Ajker Patrika

রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরবে কী

মোনায়েম সরকার
রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরবে কী

৫ আগস্ট দেশে যে এত বড় কাণ্ড ঘটে যাবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে শুধু নয়, দেশ ছেড়ে চলে যাবেন, এটা সত্যি আমার মতো অনেকের কাছেই ছিল অপ্রত্যাশিত, অভাবিত। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক উত্থান-পতন দেখেছি, কিন্তু এবারের গণবিদ্রোহ সত্যি ব্যতিক্রমী। কোটা সংস্কারের মতো একটি সাধারণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরকার পতনের আন্দোলন এত দ্রুত চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যেতে পারে, সেটা যাঁরা স্বাভাবিক মনে করছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই অসাধারণ মেধাসম্পন্ন মানুষ। কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক ও ছাত্রসহ পেশাজীবীদের সংগঠনের নেতৃত্ব ছাড়া কয়েকজন ছাত্রের ডাকে এমন আন্দোলন আমার জীবনে এক নতুন অভিজ্ঞতা।

বলা হচ্ছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তারা রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করে তারপর দেশে একটি নির্বাচনের আয়োজন করবে। এই সংস্কারকাজ শেষে ঠিক কত দিন পর নির্বাচন হবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। কাজটি কঠিন, তাই সময় তো দিতেই হবে। সেই সময়টা দুই বছর থেকে পাঁচ বছরও  হতে পারে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে বলে একটি সাধারণ ধারণা আমাদের দেশে চালু আছে। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলেও বিএনপি ক্ষমতায় বসতে পারেনি। বিএনপি এখন অপেক্ষায়। তবে রাষ্ট্রক্ষমতায় না বসলেও রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করা হয় যেসব মাধ্যমে, সেগুলোর দখল মোটামুটি বিএনপির সমর্থকেরা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। সরকার দলনিরপেক্ষ হলেও প্রশাসন এখন বিএনপির নিয়ন্ত্রণে—এটা অস্বীকার করা যাবে না।

সত্যের সঙ্গে বসবাস করলেও কখনো কখনো কোনো বিশেষ সত্য চোখে ধরা দেয় না আমাদের। রাজনীতি যে ক্রমাগত রাজনীতিবিদদের হাত থেকে ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে, সেটা আমরা এত দিন দেখেও না দেখার ভান করেছি।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ৫৫ শতাংশই ছিলেন আইনজীবী আর ব্যবসায়ী ছিলেন মাত্র ৪ শতাংশ। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আইনজীবীর সংখ্যা কমে গিয়ে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে যায় অনেক। এই পার্লামেন্টে আইনজীবী নেমে আসেন ২৬ এবং ব্যবসায়ী উঠে আসেন ২৪ শতাংশে। ’৯১ সালের নির্বাচনে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। এবার আইনজীবী মাত্র ১৯ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী ৫৩ শতাংশ। এরপর এটা আরও বেড়েছে। অর্থাৎ আমরা দেখছি, এ দেশের রাজনীতি সময়ের তালে তালে ক্রমেই প্রকৃত রাজনীতিবিদদের ছাড়িয়ে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের দখলে চলে যাচ্ছে। সব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বুদ্ধিজীবী শ্রেণি রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদান করে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন প্রায়ই দেখা যায়, রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা যাদের নেই, তারাই রাজনীতির নিয়ামক শক্তি হয়ে ওঠে।

এই উপমহাদেশের রাজনীতি একসময় প্রতিভাবান, বিশেষত আইন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা অলংকৃত হয়েছিল। গান্ধী, নেহরু, জিন্নাহ, আবুল কালাম আজাদ, এ কে ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু—তাঁদের প্রত্যেকেই জনকল্যাণের প্রতি নিবেদিতপ্রাণই শুধু ছিলেন না, আইনশাস্ত্র-জ্ঞান-পাণ্ডিত্যের দিক থেকেও তাঁরা ছিলেন উপমহাদেশের প্রথম সারির মানুষ। তাঁদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রতিভার শক্তি আর বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশলের কারণেই পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ব্রিটিশ জাতি এই উপমহাদেশ থেকে তাদের সাম্রাজ্য গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। ভারতবিভাগের পর ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের রাজনীতিই নিয়ন্ত্রণ করছিলেন বিভাগ-পূর্ব রাজনৈতিক নেতারা। কিন্তু ভারতে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও পাকিস্তানে মাত্র এক দশকের মাথায় রাজনীতি উল্টোরথে যাত্রা শুরু করে। রাজনীতিবিদ সম্প্রদায়ের গায়ে কলঙ্কের ছাপ বসানোর চেষ্টা চলে একদিকে, অন্যদিকে একপর্যায়ে আইয়ুব খানের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী দখল করে নেয় পাকিস্তানের শাসনভার। উপমহাদেশের রাজনীতিতে অরাজনৈতিক অশুভ শক্তির সেটাই প্রথম অনুপ্রবেশ। নেহরুর নেতৃত্বে ভারত যতটা এগিয়ে গেল, আইয়ুবের নেতৃত্বে পাকিস্তান পিছিয়ে পড়ল ততটাই এবং সবচেয়ে পিছিয়ে থাকল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, যা আজকের বাংলাদেশ।

আইয়ুবী সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলায় গড়ে উঠেছিল সুস্থ ধারার রাজনীতি এবং চেষ্টা হয়েছিল সামরিক আমলাতন্ত্রনির্ভর রাজনীতিকে সত্যিকারের রাজনীতি দ্বারা প্রতিস্থাপনের। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ তখন পেশাদার রাজনীতিবিদ এবং পণ্ডিতজন, বিশেষত আইনজীবী সম্প্রদায় দ্বারা সমৃদ্ধ। আওয়ামী লীগ প্রণীত ছয় দফা ছিল পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনকে কেন্দ্র করে জনকল্যাণের নিমিত্তে এক উচ্চমাপের রাজনীতির নির্যাস। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক শক্তির উৎস ছিল তাজউদ্দীন আহমদের মতো নিরেট রাজনীতিবিদেরা আর দার্শনিক ও অর্থনৈতিক চিন্তার জগৎ সমৃদ্ধ করেছিলেন প্রফেসর রাজ্জাক ও রেহমান সোবহানদের মতো গুণী ব্যক্তিরা। কতই না কার্যকর আর মনোমুগ্ধকর ছিল রাজনীতির সেই চেহারা। মেইনস্ট্রিমে বঙ্গবন্ধু। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী-ফজলুল হক নেই তো কী হয়েছে, আছেন ভাসানী-মণি সিংহ-মোজাফফর আহমদের মতো নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক রাজনীতিক। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় দেশটা স্বাধীনও হয়ে গেল।

স্বাধীনতার পর ইতিহাস থমকে দাঁড়াল ’৭৫-এ। পরিবর্তন করল তার গতিপথ। আবারও সামরিক শাসন। ক্ষমতা নিয়েই জিয়াউর রহমান দল গঠন করতে চাইলেন। জিয়া হাঁটলেন এক অশুভ রাস্তায়। প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হলো—মানি ইজ নো প্রবলেম। আরও বললেন তিনি—আই উইল মেক পলিটিকস ডিফিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ান। শুরু হয়ে গেল রাজনীতিতে অর্থের খেলা। টাকা ছিটিয়ে, ভয় দেখিয়ে ‘রাজনীতিবিদ’ জোগাড় করতে লাগলেন তিনি। বিভিন্ন পেশা, বিশেষত ব্যবসার জগৎ থেকে লোক জড়ো করে তিনি তাদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন এই বলে যে, তাঁরা সবাই রাজনীতিবিদ। ভিন্ন দল থেকেও স্খলিত অনেককে উচ্চমূল্যে কিনে নিলেন তিনি। 
এভাবেই গড়ে উঠল রাজনীতি ও ব্যবসার এক রাষ্ট্রবিনাশী নেক্সাস। জিয়ার মৃত্যুর পর যখন তাঁর সামরিক শাসন এরশাদের সামরিক শাসন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হলো, সমাজ-রাষ্ট্র ও রাজনীতির চেহারার কোনো ইতরবিশেষ ঘটল না। বরং রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন আরও এক বিশেষ মাত্রা পেল। জিয়া তাঁর রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয়ের জন্য স্বাধীনতাবিরোধীদেরও তার মঞ্চে উঠিয়ে রাজনীতিতে তাদের পুনর্বাসন করেছিলেন, খুনের দায়ে দণ্ডিতদের মুক্তি দিয়ে তথাকথিত জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে যোগ দেওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। এরশাদের আমলেও দেখলাম আমরা একই ধরনের ঘটনা এবং সংখ্যায় তিনি এগিয়ে গেলেন। জিয়া তাঁর রাজনীতির স্বার্থে সাত খুনের মামলায় দণ্ডিত শফিউল আলম প্রধানের প্রতি যে অনুকম্পা দেখিয়েছিলেন, ময়েজুদ্দিন হত্যা মামলায় দণ্ডিত আযম খানের প্রতি এরশাদ দেখালেন একই রকম স্নেহাশীর্বাদ।

ইতিমধ্যে অবশ্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন, জিয়াপত্নী খালেদা জিয়া ধরেছেন বিএনপির হাল। তাঁদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং বাম সংগঠনগুলো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু সমাজের অভ্যন্তরে নৈতিক অবক্ষয়ের যে ক্ষতিটা হয়ে গেছে, সেটা সারাবে কে? নিছক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তো তা সম্ভব নয়। সামাজিক শক্তির ভারসাম্য নিজের পক্ষে থাকলে স্বৈরাচার হটানো সম্ভব; কিন্তু দেশপ্রেমের বিপরীতে আত্মপ্রেমের যে রোগ বাসা বেঁধেছে মনে, নৈতিক শক্তির যে অধঃপতন ঘটেছে, তা তো আর মাঠে-ময়দানের এ ধরনের আন্দোলনে সারানো সম্ভব নয়। রাজনৈতিক নেতারা সেদিকে নজর দিলেন 
না। তাঁরা নিমগ্ন থাকলেন কেবলই স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনে। একপর্যায়ে এরশাদ হটলেনও, কিন্তু রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের ধারাটি হটল না। পরবর্তীকালে যেসব সরকার এসেছে, তারাও একই পথে হাঁটল।

রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব নির্বাচনী ব্যয় থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। বড় দুই দলে নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে অর্থের যে খেলা হয়, তা এখন সর্বজনবিদিত ঘটনা। এমন বহু অভিযোগ রয়েছে, কোনো নির্বাচনী এলাকায় দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে বাদ দিয়ে ধনাঢ্য কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অর্থের লেনদেন ছাড়া এসব ঘটনার অন্য কোনো ব্যাখ্যা নেই। বিলাসী জীবনের জন্য রাজনীতিবিদদের টাকা চাই, আবার ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক ক্ষমতা চাই। একে অন্যের পরিপূরক হয়ে কাজ করছেন ভালোই।

অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক আমলারা যখন অবসর নিয়েই রাজনীতিতে নামেন কিংবা দলের টিকিট পেয়ে নির্বাচন করেন, তখন দুর্বল হলেও তার একটা যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁরা প্রশাসনিক একটা সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজ করে এসেছেন, যেটার সঙ্গে রাজনীতির কিছু সংশ্রবও রয়েছে। এদের কারও কারও মধ্যে সংগঠন পরিচালনার নেতৃত্বের গুণাবলিও রয়েছে। কিন্তু স্রেফ টাকার জোরে যাঁরা রাজনীতি করতে আসেন, তাঁদের প্রসঙ্গে কী বলা যায়? পার্লামেন্টকে ব্যবসায়ীরাই যদি নিয়ন্ত্রণ করেন, তাহলে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো যে সাধারণের অনুকূলে না গিয়ে প্রধানত তাঁদের অনুকূলেই যাবে, তাতে আর সন্দেহ কী!

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক সংস্কার করার পর নিশ্চয়ই নির্বাচনের কথা ভাববে। যে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে, তারা যেন অতীত অভিজ্ঞতা মনে রেখে জনগণের জন্য রাজনীতিতে মনোনিবেশ করে, সেটাই হবে সাধারণ মানুষের মূল চাওয়া। মানুষের এই চাওয়া পূরণ না হলে ফিকে হয়ে যাবে বিজয়ের আনন্দ।

লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক; চেয়ারম্যান, বিএফডিআর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত