Ajker Patrika

মার্কিন কৃষিতে রাসায়নিক সারের বিকল্প হয়ে উঠছে মানবমূত্র, বাড়ছে উৎপাদন

আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৫, ১২: ২১
নিজের কৃষি খামারে মানুষের মূত্র থেকে তৈরি সার নিয়ে কাজ করছেন বেটসি উইলিয়ামস। ছবি: রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট
নিজের কৃষি খামারে মানুষের মূত্র থেকে তৈরি সার নিয়ে কাজ করছেন বেটসি উইলিয়ামস। ছবি: রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট

প্রাচীন রোম ও চীনে মূত্রকে প্রাকৃতিক সার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সম্প্রতি চীনা বিজ্ঞানীরাও মূত্র ব্যবহার করে সার উৎপাদনের চেষ্টা করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের কৃষকেরা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি টেকসই কৃষির লক্ষ্যে প্রাচীন চীনা ও রোমক পদ্ধতি আবারও গ্রহণ করছেন।

মানুষের মূত্র থেকে সার উৎপাদনের প্রকল্প নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট (আরইআই) পরিচালিত ইউরিন নিউট্রিয়েন্ট রিক্লেমেশন প্রোগ্রামে (ইউএনআরপি) অংশগ্রহণকারী বেটসি উইলিয়ামস ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজের প্রস্রাব সংগ্রহ ও দান করছেন।

উইন্ডহ্যাম কাউন্টিতে বেটসির ২৫০ জন প্রতিবেশী প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার গ্যালন (৪৫ হাজার ৪০০ লিটার) প্রস্রাব সরবরাহ করেন, যা পুনর্ব্যবহৃত বা ‘পি-সাইকেলড’ হয়ে কৃষিজমিতে সার হিসেবে প্রয়োগ করা হয়।

বেটসি উইলিয়ামস বলেন, ‘আমরা এমন অনেক কিছু খাই, যাতে পুষ্টি উপাদান থাকে এবং সেই উপাদানগুলোর একটি বড় অংশ আমাদের শরীরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর আবারও পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয়ে খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে—আমাদের ও পশুপাখির জন্য। তাই আমার কাছে এটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক মনে হয়।’

সংগ্রহ করা প্রস্রাবকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৭৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় ৯০ সেকেন্ড ধরে পাস্তুরিত করা হয় এবং পরে ট্যাংকে সংরক্ষণ করা হয়, যতক্ষণ না এটি জমিতে ছিটানোর উপযোগী হয়। এই চর্চার শিকড় প্রাচীন সভ্যতাগুলোতে থাকলেও আধুনিক বিজ্ঞানও এর পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রস্রাব সার হিসেবে ব্যবহৃত হলে এমনকি কম উর্বর মাটিতেও কেল ও পালং শাকের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বাড়তে পারে। প্রস্রাব নাইট্রোজেন ও ফসফরাসে সমৃদ্ধ, যা ঠিক সেই একই পুষ্টি উপাদান, যা রাসায়নিক সারে পাওয়া যায়। রাসায়নিক সারের যে পরিবেশগত ক্ষতি তা প্রস্রাবে নেই। রাসায়নিক সার উৎপাদনে উচ্চ মাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর হ্যাবার-বস পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এবং ফসফরাস আহরণের ফলে বিষাক্ত বর্জ্য উৎপন্ন হয়। বিপরীতে, প্রস্রাব হলো একটি সহজলভ্য সম্পদ। উইলিয়ামসের ভাষায়, ‘প্রত্যেকেই প্রস্রাব করে। এটি একপ্রকার অব্যবহৃত সম্পদ।’

আরইআইয়ের সঙ্গে কাজ করা মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ন্যান্সি লাভ প্রস্রাব পুনর্ব্যবহারের পরিবেশগত সুবিধাগুলোর ওপর জোর দেন। প্রস্রাবকে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমে এবং পানি ব্যবহার প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। ২০১২ সাল থেকে ইউএনআরপি শৌচাগারের ফ্লাশিং কমিয়ে প্রায় ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন গ্যালন (১০ দশমিক ২ মিলিয়ন লিটার) পানি সাশ্রয় করেছে।

ন্যান্সি লাভ বলেন, ‘আমরা এখন যা করি, তা হলো প্রস্রাবকে প্রচুর পরিমাণে পানির সঙ্গে মিশিয়ে পাইপ দিয়ে শোধনাগারে পাঠাই, সেখানে প্রচুর শক্তি ব্যয় করে এটিকে আবার পরিবেশে ফেরত পাঠাই—তাও একটি সক্রিয় অবস্থায়।’

একটি খেতে মূত্র থেকে সার ছিটানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। ছবি: রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট
একটি খেতে মূত্র থেকে সার ছিটানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। ছবি: রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট

যখন প্রস্রাব সরাসরি জলাশয়ে প্রবাহিত হয়, তখন এতে থাকা নাইট্রোজেন ও ফসফরাস শৈবাল বিস্তার ঘটিয়ে জলজ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়। আরইআই-এর নির্বাহী পরিচালক জামিনা শুপ্যাক বলেন, ‘আমাদের দেহ প্রচুর পুষ্টি উপাদান উৎপাদন করে, কিন্তু বর্তমানে সেগুলো শুধু অপচয়ই হচ্ছে না, বরং এগুলো পরিবেশে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করছে।’

প্রস্রাবকে কৃষিজমিতে ব্যবহারের মাধ্যমে এই পুষ্টি উপাদানগুলো জলাশয় দূষিত না করে ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হতে পারে। আরইআই এবং কৃষকেরা মাটির আর্দ্রতা পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রস্রাব প্রয়োগের সময় নির্ধারণ করে যাতে গাছপালা সর্বাধিক পুষ্টি শোষণ করতে পারে এবং দূষণ কম হয়। তবে শুপ্যাক স্বীকার করেন, ‘এর মানে এই নয় যে, একেবারেই কোনো প্রবাহ হবে না।’

এই চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, ‘পি-সাইকেলিং’ বা প্রস্রাবের পুনর্ব্যবহার জলাশয়ে পুষ্টি দূষণের মাত্রা কমায়। বর্তমানে, রাসায়নিক সার ও অপরিশোধিত প্রস্রাব উভয়ই পানিদূষণের জন্য দায়ী। কিন্তু প্রস্রাব পুনর্ব্যবহার করলে কেবল কৃষিজমি থেকে অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান নদী ও হ্রদে প্রবাহিত হতে পারে।

কেবল ভারমন্ট নয়, বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও অনুরূপ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্যারিসে স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রস্রাব সংগ্রহ করে গম চাষের জন্য সার তৈরি করছেন। সুইডেনে কিছু উদ্যোক্তা প্রস্রাব থেকে সার তৈরি করে গোতল্যান্ড অঞ্চলের শৈবাল বিস্তার প্রতিরোধ করছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল ও নাইজারেও পরীক্ষামূলক প্রকল্প পরিচালিত হয়েছে।

এভাবে বিভিন্ন ছোট ছোট ট্যাংকের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়ি থেকে মূত্র সংগ্রহ করা হয় বেটসির নিজের কাউন্টি থেকে। ছবি: রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট
এভাবে বিভিন্ন ছোট ছোট ট্যাংকের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়ি থেকে মূত্র সংগ্রহ করা হয় বেটসির নিজের কাউন্টি থেকে। ছবি: রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট

তবে বৃহৎ পরিসরে ‘পি-সাইকেলিং’ বাস্তবায়নে বেশ কিছু বাধা আছে। ভারমন্টে প্রস্রাবের চাহিদা সরবরাহের তুলনায় বেশি, কিন্তু সংগ্রহ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ করা কঠিন। কারণ, আইনগতভাবে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা আছে। শুপ্যাক ব্যাখ্যা করেন, ‘অনেক সময় আপনি যখন কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে যান, তারা বলেন—প্রস্রাবের জন্য আমাদের কোনো নির্দিষ্ট ফরম নেই—এটি বায়োসলিডস বা পয়ঃশোধন ব্যবস্থার মধ্যে পড়ে। ফলে এটি এমনভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি, যাতে আমাদের কাজটি সহজ হয়।’

এই সমস্যার সমাধানে আরইআই বিদ্যমান অনুমোদিত সংস্থাগুলো, যেমন সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কারকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। ভারমন্টের পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা ইমন টুয়োহিগ বলেন, আরইআই প্রস্রাব পুনর্ব্যবহারে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে এবং একটি কার্যকর নিয়মকানুন তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আরইআই-এর কাছে প্রয়োজনীয় সব অনুমতি আছে। যার মধ্যে আছে—পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার অনুমতি এবং প্রস্রাব পরিবহনের জন্য বর্জ্য পরিবহন লাইসেন্স। সংগঠনটি ম্যাসাচুসেটস ও মিশিগানে নীতিগত অগ্রগতির জন্য কাজ করছে।’

শুপ্যাক বলেন, ‘আমরা বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে নতুন পরিবেশগত বিধিবিধান হালনাগাদ করা সব সময় সহজ নয়।’ একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, পৃথকভাবে সংগ্রহ করা মানব বর্জ্য ও পয়ঃশোধনাগারের একত্রিত বর্জ্যের মধ্যে কোনো আইনগত পার্থক্য না থাকা, যা নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো প্রস্রাবের ওজন ও পরিবহনের কার্বন নিঃসরণ। এই সমস্যা সমাধানে আরইআই-এর সহযোগী সংস্থা একটি ‘ফ্রিজ কনসেন্ট্রেশন’ পদ্ধতি তৈরি করেছে, যা প্রস্রাবের আয়তন ছয় ভাগের এক ভাগে কমিয়ে আনে। এটি বর্তমানে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এসব চ্যালেঞ্জ থাকার পরও ‘পি-সাইকেলিং’ রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো, পানি সংরক্ষণ এবং দূষণ প্রতিরোধের একটি সম্ভাবনাময় সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা টেকসই কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতের দাপট আজও থাকবে, পড়বে ঘন কুয়াশা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

সারা দেশসহ রাজধানী ঢাকায় আজও রয়েছে শীতের দাপট। হাড়কাঁপানো এই শীতের সঙ্গে পড়েছে ঘন কুয়াশা। দেখা নেই সূর্যের। আজ মঙ্গলবার সারা দিন এমন আবহাওয়াই থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ঢাকায় দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

গতকাল সোমবার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, আজ একই সময়ে সেটি কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৯।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া প্রধানত থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ সূর্যাস্ত ৫টা ২২ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪১ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ শীত আরও বাড়বে, কাটছে না কুয়াশার চাদর

  • তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে।
  • কুয়াশায় ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ।
  • ঠান্ডা-কুয়াশায় বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪১
দেশজুড়ে বইছে তীব্র শীত। কনকনে ঠান্ডায় কাবু সাধারণ মানুষ। একটু উষ্ণতার জন্য রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় আগুন পোহাচ্ছেন মাঝিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
দেশজুড়ে বইছে তীব্র শীত। কনকনে ঠান্ডায় কাবু সাধারণ মানুষ। একটু উষ্ণতার জন্য রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় আগুন পোহাচ্ছেন মাঝিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তিন দিন ধরে সূর্যের যেন দেখা নেই। কনকনে শীতে কাবু মানুষ। আর ঘন কুয়াশায় সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ বেশ ব্যাহত হচ্ছে।

এই অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ মঙ্গলবার সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। তবে আগামীকাল বুধবার ও পরদিন বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আর শুক্রবার অপরিবর্তিত থাকতে পারে তাপমাত্রা।

টানা তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে এবার বোরো বীজতলাসহ ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে বোরো বীজতলা তৈরির মৌসুম চললেও কম তাপমাত্রা ও সূর্যের আলো না থাকায় অনেক এলাকায় বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা চেষ্টা চালালেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না।

গত রোববারের মতো গতকালও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়। এদিন সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আক্তারুজ্জামান ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাজধানীতে আগের দুই দিনের মতো গতকালও সারা দিনে সূর্যের দেখা পায়নি মানুষ। গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মধ্যে সন্ধ্যার পর বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে শিশির। এতে ভয়ানক কষ্টের মধ্যে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষ।

ঘন কুয়াশা আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কায় রাজধানীর সদরঘাট থেকে চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন।

সারা দেশে গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রভাব পড়েছে ফসলি জমিসহ বোরো বীজতলায়। কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে সৃষ্ট ‘কোল্ড ইনজুরি’-তে নাবি বীজতলার চারা পচে যাচ্ছে। এতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে চারার সংকটের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

নওগাঁর মান্দা উপজেলা, যশোরের শার্শা, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, রংপুর জেলার আট উপজেলা, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকেরা বোরো বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন।

ঘন কুয়াশা ও হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় শিশির বৃষ্টির মতো ঝরছে। নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, কোল্ড ইনজুরি থেকে রক্ষার জন্য কৃষকেরা বোরো ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। যেসব বীজতলা ঢেকে রাখা হয়নি, সেগুলোর চারা হলুদ ও বিবর্ণ হয়ে গেছে।

মান্দার নাড়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে তৈরি করা বীজতলায় সবে চারা উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু কয়েক দিন ধরে সূর্যের আলো না থাকায় দুশ্চিন্তায় আছি। পরিস্থিতি এভাবে চললে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে, এতে বাড়তি খরচ পড়বে।’

মান্দা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিরূপ আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে রোপণের সময় চারার সংকট দেখা দিতে পারে। এ কারণে কৃষকদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে দিনের অধিকাংশ সময় সড়কে যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। এতে হাটবাজারে ক্রেতার উপস্থিতি কমে গেছে। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও চার্জার ভ্যানচালকেরা।

নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক হামিদুল হক জানান, পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় চলছে। সামনের দিনগুলোতে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। চলতি মাসেই এ অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সোমবার বহির্বিভাগে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ৩৫৬ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে কাঁপছে সারা দেশ, রাতে তাপমাত্রা আরও কমবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যশোরে টানা দুইদিন সূর্যের দেখা নেই। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরে টানা দুইদিন সূর্যের দেখা নেই। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাঘ মাস আসতে এখনো অনেক বাকি। আজ সোমবার কেবল ১৪ পৌষ। তবে এখনই হাড়কাঁপানো শীত পড়েছে দেশজুড়ে। আজ সকাল ৬টায় দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রাতে সারা দেশেই তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

আজ সকাল ৯টা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকালে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪, রংপুরে ১৩, ময়মনসিংহে ১৩ দশমিক ৬, সিলেটে ১৪ দশমিক ৫, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৭ এবং খুলনা ও বরিশালে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কুয়াশার কারণে দেশজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্ন হতে পারে উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

এ ছাড়া সারা দেশে আজ রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় শীত আরও বেড়েছে, পড়বে ঘন কুয়াশা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় শীত যেন আরও জেঁকে বসেছে। গতকাল রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, আজ সোমবার একই সময়ে সেটি কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ঢাকায় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ সূর্যাস্ত ৫টা ২১ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪০ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত