Ajker Patrika

মার্কিন কৃষিতে রাসায়নিক সারের বিকল্প হয়ে উঠছে মানবমূত্র, বাড়ছে উৎপাদন

আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৫, ১২: ২১
নিজের কৃষি খামারে মানুষের মূত্র থেকে তৈরি সার নিয়ে কাজ করছেন বেটসি উইলিয়ামস। ছবি: রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট
নিজের কৃষি খামারে মানুষের মূত্র থেকে তৈরি সার নিয়ে কাজ করছেন বেটসি উইলিয়ামস। ছবি: রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট

প্রাচীন রোম ও চীনে মূত্রকে প্রাকৃতিক সার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সম্প্রতি চীনা বিজ্ঞানীরাও মূত্র ব্যবহার করে সার উৎপাদনের চেষ্টা করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের কৃষকেরা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি টেকসই কৃষির লক্ষ্যে প্রাচীন চীনা ও রোমক পদ্ধতি আবারও গ্রহণ করছেন।

মানুষের মূত্র থেকে সার উৎপাদনের প্রকল্প নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট (আরইআই) পরিচালিত ইউরিন নিউট্রিয়েন্ট রিক্লেমেশন প্রোগ্রামে (ইউএনআরপি) অংশগ্রহণকারী বেটসি উইলিয়ামস ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজের প্রস্রাব সংগ্রহ ও দান করছেন।

উইন্ডহ্যাম কাউন্টিতে বেটসির ২৫০ জন প্রতিবেশী প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার গ্যালন (৪৫ হাজার ৪০০ লিটার) প্রস্রাব সরবরাহ করেন, যা পুনর্ব্যবহৃত বা ‘পি-সাইকেলড’ হয়ে কৃষিজমিতে সার হিসেবে প্রয়োগ করা হয়।

বেটসি উইলিয়ামস বলেন, ‘আমরা এমন অনেক কিছু খাই, যাতে পুষ্টি উপাদান থাকে এবং সেই উপাদানগুলোর একটি বড় অংশ আমাদের শরীরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর আবারও পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয়ে খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে—আমাদের ও পশুপাখির জন্য। তাই আমার কাছে এটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক মনে হয়।’

সংগ্রহ করা প্রস্রাবকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৭৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় ৯০ সেকেন্ড ধরে পাস্তুরিত করা হয় এবং পরে ট্যাংকে সংরক্ষণ করা হয়, যতক্ষণ না এটি জমিতে ছিটানোর উপযোগী হয়। এই চর্চার শিকড় প্রাচীন সভ্যতাগুলোতে থাকলেও আধুনিক বিজ্ঞানও এর পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রস্রাব সার হিসেবে ব্যবহৃত হলে এমনকি কম উর্বর মাটিতেও কেল ও পালং শাকের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বাড়তে পারে। প্রস্রাব নাইট্রোজেন ও ফসফরাসে সমৃদ্ধ, যা ঠিক সেই একই পুষ্টি উপাদান, যা রাসায়নিক সারে পাওয়া যায়। রাসায়নিক সারের যে পরিবেশগত ক্ষতি তা প্রস্রাবে নেই। রাসায়নিক সার উৎপাদনে উচ্চ মাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর হ্যাবার-বস পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এবং ফসফরাস আহরণের ফলে বিষাক্ত বর্জ্য উৎপন্ন হয়। বিপরীতে, প্রস্রাব হলো একটি সহজলভ্য সম্পদ। উইলিয়ামসের ভাষায়, ‘প্রত্যেকেই প্রস্রাব করে। এটি একপ্রকার অব্যবহৃত সম্পদ।’

আরইআইয়ের সঙ্গে কাজ করা মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ন্যান্সি লাভ প্রস্রাব পুনর্ব্যবহারের পরিবেশগত সুবিধাগুলোর ওপর জোর দেন। প্রস্রাবকে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমে এবং পানি ব্যবহার প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। ২০১২ সাল থেকে ইউএনআরপি শৌচাগারের ফ্লাশিং কমিয়ে প্রায় ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন গ্যালন (১০ দশমিক ২ মিলিয়ন লিটার) পানি সাশ্রয় করেছে।

ন্যান্সি লাভ বলেন, ‘আমরা এখন যা করি, তা হলো প্রস্রাবকে প্রচুর পরিমাণে পানির সঙ্গে মিশিয়ে পাইপ দিয়ে শোধনাগারে পাঠাই, সেখানে প্রচুর শক্তি ব্যয় করে এটিকে আবার পরিবেশে ফেরত পাঠাই—তাও একটি সক্রিয় অবস্থায়।’

একটি খেতে মূত্র থেকে সার ছিটানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। ছবি: রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট
একটি খেতে মূত্র থেকে সার ছিটানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। ছবি: রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট

যখন প্রস্রাব সরাসরি জলাশয়ে প্রবাহিত হয়, তখন এতে থাকা নাইট্রোজেন ও ফসফরাস শৈবাল বিস্তার ঘটিয়ে জলজ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়। আরইআই-এর নির্বাহী পরিচালক জামিনা শুপ্যাক বলেন, ‘আমাদের দেহ প্রচুর পুষ্টি উপাদান উৎপাদন করে, কিন্তু বর্তমানে সেগুলো শুধু অপচয়ই হচ্ছে না, বরং এগুলো পরিবেশে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করছে।’

প্রস্রাবকে কৃষিজমিতে ব্যবহারের মাধ্যমে এই পুষ্টি উপাদানগুলো জলাশয় দূষিত না করে ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হতে পারে। আরইআই এবং কৃষকেরা মাটির আর্দ্রতা পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রস্রাব প্রয়োগের সময় নির্ধারণ করে যাতে গাছপালা সর্বাধিক পুষ্টি শোষণ করতে পারে এবং দূষণ কম হয়। তবে শুপ্যাক স্বীকার করেন, ‘এর মানে এই নয় যে, একেবারেই কোনো প্রবাহ হবে না।’

এই চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, ‘পি-সাইকেলিং’ বা প্রস্রাবের পুনর্ব্যবহার জলাশয়ে পুষ্টি দূষণের মাত্রা কমায়। বর্তমানে, রাসায়নিক সার ও অপরিশোধিত প্রস্রাব উভয়ই পানিদূষণের জন্য দায়ী। কিন্তু প্রস্রাব পুনর্ব্যবহার করলে কেবল কৃষিজমি থেকে অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান নদী ও হ্রদে প্রবাহিত হতে পারে।

কেবল ভারমন্ট নয়, বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও অনুরূপ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্যারিসে স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রস্রাব সংগ্রহ করে গম চাষের জন্য সার তৈরি করছেন। সুইডেনে কিছু উদ্যোক্তা প্রস্রাব থেকে সার তৈরি করে গোতল্যান্ড অঞ্চলের শৈবাল বিস্তার প্রতিরোধ করছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল ও নাইজারেও পরীক্ষামূলক প্রকল্প পরিচালিত হয়েছে।

এভাবে বিভিন্ন ছোট ছোট ট্যাংকের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়ি থেকে মূত্র সংগ্রহ করা হয় বেটসির নিজের কাউন্টি থেকে। ছবি: রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট
এভাবে বিভিন্ন ছোট ছোট ট্যাংকের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়ি থেকে মূত্র সংগ্রহ করা হয় বেটসির নিজের কাউন্টি থেকে। ছবি: রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট

তবে বৃহৎ পরিসরে ‘পি-সাইকেলিং’ বাস্তবায়নে বেশ কিছু বাধা আছে। ভারমন্টে প্রস্রাবের চাহিদা সরবরাহের তুলনায় বেশি, কিন্তু সংগ্রহ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ করা কঠিন। কারণ, আইনগতভাবে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা আছে। শুপ্যাক ব্যাখ্যা করেন, ‘অনেক সময় আপনি যখন কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে যান, তারা বলেন—প্রস্রাবের জন্য আমাদের কোনো নির্দিষ্ট ফরম নেই—এটি বায়োসলিডস বা পয়ঃশোধন ব্যবস্থার মধ্যে পড়ে। ফলে এটি এমনভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি, যাতে আমাদের কাজটি সহজ হয়।’

এই সমস্যার সমাধানে আরইআই বিদ্যমান অনুমোদিত সংস্থাগুলো, যেমন সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কারকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। ভারমন্টের পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা ইমন টুয়োহিগ বলেন, আরইআই প্রস্রাব পুনর্ব্যবহারে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে এবং একটি কার্যকর নিয়মকানুন তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আরইআই-এর কাছে প্রয়োজনীয় সব অনুমতি আছে। যার মধ্যে আছে—পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার অনুমতি এবং প্রস্রাব পরিবহনের জন্য বর্জ্য পরিবহন লাইসেন্স। সংগঠনটি ম্যাসাচুসেটস ও মিশিগানে নীতিগত অগ্রগতির জন্য কাজ করছে।’

শুপ্যাক বলেন, ‘আমরা বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে নতুন পরিবেশগত বিধিবিধান হালনাগাদ করা সব সময় সহজ নয়।’ একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, পৃথকভাবে সংগ্রহ করা মানব বর্জ্য ও পয়ঃশোধনাগারের একত্রিত বর্জ্যের মধ্যে কোনো আইনগত পার্থক্য না থাকা, যা নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো প্রস্রাবের ওজন ও পরিবহনের কার্বন নিঃসরণ। এই সমস্যা সমাধানে আরইআই-এর সহযোগী সংস্থা একটি ‘ফ্রিজ কনসেন্ট্রেশন’ পদ্ধতি তৈরি করেছে, যা প্রস্রাবের আয়তন ছয় ভাগের এক ভাগে কমিয়ে আনে। এটি বর্তমানে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এসব চ্যালেঞ্জ থাকার পরও ‘পি-সাইকেলিং’ রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো, পানি সংরক্ষণ এবং দূষণ প্রতিরোধের একটি সম্ভাবনাময় সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা টেকসই কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ ঢাকার আবহাওয়া কেমন থাকবে জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। তবে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৬ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন: দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণে বছরে প্রাণ হারাচ্ছে ১০ লাখ মানুষ

  • ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের মধ্যে আছে বাংলাদেশও
  • অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছে কোটি কোটি মানুষ
  • ক্ষতি হচ্ছে জিডিপির ১০ শতাংশের সমপরিমাণ
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার গাঙ্গেয় সমভূমি ও হিমালয়ের পাদদেশ (আইজিপি-এইচএফ) অঞ্চলের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ নিয়মিত অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছে। এতে বছরে এই অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। বায়ুদূষণের ফলে অঞ্চলটির অর্থনীতিতে বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশের সমপরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে। এই দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশও।

বিশ্বব্যাংকের ‘এ ব্রেথ অব চেঞ্জ: সলিউশনস ফর ক্লিনার এয়ার ইন দ্য ইন্দো-গেঞ্জেটিক প্লেইনস অ্যান্ড হিমালয়ান ফুটহিলস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির ঢাকা অফিস থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইজিপি-এইচএফ অঞ্চলে বায়ুদূষণ এখনো অন্যতম বড় উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। সমন্বিত ও বাস্তবভিত্তিক কিছু পদক্ষেপ নিলে দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। এতে একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুটোরই উন্নতি হবে।

গাঙ্গেয় সমভূমি ও হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও ভুটানের অংশবিশেষ। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অঞ্চলের বায়ুদূষণের প্রধান পাঁচটি উৎস রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রান্না ও ঘর গরম করার কাজে লাকড়িজাতীয় কঠিন বস্তু ব্যবহার, শিল্পকারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি (তেল, গ্যাস, কয়লা) ও বায়োম্যাসের ফিল্টার ছাড়া অদক্ষ ব্যবহার, অনুন্নত প্রযুক্তির ইঞ্জিনের যানবাহন চালানো, কৃষকদের খেতের ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো এবং রাসায়নিক সার ও গোবরের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং গৃহস্থালি ও কারখানার বর্জ্য পোড়ানো।

দূষণ কমাতে কয়েকটি তুলনামূলকভাবে সহজে বাস্তবায়নযোগ্য কৌশলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। এগুলো হলো–বৈদ্যুতিক চুলায় রান্না, শিল্পকারখানার বয়লার, ফার্নেস ও ইটভাটার আধুনিকায়ন, নন-মোটরাইজড ও বৈদ্যুতিক পরিবহনব্যবস্থার প্রসার, কৃষিবর্জ্য ও পশুবর্জ্যের উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য পৃথক্‌করণ ও পুনর্ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া।

প্রতিবেদনে নির্মল বায়ু নিশ্চিত করার কৌশলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১. দূষণের উৎসেই নির্গমন কমানোর ব্যবস্থা। ২. স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করে শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া। ৩. কার্যকর আইন, বাজারভিত্তিক প্রণোদনা ও আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা।

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশ অর্থনীতিবিদ মার্টিন হেগার বলেন, ‘নির্মল বায়ু নিশ্চিত করার সমাধানগুলো বাস্তবসম্মত ও কার্যকর। নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দেয়। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার পরিবার, কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারে আর্থিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক সুযোগ তৈরি করে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে ‘চারটি আই’ (ইংরেজি আদ্যক্ষর)—তথ্য, প্রণোদনা, প্রতিষ্ঠান এবং অবকাঠামোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। নির্ভরযোগ্য তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা, পরিচ্ছন্ন বিকল্পে বিনিয়োগে প্রণোদনা, কার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও পরিবহন অবকাঠামো গড়ে তোলাই এই রূপান্তরের মূল চাবিকাঠি।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিবেশবিষয়ক প্র্যাকটিস ম্যানেজার অ্যান জিনেট গ্লাউবার বলেন, স্থানীয় থেকে আঞ্চলিক পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া নির্মল বায়ু অর্জন সম্ভব নয়। সরকারগুলো একসঙ্গে কাজ করলেই কেবল দূষণ কমানো, লাখো মানুষের জীবন রক্ষা এবং সবার জন্য নিরাপদ বায়ু নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, আজও দূষণে শীর্ষে দিল্লি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০২
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বেশ কিছুদিন ধরে দিল্লির বাতাসের অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ। আজ বৃহস্পতিবার দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে রয়েছে শহরটি। অন্যদিকে ঢাকার বায়ুমান আজ সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে ঢাকা।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ১৯০। যা নির্দেশ করে ঢাকার বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

ঢাকার বেশ কিছু স্থানের বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর থেকে খুব অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে রয়েছে— কল্যাণপুর (২৬০), দক্ষিণ পল্লবী (২৫৬), বেজ এজওয়াটার আউটডোর (১৯৬), গোড়ান (১৯৬) ও বেচারাম দেউরি (১৯০)।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরেই দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে দিল্লি। শহরটির একিউআই স্কোর ৩১০। যা এই শহরের বাতাসকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর (২৭০, খুব অস্বাস্থ্যকর), তৃতীয় স্থানে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সারাজেভ (২২৭, খুব অস্বাস্থ্যকর), চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি (২০১, খুব অস্বাস্থ্যকর) এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে মিসরের কায়রো (১৯৪, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বেড়েছে ঢাকার তাপমাত্রা, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পৌষ মাসের তৃতীয় দিন আজ। শীতের মৌসুম চলে এলেও রাজধানী ঢাকায় বাড়ছে তাপমাত্রা। আজ বৃহস্পতিবার সকালের আবহাওয়া বুলেটিনে দেখা যায়, গতকালের তুলনায় আজ সকালে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল মঙ্গলবার ছিল ১৬ দশমিক ৬। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। তবে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৬ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত