Ajker Patrika

সময়ের সংকট, সুদূরের ভাবনা

মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
সময়ের সংকট, সুদূরের ভাবনা

রাজপথ আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। অতীতের সব আন্দোলনের মতোই হরতাল, অবরোধে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ছে। এর সঙ্গে আছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং অনিশ্চয়তা। গ্রেপ্তার, মৃত্যু, সহিংসতা এসবই তার অন্তর্গত। এ অবস্থায় আমরা যারা শীতকালে সংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করে থাকি, তারা একটা অনিশ্চয়তায় ভুগছি। নানান ধরনের অনুষ্ঠান এখনই বাতিল করতে হচ্ছে। এ এক অসহায় অবস্থা।
যে ভাষায় বিরোধী দল কথা বলছে, তার পাল্টাপাল্টি জবাবে সরকারও কথা বলছে। সেটা একটা রাজনৈতিক আচরণ বটে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা ভেবে দুই প্রতিপক্ষ কোনো মীমাংসায় পৌঁছাতে পারবে বলে এই মুহূর্তে সেটা মনে হচ্ছে না। তাহলে বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলন চলে, কিন্তু তার উদ্দেশ্য একটাই—সেটা হচ্ছে একটা মীমাংসায় পৌঁছানো এবং জনজীবনকে স্বাভাবিক করে তোলা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না; বরং পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ছে। এই জটিলতার অবসান ঘটবে, সে রকম কারও কোনো সুচিন্তিত মতামত সাধারণ মানুষকে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।

আমাদের দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে আজ অবধি নানান আন্দোলন, সংগ্রাম এমনকি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা চলেছি। দীর্ঘ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও আমরা যুক্ত থেকেছি। যার মধ্য দিয়ে আমাদের শিল্প-সাহিত্য উন্নত হয়েছে। মানুষ আন্দোলন থেকে প্রেরণা পেয়েছে। কিন্তু আজ আন্দোলন এবং আন্দোলন বিরোধিতার মধ্যে শুধু একটিই বিষয় তা হলো, নির্বাচন এবং ক্ষমতা।

ক্ষমতা মানে কী, সেটা আমরা অতীতেও দেখেছি এবং এখনো দেখছি। ক্ষমতা মানে অর্থ, ক্ষমতা মানে অপপ্রয়োগ এবং জনগণের স্বপ্নকে বারবার ভেঙে দেওয়া। বেশ কিছু লোক আঙুল ফুলে কলাগাছ হবে, শিক্ষাব্যবস্থা ধসে যাবে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রস্তুতিহীন হয়ে পড়বে আর এর মধ্য দিয়ে বিদেশে অর্থ পাচারের পথটি আরও সুপ্রশস্ত হবে।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মোগল আমলেই অনেক সংস্কারকাজ হয়েছে। জনগণের রাজস্বের বিনিময়ে সুশাসন এবং অবকাঠামোগত অনেক উন্নতি ঘটেছে। অনেক ঐতিহাসিক ও অর্থনীতিবিদ মনে করেন ধর্মীয় সংঘাত তাঁরা কমিয়ে আনতে পেরেছেন। কিন্তু আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর দেশীয় রাজ্যগুলো স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতে থাকে। তারা নামমাত্র দিল্লির সম্রাটকে একটা রাজস্ব দিত। কিন্তু বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব ইংরেজদের শঠতা ও স্থানীয় শাসকদের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে যখন ইংরেজ বণিকের কাছে দেশটা বিক্রি করে দেয়, তারপর থেকেই এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে নেমে আসে এক বিশাল দুর্যোগ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসায়ীদের লাগামহীন মুনাফা এবং লুণ্ঠনের ফলে এই অঞ্চল দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়ে যায়। কোম্পানি সারা ভারতে সম্প্রসারিত হয়ে ভারতকে একটি দরিদ্র রাষ্ট্রে পরিণত করে।

দেশ ভাগের পর বাংলাদেশের রাজনীতি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত লোকদের হাতে পরিচালিত হয়ে আসছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষক, সাবেক ছাত্রনেতা, আইনজ্ঞ এবং সর্বোপরি একদল দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। কালক্রমে তার জায়গা দখল করেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের চরিত্র ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসায়ীদের থেকে স্বতন্ত্র হবে, এ কথা বিশ্বাস করা যায় না। যে একবার মুনাফার স্বাদ পেয়েছে, সে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে মানুষের স্বার্থ হাসিল করবে, এটা কল্পনাই করা যায় না। তাই ব্যবসায়ীদের কাছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্বে থেকে নিজের দেশের চিন্তার চেয়ে ব্যক্তিগত চিন্তাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। দলগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে একসময় যে গণচাঁদার ব্যবস্থা ছিল তা অনেক আগেই উঠে গেছে। এখন বড় বড় চাঁদা দিয়ে দলগুলো পরিচালিত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশি অর্থও আসে।

তাই দলগুলোকে শুধু ভোটের সময় ছাড়া কখনোই জনগণের কাছে যেতে দেখা যায় না।

ব্যবসায়ীরা দল পরিচালনায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। অতীত ও বর্তমানে বড় বড় শিল্পপতি দেশের প্রধান প্রধান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে যান, বিশেষ করে শিল্প-বাণিজ্য-অর্থের। ফলে যাঁরা পেশাদার রাজনীতিক, তাঁরা যেভাবে জনস্বার্থকে মুখ্য করে দেখেন, সেখানে ব্যবসায়ীরা কখনোই জনস্বার্থকে মুখ্য করে দেখতে পারেন না। ফলে আমলা, ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে একটা চমৎকার ঐক্য গড়ে ওঠে এবং দেশের অর্থ বিদেশে পাঠানোর একটা সুবর্ণ সুযোগ মিলে যায়। আর দেশপ্রেমিক রাজনীতিকেরা কোণঠাসা হতে হতে একসময় তাঁদের ভূমিকা নিষ্প্রভ হয়ে ওঠে। রাজনীতিতে মানবিকতা, সুশিক্ষা, সুশাসন ক্রমেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণটা চলে যায় অর্থের কাছে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ার মালিকানায়ও চলে আসেন ব্যবসায়ীরা।

একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক ব্যবসায়ী। তিনি মাসে কোটি টাকা ব্যয় করেন অথচ চ্যানেলটি কেউ দেখে না। কোনো সংবাদ পরিবেশনায় বা অনুষ্ঠানের মানের প্রতিও তাঁর কোনো আগ্রহ নেই। তিনি অকপটে স্বীকার করেন, ওই সবে তাঁর কোনো আগ্রহ নেই। তাঁর কারখানা চালাতে শত শত ট্রাকের প্রয়োজন হয়। প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকা বিভিন্ন সংস্থায়, বিশেষ করে পুলিশকে দিতে হয়। কিন্তু এখন একটি টাকাও কাউকে দিতে হয় না। কারণ তাঁর হাতে একটি টেলিভিশন চ্যানেল আছে। এই চ্যানেল হাতে থাকায় সেই সব ঝামেলা থেকে তিনি মুক্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মিডিয়া চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে।

রাজনীতি করতে গেলে প্রথমেই একজন ব্যবসায়ী টার্গেট করেন তাঁর নিজস্ব এলাকাকে। একটি ভালো স্কুল প্রতিষ্ঠার বদলে তিনি একটি মাদ্রাসা বা মসজিদকে অবলম্বন করে নিজের পথ পরিষ্কার করতে চান, ক্ষমতার পাশাপাশি যাতে ইহলোক ও পরলোক দুটিই নিশ্চিত হয়। জনগণের অজ্ঞতা এবং অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে টাকা ঢেলে তিনি হয়ে যান দেশপ্রেমিক, জনদরদি। তাই কোনো না কোনোভাবে তাঁকে ক্ষমতায় আসতেই হবে। এই যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাঁরা আসেন, তাঁদের জনগণের প্রতি কোনো অঙ্গীকার থাকার প্রয়োজন আছে কি? এর মধ্যে দেশে যে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ১৯৯০ সালে সূচনা হয়েছিল, যার মধ্য দিয়ে আমরা একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই স্বপ্ন রাজনীতিকদের হাতে পড়ে খান খান হয়ে গেছে।

দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এই অবকাঠামোকে ব্যবহার করতে যে সংস্কৃতির প্রয়োজন ছিল, সুশিক্ষার প্রয়োজন ছিল, তা হয়ে ওঠেনি। ফলে এখন শিক্ষার মান দেখলে রীতিমতো ভয় হয়। শিক্ষা যে শুধু স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় নয়, চারদিকের সব ঘটনাবলিকে পর্যবেক্ষণ করা বা কোনো আদর্শকে অনুসরণ করা—তার বিনিময়ে পড়া মুখস্থ, কোচিংয়ে যাওয়া, নম্বর পাওয়া এবং মুখস্থবিদ্যা দিয়ে একটি প্রশাসনিক পদ দখল করার মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয়। এসব তথাকথিত শিক্ষিত লোকেরা কোনো দায়িত্বে গেলে প্রথমেই তাঁরা সহজে অর্থ উপার্জনের পথ খোঁজেন। কারণ শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে কোনো আদর্শিক শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। তাই একজন তরুণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু শিখবে না, শুধু মুখস্থ করবে, রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শিখবে না, সামনে কোনো আদর্শ মানুষ থেকে শিখবে না, তাহলে তার পরিণতিই–বা কী?

আর এদিকে ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ক্ষমতায় যাওয়া—এই টাগ অব ওয়ারের মধ্যে মানুষ আরও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। আন্দোলনে মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ হয় বটে, কিন্তু কোনো স্বপ্ন তৈরি হয় না। আজকাল স্বপ্ন তৈরি করা এবং প্রতিবাদী মানুষের জন্ম দেওয়া কোনো রাজনৈতিক দলেরই উদ্দেশ্য নয়। তাই আশপাশে আমরা কিছু অর্থপিপাসু লোকদের দেখতে পাই। কিন্তু এর শেষ কোথায়? সবকিছু মিলিয়ে যদি একটি দুর্নীতিপরায়ণ সমাজই গড়ে ওঠে এবং সেখানে কিছু নিবেদিত প্রাণ সুরাজনৈতিক সংস্কৃতির স্বপ্ন যাঁরা এখনো দেখেন, 
তাঁদের কী হবে? এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া খুবই কঠিন।

বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্যার যদুনাথ সরকারের একটি উক্তি দিয়ে শেষ করি। তিনি বলেছেন, ‘শান্তিই সমস্ত ভালো কার্য্যের আরম্ভ। জাতীয় উন্নতি ও উৎকর্ষসাধন করিতে হইলে, অধ্যবসায়ের সহিত সুদীর্ঘকাল সুনির্দিষ্ট পন্থার অনুসরণ করিতে হয়, এবং শক্তিমান, নিঃস্বার্থ ও পবিত্র হৃদয় মনীষীবৃন্দ যে পথে জাতিকে পরিচালিত করা কর্তব্য বিবেচনা করেন, সেই পথেই অগ্রসর হইতে হয়; অরাজকতা ও অশান্তি এই কল্যাণময় পথের পরম শত্রু। আর সব কারণ ছাড়িয়া দিলেও শুধু বর্তমান জগতে বাঁচিয়া থাকিবার জন্য দেশবাসীকে দলবদ্ধভাবে দক্ষ, কর্মঠ হইতে হইবে। জাতীয় মুক্তির এই পথ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত