Ajker Patrika

৫০ বছরে নতুন গডফাদার

আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ৫০
৫০ বছরে নতুন গডফাদার

নির্মাতা ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার অমর সৃষ্টি ‘গডফাদার’ মুক্তির ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে এ বছর। ইতালির মাফিয়া সাম্রাজ্য নিয়ে নির্মিত ছবির প্রথম পর্ব যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭২ সালে। মুক্তির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নতুনভাবে পর্দায় ফিরবে গডফাদার।

মারিও পুজোর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল অস্কারজয়ী এই ছবি। তিনটি পর্বে ভাগ হয়ে পর্দায় এসেছিল গডফাদার। অভিনয় করেন মারলন ব্র্যান্ডো, আল পাচিনো, রবার্ট ডি নিরোর মতো হলিউড সেরা শিল্পীরা। ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট পিকচার্স জানিয়েছে, সুবর্ণজয়ন্তী বেশ ঘটা করে পালন করবে তাঁরা।

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নামী কিছু সিনেমা হলে নতুনরূপে গডফাদার মুক্তি পাবে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি। আবার শোনা যাবে ‘রিভেঞ্জ ইজ আ ডিশ বেস্ট সার্ভড কোল্ড’, ‘আই অ্যাম গোয়িং টু মেক হিম অ্যান অফার হি কান্ট রিফিউজ’-এর মতো কালজয়ী সংলাপ। নতুন এই গডফাদারের পিকচার কোয়ালিটি আরও উন্নত করা হয়েছে। এ জন্য নেওয়া হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য।

সেরা সাউন্ড কোয়ালিটির জন্য রাখা হয়েছে অত্যাধুনিক ডলবি প্রযুক্তি। এত পরিশ্রমের ফসল দেখা যাবে নতুন মোড়কের এই ছবিতে।

যেভাবে পর্দায় গডফাদার
মাফিয়াদের গল্পের বাজার ভালো। লিখতে পারলে কিছু রোজগার হয়। ১০ পৃষ্ঠার গল্পের খসড়া লিখে মারিও পুজো প্রথমে শোনান এক বন্ধুকে। বন্ধু চমকে ওঠেন। প্রকাশক পেতে দেরি হয়নি। দিনরাত এক করে পুজো তিন বছর ধরে লিখলেন উপন্যাস ‘দ্য গডফাদার’। বাকিটা ইতিহাস।

বিখ্যাত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট স্বত্বাধিকার কেনে। পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা নামক তখনকার অখ্যাত এক পরিচালককে। যেহেতু এটা ইতালিয়ান-আমেরিকান মাফিয়া ছবি হবে, তাই তাঁরা একজন ইতালিয়ান-আমেরিকান পরিচালক খুঁজছিলেন। কপোলার পূর্বপুরুষেরাও একসময় জীবিকার তাগিদে ইতালি থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমায়। এক সাক্ষাৎকারে পুজো জানান, তিনি ও কপোলা দুজনেই দুটি আলাদা স্ক্রিপ্ট লেখেন। পরে এই দুটি একত্র করে তিন ঘন্টার এক বিশাল স্ক্রিপ্ট তৈরি করা হয়।

সব বাধা পেরিয়ে
ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র ভিটো কর্লিয়নির জন্য কপোলার প্রথম পছন্দ ছিলেন মারলন ব্র্যান্ডো। কিন্তু প্যারামাউন্ট কপোলাকে জানিয়ে দেয়, ব্র্যান্ডোকে কোনোভাবেই এই চরিত্রটি দেওয়া যাবে না। কারণ চড়া মেজাজ ও ঔদাসীন্যের কারণে দুর্নাম ছিল ব্র্যান্ডোর।  তাঁর  ছবিও ফ্লপ হচ্ছিল। কপোলাও জেদ ধরেন, ব্র্যান্ডো ছাড়া তিনি অন্য কাউকে ডনের চরিত্রে নেবেন না।

শেষমেশ প্যারামাউন্ট শর্ত চাপালেন, কপোলা ও ব্র্যান্ডোর যা পারিশ্রমিক, তার তুলনায় অনেক কম দেওয়া হবে। মরিয়া কপোলা তখন তাতেই রাজি। 
তবে নানা কারণে ২.৫ মিলিয়ন থেকে ছবির বাজেট গিয়ে দাঁড়ায় ৬ মিলিয়নে। এমন অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে গডফাদার মুক্তি পায় ১৯৭২ সালের ২৪ মার্চ। মুক্তির কিছুদিনের মধ্যেই সব রেকর্ড ভেঙে বক্স অফিসে চূড়ান্ত সাফল্য পায় ছবিটি।

পুরস্কার ও প্রত্যাখ্যান
১৯৭৩ সালে গডফাদারের জন্য ৪৫তম একাডেমি পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা নির্বাচিত হন ব্র্যান্ডো। যখন তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়, সবাইকে অবাক করে দিয়ে মঞ্চে ওঠেন অভিনেত্রী সাচিন লিটলফেদার। তিনি জানান, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মূল ধারায় মার্কিন জনজাতিকে উপযুক্ত জায়গা না দেওয়ার প্রতিবাদে ব্র্যান্ডো এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই ঘটনা ব্র্যান্ডো ও ‘গডফাদার’ ভিটো কর্লিয়নিকে একাকার করে দিয়েছিল। মিলেমিশে গিয়েছিল চলচ্চিত্র আর বাস্তবতা।

নতুন গডফাদারের খুঁটিনাটি
গডফাদার সিরিজের তিনটি ছবি ফোর-কে আল্ট্রা এইচডি ফরম্যাটে রূপান্তর করা হয়েছে। দাগ, অপ্রয়োজনীয় শব্দ ও খুঁটিনাটি অসংগতি মেরামত করতে ৪ হাজার ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় হয়েছে।

ছবির কালার কারেকশনের জন্য ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ঘণ্টার বেশি সময়। তবে কালার একেবারেই বদলে দেওয়া হয়নি। মূল ছবির কালার টোন ঠিক রেখেই আনা হয়েছে আরও উন্নত কালার।

সাউন্ড ডিজাইনার ওয়াল্টার মুর্চের করা সাউন্ডট্র্যাকই রাখা হয়েছে নতুন ‘গডফাদার’-এ। মূল সাউন্ড ঠিক থাকবে, তবে সেটাই পাওয়া যাবে আরও অত্যাধুনিক মানে।

পুরো কর্মযজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ছিলেন গডফাদার ছবির পরিচালক ৮২ বছর বয়স্ক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...