মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

বিএনপি এবং কিছু কিছু দল আগামী নির্বাচন উপলক্ষে দেশে একটি দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও জোর দিয়ে বলছে। তাদের দল-নিরপেক্ষ সরকারের যুক্তির ভিত্তি হিসেবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে হাজির করছে। তাদের বক্তব্যে যেমন কিছু যৌক্তিকতা আছে আবার অনেক কিছুই তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যামতে। তা ছাড়া, দল-নিরপেক্ষ সরকারের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। দল-নিরপেক্ষ সরকারের অভিজ্ঞতা ১৯৯০-৯১ তে একভাবে হয়েছিল। আবার ১৯৯৬-২০০৮ পর্যন্ত অন্যভাবে হয়েছিল। সে কারণে যারা এখন দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি করছে, তারাও জোর দিয়ে করতে পারছে না, ১৯৯০-৯৬-এর মতো সমর্থনও পাচ্ছে না। নব্বইয়ের দশকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি ছিল সাময়িক সংকট থেকে উত্তরণের চিন্তা। সে কারণে বিষয়ের গভীরে না গিয়ে এটি অনেকটা সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের প্রেসক্রিপশন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতার হাতবদল সাময়িক কোনো প্রেসক্রিপশনে সমাধানযোগ্য নয়। সেই অভিজ্ঞতা তখন গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা না গেলেও পরবর্তী অভিজ্ঞতায় সংকটের নতুন নতুন জটিলতা অবধারিতভাবে রাষ্ট্রকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে, তেমন অভিজ্ঞতাই সঞ্চিত হয়েছে। সে কারণে নির্বাচনকালীন দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি নিয়ে এখন জনসমর্থন সেভাবে স্বতঃস্ফূর্ততা পাচ্ছে না। একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পর দাবি করা হয়েছিল, বিশ্বের অনেক দেশেই এটি অনুসরণ করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশের দুই-তিনটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ক্রমেই রাষ্ট্রকে ক্ষমতার হাতবদলের নানা অশুভশক্তির দিকে ধাবিত করার আশঙ্কা থেকে যেসব রাষ্ট্র ভাববে বলে অনুমান করা হয়েছিল, তার কোনোটিই ঘটেনি। ২০১১ সালের মে মাসে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে একটি রায় প্রদান করেন। এই রায়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ৩৪২ পৃষ্ঠায় যুক্তি, তথ্য, প্রমাণ ও দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের নানা খুঁটিনাটি উপস্থাপন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অনির্বাচিতদের হাতে যাওয়ার বিধান অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিকও বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এই রায় পরে জাতীয় সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পাস হয়। বিরোধী দলগুলো এই রায় এবং সাংবিধানিক সংশোধনীর বিরোধিতা করেছে। তবে ৩৪২ পৃষ্ঠার রায়টিতে আইন, রাষ্ট্র ও সংবিধানের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলোকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের দৃষ্টি ও বিবেচনাকে বিশেষভাবে চিন্তা করতে সহায়তা করেছে। যদিও আমাদের দেশে অনেকেই রাজনৈতিক সুবিধা ও বিবেচনাপ্রসূত অবস্থান থেকে এর সমালোচনা ও আক্রমণগুলো পোষণ করে আসছে। কিন্তু বর্তমান যুগের রাষ্ট্রব্যবস্থার সাময়িক কিংবা দীর্ঘমেয়াদি হস্তান্তরের জটিলতা সম্পর্কে অনেকেই অতলস্পর্শী ধারণা নিয়ে ভাবতে চায়। তবে সেই ভাবনার মধ্যে লুকিয়ে থাকে অনেক জটিল সংকট সৃষ্টির সুযোগ।
বাংলাদেশে সত্তর ও আশির দশকে সামরিক দুই সরকারের অধীনে বেশ কিছু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেগুলো অনেকটাই ছিল সামরিক সরকারগুলোকে বৈধতা দেওয়া। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে শিখণ্ডি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দল প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই দলকে নিরঙ্কুশ বিজয়ী করে আনা কিংবা রাষ্ট্রপতিকে ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট অথবা দৃশ্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কিন্তু কার্যত পূর্বপরিকল্পিত ছকে সামরিক শাসক এবং শাসক দলকে জিতিয়ে আনার নতুন নতুন অভিজ্ঞতা থেকেই দেশে নির্বাচনব্যবস্থার ওপর অনাস্থা তৈরি হতে থাকে। এর ফলে সরকার উৎখাতের আন্দোলন তীব্রতর হয়। সেই আন্দোলন ১৯৯০ সালে এসে নতুন বাঁক নেওয়ায় স্পষ্ট অনুমিত হতে থাকে যে সরকার উৎখাতের পর রাষ্ট্রের শূন্যতা পূরণে একটি সরকার প্রয়োজন। সেটি প্রায় সর্বসম্মতভাবে মেনে নেওয়া এবং বোধগম্যতার ফলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিকে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির স্থলে বসিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে একটি নির্বাচন করার ব্যবস্থা করা হয়।
সেখান থেকেই প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্ম। তখন বিদায়ী সরকার এবং তার দল ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনটি সরকারবদলের সাময়িক একটি ব্যবস্থাপত্র ছিল। কিন্তু সাংবিধানিক কিছু জটিলতা নির্বাচনের পরেই অনুভূত হতে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো তখন সরকার ও বিরোধী অবস্থানে চলে যাওয়ায় মূল সংকট ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি তাঁর পূর্ব পদে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আন্দোলনকালীন রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় দেখতে পান। সে ক্ষেত্রে তাঁকে পদত্যাগ করার হুমকিও দিতে হয়। রাষ্ট্রপতি বনাম সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার বাছাই নিয়েই নতুন সরকার দ্বিধাদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। সে যাত্রায় বাংলাদেশ সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় ফিরে আসার সাংবিধানিক আইনে ফিরে যায়। কিন্তু গঠিত নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন, উপনির্বাচন এবং অন্যান্য নির্বাচন আগের চেহারায় ফিরতে থাকে। ফলে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনকারী দলগুলোকে দাবি জোরদার করতে হয়! ক্ষমতাসীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় রাজি হয়নি। ফলে বিরোধী দল সংসদ থেকে পদত্যাগ করে রাস্তায় নেমে আসে। সরকার তাতেও কর্ণপাত করেনি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা একতরফা নির্বাচন করে। সব বিরোধী দলই ওই নির্বাচন বয়কট করে। ফলে সরকার ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে সরকার বাধ্য হয় বিরোধী দলগুলোর দাবি মানতে।
ওই সংসদে সংবিধানের ৫৮তম অনুচ্ছেদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রণয়নে সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করা হয়। ৫৮ অনুচ্ছেদে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি সরকার গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। তখন সবাই এটিকে নির্বাচনব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনার মহৌষধ মনে করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর বাস্তবে এর গঠন এবং কার্যকারিতা নিয়ে অভিজ্ঞতা দ্রুতই ফিকে হতে থাকে। সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বঙ্গভবন এবং গণভবনের মধ্যেই নয়, আরও কয়েকটি স্থানেও টানাটানি শুরু হয়ে যায়। নির্বাচনের প্রচারের তুঙ্গকালেই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার আলামত দৃশ্যমান হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং রাজনৈতিক মহলের চাপে সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম অভিজ্ঞতায় বড়সড় ধাক্কা খায়। দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় ২০০১ সালের ১৫ জুলাই সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে। শপথ গ্রহণের আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তুতি গ্রহণের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে। শপথের পরপরই তিনি সচিবসহ বিভিন্ন পদে ব্যাপক রদবদলের যে আদেশ জারি করেন, তা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পরিবর্তে বিদায়ী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দল ও জনমত তৈরির মানসিকতা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয় নির্বাচনী প্রচারে, কিছু অদৃশ্যশক্তি আওয়ামী লীগের প্রার্থী, ভোটার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চলাচল, ভোটদান ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে এবং পরে দেশে একটি রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে এবং একটি জোটের পক্ষে ছড়িয়ে যেতে দেখা যায়। এখানেই সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ধারণার ব্যত্যয় ঘটে। নেপথ্যে কে বা কারা কলকাঠি নাড়িয়েছিল, সেটি আজও রহস্যাবৃত। বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের এই নেপথ্য শক্তি কতটা শক্তিশালী ও ক্রিয়াশীল, সেটি ২০০১ সালের নির্বাচনে অনেকটা উন্মোচিত হয়।
জোট সরকার পরবর্তী পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ এবং অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করার বাইরে কোনো আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক সংস্কার ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোযোগ দেয়নি। সরকার পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের মতো করে গড়ে তোলার জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়াতেও দ্বিধা করেনি। পরবর্তী নির্বাচন নিজেদের ব্লুপ্রিন্ট মতো করতে সরকারপ্রধান সরাসরি জড়িতছিলেন। এ নিয়ে দেশে রাজনৈতিক সংকট তীব্রতর হয়। বিএনপি এবং জোটের মধ্যেও ভাঙন সৃষ্টি হয়। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের সেই তীব্র উত্তেজনাকর মুহূর্তগুলো বাংলাদেশে আবার ফিরে আসবে— এটি আগে কেউ ভাবতে পারেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংবিধানিক অনুচ্ছেদ (৫৮) ভঙ্গ করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কবর সেদিনই রচিত হয়েছে। সেই দায় বিএনপি-জামায়াতেই। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চারজন উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের রহস্যাবৃত ভূমিকায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নির্বাচন কমিশনেও চলছিল তুঘলকি কাণ্ড। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শূন্য চার পদে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁরাও এই জটিল পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থ ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এবং নির্বাচন কমিশন ২১ জানুয়ারি ২০০৭-এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অটল ছিলেন। দেশে তখন তীব্র আন্দোলন চলছিল। সে অবস্থায় বিনা ভোটে একের পর এক চারদলীয় জোটের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হচ্ছিল। দেশ-বিদেশে এ ধরনের নির্বাচন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনী রাষ্ট্রপতিকে বাধ্য করে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দিতে। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা করে নতুন আরেকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। এর কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ছিল। ত্ত্বাবধায়কসরকারব্যবস্থার নামে ২০০৬-০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশে যা ঘটেছিল তা নজিরবিহীন এবং দেশের জন্য বিপজ্জনক। এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা থাকার পর নতুন করে নির্বাচনকালীন দল-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিকল্পনা ফানুসের চেয়ে কম ওজনদার বললেও অত্যুক্তি হবে না।

বিএনপি এবং কিছু কিছু দল আগামী নির্বাচন উপলক্ষে দেশে একটি দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও জোর দিয়ে বলছে। তাদের দল-নিরপেক্ষ সরকারের যুক্তির ভিত্তি হিসেবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে হাজির করছে। তাদের বক্তব্যে যেমন কিছু যৌক্তিকতা আছে আবার অনেক কিছুই তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যামতে। তা ছাড়া, দল-নিরপেক্ষ সরকারের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। দল-নিরপেক্ষ সরকারের অভিজ্ঞতা ১৯৯০-৯১ তে একভাবে হয়েছিল। আবার ১৯৯৬-২০০৮ পর্যন্ত অন্যভাবে হয়েছিল। সে কারণে যারা এখন দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি করছে, তারাও জোর দিয়ে করতে পারছে না, ১৯৯০-৯৬-এর মতো সমর্থনও পাচ্ছে না। নব্বইয়ের দশকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি ছিল সাময়িক সংকট থেকে উত্তরণের চিন্তা। সে কারণে বিষয়ের গভীরে না গিয়ে এটি অনেকটা সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের প্রেসক্রিপশন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতার হাতবদল সাময়িক কোনো প্রেসক্রিপশনে সমাধানযোগ্য নয়। সেই অভিজ্ঞতা তখন গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা না গেলেও পরবর্তী অভিজ্ঞতায় সংকটের নতুন নতুন জটিলতা অবধারিতভাবে রাষ্ট্রকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে, তেমন অভিজ্ঞতাই সঞ্চিত হয়েছে। সে কারণে নির্বাচনকালীন দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি নিয়ে এখন জনসমর্থন সেভাবে স্বতঃস্ফূর্ততা পাচ্ছে না। একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পর দাবি করা হয়েছিল, বিশ্বের অনেক দেশেই এটি অনুসরণ করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশের দুই-তিনটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ক্রমেই রাষ্ট্রকে ক্ষমতার হাতবদলের নানা অশুভশক্তির দিকে ধাবিত করার আশঙ্কা থেকে যেসব রাষ্ট্র ভাববে বলে অনুমান করা হয়েছিল, তার কোনোটিই ঘটেনি। ২০১১ সালের মে মাসে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে একটি রায় প্রদান করেন। এই রায়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ৩৪২ পৃষ্ঠায় যুক্তি, তথ্য, প্রমাণ ও দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের নানা খুঁটিনাটি উপস্থাপন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অনির্বাচিতদের হাতে যাওয়ার বিধান অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিকও বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এই রায় পরে জাতীয় সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পাস হয়। বিরোধী দলগুলো এই রায় এবং সাংবিধানিক সংশোধনীর বিরোধিতা করেছে। তবে ৩৪২ পৃষ্ঠার রায়টিতে আইন, রাষ্ট্র ও সংবিধানের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলোকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের দৃষ্টি ও বিবেচনাকে বিশেষভাবে চিন্তা করতে সহায়তা করেছে। যদিও আমাদের দেশে অনেকেই রাজনৈতিক সুবিধা ও বিবেচনাপ্রসূত অবস্থান থেকে এর সমালোচনা ও আক্রমণগুলো পোষণ করে আসছে। কিন্তু বর্তমান যুগের রাষ্ট্রব্যবস্থার সাময়িক কিংবা দীর্ঘমেয়াদি হস্তান্তরের জটিলতা সম্পর্কে অনেকেই অতলস্পর্শী ধারণা নিয়ে ভাবতে চায়। তবে সেই ভাবনার মধ্যে লুকিয়ে থাকে অনেক জটিল সংকট সৃষ্টির সুযোগ।
বাংলাদেশে সত্তর ও আশির দশকে সামরিক দুই সরকারের অধীনে বেশ কিছু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেগুলো অনেকটাই ছিল সামরিক সরকারগুলোকে বৈধতা দেওয়া। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে শিখণ্ডি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দল প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই দলকে নিরঙ্কুশ বিজয়ী করে আনা কিংবা রাষ্ট্রপতিকে ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট অথবা দৃশ্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কিন্তু কার্যত পূর্বপরিকল্পিত ছকে সামরিক শাসক এবং শাসক দলকে জিতিয়ে আনার নতুন নতুন অভিজ্ঞতা থেকেই দেশে নির্বাচনব্যবস্থার ওপর অনাস্থা তৈরি হতে থাকে। এর ফলে সরকার উৎখাতের আন্দোলন তীব্রতর হয়। সেই আন্দোলন ১৯৯০ সালে এসে নতুন বাঁক নেওয়ায় স্পষ্ট অনুমিত হতে থাকে যে সরকার উৎখাতের পর রাষ্ট্রের শূন্যতা পূরণে একটি সরকার প্রয়োজন। সেটি প্রায় সর্বসম্মতভাবে মেনে নেওয়া এবং বোধগম্যতার ফলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিকে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির স্থলে বসিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে একটি নির্বাচন করার ব্যবস্থা করা হয়।
সেখান থেকেই প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্ম। তখন বিদায়ী সরকার এবং তার দল ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনটি সরকারবদলের সাময়িক একটি ব্যবস্থাপত্র ছিল। কিন্তু সাংবিধানিক কিছু জটিলতা নির্বাচনের পরেই অনুভূত হতে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো তখন সরকার ও বিরোধী অবস্থানে চলে যাওয়ায় মূল সংকট ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি তাঁর পূর্ব পদে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আন্দোলনকালীন রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় দেখতে পান। সে ক্ষেত্রে তাঁকে পদত্যাগ করার হুমকিও দিতে হয়। রাষ্ট্রপতি বনাম সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার বাছাই নিয়েই নতুন সরকার দ্বিধাদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। সে যাত্রায় বাংলাদেশ সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় ফিরে আসার সাংবিধানিক আইনে ফিরে যায়। কিন্তু গঠিত নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন, উপনির্বাচন এবং অন্যান্য নির্বাচন আগের চেহারায় ফিরতে থাকে। ফলে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনকারী দলগুলোকে দাবি জোরদার করতে হয়! ক্ষমতাসীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় রাজি হয়নি। ফলে বিরোধী দল সংসদ থেকে পদত্যাগ করে রাস্তায় নেমে আসে। সরকার তাতেও কর্ণপাত করেনি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা একতরফা নির্বাচন করে। সব বিরোধী দলই ওই নির্বাচন বয়কট করে। ফলে সরকার ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে সরকার বাধ্য হয় বিরোধী দলগুলোর দাবি মানতে।
ওই সংসদে সংবিধানের ৫৮তম অনুচ্ছেদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রণয়নে সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করা হয়। ৫৮ অনুচ্ছেদে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি সরকার গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। তখন সবাই এটিকে নির্বাচনব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনার মহৌষধ মনে করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর বাস্তবে এর গঠন এবং কার্যকারিতা নিয়ে অভিজ্ঞতা দ্রুতই ফিকে হতে থাকে। সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বঙ্গভবন এবং গণভবনের মধ্যেই নয়, আরও কয়েকটি স্থানেও টানাটানি শুরু হয়ে যায়। নির্বাচনের প্রচারের তুঙ্গকালেই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার আলামত দৃশ্যমান হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং রাজনৈতিক মহলের চাপে সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম অভিজ্ঞতায় বড়সড় ধাক্কা খায়। দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় ২০০১ সালের ১৫ জুলাই সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে। শপথ গ্রহণের আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তুতি গ্রহণের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে। শপথের পরপরই তিনি সচিবসহ বিভিন্ন পদে ব্যাপক রদবদলের যে আদেশ জারি করেন, তা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পরিবর্তে বিদায়ী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দল ও জনমত তৈরির মানসিকতা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয় নির্বাচনী প্রচারে, কিছু অদৃশ্যশক্তি আওয়ামী লীগের প্রার্থী, ভোটার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চলাচল, ভোটদান ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে এবং পরে দেশে একটি রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে এবং একটি জোটের পক্ষে ছড়িয়ে যেতে দেখা যায়। এখানেই সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ধারণার ব্যত্যয় ঘটে। নেপথ্যে কে বা কারা কলকাঠি নাড়িয়েছিল, সেটি আজও রহস্যাবৃত। বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের এই নেপথ্য শক্তি কতটা শক্তিশালী ও ক্রিয়াশীল, সেটি ২০০১ সালের নির্বাচনে অনেকটা উন্মোচিত হয়।
জোট সরকার পরবর্তী পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ এবং অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করার বাইরে কোনো আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক সংস্কার ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোযোগ দেয়নি। সরকার পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের মতো করে গড়ে তোলার জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়াতেও দ্বিধা করেনি। পরবর্তী নির্বাচন নিজেদের ব্লুপ্রিন্ট মতো করতে সরকারপ্রধান সরাসরি জড়িতছিলেন। এ নিয়ে দেশে রাজনৈতিক সংকট তীব্রতর হয়। বিএনপি এবং জোটের মধ্যেও ভাঙন সৃষ্টি হয়। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের সেই তীব্র উত্তেজনাকর মুহূর্তগুলো বাংলাদেশে আবার ফিরে আসবে— এটি আগে কেউ ভাবতে পারেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংবিধানিক অনুচ্ছেদ (৫৮) ভঙ্গ করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কবর সেদিনই রচিত হয়েছে। সেই দায় বিএনপি-জামায়াতেই। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চারজন উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের রহস্যাবৃত ভূমিকায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নির্বাচন কমিশনেও চলছিল তুঘলকি কাণ্ড। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শূন্য চার পদে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁরাও এই জটিল পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থ ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এবং নির্বাচন কমিশন ২১ জানুয়ারি ২০০৭-এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অটল ছিলেন। দেশে তখন তীব্র আন্দোলন চলছিল। সে অবস্থায় বিনা ভোটে একের পর এক চারদলীয় জোটের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হচ্ছিল। দেশ-বিদেশে এ ধরনের নির্বাচন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনী রাষ্ট্রপতিকে বাধ্য করে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দিতে। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা করে নতুন আরেকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। এর কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ছিল। ত্ত্বাবধায়কসরকারব্যবস্থার নামে ২০০৬-০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশে যা ঘটেছিল তা নজিরবিহীন এবং দেশের জন্য বিপজ্জনক। এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা থাকার পর নতুন করে নির্বাচনকালীন দল-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিকল্পনা ফানুসের চেয়ে কম ওজনদার বললেও অত্যুক্তি হবে না।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

বিএনপি এবং কিছু কিছু দল আগামী নির্বাচন উপলক্ষে দেশে একটি দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও জোর দিয়ে বলছে। তাদের দল-নিরপেক্ষ সরকারের যুক্তির ভিত্তি হিসেবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে হাজির করছে। তাদের বক্তব্যে যেমন কিছু যৌক্তিকতা আছে আবার অনেক কিছুই তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যামতে। তা ছাড়া, দল-নিরপেক্ষ সরকারের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। দল-নিরপেক্ষ সরকারের অভিজ্ঞতা ১৯৯০-৯১ তে একভাবে হয়েছিল। আবার ১৯৯৬-২০০৮ পর্যন্ত অন্যভাবে হয়েছিল। সে কারণে যারা এখন দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি করছে, তারাও জোর দিয়ে করতে পারছে না, ১৯৯০-৯৬-এর মতো সমর্থনও পাচ্ছে না। নব্বইয়ের দশকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি ছিল সাময়িক সংকট থেকে উত্তরণের চিন্তা। সে কারণে বিষয়ের গভীরে না গিয়ে এটি অনেকটা সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের প্রেসক্রিপশন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতার হাতবদল সাময়িক কোনো প্রেসক্রিপশনে সমাধানযোগ্য নয়। সেই অভিজ্ঞতা তখন গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা না গেলেও পরবর্তী অভিজ্ঞতায় সংকটের নতুন নতুন জটিলতা অবধারিতভাবে রাষ্ট্রকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে, তেমন অভিজ্ঞতাই সঞ্চিত হয়েছে। সে কারণে নির্বাচনকালীন দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি নিয়ে এখন জনসমর্থন সেভাবে স্বতঃস্ফূর্ততা পাচ্ছে না। একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পর দাবি করা হয়েছিল, বিশ্বের অনেক দেশেই এটি অনুসরণ করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশের দুই-তিনটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ক্রমেই রাষ্ট্রকে ক্ষমতার হাতবদলের নানা অশুভশক্তির দিকে ধাবিত করার আশঙ্কা থেকে যেসব রাষ্ট্র ভাববে বলে অনুমান করা হয়েছিল, তার কোনোটিই ঘটেনি। ২০১১ সালের মে মাসে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে একটি রায় প্রদান করেন। এই রায়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ৩৪২ পৃষ্ঠায় যুক্তি, তথ্য, প্রমাণ ও দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের নানা খুঁটিনাটি উপস্থাপন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অনির্বাচিতদের হাতে যাওয়ার বিধান অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিকও বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এই রায় পরে জাতীয় সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পাস হয়। বিরোধী দলগুলো এই রায় এবং সাংবিধানিক সংশোধনীর বিরোধিতা করেছে। তবে ৩৪২ পৃষ্ঠার রায়টিতে আইন, রাষ্ট্র ও সংবিধানের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলোকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের দৃষ্টি ও বিবেচনাকে বিশেষভাবে চিন্তা করতে সহায়তা করেছে। যদিও আমাদের দেশে অনেকেই রাজনৈতিক সুবিধা ও বিবেচনাপ্রসূত অবস্থান থেকে এর সমালোচনা ও আক্রমণগুলো পোষণ করে আসছে। কিন্তু বর্তমান যুগের রাষ্ট্রব্যবস্থার সাময়িক কিংবা দীর্ঘমেয়াদি হস্তান্তরের জটিলতা সম্পর্কে অনেকেই অতলস্পর্শী ধারণা নিয়ে ভাবতে চায়। তবে সেই ভাবনার মধ্যে লুকিয়ে থাকে অনেক জটিল সংকট সৃষ্টির সুযোগ।
বাংলাদেশে সত্তর ও আশির দশকে সামরিক দুই সরকারের অধীনে বেশ কিছু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেগুলো অনেকটাই ছিল সামরিক সরকারগুলোকে বৈধতা দেওয়া। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে শিখণ্ডি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দল প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই দলকে নিরঙ্কুশ বিজয়ী করে আনা কিংবা রাষ্ট্রপতিকে ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট অথবা দৃশ্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কিন্তু কার্যত পূর্বপরিকল্পিত ছকে সামরিক শাসক এবং শাসক দলকে জিতিয়ে আনার নতুন নতুন অভিজ্ঞতা থেকেই দেশে নির্বাচনব্যবস্থার ওপর অনাস্থা তৈরি হতে থাকে। এর ফলে সরকার উৎখাতের আন্দোলন তীব্রতর হয়। সেই আন্দোলন ১৯৯০ সালে এসে নতুন বাঁক নেওয়ায় স্পষ্ট অনুমিত হতে থাকে যে সরকার উৎখাতের পর রাষ্ট্রের শূন্যতা পূরণে একটি সরকার প্রয়োজন। সেটি প্রায় সর্বসম্মতভাবে মেনে নেওয়া এবং বোধগম্যতার ফলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিকে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির স্থলে বসিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে একটি নির্বাচন করার ব্যবস্থা করা হয়।
সেখান থেকেই প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্ম। তখন বিদায়ী সরকার এবং তার দল ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনটি সরকারবদলের সাময়িক একটি ব্যবস্থাপত্র ছিল। কিন্তু সাংবিধানিক কিছু জটিলতা নির্বাচনের পরেই অনুভূত হতে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো তখন সরকার ও বিরোধী অবস্থানে চলে যাওয়ায় মূল সংকট ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি তাঁর পূর্ব পদে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আন্দোলনকালীন রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় দেখতে পান। সে ক্ষেত্রে তাঁকে পদত্যাগ করার হুমকিও দিতে হয়। রাষ্ট্রপতি বনাম সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার বাছাই নিয়েই নতুন সরকার দ্বিধাদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। সে যাত্রায় বাংলাদেশ সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় ফিরে আসার সাংবিধানিক আইনে ফিরে যায়। কিন্তু গঠিত নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন, উপনির্বাচন এবং অন্যান্য নির্বাচন আগের চেহারায় ফিরতে থাকে। ফলে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনকারী দলগুলোকে দাবি জোরদার করতে হয়! ক্ষমতাসীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় রাজি হয়নি। ফলে বিরোধী দল সংসদ থেকে পদত্যাগ করে রাস্তায় নেমে আসে। সরকার তাতেও কর্ণপাত করেনি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা একতরফা নির্বাচন করে। সব বিরোধী দলই ওই নির্বাচন বয়কট করে। ফলে সরকার ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে সরকার বাধ্য হয় বিরোধী দলগুলোর দাবি মানতে।
ওই সংসদে সংবিধানের ৫৮তম অনুচ্ছেদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রণয়নে সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করা হয়। ৫৮ অনুচ্ছেদে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি সরকার গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। তখন সবাই এটিকে নির্বাচনব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনার মহৌষধ মনে করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর বাস্তবে এর গঠন এবং কার্যকারিতা নিয়ে অভিজ্ঞতা দ্রুতই ফিকে হতে থাকে। সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বঙ্গভবন এবং গণভবনের মধ্যেই নয়, আরও কয়েকটি স্থানেও টানাটানি শুরু হয়ে যায়। নির্বাচনের প্রচারের তুঙ্গকালেই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার আলামত দৃশ্যমান হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং রাজনৈতিক মহলের চাপে সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম অভিজ্ঞতায় বড়সড় ধাক্কা খায়। দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় ২০০১ সালের ১৫ জুলাই সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে। শপথ গ্রহণের আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তুতি গ্রহণের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে। শপথের পরপরই তিনি সচিবসহ বিভিন্ন পদে ব্যাপক রদবদলের যে আদেশ জারি করেন, তা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পরিবর্তে বিদায়ী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দল ও জনমত তৈরির মানসিকতা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয় নির্বাচনী প্রচারে, কিছু অদৃশ্যশক্তি আওয়ামী লীগের প্রার্থী, ভোটার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চলাচল, ভোটদান ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে এবং পরে দেশে একটি রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে এবং একটি জোটের পক্ষে ছড়িয়ে যেতে দেখা যায়। এখানেই সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ধারণার ব্যত্যয় ঘটে। নেপথ্যে কে বা কারা কলকাঠি নাড়িয়েছিল, সেটি আজও রহস্যাবৃত। বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের এই নেপথ্য শক্তি কতটা শক্তিশালী ও ক্রিয়াশীল, সেটি ২০০১ সালের নির্বাচনে অনেকটা উন্মোচিত হয়।
জোট সরকার পরবর্তী পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ এবং অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করার বাইরে কোনো আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক সংস্কার ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোযোগ দেয়নি। সরকার পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের মতো করে গড়ে তোলার জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়াতেও দ্বিধা করেনি। পরবর্তী নির্বাচন নিজেদের ব্লুপ্রিন্ট মতো করতে সরকারপ্রধান সরাসরি জড়িতছিলেন। এ নিয়ে দেশে রাজনৈতিক সংকট তীব্রতর হয়। বিএনপি এবং জোটের মধ্যেও ভাঙন সৃষ্টি হয়। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের সেই তীব্র উত্তেজনাকর মুহূর্তগুলো বাংলাদেশে আবার ফিরে আসবে— এটি আগে কেউ ভাবতে পারেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংবিধানিক অনুচ্ছেদ (৫৮) ভঙ্গ করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কবর সেদিনই রচিত হয়েছে। সেই দায় বিএনপি-জামায়াতেই। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চারজন উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের রহস্যাবৃত ভূমিকায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নির্বাচন কমিশনেও চলছিল তুঘলকি কাণ্ড। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শূন্য চার পদে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁরাও এই জটিল পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থ ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এবং নির্বাচন কমিশন ২১ জানুয়ারি ২০০৭-এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অটল ছিলেন। দেশে তখন তীব্র আন্দোলন চলছিল। সে অবস্থায় বিনা ভোটে একের পর এক চারদলীয় জোটের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হচ্ছিল। দেশ-বিদেশে এ ধরনের নির্বাচন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনী রাষ্ট্রপতিকে বাধ্য করে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দিতে। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা করে নতুন আরেকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। এর কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ছিল। ত্ত্বাবধায়কসরকারব্যবস্থার নামে ২০০৬-০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশে যা ঘটেছিল তা নজিরবিহীন এবং দেশের জন্য বিপজ্জনক। এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা থাকার পর নতুন করে নির্বাচনকালীন দল-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিকল্পনা ফানুসের চেয়ে কম ওজনদার বললেও অত্যুক্তি হবে না।

বিএনপি এবং কিছু কিছু দল আগামী নির্বাচন উপলক্ষে দেশে একটি দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও জোর দিয়ে বলছে। তাদের দল-নিরপেক্ষ সরকারের যুক্তির ভিত্তি হিসেবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে হাজির করছে। তাদের বক্তব্যে যেমন কিছু যৌক্তিকতা আছে আবার অনেক কিছুই তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যামতে। তা ছাড়া, দল-নিরপেক্ষ সরকারের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। দল-নিরপেক্ষ সরকারের অভিজ্ঞতা ১৯৯০-৯১ তে একভাবে হয়েছিল। আবার ১৯৯৬-২০০৮ পর্যন্ত অন্যভাবে হয়েছিল। সে কারণে যারা এখন দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি করছে, তারাও জোর দিয়ে করতে পারছে না, ১৯৯০-৯৬-এর মতো সমর্থনও পাচ্ছে না। নব্বইয়ের দশকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি ছিল সাময়িক সংকট থেকে উত্তরণের চিন্তা। সে কারণে বিষয়ের গভীরে না গিয়ে এটি অনেকটা সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের প্রেসক্রিপশন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতার হাতবদল সাময়িক কোনো প্রেসক্রিপশনে সমাধানযোগ্য নয়। সেই অভিজ্ঞতা তখন গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা না গেলেও পরবর্তী অভিজ্ঞতায় সংকটের নতুন নতুন জটিলতা অবধারিতভাবে রাষ্ট্রকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে, তেমন অভিজ্ঞতাই সঞ্চিত হয়েছে। সে কারণে নির্বাচনকালীন দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি নিয়ে এখন জনসমর্থন সেভাবে স্বতঃস্ফূর্ততা পাচ্ছে না। একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পর দাবি করা হয়েছিল, বিশ্বের অনেক দেশেই এটি অনুসরণ করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশের দুই-তিনটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ক্রমেই রাষ্ট্রকে ক্ষমতার হাতবদলের নানা অশুভশক্তির দিকে ধাবিত করার আশঙ্কা থেকে যেসব রাষ্ট্র ভাববে বলে অনুমান করা হয়েছিল, তার কোনোটিই ঘটেনি। ২০১১ সালের মে মাসে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে একটি রায় প্রদান করেন। এই রায়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ৩৪২ পৃষ্ঠায় যুক্তি, তথ্য, প্রমাণ ও দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের নানা খুঁটিনাটি উপস্থাপন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অনির্বাচিতদের হাতে যাওয়ার বিধান অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিকও বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এই রায় পরে জাতীয় সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পাস হয়। বিরোধী দলগুলো এই রায় এবং সাংবিধানিক সংশোধনীর বিরোধিতা করেছে। তবে ৩৪২ পৃষ্ঠার রায়টিতে আইন, রাষ্ট্র ও সংবিধানের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলোকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের দৃষ্টি ও বিবেচনাকে বিশেষভাবে চিন্তা করতে সহায়তা করেছে। যদিও আমাদের দেশে অনেকেই রাজনৈতিক সুবিধা ও বিবেচনাপ্রসূত অবস্থান থেকে এর সমালোচনা ও আক্রমণগুলো পোষণ করে আসছে। কিন্তু বর্তমান যুগের রাষ্ট্রব্যবস্থার সাময়িক কিংবা দীর্ঘমেয়াদি হস্তান্তরের জটিলতা সম্পর্কে অনেকেই অতলস্পর্শী ধারণা নিয়ে ভাবতে চায়। তবে সেই ভাবনার মধ্যে লুকিয়ে থাকে অনেক জটিল সংকট সৃষ্টির সুযোগ।
বাংলাদেশে সত্তর ও আশির দশকে সামরিক দুই সরকারের অধীনে বেশ কিছু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেগুলো অনেকটাই ছিল সামরিক সরকারগুলোকে বৈধতা দেওয়া। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে শিখণ্ডি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দল প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই দলকে নিরঙ্কুশ বিজয়ী করে আনা কিংবা রাষ্ট্রপতিকে ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট অথবা দৃশ্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কিন্তু কার্যত পূর্বপরিকল্পিত ছকে সামরিক শাসক এবং শাসক দলকে জিতিয়ে আনার নতুন নতুন অভিজ্ঞতা থেকেই দেশে নির্বাচনব্যবস্থার ওপর অনাস্থা তৈরি হতে থাকে। এর ফলে সরকার উৎখাতের আন্দোলন তীব্রতর হয়। সেই আন্দোলন ১৯৯০ সালে এসে নতুন বাঁক নেওয়ায় স্পষ্ট অনুমিত হতে থাকে যে সরকার উৎখাতের পর রাষ্ট্রের শূন্যতা পূরণে একটি সরকার প্রয়োজন। সেটি প্রায় সর্বসম্মতভাবে মেনে নেওয়া এবং বোধগম্যতার ফলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিকে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির স্থলে বসিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে একটি নির্বাচন করার ব্যবস্থা করা হয়।
সেখান থেকেই প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্ম। তখন বিদায়ী সরকার এবং তার দল ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনটি সরকারবদলের সাময়িক একটি ব্যবস্থাপত্র ছিল। কিন্তু সাংবিধানিক কিছু জটিলতা নির্বাচনের পরেই অনুভূত হতে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো তখন সরকার ও বিরোধী অবস্থানে চলে যাওয়ায় মূল সংকট ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি তাঁর পূর্ব পদে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আন্দোলনকালীন রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় দেখতে পান। সে ক্ষেত্রে তাঁকে পদত্যাগ করার হুমকিও দিতে হয়। রাষ্ট্রপতি বনাম সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার বাছাই নিয়েই নতুন সরকার দ্বিধাদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। সে যাত্রায় বাংলাদেশ সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় ফিরে আসার সাংবিধানিক আইনে ফিরে যায়। কিন্তু গঠিত নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন, উপনির্বাচন এবং অন্যান্য নির্বাচন আগের চেহারায় ফিরতে থাকে। ফলে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনকারী দলগুলোকে দাবি জোরদার করতে হয়! ক্ষমতাসীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় রাজি হয়নি। ফলে বিরোধী দল সংসদ থেকে পদত্যাগ করে রাস্তায় নেমে আসে। সরকার তাতেও কর্ণপাত করেনি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা একতরফা নির্বাচন করে। সব বিরোধী দলই ওই নির্বাচন বয়কট করে। ফলে সরকার ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে সরকার বাধ্য হয় বিরোধী দলগুলোর দাবি মানতে।
ওই সংসদে সংবিধানের ৫৮তম অনুচ্ছেদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রণয়নে সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করা হয়। ৫৮ অনুচ্ছেদে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি সরকার গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। তখন সবাই এটিকে নির্বাচনব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনার মহৌষধ মনে করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর বাস্তবে এর গঠন এবং কার্যকারিতা নিয়ে অভিজ্ঞতা দ্রুতই ফিকে হতে থাকে। সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বঙ্গভবন এবং গণভবনের মধ্যেই নয়, আরও কয়েকটি স্থানেও টানাটানি শুরু হয়ে যায়। নির্বাচনের প্রচারের তুঙ্গকালেই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার আলামত দৃশ্যমান হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং রাজনৈতিক মহলের চাপে সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম অভিজ্ঞতায় বড়সড় ধাক্কা খায়। দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় ২০০১ সালের ১৫ জুলাই সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে। শপথ গ্রহণের আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তুতি গ্রহণের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে। শপথের পরপরই তিনি সচিবসহ বিভিন্ন পদে ব্যাপক রদবদলের যে আদেশ জারি করেন, তা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পরিবর্তে বিদায়ী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দল ও জনমত তৈরির মানসিকতা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয় নির্বাচনী প্রচারে, কিছু অদৃশ্যশক্তি আওয়ামী লীগের প্রার্থী, ভোটার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চলাচল, ভোটদান ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে এবং পরে দেশে একটি রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে এবং একটি জোটের পক্ষে ছড়িয়ে যেতে দেখা যায়। এখানেই সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ধারণার ব্যত্যয় ঘটে। নেপথ্যে কে বা কারা কলকাঠি নাড়িয়েছিল, সেটি আজও রহস্যাবৃত। বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের এই নেপথ্য শক্তি কতটা শক্তিশালী ও ক্রিয়াশীল, সেটি ২০০১ সালের নির্বাচনে অনেকটা উন্মোচিত হয়।
জোট সরকার পরবর্তী পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ এবং অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করার বাইরে কোনো আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক সংস্কার ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোযোগ দেয়নি। সরকার পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের মতো করে গড়ে তোলার জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়াতেও দ্বিধা করেনি। পরবর্তী নির্বাচন নিজেদের ব্লুপ্রিন্ট মতো করতে সরকারপ্রধান সরাসরি জড়িতছিলেন। এ নিয়ে দেশে রাজনৈতিক সংকট তীব্রতর হয়। বিএনপি এবং জোটের মধ্যেও ভাঙন সৃষ্টি হয়। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের সেই তীব্র উত্তেজনাকর মুহূর্তগুলো বাংলাদেশে আবার ফিরে আসবে— এটি আগে কেউ ভাবতে পারেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংবিধানিক অনুচ্ছেদ (৫৮) ভঙ্গ করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কবর সেদিনই রচিত হয়েছে। সেই দায় বিএনপি-জামায়াতেই। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চারজন উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের রহস্যাবৃত ভূমিকায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নির্বাচন কমিশনেও চলছিল তুঘলকি কাণ্ড। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শূন্য চার পদে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁরাও এই জটিল পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থ ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এবং নির্বাচন কমিশন ২১ জানুয়ারি ২০০৭-এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অটল ছিলেন। দেশে তখন তীব্র আন্দোলন চলছিল। সে অবস্থায় বিনা ভোটে একের পর এক চারদলীয় জোটের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হচ্ছিল। দেশ-বিদেশে এ ধরনের নির্বাচন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনী রাষ্ট্রপতিকে বাধ্য করে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দিতে। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা করে নতুন আরেকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। এর কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ছিল। ত্ত্বাবধায়কসরকারব্যবস্থার নামে ২০০৬-০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশে যা ঘটেছিল তা নজিরবিহীন এবং দেশের জন্য বিপজ্জনক। এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা থাকার পর নতুন করে নির্বাচনকালীন দল-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিকল্পনা ফানুসের চেয়ে কম ওজনদার বললেও অত্যুক্তি হবে না।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বিএনপি এবং কিছু কিছু দল আগামী নির্বাচন উপলক্ষে দেশে একটি দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও জোর দিয়ে বলছে। তাদের দল-নিরপেক্ষ সরকারের যুক্তির ভিত্তি হিসেবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে হাজির করছে।
০৩ জুন ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বিএনপি এবং কিছু কিছু দল আগামী নির্বাচন উপলক্ষে দেশে একটি দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও জোর দিয়ে বলছে। তাদের দল-নিরপেক্ষ সরকারের যুক্তির ভিত্তি হিসেবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে হাজির করছে।
০৩ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বিএনপি এবং কিছু কিছু দল আগামী নির্বাচন উপলক্ষে দেশে একটি দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও জোর দিয়ে বলছে। তাদের দল-নিরপেক্ষ সরকারের যুক্তির ভিত্তি হিসেবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে হাজির করছে।
০৩ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বিএনপি এবং কিছু কিছু দল আগামী নির্বাচন উপলক্ষে দেশে একটি দল-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও জোর দিয়ে বলছে। তাদের দল-নিরপেক্ষ সরকারের যুক্তির ভিত্তি হিসেবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে হাজির করছে।
০৩ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫