Ajker Patrika

বর্ণ পরিচয়, মোজোর মোড়কে কোরআনের আয়াত সদৃশ বাক্য—বাস্তব ভেবে ভাইরাল মিম

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ১০
বর্ণ পরিচয়, মোজোর মোড়কে কোরআনের আয়াত সদৃশ বাক্য—বাস্তব ভেবে ভাইরাল মিম

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বর্ণমালা পরিচিতি সম্পর্কিত বইয়ের একটি পৃষ্ঠা ভাইরাল হয়েছে। পৃষ্ঠাটিতে ব্যঞ্জনবর্ণ গ, ঙ ও ছ–এর বিপরীতে কিছু বাক্য রয়েছে। এতে লেখা—‘গ–তে গনিমতে মুমিন খুশি, ঙ–তে মূর্তি ভেঙে করব ভূষি, ছ–তে ছতর খুলো ওগো দাসী।’ ফেসবুকের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট, পেজ থেকে পৃষ্ঠা শেয়ার করে লেখা হচ্ছে, ‘অসভ্য বর্বর ইসলামি শিক্ষা, ৪–৫ বছরের বাচ্চাদের মুসলমানেরা একেবারে প্রকাশ্যে কিন্ডারগার্টেন মাদ্রাসায় শেখাচ্ছে।’ গত ১৫ মার্চ (শুক্রবার) ‘সনাতনী যোদ্ধা’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে পৃষ্ঠাটি শেয়ার করে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়।

আবার গত ১৯ মার্চ (মঙ্গলবার) দেশীয় কোমল পানীয় মোজোর বোতলের একটি ছবি ভাইরাল হয়। মোজোর বোতলের মোড়কে লেখা ছিল, ‘তিনি “মোজো”কে করেছেন হালাল এবং “কোক”কে করেছেন হারাম।’ পোস্টটি নিজের ওয়ালে শেয়ার দিয়েছিলেন দেশের বিতর্কিত ব্লগার আসাদ নূর। গত বুধবার (২০ মার্চ) বোতলের ছবিটি শেয়ার দিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় ব্যবসার নাম ধর্ম ব্যবসা।’

পরে পোস্টটি সংশোধন করে তিনি আগের ক্যাপশনের সঙ্গে যুক্ত করেন, ‘এই মিমটি যিনি বানিয়েছেন তাঁকে ধন্যবাদ।’ এই অংশ যুক্ত করার আগে তাঁর পোস্টে রিয়েকশন পড়েছিল ৩ হাজার ৯৭০টি। সংশোধনের পর রিয়েকশন পড়েছে ১ হাজার ৭৪৬টি। অর্থাৎ সংশোধনের আগেই তাঁর পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। 

এটি মিম ছিল না কি মোজোর বোতলের মোড়কটি বাস্তব?
গত বুধবার (২০ মার্চ) সকাল ৯টা ১২ মিনিটে জহিরুল ইসলাম নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মোজোর বোতলের ভাইরাল মোড়কের ছবিটি নিয়ে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। জহিরুল ইসলাম বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচের ফ্যাক্টচেকার। তিনি মোজোর বোতলের ভাইরাল মোড়কের ছবিটি পোস্ট করে জানান, ছবিটি সত্য নয়। এটি এডিট করা। এমন বাণী সংবলিত কোনো বোতল মোজো তৈরি করেনি।

তাঁর এই পোস্টে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ‘মুবিন’ নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে ম্যানশন করে কমেন্ট করেন। মুবিন কমেন্টের উত্তরে জানান, মোজোর বোতলের মোড়কের ছবিটি তিনিই এডিট করেছেন। আরেকটি কমেন্টে তিনি লেখেন, ‘কদিন আগে ভাইরাল হওয়া আদর্শলিপির এডিটেড পেজটা নিয়েও প্রচুর কন্ট্রোভার্সি তৈরি হয়েছিল। ওইটাও আমার এডিট করা ছিল।’

মোজোর বোতলের মোড়কে আয়াত সদৃশ লেখা নিয়ে বিতর্কিত ব্লগার আসাদ নূরের পোস্ট।ব্লগার আসাদ নূরের পোস্টের কমেন্টেও মুবিন নামের অ্যাকাউন্টধারী কমেন্ট করে জানান, মোজোর বোতলের মোড়কের এডিটের কাজটি তিনি করেছেন।

মোজোর বোতলের ভাইরাল মোড়কের ছবিটি নিয়ে একই দিন রাতে একটি ফ্যাক্টচেক ফটোকার্ড প্রকাশ করে দেশের আরেকটি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। তারাও জানায়, ‘ফেসবুক থেকে সংগৃহীত মোজোর বোতলের একটি ছবির ওপর এডিট করে এই লেখাগুলো যুক্ত করার পর তা বাস্তব দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে, মোজোর মোড়কে বাস্তবে এমন কোনো বাক্য যুক্ত করা হয়নি।’

মুবিনের কমেন্টের সূত্রে তাঁর অ্যাকাউন্ট ঘুরে দেখা যায়, তিনি সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট করে থাকেন। এসব পোস্টের মধ্যেই গত ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁর ফেসবুক ওয়ালে বর্ণমালা পরিচিতি নিয়ে একটি বইয়ের পৃষ্ঠার ছবি সংবলিত পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটির সঙ্গে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের, ‘গ–তে গনিমতে মুমিন খুশি, ঙ–তে মূর্তি ভেঙে করব ভূষি, ছ–তে ছতর খুলো ওগো দাসী।’ পড়ানো হচ্ছে দাবিতে ভাইরাল ছবিটির মিল পাওয়া যায়।

মুবিন তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘আসুন ভাষার মাসে বর্ণমালা শিখি।’ পোস্টটিতে তিনি নিজেকেই ক্রেডিট বা কৃতজ্ঞতা দেন। আগেও ফ্যাক্টওয়াচের ফ্যাক্টচেকারের ফেসবুক পোস্টের কমেন্টবক্সেও তিনি নিশ্চিত করেছেন এটি তাঁর এডিট করা। পরে অধিকতর সত্যতা নিশ্চিতের জন্য মুবিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। তিনি জানান, মোজোর বোতলের মোড়ক এবং বর্ণমালার বইয়ের পৃষ্ঠাটি তাঁরই এডিট করা।

অর্থাৎ, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের ‘গ–তে গনিমতে মুমিন খুশি, ঙ–তে মূর্তি ভেঙে করব ভূষি, ছ–তে ছতর খুলো ওগো দাসী।’ এমন কোনো বর্ণমালা পরিচিতি পড়ানো হয় না।

গ–তে গনিমতে মুমিন খুশি–লেখা বর্ণমালার পৃষ্ঠাটি মুবিন নামে একজন ব্যবহারকারীর এডিট করে বানানো।তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় এসব মিম বানানোর উদ্দেশ্য কী? তিনি আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘তাঁর উদ্দেশ্য একটাই— সেটা হচ্ছে, মানুষকে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা। এটা একেকজন একেকভাবে করে, আমি হয়তো মিম বানিয়ে করি। আমার ভাইরাল হওয়া প্রথম মিমটাই যদি ধরেন, এটার ছন্দ হিসেবে যা বসিয়েছি, এগুলো কিন্তু ইসলামের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কেউ এগুলো অস্বীকার করতে পারবে না। সেই সঙ্গে এইটাও ঠিক, মোল্লারা আমার মতো রাফভাবে এগুলো উপস্থাপন করে না। করলেও ইনিয়ে–বিনিয়ে ভদ্রভাবে উপস্থাপন করে।

‘একটা মাদ্রাসায় ইসলামের অভ্যন্তরীণ নিয়মকানুনই শিক্ষা দেওয়া হয়, তো, আমার লেখা ছন্দের মতো এই সব স্পর্শকাতর ও পরমত বিদ্বেষী বিষয়গুলোকে যদি এভাবে উপস্থাপন করা হয় তাহলে তার চিত্রটা কেমন দাঁড়াবে, সেটারই একটা চিত্ররূপ বলতে পারেন এই আদর্শলিপির এডিটেড পেজটিকে। কারণ যে বইতে আজ গানবাজনাকে, আনন্দ–উৎসবকে, ছবি আঁকার মতো সৃজনশীল কাজকে খারাপ বলা হচ্ছে, সেই বইতেই কাল আরও ভালো ভালো শৈল্পিক কাজগুলোকে খারাপ হিসেবে আখ্যায়িত করা হতে পারে। আর ধর্মের রেফারেন্স দিয়ে বিবেকবর্জিত কাজগুলোকে ভালো কাজ বলে চালিয়ে দেওয়া হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিন্দু থেকেই যেহেতু সিন্ধু হয়, তাই বিন্দুতেই এসব সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রতা, আর মান্ধাতা আমলের নিয়মকানুন, যা বর্তমান বিশ্বে অচল, এগুলোকে রুখতে না পারলে আমাদের নিজেদের চোখের সামনেই বেড়ে উঠবে এমন এক প্রজন্ম, যারা তালেবানের মতো মূর্তি ভাঙবে, বাদ্যযন্ত্র গুঁড়িয়ে দেবে, আর নারীদের মধ্যযুগীয় বর্বর নিয়মকানুনে আবদ্ধ করবে। এখন মানুষ যদি এগুলোকে রিয়েল ভাবে, তাহলে তো আরও ভালো, এটা তো কোনো অপপ্রচার না, বরং ধর্মের ‘মহান’ বাণী প্রচার। মুমিনরা তো আমাকে এর জন্য বাহবা দেওয়ার কথা।’

মোজোর মিমটি সম্পর্কে মুবিন বলেন, ‘এখানে বসানো লেখাটাও আমার কথা না, বরং দেশীয় বকধার্মিকদের মনের কথা, তাঁরা কোক বয়কট করে যেভাবে মোজোকে প্রোমোট করতেছেন, তা দেখেই ধারণাটা আমার মাথায় এলো! মনে হলো যেন স্বয়ং আল্লাহই ওহি পাঠিয়ে মোজোকে হালাল আর কোককে হারাম করে দিয়েছেন। এই সামান্য পানীয় নিয়ে যতটুকু উন্মাদনা, এর সিকিভাগও সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, অবৈধ টেন্ডারবাজি বা দ্রব্যমূল্য মজুত করে দাম বাড়ানো ওলাদের ক্ষেত্রে দেখি না। এই ব্যাপারগুলোর একটা স্যাটারিক্যাল প্রতিবাদ হচ্ছে এই মিম।’

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘গ–তে গান বাজনা ভালো নয়। ঙ–তে রং তামাশার সময় নাই। ছ–তে ছবি আঁকা ভালো নয়।’ এমন বর্ণমালা পরিচিতির একটি ছবি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভাইরাল এই পৃষ্ঠার সত্যাসত্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে এসব মিম অনেকেই সত্য ধরে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হচ্ছে। বিভ্রান্তি তৈরি করার সম্ভাবনা থাকে এমন কনটেন্টের বিষয়ে সঠিক তথ্য মানুষকে জানানো উচিত কি না এমন প্রশ্নে মুবিন বলেন, ‘কেউ যদি স্যাটায়ার না বোঝে, তার জন্য তো আমি এসব বানানো বন্ধ করে দিতে পারি না। বরং আরও বেশি বেশি বানাতে পারি, যাতে করে তারা আরও বেশি বেশি এসবের সম্মুখীন হয় এবং ব্যাপারগুলো এদের কাছে নর্মালাইজ (স্বাভাবিক) হয়ে ওঠে।’

মুবিনের মতে, বিবেকের দরজায় বারবার কশাঘাত করলেই চিন্তার মুক্তি ঘটার সম্ভাবনা বাড়ে। তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে কশাঘাত করছি তার ওপর ব্যাপারটা নির্ভরশীল নয়, আমি মৃদুভাবে বা কর্কশভাবে যেভাবেই কশাঘাত করি না কেন, সেটা ওদের মাথা অবধি পৌঁছাচ্ছে কি না, সেটাই কথা।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

জামায়াত-এনসিপির প্রার্থী হওয়ার চেয়ে লং স্ট্যান্ডিং পজিশন ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ: মাহফুজ আলম

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

জামায়াত-এনসিপির প্রার্থী হওয়ার চেয়ে লং স্ট্যান্ডিং পজিশন ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ: মাহফুজ আলম

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

জামায়াত-এনসিপির প্রার্থী হওয়ার চেয়ে লং স্ট্যান্ডিং পজিশন ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ: মাহফুজ আলম

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৩
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

জামায়াত-এনসিপির প্রার্থী হওয়ার চেয়ে লং স্ট্যান্ডিং পজিশন ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ: মাহফুজ আলম

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

জামায়াত-এনসিপির প্রার্থী হওয়ার চেয়ে লং স্ট্যান্ডিং পজিশন ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ: মাহফুজ আলম

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত