Ajker Patrika

ফ্যাক্টচেক /ট্রেনের নিচে পড়া ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিটি বেঁচে আছেন

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১৯ মে ২০২৫, ১৭: ২৮
চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে ফোন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে পালানোর সময় চাকায় পিষ্ট হয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে ফোন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে পালানোর সময় চাকায় পিষ্ট হয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে মোবাইল ফোন চুরি করতে গিয়ে যাত্রীদের হাতে ধরা পড়েন এক ব্যক্তি। পালাতে গিয়ে একপর্যায়ে ট্রেনের চাকায় নিচে পড়ে তিনি মারা গেছেন।—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। একই ক্যাপশনে ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে ছড়ানো হয়েছে।

ভিডিওতে একটি চলন্ত ট্রেনের দরজায় এক যুবককে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। পরক্ষণেই তাঁর পা মাটি স্পর্শ করতে দেখা যায়। দ্রুত গতিতে চলমান ট্রেনের গতির সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু না পেরে আবার ঝুলে যান। ট্রেনটি একপর্যায়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে। দরজায় ঝুলন্ত অবস্থায়ই প্ল্যাটফর্মে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু একপর্যায়ে ট্রেনের নিচে পড়ে যান। ওই সময় দেখা যায়, দরজার ভেতর থেকে কেউ তাঁর হাত ধরে রেখেছে। ট্রেনটি প্লাটফর্মে প্রবেশ করার পরপরই স্টেশনের নামফলকে ‘নশরৎপুর’ লেখা দেখা যায়।

হৃদয়ে বাংলাদেশ’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি গতকাল রোববার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘আহ্, চুরি করতে গিয়ে নিজের প্রাণটা বিলিয়ে দিল। চোর হলেও তার পরিবারের কথা ভেবে মায়া লাগছে। ট্রেনের জানালা দিয়ে চুরি করতে গিয়ে যাত্রীদের হাতে ধরা পড়ে যায় যুবক, অতঃপর পালানোর জন্য চেষ্টা করতে গেলে একপর্যায়ে ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়ে যায়।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Khan Saddam নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল রোববার (১৮ এপ্রিল) রাত ৮টা ২০ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। এর ক্যাপশনে লেখা, ‘মোবাইল ফোন চুরি করতে গিয়ে মৃত্যু!’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ভিডিওটি ২০ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ২৮৯টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৪৫টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৬২।

Md Eamin HossanH M Jonayed Ahmad নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে একই ভিডিও একাধিক সোশ্যাল মিডিয়াতে পাওয়া যায়। তবে এসব পোস্ট থেকে ঘটনাটির বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ ট্রেনের প্ল্যাটফর্মের নামফলকে ‘নশরৎপুর’ লেখার সূত্র ধরে ঘটনাস্থল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নশরতপুর (নশরৎপুর) রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। নশরৎপুর রেল স্টেশন সেখানেই অবস্থিত।

এর সূত্র ধরে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তাঁকে ঘটনার বিবরণ দিলে বলেন, ঘটনার বিষয়ে জানেন।

তিনি বলেন, ‘ট্রেনের নিচে পড়ে যাওয়া ব্যক্তি মারা যাননি। গতকাল তিনি আমাদের থানায় অভিযোগ দিতে এসেছিলেন। কিন্তু যেহেতু ঘটনাটি রেলস্টেশনে ঘটেছে তাই এটি আমাদের আওতাধীন নয়। তাই আমরা তাঁকে জিআরপির (রেলওয়ে পুলিশ) কাছে অভিযোগ করতে বলি। পরবর্তীতে তিনি সান্তাহার রেলওয়ে পুলিশের কাছে যান।’

তবে ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি ওসি মোস্তাফিজুর রহমান।

আজককের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ আদমদীঘি থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমানের ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করে। এ বিষয়ে ওসি হাবিবুর রহমানের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি বেঁচে আছেন। তিনি প্রথমে আদমদীঘি থানায় গিয়েছিলেন। আদমদীঘি থানা যখন বলেছে এটা রেলওয়ে পুলিশের বিষয় তখন এখানে আসেন। এসে এখানে শুধু প্রহরীর (সেন্ট্রি) সঙ্গে দেখা হয়। পরে ওনাকে আদমদীঘি থেকে ফোন করলে উনি আবার চলে যান।’

পরে আদমদীঘি থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানকে আবার ফোন কল করে সেই ব্যক্তি তাঁর থানায় দ্বিতীয়বার এসেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি ‘না’ সূচক জবাব দেন।

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে MD Rana Islam নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গতকাল রোববার (১৮ এপ্রিল) রাত ৯টা ০২ মিনিটে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। এই পোস্টে একটি ভিডিও ও একটি ছবি যুক্ত করা হয়েছে। ভিডিওটির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর মিল রয়েছে। তবে এটি ভিন্ন দিক থেকে ধারণ করা। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ট্রেনে ঝুলে থাকা ব্যক্তি, তাঁর পোশাক, ট্রেন, রেললাইন, প্ল্যাটফর্ম, প্ল্যাটফর্মের নাম ফলক— এসবের মিল পাওয়া যায়।

MD Rana Islam নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
MD Rana Islam নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

এই পোস্টে মো. রানা ইসলাম ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিকে নিজের বাবা দাবি করে লিখেছেন, ‘আমার বাবা চোর না। তিনি আদম বাপারীর ব্যাবসা করতো। যাকে বিদেশ পাটাইছে তার শালা ও তার বন্ধু রা মিলে তাকে মারার চেষ্টা করে ছিল। আপনারা দয়া করে আমার বাবা কে চোর মনে করবেন বা।’ (বানান অপরিবর্তিত)

এ বিষয়ে জানতে রানা ইসলামকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পক্ষ থেকে নক দেওয়া হয়। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই পোস্টের কমেন্টের সূত্র ধরে Tarek Rahman গতকাল রাত ৮টা ৪৪ মিনিটে একই ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেন, ভিডিওর ব্যক্তিটি তাঁর ফুপা। তিনি বেঁচে আছেন।

Tarek Rahman নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
Tarek Rahman নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, ‘আমরা কোন কিছু না বুঝে সবকিছু শেয়ার দেই এটা ঠিক না সম্পর্কে উনি আমার ফুপা উনি একজন আদম বেপারী কিছু ঝামেলার কারণে কয়দিন ধরে সমস্যা ছিল আজকে তাকে পেয়ে ট্রেনের মধ্যে মারধর করা শুরু করে পরে তিনি জীবন রক্ষাতে ট্রেন থেকে পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু তাকে জানে মারার চেষ্টা করে তার কাছে টাকা ছিল অনেক সেই টাকা তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় তারা_ আর ফেসবুকে তাকে চোর বানানো হয়েছে হায়রে সমাজ। বর্তমানে উনি বেঁচে আছেন কিন্তু এর পিছনে যাদের হাত আছে তাদের কঠোরতম শাস্তি দাবী জানাচ্ছি।’ (বানান অপরিবর্তিত)

এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টে উল্লেখিত ফোন নম্বরে কল করা হলে অপর প্রান্ত থেকে তারেক রহমান পরিচয়ে একজন কথা বলেন। ঘটনার ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান। তিনি সম্পর্কে তাঁর ফুপা। তিনি বেঁচে আছেন।

ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, ‘ওনার বাড়ি নওগাঁ জেলার রাণীনগর থানার পারইল গ্রামে। ওনার বাবা পারইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। গতকাল (রোববার) উনি বগুড়া থেকে আসার সময় কিছু লোক ওনাকে ফলো করে। পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে মোবাইল চুরির অপবাদ দেয় এবং মব সৃষ্টির চেষ্টা করে। একপর্যায়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়।’

তারেক রহমানের কাছ থেকে মতিউর রহমানের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাঁকে কল করলে অপর প্রান্ত থেকে একজন নারী রিসিভ করেন। তিনি মতিউর রহমানের স্ত্রী পরিচয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেন। মতিউর রহমান আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি ফোনটি মতিউর রহমানের কাছে দেন।

ঘটনার বিবরণ শুনে মতিউর রহমান আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘আমিই সেই ব্যক্তি।’

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল আমি বগুড়া থেকে ট্রেনে করে আসছিলাম। আমার সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা ছিল। সেই সময় ৭ জন আমাকে ফলো করছিল। তা আমি জানতাম না। যখন ট্রেন আলতাফনগর পার হয় তখন তারা আমাকে অ্যাটাক করে। আমাকে কিল ঘুষি দেয়। তারা সবাই মাস্ক পরা ছিল। একপর্যায়ে তারা চাকু বের করে মেরে ফেলার প্ল্যান করে। তখন তারা আমার হাতে চাকু দিয়ে আঘাত করে। তবে তাদের একজন বলে যে তারা ফেঁসে যাবে। তাই তারা ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার কথা বলছিল। তারা আমার হাত ছেড়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমি আবার ধরার চেষ্টা করি। একপর্যায়ে আমি বাইরে পড়ে যাই এবং ট্রেনের নিচে চলে যাই। সেসময় তারা আমাকে মোবাইল চোর হিসেবে সম্বোধন করেছিল।’

মতিউর রহমান আরও বলেন, ‘আমার পরিবারকে নিয়ে এই ঘটনায় আদমদীঘি থানা অভিযোগ দিতে গেলে থানা থকে জানানো হয় এটি রেল স্টেশনের ঘটনা, তাই অভিযোগ জিআরপিতে করতে হবে। পরে সান্তাহার রেলওয়ে থানায় গেলে সেখান থেকে জানান হয় আদমদীঘি থানায় যেতে। এখন পর্যন্ত কোনো থানাতেই অভিযোগ করতে পারিনি।’

ট্রেনে বিবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর রহমান বলেন, ‘আমি একজন আদম ব্যবসায়ী। আক্রমণকারীদের আত্মীয়ের একজন আমার মাধ্যমে বিদেশ গিয়েছিল। যিনি বিদেশ গেছেন, তিনি সেখানে গিয়ে চাকরি করেছেন। সেটা তারা না জেনেই আমার ওপর হামলা করেছে।’

তাঁর বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে গেছি। তবে পায়ে কিছুটা ব্যথা পেয়েছি। একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। আজকে ছুটি হয়ে যাবে।’

সুতরাং, চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে ফোন চুরি করার সময় যাত্রীদের কাছে ধরা পড়ে পালানোর সময় ট্রেনের চাকার নিচে পড়ে একজনের মৃত্যুর খবরটি সঠিক নয়। ওই ব্যক্তি বেঁচে আছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৩
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত