Ajker Patrika

সত্যজিতের রবীন্দ্রনাথ

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২১, ১৪: ৪৮
সত্যজিতের রবীন্দ্রনাথ

ঢাকা: সত্যজিৎ রায়ের তথ্যচিত্র বেশির ভাগ সময়ই আলোচনার বাইরে রয়ে গেছে। মূলত তাঁর তৈরি করা ফিচার ফিল্মগুলোর দিকেই চোখ থাকে মানুষের।

বিশ্ব চলচ্চিত্র ইতিহাস জানে, বিভিন্ন দেশের সেরা মনীষীদের নিয়ে অনেক তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। সেই মানুষদের জীবনের পথ অথবা তাঁদের শৈল্পিক পদচারণা বিবৃত হয়েছে তাতে। এসব তথ্যচিত্র নির্মাতাদের কেউ কেউ নির্মাণে রাখতে পেরেছেন তাঁর স্বকীয়তার স্বাক্ষর, বলেছেন নতুন কথা। আবার কেউ কেউ পেশাদারি ভঙ্গিতে স্রেফ তুলে ধরেছেন জীবনালেখ্য।

সত্যজিৎ রায়ও বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। তবে সেগুলোর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন নিয়ে করা তথ্যচিত্রটির কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয়। রবীন্দ্রনাথের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে নির্মিত ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬১ সালে।

একটু আগে থেকেই শুরু করি। ১৯৫৯ সালে অনেকে বুঝতে পারলেন, বাংলা ভাষার সেরা কবির জন্মশতবার্ষিকী দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে, এখন কিছু একটা করা দরকার। তখন একটি শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটি গঠন করা হলো। সেই কমিটিই সিদ্ধান্ত নেয়, এ উপলক্ষে রবীন্দ্র–জীবনভিত্তিক একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হবে। কে করবেন ছবি নির্মাণ? কে লিখবেন চিত্রনাট্য? সত্যজিৎ রায় তো ছিলেনই। তবে তাঁর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ছিলেন আরও কেউ কেউ। সত্যজিৎকে যারা সমর্থন করলেন, তাঁরা বললেন, সত্যজিতের মধ্যে রাবীন্দ্রিকতা আছে। রবীন্দ্রনাথকে বোঝেন সত্যজিৎ। ১৯৬১ সালেই সত্যজিতের তিন কন্যা মুক্তি পায় (পোস্টমাস্টার, মনিহারা আর সমাপ্তি)। এর পর সত্যজিৎ রবীন্দ্রনাথের কাহিনি নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘নষ্টনীড়’ আর ‘ঘরে বাইরে’। আমরা অবশ্য তথ্যচিত্রটির দিকেই দৃষ্টি রাখব।

যারা সত্যজিতের মতো শিল্পীর হাতে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদের কথা হলো—জন্মশতবার্ষিকীতে যদি ছবি করতেই হয়, তাহলে তার ভার দেওয়া উচিত কোনো ইতিহাসবিদকে। কারণ, ইতিহাসবিদই রবীন্দ্রনাথকে সাল অনুযায়ী তুলে ধরতে পারবেন। এটা ইতিহাসবিদেরই কাজ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছবি: সংগৃহীতএই বিতর্ককে বাড়তে দেননি পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও ছিলেন উদ্‌যাপন কমিটির একজন সদস্য। এ কথা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না যে, রাজনীতিবিদের বাইরেও একজন ইতিহাসবিদ ও লেখক হিসেবে জওহরলাল নেহরুর সুনাম ছিল। নেহরু দৃঢ়ভাবে বললেন, তথ্যচিত্র নির্মাণ করা কোনো ইতিহাসবিদের কাজ নয়; এটা নির্মাণ করতে পারেন কোনো শিল্পী। কমিটির বেশির ভাগ সদস্য নেহরুর প্রস্তাবে সায় দিলেন। সত্যজিৎ রায় পেলেন ছবিটি তৈরি করার ভার। সত্যজিৎ রায়ের এই দায়িত্বভার পাওয়াটা আকস্মিক ব্যাপার ছিল না। যৌবনকাল থেকেই রবীন্দ্রনাথের গুণগ্রাহী ছিলেন সত্যজিৎ। সত্যজিৎ অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি, তাঁর কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেননি, শুধু একবার তিনি রবীন্দ্রনাথকে দেখেছিলেন ও তাঁর বক্তব্য শুনেছিলেন শান্তিনিকেতনে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের নান্দনিক দর্শন, সামাজিক মূল্যবোধ বিপুলভাবে প্রভাব ফেলেছিল সত্যজিৎ রায়ের ওপর। সত্যজিৎ রায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাববলয়ের ভেতরের মানুষ—এ কথা বলা হলে তা বাড়িয়ে বলা হবে না বোধ হয়। তাই তথ্যচিত্রের জন্য সেই রবীন্দ্রনাথকেই তুলে আনলেন সত্যজিৎ, যে রবীন্দ্রনাথ তাঁর পরিচিত।

এখন অনেকেই জেনে ফেলেছে, তথ্যচিত্রটি দুভাবে তৈরি হয়েছিল। একটি ছিল বড়, তাতে ছিল ছয়টি অংশ। এই তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছিল ইংরেজি ভাষায়। এখানে স্বয়ং সত্যজিৎ রায় কণ্ঠ দিয়েছিলেন। এই ছবি দেখানো হয়েছিল বাংলায়, আর বাইরের দেশগুলোয়। অন্যটিতে ছিল দুটি অংশ। ভারতের অন্যান্য প্রদেশে দেখানোর জন্য। অনেকগুলো ভাষায় তা নির্মিত হয়েছিল। যে প্রদেশে দেখানো হচ্ছিল, সে প্রদেশের ভাষায় তাতে কণ্ঠ দেওয়া হয়েছিল। আলোচিত হয়েছে বড় তথ্যচিত্রটিই।

তথ্যচিত্রটি শুরু হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু ও শেষকৃত্য দিয়ে। সেখানে নিরাসক্ত ভঙ্গিতে সত্যজিৎ ইংরেজিতে যা বলছেন, তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট কলকাতায় মারা গেছেন একজন মানুষ। তাঁর দেহ পোড়ানো হলো আগুনে। কিন্তু তিনি যে সম্পদ রেখে গেছেন, কোনো আগুনেরই ক্ষমতা নেই, তা পুড়িয়ে দেবে।’ শ্মশানের লেলিহান শিখার জায়গায় এর পর দেখা যায় ভোরের সূর্য, সেটাই প্রতিনিধিত্ব করে রবীন্দ্রনাথের। যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল উদ্‌যাপন কমিটিতে—কে বানাবেন ছবি, সে বিতর্কের গায়ে যেন কালি লেপে দিলেন সত্যজিৎ। ইতিহাসের পথ ধরে না এগিয়ে সূর্যের ছবি তুলে তিনি বলে দিলেন, ‘তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ’। বাঙালি জীবনের সুকঠিন বাস্তবতায় ঠাকুর পরিবারের লড়াইকে টেনে আনলেন। রবীন্দ্রনাথের গল্প বলতে গিয়ে কবির শৈশব থেকে শুরু করেন না সত্যজিৎ, বরং চলে যান তাঁর পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুরের কাছে। দ্বারকানাথ ঠাকুরের গল্প বলে তিনি দর্শক–শ্রোতাকে প্রস্তুত করেন পরের দুই প্রজন্মের গল্প শোনার জন্য। পরের প্রজন্মের জীবনে দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রভাব একটি বড় বিষয়। যদিও একেবারে বিপরীতমুখী ভাবনার অধিকারী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মস্ত প্রভাব ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর, কিন্তু পুরো পরিবারের সংগ্রামী জীবনটা উঠে এসেছে দ্বারকানাথ ঠাকুরের মাধ্যমেই, সে কথা ভুলে গেলে চলবে না।

রবীন্দ্রনাথ তথ্যচিত্রের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীতছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্রীয় সমস্যায় পড়েছিলেন সত্যজিৎ। তথ্যচিত্র তৈরি করতে গেলে অনেক নির্মাতাই এ ধরনের সমস্যায় পড়ে থাকেন। ছবিটিকে প্রাণবন্ত ও সত্য করে তোলার জন্য, চলচ্চিত্রের ভাষা তৈরি করার জন্য এমন কিছু চলচ্চিত্রীয় উপাদান তিনি গ্রহণ করেন, যা ছবিটিকে বিশ্বাসযোগ্য ও উপভোগ্য করে তোলে। ছবির শুরুর দিকের অনেক কিছুই তাই পুনর্নির্মাণ করতে হয়। সেখানে নতুনভাবে অভিনয় করিয়ে ঘটনা তুলে আনতে হয়, তাতে রবীন্দ্রনাথের পরিবার উঠে আসে অনবদ্যভাবে। আর সেই পুনর্নির্মিত সেলুলয়েডের অন্তর ভেদ করে বাজতে থাকে সত্যজিতের প্রায় নিরাসক্ত বর্ণনার সুর। ছবিটি দেখলে যে কেউ এই অসাধারণ ব্যাপারটি লক্ষ্য করবেন। কিন্তু সবাই এই প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাবে না। ছবিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য কখনো কখনো যা করা হয়েছে, তাতে খাদ রয়েছে। যেমন, দ্বারকানাথ ঠাকুর লন্ডনের হাইডপার্কে যাচ্ছেন গাড়িতে চড়ে, সেটা দেখাচ্ছেন সত্যজিৎ, কিন্তু দর্শক দেখতে পাচ্ছে নাটকের পোশাকে গাড়িতে করে একজন চলেছেন পথে, পেছনে প্রজেক্টরে ভেসে উঠছে হাইডপার্ক। এই পুনর্নির্মাণের চিন্তা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র তথ্যের মাধ্যমে বিষয়টা তুলে ধরলে কাজটি সহজ হতো। কিন্তু সত্যজিৎ তো শুধু কাহিনি বর্ণনা করতে চাননি। তিনি তো মূর্ত করে তুলতে চেয়েছেন ঠাকুর পরিবারের যাত্রাপথ। সাধারণ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পথ ধরে সত্যজিতের এই ছবির বিচার হয় না। তথ্যচিত্রের অভ্যাসের বাইরের একটা ব্যাপারই ঘটিয়েছেন তিনি। ধারাবাহিকভাবে জীবন বর্ণনার পথ বেছে না নিয়ে তিনি ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সঙ্গে রবীন্দ্র–জীবন যুক্ত করে তার আবেগীয় বর্ণনা দিয়ে দর্শককে আকৃষ্ট করেছেন।

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন রবীন্দ্রনাথকে জমিদারী রক্ষার জন্য গ্রামবাংলায় পাঠান, তখনকার কোনো ছবিই তো পাওয়া যাচ্ছে না মহাফেজখানায়। সত্যজিৎ এখানেও করলেন পুনর্নির্মাণ। অবাক কাণ্ড হলো, এত বছর পরও সে এলাকার কৃষকের জীবনযাত্রা খুব কম বদলেছে। মনে হতে পারে, রবীন্দ্রনাথের জমিদারিতে তাঁরই উপস্থিতিতে বুঝি ছবি তোলা হলো।

ছবিতে রবীন্দ্রনাথের জীবনের শেষপর্ব যেখানে বর্ণনা করা হচ্ছে, সেখানে মূর্ত হয়ে উঠেছে তৎকালীন সংকট। ফ্যাসিজম, আর নাৎসিজমের অন্ধকারে পৃথিবী তখন নিমজ্জিত। সে সময়ই রবীন্দ্রনাথ তাঁর আশি বছরের জন্মদিন উপলক্ষে লিখলেন ‘সভ্যতার সংকট’। চলচ্চিত্রের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের মতোই সত্যজিৎ রায় তা বর্ণনা করলেন। সাইরেনের শব্দ, মাদ্রিদে ভয়ার্ত মানুষের প্রাণ বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা, গুলিতে অবসিত মানুষের মৃত্যু—এ রকম অসংখ্য নৃশংস দৃশ্য একটার সঙ্গে একটা শুধু বদল হতে থাকে, আর তার সঙ্গে চলদে থাকে সভ্যতার সংকট নিয়ে রবীন্দ্রনাথের লেখা থেকে সত্যজিতের পাঠ। মানুষের প্রতি যে বিশ্বাস রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তার পরাজয়ে তখন তিনি শোকার্ত। কিন্তু পর মুহূর্তেই ভেসে আসে কবির উচ্চারণ, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ, সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করব। আশা করব, মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে।'

এবং তারপর?

এবং তারপর পর্দাজুড়ে ভোরের আকাশ, ধীরে ধীরে সূর্যোদয় হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়েই চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ মূর্ত হয়ে ওঠেন। তথ্যচিত্রটিকে পরিণত করেন নান্দনিক এক শিল্পে।

এই তথ্যচিত্রের পেছনে বিস্তর সময় দিয়েছিলেন সত্যজিৎ। যেকোনো চলচ্চিত্র নির্মাণের চেয়েও বেশি সময় দিয়েছেন। ফিচার ফিল্ম আর তথ্যচিত্র এক নয়, সেটা হয়তো ছবি প্রলম্বিত হওয়ার একটা কারণ, কিন্তু সবচেয়ে বড় কারণ ছিল নির্মাতার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। নির্মাতা ছবিটিকে তৈরি করেছেন `আপন মনের মাধুরি মিশায়ে'।

কতটা সফল হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়? সত্যিই কি এই তথ্যচিত্রে শিল্পের শক্তি ছিল?

অন্য কিছু বলব না। শুধু একটি তথ্য দিয়েই আজকের লেখা শেষ করব।

ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে ছবিটি প্রদর্শিত হয় ১৯৬১ সালের ৪ মার্চ। সেদিন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মন ছিল খুব খারাপ। কাছের এক বন্ধু মারা গেছেন। তাই মন ছিল বিধ্বস্ত। বিধ্বস্ত মন নিয়েই তিনি দেখতে বসেছিলেন ছবিটি। ছবি শেষ হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের মানবিক আত্মবিশ্বাসের মধ্য দিয়ে। বিধ্বস্ত নেহরু যেন তা থেকে প্রাণ খুঁজে পেলেন। এক ঘণ্টা আগের মুমূর্ষু অবস্থা কাটিয়ে উঠলেন তিনি। ফিরে পেলেন আত্মবিশ্বাস।

এর দু মাস পর যখন সত্যজিৎ রায়ের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছিলেন নেহরু, তখন তিনি সত্যজিৎ রায়ের এই অসামান্য সৃষ্টির কথা স্মরণ করেছিলেন শ্রদ্ধাভরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অবশেষে জাস্টিন ট্রুডো-কেটি পেরির প্রেমের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এল, ইন্টারনেটে তোলপাড়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে জাস্টিন ট্রুডো ও কেটি পেরি। ছবি:  এক্স
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে জাস্টিন ট্রুডো ও কেটি পেরি। ছবি: এক্স

দীর্ঘদিন ধরে চলা প্রেমের গুঞ্জনে অবশেষে সিলমোহর পড়ল। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে নিজেদের সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন পপ গায়িকা কেটি পেরি এবং কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও তাঁর স্ত্রী ইউকোর সঙ্গে এক মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়ে এই জুটি তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, কেটি পেরি তাঁর চলমান ‘দ্য লাইফটাইমস ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ স্থগিত রেখে ট্রুডোর সঙ্গে টোকিওতে এই কূটনৈতিক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।

জাস্টিন ট্রুডো কিশিদার সঙ্গে বৈঠকের একটি ছবি এক্স-এ শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আপনাকে দেখে দারুণ লাগলো@kishida 230। ক্যাটি এবং আমি আপনার ও ইউকোর সঙ্গে বসে কথা বলার সুযোগ পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। ফুমিও, আপনার বন্ধুত্বের জন্য এবং আন্তর্জাতিক নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি এবং সবার জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যতের প্রতি আপনার অব্যাহত প্রতিশ্রুতির জন্য ধন্যবাদ।’

পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, ট্রুডো একটি ধূসর স্যুট পরে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রনায়কোচিত রূপে ফিরে এসেছেন। অন্যদিকে, কেটি পেরি সেজেছিলেন সবুজ রঙের দু’টুকরো পোশাক, কালো টাইটস, একটি টার্টলনেক এবং বুট পরে। কিশিদা দম্পতির সঙ্গে ছবি তোলার সময় কেটি পেরিকে ট্রুডোর পেছনে হাত রেখে দাঁড়াতে দেখা যায়। কিশিদা ট্রুডোর পোস্টে মন্তব্য করেন, ‘ধন্যবাদ, জাস্টিন। আপনি এবং কেটি, দু’জনকেই অবকাশের শুভেচ্ছা!’

জাস্টিন ট্রুডো এই পোস্টটি শেয়ার করার সঙ্গে সঙ্গেই ইন্টারনেট জুড়ে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়। একজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী লেখেন, ‘মুক্ত বিশ্বের ইতিহাসে এটি সম্ভবত সবচেয়ে উন্মাদনার একটি ঘোষণা।’ আরেকজন এক্স ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, ‘কেটি পেরি আন্তর্জাতিক কূটনীতি সামলাচ্ছেন। আমার টপ রিস্কস ২০২৫ তালিকায় এটা ছিল না!’

অনেক ভক্তও মজার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। একজন লেখেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, কিন্তু সঙ্গে ছুটির কার্ডের আমেজ।’ অন্য একজন মন্তব্য করেন, ‘খোদার কসম, এটা আমার বিঙ্গো কার্ডে ছিল না।’ এই কূটনৈতিক ঘোষণার মাধ্যমে পেরি ও ট্রুডো জুটি এখন আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটি মহলে নতুন আলোচনার কেন্দ্র হয়ে উঠেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লন্ডনে উন্মোচিত হলো শাহরুখ-কাজলের ভাস্কর্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৩
গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে উন্মোচিত হয় ডিডিএলজের ভাস্কর্য। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে উন্মোচিত হয় ডিডিএলজের ভাস্কর্য। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

বলিউডের ‘রোমান্স কিং’ হিসেবে পরিচিত শাহরুখ খান এবং তাঁর সহ-অভিনেত্রী কাজলের একটি নতুন ভাস্কর্য উন্মোচিত হলো লন্ডনের লেস্টার স্কয়ারে। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে দীর্ঘতম সময় ধরে চলা ব্লকবাস্টার ছবি ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’-এর ৩০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন উপলক্ষে এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে।

বর্ষণমুখর আবহাওয়ার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার ভাস্কর্যটির আনুষ্ঠানিক উন্মোচন করা হয়। এই ভাস্কর্যটি লেস্টার স্কয়ারের ‘সিনস ইন দ্য স্কয়ার’ ট্রেইলের অংশ হিসেবে হ্যারি পটার, প্যাডিংটন এবং ব্রিজেট জোনসের ভাস্কর্যের সঙ্গে যুক্ত হলো।

লন্ডনে ভাস্কর্য উন্মোচনের ফাঁকে শাহরুখ খানের কাছে নববিবাহিত দম্পতিদের জন্য তাঁর নিজস্ব পরামর্শ জানতে চাওয়া হয়। মজা করে জবাব দেন শাহরুখ।

শাহরুখ উত্তর দেওয়ার আগেই অভিনেত্রী কাজল রসিকতা করে বলে ওঠেন, ‘ওঁর সব ছবিই তো বিয়ের আগের প্রেম নিয়ে, বিয়ের পরের প্রেম নিয়ে নয়!’

কাজলের কথায় সম্মতি জানিয়ে শাহরুখ খান হাসতে হাসতে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত, তুমি ছিলে একজন যাকে আমি উপদেশ দিতে পারতাম। কিন্তু বিয়ের পর, তুমি তো এখন নিজের দায়িত্বে চলে গেছ!’ অবশ্য শাহরুখ গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপদেশ দিতে ভোলেননি। তিনি বলেন, ‘ততদিন (বিয়ের আগে) পর্যন্ত, আমার মনে হয় আমি ঠিকই করেছি। আপনাদের রোমান্স থাকতে হবে, গান গাইতে হবে।’ কাজল সঙ্গে সঙ্গে যোগ করেন, ‘এবং অবশ্যই ডিডিএলজে দেখতে হবে।’

ছবিটি সম্পর্কে যশ রাজ ফিল্মসের সিইও অক্ষয় বিধানি এটিকে ‘গৌরবের বিশাল মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেন। অন্যদিকে, হার্ট অব লন্ডন বিজনেস অ্যালায়েন্সের প্রধান নির্বাহী রস মর্গ্যান বলেন, ‘ডিডিএলজে একটি সিনেমাটিক ঘটনা যা প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছে, এবং লন্ডন এই প্রথম ভারতীয় সিনেমার আন্তর্জাতিক দর্শকদের মুগ্ধ করে চলা একটি গল্পকে সম্মান জানাল।’

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করেছেন শাহরুখ খান। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো বিলিয়নেয়ার ক্লাবে প্রবেশ করেছেন। এই ঘটনা তাঁকে আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার এবং টেলর সুইফটের মতো বৈশ্বিক তারকাদের কাতারে নিয়ে এসেছে।

চার বছরের বিরতির পর ২০২৩ সালে চলচ্চিত্রে ফেরেন বলিউড বাদশাহ। সম্প্রতি তাঁর আসন্ন অ্যাকশন ফিল্ম ‘কিং’-এর টিজার উন্মুক্ত হয়েছে। তবে অ্যাকশন ঘরানার আরও ছবি বা পরবর্তী জেমস বন্ড হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রসিকতা করে শাহরুখ জবাব দেন: ‘না। আমার উচ্চারণ সেরকম নয়। আর আমি শেকেন মার্টিনি (বিশেষভাবে তৈরি ককটেল) পছন্দ করি না।’

এদিকে, চলচ্চিত্র জগতের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কারণে সিনেমা হলগুলোতে দর্শক কমে যাওয়া নিয়ে কাজল মনে করেন, এখন দর্শকদের হাতে বেছে নেওয়ার সুযোগ অনেক বেশি। তিনি বলেন, ‘মানুষের এখন সিনেমা হলে যাওয়া বা না যাওয়ার স্বাধীনতা আছে। যখন এত বিকল্প, তখন বেছে নেওয়া কঠিন হয়ে যায়।’

তবে শাহরুখ খান বিশ্বাস করেন, ‘কমিউনিটি ভিউয়িং...সবসময় থাকবে। আমরা একসঙ্গে কোনো জিনিস দেখতে এবং উপভোগ করতে ভালোবাসি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাক্ষস সিনেমায় অভিনয়ের গুঞ্জন নাকচ করলেন ইধিকা

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ইধিকা পাল ছবি : সংগৃহীত
ইধিকা পাল ছবি : সংগৃহীত

শাকিব খানের বিপরীতে ' প্রিয়তমা ' সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয় পশ্চিমবঙ্গের ইধিকা পালের । প্রথম সিনেমাতেই নজর কাড়েন অভিনেত্রী । এ বছর রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়া মেহেদী হাসান হৃদয় পরিচালিত ‘ বরবাদ ' সিনেমায়ও দেখা গেছে তাঁকে । খবর ছড়িয়েছে , মেহেদী হাসান হৃদয়ের নতুন সিনেমায়ও অভিনয় করবেন ইধিকা । এবার তাঁর নায়ক সিয়াম আহমেদ । ‘ রাক্ষস ’ নামের সিনেমায় জুটি হচ্ছেন তাঁরা । অথচ অভিনেত্রী জানালেন ভিন্ন কথা । এমন নামের কোনো সিনেমা নিয়ে তাঁর সঙ্গে নাকি কোনো কথাই হয়নি । রাক্ষস সিনেমায় ইধিকার অভিনয়ের এই গুঞ্জন কয়েক দিন ধরে । ইতিমধ্যে নাকি আলাপও হয়েছে নির্মাতাদের সঙ্গে , এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে । কিন্তু , নতুন এই সিনেমা নিয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করলে ইধিকা জানালেন ভিন্ন কথা । খুদে বার্তায় আজকের পত্রিকাকে ইধিকা লেখেন , “ এখন অবধি এ রকম ( রাক্ষস ) নামের কোনো সিনেমা নিয়ে আমার কোনো কথা হয়নি । ' একই কথা পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারকেও জানিয়েছেন ইধিকা । অভিনেত্রী জানান , সিয়াম আহমেদের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে কোনো কথা হয়নি ।

আনন্দবাজার জানাচ্ছে , ইধিকা না থাকলেও রাক্ষসে সিয়ামের সঙ্গে থাকবেন টালিউড নায়িকা সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় । এর আগে এ সিনেমায় সাবিলা নূরের অভিনয়ের খবর ছড়িয়েছিল । রাক্ষস সিনেমায় দেশ - বিদেশের একাধিক অভিনেত্রীর নাম শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কিংবা নির্মাতার কাছ থেকে আসেনি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা । বরং প্রযোজক শাহরিনা সুলতানা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন , এই সিনেমা নিয়ে বেশ কয়েকজন নায়িকার সঙ্গে কথা হয়েছে । শেষ পর্যন্ত কে থাকছে , সেটা সময় বলে দেবে । রাক্ষসের আগে আবু হায়াত মাহমুদের ‘ প্রিন্স ' সিনেমার নায়িকা হিসেবেও শোনা গেছে ইধিকার নাম । সেই দৃশ্যপটও বদলে গেছে ।

এখন শোনা যাচ্ছে , ইধিকা নয় , টালিউডের আরেক নায়িকা জ্যোতির্ময়ী কুণ্ডুর নাম । তবে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাসনিয়া ফারিণের থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও অন্য কারও নাম ঘোষণা হয়নি এখন পর্যন্ত । জানা গেছে , এ মাসেই শুরু হবে প্রিন্স ও রাক্ষস সিনেমার শুটিং । দুটি সিনেমার বেশির ভাগ শুটিং হবে দেশের বাইরে । সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর রোজার ঈদে মুক্তি পাবে সিনেমা দুটি ।

এ ধরনের গুঞ্জনে অবাক হয়েছেন তিনি । গত বছরও শোনা গিয়েছিল ‘ সিকান্দার ' নামের একটি সিনেমায় জুটি হচ্ছেন সিয়াম - ইধিকা । সেই খবরও শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনই থেকে গেছে । এদিকে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রকাশিত হলো শিরোনামহীনের ‘এই অবেলায় ২’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
‘এই অবেলায় ২’ ও ‘রিমেম্বার মি’ গানের পোস্টার
‘এই অবেলায় ২’ ও ‘রিমেম্বার মি’ গানের পোস্টার

গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশ পেয়েছিল শিরোনামহীন ব্যান্ডের ‘এই অবেলায় ২’ গানের টিজার। তবে স্পনসর জটিলতায় আটকে ছিল গানটি। অবশেষে গতকাল প্রকাশ পেল শিরোনামহীনের বহুল প্রতীক্ষিত এই অবেলায় গানের দ্বিতীয় পর্ব। এটি শিরোনামহীনের পঞ্চম অ্যালবাম বাতিঘরের শেষ গান।

‘যদি কোথাও/ কোনো দিন দূরে সরে যাই/ নিসর্গের আঁধারে হারাই/ সমুদ্রের ঢেউ দেখে আমায় রেখো মনে’—এমন কথার গানটি লিখেছেন শিরোনামহীনের দলনেতা জিয়াউর রহমান, সুর করেছেন ব্যান্ডের ড্রামার কাজী আহমাদ শাফিন। ভিডিও নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। গেয়েছেন শেখ ইশতিয়াক। শুটিং হয়েছে থাইল্যান্ডের কো খাম, কো মাখ ও কো চ্যাং আইল্যান্ডে। মডেল হয়েছেন নীল হুরেজাহান।

২০১৯ সালের মে মাসে ‘এই অবেলায়’ দিয়ে নতুন করে জেগে উঠেছিল ব্যান্ড শিরোনামহীন। নতুন ভোকাল নিয়ে ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করতে যখন হিমশিম খাচ্ছিল দলটি, তখন এই অবেলায় গানটি ছিল শিরোনামহীনের জন্য অক্সিজেনের মতো। ছয় বছর পর প্রকাশ পেল এ গানের সিকুয়েল এই অবেলায় ২।

শিরোনামহীনের ইউটিউব চ্যানেলে বাংলার পাশাপাশি এই অবেলায় প্রকাশ পেয়েছে ইংরেজি ভাষায়। এই ভার্সনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘রিমেম্বার মি’। ইংরেজি ভার্সন নিয়ে শিরোনামহীনের দলনেতা জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘এই অবেলায় গানটি বিদেশি ভাষার মানুষও পছন্দ করেছে। ইউটিউব চ্যানেলে অনেক মন্তব্য দেখেছি ইংরেজি, স্প্যানিশসহ বিভিন্ন ভাষায় লেখা, “আমি গানের ভাষা বুঝতে পারছি না। কিন্তু গানটির সুর খুব ভালো লাগছে।” তাই এই অবেলায় ২-এর ইংরেজি ভার্সন করা। আশা করছি, বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভার্সনটাও দেশ-বিদেশের শ্রোতাদের মন জয় করতে পারবে। সেটা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগ আরও হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত