Ajker Patrika

বৈশাখ যেন কৃষকেরও হয়

শাইখ সিরাজ
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ২৬
বৈশাখ যেন কৃষকেরও হয়

আমি যখন এ লেখাটি লিখছি, ঠিক তখন এই রাত পোহালেই পয়লা বৈশাখ, নতুন দিনের সূর্য উঠবে। হাজার বছরের বাঙালি ঐতিহ্যের পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করবে দেশের ও প্রবাসের বাংলাদেশি মানুষ। আমাদের বৈশাখ উদ্‌যাপনের উপকরণগুলো হাজার বছরের কৃষক পরিবারের ব্যবহার্য জিনিসপত্র। পান্তাভাত থেকে শুরু করে হাতপাখা, মাটির বাসন-কোসন, বাঁশের তৈরি ব্যবহার্য কিংবা কৃষকের সন্তানদের খেলার সরঞ্জামাদি বাঁশের বাঁশি, টেপাপুতুল। অথবা ঐতিহ্যের মণ্ডা-মিঠাই। ঐতিহ্যগতভাবেই আমরা কৃষকের সন্তান আর বাঙালিয়ানা বলতে যে গ্রামীণ কৃষকের যাপনকে বোঝায়, পয়লা বৈশাখ এলেই আমাদের উদ্‌যাপনে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আমাদের অনেকেরই অজানা নয়, পয়লা বৈশাখের সঙ্গে কৃষির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সারা বছরকে ছয়টি ঋতুতে ভাগ করা হয় মূলত কৃষিকাজের সুবিধার্থেই। মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা সন প্রবর্তন করেন তাঁর সিংহাসন-আরোহণের সময় থেকে; অর্থাৎ ৫ নভেম্বর, ১৫৫৬ সাল থেকে। বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হওয়ার আগে বাংলা সন ‘ফসলি সন’ নামেই পরিচিত ছিল। সে সময় বাংলার কৃষক চৈত্রের শেষ দিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূস্বামীর খাজনা পরিশোধ করতেন। এ আচারকে বলা হতো পুণ্যাহ। ভূস্বামীরা পয়লা বৈশাখে কৃষককে মিষ্টিমুখ করাতেন। খোলা হতো নতুন বছরে খাজনার নতুন খাতা। এ থেকেই বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব হয়ে দাঁড়ায় হালখাতা। গ্রামগঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের শুরুতে পুরোনো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে খুলতেন নতুন হিসাবের খাতা। এ উপলক্ষে চলত উৎসব, মিষ্টিমুখ। মেলা বসত গ্রামে গ্রামে। 

এ মুহূর্তে মনে পড়ছে ইরফান হাবিব রচিত ‘মুঘল ভারতের কৃষিব্যবস্থা’ বইটির কথা। সেখানে মোগল আমলের কৃষির যে চিত্র পাওয়া যায় তা সত্যি বিস্ময়কর। মোগল আমলে গ্রামীণ অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি ও হস্তশিল্প। কৃষিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল নানা রকম কুটিরশিল্প। সে সময় থেকেই আখ ও তালের রস থেকে বিভিন্ন ধরনের চিনি তৈরি হতো। আবুল ফজল পাঁচ রকম চিনির কথা বলেছেন। চিনিশিল্পের প্রধান কেন্দ্রস্থল ছিল বাংলা, আগ্রা ও লাহোরের মধ্যবর্তী এলাকা এবং গোলকুণ্ডা। এ অঞ্চল থেকে আরব, মেসোপটেমিয়া ও পারস্যে চিনি রপ্তানি হতো। ঘানিতে তেলবীজ থেকে তৈরি হতো তেল। সিন্ধু, গুজরাট, গোলকুণ্ডা, মহীশূর, ওডিশা ও বাংলায় এ পদ্ধতির প্রচলন ছিল। তামাকশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল বুরহানপুর, বাংলা ও বিহার। 

ভারতবর্ষেই তুলার চাষ হতো; বিশেষ করে বাংলা ছিল তুলা চাষের প্রধান আখড়া। কাপড় রং ও উজ্জ্বল করতে আগ্রা, ঢাকা, কাশিমবাজার, আহমেদাবাদ প্রভৃতি বস্ত্রশিল্পের কেন্দ্রে নীলের চাহিদা ছিল। কৃষিজাত শিল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল বস্ত্রবয়ন শিল্প। দেশজুড়ে বিভিন্ন ধরনের কাপড় তৈরি হতো। বাংলার বস্ত্রশিল্পের খ্যাতি ছিল জগৎজুড়ে। ঢাকার মসলিন বস্ত্র ছিল খুব বিখ্যাত। পশম বা উলের জন্য বিখ্যাত ছিল কাবুল, কাশ্মীর ও পশ্চিম রাজস্থান। শণ ও পাটের তৈরি জিনিসও বহুল ব্যবহৃত হতো। ভারতের প্রায় সর্বত্র শণ উৎপাদন হতো। বাংলায় হতো পাটের চাষ। পাট দিয়ে তৈরি হতো দড়ি, বস্তা বা থলে। কাশিমবাজারের দড়ি ছিল বিখ্যাত। এই অঞ্চলের পাটের শাড়ির ছিল অন্য রকম কদর। সে সময়টা বলা চলে কৃষি ও কৃষকের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি ও কৃষককে ঘিরেই সব রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। অনেক ক্ষেত্রে কৃষক শোষিত হলেও সমাজে কৃষকের সম্মান ছিল, ছিল অন্য রকম গ্রহণযোগ্যতা। কৃষকের পয়লা বৈশাখও ছিল আনন্দঘন এক ব্যাপার।

ইতিহাস বলে, কৃষক ভোক্তার কাছে সরাসরি যেতে না পারার কারণে বারবার শোষিত হয়েছেন। এ উপমহাদেশে বরাবর কৃষিবাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। আর এ কারণেই কৃষক হারাতে শুরু করেন তাঁর লাভের অঙ্ক। ইংরেজের শাসন আর জমিদারদের অব্যবস্থাপনায় বাংলার কৃষি ও কৃষক হারিয়ে ফেলেন তাঁর সুদিন। হাতের লাঙল ফেলে নিজের অধিকারের জন্য করতে হয় সংগ্রাম। কৃষকের পয়লা বৈশাখ হয়ে ওঠে এক যন্ত্রণার নাম। এসব বইয়ে পড়া ইতিহাস। স্বাধীন বাংলাদেশের কৃষককে দেখেছি খুব কাছ থেকে। প্রায় চার দশক ধরে কাজ করছি কৃষকদের নিয়ে। একটি দেশ যাত্রা শুরু করে কৃষিপ্রধান অর্থনীতি নিয়ে। সেখানে কৃষক মানেই হাড় জীর্ণ এক মানুষ। শত ছেঁড়া গেঞ্জি গায়ে। সেই কষ্ট জর্জরিত মানুষটিই ছিল মূল অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাঁর পয়লা বৈশাখ বলতে কিছুই ছিল না। পান্তা দিয়ে শুরু করা বছর শেষও হতো পান্তাতেই। সারা বছর লড়াই করতে হয়েছে একদিকে প্রকৃতির সঙ্গে, অন্যদিকে মহাজনের সঙ্গে। গ্রামে চৈত্র মাস মানেই ছিল অভাবের এক সময়। সে সময়টায় গোলার ধান ফুরাত। ভাতের অভাবে বাজার থেকে কেনা আটার রুটি খেতে হতো। তখনো পয়লা বৈশাখ মানে কোনো আনন্দ নয়, বৈশাখ মানে আর কয়েক দিন পর উঠবে বোরো ফসল। থালা ভরা গরম ভাত তুলে দিতে পারবে সন্তানের পাতে। এটুকু ছিল সান্ত্বনার। আর কিছু নয়, ভাতের অভাবের অভিশাপ ছিল এক দশক আগেও। উত্তরাঞ্চলের মঙ্গার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে?

এখন সময় বদলেছে। বদলেছে কৃষি। একটা ছোট্ট প্রযুক্তি, উন্নত বীজ পাল্টে দিয়েছে সব। আগে ধান ফলাতে লাগত ১৪০ দিন। কার্তিক ও চৈত্রের শেষে ১০-১২ দিন খাদ্যাভাব দেখা দিত চরম আকারে। সে সময়টায় কর্মহীনতায় মঙ্গা হতো। এখন শর্ট ডিউরেশনের (স্বল্পমেয়াদি) ধানের জাত আবিষ্কৃত হওয়ায় ধান উৎপাদনে লাগছে ১১০ থেকে ১২০ দিন। কার্তিকের আগেই ধান উঠছে গোলায়। ফলে কার্তিকের মঙ্গা দূর হয়ে গেছে। বছরে এখন তিনটি ফসল চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। জাত উন্নয়ন করায় বেড়েছে ফলন। শুধু ধান আর পাটই নয়, কৃষক চাষ করছেন উচ্চফলনশীল ফল-ফসল। লাভের হিসাবটা কৃষক ঠিকই বুঝে গেছেন। বেশ সচেতন হয়ে উঠেছেন নিজেদের অধিকার সম্পর্কে। কৃষকের খাবারের থালায় ভাতের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে শাক-সবজি, মাছ-মাংস আর ফল। পয়লা বৈশাখ মানে সত্যিই এখন আনন্দের।

এক মাস ধরে প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এর জন্য আমাকে যেতে হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। কথা বলেছি হাজারো কৃষকের সঙ্গে। পাল্টে গেছে কৃষি ও কৃষকের সংজ্ঞা। পাল্টেছে কৃষকের ধ্যানধারণা। উৎপাদনের পাশাপাশি বাজার সম্পর্কেও কৃষক বেশ ভালো খোঁজখবর রাখেন। কখন কোন ফসল করলে লাভ বেশি পাওয়া যাবে, এ হিসাবটাও রাখছেন বুঝে-শুনেই। বাংলাদেশের কৃষকই নিজস্ব তাড়না থেকে সমৃদ্ধ করেছেন কৃষিকে।

তবে সংকটের অশনিসংকেত এখনো শুনতে পাই। সারা বিশ্বই ঝুঁকেছে প্রযুক্তির কৃষিতে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের হাতছানিতে পাল্টে যাচ্ছে বৈশ্বিক কৃষি। তার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে ছিটকে পড়তে হবে আমাদের। নতুন দিনের কৃষিতে হিসাব কষে শিল্পকারখানার মেশিনের মতোই গাছ থেকে আসবে ফল-ফসল। মাছ চাষ থেকে শুরু করে সব ধরনের কৃষিই চলে আসছে বদ্ধ ঘরে। দিগন্তজোড়া কৃষি নয়, বরং কৃষির সম্প্রসারণ হচ্ছে ঊর্ধ্বমুখী। নিশ্চিত লাভের উন্নত প্রযুক্তির এ কৃষিতে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়বে। তাই এতে বিনিয়োগ করবে বড় বড় শিল্পপতিরা। তৈরি পোশাক কারখানার মতোই কৃষির জমিগুলোয় গড়ে উঠবে কৃষি-শিল্প প্রতিষ্ঠান। ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক তাঁদের নিজের জমিতে গড়ে ওঠা কৃষি-শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হবেন। প্রকৃত কৃষকের হাত থেকে কৃষি চলে যাবে কারখানায় যন্ত্রের কাছে। আমার আশঙ্কা হয়, এ সময়ের ভেতর কৃষকের হাত থেকে কৃষি সরে যাওয়ায় হাজার বছরের লব্ধ কৃষিজ্ঞান যেমন হারিয়ে ফেলবে, তেমনি হারিয়ে ফেলবে প্রাকৃতিক কৃষি-কৌশল। ভবিষ্যতের কৃষিতে এক গভীর বিপর্যয়ের আভাস আমি পাই। তাই এখন থেকেই এসব বিষয়ে কৃষককে সচেতন হতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখন থেকেই হিসাব কষতে হবে আগামীর কৃষির। প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পিত কৃষি ব্যবস্থাপনা যেমন নিশ্চিত করতে পারে টেকসই উন্নয়নের, তেমনি ভাগ্য ফেরাতে পারে কৃষিসংশ্লিষ্ট সবার।

বলছিলাম কৃষকের পয়লা বৈশাখ নিয়ে। এ বিষয়ে আরও এক সংকটের কথা বলতে হচ্ছে। সারা বিশ্বকেই এখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে, বিশেষ করে সমুদ্র-নিকটবর্তী দেশগুলো এর প্রভাব টের পাচ্ছে বেশ ভালোভাবেই। আমি মনে করি, কৃষকই সবচেয়ে বেশি প্রকৃতিমগ্ন। পেশাগত কারণেই প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গ, যেমন রোদ-বৃষ্টি-ঝড় সম্পর্কে সম্যক ধারণা তাঁকে রাখতেই হয়। যুগ যুগ ধরে পরম্পরায় পরিবেশ ও আবহাওয়া সম্পর্কে একধরনের জানা-বোঝা কৃষকের রয়েছে। আকাশ দেখলেই তিনি বলে দিতে পারেন ঠিক কতক্ষণ পরে বৃষ্টি হবে। বাতাসে কান পাতলেই তিনি বুঝতে পারেন, এবারের বর্ষায় বৃষ্টি কতটুকু হবে। পুরোপুরি না মিললেও এ হিসাব-নিকাশগুলো কৃষককে কৃষিকাজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সহযোগিতা করেছে দিনের পর দিন। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনের এই সময়ে এসে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। অসময়ের বৃষ্টি কিংবা রোদ বদলে দিয়েছে কৃষকের এত বছরের প্রকৃতির পাঠ। শীতকাল ঠিক শীতকালের জায়গায় নেই, যেমন বর্ষা নেই বর্ষাকালে। ফলে কৃষকের বৈশাখও বদলে যাচ্ছে, বৈশাখও থাকছে না আর বৈশাখের জায়গায়। কৃষককেই মুখোমুখি হতে হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের। বলতে হচ্ছে কৃষিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এ ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রয়াসে দাঁড়াতে হবে কৃষকের পাশে। 

প্রতি পয়লা বৈশাখে আমরা শহর বা নগরের মানুষেরা গ্রামীণ কৃষি ঐতিহ্যের যে চর্চা মনেপ্রাণে লালন করি, প্রদর্শন করি; বাংলাদেশের কৃষকও যেন আনন্দ নিয়ে তার বেঁচে থাকার মূল মমতার জায়গা ফসল ফলিয়ে সমস্বরে গাইতে পারে, ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো…’। সবাইকে বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা। 

শাইখ সিরাজ, পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত