Ajker Patrika

প্রতি ৭ মিনিটে মৃত্যু এক প্রসূতির, নারীরা জীবন দিয়ে মা হন যে দেশে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ১৮: ০৫
সন্তান কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক নারী। ছবি: এএফপি
সন্তান কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক নারী। ছবি: এএফপি

সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রায় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন নাফি সালাহু। তখন তাঁর বয়স ২৪ বছর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় মরতে বসেছিলাম। শরীরে এক ফোঁটা শক্তি ছিল না!’

তিনি যখন প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন, ঠিক তখনই নাইজেরিয়ায় চলছিল চিকিৎসকদের ধর্মঘট। ফলে সন্তান প্রসবে মেডিকেল সহায়তা পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। নাফিসা জানান, প্রায় তিন দিন অবর্ণনীয় যন্ত্রণা তিনি সয়েছেন। প্রসবপথে আটকে গিয়েছিল সন্তানের মাথা। সেভাবেই কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার কিংবা ওষুধ ছাড়া পড়ে থাকতে হয়েছে তাঁকে। তিন দিন পর এক চিকিৎসককে খুঁজে পাওয়া যায়, যিনি সি সেকশন করতে রাজি হন। নাফিসা সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও সন্তানটি বাঁচেনি!

নাফিসা বলেন, ‘এ ঘটনার ১২ বছর পর আমি মা হয়েছি। কয়েকবার সন্তান হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে নিয়তির হাতে সঁপে দিয়ে হাসপাতালে গিয়েছি। জানতাম, আমি জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু তখন আর ভয় লাগত না। প্রথম ডেলিভারির সময় যা সয়েছি, এরপর আর কত কষ্টই হতে পারে আমার!’

জরিপ বলছে, নাইজেরিয়ায় প্রতি সাত মিনিটে গড়ে একজন নারী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। সন্তান জন্মদানের জন্য নাইজেরিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। জাতিসংঘের সর্বশেষ (২০২৩ সালের) তথ্য অনুযায়ী, নাইজেরিয়ায় প্রতি ১০০ জন প্রসূতির মধ্যে একজন মারা যান প্রসবকালে বা এর পরপরই। ২০২৩ সালে বিশ্বের মোট মাতৃমৃত্যুর প্রায় ২৯ শতাংশই ঘটেছে নাইজেরিয়ায়। সংখ্যায় তা প্রায় ৭৫ হাজার।

পাঁচ বছর আগে হাসপাতালেই সন্তান জন্ম দেওয়ার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান চিনেনে এনওয়েজি। অনেকের জন্য সবচেয়ে যন্ত্রণার বিষয় হলো—এই ধরনের বহু মৃত্যু—বিশেষ করে প্রসবপরবর্তী রক্তপাতের মতো কারণে হওয়া মৃত্যুগুলো প্রতিরোধযোগ্য। ৩৬ বছর বয়সী এনওয়েজি দক্ষিণ-পূর্ব নাইজেরিয়ার ওনিৎশা শহরের একটি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর ভাই হেনরি আদেহ বলেন, ‘চিকিৎসকেরা রক্ত চাচ্ছিলেন, কিন্তু যতটুকু জোগাড় করা সম্ভব হয়েছিল তা যথেষ্ট ছিল না। রক্ত জোগাড় করতে আমরা সবাই ছোটাছুটি করছিলাম। বোনকে হারিয়ে আমি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারিয়েছি। আমার শত্রুরও যেন এই যন্ত্রণা সহ্য করতে না হয়। এটা সহ্য করার মতো নয়, মেনে নেওয়ার মতো নয়!’

মাতৃমৃত্যুর আরও কিছু সাধারণ কারণ হলো প্রসবকালে জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও অনিরাপদ গর্ভপাত। ইউনিসেফ নাইজেরিয়া অফিসের কর্মকর্তা মার্টিন ডলস্টেন বলেন, এই ‘অত্যন্ত উচ্চ’ মাতৃমৃত্যু হার একাধিক জটিল কারণের ফল। এর মধ্যে রয়েছে—দুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামো, চিকিৎসকের অভাব, ব্যয়বহুল চিকিৎসা, কুসংস্কার ও নিরাপত্তাহীনতা।

উইমেন অব পারপাস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের জাতীয় সমন্বয়কারী মাবেল অনউয়েমেনা বলেন, ‘সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু—কোনো নারীরই ভাগ্য হতে পারে না। কিন্তু নাইজেরিয়ার গ্রামাঞ্চলের নারীরা এখনো অনেক কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। তাঁদের ধারণা, হাসপাতালে যাওয়ার অর্থ সময়ের অপচয়। তাঁরা গাছগাছড়া ও ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পদ্ধতির ওপর ভরসা করেন। যে কারণে জরুরি চিকিৎসা বিলম্বিত হয়ে পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়।’

আবার দুর্গম পথের নানা কারণে অনেকের জন্য সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানোও অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে তাঁরা যদি কোনোভাবে পৌঁছাতেও পারেন, তারপরেও বিপত্তির শেষ নেই। অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ওষুধ বা প্রশিক্ষিত কর্মী—ফলে মানসম্পন্ন চিকিৎসা তাঁরা পান না।

নাইজেরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার মোট বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে—যেটি ২০০১ সালে আফ্রিকান ইউনিয়নের সঙ্গে করা চুক্তিতে প্রতিশ্রুত ১৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক কম। ২০২১ সালে নাইজেরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২১ কোটি ৮০ লাখ, কিন্তু সে সময় দেশে মাত্র ১ লাখ ২১ হাজার ধাত্রী (মিডওয়াইফ) ছিলেন। সে বছর গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবের অর্ধেকেরও কম একজন দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ করা মান অর্জনের জন্য নাইজেরিয়ায় আরও প্রায় ৭ লাখ নার্স ও ধাত্রী প্রয়োজন। পাশাপাশি দেশটির চিকিৎসক সংকটও ভয়াবহ। এই ভয়াবহ জনবল ও অবকাঠামো ঘাটতির ফলে অনেকেই হাসপাতাল বা ক্লিনিকমুখী হতে চান না।

জামিলা ইসহাক নামের এক নারী বলেন, ‘আমি আসলে হাসপাতালের ওপর তেমন ভরসা করি না, বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে গাফিলতি এত বেশি শুনেছি যে ভয় লাগে। আমার চতুর্থ সন্তানের সময় প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় ধাত্রী আমাদের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু আমরা গিয়ে দেখি, সেখানে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী নেই। তখন বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসি। বাড়িতেই সন্তান জন্ম হয়।’

নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কানো রাজ্যের এই বাসিন্দা এখন পঞ্চম সন্তানে জন্ম দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বেসরকারি ক্লিনিকে যাওয়ার কথা ভাবছি, কিন্তু খরচ এত বেশি যে কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।’

নাইজেরিয়ার ন্যাশনাল প্রাইমারি হেলথ কেয়ার ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির কমিউনিটি হেলথ সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক ড. নান্না সান্দাহ-আবুবাকার স্বীকার করেছেন যে দেশের মাতৃমৃত্যু পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তবে তিনি জানান, এই সংকট মোকাবিলায় সরকার নতুন একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে নাইজেরিয়া সরকার ম্যাটারনাল মোরালিটি রিডাকশন ইনোভেশন ইনিশিয়েটিভ—মামি নামে একটি প্রকল্পের পাইলট পর্যায় চালু করে। এই কর্মসূচিটি ধাপে ধাপে দেশের ৩৩টি রাজ্যের ১৭২টি স্থানীয় সরকার অঞ্চলে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে দেশের অর্ধেকের বেশি প্রসবসংক্রান্ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

ড. সান্দাহ-আবুবাকার বলেন, ‘আমরা প্রতিটি গর্ভবতী নারীকে শনাক্ত করি, জানি তাঁরা কোথায় থাকেন এবং তাঁদের গর্ভের সময়, প্রসব এবং পরবর্তী সময়টিতে সহায়তা করি।’ এখন পর্যন্ত ছয়টি রাজ্যে জরিপ চালিয়ে ৪ লাখ গর্ভবতী নারীর খোঁজ পাওয়া গেছে এবং তাঁদের সম্পর্কে জানা গেছে তাঁরা অ্যান্টিনেটাল ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন কি না। তাঁর মতে, পরবর্তী ধাপে এই নারীদের প্রয়োজনীয় সেবা ও চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে তাঁরা নিরাপদে সন্তান প্রসব করতে পারেন।

মামি প্রকল্প স্থানীয় পরিবহন নেটওয়ার্কের সঙ্গেও কাজ করবে, যাতে আরও বেশি নারী ক্লিনিকে পৌঁছাতে পারেন এবং স্বল্পমূল্যের সরকারি স্বাস্থ্যবিমায় অন্তর্ভুক্ত হতে উৎসাহিত হন। যদিও এই কর্মসূচির বাস্তব ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়, তবুও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে, নাইজেরিয়াও একসময় বিশ্বব্যাপী ইতিবাচক প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে।

স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি বেড়ে যাওয়ায় ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে মাতৃমৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। নাইজেরিয়ায়ও এই সময়ের মধ্যে কিছু উন্নতি হয়েছে, তবে মাত্র ১৩ শতাংশ।

মামি বা অন্যান্য উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার—বিশেষ করে বাজেট বরাদ্দ ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। ইউনিসেফের প্রতিনিধি মার্টিন ডলস্টেন বলেন, ‘এই উদ্যোগগুলো সফল হবে কি না, তা নির্ভর করবে পর্যাপ্ত অর্থায়ন, কার্যকর বাস্তবায়ন ও নিয়মিত নজরদারির ওপর।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনে এক সন্তান নীতির প্রবক্তার মৃত্যু, শ্রদ্ধার চেয়ে সমালোচনাই বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৬
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত

চীনে বিতর্কিত এক সন্তান নীতির প্রবক্তা পেং পেইইউনের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা নিবেদনের বদলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নীতিটি ঘিরে তীব্র সমালোচনা দেখা গেছে। গত রোববার বেইজিংয়ে ৯৬তম জন্মদিনের ঠিক আগমুহূর্তে পেংয়ের মৃত্যুতে চীনাদের প্রতিক্রিয়া অনেকটা নেতিবাচক।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে পেং পেইইউনকে নারী ও শিশুবিষয়ক কাজে ‘একজন অসাধারণ নেতা’ হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ছিলেন তিনি।

তবে চীনের জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং ওয়েবসাইট ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ভূমিষ্ঠ হতে না পারা শিশুরা ওপারে নগ্ন দেহে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

এনডিটিভি জানিয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চীনে দম্পতিদের কেবল একটি সন্তান নেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা কার্যকর করতে স্থানীয় কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে নারীদের গর্ভপাত ও বন্ধ্যাকরণ করতে বাধ্য করতেন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় বেইজিং এই এক সন্তান নীতি চালু করেছিল।

এর ফলে দীর্ঘ সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ থাকার পর চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে পড়ে এবং গত বছর টানা তৃতীয়বারের মতো জনসংখ্যা পড়তির দিকে ছিল।

ওয়েইবোতে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘যদি এই নীতি অন্তত ১০ বছর আগে শেষ করা হতো, তাহলে চীনের জনসংখ্যা আজ এভাবে ধসে পড়ত না!’

গত বছর চীনের জনসংখ্যা কমে ১৩৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সামনের বছরগুলোতে এই নিম্নগতি আরও ত্বরান্বিত হবে।

জনসংখ্যার নীতিনির্ধারক হিসেবে পেং জোর দিয়েছিলেন গ্রামীণ এলাকায়। একসময় চীনের গ্রামগুলোতে বড় পরিবার গড়ে তোলা দম্পতিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল, যাতে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানেরা তাঁদের দেখাশোনা করতে পারে। এ ছাড়া বংশ রক্ষার জন্য ছেলেসন্তানের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকায় মেয়েশিশুদের অবহেলা, এমনকি কন্যা ভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটত।

ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ওই শিশুগুলো যদি জন্ম নিত, তাহলে আজ তাদের বয়স প্রায় ৪০ হতো—জীবনের সেরা সময়।’

২০১০-এর দশকে এসে পেং প্রকাশ্যে তাঁর অবস্থান বদলান এবং বলেন, এক সন্তান নীতি শিথিল করা উচিত। বর্তমানে বেইজিং কমে যাওয়া জন্মহার বাড়াতে শিশু পরিচর্যা ভর্তুকি, দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও করছাড়ের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে।

জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটিতে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ায় বিষ্ণুমূর্তি গুঁড়িয়ে দিল থাই সেনারা, ভারতের তীব্র নিন্দা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৫
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট

কম্বোডিয়ায় হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাতের জেরে থাই সেনাবাহিনী এটি ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধপূর্ণ এলাকায় সম্প্রতি নির্মিত একটি হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের খবর আমাদের নজরে এসেছে। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতার ঐতিহ্যের অংশ। এই ধরনের কাজ সারা বিশ্বের অনুসারীদের মনে আঘাত দেয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কম্বোডিয়ার প্রেহ বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা জানান, ২০১৪ সালে নির্মিত মূর্তিটি থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার সীমানায় ছিল। তিনি এই ঘটনাকে প্রাচীন ও পবিত্র স্থাপত্যের ওপর আঘাত হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত জুলাই মাস থেকে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি হলেও চলতি মাসে পুনরায় সংঘাত শুরু হয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করে, কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমেই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পদের বিনাশ রোধ করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন /৮০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গুদামে রাখার পরিকল্পনা ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোস্টগার্ডের জাহাজ ভিগোরাসে আটক অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। ছবি: সংগৃহীত
কোস্টগার্ডের জাহাজ ভিগোরাসে আটক অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী আটক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে ঠিকাদার খুঁজছে। এই পরিকল্পনায় বিশাল সব শিল্প গুদাম বা ওয়্যারহাউস সংস্কার করে একসঙ্গে ৮০ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে আটকে রাখার কথা বলা হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের হাতে আসা এক খসড়া প্রস্তাবনার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

বর্তমানে আটককৃতদের দেশের যেখানে জায়গা পাওয়া যায় সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) এখন সেই পদ্ধতি বদলে একটি সুশৃঙ্খল ‘ফিডার সিস্টেম’ বা সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় যাতে দ্রুত দেশান্তর (ডিপোর্টেশন) নিশ্চিত করা যায়।

নথিতে বলা হয়েছে, নতুন গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের প্রথমে কয়েক সপ্তাহের জন্য প্রসেসিং সাইটে রাখা হবে। এরপর তাদের ৭টি বিশাল গুদামের কোনো একটিতে পাঠানো হবে, যার প্রতিটিতে ৫ থেকে ১০ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা থাকবে। সেখান থেকেই মূলত তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

বিশাল এই গুদামগুলো ভার্জিনিয়া, টেক্সাস, লুইজিয়ানা, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া এবং মিজৌরির প্রধান লজিস্টিক হাবগুলোর কাছাকাছি স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া ১৬টি ছোট গুদামে দেড় হাজার করে মানুষ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

মার্কিন স্বরাষ্ট্র বিভাগ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র ট্রিশা ম্যাকলাফলিন জানিয়েছেন, তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের এই প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারছেন না এবং গুদাম পরিকল্পনা নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতেও রাজি হননি। তবে এর আগে এনবিসি এবং ব্লুমবার্গ নিউজ গুদামগুলোকে আটক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে আইসিই-এর অভ্যন্তরীণ আলোচনার খবর দিয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লাখ লাখ অভিবাসীকে আটক ও বিতাড়ন অভিযানের পরবর্তী পদক্ষেপ হলো এই গুদাম পরিকল্পনা। এ বছর কংগ্রেস অভিবাসীদের আটকে রাখার জন্য ৪৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। সেই অর্থ ব্যবহার করে প্রশাসন পরিত্যক্ত কারাগার সচল করেছে, সামরিক ঘাঁটির অংশ বিশেষ সংস্কার করেছে এবং রিপাবলিকান গভর্নরদের সঙ্গে মিলে দুর্গম এলাকায় অভিবাসীদের জন্য তাঁবু শিবির তৈরি করেছে।

বর্ডার জার টম হোমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, চলতি বছর প্রশাসন ৫ লাখ ৭৯ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। আইসিই-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড এম লিয়নস গত এপ্রিলে এক সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমাদের এটাকে ব্যবসার মতো পরিচালনা করতে শিখতে হবে।’ প্রশাসনের লক্ষ্য হলো আমাজন যেভাবে তাদের প্যাকেজ পৌঁছে দেয়, ঠিক সেভাবেই অভিবাসীদের দ্রুত ফেরত পাঠানো।

তবে রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুদামে বিপুলসংখ্যক মানুষকে রাখা লজিস্টিক সমস্যা তৈরি করবে। এসব স্থাপনা মূলত মালামাল রাখার জন্য তৈরি, মানুষের বসবাসের জন্য নয়। সেখানে বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা বা সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের অভাব থাকে। এ ছাড়া আবাসিক এলাকা থেকে দূরে হওয়ায় হাজার হাজার মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা সেখানে নাও থাকতে পারে।

নিউ অরলিন্সের একজন অধিকারকর্মী তানিয়া উলফ বলেন, ‘এটি অমানবিক। মানুষকে পশুর মতো বিবেচনা করা হচ্ছে।’ আইসিই অবশ্য বলছে, তারা এই কাঠামোতে অনেক পরিবর্তন আনবে। সেখানে গোসলখানা, টয়লেট, রান্নাঘর, ডাইনিং এরিয়া, মেডিকেল ইউনিট এবং বিনোদন কেন্দ্রসহ প্রশাসনিক অফিস তৈরি করা হবে। কোনো কোনো কেন্দ্রে পরিবারের জন্য বিশেষ আবাসন ব্যবস্থাও থাকবে।

পরিকল্পিত গুদামগুলোর বেশির ভাগই রিপাবলিকান শাসিত এলাকায় হলেও দুটি বড় গুদাম ডেমোক্র্যাট শাসিত ভার্জিনিয়ার স্ট্যাফোর্ড এবং মিজৌরির ক্যানসাস সিটিতে করার কথা রয়েছে। আইসিই-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের শুরুতে আটক অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজারেরও বেশি, যা এযাবৎকালের রেকর্ড। তাদের মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের সাজা বা অভিযোগ নেই।

অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা বলছেন, এত বড় স্থাপনা পরিচালনা করা কঠিন হবে। বিশেষ করে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা কর্মী ও চিকিৎসা কর্মী পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যেমন, ফোর্ট ব্লিস সাইটে বর্তমানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা কর্মীর মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সাবেক আইসিই চিফ অব স্টাফ জেসন হাউজারের মতে, ‘গুদাম হয়তো অনেক পাওয়া যাবে, কিন্তু সেগুলো নিরাপদে চালানোর সক্ষমতা সব সময়ই জনবলের ওপর নির্ভর করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত