Ajker Patrika

বাংলাদেশের বিজয়ে ভারতের ভূমিকা

আবদুল মান্নান
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৫৮
বাংলাদেশের বিজয়ে ভারতের ভূমিকা

শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের এটা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এই অঞ্চলে শান্তির একমাত্র পথ হচ্ছে শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এই প্রস্তাব মানবে কেন?

এই বছর, ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পঞ্চাশ বছর বা সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৫-২৬ মার্চ, যার সমাপ্তি হয় নয় মাস পর একই বছর ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশে যুদ্ধরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রায় ৯৩ হাজার সেনাসদস্যসহ বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পড়ন্ত বিকেলে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় যৌথ বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে লিখিতভাবে আত্মসমর্পণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন একটি ঘটনা এই প্রথম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমনভাবে প্রকাশ্যে আত্মসমর্পণ করেছিল।

কেমন ছিল ওই ১৬ ডিসেম্বরের পূর্ববর্তী নয় মাস, তা বর্তমান প্রজন্মকে বোঝানো সহজ নয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালেক তাঁর গ্রন্থ ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে লিখেছেন, ২৫ মার্চ রাতে ‘পূর্ব পাকিস্তানের সেনা গভর্নর জেনারেল টিক্কা খান, সেনা কমান্ডার আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী, ঢাকা সেনানিবাসের প্রধান জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ঢাকার শেরেবাংলা নগরে নির্মাণাধীন সংসদ ভবন এলাকার বাইরে চেয়ার-টেবিল এবং হুইস্কির বোতল ও কফির ফ্লাস্ক নিয়ে বসে ছিলেন গণহত্যার শুরুটা দেখতে। ওই রাতের গণহত্যা শুরুর সাংকেতিক নামটা ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। এই অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাব। তাঁকে হুকুম দেওয়া হয়েছিল শহরের ওপর আক্রমণটা এমন হওয়া চাই যেন সকালে শেরেবাংলা নগর থেকে দূরের সদরঘাট দেখা যায়। বুঝতে হবে মাঝখানে ঢাকা শহর। তখনো ঢাকা শহরে জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা নয়। সত্তরের নির্বাচনের পর এ দেশের রাজনীতি যে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে গড়াচ্ছে, তা সারা বিশ্ব; বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত ও দেশটির সরকার আঁচ করতে পেরেছিল। কারণ যে দেশটিকে জন্মের পর থেকে নানাভাবে পাকিস্তানের সেনা-বেসামরিক আমলাতন্ত্র শাসন করতে অভ্যস্ত, তারা কেন এত সহজে দেশটির শাসনভার বাঙালি তথা শেখ মুজিবের কাছে হস্তান্তর করবে? শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার জন্য যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, সে সম্পর্কে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর সরকার বুঝতে পেরেছিল।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করলে ইন্দিরা গান্ধী ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীকে (বিএসএফ) সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকেই নিজ ভিটেমাটি ছেড়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশের মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যাওয়া শুরু করে এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে এবং মানবিক কারণে তাতে সহায়তা করে বিএসএফ এবং সীমান্তে বসবাসরত ভারতীয়রা। তখন কে মুসলমান আর কে হিন্দু, তা বিবেচ্য বিষয় ছিল না। বিবেচ্য ছিল বিপন্ন মানুষকে বাঁচাতে হবে। মানবতা সর্বাগ্রে। জুন মাস নাগাদ কয়েক লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন রাজ্যগুলোয় আশ্রয় নেয়। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন। তাজউদ্দীনকে পরামর্শ দেওয়া হয় তিনি যেন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি প্রবাসী সরকার গঠন করেন, যা আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য হবে। কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। কারণ, কারা সরকার গঠন করবে তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে কিছুটা হলেও মতদ্বৈধতা ছিল। একটি অংশ মনে করত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের নিয়ে সরকার গঠন করা হোক। অন্যদিকে কিছুসংখ্যক সেনাসদস্য চান সেনাসদস্যদের নিয়ে একটি বিপ্লবী সরকার গঠন করা হোক। বিচক্ষণ তাজউদ্দীন ঠিকই বুঝেছিলেন আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য হতে হলে সরকার গঠন করতে হবে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে। বৈধ সরকার গঠন করার ম্যান্ডেট আর কারও নেই। ১০ এপ্রিল তিস্তা নদীর উজানে বাগডোগড়া নামক স্থানে তাঁবু খাটিয়ে হারিকেন জ্বালিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। শেখ মুজিবকে করা হয় রাষ্ট্রপতি আর তাজউদ্দীন হন প্রধানমন্ত্রী। যেহেতু শেখ মুজিব পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী, সেহেতু অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় সৈয়দ নজরুল ইসলামকে। জুলাই-আগস্ট মাস নাগাদ বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় লাভ করে। ত্রিপুরা রাজ্যের স্থানীয় জনসংখ্যার চেয়ে শরণার্থীর সংখ্যা হয়ে ওঠে বেশি। ত্রিপুরা রাজার প্রাসাদেও অনেক শরণার্থীর ঠাঁই হয়। সে এক অভূতপূর্ব সময়। কলকাতার সল্ট লেকে গড়ে ওঠে বিশাল শরণার্থীশিবির। বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, ভারতের মানুষ তাঁদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের। এমনও হয়েছে তাঁরা নিজেদের অন্নও ভাগ করে খেয়েছেন। ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসক শরণার্থীশিবিরে এসেছেন চিকিৎসাসেবা দিতে। এমনও হয়েছে খোলা আকাশের নিচে কাপড় দিয়ে ঘেরাও করে তার মধ্যে বাচ্চা প্রসব করিয়েছেন এই সব চিকিৎসক।

এর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ করার জন্য গড়ে ওঠে মুক্তিবাহিনী, যার সদস্য ছিলেন বাঙালি পুলিশ, সীমান্ত রক্ষীবাহিনী ইপিআর, বাঙালি সেনাবাহিনীর সদস্য, ছাত্র, কৃষক ও সাধারণ মানুষ। পুরুষ-নারীনির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ অস্ত্র তুলে নেয় দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য। অনেক স্থানে দেখা যায়, অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতেও অস্ত্র। বেশির ভাগ অস্ত্রের জোগান এসেছিল ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী থেকে। বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারাও প্রচুর অস্ত্র নিজেরা শত্রু বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছিলেন। বাঙালি সেনাসদস্য, পুলিশ ও ইপিআর নিজেরা নিজেদের কাছে থাকা অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গঠিত হয় ভারতের নাগাল্যান্ডে। চট্টগ্রাম বন্দরে আগস্ট মাসে অপারেশন জ্যাকপট পরিচালনা করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় পলাশীতে। যুদ্ধের ফ্রন্টে যখন মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধরত, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বনেতাদের বাংলাদেশের সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করতে বিভিন্ন দেশে সফর শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেও দ্বিধা করেননি। ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের এটা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এই অঞ্চলে শান্তির একমাত্র পথ হচ্ছে শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এই প্রস্তাব মানবে কেন?

অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এটি পরিষ্কার হয়ে গেল যে পাকিস্তান কোনো অবস্থাতেই বাঙালির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। এদিকে মুক্তিবাহিনীর কাছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হওয়া শুরু হলো। ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ভারতের পশ্চিমে সে দেশের একাধিক বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করে। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। পূর্বাঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ; যে যুদ্ধে ভারতীয় আধা সামরিক ও নিয়মিত বাহিনী সহায়তা করেছে। পৃথিবীর যেসব দেশে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে অন্য একাধিক দেশ রাজনৈতিক ও আদর্শগত কারণে যুদ্ধরত দেশটিকে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, ভারতের একশ্রেণির মিডিয়া ও রাজনীতিবিদ একাত্তরের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে দেখেন আর বলেন, ভারত যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। কথাটি সত্যের অপলাপ। যুদ্ধটা ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, যা বাঙালিরাই করেছে; তাতে ভারত সহায়তা করেছে মাত্র। বাংলাদেশের মানুষ সব সময় তার জন্য ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা আর ভারতীয় সেনাবাহিনী একাত্তরে পাশাপাশি যুদ্ধ করে যে রক্ত ঝরিয়েছে, সেই রক্তের ঋণ তো কখনো শোধ হওয়ার নয়। আমি ভারতের বেশ কজন সিনিয়র সেনা অফিসারের (যেমন জেনারেল জ্যাকব) সঙ্গে বিভিন্ন সময় কথা বলেছি। তাঁরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্গে না থাকলে এই যুদ্ধ এত সহজে শেষ হতো না। একাত্তরে ভারতের সাধারণ মানুষ, সশস্ত্র বাহিনী আর সর্বোপরি সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি যে সমর্থন জুগিয়েছে, তা এ দেশের মানুষ চিরদিন মনে রাখবে।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরদিন অটুট থাকুক। সব অসত্যের অবসান হোক। জয় বাংলা।

আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত