Ajker Patrika

বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর

ড. এম আবদুল আলীম
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি’ পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে এমন একসময়, যখন রাশিয়া-আমেরিকার কর্তৃত্বের লড়াইয়ে ইউক্রেন পুড়ছে ক্ষেপণাস্ত্রসহ অত্যাধুনিক সব অস্ত্রের আগুনে। শুধু কি তা-ই? পরাশক্তিগুলোর প্রভাব বিস্তার এবং অস্ত্র ব্যবসায়ের প্রতিযোগিতায় চলছে শান্তি বিনাশী নানা তৎপরতা, যাতে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার তাগিদে গড়ে ওঠা প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ পরিণত হয়েছে ঠুঁটো জগন্নাথে। এ ছাড়া বিশ্বশান্তি তথা বিশ্বমানবের কল্যাণে গড়ে ওঠা অন্য প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। শান্তি ও মানবতার ধুয়া তুলে আন্তর্জাতিক নানা আইন তৈরি ও চুক্তি সম্পন্ন হলেও সেগুলো লঙ্ঘন করে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্বে প্রায়ই মানুষের রক্তে হোলি খেলা হচ্ছে পৃথিবীর দেশে দেশে। কিন্তু এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না।

এবার আসি বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তিপদক প্রাপ্তি প্রসঙ্গে। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে তিনি এই আন্তর্জাতিক পদক লাভ করেন। সংগত কারণেই প্রশ্ন আসে, কেন তিনি এই পদক লাভ করেছিলেন? এই উত্তরের সন্ধানে আমাদের ফিরে তাকাতে হয় অন্তত ৭০-৭৫ বছর পেছনে; বঙ্গবন্ধুর জীবন, সংগ্রাম ও চিন্তাদর্শের দিকে। তাঁর আবির্ভাব প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রণরক্ত অধ্যায় শেষে, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। কিন্তু ক্ষত তখনো শুকায়নি, যুদ্ধের অভিঘাতে বিশ্বমানবের জীবন তখনো ছিল বিপন্ন। সেই ধাক্কা সামলে না উঠতেই কিশোর মুজিব দেখলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠতে। দেখলেন তাতে দেশে দেশে মারণাস্ত্রের আঘাতে নারী, শিশু কেউই রেহাই পাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত হিরোশিমা-নাগাসাকির ভয়াবহ ট্র্যাজেডির পরিণামে এ যুদ্ধের অবসান ঘটলেও বিশ্ববাসীকে এর মূল্য দিতে হয়েছে বহু বছর। সেই বিশ্বযুদ্ধকবলিত বাংলায় আর্তমানবতার সেবায় যুবক বয়সেই শেখ মুজিব স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন। পরবর্তীকালে নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের একজন উদীয়মান রাজনীতিবিদ হিসেবে ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে যোগ দিয়েছিলেন চীন শান্তি সম্মেলনে। ওই সম্মেলনে তিনি বিশ্বের ৩৭টি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং বাংলা ভাষায় বক্তব্য তুলে ধরেন। সে প্রসঙ্গে তিনি বিস্তারিত লিখেছেন ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে। এর চার বছর পর তিনি আরেকটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন, যেটি অনুষ্ঠিত হয় স্টকহোমে। ১৯৫৬ সালের ৫ থেকে ৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিশ্বশান্তি পরিষদের ওই সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বশান্তি আমার মূলনীতি। নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত ও স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী মানুষ, যেকোনো স্থানেই হোক না কেন, তাদের সঙ্গে আমি রয়েছি। আমরা চাই বিশ্বের সর্বত্র শান্তি বজায় থাকুক, তাকে সুসংহত করা হোক।’

এই শান্তিকামী নেতা পূর্ববঙ্গের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বছরের পর বছর জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। অবশেষে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীন দেশের কর্ণধার হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তির বার্তা নিয়ে হাজির হন। বিশ্বরাজনীতি তখন মার্কিন-সোভিয়েত পরস্পরবিরোধী দুই পরাশক্তির কবজায়। উভয়ের নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছিল সামরিক জোট। বঙ্গবন্ধু কোনো জোটেরই অন্তর্ভুক্ত হননি। তিনি জোটনিরপেক্ষ নীতির ঝান্ডা হাতে বিশ্ববাসীর কাছে তাঁর পররাষ্ট্রনীতি তুলে ধরেছিলেন এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উচ্চারণ করেছিলেন, ‘আমরা সর্বপ্রকার অস্ত্র প্রতিযোগিতার পরিবর্তে দুনিয়ার সকল শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে বিশ্বাসী বলেই বিশ্বের সব দেশ ও জাতির বন্ধুত্ব কামনা করি। সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এই নীতিতে আমরা আস্থাশীল।’

জোটনিরপেক্ষতা এবং সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়—এই পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করলেও সব সময় তাঁর অবস্থান ছিল শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। তাই পৃথিবীর যেখানেই মানবতা বিপন্ন হয়েছে, যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রগুলোর অস্ত্রের ঝনঝনানিতে মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে, তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু স্বীয় অবস্থানের কথা দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘...ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, গিনি বিসাউসহ দুনিয়ার সকল উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের প্রতি আমরা জানিয়েছি অকুণ্ঠ সমর্থন। আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করি অন্যায়ভাবে আরব এলাকা ইসরায়েল কর্তৃক জোরপূর্বক দখলে রাখার বিরুদ্ধে। আমরা দ্বিধাহীন চিত্তে নিন্দা করি, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের সকল স্থানের বর্ণভেদবাদী নীতির। আমরা সমর্থন জানাই বিশ্বশান্তি, নিরস্ত্রীকরণ ও মানবকল্যাণের যেকোনো মহৎ প্রচেষ্টাকে।’ বিশ্বমোড়লদের অস্ত্র প্রতিযোগিতায় অর্থ ব্যয় করা দেখে তিনি মর্মাহত হয়েছিলেন। তাই বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি যে অর্থ ব্যয় করে মানুষ মারার অস্ত্র তৈরি করছে, সেই অর্থ গরিব দেশগুলোকে সাহায্য দিলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে।’ 

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেমন, তেমনি আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রেখেই তিনি আঞ্চলিক শান্তির ডাক দিয়েছিলেন। এমনকি বাঙালির ওপর নির্মম গণহত্যা চালানো পাকিস্তানকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো বৈরী ভাব পোষণ করি না। তোমাদের স্বাধীনতা তোমাদেরই রইল। আমাদেরও স্বাধীনতায় থাকতে দাও।’ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সম্পন্ন করেছিলেন ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি। ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা সফরের সময় রাজভবনে বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ইন্দিরা গান্ধী যে নৈশভোজসভার আয়োজন করেছিলেন, তাতে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন শান্তি প্রতিষ্ঠার এক অনন্য উক্তি। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার একান্ত কামনা, উপমহাদেশে অবশেষে শান্তি ও সুস্থিরতা আসবে।...দক্ষিণ এশিয়াকে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত করায় আমরা সচেষ্ট রইব। যেখানে আমরা সুপ্রতিবেশী হিসেবে পাশাপাশি বাস করতে পারি। যদি আমরা সেই দায়িত্বে ব্যর্থ হই, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।’ ১৯৭৪ সালের ৪ মার্চ দাউদকান্দির এক জনসভায় প্রায় একই চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে তিনি বলেন, ‘এই উপমহাদেশে আমরা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল আর শ্রীলঙ্কা মিলে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আমরা কারও সঙ্গে বিবাদ চাই না।’ এসব উক্তি কেবল বক্তৃতার মঞ্চ কাঁপানোর জন্য ছিল না, এসব ছিল তাঁর হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত বিশ্বাসের মর্মবাণী।

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্ক্ষা এবং বিশ্বমানবের কল্যাণে তাঁর চিন্তাকর্ম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং বন্ধুত্বের হাত বাড়ায়। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি পদক দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এ জন্য বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেনশিয়াল কমিটির সভায় ১৪০টি রাষ্ট্রের প্রায় ২০০ সদস্য সর্বসম্মতভাবে তাঁকে এ পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বঙ্গবন্ধুর জীবনব্যাপী সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদান এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ের কথা বিবেচনায় এনেই এ পদক দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে এশীয় শান্তি সম্মেলনের এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে জুলিও করি পদক পরিয়ে দেন বিশ্বশান্তি পরিষদের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল রমেশ চন্দ্র। একই সঙ্গে ওই পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার নন, তিনি বিশ্বের এবং তিনি বিশ্ববন্ধু।’ জুলিও কুরি প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এ সম্মান কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়। এ সম্মান বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের, স্বাধীনতার বীর সেনানীদের। জুলিও কুরি শান্তি পদক সমগ্র বাঙালি জাতির।’ এই পদক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করে।

বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৫০ সাল থেকে এ পদক প্রবর্তন করে। নোবেল বিজয়ী বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি বিজ্ঞানী জঁ ফ্রেডরিক জুলিও কুরি ও তাঁর স্ত্রী পিয়েরে কুরি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যে অবদান রেখেছেন, তা স্মরণীয় করে রাখতে পদকটির নামকরণ করা হয় ‘জুলিও কুরি’। ফ্যাসিবাদ-সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম, মানবতার কল্যাণ এবং বিশ্বশান্তির পক্ষে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনকে এই পদকে ভূষিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও ফিদেল কাস্ত্রো, সালভাদর আলেন্দে, হো চি মিন, ইয়াসির আরাফাত, নেলসন ম্যান্ডেলা, পণ্ডিত জওহর লাল নেহরু, পাবলো নেরুদা, মার্টিন লুথার কিং, নিওনিদ ব্রেজনেভ, ইন্দিরা গান্ধী, মাদার তেরেসা প্রমুখ এই পদক লাভ করেন।

বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তির এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বলতে হয়, বিশ্বশান্তি ও মানবকল্যাণে তিনি আজীবন যে সংগ্রাম করেছেন, সেই চেতনা সর্বত্র সঞ্চারিত হোক। দেশে দেশে বন্ধ হোক যুদ্ধ। মানবকল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বমোড়লদের বিবেক জাগ্রত হোক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত