Ajker Patrika

গর্ভাবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস হলে সন্তান অটিস্টিক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে: গবেষণা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৮: ৪৬
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে শিশুদের মধ্যে অটিজমের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ বাড়ে। ছবি: এনডেবার হেলথ
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে শিশুদের মধ্যে অটিজমের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ বাড়ে। ছবি: এনডেবার হেলথ

গর্ভাবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস হলে নবজাতকের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। পূর্ববর্তী ২০২টি গবেষণার ৫ কোটি ৬০ লাখের মা-শিশু জোড়ার ডেটা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছেন গবেষকেরা।

ডায়াবেটিসই এ সমস্যাগুলোর মূল কারণ কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে যখন গর্ভাবস্থায় মায়েদের ডায়াবেটিস হয়, তখন শিশুদের স্নায়বিক বিকাশজনিত ব্যাধি ধরা পড়ার আশঙ্কা ২৮ শতাংশ বেশি থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে শিশুদের মধ্যে অটিজমের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডারের (এডিএইচডি) ঝুঁকি ৩০ শতাংশ এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকি ৩২ শতাংশ বাড়ে। এ ছাড়া যোগাযোগের সমস্যার ঝুঁকি ২০ শতাংশ চলাফেরার সমস্যা ১৭ শতাংশ এবং শেখার সমস্যা ১৬ শতাংশ বেড়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের তুলনায় গর্ভাবস্থার আগে মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে শিশুদের জন্য এক বা একাধিক স্নায়ুতন্ত্রজনিত রোগের ঝুঁকি ৩৯ শতাংশ বাড়ে।

গবেষণাটি দ্য ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রাইনোলজি জার্নালে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের হার ৯ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং এই হার ক্রমেই বাড়ছে।

গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত আগের সাতটি গবেষণায় ভাই-বোনদের মধ্যে তুলনা করা হয়েছে। যেখানে মায়ের ডায়াবেটিসের প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক বা জেনেটিক (জিনগত) কারণও এই ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত।

গবেষকেরা বলেন, যেসব নারীর ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাঁদের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা এবং তাঁদের শিশুদের পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এনওয়াইইউ গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের ডা. ম্যাগডালেনা জানেকা বলেন, ‘মায়েদের ডায়াবেটিসের সঙ্গে সন্তানদের অটিজমের সম্পর্ক রয়েছে, তা একটি পরিচিত ধারণা। এ ধরনের বড় আকারের ডেটার বিশ্লেষণ আমাদের বিভিন্ন গ্রুপের তুলনা করার সুযোগ দেয়। তবে এই ধরনের বিশ্লেষণ কারণ এবং প্রভাবের সম্পর্ককে প্রমাণ করতে সাহায্য করে না।’

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অটিজমের কারণ হিসেবে ভ্যাকসিনের ভূমিকা নিয়ে আরও গবেষণার আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে এ ধরনের দাবিগুলো আগেই গবেষণার মাধ্যমে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

অটিজম হলো একধরনের বিকাশজনিত সমস্যা, যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। সাধারণত তিন বছরের মধ্যে এটি প্রকাশ পেতে শুরু করে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর মধ্যে সামাজিক আচরণ, সম্পর্ক গঠন এবং কল্পনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখা যায় এবং তাদের পারস্পরিক যোগাযোগের দক্ষতা কম থাকে। অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বিভিন্ন মাত্রায় থাকতে পারে।

এটি কোনো রোগ নয়, বরং একটি ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বা বিকাশগত বৈকল্য। অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত তাদের পরিবেশের সঙ্গে মেলামেশা বা অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সমস্যা অনুভব করে। এই সমস্যাগুলো তাদের দৈনন্দিন জীবন ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলতে পারে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে চিকিৎসকদের জন্য হাতে প্রেসক্রিপশন লেখার নতুন নিয়ম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন পড়তে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অ্যামোক্সিসিলিন নাকি অন্য কিছু—চিকিৎসকের সেই দুর্বোধ্য হাতের লেখা অনেক সময় রোগী ও ফার্মাসিস্টদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবার সেই চিরাচরিত সমস্যার সমাধানে ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন (এনএমসি) দেশব্যাপী এক কঠোর নির্দেশ জারি করেছে। এখন থেকে চিকিৎসকদের অবশ্যই পরিষ্কার ও পাঠযোগ্য হাতের লেখায় প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরেই অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশনের কারণে ভুল ওষুধ সেবন এবং এর ফলে হওয়া শারীরিক ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন আদালত ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট এই বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নেন। আদালত স্পষ্টভাবে জানান, অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন ভুল ওষুধ এবং ভুল মাত্রার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যা শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আদালতের মতে, পাঠযোগ্য প্রেসক্রিপশন পাওয়া রোগীর সংবিধানপ্রদত্ত ‘স্বাস্থ্যের অধিকার’-এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এনএমসির দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী, রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে:

স্পষ্ট হাতের লেখা—প্রেসক্রিপশন অবশ্যই অস্পষ্টতামুক্ত এবং স্পষ্ট হাতের লেখায় লিখতে হবে। সম্ভব হলে বড় হাতের অক্ষরে (ক্যাপিটেল লেটার) লেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জেনেরিক নাম—প্রতিটি ওষুধের স্পষ্টভাবে জেনেরিক নামে লিখতে হবে।

তদারকি কমিটি—ভারতের প্রতিটি মেডিকেল কলেজে একটি করে সাব-কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি প্রেসক্রিপশন লেখার ধরন নিয়মিত তদারকি করবে এবং চিকিৎসকেরা নিয়ম মানছেন কি না, তা নিশ্চিত করবে।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ—মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে এখন থেকে ‘স্পষ্ট প্রেসক্রিপশন লিখন’-কে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

কেন এটি জরুরি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মনে করে, ওষুধের ভুল (medication error) বিশ্বব্যাপী রোগীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশনের কারণে ভুল ওষুধ বা ভুল মাত্রা সেবনের ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে। এনএমসির এই পদক্ষেপটি চিকিৎসাব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার একটি বড় ধাপ।

ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও প্রেসক্রিপশন স্পষ্ট করে লেখা নিয়ে উচ্চ আদালতের পুরোনো একটি নির্দেশনা রয়েছে। ২০১৭ সালে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) স্পষ্টভাবে বা বড় অক্ষরে বা ছাপানো আকারে দিতে চিকিৎসকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারির নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। স্বাস্থ্যসচিব এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি: অর্থায়ন বন্ধে যক্ষ্মা বিস্তারের শঙ্কা

  • চাকরি হারাতে যাচ্ছেন ৬২৮ কর্মচারী।
  • যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম।
  • ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ।
  • অর্থায়নের ঘাটতিতে শনাক্তসহ নানা ক্ষেত্রে ঘাটতি হবে।
  • নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হবে না বলে সচিবের আশ্বাস।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ০২
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি: অর্থায়ন বন্ধে যক্ষ্মা বিস্তারের শঙ্কা

দেশে দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের যক্ষ্মাপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবসহ ইতিমধ্যে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ। এগুলোর মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক অর্থায়ন বন্ধের কারণে জনবল হারিয়ে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চাপে পড়তে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এতে দেশে রোগটির প্রাদুর্ভাব বাড়বে।

সংক্রামক এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ যক্ষ্মার মোকাবিলায় সরকারের প্রধান কর্মসূচি হচ্ছে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি)। দীর্ঘদিন ধরে এই কর্মসূচিতে অর্থায়ন করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি। তবে ট্রাম্প সরকারের বৈশ্বিক কাটছাঁটের অংশ হিসেবে সংস্থাটি প্রায় এক বছর আগে তাদের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। চলতি মাসের ৩১ ডিসেম্বর গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে নতুন করে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অন্তত ৬২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। এর ফলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশে রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

প্রায় তিন দশক ধরে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে ‘সেক্টর কর্মসূচি’ নামে পরিচিত স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির অধীন অপারেশন প্ল্যানের (ওপি) আওতায়। ২০২৪ সালের জুনে এই কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের মাঝামাঝি সরকার সেক্টর কর্মসূচি বিলুপ্ত করে। বর্তমানে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাইকোব্যাকটেরিয়াল ডিজিজ কন্ট্রোল (এমবিডিসি) কর্মসূচির আওতায়।

চলতি মাসের শেষেই গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর এমবিডিসি কর্মসূচির পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী হাবিব স্বাক্ষরিত চিঠি পান এনটিপির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চিঠিতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর গ্লোবাল ফান্ডের ‘অর্থায়নসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত’ কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। এতে চুক্তি অনুযায়ী অনেকের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। নতুন অর্থের জোগান না এলে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে না।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন বছরের শুরু থেকে সারা দেশে প্রায় ৬৫০ কেন্দ্রে যক্ষ্মা শনাক্তকরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর আগে ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ হলে প্রায় সোয়া ২ হাজার কর্মী চাকরি হারান। ফলে মাঠপর্যায়ে অনেক এলাকায় রোগী শনাক্ত কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বলছে, দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যক্ষ্মাকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যক্ষ্মার উপসর্গ রয়েছে এমন প্রায় ৩০ লাখ মানুষের পরীক্ষা করা হয়। এতে মোট ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়। ২০১০ সালে দেশে যক্ষ্মায় আনুমানিক মৃত্যুহার ছিল প্রতি লাখে ৫৪ জন। কর্মসূচি বহাল থাকায় ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ২৬ জনে।

এদিকে শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৭ জন। এর মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর টিবি) রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৫৮ জন। প্রচলিত একাধিক ওষুধে কাজ না হলে তাকে বলা হয় মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট বা এমডিআর যক্ষ্মা।

এই অবস্থায় অর্থায়ন বন্ধ হলে বাধার মুখে পড়বে গুরুত্বপূর্ণ যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। ৬৪ জন ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার, ৪১৪ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি), ৬৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি), ১২ জন প্রোগ্রাম অফিসার, ৫৭ জন ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট, ১৫ জন ল্যাব সাপোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং একজন কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অফিসারের চাকরি ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিপির একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে সরকারের কথাবার্তা চলছে। কিন্তু গ্লোবাল ফান্ড আগামী জানুয়ারি থেকে আর অর্থায়ন করতে চাইছে না। এই অবস্থায় যাঁরা যক্ষ্মা কর্মসূচিতে কাজ করছেন, তাঁরা সবাই চাকরি হারাবেন বলে জানানো হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি লিখে অনুরোধ করা হয়েছে, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত যেন তাঁদের চাকরিতে রাখা হয়।

এমনিতেই যখন দেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের হার কম, সেখানে অর্থায়নের জটিলতা রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বড় বাধার মুখে ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে। এখন গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নও বন্ধ হলে রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সমস্যা তৈরি হবে। সরকার গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করছে। হয়তো তারা আবারও অর্থায়ন শুরু করবে, তবে এতে সময় লাগবে। এই সময়ে সরকারের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে কিছুটা জটিলতা দেখা দিতে পারে।’

কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর বলেন, কার্যকরভাবে যক্ষ্মা শনাক্ত করার লক্ষ্যে সরকার কিছু জিন এক্সপার্ট আলট্রা মেশিন কিনেছিল। অর্থায়ন বা যথেষ্ট লোকবল না থাকলে এগুলো অকেজো হয়ে যাবে। এতে রোগ নিয়ন্ত্রণে শূন্য স্থান (গ্যাপ) তৈরি হবে। এক্স-রে পরীক্ষার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রাথমিক নির্ণয়ের সুযোগ থাকায় রেডিওলজির ওপর চাপ কমে। এখন সেখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া যাদের ক্ষেত্রে কাশি দিয়ে কফ বের করে যক্ষ্মা শনাক্ত করা যায় না, তাদের জন্য মুখের লালা দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। সেটিও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরকারের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় মারা যায়। প্রতিদিন নতুন রোগী যোগ হয় ১ হাজার ৩৮ জন। দিনে মারা যায় ১২১ জন। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার রোগী বাড়ছে। রোগ নিরাময় হার সাধারণ যক্ষ্মায় ৯৫ শতাংশ হলেও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় মাত্র ৭০-৮০ শতাংশ। গত বছর ১ হাজার ৭৯৯ জন ওষুধ প্রতিরোধী রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এইচআইভি-আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর প্রধান কারণ যক্ষ্মা। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সেও সবচেয়ে বড় প্রভাবক হলো যক্ষ্মা। সংক্রামক এই রোগে আক্রান্তের বেশির ভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ।

এ বিষয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। অর্থায়ন বন্ধের বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল ফান্ড হয়তো একসঙ্গে অর্থায়ন কমাবে না বা সম্পূর্ণ বাতিল করবে না। যেটুকু অর্থায়ন তারা কমাবে, সরকার রাজস্ব থেকে তা পূরণ করবে। ফলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে কোথাও বাধা সৃষ্টি হবে না। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যক্ষ্মা পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হব। ওপি বন্ধ হওয়ার কারণে কোনো কাজই থেমে যায়নি। সরকার রাজস্ব খাত থেকে অর্থায়ন করে সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬৬.৫৭ শতাংশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৩৪
এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬৬.৫৭ শতাংশ

দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ফলাফল স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর প্রকাশ করে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভর্তি পরীক্ষায় পাস করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮১ হাজার ৬৪২ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ১২৮ জন এবং নারী পরীক্ষার্থী ৫০ হাজার ৫১৪ জন। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ হতে নম্বর যোগ করে অর্জিত স্কোরের ভিত্তিতে মেধা ও পছন্দক্রম অনুযায়ী ৫ হাজার ৬৪৫ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, আটটি মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটসমূহের ৫ হাজার ৬৪৫টি আসনের জন্য নির্বাচিত নারী পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ৬০৩ জন ও পুরুষ পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৪২ জন।

গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত দেশের ১৭টি কেন্দ্র ও ৪৯টি ভেন্যুতে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৫ হাজার ৬৪৫টি; যার মধ্যে এমবিবিএসের ৫ হাজার ১০০ ও বিডিএসের ৫৪৫টি।

বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৭ হাজার ৩৬১টি; যার মধ্যে এমবিসিএসের ৬ হাজার ১ ও বিডিএসের ১ হাজার ৩৬০টি। মোট ১৩ হাজার ৬টি আসনের বিপরীতে এ বছর মোট আবেদনকারী ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন। ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ২০ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতে যেসব খাবার মন শান্ত রাখবে

মো. ইকবাল হোসেন
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫২
শীতে যেসব খাবার মন শান্ত রাখবে

ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

মানুষের শরীরের গঠন অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। পৃথিবীর বেশির ভাগ প্রাণীর চেয়ে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য আলাদা পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যেমন চোখের যত্নে ভিটামিন এ, ত্বকের যত্নে ভিটামিন বি, হাড়ের যত্নে ভিটামিন ডি ইত্যাদি। এসব চাহিদা পূরণ করে খাবার খেলে শরীরে সুখের হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং আমাদের সুখানুভূতি হয়, মন শান্ত থাকে।

ডোপামিন হরমোনের জন্য খাবার

মন ভালো রাখার অন্যতম হরমোন ডোপামিন। এটি নিঃসরণে খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমাদের অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যত বাড়বে, ডোপামিনের নিঃসরণও তত বাড়বে। তাই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে গুড ফ্যাট বা ভালো চর্বিসমৃদ্ধ, গাঁজানো এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

সে ক্ষেত্রে চমৎকার খাবার হতে পারে শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজি। শিমের বিচি, মটরশুঁটি, বরবটিসহ অন্যান্য শাকসবজি ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে চমৎকার কাজ করে। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল, অলিভ অয়েল, টক দই ইত্যাদি খাবারও পর্যাপ্ত খেতে হবে। আঁশের উৎস হিসেবে লালশাক, পালংশাক, সবুজ শাক খেতে হবে। ভাজাপোড়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ডুবোতেলে ভাজা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

সেরোটোনিন হরমোনের জন্য খাবার

আমাদের মন ভালো রাখার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হচ্ছে সেরোটোনিন। ৯০ শতাংশ সেরোটোনিন উৎপন্ন হয় অন্ত্রের এন্টেরোক্রমাফিন কোষের এন্টেরিক নার্ভাস সিস্টেম থেকে। এ জন্য অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখা বেশি জরুরি। অন্ত্রের পেশি নড়াচড়ায় সেরোটোনিন সাহায্য করে। মাত্র ১ শতাংশ সেরোটোনিন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এই ১ শতাংশ সেরোটোনিন মুড, ঘুম, স্মৃতি, ক্ষুধা, মন ভালো থাকা ইত্যাদির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন ডি সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়ায়। খাবারের পাশাপাশি রাতে ভালো ঘুম সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে পরিমিত রেডমিট, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শিম, গাজরসহ সব ধরনের শীতকালীন সবজি এবং শীতের মিষ্টি রোদ দারুণ কাজ করে।

এ ছাড়া অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণসমৃদ্ধ খাবার, যেমন দারুচিনি, লবঙ্গ, হলুদ, ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে।

এন্ডোরফিন হরমোনের জন্য খাবার

শীতে শরীরে ব্যথার প্রকোপ কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। তবে এন্ডোরফিন নামক হরমোন প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা উপশম করে। শারীরিক বা মানসিকভাবে আহত হলে এন্ডোরফিন সক্রিয় হয়ে আমাদের ব্যথা নিরাময় করে। অতিরিক্ত ওজন, বিষণ্নতা, উচ্চ রক্তচাপ এন্ডোরফিনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। তবে কিছু খাবার আছে; যেগুলো খেলে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবারগুলো শরীরে ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এন্ডোরফিন নিঃসরণে সহযোগিতা করে। তাই শীতে মন ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পাতিলেবু, মোসাম্বি, পেয়ারা, কলা, জাম্বুরা ও কমলা খেতে হবে।

এর পাশাপাশি টমেটো, কাঁচা মরিচ, ক্যাপসিকাম ও পালংশাক শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর জোগান দিতে পারে; সঙ্গে মেটায় আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতিও।

এ ছাড়া শীতকালীন প্রায় সব শাকসবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং ক্যানসার প্রতিরোধী গুণসমৃদ্ধ। এগুলো যদি নিয়মিত খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। শীতকালীন পালংশাক, গাজর, টমেটো, বিটরুট, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি হয়ে উঠতে পারে সুস্থ থাকার অন্যতম হাতিয়ার। শীতকালীন সবজি ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে অত্যন্ত উপযোগী। তাই শীতকালে সুস্থতার অন্যতম চাবিকাঠি হতে পারে এসব সবজি।

আমাদের শরীরের অবহেলিত অঙ্গ ক্ষুদ্রান্ত্র। আমরা বিভিন্ন রকমের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই। সেসবের প্রভাব পড়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের ওপর। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারের ফলে আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমতে থাকে।

ফলে গ্যাসের সমস্যা, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল, কোষ্ঠকাঠিন্য বা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। আবার বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও কমে যায় এসব ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা। তাই সুস্থ থাকতে এবং মন ভালো রাখতে শীতকাল হতে পারে আপনার জীবনের সেরা সময়।

আরও যা মনে রাখবেন

খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে—

  • গ্যাস্ট্রিকসহ অন্যান্য ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।
  • লাল আটা এবং আঁশসমৃদ্ধ চালের ভাত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • ফার্মেন্টেড ফুড; যেমন টক দই বা পান্তা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • প্রতিদিন এক বেলা ৩০-৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস বা ব্যায়াম করতে হবে।
  • সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
  • অন্তত প্রতি ১৫ দিনে এক দিন কাছাকাছি দূরত্বে ঘুরতে যেতে হবে।
  • রাতে কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

পুষ্টিবিদ ও জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত