সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

দেশজুড়েই সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার পড়বে। কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে পাঠাগারগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। দেশে অনেক পাঠাগার রয়েছে, সেগুলো পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব, সেই সঙ্গে নতুন নতুন পাঠাগার গড়ে তোলা মোটেই অসম্ভব নয়। পাঠাগার যে কেবল বই পড়ার এবং বইয়ের আদান-প্রদানের কেন্দ্র হবে তা নয়, হবে নানা বিষয়ে আলোচনার প্রাণবন্ত একটি পরিসর। সেখানে বক্তৃতা হবে, চলবে বিতর্ক। আয়োজন থাকবে নাট্যাভিনয়ের। পুরোনো নাটকের পাশাপাশি নতুন নাটকও লেখা হবে। গানের আয়োজন থাকবে; বিশেষ করে সমবেত কণ্ঠে গানের। প্রদর্শনী, প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা—কোনো কিছুই বাদ যাবে না। পাশাপাশি গড়ে তোলা হবে দেশব্যাপী একটি কিশোর আন্দোলন। পাঠাগারের আশপাশেই ছেলেমেয়েরা সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুশীলনে অংশ নেবে। এ কাজের মধ্য দিয়ে তরুণেরা সৃষ্টিশীল, সামাজিক ও দেশপ্রেমিক হয়ে উঠবে। তারা শরীরচর্চাও করবে। তাদের অবকাশ ও অবসর হয়ে উঠবে আনন্দমুখর। কেটে যাবে বিষণ্নতা। বিপন্ন মানুষকে সাহায্য করতে তারা অগ্রণী হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। এলাকার পথঘাট, জলাশয়, বিদ্যালয়—এসবের উন্নয়নে তারা হাত লাগাবে।
একাত্তরে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিহীন অবস্থায় এবং যুদ্ধের পরে বিজয়কে যে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি, সেটাও মূলত ওই প্রস্তুতির অভাব ছিল বলেই। সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক—ইতিহাস ও সাহিত্যের চর্চা। ইতিহাসের জ্ঞান না থাকাটা তো স্মৃতিভ্রংশ হওয়ারই সমান। আমাদের ইতিহাসে একদিকে রয়েছে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের গৌরবজনক ঘটনা, অন্যদিকে আছে অন্যায় ও জুলুমের মর্মন্তুদ কাহিনিও। এরা একে অপরের পরিপূরক। উভয়ের জ্ঞানই অত্যাবশ্যক। আমরা যে কেবল নিজেদের ইতিহাসই পড়ব তা নয়, পড়তে হবে বিশ্বের ইতিহাসও। সভ্যতার উত্থান-পতনের কারণ জানা চাই, জানতে হবে জ্ঞানবিজ্ঞানের ইতিহাস। আর সাহিত্যের চর্চা একই সঙ্গে বৃদ্ধি করবে কল্পনার শক্তি ও চিন্তার দক্ষতা; সমৃদ্ধ করবে চিন্তার ক্ষমতাকেও। সাহিত্যচর্চা অবশ্যই বাড়াবে নিজেকে ব্যক্ত করার সক্ষমতা এবং ঘটাবে রুচির উৎকর্ষ।
বলা বাহুল্য, কোনো পাঠই একরৈখিক হবে না; হবে দ্বান্দ্বিক। থাকবে প্রশ্ন, জেগে উঠবে জিজ্ঞাসা এবং সংস্কৃতির এই অনুশীলন মোটেই আদর্শ-নিরপেক্ষ হবে না। আদর্শ একটাই—প্রগতিশীল সমাজবিপ্লবকে সম্ভব করা। নতুন সমাজ গড়ে তোলা এবং তারই প্রয়োজনে ধর্মনিরপেক্ষতার বোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। মনে রাখা চাই, ধর্মনিরপেক্ষতার উপাদান দুটি—একটি দার্শনিক, সেটিকে বলা যায় ইহজাগতিকতা। অপরটি রাজনৈতিক, যার মূল কথাটা হলো রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের বিযুক্তি। আওয়াজটা আমাদের সুপরিচিত: ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’। ধর্ম থাকবে ধর্মের জায়গায়, রাষ্ট্র রাষ্ট্রের।
নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হিংস্রতার ঘটনার কথা আবার মনে পড়ছে। সাংস্কৃতিকভাবে নড়াইল এলাকাটি সুখ্যাত। নড়াইলে তেভাগা আন্দোলন হয়েছে। ১৯৬৮ সালে সেখানে মওলানা ভাসানীর ডাকা হাট-হরতাল পালিত হয়েছে। আর নড়াইলের যে লোহাগড়া এলাকায় হিন্দুসম্প্রদায়ের ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন ঘটল, মুক্তিযুদ্ধে সে জায়গাটিতে মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্মরণীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন নূর মোহাম্মদ মিঞা; একাত্তরের মধ্য মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির এক আলোচনা সভায় দাঁড়িয়ে তিনি উচ্চকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘এসব কথাবার্তায় কোনো কাজ হবে না, যুদ্ধ করতে হবে, আমি যুদ্ধে চললাম।’ বলে বেরিয়ে সত্যি সত্যি চলে গিয়েছিলেন তাঁর গ্রামে, ওই লোহাগড়ায়। মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার কাজে তাঁর ভূমিকা ছিল নেতৃস্থানীয় এবং স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও সুদৃঢ়। যুদ্ধ শেষে তিনি তাঁর ওই গ্রামে মনোযোগ দিয়েছিলেন একটি কলেজ প্রতিষ্ঠায়। কলেজের তরুণ অধ্যক্ষকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন অতিরিক্ত শিক্ষা লাভের জন্য। ওই কলেজের পাঠাগারের জন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে নিয়ে যেতেন, প্রতিবার গ্রামে যাওয়ার সময়ে। আজ তিনি নেই; থাকলে সাম্প্রদায়িক হিংস্রতার খবর শুনলে অত্যন্ত বিষাদগ্রস্ত হতেন নিশ্চয়ই এবং আলোচনা করে আমরা হয়তো এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছাতাম যে জাতীয়তাবাদী সংগ্রামটা শেষ কথা নয়, তাকে নিয়ে যাওয়া দরকার সমাজতন্ত্রের অভিমুখে। সেটা না করতে পারলে পুঁজিবাদের দানব আমাদের সব অর্জনকে তছনছ করে দেবে; এখন যেমন দিচ্ছে।
স্বর্গের মতো অগ্নিও নানা প্রকারের হয়ে থাকে। সব আগুনই ভয়ংকর, যদি সে পোড়ায়। ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে দাবদাহ চলছে। আতঙ্কিত হচ্ছে মানুষ, গৃহহারা হয়েছে অনেকে, মৃত্যুও ঘটেছে। ঘটনাটা প্রাকৃতিক, কিন্তু কারণটা মানসিক। মানুষই দায়ী। উন্নয়নের নাম করে মানুষ প্রকৃতিকে উত্ত্যক্ত করেছে। প্রকৃতিরও প্রাণ আছে, সীমা আছে তার সহ্য ক্ষমতার; প্রকৃতি প্রতিশোধ না নিক, প্রতিক্রিয়া তো জানাবে। সেটাই ঘটছে। শীতের দেশের মানুষেরা এতকাল গরমের দেশের ওপর যে আধিপত্য করে এসেছিল, এখন তাতে ফাটল ধরেছে; শীত-গ্রীষ্ম এখন সমান হয়ে যাচ্ছে, বিপদে পড়লে যা হয়ে থাকে। কিন্তু শ্বেত আধিপত্যবাদীরা কি থামাবে তাদের কাজ? তাকাবে কি প্রকৃতির দিকে? শুনবে কি তারা অশনিসংকেত? এমনিতে শুনলেও শুনবে না, তাদের শোনাতে হবে। দায়িত্বটা বিবেকবান ও বুদ্ধিমান মানুষদের।
শীতের দেশ গ্রেট ব্রিটেনের কথা আলোচনায় এসেছে। শেষ করা যাক তার কথা দিয়েই। গ্রেট ব্রিটেনের সমাজে এখন বড় রকমের একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সেটাকে বলা যায় সাংস্কৃতিক। কনজারভেটিভ পার্টি হচ্ছে ঘোষিতরূপেই রক্ষণশীলদের দল, তাদের ভেতর বর্ণবাদ থাকবে—এটা খুবই প্রত্যাশিত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ওই দলের সংস্কৃতিতে একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।
সম্প্রতি ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী পদে দলের ভেতর থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন যে দুজন, তাঁদের একজন শুধু অ-শ্বেতাঙ্গই নন, একেবারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। কট্টর রক্ষণশীল অন্য প্রার্থী, যিনি একজন নারী, তিনি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। যে ইংরেজরা ভারত জয় করেছিল এবং শাসন ছাড়ার পরেও যারা মনের জগৎ থেকে আধিপত্য গুটিয়ে নেয়নি, সেই ইংরেজদের দেশে গিয়ে একজন ভারতীয় কর্তৃত্ব করবেন, এ কেমন কথা? নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী রক্ষণশীলতার খাঁটি প্রতিমূর্তি হিসেবে অভিহিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের মতো হবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু ওই যে জন্মসূত্রে ভারতীয় ভদ্রলোক—ঋষি সুনাক নাম, তিনি যে এতটা এগোতে পারলেন তার কারণ কী? অন্য কারণ আছে, তবে যে কারণটা না থাকলে ঘটনাটি ঘটা একেবারেই অসম্ভব ছিল, সেটি হলো তাঁর রক্ষণশীলতা। গায়ের রং যা-ই হোক মন ও মানসিকতায় তিনিও কনজারভেটিভই; লিবারেল নন, লেবার তো ননই। ফেসবুকে তিনি নাকি স্বীকার করেছেন যে শ্রমিকশ্রেণির কোনো মানুষের সঙ্গে তাঁর কোনো বন্ধুত্ব নেই। বোঝা গেল ইনি খাঁটি বস্তু এবং বর্ণ সত্য বটে, কিন্তু শ্রেণি সত্য আরও অধিক।
পুঁজিবাদ নিজেকে রক্ষা করার জন্য ছাড় দিচ্ছে। ঋষি সুনাককে প্রধানমন্ত্রী হতে না দিক, ওই পদের কাছাকাছি তো গুটিগুটি পৌঁছাতে দিয়েছে, সেটাই-বা কম কিসে? কম নয়, তবে বেশি বলে যেন উৎফুল্ল না হই। কারণ রক্ষণশীল কনজারভেটিভ দলের বাইরের চেহারাটা যা-ই হোক, ভেতরের রংটা অবিকল আগের মতোই। আর লিবারেল দল? তারা তো পুঁজিবাদকেই রক্ষা করতে চায়, নানা ধরনের উদারতা প্রদর্শন করে। এমনকি লেবার পার্টিও এখন আর শ্রমিকশ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী রাজনৈতিক দল নয়। তাদের নেতৃত্বও উদারতাবাদী হয়ে পড়েছে।
সব মিলিয়ে বার্তা যা, তা হলো পুঁজিবাদ এখন বিপদে আছে, তাই ছাড় দিচ্ছে। তবে মতাদর্শিকভাবে সে তার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়নি; বরং নিজের আদর্শের বিষ বিরোধীদের ভেতর সংক্রমিত করছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে শ্রমিকদের পুঁজিবাদী করে তুলছে এবং তাদের দলগত যে সংগঠন, তার নেতাদেরও নিজের আদর্শে দীক্ষিত করার তালে আছে। মরণকামড়!
সংস্কৃতি দুষ্ট হয়ে পড়েছে; সাংস্কৃতিক লড়াইটা তাই বিশ্বব্যাপী এখন অত্যন্ত জরুরি, সমাজবিপ্লবের লক্ষ্যে এবং সমাজবিপ্লবের যে সংগ্রাম, সেটি একই সঙ্গে দেশি ও আন্তর্জাতিক। এই সংগ্রামে পরাজয়ের কোনো স্থান নেই। পরাজয় মানেই মৃত্যু।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দেশজুড়েই সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার পড়বে। কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে পাঠাগারগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। দেশে অনেক পাঠাগার রয়েছে, সেগুলো পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব, সেই সঙ্গে নতুন নতুন পাঠাগার গড়ে তোলা মোটেই অসম্ভব নয়। পাঠাগার যে কেবল বই পড়ার এবং বইয়ের আদান-প্রদানের কেন্দ্র হবে তা নয়, হবে নানা বিষয়ে আলোচনার প্রাণবন্ত একটি পরিসর। সেখানে বক্তৃতা হবে, চলবে বিতর্ক। আয়োজন থাকবে নাট্যাভিনয়ের। পুরোনো নাটকের পাশাপাশি নতুন নাটকও লেখা হবে। গানের আয়োজন থাকবে; বিশেষ করে সমবেত কণ্ঠে গানের। প্রদর্শনী, প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা—কোনো কিছুই বাদ যাবে না। পাশাপাশি গড়ে তোলা হবে দেশব্যাপী একটি কিশোর আন্দোলন। পাঠাগারের আশপাশেই ছেলেমেয়েরা সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুশীলনে অংশ নেবে। এ কাজের মধ্য দিয়ে তরুণেরা সৃষ্টিশীল, সামাজিক ও দেশপ্রেমিক হয়ে উঠবে। তারা শরীরচর্চাও করবে। তাদের অবকাশ ও অবসর হয়ে উঠবে আনন্দমুখর। কেটে যাবে বিষণ্নতা। বিপন্ন মানুষকে সাহায্য করতে তারা অগ্রণী হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। এলাকার পথঘাট, জলাশয়, বিদ্যালয়—এসবের উন্নয়নে তারা হাত লাগাবে।
একাত্তরে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিহীন অবস্থায় এবং যুদ্ধের পরে বিজয়কে যে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি, সেটাও মূলত ওই প্রস্তুতির অভাব ছিল বলেই। সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক—ইতিহাস ও সাহিত্যের চর্চা। ইতিহাসের জ্ঞান না থাকাটা তো স্মৃতিভ্রংশ হওয়ারই সমান। আমাদের ইতিহাসে একদিকে রয়েছে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের গৌরবজনক ঘটনা, অন্যদিকে আছে অন্যায় ও জুলুমের মর্মন্তুদ কাহিনিও। এরা একে অপরের পরিপূরক। উভয়ের জ্ঞানই অত্যাবশ্যক। আমরা যে কেবল নিজেদের ইতিহাসই পড়ব তা নয়, পড়তে হবে বিশ্বের ইতিহাসও। সভ্যতার উত্থান-পতনের কারণ জানা চাই, জানতে হবে জ্ঞানবিজ্ঞানের ইতিহাস। আর সাহিত্যের চর্চা একই সঙ্গে বৃদ্ধি করবে কল্পনার শক্তি ও চিন্তার দক্ষতা; সমৃদ্ধ করবে চিন্তার ক্ষমতাকেও। সাহিত্যচর্চা অবশ্যই বাড়াবে নিজেকে ব্যক্ত করার সক্ষমতা এবং ঘটাবে রুচির উৎকর্ষ।
বলা বাহুল্য, কোনো পাঠই একরৈখিক হবে না; হবে দ্বান্দ্বিক। থাকবে প্রশ্ন, জেগে উঠবে জিজ্ঞাসা এবং সংস্কৃতির এই অনুশীলন মোটেই আদর্শ-নিরপেক্ষ হবে না। আদর্শ একটাই—প্রগতিশীল সমাজবিপ্লবকে সম্ভব করা। নতুন সমাজ গড়ে তোলা এবং তারই প্রয়োজনে ধর্মনিরপেক্ষতার বোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। মনে রাখা চাই, ধর্মনিরপেক্ষতার উপাদান দুটি—একটি দার্শনিক, সেটিকে বলা যায় ইহজাগতিকতা। অপরটি রাজনৈতিক, যার মূল কথাটা হলো রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের বিযুক্তি। আওয়াজটা আমাদের সুপরিচিত: ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’। ধর্ম থাকবে ধর্মের জায়গায়, রাষ্ট্র রাষ্ট্রের।
নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হিংস্রতার ঘটনার কথা আবার মনে পড়ছে। সাংস্কৃতিকভাবে নড়াইল এলাকাটি সুখ্যাত। নড়াইলে তেভাগা আন্দোলন হয়েছে। ১৯৬৮ সালে সেখানে মওলানা ভাসানীর ডাকা হাট-হরতাল পালিত হয়েছে। আর নড়াইলের যে লোহাগড়া এলাকায় হিন্দুসম্প্রদায়ের ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন ঘটল, মুক্তিযুদ্ধে সে জায়গাটিতে মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্মরণীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন নূর মোহাম্মদ মিঞা; একাত্তরের মধ্য মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির এক আলোচনা সভায় দাঁড়িয়ে তিনি উচ্চকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘এসব কথাবার্তায় কোনো কাজ হবে না, যুদ্ধ করতে হবে, আমি যুদ্ধে চললাম।’ বলে বেরিয়ে সত্যি সত্যি চলে গিয়েছিলেন তাঁর গ্রামে, ওই লোহাগড়ায়। মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার কাজে তাঁর ভূমিকা ছিল নেতৃস্থানীয় এবং স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও সুদৃঢ়। যুদ্ধ শেষে তিনি তাঁর ওই গ্রামে মনোযোগ দিয়েছিলেন একটি কলেজ প্রতিষ্ঠায়। কলেজের তরুণ অধ্যক্ষকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন অতিরিক্ত শিক্ষা লাভের জন্য। ওই কলেজের পাঠাগারের জন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে নিয়ে যেতেন, প্রতিবার গ্রামে যাওয়ার সময়ে। আজ তিনি নেই; থাকলে সাম্প্রদায়িক হিংস্রতার খবর শুনলে অত্যন্ত বিষাদগ্রস্ত হতেন নিশ্চয়ই এবং আলোচনা করে আমরা হয়তো এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছাতাম যে জাতীয়তাবাদী সংগ্রামটা শেষ কথা নয়, তাকে নিয়ে যাওয়া দরকার সমাজতন্ত্রের অভিমুখে। সেটা না করতে পারলে পুঁজিবাদের দানব আমাদের সব অর্জনকে তছনছ করে দেবে; এখন যেমন দিচ্ছে।
স্বর্গের মতো অগ্নিও নানা প্রকারের হয়ে থাকে। সব আগুনই ভয়ংকর, যদি সে পোড়ায়। ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে দাবদাহ চলছে। আতঙ্কিত হচ্ছে মানুষ, গৃহহারা হয়েছে অনেকে, মৃত্যুও ঘটেছে। ঘটনাটা প্রাকৃতিক, কিন্তু কারণটা মানসিক। মানুষই দায়ী। উন্নয়নের নাম করে মানুষ প্রকৃতিকে উত্ত্যক্ত করেছে। প্রকৃতিরও প্রাণ আছে, সীমা আছে তার সহ্য ক্ষমতার; প্রকৃতি প্রতিশোধ না নিক, প্রতিক্রিয়া তো জানাবে। সেটাই ঘটছে। শীতের দেশের মানুষেরা এতকাল গরমের দেশের ওপর যে আধিপত্য করে এসেছিল, এখন তাতে ফাটল ধরেছে; শীত-গ্রীষ্ম এখন সমান হয়ে যাচ্ছে, বিপদে পড়লে যা হয়ে থাকে। কিন্তু শ্বেত আধিপত্যবাদীরা কি থামাবে তাদের কাজ? তাকাবে কি প্রকৃতির দিকে? শুনবে কি তারা অশনিসংকেত? এমনিতে শুনলেও শুনবে না, তাদের শোনাতে হবে। দায়িত্বটা বিবেকবান ও বুদ্ধিমান মানুষদের।
শীতের দেশ গ্রেট ব্রিটেনের কথা আলোচনায় এসেছে। শেষ করা যাক তার কথা দিয়েই। গ্রেট ব্রিটেনের সমাজে এখন বড় রকমের একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সেটাকে বলা যায় সাংস্কৃতিক। কনজারভেটিভ পার্টি হচ্ছে ঘোষিতরূপেই রক্ষণশীলদের দল, তাদের ভেতর বর্ণবাদ থাকবে—এটা খুবই প্রত্যাশিত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ওই দলের সংস্কৃতিতে একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।
সম্প্রতি ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী পদে দলের ভেতর থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন যে দুজন, তাঁদের একজন শুধু অ-শ্বেতাঙ্গই নন, একেবারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। কট্টর রক্ষণশীল অন্য প্রার্থী, যিনি একজন নারী, তিনি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। যে ইংরেজরা ভারত জয় করেছিল এবং শাসন ছাড়ার পরেও যারা মনের জগৎ থেকে আধিপত্য গুটিয়ে নেয়নি, সেই ইংরেজদের দেশে গিয়ে একজন ভারতীয় কর্তৃত্ব করবেন, এ কেমন কথা? নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী রক্ষণশীলতার খাঁটি প্রতিমূর্তি হিসেবে অভিহিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের মতো হবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু ওই যে জন্মসূত্রে ভারতীয় ভদ্রলোক—ঋষি সুনাক নাম, তিনি যে এতটা এগোতে পারলেন তার কারণ কী? অন্য কারণ আছে, তবে যে কারণটা না থাকলে ঘটনাটি ঘটা একেবারেই অসম্ভব ছিল, সেটি হলো তাঁর রক্ষণশীলতা। গায়ের রং যা-ই হোক মন ও মানসিকতায় তিনিও কনজারভেটিভই; লিবারেল নন, লেবার তো ননই। ফেসবুকে তিনি নাকি স্বীকার করেছেন যে শ্রমিকশ্রেণির কোনো মানুষের সঙ্গে তাঁর কোনো বন্ধুত্ব নেই। বোঝা গেল ইনি খাঁটি বস্তু এবং বর্ণ সত্য বটে, কিন্তু শ্রেণি সত্য আরও অধিক।
পুঁজিবাদ নিজেকে রক্ষা করার জন্য ছাড় দিচ্ছে। ঋষি সুনাককে প্রধানমন্ত্রী হতে না দিক, ওই পদের কাছাকাছি তো গুটিগুটি পৌঁছাতে দিয়েছে, সেটাই-বা কম কিসে? কম নয়, তবে বেশি বলে যেন উৎফুল্ল না হই। কারণ রক্ষণশীল কনজারভেটিভ দলের বাইরের চেহারাটা যা-ই হোক, ভেতরের রংটা অবিকল আগের মতোই। আর লিবারেল দল? তারা তো পুঁজিবাদকেই রক্ষা করতে চায়, নানা ধরনের উদারতা প্রদর্শন করে। এমনকি লেবার পার্টিও এখন আর শ্রমিকশ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী রাজনৈতিক দল নয়। তাদের নেতৃত্বও উদারতাবাদী হয়ে পড়েছে।
সব মিলিয়ে বার্তা যা, তা হলো পুঁজিবাদ এখন বিপদে আছে, তাই ছাড় দিচ্ছে। তবে মতাদর্শিকভাবে সে তার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়নি; বরং নিজের আদর্শের বিষ বিরোধীদের ভেতর সংক্রমিত করছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে শ্রমিকদের পুঁজিবাদী করে তুলছে এবং তাদের দলগত যে সংগঠন, তার নেতাদেরও নিজের আদর্শে দীক্ষিত করার তালে আছে। মরণকামড়!
সংস্কৃতি দুষ্ট হয়ে পড়েছে; সাংস্কৃতিক লড়াইটা তাই বিশ্বব্যাপী এখন অত্যন্ত জরুরি, সমাজবিপ্লবের লক্ষ্যে এবং সমাজবিপ্লবের যে সংগ্রাম, সেটি একই সঙ্গে দেশি ও আন্তর্জাতিক। এই সংগ্রামে পরাজয়ের কোনো স্থান নেই। পরাজয় মানেই মৃত্যু।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

দেশজুড়েই সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার পড়বে। কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে পাঠাগারগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। দেশে অনেক পাঠাগার রয়েছে, সেগুলো পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব, সেই সঙ্গে নতুন নতুন পাঠাগার গড়ে তোলা মোটেই অসম্ভব নয়। পাঠাগার যে কেবল বই পড়ার এবং বইয়ের আদান-প্রদানের কেন্দ্র হবে তা নয়, হবে নানা বিষয়ে আলোচনার প্রাণবন্ত একটি পরিসর। সেখানে বক্তৃতা হবে, চলবে বিতর্ক। আয়োজন থাকবে নাট্যাভিনয়ের। পুরোনো নাটকের পাশাপাশি নতুন নাটকও লেখা হবে। গানের আয়োজন থাকবে; বিশেষ করে সমবেত কণ্ঠে গানের। প্রদর্শনী, প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা—কোনো কিছুই বাদ যাবে না। পাশাপাশি গড়ে তোলা হবে দেশব্যাপী একটি কিশোর আন্দোলন। পাঠাগারের আশপাশেই ছেলেমেয়েরা সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুশীলনে অংশ নেবে। এ কাজের মধ্য দিয়ে তরুণেরা সৃষ্টিশীল, সামাজিক ও দেশপ্রেমিক হয়ে উঠবে। তারা শরীরচর্চাও করবে। তাদের অবকাশ ও অবসর হয়ে উঠবে আনন্দমুখর। কেটে যাবে বিষণ্নতা। বিপন্ন মানুষকে সাহায্য করতে তারা অগ্রণী হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। এলাকার পথঘাট, জলাশয়, বিদ্যালয়—এসবের উন্নয়নে তারা হাত লাগাবে।
একাত্তরে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিহীন অবস্থায় এবং যুদ্ধের পরে বিজয়কে যে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি, সেটাও মূলত ওই প্রস্তুতির অভাব ছিল বলেই। সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক—ইতিহাস ও সাহিত্যের চর্চা। ইতিহাসের জ্ঞান না থাকাটা তো স্মৃতিভ্রংশ হওয়ারই সমান। আমাদের ইতিহাসে একদিকে রয়েছে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের গৌরবজনক ঘটনা, অন্যদিকে আছে অন্যায় ও জুলুমের মর্মন্তুদ কাহিনিও। এরা একে অপরের পরিপূরক। উভয়ের জ্ঞানই অত্যাবশ্যক। আমরা যে কেবল নিজেদের ইতিহাসই পড়ব তা নয়, পড়তে হবে বিশ্বের ইতিহাসও। সভ্যতার উত্থান-পতনের কারণ জানা চাই, জানতে হবে জ্ঞানবিজ্ঞানের ইতিহাস। আর সাহিত্যের চর্চা একই সঙ্গে বৃদ্ধি করবে কল্পনার শক্তি ও চিন্তার দক্ষতা; সমৃদ্ধ করবে চিন্তার ক্ষমতাকেও। সাহিত্যচর্চা অবশ্যই বাড়াবে নিজেকে ব্যক্ত করার সক্ষমতা এবং ঘটাবে রুচির উৎকর্ষ।
বলা বাহুল্য, কোনো পাঠই একরৈখিক হবে না; হবে দ্বান্দ্বিক। থাকবে প্রশ্ন, জেগে উঠবে জিজ্ঞাসা এবং সংস্কৃতির এই অনুশীলন মোটেই আদর্শ-নিরপেক্ষ হবে না। আদর্শ একটাই—প্রগতিশীল সমাজবিপ্লবকে সম্ভব করা। নতুন সমাজ গড়ে তোলা এবং তারই প্রয়োজনে ধর্মনিরপেক্ষতার বোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। মনে রাখা চাই, ধর্মনিরপেক্ষতার উপাদান দুটি—একটি দার্শনিক, সেটিকে বলা যায় ইহজাগতিকতা। অপরটি রাজনৈতিক, যার মূল কথাটা হলো রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের বিযুক্তি। আওয়াজটা আমাদের সুপরিচিত: ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’। ধর্ম থাকবে ধর্মের জায়গায়, রাষ্ট্র রাষ্ট্রের।
নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হিংস্রতার ঘটনার কথা আবার মনে পড়ছে। সাংস্কৃতিকভাবে নড়াইল এলাকাটি সুখ্যাত। নড়াইলে তেভাগা আন্দোলন হয়েছে। ১৯৬৮ সালে সেখানে মওলানা ভাসানীর ডাকা হাট-হরতাল পালিত হয়েছে। আর নড়াইলের যে লোহাগড়া এলাকায় হিন্দুসম্প্রদায়ের ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন ঘটল, মুক্তিযুদ্ধে সে জায়গাটিতে মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্মরণীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন নূর মোহাম্মদ মিঞা; একাত্তরের মধ্য মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির এক আলোচনা সভায় দাঁড়িয়ে তিনি উচ্চকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘এসব কথাবার্তায় কোনো কাজ হবে না, যুদ্ধ করতে হবে, আমি যুদ্ধে চললাম।’ বলে বেরিয়ে সত্যি সত্যি চলে গিয়েছিলেন তাঁর গ্রামে, ওই লোহাগড়ায়। মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার কাজে তাঁর ভূমিকা ছিল নেতৃস্থানীয় এবং স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও সুদৃঢ়। যুদ্ধ শেষে তিনি তাঁর ওই গ্রামে মনোযোগ দিয়েছিলেন একটি কলেজ প্রতিষ্ঠায়। কলেজের তরুণ অধ্যক্ষকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন অতিরিক্ত শিক্ষা লাভের জন্য। ওই কলেজের পাঠাগারের জন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে নিয়ে যেতেন, প্রতিবার গ্রামে যাওয়ার সময়ে। আজ তিনি নেই; থাকলে সাম্প্রদায়িক হিংস্রতার খবর শুনলে অত্যন্ত বিষাদগ্রস্ত হতেন নিশ্চয়ই এবং আলোচনা করে আমরা হয়তো এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছাতাম যে জাতীয়তাবাদী সংগ্রামটা শেষ কথা নয়, তাকে নিয়ে যাওয়া দরকার সমাজতন্ত্রের অভিমুখে। সেটা না করতে পারলে পুঁজিবাদের দানব আমাদের সব অর্জনকে তছনছ করে দেবে; এখন যেমন দিচ্ছে।
স্বর্গের মতো অগ্নিও নানা প্রকারের হয়ে থাকে। সব আগুনই ভয়ংকর, যদি সে পোড়ায়। ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে দাবদাহ চলছে। আতঙ্কিত হচ্ছে মানুষ, গৃহহারা হয়েছে অনেকে, মৃত্যুও ঘটেছে। ঘটনাটা প্রাকৃতিক, কিন্তু কারণটা মানসিক। মানুষই দায়ী। উন্নয়নের নাম করে মানুষ প্রকৃতিকে উত্ত্যক্ত করেছে। প্রকৃতিরও প্রাণ আছে, সীমা আছে তার সহ্য ক্ষমতার; প্রকৃতি প্রতিশোধ না নিক, প্রতিক্রিয়া তো জানাবে। সেটাই ঘটছে। শীতের দেশের মানুষেরা এতকাল গরমের দেশের ওপর যে আধিপত্য করে এসেছিল, এখন তাতে ফাটল ধরেছে; শীত-গ্রীষ্ম এখন সমান হয়ে যাচ্ছে, বিপদে পড়লে যা হয়ে থাকে। কিন্তু শ্বেত আধিপত্যবাদীরা কি থামাবে তাদের কাজ? তাকাবে কি প্রকৃতির দিকে? শুনবে কি তারা অশনিসংকেত? এমনিতে শুনলেও শুনবে না, তাদের শোনাতে হবে। দায়িত্বটা বিবেকবান ও বুদ্ধিমান মানুষদের।
শীতের দেশ গ্রেট ব্রিটেনের কথা আলোচনায় এসেছে। শেষ করা যাক তার কথা দিয়েই। গ্রেট ব্রিটেনের সমাজে এখন বড় রকমের একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সেটাকে বলা যায় সাংস্কৃতিক। কনজারভেটিভ পার্টি হচ্ছে ঘোষিতরূপেই রক্ষণশীলদের দল, তাদের ভেতর বর্ণবাদ থাকবে—এটা খুবই প্রত্যাশিত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ওই দলের সংস্কৃতিতে একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।
সম্প্রতি ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী পদে দলের ভেতর থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন যে দুজন, তাঁদের একজন শুধু অ-শ্বেতাঙ্গই নন, একেবারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। কট্টর রক্ষণশীল অন্য প্রার্থী, যিনি একজন নারী, তিনি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। যে ইংরেজরা ভারত জয় করেছিল এবং শাসন ছাড়ার পরেও যারা মনের জগৎ থেকে আধিপত্য গুটিয়ে নেয়নি, সেই ইংরেজদের দেশে গিয়ে একজন ভারতীয় কর্তৃত্ব করবেন, এ কেমন কথা? নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী রক্ষণশীলতার খাঁটি প্রতিমূর্তি হিসেবে অভিহিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের মতো হবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু ওই যে জন্মসূত্রে ভারতীয় ভদ্রলোক—ঋষি সুনাক নাম, তিনি যে এতটা এগোতে পারলেন তার কারণ কী? অন্য কারণ আছে, তবে যে কারণটা না থাকলে ঘটনাটি ঘটা একেবারেই অসম্ভব ছিল, সেটি হলো তাঁর রক্ষণশীলতা। গায়ের রং যা-ই হোক মন ও মানসিকতায় তিনিও কনজারভেটিভই; লিবারেল নন, লেবার তো ননই। ফেসবুকে তিনি নাকি স্বীকার করেছেন যে শ্রমিকশ্রেণির কোনো মানুষের সঙ্গে তাঁর কোনো বন্ধুত্ব নেই। বোঝা গেল ইনি খাঁটি বস্তু এবং বর্ণ সত্য বটে, কিন্তু শ্রেণি সত্য আরও অধিক।
পুঁজিবাদ নিজেকে রক্ষা করার জন্য ছাড় দিচ্ছে। ঋষি সুনাককে প্রধানমন্ত্রী হতে না দিক, ওই পদের কাছাকাছি তো গুটিগুটি পৌঁছাতে দিয়েছে, সেটাই-বা কম কিসে? কম নয়, তবে বেশি বলে যেন উৎফুল্ল না হই। কারণ রক্ষণশীল কনজারভেটিভ দলের বাইরের চেহারাটা যা-ই হোক, ভেতরের রংটা অবিকল আগের মতোই। আর লিবারেল দল? তারা তো পুঁজিবাদকেই রক্ষা করতে চায়, নানা ধরনের উদারতা প্রদর্শন করে। এমনকি লেবার পার্টিও এখন আর শ্রমিকশ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী রাজনৈতিক দল নয়। তাদের নেতৃত্বও উদারতাবাদী হয়ে পড়েছে।
সব মিলিয়ে বার্তা যা, তা হলো পুঁজিবাদ এখন বিপদে আছে, তাই ছাড় দিচ্ছে। তবে মতাদর্শিকভাবে সে তার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়নি; বরং নিজের আদর্শের বিষ বিরোধীদের ভেতর সংক্রমিত করছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে শ্রমিকদের পুঁজিবাদী করে তুলছে এবং তাদের দলগত যে সংগঠন, তার নেতাদেরও নিজের আদর্শে দীক্ষিত করার তালে আছে। মরণকামড়!
সংস্কৃতি দুষ্ট হয়ে পড়েছে; সাংস্কৃতিক লড়াইটা তাই বিশ্বব্যাপী এখন অত্যন্ত জরুরি, সমাজবিপ্লবের লক্ষ্যে এবং সমাজবিপ্লবের যে সংগ্রাম, সেটি একই সঙ্গে দেশি ও আন্তর্জাতিক। এই সংগ্রামে পরাজয়ের কোনো স্থান নেই। পরাজয় মানেই মৃত্যু।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দেশজুড়েই সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার পড়বে। কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে পাঠাগারগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। দেশে অনেক পাঠাগার রয়েছে, সেগুলো পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব, সেই সঙ্গে নতুন নতুন পাঠাগার গড়ে তোলা মোটেই অসম্ভব নয়। পাঠাগার যে কেবল বই পড়ার এবং বইয়ের আদান-প্রদানের কেন্দ্র হবে তা নয়, হবে নানা বিষয়ে আলোচনার প্রাণবন্ত একটি পরিসর। সেখানে বক্তৃতা হবে, চলবে বিতর্ক। আয়োজন থাকবে নাট্যাভিনয়ের। পুরোনো নাটকের পাশাপাশি নতুন নাটকও লেখা হবে। গানের আয়োজন থাকবে; বিশেষ করে সমবেত কণ্ঠে গানের। প্রদর্শনী, প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা—কোনো কিছুই বাদ যাবে না। পাশাপাশি গড়ে তোলা হবে দেশব্যাপী একটি কিশোর আন্দোলন। পাঠাগারের আশপাশেই ছেলেমেয়েরা সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুশীলনে অংশ নেবে। এ কাজের মধ্য দিয়ে তরুণেরা সৃষ্টিশীল, সামাজিক ও দেশপ্রেমিক হয়ে উঠবে। তারা শরীরচর্চাও করবে। তাদের অবকাশ ও অবসর হয়ে উঠবে আনন্দমুখর। কেটে যাবে বিষণ্নতা। বিপন্ন মানুষকে সাহায্য করতে তারা অগ্রণী হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। এলাকার পথঘাট, জলাশয়, বিদ্যালয়—এসবের উন্নয়নে তারা হাত লাগাবে।
একাত্তরে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিহীন অবস্থায় এবং যুদ্ধের পরে বিজয়কে যে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি, সেটাও মূলত ওই প্রস্তুতির অভাব ছিল বলেই। সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক—ইতিহাস ও সাহিত্যের চর্চা। ইতিহাসের জ্ঞান না থাকাটা তো স্মৃতিভ্রংশ হওয়ারই সমান। আমাদের ইতিহাসে একদিকে রয়েছে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের গৌরবজনক ঘটনা, অন্যদিকে আছে অন্যায় ও জুলুমের মর্মন্তুদ কাহিনিও। এরা একে অপরের পরিপূরক। উভয়ের জ্ঞানই অত্যাবশ্যক। আমরা যে কেবল নিজেদের ইতিহাসই পড়ব তা নয়, পড়তে হবে বিশ্বের ইতিহাসও। সভ্যতার উত্থান-পতনের কারণ জানা চাই, জানতে হবে জ্ঞানবিজ্ঞানের ইতিহাস। আর সাহিত্যের চর্চা একই সঙ্গে বৃদ্ধি করবে কল্পনার শক্তি ও চিন্তার দক্ষতা; সমৃদ্ধ করবে চিন্তার ক্ষমতাকেও। সাহিত্যচর্চা অবশ্যই বাড়াবে নিজেকে ব্যক্ত করার সক্ষমতা এবং ঘটাবে রুচির উৎকর্ষ।
বলা বাহুল্য, কোনো পাঠই একরৈখিক হবে না; হবে দ্বান্দ্বিক। থাকবে প্রশ্ন, জেগে উঠবে জিজ্ঞাসা এবং সংস্কৃতির এই অনুশীলন মোটেই আদর্শ-নিরপেক্ষ হবে না। আদর্শ একটাই—প্রগতিশীল সমাজবিপ্লবকে সম্ভব করা। নতুন সমাজ গড়ে তোলা এবং তারই প্রয়োজনে ধর্মনিরপেক্ষতার বোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। মনে রাখা চাই, ধর্মনিরপেক্ষতার উপাদান দুটি—একটি দার্শনিক, সেটিকে বলা যায় ইহজাগতিকতা। অপরটি রাজনৈতিক, যার মূল কথাটা হলো রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের বিযুক্তি। আওয়াজটা আমাদের সুপরিচিত: ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’। ধর্ম থাকবে ধর্মের জায়গায়, রাষ্ট্র রাষ্ট্রের।
নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হিংস্রতার ঘটনার কথা আবার মনে পড়ছে। সাংস্কৃতিকভাবে নড়াইল এলাকাটি সুখ্যাত। নড়াইলে তেভাগা আন্দোলন হয়েছে। ১৯৬৮ সালে সেখানে মওলানা ভাসানীর ডাকা হাট-হরতাল পালিত হয়েছে। আর নড়াইলের যে লোহাগড়া এলাকায় হিন্দুসম্প্রদায়ের ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন ঘটল, মুক্তিযুদ্ধে সে জায়গাটিতে মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্মরণীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন নূর মোহাম্মদ মিঞা; একাত্তরের মধ্য মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির এক আলোচনা সভায় দাঁড়িয়ে তিনি উচ্চকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘এসব কথাবার্তায় কোনো কাজ হবে না, যুদ্ধ করতে হবে, আমি যুদ্ধে চললাম।’ বলে বেরিয়ে সত্যি সত্যি চলে গিয়েছিলেন তাঁর গ্রামে, ওই লোহাগড়ায়। মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার কাজে তাঁর ভূমিকা ছিল নেতৃস্থানীয় এবং স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও সুদৃঢ়। যুদ্ধ শেষে তিনি তাঁর ওই গ্রামে মনোযোগ দিয়েছিলেন একটি কলেজ প্রতিষ্ঠায়। কলেজের তরুণ অধ্যক্ষকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন অতিরিক্ত শিক্ষা লাভের জন্য। ওই কলেজের পাঠাগারের জন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে নিয়ে যেতেন, প্রতিবার গ্রামে যাওয়ার সময়ে। আজ তিনি নেই; থাকলে সাম্প্রদায়িক হিংস্রতার খবর শুনলে অত্যন্ত বিষাদগ্রস্ত হতেন নিশ্চয়ই এবং আলোচনা করে আমরা হয়তো এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছাতাম যে জাতীয়তাবাদী সংগ্রামটা শেষ কথা নয়, তাকে নিয়ে যাওয়া দরকার সমাজতন্ত্রের অভিমুখে। সেটা না করতে পারলে পুঁজিবাদের দানব আমাদের সব অর্জনকে তছনছ করে দেবে; এখন যেমন দিচ্ছে।
স্বর্গের মতো অগ্নিও নানা প্রকারের হয়ে থাকে। সব আগুনই ভয়ংকর, যদি সে পোড়ায়। ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে দাবদাহ চলছে। আতঙ্কিত হচ্ছে মানুষ, গৃহহারা হয়েছে অনেকে, মৃত্যুও ঘটেছে। ঘটনাটা প্রাকৃতিক, কিন্তু কারণটা মানসিক। মানুষই দায়ী। উন্নয়নের নাম করে মানুষ প্রকৃতিকে উত্ত্যক্ত করেছে। প্রকৃতিরও প্রাণ আছে, সীমা আছে তার সহ্য ক্ষমতার; প্রকৃতি প্রতিশোধ না নিক, প্রতিক্রিয়া তো জানাবে। সেটাই ঘটছে। শীতের দেশের মানুষেরা এতকাল গরমের দেশের ওপর যে আধিপত্য করে এসেছিল, এখন তাতে ফাটল ধরেছে; শীত-গ্রীষ্ম এখন সমান হয়ে যাচ্ছে, বিপদে পড়লে যা হয়ে থাকে। কিন্তু শ্বেত আধিপত্যবাদীরা কি থামাবে তাদের কাজ? তাকাবে কি প্রকৃতির দিকে? শুনবে কি তারা অশনিসংকেত? এমনিতে শুনলেও শুনবে না, তাদের শোনাতে হবে। দায়িত্বটা বিবেকবান ও বুদ্ধিমান মানুষদের।
শীতের দেশ গ্রেট ব্রিটেনের কথা আলোচনায় এসেছে। শেষ করা যাক তার কথা দিয়েই। গ্রেট ব্রিটেনের সমাজে এখন বড় রকমের একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সেটাকে বলা যায় সাংস্কৃতিক। কনজারভেটিভ পার্টি হচ্ছে ঘোষিতরূপেই রক্ষণশীলদের দল, তাদের ভেতর বর্ণবাদ থাকবে—এটা খুবই প্রত্যাশিত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ওই দলের সংস্কৃতিতে একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।
সম্প্রতি ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী পদে দলের ভেতর থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন যে দুজন, তাঁদের একজন শুধু অ-শ্বেতাঙ্গই নন, একেবারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। কট্টর রক্ষণশীল অন্য প্রার্থী, যিনি একজন নারী, তিনি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। যে ইংরেজরা ভারত জয় করেছিল এবং শাসন ছাড়ার পরেও যারা মনের জগৎ থেকে আধিপত্য গুটিয়ে নেয়নি, সেই ইংরেজদের দেশে গিয়ে একজন ভারতীয় কর্তৃত্ব করবেন, এ কেমন কথা? নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী রক্ষণশীলতার খাঁটি প্রতিমূর্তি হিসেবে অভিহিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের মতো হবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু ওই যে জন্মসূত্রে ভারতীয় ভদ্রলোক—ঋষি সুনাক নাম, তিনি যে এতটা এগোতে পারলেন তার কারণ কী? অন্য কারণ আছে, তবে যে কারণটা না থাকলে ঘটনাটি ঘটা একেবারেই অসম্ভব ছিল, সেটি হলো তাঁর রক্ষণশীলতা। গায়ের রং যা-ই হোক মন ও মানসিকতায় তিনিও কনজারভেটিভই; লিবারেল নন, লেবার তো ননই। ফেসবুকে তিনি নাকি স্বীকার করেছেন যে শ্রমিকশ্রেণির কোনো মানুষের সঙ্গে তাঁর কোনো বন্ধুত্ব নেই। বোঝা গেল ইনি খাঁটি বস্তু এবং বর্ণ সত্য বটে, কিন্তু শ্রেণি সত্য আরও অধিক।
পুঁজিবাদ নিজেকে রক্ষা করার জন্য ছাড় দিচ্ছে। ঋষি সুনাককে প্রধানমন্ত্রী হতে না দিক, ওই পদের কাছাকাছি তো গুটিগুটি পৌঁছাতে দিয়েছে, সেটাই-বা কম কিসে? কম নয়, তবে বেশি বলে যেন উৎফুল্ল না হই। কারণ রক্ষণশীল কনজারভেটিভ দলের বাইরের চেহারাটা যা-ই হোক, ভেতরের রংটা অবিকল আগের মতোই। আর লিবারেল দল? তারা তো পুঁজিবাদকেই রক্ষা করতে চায়, নানা ধরনের উদারতা প্রদর্শন করে। এমনকি লেবার পার্টিও এখন আর শ্রমিকশ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী রাজনৈতিক দল নয়। তাদের নেতৃত্বও উদারতাবাদী হয়ে পড়েছে।
সব মিলিয়ে বার্তা যা, তা হলো পুঁজিবাদ এখন বিপদে আছে, তাই ছাড় দিচ্ছে। তবে মতাদর্শিকভাবে সে তার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়নি; বরং নিজের আদর্শের বিষ বিরোধীদের ভেতর সংক্রমিত করছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে শ্রমিকদের পুঁজিবাদী করে তুলছে এবং তাদের দলগত যে সংগঠন, তার নেতাদেরও নিজের আদর্শে দীক্ষিত করার তালে আছে। মরণকামড়!
সংস্কৃতি দুষ্ট হয়ে পড়েছে; সাংস্কৃতিক লড়াইটা তাই বিশ্বব্যাপী এখন অত্যন্ত জরুরি, সমাজবিপ্লবের লক্ষ্যে এবং সমাজবিপ্লবের যে সংগ্রাম, সেটি একই সঙ্গে দেশি ও আন্তর্জাতিক। এই সংগ্রামে পরাজয়ের কোনো স্থান নেই। পরাজয় মানেই মৃত্যু।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

দেশজুড়েই সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার পড়বে। কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে পাঠাগারগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। দেশে অনেক পাঠাগার রয়েছে, সেগুলো পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব, সেই সঙ্গে নতুন নতুন পাঠাগার গড়ে তোলা মোটেই অসম্ভব নয়।
১৯ অক্টোবর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

দেশজুড়েই সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার পড়বে। কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে পাঠাগারগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। দেশে অনেক পাঠাগার রয়েছে, সেগুলো পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব, সেই সঙ্গে নতুন নতুন পাঠাগার গড়ে তোলা মোটেই অসম্ভব নয়।
১৯ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

দেশজুড়েই সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার পড়বে। কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে পাঠাগারগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। দেশে অনেক পাঠাগার রয়েছে, সেগুলো পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব, সেই সঙ্গে নতুন নতুন পাঠাগার গড়ে তোলা মোটেই অসম্ভব নয়।
১৯ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

দেশজুড়েই সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার পড়বে। কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে পাঠাগারগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। দেশে অনেক পাঠাগার রয়েছে, সেগুলো পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব, সেই সঙ্গে নতুন নতুন পাঠাগার গড়ে তোলা মোটেই অসম্ভব নয়।
১৯ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫