Ajker Patrika

সংস্কৃতির অব্যাহত লড়াই ও অভিযাত্রা

মফিদুল হক
আপডেট : ২৮ জুন ২০২২, ১২: ৫৩
সংস্কৃতির অব্যাহত লড়াই ও অভিযাত্রা

সংস্কৃতি ও তার পরিবর্তনময়তা নিয়ে বাঙালি ভাবুকদের মধ্যে অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন গোপাল হালদার। তাঁর ‘সংস্কৃতির রূপান্তর’ বইটি বহুল পঠিত ও আলোচিত। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন এবং বাঙালির জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সেই মোড়-ফেরার কালে কবি শামসুর রাহমানের সঙ্গে টেলিভিশনে আলাপচারিতায় মিলিত হয়েছিলেন। তাঁদের আলোচ্য ছিল ‘ভাবী বাঙালির আবির্ভাব’। এমন বিষয় নির্ধারণের মধ্য দিয়েই বুঝতে পারা যায় বিজয়ী বাংলাদেশের ভাবজগতে তখন কী বিশাল আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। স্থির প্রত্যয়ী উত্তর কেউ জোগাতে পারুক কিংবা না পারুক, জিজ্ঞাসা সেখানে ছিল মুখ্য। আজ যখন আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে অর্ধশতকের অতিক্রান্ত পথের পর্যালোচনা থেকে নিজেদের সাংস্কৃতিক অবস্থান বুঝে নিতে চাইছি, তখন ১৯৭৪ সালের সেই আলোচনাকে একটা যুগচিহ্ন হিসেবে ধরে নিতে পারি। কলকাতায় ফিরে গিয়ে ‘বাংলাদেশের এক বন্ধুর উদ্দেশে’ শীর্ষক পত্রনিবন্ধ লিখেছিলেন গোপাল হালদার। সেখানে তাঁর মুখের কথা কিছুটা গুছিয়ে লিখিতভাবে দাখিলের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। শামসুর রাহমানের প্রশ্ন ছিল, পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশ যখন একই ‘বাঙালি সংস্কৃতির’ ধারক, তখন বাংলাদেশের সংস্কৃতি বলে পৃথক কোনো সংস্কৃতি থাকবে কি, না তা মিলিয়ে যাবে বৃহত্তর সংস্কৃতির মধ্যে।

প্রতীকী ছবি৫০ বছর পর উত্তরটি এখন আমাদের জানা হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি তার নিজস্ব রূপ-রস-রং-গন্ধ নিয়ে বিকশিত হয়ে চলছে, যেমনটি পশ্চিম বাংলার ক্ষেত্রেও অন্যভাবে দৃশ্যমান। এ ক্ষেত্রে সংস্কৃতির বিবর্তনে আস্থাশীল গোপাল হালদার ভবিষ্যদ্‌দ্রষ্টার মতো কিছু কথা বলেছিলেন, যা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, ‘বঙ্গদেশ সামান্য একটা অঞ্চল নয়, প্রাকৃতিক সম্পদেও একরঙা নয়, মানবিক সম্পর্কেও একরঙা নয়। রাঢ়, বরেন্দ্র, বঙ্গ-বিধৃত এই বঙ্গভূমিও রূপে-রসে অপরূপ। শুধু রাঙামাটির রাঢ়ই বাংলা নয়, শুধু কলকাতা নিয়ে কিংবা ঢাকা নিয়েই নয় বাঙালি সম্পূর্ণ।’

এই যে বৈচিত্র্যের আবাহন, সেখানে তো নতুন আরও অনেক উপাদান যুক্ত হয়েছে, মিলনে-মিশ্রণে-সৃজনে সংস্কৃতি নানা রূপে যা প্রবাহিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সেখানে যুক্ত করবে নতুন মাত্রা—এমন প্রত্যাশা ছিল গোপাল হালদারের। বাংলাদেশের সংস্কৃতি সমগ্র বাঙালি সংস্কৃতিকেই জোগাবে নতুন পরিপুষ্টি ও প্রণোদনা। তাঁর ভাষায়, ‘বাংলাদেশের মানব-সম্পদ,—তার মাঝি-মাল্লা, তার সমুদ্রগামী সারেং, জাহাজি, তার প্রাণবন্ত চাষী—এসবের জীবনকথা ও আত্মার স্বপ্ন,—এসব বাংলাদেশের শিল্পসৃষ্টিতে দেবে সত্যিকারের প্রাণসম্পদ,—আর যে প্রাণসম্পদে আমাদের সমগ্র বাঙালি পাবে বিশিষ্ট এক ঐশ্বর্ষ, আরও বিচিত্র প্রকাশ।’

পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক ঘেরাটোপে আমরা আটক ছিলাম প্রায় ২৩ বছর। এর বিপরীতে বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণ ও সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল বাঙালির আপন সত্তানুসন্ধান এবং জাতিসত্তা ও ধর্মপরিচয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রচনা করে সম্প্রীতির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। বাঙালির সেই সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রে আমরা বিকাশের পথ তৈরির অবকাশ বিশেষ পাইনি। সাড়ে তিন বছরের মধ্যে রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রাচার থেকে চার জাতীয় মূল নীতির অপনোদন দেশকে চালিত করল ভিন্ন পথে। ধর্মের মোড়কে আবারও সামাজিক স্থিতির বিনাশ এবং দ্বিজাতিতত্ত্বের সাম্প্রদায়িক চিন্তার আধিপত্য কায়েমে চলে রাষ্ট্রীয় প্রয়াস।

বিরূপ সময়েও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতিতে এই লড়াই নানাভাবে পরিচালনা করেছে, বাঙালি সংস্কৃতির সৃজনধারায় যার নানা প্রকাশ আমরা দেখি। যদি মোটাদাগে বাংলাদেশের সংস্কৃতির পরিবর্তনময়তা বিচার করতে চাই, তবে একে আমরা নবযাত্রাই বলতে পারি। পুরোনো ধ্যানধারণা, সাম্প্রদায়িক ভেদচিন্তা, দ্বিজাতিতত্ত্বের হাতিয়ার নিয়ে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সঞ্চার নানাভাবে জাতিকে পথভ্রষ্ট করতে চাইছে। ৫০ বছরে তার প্রকাশ এবং সংঘাত ও হিংসাত্মক আক্রমণের উদাহরণ তো অজস্র। তবে এই নিরিখে পরিবর্তনময়তাও বিশেষভাবে তলিয়ে দেখার রয়েছে। স্বাধীনতার একুশ বছর পর দেশে ফিরেছিলেন দীর্ঘকালের প্রবাসী আদ্যোপান্ত বাঙালি ও বাংলার সংস্কৃতিসাধক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তাঁর স্বদেশ-অবলোকনের কথা তিনি বলেছিলেন আত্মজৈবনিক ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’ গ্রন্থে। ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে এক মাস দেশে কাটিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘সতেরো বছর বিদেশে বাস করে মনে একটা ভয় জন্মেছিল, দেশে ফিরে গিয়ে হয়তো দেখব দেশটা মোল্লা ও মাস্তানদের খপ্পরে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। আমার এই আশঙ্কা পুরোপুরি সত্য হয়নি।’ তবে সবচেয়ে বড়ভাবে তাঁকে নাড়া দিয়েছিল বাংলাদেশের সামাজিক রূপান্তর, যার কেন্দ্রে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন নারীর অবস্থান। এই উপলব্ধি মেলে ধরে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার একটা কথাই বারবার মনে হয়েছে, বাংলাদেশে একটা নীরব সামাজিক বিপ্লব খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে। আর এই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিচ্ছে গ্রামীণ সমাজ-জীবন ভেঙে পড়ায় ঘর, পর্দা, পরিবার ও সমাজ থেকে বেরিয়ে আসা হাজার হাজার গৃহবধূ ও গৃহকন্যা—এবং স্কুল ও কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে বেরিয়ে আসা মেয়েদের একটা সচেতন এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কিত ও রাগী অংশ।’

সেই অবলোকনের পর আরও দুই দশক পেরিয়ে গেলেও দেখা যায়, একই লড়াইয়ে শরিক রয়েছে বাংলাদেশ। টালমাটাল এই অভিযাত্রায় অর্জনের ক্ষেত্রগুলো অনেক সময় আশু ও চলমান সংঘাতের কারণে রয়ে যায় দৃষ্টিসীমার আড়ালে। এর বড় দিক হলো, সংস্কৃতির বিস্তার ও বৈচিত্র্য, যা বহন করে জাগরণ ও সৃষ্টিশীলতার বীজ। সংস্কৃতির শাখা-প্রশাখা ডালপালা নতুন প্রসারতা পাচ্ছে, যেখানে বাঙালির সংগ্রাম ও মুক্তির চেতনা অর্জন করছে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশের সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের রচনাভান্ডার হিসেবে পৃথক এক ঘরানা গড়ে উঠেছে, যেটা স্বাধীনতাসংগ্রামকারী খুব কম দেশেই মিলবে। এই ধারা যে নতুন প্রজন্মের মধ্যেও বহমান, তা আশাজাগানিয়া বৈকি। তেমনিভাবে পারফর্মিং আর্টসের সব শাখাতেই আমরা দেখি প্রসারতা। তবে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন, প্রসারতার তুলনায় গভীরতা তো তেমনভাবে দৃশ্যগোচর হচ্ছে না। রাষ্ট্র ও সমাজ সম্মিলিতভাবে এ প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ নিতে পারে। তবে গভীরতা নির্ভর করবে ব্যক্তির সাধনা ও সৃজনের ওপর। প্রসারতা থেকে জাগ্রত হবে সেই প্রত্যাশা পূরণের সুযোগ।

এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারের দিক থেকে ঘাটতি রয়েছে অনেক। সংস্কৃতির অবদান জিডিপি কিংবা প্রবৃদ্ধির সূচকে পরিমাপযোগ্য নয়। অথচ সংস্কৃতি সমাজে যে সম্প্রীতি ও সদ্ভাবনার বাতাবরণ তৈরি করে দেশের বিকাশ ও প্রবৃদ্ধির জন্য, তা অত্যাবশ্যক শর্ত। আজ পুরোনো শকুন নতুনভাবে আবার কামড়ে ধরতে চাইছে জাতির পতাকা। ধর্মের দোহাই দিয়ে তারা আক্রমণ করছে সংস্কৃতির বিবিধ প্রকাশ ও নিবেদন, ঘাতকের তলোয়ারের আঘাতে লুটিয়ে পড়েছে মুক্তমনা ব্যক্তি, আবহমান সংস্কৃতিচর্চার সাধক। প্রবাসী অর্থনীতিবিদ মাহফুজুর রহমান স্বদেশ-বিষয়ক তাঁর গ্রন্থের শিরোনাম করেছিলেন ‘আল্লাহ হাফেজ বনাম খোদা হাফেজ’। এই দুই ধারার লড়াই, সম্প্রীতির বিরুদ্ধে সংঘাত, ভালোবাসার বিপরীতে ঘৃণা, বৈচিত্র্যের বিপরীতে আরোপিত একরঙা সমাজ, এমন দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ টালমাটাল। সব বাধা উজিয়ে অব্যাহত থাকবে সংস্কৃতির অভিযাত্রা—এমন প্রত্যয় আমরা অর্জন করি দেশের ইতিহাস থেকে, দ্বিজাতিতত্ত্বের মূর্খতা ও সহিংসতার বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক উদার জাতিসত্তার মিলনের আদর্শে। এমন দেশের তো পরাভব নেই।

আমরা আজ নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করছি, জীবন ও সমাজ দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে; যেমন স্বদেশে তেমনি বিদেশে। বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক ধারা সংস্কৃতির ওপর নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। প্রযুক্তি সেখানে যোগ করেছে আরও ব্যাপকতা। ডিজিটালের যুগে আধুনিক সংযোগ প্রযুক্তি সংস্কৃতির উৎপাদন, পুনরুৎপাদন এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগে অভাবিত সব পরিবর্তন বয়ে এনেছে। আমরা এই পরিবর্তনে ভাসছি, অনেকটাই সুখ স্রোতে গা এলিয়ে দেওয়ার মতো। প্রযুক্তির ওপর মানুষের ও সংস্কৃতির আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারছি না। বিপুল শঙ্কা ও বিশাল সম্ভাবনার দোলাচলে আমরা রয়েছি। সেখানে অর্থময় পরিবর্তন ঘটাতে হলে চাই মানবসম্পদের বিকাশ ও অভ্যুদয়। এই মানবসম্পদ প্রকৃত অর্থে হতে হবে মানসসম্পদ। সে জন্য শিক্ষায়, জ্ঞানচর্চায় চাই সংস্কৃতির ছোঁয়া। সংস্কৃতির বাহন হবে প্রযুক্তি। এর উপাদান হতে হবে জাতীয়তা ও স্বকীয়তা, যা একই সঙ্গে মেলাবে স্থানীয়, আঞ্চলিক, স্বাদেশিকতার সঙ্গে বিশ্বময়তার। ‘বিশ্বমানব হবি যদি শাশ্বত বাঙালি হ’, ব্রতচারীর এই উচ্চারণ প্রায় শতবর্ষী হলেও আজ তা নতুন তাৎপর্য, নতুন বার্তা বহন করছে। এমন সমীকরণ তৈরি করতে পারাটা আগামীর চ্যালেঞ্জ, নতুন যুগের দাবি। এই দায় মেটাবার শক্তি বাংলাদেশ রাখে তার অতীতের মহৎ অর্জনের ধারাবাহিকতায়। যুগ-সন্ধিক্ষণে আমরা দাঁড়িয়ে আছি যুগনির্মাতা হওয়ার দায় নিয়ে। সেই ভবিষ্যৎমুখী জাতীয়তাবোধ ও আন্তর্জাতিকতা আলিঙ্গন করে বাংলাদেশ বিকশিত হবে, সৃজনমুখর হবে—এমন প্রত্যাশার সঙ্গে চাই নির্মাতার শক্তি ও সৃজনের সাধনা। আমরা তাকিয়ে আছি অনাগত এই বিকাশের দিকে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক বিকাশকে একীভূত করবে, জন্ম দেবে বাঙালি নবজাগরণের।

লেখক: ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

হাদির জানাজা ঘিরে যান চলাচল নিয়ে ডিএমপির নির্দেশনা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

হাদির জানাজা ঘিরে যান চলাচল নিয়ে ডিএমপির নির্দেশনা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

হাদির জানাজা ঘিরে যান চলাচল নিয়ে ডিএমপির নির্দেশনা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

হাদির জানাজা ঘিরে যান চলাচল নিয়ে ডিএমপির নির্দেশনা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

হাদির জানাজা ঘিরে যান চলাচল নিয়ে ডিএমপির নির্দেশনা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত