মযহারুল ইসলাম বাবলা

বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অন্য ভাষার মানুষও কিছু আছে। তবে এই সংখ্যা খুব কম। তাই রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বিকল্প ভাষার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ প্রতিবেশী ভারতে এটা কল্পনাও করা যায় না। কারণ, ভারতে বহু ভাষীর মানুষের বাস।পশ্চিমবঙ্গের অনেক বাঙালি এ নিয়ে তাদের আক্ষেপের কথা গোপন করে না। এমনও বলা হয়, ভিন্ন প্রদেশে তো পরের কথা, নিজেদের প্রদেশেও বাংলা ভাষায় একচেটিয়া কথা বলার উপায় তাদের নেই। গোটা ভারতে ২২টি স্বীকৃত ভাষা রয়েছে। এ ছাড়া অস্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা তো গুনে শেষ করা যাবে না। ইউরোপ মহাদেশের সঙ্গে এ ক্ষেত্রে ভারতকে তুলনা করা যায়। ইউরোপের প্রতিটি দেশের যেমন ভিন্ন ভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতি, ঠিক তেমনি ভারতের প্রতিটি প্রদেশের ভাষা-সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপ রয়েছে। স্বকীয় ও স্বাতন্ত্র্যে কোনোটির সঙ্গে কোনোটির মিল নেই।
রয়েছে ব্যাপক ভিন্নতা। ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি নয়, হিন্দি সরকারি ভাষা।ভারতের সাংবিধানিক ভাষা আইনে হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার ফলে অহিন্দিভাষীদের আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন সামাল দিতে সরকার অহিন্দি প্রদেশগুলোতে সরকারি ভাষা হিসেবে পূর্ববৎ ইংরেজি ভাষাকে বহাল রাখতে বাধ্য হয়। হিন্দি ভাষাবিরোধী ওই আন্দোলন সহিংস রূপ ধারণ করেছিল। পট্টি শ্রীরামালুর আত্মদহনসহ অসংখ্য সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয়েছিল।
এ ছাড়া বিহার, উত্তর প্রদেশে উর্দু ভাষাকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা ঘোষণায়, ভাষাভিত্তিক প্রদেশগুলোর সীমানা নির্ধারণে, প্রদেশের সংখ্যালঘু ভাষীদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানে বাধা প্রদান, ওডিশার বাঙালিদের দ্বারা উৎকলবাসীদের শোষণ-বঞ্চনা ইত্যাদি নিয়েও বিক্ষোভ ও হানাহানির ঘটনা ঘটেছিল। পুরুলিয়া জেলা বিহার রাজ্যে যুক্ত থাকায় বিহার সরকার প্রদেশের একমাত্র ভাষা হিন্দির ঘোষণায় বাঙালি-অধ্যুষিত পুরুলিয়ায় বাংলা ভাষার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। অবশেষে বিহার থেকে পুরুলিয়াকে পশ্চিমবঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়।
কংগ্রেস সরকার অসমিয়া জাত্যভিমানকে রাজনৈতিক স্বার্থের পক্ষে টানতে ১৯৬১ সালে বাংলা ভাষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের সশস্ত্র পন্থায় দমন করেছিল। আসামের ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ১১ জন বাঙালি প্রাণ হারিয়েছিল। ভারতে জাতীয়তার প্রশ্নটি মীমাংসিত না হওয়ার ফলে মাঝে মাঝেই সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
প্রতিটি জাতির মাতৃভাষা সেখানে আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদায়। আমাদের মাতৃভাষাকেই রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।ভারতীয়দের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। সরকারি হিন্দি ভাষা কিন্তু সব প্রদেশে সরকারি ভাষার মর্যাদায় নেই। দক্ষিণের পাঁচ প্রদেশের প্রাদেশিক ভাষার একমাত্র বিকল্প ভাষা ইংরেজি। দক্ষিণ ভারতের পাঁচ রাজ্য যথাক্রমে তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র, কেরালা ও কর্ণাটক।
এই পাঁচ রাজ্য নিয়েই দক্ষিণ ভারত। দক্ষিণের তামিল, তেলুগু, মালায়লাম, কন্নড় ভাষার কোনোটির সঙ্গে কোনোটির সাদৃশ্য নেই। না বর্ণমালায়, না শব্দে। দক্ষিণ ভারতীয়রা সচেতনভাবে সরকারি হিন্দি ভাষাবিদ্বেষী। হিন্দির প্রতি তাদের রয়েছে অবজ্ঞা। তাদের অভিযোগ, ভারতের সব আঞ্চলিক ভাষার মতো হিন্দিও আঞ্চলিক ভাষা। হিন্দিভাষী ভারতীয় রাজনীতিকেরা সংবিধান সভায় ভোটাভুটির কৌশলতায় হিন্দি ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ অহিন্দিভাষী জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এই চাপাচাপি দক্ষিণসহ অহিন্দিভাষী প্রদেশ গ্রহণ করেনি। সচেতনভাবে হিন্দি ভাষাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
স্বাধীন ভারতের ভাষা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্যটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনে মতবিনিময় সভায় রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, স্বাধীন ভারতে প্রাদেশিক ভাষাগুলো অপরিবর্তিত থাকবে। এখন যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি। তবে রাষ্ট্রভাষা হতে হবে ইংরেজি। ওই বৈঠকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন। হিন্দি-বলয়ের ভারতীয় বুর্জোয়া-পুঁজিপতি শ্রেণি এবং ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের কারসাজিতে ভারতের সরকারি ভাষা হিন্দি হয়েছিল। হিন্দির অসীম আগ্রাসন গোটা ভারতের বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের মাতৃভাষা-সংস্কৃতিকে বিপদাপন্ন করে তুলেছে। যার জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত আমাদের অভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালেই স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।
বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মাণিক্য রাজাদের শাসনামলের শুরুর দিকে ১৪৬১ সালে সামন্ত রাজাদের শাসনাধীন ত্রিপুরার রাজ-ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করা হয়েছিল। মাণিক্য রাজারা কিন্তু বাংলাভাষী ছিলেন না। বোড়ো, তিপ্রাভাষী ছিলেন। অথচ রাজ্যের সরকারি বাংলা ভাষার প্রচলন ও প্রসারে রাজারা রাজ-কর্মকর্তাদের ওপর হুকুম জারি পর্যন্ত করেছিলেন। ত্রিপুরা রাজ্যে ১৪৬১ সালে বাংলা সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছিল, আজ অবধি রাজ্যের প্রাদেশিক ভাষা বাংলা। মোগল ও ব্রিটিশ শাসনামলেও ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা ছিল বাংলা। অথচ বাংলা ভাষার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির পাঠস্থান বাংলা প্রদেশে সরকারি ভাষা মোগল যুগে ছিল ফারসি এবং ইংরেজ ঔপনিবেশিক যুগে ছিল ইংরেজি।
অখণ্ড বাংলা প্রদেশের রাজধানী কলকাতা একসময়ের বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল বটে। এখন অতীতের সেই ঐতিহ্য ইতিহাসে পরিণত। বাস্তবে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি ক্রমেই বিলুপ্তির পথ ধরেছে। বাংলা ভাষা সেখানে আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদায় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কলকাতার কেন্দ্রস্থলে বাংলায় কথা বলার পর্যন্ত উপায় নেই। হোটেলে, মার্কেটে, ট্রামে, বাসে, হাটে-বাজারে যেখানেই কথা বলার প্রয়োজন হবে, কথা বলতে হয় হিন্দিতে। বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরা ক্রমেই হিন্দির আগ্রাসনে জাতীয়তার তীব্র সংকটের মুখে।
মনে পড়ে, ১৯৮৮ সালে কলকাতার নাট্যদল নান্দীকারের নাট্য-উৎসবের আমন্ত্রণে ঢাকা থিয়েটারের প্রতিনিধিরূপে কলকাতায় গিয়েছিলাম। ‘কেরামত মঙ্গল’ নাটকটি রবীন্দ্রসদনে প্রদর্শিত হয়েছিল। রবীন্দ্রসদনে উপচে পড়া দর্শকের উপস্থিতিতে নাটকের প্রদর্শনীর শেষে দর্শক প্রতিক্রিয়ায় হতাশ হয়েছিলাম। দর্শকদের অভিযোগ ছিল, নাটকের সংলাপ তাদের বিন্দুমাত্র বোধগম্য হয়নি। এ নিয়ে নান্দীকার প্রধান রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত শ্লেষে বলেছিলেন, ‘হিন্দি শুনতে শুনতে কলকাতার বাঙালিদের কান নষ্ট হয়ে গেছে। আর হিন্দি বলতে বলতে বাংলা ভাষাও ভুলতে বসেছে। সেখানে পূর্ব বাংলার গ্রামীণ বাংলা ভাষার কেরামত মঙ্গল নাটকের সংলাপ তাদের বোঝার উপায় কোথায়?’
বাংলা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির অগ্রবর্তী কলকাতার বাঙালিদের বাস্তব অবস্থা দেখে সেদিন আমরাও কম হতাশ-বিস্মিত হইনি। এখন তো বিষয়টি আরও চরম পর্যায়ে। কলকাতার উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরা পর্যন্ত বাংলা ভাষা ত্যাগ করে হিন্দি-ইংরেজি ভাষার শিক্ষাক্রমে সন্তানদের ঢালাওভাবে ঠেলে দিয়েছেন। সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠার মোহে তারা মাতৃভাষা বাংলা ছেড়ে হিন্দি-ইংরেজি ভাষার পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
ত্রিশ বছর আগে শারদীয় পূজায় কলকাতায় গিয়েছিলাম। মফস্বল ও জেলাগুলোর পূজা দেখতে চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, বর্ধমান, চুঁচড়াসহ অনেক স্থানে গিয়েছিলাম। দেখেছি বারোয়ারি পূজামণ্ডপের মাইকগুলোতে লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত, সতীনাথ, মান্না দে, কিশোর কুমার, জগন্ময় মিত্র, তালাত মাহমুদ, সলিল চৌধুরী, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র, দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র, সাগর সেন, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, ভূপেন হাজারিকাসহ বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পীদের গান দিন-রাত বেজে চলেছে। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগে একই স্থানগুলোতে দুর্গাপূজায় গিয়ে দেখেছি সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বারোয়ারি পূজামণ্ডপে গান বাজছে সত্য, তবে একটি গানও বাংলা নয়। সবই হিন্দি ছায়াছবির ধুমধাড়াক্কা হিন্দি গান। যুগের ব্যবধানে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের পাল্টে গেছে সাংস্কৃতিক মান ও রুচি।
এখন সেটা ভয়ানক পর্যায়ে। বরেণ্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় জীবদ্দশায় বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির লালনপালন পশ্চিম বাংলাকেন্দ্রিক থাকবে না। সেটা বাংলাদেশকেন্দ্রিক হয়ে যাবে।’ তাঁর বলা কথা এখন বাস্তবে পরিণত। হিন্দির বহুমাত্রিক আগ্রাসনে কেবল পশ্চিম বাংলা আক্রান্ত নয়; আক্রান্ত ভারতের অপরাপর প্রদেশগুলোও।
দুঃখজনক হচ্ছে বাংলাদেশেও হিন্দি সংস্কৃতির প্রভাব ক্রমাগত বিস্তার লাভ করেছে। স্যাটেলাইট টেলিভিশনের কল্যাণে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়ালে আক্রান্ত বাংলাদেশের দর্শক। আমাদের কিশোর বয়সীরা পর্যন্ত ইতিমধ্যে হিন্দি ভাষা রপ্ত করে ফেলেছে। হিন্দি ভারতের সরকারি ভাষা। সে বিবেচনায় পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের ওপর হিন্দির প্রভাব থাকাটা অসংগত নয়। ইচ্ছা করলেই তারা হিন্দিকে এখন আর পরিত্যাগ করতে পারবে না। তারা বাঙালি জাতীয়তা পরিত্যাগ করে বহু আগেই ভারতীয় জাতীয়তায় নিজেদের সঁপে দিয়েছে। কিন্তু হিন্দি ভাষা তো আমাদের সুযোগ-প্রতিষ্ঠা কোনোটি দিতে পারবে না। তাহলে আমরা কেন হিন্দির আগ্রাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করে চলেছি? হিন্দি সিরিয়ালে আকৃষ্ট দর্শকেরা পরনিন্দা, পরচর্চা, হিংসা-বিদ্বেষ, কুটিলতা, শঠতার কুশিক্ষায় পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনকে কলুষিত করার দীক্ষা নিচ্ছে। আমরাও ব্যাধিমুক্ত কোথায়? একদিকে হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতির আগ্রাসন, অপরদিকে বিশ্বায়ন এবং সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির বহুমাত্রিক প্রভাব আমাদের জাতীয় জীবনকে শঙ্কার মুখে ফেলেছে। সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুক্ত হতে না পারলে আমাদেরও কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অন্য ভাষার মানুষও কিছু আছে। তবে এই সংখ্যা খুব কম। তাই রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বিকল্প ভাষার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ প্রতিবেশী ভারতে এটা কল্পনাও করা যায় না। কারণ, ভারতে বহু ভাষীর মানুষের বাস।পশ্চিমবঙ্গের অনেক বাঙালি এ নিয়ে তাদের আক্ষেপের কথা গোপন করে না। এমনও বলা হয়, ভিন্ন প্রদেশে তো পরের কথা, নিজেদের প্রদেশেও বাংলা ভাষায় একচেটিয়া কথা বলার উপায় তাদের নেই। গোটা ভারতে ২২টি স্বীকৃত ভাষা রয়েছে। এ ছাড়া অস্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা তো গুনে শেষ করা যাবে না। ইউরোপ মহাদেশের সঙ্গে এ ক্ষেত্রে ভারতকে তুলনা করা যায়। ইউরোপের প্রতিটি দেশের যেমন ভিন্ন ভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতি, ঠিক তেমনি ভারতের প্রতিটি প্রদেশের ভাষা-সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপ রয়েছে। স্বকীয় ও স্বাতন্ত্র্যে কোনোটির সঙ্গে কোনোটির মিল নেই।
রয়েছে ব্যাপক ভিন্নতা। ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি নয়, হিন্দি সরকারি ভাষা।ভারতের সাংবিধানিক ভাষা আইনে হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার ফলে অহিন্দিভাষীদের আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন সামাল দিতে সরকার অহিন্দি প্রদেশগুলোতে সরকারি ভাষা হিসেবে পূর্ববৎ ইংরেজি ভাষাকে বহাল রাখতে বাধ্য হয়। হিন্দি ভাষাবিরোধী ওই আন্দোলন সহিংস রূপ ধারণ করেছিল। পট্টি শ্রীরামালুর আত্মদহনসহ অসংখ্য সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয়েছিল।
এ ছাড়া বিহার, উত্তর প্রদেশে উর্দু ভাষাকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা ঘোষণায়, ভাষাভিত্তিক প্রদেশগুলোর সীমানা নির্ধারণে, প্রদেশের সংখ্যালঘু ভাষীদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানে বাধা প্রদান, ওডিশার বাঙালিদের দ্বারা উৎকলবাসীদের শোষণ-বঞ্চনা ইত্যাদি নিয়েও বিক্ষোভ ও হানাহানির ঘটনা ঘটেছিল। পুরুলিয়া জেলা বিহার রাজ্যে যুক্ত থাকায় বিহার সরকার প্রদেশের একমাত্র ভাষা হিন্দির ঘোষণায় বাঙালি-অধ্যুষিত পুরুলিয়ায় বাংলা ভাষার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। অবশেষে বিহার থেকে পুরুলিয়াকে পশ্চিমবঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়।
কংগ্রেস সরকার অসমিয়া জাত্যভিমানকে রাজনৈতিক স্বার্থের পক্ষে টানতে ১৯৬১ সালে বাংলা ভাষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের সশস্ত্র পন্থায় দমন করেছিল। আসামের ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ১১ জন বাঙালি প্রাণ হারিয়েছিল। ভারতে জাতীয়তার প্রশ্নটি মীমাংসিত না হওয়ার ফলে মাঝে মাঝেই সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
প্রতিটি জাতির মাতৃভাষা সেখানে আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদায়। আমাদের মাতৃভাষাকেই রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।ভারতীয়দের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। সরকারি হিন্দি ভাষা কিন্তু সব প্রদেশে সরকারি ভাষার মর্যাদায় নেই। দক্ষিণের পাঁচ প্রদেশের প্রাদেশিক ভাষার একমাত্র বিকল্প ভাষা ইংরেজি। দক্ষিণ ভারতের পাঁচ রাজ্য যথাক্রমে তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র, কেরালা ও কর্ণাটক।
এই পাঁচ রাজ্য নিয়েই দক্ষিণ ভারত। দক্ষিণের তামিল, তেলুগু, মালায়লাম, কন্নড় ভাষার কোনোটির সঙ্গে কোনোটির সাদৃশ্য নেই। না বর্ণমালায়, না শব্দে। দক্ষিণ ভারতীয়রা সচেতনভাবে সরকারি হিন্দি ভাষাবিদ্বেষী। হিন্দির প্রতি তাদের রয়েছে অবজ্ঞা। তাদের অভিযোগ, ভারতের সব আঞ্চলিক ভাষার মতো হিন্দিও আঞ্চলিক ভাষা। হিন্দিভাষী ভারতীয় রাজনীতিকেরা সংবিধান সভায় ভোটাভুটির কৌশলতায় হিন্দি ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ অহিন্দিভাষী জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এই চাপাচাপি দক্ষিণসহ অহিন্দিভাষী প্রদেশ গ্রহণ করেনি। সচেতনভাবে হিন্দি ভাষাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
স্বাধীন ভারতের ভাষা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্যটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনে মতবিনিময় সভায় রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, স্বাধীন ভারতে প্রাদেশিক ভাষাগুলো অপরিবর্তিত থাকবে। এখন যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি। তবে রাষ্ট্রভাষা হতে হবে ইংরেজি। ওই বৈঠকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন। হিন্দি-বলয়ের ভারতীয় বুর্জোয়া-পুঁজিপতি শ্রেণি এবং ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের কারসাজিতে ভারতের সরকারি ভাষা হিন্দি হয়েছিল। হিন্দির অসীম আগ্রাসন গোটা ভারতের বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের মাতৃভাষা-সংস্কৃতিকে বিপদাপন্ন করে তুলেছে। যার জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত আমাদের অভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালেই স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।
বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মাণিক্য রাজাদের শাসনামলের শুরুর দিকে ১৪৬১ সালে সামন্ত রাজাদের শাসনাধীন ত্রিপুরার রাজ-ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করা হয়েছিল। মাণিক্য রাজারা কিন্তু বাংলাভাষী ছিলেন না। বোড়ো, তিপ্রাভাষী ছিলেন। অথচ রাজ্যের সরকারি বাংলা ভাষার প্রচলন ও প্রসারে রাজারা রাজ-কর্মকর্তাদের ওপর হুকুম জারি পর্যন্ত করেছিলেন। ত্রিপুরা রাজ্যে ১৪৬১ সালে বাংলা সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছিল, আজ অবধি রাজ্যের প্রাদেশিক ভাষা বাংলা। মোগল ও ব্রিটিশ শাসনামলেও ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা ছিল বাংলা। অথচ বাংলা ভাষার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির পাঠস্থান বাংলা প্রদেশে সরকারি ভাষা মোগল যুগে ছিল ফারসি এবং ইংরেজ ঔপনিবেশিক যুগে ছিল ইংরেজি।
অখণ্ড বাংলা প্রদেশের রাজধানী কলকাতা একসময়ের বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল বটে। এখন অতীতের সেই ঐতিহ্য ইতিহাসে পরিণত। বাস্তবে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি ক্রমেই বিলুপ্তির পথ ধরেছে। বাংলা ভাষা সেখানে আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদায় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কলকাতার কেন্দ্রস্থলে বাংলায় কথা বলার পর্যন্ত উপায় নেই। হোটেলে, মার্কেটে, ট্রামে, বাসে, হাটে-বাজারে যেখানেই কথা বলার প্রয়োজন হবে, কথা বলতে হয় হিন্দিতে। বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরা ক্রমেই হিন্দির আগ্রাসনে জাতীয়তার তীব্র সংকটের মুখে।
মনে পড়ে, ১৯৮৮ সালে কলকাতার নাট্যদল নান্দীকারের নাট্য-উৎসবের আমন্ত্রণে ঢাকা থিয়েটারের প্রতিনিধিরূপে কলকাতায় গিয়েছিলাম। ‘কেরামত মঙ্গল’ নাটকটি রবীন্দ্রসদনে প্রদর্শিত হয়েছিল। রবীন্দ্রসদনে উপচে পড়া দর্শকের উপস্থিতিতে নাটকের প্রদর্শনীর শেষে দর্শক প্রতিক্রিয়ায় হতাশ হয়েছিলাম। দর্শকদের অভিযোগ ছিল, নাটকের সংলাপ তাদের বিন্দুমাত্র বোধগম্য হয়নি। এ নিয়ে নান্দীকার প্রধান রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত শ্লেষে বলেছিলেন, ‘হিন্দি শুনতে শুনতে কলকাতার বাঙালিদের কান নষ্ট হয়ে গেছে। আর হিন্দি বলতে বলতে বাংলা ভাষাও ভুলতে বসেছে। সেখানে পূর্ব বাংলার গ্রামীণ বাংলা ভাষার কেরামত মঙ্গল নাটকের সংলাপ তাদের বোঝার উপায় কোথায়?’
বাংলা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির অগ্রবর্তী কলকাতার বাঙালিদের বাস্তব অবস্থা দেখে সেদিন আমরাও কম হতাশ-বিস্মিত হইনি। এখন তো বিষয়টি আরও চরম পর্যায়ে। কলকাতার উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরা পর্যন্ত বাংলা ভাষা ত্যাগ করে হিন্দি-ইংরেজি ভাষার শিক্ষাক্রমে সন্তানদের ঢালাওভাবে ঠেলে দিয়েছেন। সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠার মোহে তারা মাতৃভাষা বাংলা ছেড়ে হিন্দি-ইংরেজি ভাষার পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
ত্রিশ বছর আগে শারদীয় পূজায় কলকাতায় গিয়েছিলাম। মফস্বল ও জেলাগুলোর পূজা দেখতে চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, বর্ধমান, চুঁচড়াসহ অনেক স্থানে গিয়েছিলাম। দেখেছি বারোয়ারি পূজামণ্ডপের মাইকগুলোতে লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত, সতীনাথ, মান্না দে, কিশোর কুমার, জগন্ময় মিত্র, তালাত মাহমুদ, সলিল চৌধুরী, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র, দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র, সাগর সেন, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, ভূপেন হাজারিকাসহ বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পীদের গান দিন-রাত বেজে চলেছে। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগে একই স্থানগুলোতে দুর্গাপূজায় গিয়ে দেখেছি সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বারোয়ারি পূজামণ্ডপে গান বাজছে সত্য, তবে একটি গানও বাংলা নয়। সবই হিন্দি ছায়াছবির ধুমধাড়াক্কা হিন্দি গান। যুগের ব্যবধানে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের পাল্টে গেছে সাংস্কৃতিক মান ও রুচি।
এখন সেটা ভয়ানক পর্যায়ে। বরেণ্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় জীবদ্দশায় বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির লালনপালন পশ্চিম বাংলাকেন্দ্রিক থাকবে না। সেটা বাংলাদেশকেন্দ্রিক হয়ে যাবে।’ তাঁর বলা কথা এখন বাস্তবে পরিণত। হিন্দির বহুমাত্রিক আগ্রাসনে কেবল পশ্চিম বাংলা আক্রান্ত নয়; আক্রান্ত ভারতের অপরাপর প্রদেশগুলোও।
দুঃখজনক হচ্ছে বাংলাদেশেও হিন্দি সংস্কৃতির প্রভাব ক্রমাগত বিস্তার লাভ করেছে। স্যাটেলাইট টেলিভিশনের কল্যাণে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়ালে আক্রান্ত বাংলাদেশের দর্শক। আমাদের কিশোর বয়সীরা পর্যন্ত ইতিমধ্যে হিন্দি ভাষা রপ্ত করে ফেলেছে। হিন্দি ভারতের সরকারি ভাষা। সে বিবেচনায় পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের ওপর হিন্দির প্রভাব থাকাটা অসংগত নয়। ইচ্ছা করলেই তারা হিন্দিকে এখন আর পরিত্যাগ করতে পারবে না। তারা বাঙালি জাতীয়তা পরিত্যাগ করে বহু আগেই ভারতীয় জাতীয়তায় নিজেদের সঁপে দিয়েছে। কিন্তু হিন্দি ভাষা তো আমাদের সুযোগ-প্রতিষ্ঠা কোনোটি দিতে পারবে না। তাহলে আমরা কেন হিন্দির আগ্রাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করে চলেছি? হিন্দি সিরিয়ালে আকৃষ্ট দর্শকেরা পরনিন্দা, পরচর্চা, হিংসা-বিদ্বেষ, কুটিলতা, শঠতার কুশিক্ষায় পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনকে কলুষিত করার দীক্ষা নিচ্ছে। আমরাও ব্যাধিমুক্ত কোথায়? একদিকে হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতির আগ্রাসন, অপরদিকে বিশ্বায়ন এবং সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির বহুমাত্রিক প্রভাব আমাদের জাতীয় জীবনকে শঙ্কার মুখে ফেলেছে। সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুক্ত হতে না পারলে আমাদেরও কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক নতুন দিগন্ত
মযহারুল ইসলাম বাবলা

বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অন্য ভাষার মানুষও কিছু আছে। তবে এই সংখ্যা খুব কম। তাই রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বিকল্প ভাষার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ প্রতিবেশী ভারতে এটা কল্পনাও করা যায় না। কারণ, ভারতে বহু ভাষীর মানুষের বাস।পশ্চিমবঙ্গের অনেক বাঙালি এ নিয়ে তাদের আক্ষেপের কথা গোপন করে না। এমনও বলা হয়, ভিন্ন প্রদেশে তো পরের কথা, নিজেদের প্রদেশেও বাংলা ভাষায় একচেটিয়া কথা বলার উপায় তাদের নেই। গোটা ভারতে ২২টি স্বীকৃত ভাষা রয়েছে। এ ছাড়া অস্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা তো গুনে শেষ করা যাবে না। ইউরোপ মহাদেশের সঙ্গে এ ক্ষেত্রে ভারতকে তুলনা করা যায়। ইউরোপের প্রতিটি দেশের যেমন ভিন্ন ভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতি, ঠিক তেমনি ভারতের প্রতিটি প্রদেশের ভাষা-সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপ রয়েছে। স্বকীয় ও স্বাতন্ত্র্যে কোনোটির সঙ্গে কোনোটির মিল নেই।
রয়েছে ব্যাপক ভিন্নতা। ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি নয়, হিন্দি সরকারি ভাষা।ভারতের সাংবিধানিক ভাষা আইনে হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার ফলে অহিন্দিভাষীদের আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন সামাল দিতে সরকার অহিন্দি প্রদেশগুলোতে সরকারি ভাষা হিসেবে পূর্ববৎ ইংরেজি ভাষাকে বহাল রাখতে বাধ্য হয়। হিন্দি ভাষাবিরোধী ওই আন্দোলন সহিংস রূপ ধারণ করেছিল। পট্টি শ্রীরামালুর আত্মদহনসহ অসংখ্য সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয়েছিল।
এ ছাড়া বিহার, উত্তর প্রদেশে উর্দু ভাষাকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা ঘোষণায়, ভাষাভিত্তিক প্রদেশগুলোর সীমানা নির্ধারণে, প্রদেশের সংখ্যালঘু ভাষীদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানে বাধা প্রদান, ওডিশার বাঙালিদের দ্বারা উৎকলবাসীদের শোষণ-বঞ্চনা ইত্যাদি নিয়েও বিক্ষোভ ও হানাহানির ঘটনা ঘটেছিল। পুরুলিয়া জেলা বিহার রাজ্যে যুক্ত থাকায় বিহার সরকার প্রদেশের একমাত্র ভাষা হিন্দির ঘোষণায় বাঙালি-অধ্যুষিত পুরুলিয়ায় বাংলা ভাষার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। অবশেষে বিহার থেকে পুরুলিয়াকে পশ্চিমবঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়।
কংগ্রেস সরকার অসমিয়া জাত্যভিমানকে রাজনৈতিক স্বার্থের পক্ষে টানতে ১৯৬১ সালে বাংলা ভাষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের সশস্ত্র পন্থায় দমন করেছিল। আসামের ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ১১ জন বাঙালি প্রাণ হারিয়েছিল। ভারতে জাতীয়তার প্রশ্নটি মীমাংসিত না হওয়ার ফলে মাঝে মাঝেই সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
প্রতিটি জাতির মাতৃভাষা সেখানে আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদায়। আমাদের মাতৃভাষাকেই রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।ভারতীয়দের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। সরকারি হিন্দি ভাষা কিন্তু সব প্রদেশে সরকারি ভাষার মর্যাদায় নেই। দক্ষিণের পাঁচ প্রদেশের প্রাদেশিক ভাষার একমাত্র বিকল্প ভাষা ইংরেজি। দক্ষিণ ভারতের পাঁচ রাজ্য যথাক্রমে তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র, কেরালা ও কর্ণাটক।
এই পাঁচ রাজ্য নিয়েই দক্ষিণ ভারত। দক্ষিণের তামিল, তেলুগু, মালায়লাম, কন্নড় ভাষার কোনোটির সঙ্গে কোনোটির সাদৃশ্য নেই। না বর্ণমালায়, না শব্দে। দক্ষিণ ভারতীয়রা সচেতনভাবে সরকারি হিন্দি ভাষাবিদ্বেষী। হিন্দির প্রতি তাদের রয়েছে অবজ্ঞা। তাদের অভিযোগ, ভারতের সব আঞ্চলিক ভাষার মতো হিন্দিও আঞ্চলিক ভাষা। হিন্দিভাষী ভারতীয় রাজনীতিকেরা সংবিধান সভায় ভোটাভুটির কৌশলতায় হিন্দি ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ অহিন্দিভাষী জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এই চাপাচাপি দক্ষিণসহ অহিন্দিভাষী প্রদেশ গ্রহণ করেনি। সচেতনভাবে হিন্দি ভাষাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
স্বাধীন ভারতের ভাষা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্যটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনে মতবিনিময় সভায় রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, স্বাধীন ভারতে প্রাদেশিক ভাষাগুলো অপরিবর্তিত থাকবে। এখন যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি। তবে রাষ্ট্রভাষা হতে হবে ইংরেজি। ওই বৈঠকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন। হিন্দি-বলয়ের ভারতীয় বুর্জোয়া-পুঁজিপতি শ্রেণি এবং ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের কারসাজিতে ভারতের সরকারি ভাষা হিন্দি হয়েছিল। হিন্দির অসীম আগ্রাসন গোটা ভারতের বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের মাতৃভাষা-সংস্কৃতিকে বিপদাপন্ন করে তুলেছে। যার জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত আমাদের অভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালেই স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।
বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মাণিক্য রাজাদের শাসনামলের শুরুর দিকে ১৪৬১ সালে সামন্ত রাজাদের শাসনাধীন ত্রিপুরার রাজ-ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করা হয়েছিল। মাণিক্য রাজারা কিন্তু বাংলাভাষী ছিলেন না। বোড়ো, তিপ্রাভাষী ছিলেন। অথচ রাজ্যের সরকারি বাংলা ভাষার প্রচলন ও প্রসারে রাজারা রাজ-কর্মকর্তাদের ওপর হুকুম জারি পর্যন্ত করেছিলেন। ত্রিপুরা রাজ্যে ১৪৬১ সালে বাংলা সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছিল, আজ অবধি রাজ্যের প্রাদেশিক ভাষা বাংলা। মোগল ও ব্রিটিশ শাসনামলেও ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা ছিল বাংলা। অথচ বাংলা ভাষার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির পাঠস্থান বাংলা প্রদেশে সরকারি ভাষা মোগল যুগে ছিল ফারসি এবং ইংরেজ ঔপনিবেশিক যুগে ছিল ইংরেজি।
অখণ্ড বাংলা প্রদেশের রাজধানী কলকাতা একসময়ের বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল বটে। এখন অতীতের সেই ঐতিহ্য ইতিহাসে পরিণত। বাস্তবে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি ক্রমেই বিলুপ্তির পথ ধরেছে। বাংলা ভাষা সেখানে আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদায় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কলকাতার কেন্দ্রস্থলে বাংলায় কথা বলার পর্যন্ত উপায় নেই। হোটেলে, মার্কেটে, ট্রামে, বাসে, হাটে-বাজারে যেখানেই কথা বলার প্রয়োজন হবে, কথা বলতে হয় হিন্দিতে। বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরা ক্রমেই হিন্দির আগ্রাসনে জাতীয়তার তীব্র সংকটের মুখে।
মনে পড়ে, ১৯৮৮ সালে কলকাতার নাট্যদল নান্দীকারের নাট্য-উৎসবের আমন্ত্রণে ঢাকা থিয়েটারের প্রতিনিধিরূপে কলকাতায় গিয়েছিলাম। ‘কেরামত মঙ্গল’ নাটকটি রবীন্দ্রসদনে প্রদর্শিত হয়েছিল। রবীন্দ্রসদনে উপচে পড়া দর্শকের উপস্থিতিতে নাটকের প্রদর্শনীর শেষে দর্শক প্রতিক্রিয়ায় হতাশ হয়েছিলাম। দর্শকদের অভিযোগ ছিল, নাটকের সংলাপ তাদের বিন্দুমাত্র বোধগম্য হয়নি। এ নিয়ে নান্দীকার প্রধান রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত শ্লেষে বলেছিলেন, ‘হিন্দি শুনতে শুনতে কলকাতার বাঙালিদের কান নষ্ট হয়ে গেছে। আর হিন্দি বলতে বলতে বাংলা ভাষাও ভুলতে বসেছে। সেখানে পূর্ব বাংলার গ্রামীণ বাংলা ভাষার কেরামত মঙ্গল নাটকের সংলাপ তাদের বোঝার উপায় কোথায়?’
বাংলা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির অগ্রবর্তী কলকাতার বাঙালিদের বাস্তব অবস্থা দেখে সেদিন আমরাও কম হতাশ-বিস্মিত হইনি। এখন তো বিষয়টি আরও চরম পর্যায়ে। কলকাতার উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরা পর্যন্ত বাংলা ভাষা ত্যাগ করে হিন্দি-ইংরেজি ভাষার শিক্ষাক্রমে সন্তানদের ঢালাওভাবে ঠেলে দিয়েছেন। সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠার মোহে তারা মাতৃভাষা বাংলা ছেড়ে হিন্দি-ইংরেজি ভাষার পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
ত্রিশ বছর আগে শারদীয় পূজায় কলকাতায় গিয়েছিলাম। মফস্বল ও জেলাগুলোর পূজা দেখতে চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, বর্ধমান, চুঁচড়াসহ অনেক স্থানে গিয়েছিলাম। দেখেছি বারোয়ারি পূজামণ্ডপের মাইকগুলোতে লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত, সতীনাথ, মান্না দে, কিশোর কুমার, জগন্ময় মিত্র, তালাত মাহমুদ, সলিল চৌধুরী, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র, দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র, সাগর সেন, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, ভূপেন হাজারিকাসহ বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পীদের গান দিন-রাত বেজে চলেছে। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগে একই স্থানগুলোতে দুর্গাপূজায় গিয়ে দেখেছি সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বারোয়ারি পূজামণ্ডপে গান বাজছে সত্য, তবে একটি গানও বাংলা নয়। সবই হিন্দি ছায়াছবির ধুমধাড়াক্কা হিন্দি গান। যুগের ব্যবধানে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের পাল্টে গেছে সাংস্কৃতিক মান ও রুচি।
এখন সেটা ভয়ানক পর্যায়ে। বরেণ্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় জীবদ্দশায় বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির লালনপালন পশ্চিম বাংলাকেন্দ্রিক থাকবে না। সেটা বাংলাদেশকেন্দ্রিক হয়ে যাবে।’ তাঁর বলা কথা এখন বাস্তবে পরিণত। হিন্দির বহুমাত্রিক আগ্রাসনে কেবল পশ্চিম বাংলা আক্রান্ত নয়; আক্রান্ত ভারতের অপরাপর প্রদেশগুলোও।
দুঃখজনক হচ্ছে বাংলাদেশেও হিন্দি সংস্কৃতির প্রভাব ক্রমাগত বিস্তার লাভ করেছে। স্যাটেলাইট টেলিভিশনের কল্যাণে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়ালে আক্রান্ত বাংলাদেশের দর্শক। আমাদের কিশোর বয়সীরা পর্যন্ত ইতিমধ্যে হিন্দি ভাষা রপ্ত করে ফেলেছে। হিন্দি ভারতের সরকারি ভাষা। সে বিবেচনায় পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের ওপর হিন্দির প্রভাব থাকাটা অসংগত নয়। ইচ্ছা করলেই তারা হিন্দিকে এখন আর পরিত্যাগ করতে পারবে না। তারা বাঙালি জাতীয়তা পরিত্যাগ করে বহু আগেই ভারতীয় জাতীয়তায় নিজেদের সঁপে দিয়েছে। কিন্তু হিন্দি ভাষা তো আমাদের সুযোগ-প্রতিষ্ঠা কোনোটি দিতে পারবে না। তাহলে আমরা কেন হিন্দির আগ্রাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করে চলেছি? হিন্দি সিরিয়ালে আকৃষ্ট দর্শকেরা পরনিন্দা, পরচর্চা, হিংসা-বিদ্বেষ, কুটিলতা, শঠতার কুশিক্ষায় পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনকে কলুষিত করার দীক্ষা নিচ্ছে। আমরাও ব্যাধিমুক্ত কোথায়? একদিকে হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতির আগ্রাসন, অপরদিকে বিশ্বায়ন এবং সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির বহুমাত্রিক প্রভাব আমাদের জাতীয় জীবনকে শঙ্কার মুখে ফেলেছে। সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুক্ত হতে না পারলে আমাদেরও কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অন্য ভাষার মানুষও কিছু আছে। তবে এই সংখ্যা খুব কম। তাই রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বিকল্প ভাষার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ প্রতিবেশী ভারতে এটা কল্পনাও করা যায় না। কারণ, ভারতে বহু ভাষীর মানুষের বাস।পশ্চিমবঙ্গের অনেক বাঙালি এ নিয়ে তাদের আক্ষেপের কথা গোপন করে না। এমনও বলা হয়, ভিন্ন প্রদেশে তো পরের কথা, নিজেদের প্রদেশেও বাংলা ভাষায় একচেটিয়া কথা বলার উপায় তাদের নেই। গোটা ভারতে ২২টি স্বীকৃত ভাষা রয়েছে। এ ছাড়া অস্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা তো গুনে শেষ করা যাবে না। ইউরোপ মহাদেশের সঙ্গে এ ক্ষেত্রে ভারতকে তুলনা করা যায়। ইউরোপের প্রতিটি দেশের যেমন ভিন্ন ভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতি, ঠিক তেমনি ভারতের প্রতিটি প্রদেশের ভাষা-সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপ রয়েছে। স্বকীয় ও স্বাতন্ত্র্যে কোনোটির সঙ্গে কোনোটির মিল নেই।
রয়েছে ব্যাপক ভিন্নতা। ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি নয়, হিন্দি সরকারি ভাষা।ভারতের সাংবিধানিক ভাষা আইনে হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার ফলে অহিন্দিভাষীদের আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন সামাল দিতে সরকার অহিন্দি প্রদেশগুলোতে সরকারি ভাষা হিসেবে পূর্ববৎ ইংরেজি ভাষাকে বহাল রাখতে বাধ্য হয়। হিন্দি ভাষাবিরোধী ওই আন্দোলন সহিংস রূপ ধারণ করেছিল। পট্টি শ্রীরামালুর আত্মদহনসহ অসংখ্য সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয়েছিল।
এ ছাড়া বিহার, উত্তর প্রদেশে উর্দু ভাষাকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা ঘোষণায়, ভাষাভিত্তিক প্রদেশগুলোর সীমানা নির্ধারণে, প্রদেশের সংখ্যালঘু ভাষীদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানে বাধা প্রদান, ওডিশার বাঙালিদের দ্বারা উৎকলবাসীদের শোষণ-বঞ্চনা ইত্যাদি নিয়েও বিক্ষোভ ও হানাহানির ঘটনা ঘটেছিল। পুরুলিয়া জেলা বিহার রাজ্যে যুক্ত থাকায় বিহার সরকার প্রদেশের একমাত্র ভাষা হিন্দির ঘোষণায় বাঙালি-অধ্যুষিত পুরুলিয়ায় বাংলা ভাষার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। অবশেষে বিহার থেকে পুরুলিয়াকে পশ্চিমবঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়।
কংগ্রেস সরকার অসমিয়া জাত্যভিমানকে রাজনৈতিক স্বার্থের পক্ষে টানতে ১৯৬১ সালে বাংলা ভাষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের সশস্ত্র পন্থায় দমন করেছিল। আসামের ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ১১ জন বাঙালি প্রাণ হারিয়েছিল। ভারতে জাতীয়তার প্রশ্নটি মীমাংসিত না হওয়ার ফলে মাঝে মাঝেই সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
প্রতিটি জাতির মাতৃভাষা সেখানে আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদায়। আমাদের মাতৃভাষাকেই রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।ভারতীয়দের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। সরকারি হিন্দি ভাষা কিন্তু সব প্রদেশে সরকারি ভাষার মর্যাদায় নেই। দক্ষিণের পাঁচ প্রদেশের প্রাদেশিক ভাষার একমাত্র বিকল্প ভাষা ইংরেজি। দক্ষিণ ভারতের পাঁচ রাজ্য যথাক্রমে তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র, কেরালা ও কর্ণাটক।
এই পাঁচ রাজ্য নিয়েই দক্ষিণ ভারত। দক্ষিণের তামিল, তেলুগু, মালায়লাম, কন্নড় ভাষার কোনোটির সঙ্গে কোনোটির সাদৃশ্য নেই। না বর্ণমালায়, না শব্দে। দক্ষিণ ভারতীয়রা সচেতনভাবে সরকারি হিন্দি ভাষাবিদ্বেষী। হিন্দির প্রতি তাদের রয়েছে অবজ্ঞা। তাদের অভিযোগ, ভারতের সব আঞ্চলিক ভাষার মতো হিন্দিও আঞ্চলিক ভাষা। হিন্দিভাষী ভারতীয় রাজনীতিকেরা সংবিধান সভায় ভোটাভুটির কৌশলতায় হিন্দি ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ অহিন্দিভাষী জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এই চাপাচাপি দক্ষিণসহ অহিন্দিভাষী প্রদেশ গ্রহণ করেনি। সচেতনভাবে হিন্দি ভাষাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
স্বাধীন ভারতের ভাষা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্যটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনে মতবিনিময় সভায় রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, স্বাধীন ভারতে প্রাদেশিক ভাষাগুলো অপরিবর্তিত থাকবে। এখন যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি। তবে রাষ্ট্রভাষা হতে হবে ইংরেজি। ওই বৈঠকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন। হিন্দি-বলয়ের ভারতীয় বুর্জোয়া-পুঁজিপতি শ্রেণি এবং ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের কারসাজিতে ভারতের সরকারি ভাষা হিন্দি হয়েছিল। হিন্দির অসীম আগ্রাসন গোটা ভারতের বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের মাতৃভাষা-সংস্কৃতিকে বিপদাপন্ন করে তুলেছে। যার জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত আমাদের অভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালেই স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।
বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মাণিক্য রাজাদের শাসনামলের শুরুর দিকে ১৪৬১ সালে সামন্ত রাজাদের শাসনাধীন ত্রিপুরার রাজ-ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করা হয়েছিল। মাণিক্য রাজারা কিন্তু বাংলাভাষী ছিলেন না। বোড়ো, তিপ্রাভাষী ছিলেন। অথচ রাজ্যের সরকারি বাংলা ভাষার প্রচলন ও প্রসারে রাজারা রাজ-কর্মকর্তাদের ওপর হুকুম জারি পর্যন্ত করেছিলেন। ত্রিপুরা রাজ্যে ১৪৬১ সালে বাংলা সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছিল, আজ অবধি রাজ্যের প্রাদেশিক ভাষা বাংলা। মোগল ও ব্রিটিশ শাসনামলেও ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা ছিল বাংলা। অথচ বাংলা ভাষার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির পাঠস্থান বাংলা প্রদেশে সরকারি ভাষা মোগল যুগে ছিল ফারসি এবং ইংরেজ ঔপনিবেশিক যুগে ছিল ইংরেজি।
অখণ্ড বাংলা প্রদেশের রাজধানী কলকাতা একসময়ের বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল বটে। এখন অতীতের সেই ঐতিহ্য ইতিহাসে পরিণত। বাস্তবে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি ক্রমেই বিলুপ্তির পথ ধরেছে। বাংলা ভাষা সেখানে আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদায় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কলকাতার কেন্দ্রস্থলে বাংলায় কথা বলার পর্যন্ত উপায় নেই। হোটেলে, মার্কেটে, ট্রামে, বাসে, হাটে-বাজারে যেখানেই কথা বলার প্রয়োজন হবে, কথা বলতে হয় হিন্দিতে। বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরা ক্রমেই হিন্দির আগ্রাসনে জাতীয়তার তীব্র সংকটের মুখে।
মনে পড়ে, ১৯৮৮ সালে কলকাতার নাট্যদল নান্দীকারের নাট্য-উৎসবের আমন্ত্রণে ঢাকা থিয়েটারের প্রতিনিধিরূপে কলকাতায় গিয়েছিলাম। ‘কেরামত মঙ্গল’ নাটকটি রবীন্দ্রসদনে প্রদর্শিত হয়েছিল। রবীন্দ্রসদনে উপচে পড়া দর্শকের উপস্থিতিতে নাটকের প্রদর্শনীর শেষে দর্শক প্রতিক্রিয়ায় হতাশ হয়েছিলাম। দর্শকদের অভিযোগ ছিল, নাটকের সংলাপ তাদের বিন্দুমাত্র বোধগম্য হয়নি। এ নিয়ে নান্দীকার প্রধান রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত শ্লেষে বলেছিলেন, ‘হিন্দি শুনতে শুনতে কলকাতার বাঙালিদের কান নষ্ট হয়ে গেছে। আর হিন্দি বলতে বলতে বাংলা ভাষাও ভুলতে বসেছে। সেখানে পূর্ব বাংলার গ্রামীণ বাংলা ভাষার কেরামত মঙ্গল নাটকের সংলাপ তাদের বোঝার উপায় কোথায়?’
বাংলা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির অগ্রবর্তী কলকাতার বাঙালিদের বাস্তব অবস্থা দেখে সেদিন আমরাও কম হতাশ-বিস্মিত হইনি। এখন তো বিষয়টি আরও চরম পর্যায়ে। কলকাতার উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরা পর্যন্ত বাংলা ভাষা ত্যাগ করে হিন্দি-ইংরেজি ভাষার শিক্ষাক্রমে সন্তানদের ঢালাওভাবে ঠেলে দিয়েছেন। সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠার মোহে তারা মাতৃভাষা বাংলা ছেড়ে হিন্দি-ইংরেজি ভাষার পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
ত্রিশ বছর আগে শারদীয় পূজায় কলকাতায় গিয়েছিলাম। মফস্বল ও জেলাগুলোর পূজা দেখতে চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, বর্ধমান, চুঁচড়াসহ অনেক স্থানে গিয়েছিলাম। দেখেছি বারোয়ারি পূজামণ্ডপের মাইকগুলোতে লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত, সতীনাথ, মান্না দে, কিশোর কুমার, জগন্ময় মিত্র, তালাত মাহমুদ, সলিল চৌধুরী, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র, দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র, সাগর সেন, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, ভূপেন হাজারিকাসহ বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পীদের গান দিন-রাত বেজে চলেছে। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগে একই স্থানগুলোতে দুর্গাপূজায় গিয়ে দেখেছি সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বারোয়ারি পূজামণ্ডপে গান বাজছে সত্য, তবে একটি গানও বাংলা নয়। সবই হিন্দি ছায়াছবির ধুমধাড়াক্কা হিন্দি গান। যুগের ব্যবধানে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের পাল্টে গেছে সাংস্কৃতিক মান ও রুচি।
এখন সেটা ভয়ানক পর্যায়ে। বরেণ্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় জীবদ্দশায় বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির লালনপালন পশ্চিম বাংলাকেন্দ্রিক থাকবে না। সেটা বাংলাদেশকেন্দ্রিক হয়ে যাবে।’ তাঁর বলা কথা এখন বাস্তবে পরিণত। হিন্দির বহুমাত্রিক আগ্রাসনে কেবল পশ্চিম বাংলা আক্রান্ত নয়; আক্রান্ত ভারতের অপরাপর প্রদেশগুলোও।
দুঃখজনক হচ্ছে বাংলাদেশেও হিন্দি সংস্কৃতির প্রভাব ক্রমাগত বিস্তার লাভ করেছে। স্যাটেলাইট টেলিভিশনের কল্যাণে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়ালে আক্রান্ত বাংলাদেশের দর্শক। আমাদের কিশোর বয়সীরা পর্যন্ত ইতিমধ্যে হিন্দি ভাষা রপ্ত করে ফেলেছে। হিন্দি ভারতের সরকারি ভাষা। সে বিবেচনায় পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের ওপর হিন্দির প্রভাব থাকাটা অসংগত নয়। ইচ্ছা করলেই তারা হিন্দিকে এখন আর পরিত্যাগ করতে পারবে না। তারা বাঙালি জাতীয়তা পরিত্যাগ করে বহু আগেই ভারতীয় জাতীয়তায় নিজেদের সঁপে দিয়েছে। কিন্তু হিন্দি ভাষা তো আমাদের সুযোগ-প্রতিষ্ঠা কোনোটি দিতে পারবে না। তাহলে আমরা কেন হিন্দির আগ্রাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করে চলেছি? হিন্দি সিরিয়ালে আকৃষ্ট দর্শকেরা পরনিন্দা, পরচর্চা, হিংসা-বিদ্বেষ, কুটিলতা, শঠতার কুশিক্ষায় পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনকে কলুষিত করার দীক্ষা নিচ্ছে। আমরাও ব্যাধিমুক্ত কোথায়? একদিকে হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতির আগ্রাসন, অপরদিকে বিশ্বায়ন এবং সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির বহুমাত্রিক প্রভাব আমাদের জাতীয় জীবনকে শঙ্কার মুখে ফেলেছে। সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুক্ত হতে না পারলে আমাদেরও কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক নতুন দিগন্ত

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অন্য ভাষার মানুষও কিছু আছে। তবে এই সংখ্যা খুব কম। তাই রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বিকল্প ভাষার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ প্রতিবেশী ভারতে এটা কল্পনাও করা যায় না। কারণ, ভারতে বহু ভাষীর মানুষের বাস।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অন্য ভাষার মানুষও কিছু আছে। তবে এই সংখ্যা খুব কম। তাই রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বিকল্প ভাষার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ প্রতিবেশী ভারতে এটা কল্পনাও করা যায় না। কারণ, ভারতে বহু ভাষীর মানুষের বাস।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অন্য ভাষার মানুষও কিছু আছে। তবে এই সংখ্যা খুব কম। তাই রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বিকল্প ভাষার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ প্রতিবেশী ভারতে এটা কল্পনাও করা যায় না। কারণ, ভারতে বহু ভাষীর মানুষের বাস।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অন্য ভাষার মানুষও কিছু আছে। তবে এই সংখ্যা খুব কম। তাই রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বিকল্প ভাষার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ প্রতিবেশী ভারতে এটা কল্পনাও করা যায় না। কারণ, ভারতে বহু ভাষীর মানুষের বাস।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫