা এবং ভারী কামানের গোলাবর্ষণ করেছে। পাল্টা জবাবে কম্বোডিয়া বিএম-২১ রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে আক্রমণ চালায়।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের একটি পর্যবেক্ষক দল এই শান্তি প্রক্রিয়া তদারকি করবে। থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই যুদ্ধবিরতিকে কম্বোডিয়ার ‘সততার পরীক্ষা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হলে থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার রাখে।

তবে, দীর্ঘ এক শতাব্দী ধরে চলা এই সীমান্ত বিরোধের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শান্তি কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বর্তমান এই চুক্তিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ কূটনৈতিক সমর্থন ছিল বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনা প্রযুক্তির প্রথম যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের ককপিটে প্রথম নারী ক্যাপ্টেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউ ইউয়ে সি৯১৯ উড়োজাহাজের প্রথম নারী ক্যাপ্টেন। ছবি: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
ইউ ইউয়ে সি৯১৯ উড়োজাহাজের প্রথম নারী ক্যাপ্টেন। ছবি: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি সি৯১৯ জেট পরিচালনায় প্রথমবারের মতো নারী ক্যাপ্টেন নিয়োগ দিয়েছে চীন। বিমান চালনা খাতের সক্ষমতা বাড়াতে বোয়িং ও এয়ারবাস চালানো অভিজ্ঞ পাইলটদের এই উড়োজাহাজ চালনায় নিয়ে আসছে দেশটি। এরই অংশ হিসেবে নিয়োগ পেলেন প্রায় এক দশকের বোয়িং ৭৩৭ চালানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইউ ইউয়ে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউয়ে ২০১৫ সালে গুয়াংজুভিত্তিক চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের পাইলট হিসেবে যোগ দেন। এরপর থেকে ‘জিরো এরর’ বা কোনো ভুল ছাড়াই বিমান চালানোর রেকর্ড নিয়ে এক দশকের পথ পাড়ি দিয়েছেন।

এই ন্যারোবডি উড়োজাহাজ প্রকল্প নিয়ে চীন পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছে। আর ইউ ইউয়ের মতো অনেক নারী পাইলট এই জেট চালানোর সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন। চীন নিজস্ব উড়োজাহাজ কর্মসূচি সম্প্রসারণের পাশাপাশি ধাপে ধাপে নারী পাইলটদের এগিয়ে আনতে চাইছে।

চলতি বছরের শুরুতে শীর্ষস্থানীয় পাইলটদের বাছাইয়ের সময় নির্বাচিত হন সিভিল এভিয়েশন ফ্লাইট ইউনিভার্সিটি অব চায়না থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইউ ইউয়ে। এরপর বোয়িং ৭৩৭ এবং এয়ারবাস এ৩২০-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীনের তৈরি সি৯১৯ উড়োজাহাজ পরিচালনার জন্য তাঁকে নিবিড় প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট করপোরেশন অব চায়না (কমাক) নির্মিত সি৯১৯ ২০২৩ সালের মে মাসে অভ্যন্তরীণ রুটে বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু করে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সফলভাবে পরিচালনার পর দেশটির তিন বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা চায়না সাউদার্ন, এয়ার চায়না ও চায়না ইস্টার্ন এই বিমানের ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরও বেশি সি৯১৯ বিমান বহরে যুক্ত হওয়ায় চায়না সাউদার্ন তাদের পাইলটদের পুনরায় প্রশিক্ষিত করার পরিকল্পনাও সম্প্রসারণ করছে।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম চায়না সিভিল অ্যাভিয়েশন নিউজ গত অক্টোবরে জানায়, কমাক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে দেশজুড়ে দক্ষ পাইলটদের সি৯১৯ পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। চীনের শীর্ষ তিনটি বিমান সংস্থা প্রত্যেকে অন্তত ১০০টি করে সি৯১৯ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা ২০৩০-এর দশক পর্যন্ত সরবরাহ করা হবে।

এই মাসে কমাকের একটি প্রকাশনীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউ ইউয়ে বলেন, ‘যখন আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমি এই বিমান (সি ৯১৯) চালানো দায়িত্ব নিতে আগ্রহী কি না, আমি এক সেকেন্ডের জন্যও দ্বিধা করিনি।’

সি ৯১৯ উড়োজাহাজ চালানোর লাইসেন্স পেতে সাংহাইয়ে কমাকের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কয়েক মাস ধরে নিবিড় প্রশিক্ষণ নেন ইউ ইউয়ে। শ্রেণীকক্ষের আলোচনার পাশাপাশি ফুল-ফ্লাইট সিমুলেটরের মাধ্যমে ইঞ্জিন বিকল হওয়া বা বৈরী আবহাওয়ার মতো সম্ভাব্য জরুরি পরিস্থিতি প্রস্তুতিও ছিল এই প্রশিক্ষণের অংশ।

সাক্ষাৎকারে ইউ ইউয়ে জানান, চীনের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর গুয়াংজু বাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের খুব কাছে তাঁর শৈশব কেটেছে। সে সময়ই পাইলট হওয়ার স্বপ্ন মনে দানা বাঁধে। যদিও পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় নারী ক্যাডেটদের অনেক বেশি বাধা অতিক্রম করতে হয়, তবুও তিনি দমে যাননি।

চীনের সিভিল এভিয়েশন সেক্টরে নারী পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার ও প্রশিক্ষক বাড়তে থাকায় তিনি বেশ খুশি। এই নারী পাইলট বলেন, ‘২০১১ সালে যখন আমি ফ্লাইট কলেজে ভর্তি হই, তখন নারী ক্যাডেট খুব কম ছিল। কিন্তু এরপর আরও অনেক তরুণী এই পুরুষপ্রধান পেশায় যুক্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে ক্যাপ্টেনও হয়েছেন। কমাকে আমার প্রশিক্ষকেরাও সবাই নারী ছিলেন।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘নারী পাইলটদের সাধারণত ক্যারিয়ার এবং পরিবার বা সন্তান লালন-পালনের মতো দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও যদি কেউ সফল হতে পারেন, তাহলে বলা যায়, তাঁরাই সবচেয়ে দৃঢ়চেতা নারী।’

চীন ১৯৫১ সালে পিপলস লিবারেশন আর্মির জন্য প্রথম ব্যাচে মোট ১৪ জন নারী পাইলটকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। ২০২৪ সালে চীনে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে কর্মরত নারী পাইলটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৪১ জনে। তাঁদের অধিকাংশেরই জন্ম ১৯৮৫ সালের পরে, যা তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের গড় বয়সের তুলনায় অনেক কম।

বর্তমানে বৈধ লাইসেন্সধারী চীনের সবচেয়ে বয়সী নারী বেসামরিক পাইলটের জন্ম ১৯৫৩ সালে, আর সবচেয়ে কম বয়সীদের জন্ম ২০০৫ সালে। তবুও, চীনের সিভিল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই খাতে নারী পাইলটের অনুপাত ২ শতাংশেরও কম।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এর তুলনায় ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সনদপ্রাপ্ত বেসামরিক পাইলটদের মধ্যে নারীর হার ছিল প্রায় ৯ শতাংশ।

তবে চীনের এভিয়েশন খাতের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি নারী নেতৃত্বের ভূমিকায় উঠে আসছেন। কমাকের নির্মাণাধীন ওয়াইডবডি উড়োজাহাজ সি৯২৯, যাকে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে, এর প্রধান নকশাবিদ একজন নারী। যাঁর নাম ঝাও চুনলিং। তিনি এর আগেও সি৯১৯ উড়োজাহাজের নকশা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত