Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

রাবিতে ছাত্ররাজনীতির মডেল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঠিক করবেন

অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২৫তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। সম্প্রতি তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইলিয়াস শান্ত।

ইলিয়াস শান্ত
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ১৯

প্রশ্ন: জুলাই-আগস্টের সেই উত্তপ্ত দিনগুলোতে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি কেমন ছিল, শুরুতে সে সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব: জুলাই-আগস্টে দেশের অন্য বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি যেমন ছিল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও অনেকটা তেমনই ছিল। তবে এখানে কিছু ভিন্নমাত্রাও ছিল। আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকে বিভিন্ন ফর্মে এখানে অংশ নিয়েছেন। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তাঁদের অসম্ভব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীষণ দৃঢ়তা দেখেছি। এককথায় এটা অত্যন্ত উদ্দীপনামূলক একটা সময় ছিল। একই সঙ্গে তাঁদের যে সাহসিকতা... তাঁরা খুব কঠিন একটা সময়ের মধ্যে ছিলেন। আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসে তৎকালীন সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের প্রচণ্ড আধিপত্য ছিল। তাঁদের হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তবুও শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত সাহস নিয়ে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। একই সঙ্গে শিক্ষকদের একটা অংশও এই অন্যায়-অনাচার এবং শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাঁদের সংখ্যা যদিও খুব বেশি ছিল না... তবে আমি বলব এসব শিক্ষক শুধু এই জুলাই-আগস্ট নয়, অনেক লম্বা সময় ধরে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। সামগ্রিকভাবে বলব, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এবং আরও ব্রডলি বললে রাজশাহী শহরের স্কুল-কলেজ, রুয়েট-মেডিকেল কলেজসহ সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে এ অঞ্চলের হয়ে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন।

প্রশ্ন: আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কতজন হতাহত হয়েছেন?

সালেহ হাসান নকীব: তৎকালীন সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের হামলা এবং একই সঙ্গে সে সময়ের পুলিশ বাহিনীর যে তৎপরতা; বলতে গেলে তারা অনেকটাই একে অপরের সহায়ক ভূমিকায় ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের হামলা হয়েছে। তাঁরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরে ডজনখানেক শিক্ষার্থী জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে হতাহত হয়েছেন।

প্রশ্ন: কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের এ সংগ্রাম আপনি কীভাবে দেখছেন?

সালেহ হাসান নকীব: এটা হওয়ারই ছিল। তবে ঠিক কোন ফর্মে এটা পরিণতি লাভ করবে, সে ব্যাপারে অস্পষ্টতা ছিল। আসলে বাংলাদেশে গত দেড় যুগ ধরে যে ধরনের শাসন চলছিল, তাতে জনগণের একটি বড় অংশ নানানভাবে নিগৃহীত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে, অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন, অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ওপর জেল-জরিমানা-মামলা এগুলো সমানতালে চলেছে। ফলে যাঁদের বুদ্ধি-বিবেক ছিল এবং যাঁরা ন্যায়-অন্যায়ের ভেদাভেদ করতে পারতেন, তাঁদের ভেতরে একধরনের অসন্তোষ সব সময় ছিল। স্পেশালি শেষ যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, যেটা কোনো মানদণ্ডেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা যায় না; সেগুলোও মানুষের ভেতরে জমে থাকা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শিক্ষার্থীরা শুরু করেছিলেন কোটা নিয়ে। এরপর এটা ধাপে ধাপে এক দফার আন্দোলনে পৌঁছে যায়। মূলত যেটা হয়েছে, যখন এ দেশের মানুষ দেখল, আমাদের বাচ্চাদের একেবারে নির্মমভাবে রাস্তাঘাটে হত্যা করা হচ্ছে, তখন তাঁদের ভেতরে পুঞ্জীভূত যে অভিযোগ ও ক্ষোভ ছিল, সেটার একটা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যখন একবার মানুষ ভয়টা কাটিয়ে রাস্তায় নেমে যায়, তখন আসলে তাদের দমিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আমি যেটা বলব, এ বিপ্লবকে যদি কেউ বিশ্লেষণ করতে চান, তাহলে তাঁর এটা ভুললে চলবে না, এ ঘটনাটা আসলে জুলাই-আগস্টের ঘটনা নয়। এটার পেছনে অনেক ইতিহাস আছে এবং সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। যখন শিক্ষার্থীদের ডাকে জনতা রাস্তায় নেমে এলো, তখন এটা একটা চূড়ান্তরূপ লাভ করে। তবে এর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে।

প্রশ্ন: এখন পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে রয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কোটাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা কী?

সালেহ হাসান নকীব: পোষ্য কোটা নিয়ে আমি ১০-১৫ বছর ধরে চিন্তাভাবনা করছি। তারও আগে, আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখনো এই কোটা নিয়ে ভেবেছি। আমি এই পোষ্য কোটা রাখার পেছনে কোনো শক্তিশালী নৈতিক ভিত্তি অথবা যুক্তি দেখি না। তারপরও যেটা বাস্তবতা, সেটা হচ্ছে এ কোটাব্যবস্থা এখানে চলমান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন যে দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছেন, আমি আমার একেবারে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে মনে করি তাঁরা যে কথাবার্তা বলছেন সেগুলোর পেছনে শক্তিশালী যুক্তি আছে। আমি মনে করি, তাঁরা অযৌক্তিক কোনো বার্তা বলছেন না।

প্রশ্ন: আমরা শুনেছি, সাবেক একজন উপাচার্য তাঁর ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এই কোটা প্রথা চালু করেছিলেন। সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত হলো, পরবর্তীকালে নাকি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ কোটা প্রথায় রাবিকে অনুসরণ করেছে...

সালেহ হাসান নকীব: এই কথা বাজারে চালু আছে। তবে এটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। আসলে বিভিন্ন ফর্মে এই ধরনের কোটা সম্ভবত বাংলাদেশে আরও আগে থেকেই ছিল। এটা শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, বিভিন্ন ফর্মে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছিল। হতে পারে যেটা, এটাকে একটা কাঠামোবদ্ধ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একজন উপাচার্য এরকম ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু সম্ভবত আপনারা খতিয়ে দেখলে জানতে পারবেন, এটা আগে থেকেই ছিল। কাগজে-কলমে এটাকে একটা জায়গায় নিয়ে আসার বিষয়টা হয়তো পরে ঘটেছে, কিন্তু জিনিসটা আগেই ছিল।

আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, একজন উপাচার্য এ কোটাপ্রথা চালু করেছেন বলে যে একধরনের রটনা আছে, এই রটনা যাঁরা শুরু করেছেন তাঁরা নিজেরাও কখনো পোষ্য কোটা বাতিল করেননি। বরং তাঁদের অনেকে নিজেদের সন্তানদের জন্য এই পোষ্য কোটার সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। ব্যাপারটা আসলে ঠিক যেভাবে বলা হয়, ততখানি সরল না। তবে আমি যেটা বলছিলাম, আমার নিজের বুদ্ধি-বিবেকের জায়গা থেকে, ন্যায়পরাণয়তার জায়গা থেকে এটা থাকার জন্য শক্তিশালী কোনো যুক্তি কখনো খুঁজে পাইনি।

প্রশ্ন: আপনি উপাচার্য হওয়ার আগে পোষ্য কোটা নিয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন। এখন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রনেতারাও এ কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। পোষ্য কোটা বাতিল করা যাচ্ছে না কেন?

সালেহ হাসান নকীব: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। এই জায়গাতেই আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার ভেতরে আছি। আমি একেবারে অকপটে স্বীকার করছি, এই মুহূর্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সমস্যার মধ্যে রয়েছি। তার কারণ হচ্ছে, প্রায় ৫০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই পোষ্য কোটার সুবিধাভোগী। এই সুবিধা তাঁরা এত দীর্ঘ সময় ধরে চর্চা করেছেন যে, এখন এটাকে পুরোপুরি তুলে দেওয়াটা তাঁদের অনেকের কাছে খুব বড় একটা ধাক্কা বলে মনে হচ্ছে।

সম্প্রতি আমি আমাদের শিক্ষক সমিতির কাছ থেকে একটা চিঠি পাই। যেখানে বলা হয়েছে, সর্বসম্মতিক্রমে পোষ্য কোটা যে শুধু থাকবে তাই নয়, আমরা যে তিন শতাংশের কথা বলেছিলাম এটাকে যেন ৫ শতাংশে নিয়ে গিয়ে অবিলম্বে কার্যকর করা হয়। ফলে বুঝতেই পারছেন, এই যে নানাবিধ ইন্টারেস্ট এবং নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা, এগুলো আমাদের একটা সিদ্ধান্তে যেতে বা ঐকমত্যে পৌঁছাতে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।

আমি যেটা ফিল করছি, আমার ওপর যে চাপ রয়েছে; সেটা হচ্ছে, যেহেতু আমি এই মুহূর্তে প্রশাসনের দায়িত্বে আছি... এখানে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি, আমি কী মনে করি, সেটা এক জায়গা। একই সঙ্গে পুরো প্রতিষ্ঠানটাকে কী করে সচল রাখা যায়; শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠন এবং অন্য দিকগুলোকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়; এটাও আমার চিন্তা করতে হচ্ছে। কাজেই পোষ্য কোটার স্টেকহোল্ডারদের ভেতরে এখন যে একটা ঐকমত্য দরকার, সেটা স্পষ্ট। এখন এ ঐকমত্য কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং একই সঙ্গে মতবিরোধের পার্থক্যটা কীভাবে আরও কমিয়ে নিয়ে এসে একটা সুন্দর সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়, সেটা নিয়েই আলোচনা চলমান রয়েছে। এটা নিয়ে অনেকে দিনরাত কাজ করছেন। কাজ চলছে। আমরা আশা করছি, একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারব, যেটা হয়তো ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।

প্রশ্ন: ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে আপনাদের পদক্ষেপ অভিভাবক ও ভর্তি-ইচ্ছুকদের মধ্যে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতিতে এর বাইরে আর নতুন কোনো পরিবর্তন আসছে কি না?

সালেহ হাসান নকীব: আমার কাছে এটাকেই বড় পরিবর্তন বলে মনে হয়েছে। এর আগে আমরা কখনো বিকেন্দ্রীকরণে যাইনি। এই প্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তার পরীক্ষাগুলো বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে নেওয়ার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটার বাস্তবায়ন আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। পরীক্ষাগুলো সুন্দরভাবে শেষ করতে হবে। এটার চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। আপনারা জানেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। এর কারণও আপনাদের অজানা থাকার কথা নয়। শিক্ষক নিয়োগে যেসব ভয়ংকর অনিয়ম হয়েছে, সেটার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রক্রিয়াই বিতর্কিত করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে যেটা হয়েছে, আমাদের প্রবীণ শিক্ষকরা অবসরে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু আমরা তাঁদের রিপ্লেসমেন্ট পাচ্ছি না। কাজেই এটা নিয়েও খুব সতর্কভাবে এগোচ্ছি, আমরা একটা নতুন পদ্ধতিতে যাব। সেখানে আমাদের যাতে ত্রুটি-বিচ্যুতি না হয় এবং যেন সুনামের সঙ্গেই এ পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি। সম্প্রতি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একটা সভা হয়েছে। সেখানে পোষ্য কোটা, ভর্তি পরীক্ষাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমাদের যে সিদ্ধান্ত; সেটা হচ্ছে, ভর্তি পরীক্ষার যে তারিখগুলো নির্ধারণ করেছিলাম, এটাকে টার্গেট করেই সামনে এগিয়ে যাব।

প্রশ্ন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নিয়ে একটা আলোচনা হয়েছে। দলীয় রাজনীতিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অংশগ্রহণ নিয়েও বিধিনিষেধ আরোপের কথা শোনা যাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলীয় রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে?

সালেহ হাসান নকীব: এখানে আমি যে বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছি; সেটা হচ্ছে, আমার শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে দেখতে চায়। ইনফ্যাক্ট আপনারা দেখেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে এমন একটা ভিউ তৈরি হয়েছিল; ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের মতো কথাও উঠেছে। পরে আমি জেনেছি, এখানে কিছু কৌশলগত ব্যাপার ছিল।

আসল কথা হচ্ছে, ছাত্ররাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলেছে, এই ধরনের অপরাজনীতি আমি মনে করি না আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসার সুযোগ আছে। রাজনীতি নিয়ে আমার ছাত্র-ছাত্রী এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই একটা সুষ্ঠু ধারা ঠিক করবেন, যেটা মেজরিটির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সে ধরনের একটি ধারায় কীভাবে আসা যায়, সেটা নিয়ে কাজ চলমান আছে। একই সঙ্গে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে বারবারই বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করেছি। তাঁদের পরামর্শগুলো আমরা একসঙ্গে করে বিচার-বিশ্লেষণ করছি। আমাদের এই কাজ এত দিনে শেষ হয়ে যেত, যদি আমরা পোষ্য কোটা নিয়ে এখন যে ডামাডোলের মধ্যে রয়েছি, সেখানে না পড়তাম।

কথা হচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ফর্মে রাজনীতি হবে অথবা হবে না; সেটা আমার ছাত্র-ছাত্রীরা এবং যাঁরা এর সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট তাঁরাই ঠিক করবেন। আর কী হবে না, সেটা আমি বলতে পারি। সেটা হলো সিট-দখল, সিট-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-নিপীড়ন, আধিপত্য বিস্তারের যে প্রবণতা; এই জিনিসগুলোর বিরুদ্ধে আমরা সবাই একমত হব। এই জিনিসগুলো আর কখনো ক্যাম্পাসে ফিরতে দেব না। এই বিষয়ে আমাদের খুবই দৃঢ় একটা অবস্থান থাকবে। ছাত্ররাজনীতির নামে এ ধরনের যে গুন্ডামি এবং অপরাজনীতি চলেছে, সেটা আর ক্যাম্পাসে আসতে দেব না।

প্রশ্ন: ১৯৮৯ সালের পর থেকে নানা কারণে রাকসু নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও করোনার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাবির এখন পরিকল্পনা কী?

সালেহ হাসান নকীব: আমার দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে রাকসু নির্বাচন টপ-প্রায়োরিটিতে আছে। কারণ, শিক্ষার্থীদের বহু কথা থাকে। সেই কথাগুলো একটা নির্বাচিত ভ্যালিড বডির কাছ থেকে এলে বিশ্ববিদ্যালয় চালানোও সহজ হয়। জবাবদিহির ব্যাপারটাও নিশ্চিত হয়। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাঁদের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। এখানে তাঁদের দায়বদ্ধতা থাকবে এবং তাঁরা আমাদের জানাবেন ছাত্রসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা; তাঁরা কী চান। আমি মনে করি, একটা সুস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই প্রক্রিয়া খুবই জরুরি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে এটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একটা হোমওয়ার্ক করা দরকার। সে কাজটাই রাকসুর ট্রেজারার করে যাচ্ছেন। আমাদের ইচ্ছা, ইনশাআল্লাহ শিক্ষার্থীদের রাকসু দিতে পারব।

প্রশ্ন: রাকসু নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে?

সালেহ হাসান নকীব: আমি চেয়েছিলাম দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের মতো একটা জায়গায় পৌঁছে যাব। তবে এর থেকে কিছু কম-বেশি সময় লাগতে পারে। কিন্তু খুব কম-বেশি হবে বলে মনে হয় না। আমাদের সবার যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে এটা করতে পারব।

প্রশ্ন: প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে তরুণ প্রজন্ম মাদকাসক্তি, অনলাইন জুয়া এবং অন্যান্য নেশার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একাডেমিক বা কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস চালু করা যায় কি না?

সালেহ হাসান নকীব: আপনারা জেনে খুশি হবেন, এই মুহূর্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে-নিঃসংকোচে কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস এবং খেলাধুলার যে কার্যক্রম, এগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি দুই বিভাগের খেলা নিয়ে ক্যাম্পাসে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। এটা নিয়ে আমি খুবই মর্মাহত; আমাদের শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণ কোনো কোনো সময় সীমা ছাড়িয়ে যায়। তবে এখন আবার খেলাধুলা পুরোদমে চলছে। প্রতিদিনই কালচারাল, এক্সট্রা-কারিকুলার এবং কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি সারা দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে। আমি এটাকে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে আশাবাদী। এর জন্য যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, সেটা করব। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি সুন্দর করতে হয়, তাহলে এ ধরনের অ্যাক্টিভিটির কোনো বিকল্প নেই। আমরা চাই, ছেলেমেয়েরা পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে এখান থেকে বেরিয়ে যাক।

প্রশ্ন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা এবং এখান থেকেই ১৯৯৮ সালে কর্মজীবন শুরু করেছেন। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে আরও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনার শিক্ষাজীবন ও উজ্জ্বল কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

সালেহ হাসান নকীব: নিজের সম্পর্কে বলাটা খুব একটা শোভা পায় না। এটা নিয়ে কথাবার্তা অন্যরাই বলবেন। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে পদার্থবিজ্ঞানকে ভালোবেসেছিলাম। এই ভালোবাসাই আমার জীবনের অন্যতম বড় শক্তির উৎস। আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করি, যেটা এই মহাবিশ্বের যত বড় বড় রহস্য এবং যত চমকপ্রদ ঘটনা আছে, সবকিছুর সঙ্গে জড়িত। আমার ফিজিক্স পড়তে, জানতে এবং এটা নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। এটা আমার জীবনের খুব বড় ভালোবাসার জায়গা। নিজকে পরিচয় দেওয়ার সময় বলি, আমি ছাত্র। কারণ, ছাত্রত্বের চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। ডিগ্রি, পুরস্কার, সাইটেশন, নাম্বার অব পাবলিকেশন্স, দেশে-বিদেশে কতটুকু নাম আছে না-আছে; ছাত্রত্ব এ সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। কারণ একজন ছাত্র সব সময় শেখে। এই শেখার আনন্দের চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু নেই।

আমি কতটুকু কী করেছি, সেটা আমার ফিল্ডে যাঁরা কাজ করেন তাঁরাই মূল্যায়ন করবেন। আমি যত দিন বেঁচে আছি, এই কাজের ভেতরেই থাকতে চাই।

প্রশ্ন: সুপারকন্ডাক্টিভিটি এবং কম্পিউটেশনাল ফিজিক্স নিয়ে আপনার গবেষণার আগ্রহ। এ বিষয়গুলো কীভাবে জনকল্যাণে ভূমিকা রাখছে?

সালেহ হাসান নকীব: সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে যদি বলি, হাই-টেম্পারেচার সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে ২৮-২৯ বছর কাজ করছি। আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে, হয়তো সামনের দশকে দেখতে পাব, সুপারকন্ডাক্টিভিটি কী করে সমস্ত পৃথিবীর প্রযুক্তির ওপর তার দখলটা নিয়ে আসছে।

এখন আমরা বাস করি সেমিকন্ডাক্টরের যুগে। এই যে চিপ, মাইক্রোচিপ; এসব ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস দাঁড়িয়ে আছে সেমিকন্ডাক্টিং ইন্ডাস্ট্রির ওপর।

সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে আমাদের যে কাজ, সে কাজগুলো যদি একেবারে মার্কেট লেভেলে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এ জগতের চেহারা অনেকখানি পাল্টে যাবে। কারণ অতি পরিবাহীর যে অদ্ভুত সব ফিজিক্যাল প্রোপার্টিজ আছে, তাতে এখন আমরা যে সংকটগুলোর মধ্যে আছি, এখানে সবচেয়ে বড় সংকট হলো এনার্জি ক্রাইসিস। শক্তির একটা সংকট। তেল-গ্যাস এগুলো পুরিয়ে যাবে। ফসিল ফুয়েল পরিবেশের ওপর বিরূপ ভূমিকা রাখে। যদি সুপারকন্ডাক্টিং পাওয়ার সিস্টেম নিয়ে আসা যায়, তাহলে আমরা এমন অনেক বড় বড় ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখতে পাব। এ ছাড়া শুধু ট্রান্সমিশন বা ম্যাটল্যাবের মতো ব্যাপার না, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের কথা বলি, কিউবিটের কথা বলি; এসবের সঙ্গেও সুপারকন্ডাক্টিভিটি প্রযুক্তি ভীষণভাবে জড়িত। সুপারকন্ডাক্টরটাকে আরেকটু ইউজার ফ্রেন্ডলি করতে পারলে তথ্যপ্রযুক্তির জায়গা থেকেও একটা বড় বিপ্লব ঘটে যাবে।

আর কম্পিউটেশনাল ফিজিকসে যেটা করি, সেটা হলো, ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন। আপনি কোনো একটা বিষয় ল্যাবে তৈরি না করে, ফিজিকস ব্যবহার করে এবং কম্পিউটেশন করে বিভিন্ন প্রপার্টি প্রেডিক্ট করতে পারেন। এর ফলে প্রস্তুতকারকরা আগে থেকেই একটা তথ্য পান যে কোন কাজ কোন ধরনের ম্যাটেরিয়াল দিয়ে এবং কোন ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি করা যায়। এই কাজগুলো আমরা করি। কাজেই এগুলো সব জীবনঘনিষ্ঠ। এগুলোর অনেক প্রয়োগ আছে।

অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। ছবি: সংগৃহীত
অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশনের র‌্যাংকিং প্রকাশিত হয়েছে। এ তালিকায় ১ হাজারের মধ্যে আছে দেশের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। এই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাবির অবস্থান ১ হাজার ১ থেকে ১ হাজার ২০০-এর মধ্যে। র‍্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

সালেহ হাসান নকীব: র‍্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে শিক্ষা কার্যক্রমকে উন্নত করার কোনো বিকল্প নেই। আমরা বারবার গবেষণার কথা বলি; কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, আমাদের যে গ্র্যাজুয়েটরা বের হবেন, তাঁরা যেন ভালো ট্রেনিং নিয়ে বের হন। যদি আপনি সাসটেইনেবল র‍্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে চান, তাহলে পঠন-পাঠন ও গবেষণা; প্রত্যেকটি জায়গাতে গুরুত্ব দিতে হবে। কোর্স কারিকুলামকে আধুনিক দুনিয়ার সঙ্গে মিল রেখে উন্নত করা, গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো এবং যাঁরা যোগ্য তাঁদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা বারবার যে ভুলটা করে আসছি সেটা হলো, যোগ্য মানুষগুলোকে ঠিক জায়গাতে নিয়ে আসতে পারিনি। এর ফলে যেটা হয়েছে, হয়তো বরাদ্দ দিয়েছি, কিন্তু কাকে দিয়েছি, কতটুকু দিয়েছি; যাঁকে দিয়েছি তিনি এই বরাদ্দের কতটুকু সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারবেন, এই জায়গাগুলো দেখিনি। আমি বলব, বরাদ্দ আরও দরকার। ক্লাসরুমের শৃঙ্খলা এবং কোর্স কারিকুলাম আধুনিকায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হব। আসলে শিক্ষার্থীরা যেভাবে জীবনযাপনের মাধ্যমে লেখাপড়া করেন, এই সংকটের মধ্যে তাঁরা যেটুকু করেন, সেটাও কম নয়। হলের এই পরিবেশ, এই খাবার; এরপরও তাঁরা যেটুকু করছেন, সেটারও প্রশংসা করতে হবে।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

সালেহ হাসান নকীব: বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি বহুতলবিশিষ্ট ভবনের নির্মাণকাজ চলমান। এই কাজও জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রায় থেমে গিয়েছিল। সেটাকে আবার সচল করা হয়েছে। বুঝতেই পারছেন, একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর কাজ থেমে যাওয়াটা কীসের ইন্ডিকেশন। আসলে গণ-অভ্যুত্থান হলে একটি হলের নির্মাণকাজ থেমে যাবে; এমন তো হওয়া উচিত না। নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিল বলেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেগুলো আবার সচল করেছি। এখন অনেক বড় একটা একাডেমিক ভবনের কাজ প্রায় অর্ধেক হয়ে পড়ে আছে। এই বিষয়গুলোর ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরেও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে, যেগুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে খুব শিগগির বসব। এই মুহূর্তে তিন ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা দিতে পেরেছি। এটাকে অন্তত দ্বিগুণ করার একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। কবে সবাইকে আবাসন দিতে পারব জানি না। কিন্তু এই মুহূর্তে আবাসনের যে সুবিধা রয়েছে, সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। এ ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। কাজ চলমান রয়েছে।

প্রশ্ন: আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খাবারের মধ্যে বিভিন্ন সময় নানা কিছু পাওয়া যায়। কীভাবে খাবারের মানে উন্নতি করা যায়?

সালেহ হাসান নকীব: খাবারের মান উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বাজেট। আমাদের উত্তরবঙ্গের হলগুলোতে যেসব শিক্ষার্থী থাকেন, তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশের পক্ষে উচ্চমূল্য দিয়ে ডাইনিং চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে যে বাজেটে এটা চলছে, তাতে আমাদের ভর্তুকি ছাড়া খুব ভালো কিছু আইটেম রাখাও সম্ভব নয়। আবার এই মুহূর্তে ভর্তুকির জন্য কোনো অ্যালোকেশনও নেই।

আমাদের যে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আছে, সেটাকে সচল করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে সেখানে আমিও একটা আবেদন রাখতে চাই। আমাদের লাখ লাখ অ্যালাইমনাই পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। তাঁরা সবাই মিলে যদি একটু করেও কনট্রিবিউট করেন, তাহলে অন্তত আমাদের শিক্ষার্থীদের তিনবেলা খাবারের মান নিয়ে অত চিন্তা করতে হয় না। অনেক পথ আছে, একটা হচ্ছে ভর্তুকির জন্য আবেদন করা। যেটার ব্যাপারে আমি খুব আশাবাদী বলব না, কিন্তু আমাদের যাঁরা অ্যালামনাস আছেন, তাঁদের এখানে কনট্রিবিউট করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তাঁদের এগিয়ে আসা উচিত।

অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। ছবি: সংগৃহীত
অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে? বিগত সময়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।

সালেহ হাসান নকীব: প্রত্যেকটি ফ্যাকাল্টির গবেষণার ধরন আলাদা। কৃষি অনুষদে যে গবেষণাগুলো হচ্ছে, সেটা মাটি ও মানুষের খুব কাছাকাছি। তারা উন্নত জাত, গবাদি পশু পালন; এগুলো নিয়ে মিনিংফুল কাজ করছে। এই মুহূর্তে হাঁস-মুরগির টিকা নিয়ে একটা বড় প্রজেক্ট চলছে। ফিজিকস এবং কেমিস্ট্রি বিভাগে ন্যানো পাবলিকেশন, থিউরিটিক্যাল কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিকস; এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস যে বিভাগগুলো আছে, সেখানে সাপের বিষ, টক্সিসিটি, ক্যানসার ড্রাগ—এসব নিয়ে অনেক গবেষক কাজ করছেন। ফিশারিজ বিভাগও খুব তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করছে। ইঞ্জিনিয়ারিং যে ফ্যাকাল্টি আছে, তারা বিগ ডেটা অ্যানালাইসিস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিভিন্ন অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট; এগুলো নিয়ে কাজ করছে। কলা ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদেও আমাদের দেশের বিভিন্ন সমস্যা, আবাসন, জলবায়ু; এগুলো মানুষের ওপর কী ইম্প্যাক্ট ফেলছে সে-সংক্রান্ত কিছু প্রজেক্ট চলছে। সামাজিক সমস্যা, নারী নির্যাতন; এগুলো নিয়েও কাজ হচ্ছে। কাজ হচ্ছে, কিন্তু এ কাজের পরিমাণ আরও বেশি হওয়া উচিত। যেটুকু হচ্ছে, সেটুকু আমি মনে করি না পর্যাপ্ত। আমরা যদি একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে চাই, তাহলে কাজের গুণগত মান এবং পরিমাণ সবই বাড়াতে হবে।

প্রশ্ন: শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গবেষণার জন্য যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। গবেষণার জন্য বরাদ্দ আরও বাড়ানো সম্ভব কি না?

সালেহ হাসান নকীব: এটার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। সম্প্রতি আমি এবং আমাদের হিসাব শাখার পরিচালক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। গবেষণার ব্যাপারে একটা খসড়া সেখানে দিয়ে এসেছি। ইউজিসির মিটিংয়েও গবেষণা বাজেট বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। কথা হচ্ছে, আমাদের এই প্রশাসনের বয়স মাত্র সাড়ে তিন মাস। এটা খুব অল্প সময়। কিন্তু এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছি। কিছু আশ্বাসও পেয়েছি। বাকিটা সময়ই বলবে, কতটুকু সাপোর্ট নিয়ে আসতে পারব।

আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।

সালেহ হাসান নকীব: আজকের পত্রিকার জন্য শুভকামনা রইল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সমুদ্রের বাতাসে স্বাস্থ্যের বার্তা

ক্যাম্পাস ডেস্ক 
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৫
সমুদ্রের বাতাসে স্বাস্থ্যের বার্তা

কক্সবাজারের সোনারপাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়কে সম্প্রতি এক বর্ণাঢ্য ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং বিদেশ থেকে মোট ৫০০ জন দৌড়বিদ এই আয়োজনে অংশ নেন।

ভোর ৬টায় উখিয়ার সোনারপাড়া বিচ পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে দৌড়টি শেষ হয় সকাল ৭টায় তারকা মানের হোটেল অর্কিড ব্লুতে। পুরুষ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হন মোহাম্মদ সায়েদ (০১৫৯), প্রথম রানারআপ তারেক (০৪৫৬) এবং দ্বিতীয় রানারআপ আশিক (০১৬০)। নারীদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন বিদেশি প্রতিযোগী জোহানা (০২৩৯), প্রথম রানারআপ আভা (০০৬৫) এবং দ্বিতীয় রানারআপ কুজো (০০৮৭)।

ম্যারাথন আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাসিঘর ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন উপদেষ্টা এ এইচ সেলিম উল্লাহ, প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিন সিকদার, উখিয়া শাখার সভাপতি পিএম মোবারক, ইনস্টিটিউশনাল অ্যাফেয়ার্স উইংয়ের সিডিসিও শাইফুল ইসলাম শিহাব, উবায়েদ উল্লাহ শুভ, শাকিবুল ইসলাম, সাইয়েদ মোবারক, মেহেদী হাসান, শাহরিয়ার তানভীর রিফাত, আর জে রাফি, আবুল কাশেমসহ সংগঠনের অন্য সদস্যরা।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইয়াসিন সিকদার বলেন, ‘বিপুল সাড়া পাওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখা এবং স্বাস্থ্যসচেতন হওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা।’

ম্যারাথনের সমাপ্তির পর অংশগ্রহণকারীরা আরও এরূপ আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। আয়োজকেরা জানান, আগামী বছরও তাঁরা একটি নতুন ম্যারাথন আয়োজনের চেষ্টা করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এআইইউবিতে সাইবার গেমিং ফেস্ট

ক্যাম্পাস ডেস্ক 
এআইইউবিতে সাইবার গেমিং ফেস্ট

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (এআইইউবি) কম্পিউটার ক্লাবের (এসিসি) আয়োজনে এবং অফিস অব স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের সহযোগিতায় এআইইউবি সাইবার গেমিং ফেস্ট ২০২৫ সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চার দিনব্যাপী এই আয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী অংশ নেন।

উদ্বোধনী ও বিভিন্ন পর্বের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এআইইউবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মঞ্জুর এইচ খান, অফিস অব স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের বিশেষ সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক অভিজিৎ ভৌমিক, সহকারী অধ্যাপক এবং বিশেষ সহকারী মো. মাজেদ-উল-হক এবং প্রভাষক ও বিশেষ সহকারী এস এম আবদুল্লাহ শাফি।

অনলাইন ও অন-ক্যাম্পাস প্রতিযোগিতার সমন্বয়ে আয়োজিত এই উৎসবে এআইইউবি ক্যাম্পাস পরিণত হয় এক প্রাণবন্ত ও প্রতিযোগিতামূলক গেমিং অঙ্গনে। পাবজি মোবাইল প্রতিযোগিতার অনলাইন কোয়ালিফায়ার পর্বে ৫১টি দল অংশ নেয়। সেখান থেকে ৩২টি দল সেমিফাইনালে এবং পরবর্তী সময়ে ১৬টি দল ক্যাম্পাস ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। চূড়ান্ত দিনে অনুষ্ঠিত চারটি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ শেষে ব্ল্যাকবিয়ার্ড পাইরেটস চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

ভ্যালোরান্ট বিভাগে অনলাইন লোয়ার-ব্র্যাকেট পর্ব ও ক্যাম্পাসে ল্যান ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। লোয়ার-ব্র্যাকেট থেকে উঠে এসে অলস্টারস দল গ্র্যান্ড ফাইনালে ন্যাক্সআর ই-স্পোর্টসের মুখোমুখি হয়। তিন ম্যাচের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে শেষ পর্যন্ত অলস্টারস চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত করে।

এ ছাড়া উৎসবে মোবাইল লেজেন্ডস: ব্যাঙ ব্যাঙ (এমএলবিবি), এফসি ২৫ এবং ই-ফুটবল প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়। এমএলবিবি বিভাগে ভাইপার স্ট্রাইকার্স, এফসি ২৫ বিভাগে নিও, ই-ফুটবল একক বিভাগে শাওন শান্ত এবং দলীয় বিভাগে পিএনজি বট চ্যাম্পিয়ন হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এআইইউবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মিস নাদিয়া আনোয়ার, উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহমান। বক্তারা আয়োজনের ব্যাপ্তি, পেশাদার ব্যবস্থাপনা এবং প্রতিযোগিতামূলক গেমিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কারের অর্থ ও ক্রেস্ট বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি তিনজন সেরা ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর এবং এআইইউবি ফটোগ্রাফি ক্লাব, এআইইউবি ই-স্পোর্টস ক্লাব ও এআইইউবি পারফর্মিং আর্টস ক্লাবকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নতুন বছরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

শিক্ষা ডেস্ক
নতুন বছরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

মো. রাকিব আল হাসান
মো. রাকিব আল হাসান

নতুন বছর মানে শুধু ক্যালেন্ডারের একটি সংখ্যা বদলে যাওয়া নয়; বরং পুরোনো ক্লান্তি, হতাশা ও ব্যর্থতা পেছনে ফেলে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা এবং সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিটি নতুন বছর আসে নতুন চ্যালেঞ্জ ও নতুন সম্ভাবনা নিয়ে। একদিকে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ, অন্যদিকে নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলার দৃঢ়সংকল্প। বাস্তবতা ও স্বপ্নের এ মিশ্রণই নতুন বছরে তাঁদের প্রত্যাশাকে করে তোলে গভীর ও অর্থবহ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সেই ভাবনা ও প্রত্যাশার কথাই তুলে ধরছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাকিব আল হাসান

মো. আশিক মাহমুদ
মো. আশিক মাহমুদ

ক্যাম্পাস হোক রাজনৈতিক অস্থিরতামুক্ত

মো. আশিক মাহমুদ, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন বছর আমার কাছে শুধু সময়ের পরিবর্তন নয়; এটি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের সুযোগ। আমার প্রত্যাশা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা হবে রাজনৈতিক অস্থিরতামুক্ত; যেখানে জ্ঞানচর্চাই হবে মুখ্য। ক্লাসরুমে ফিরে আসুক শিক্ষার প্রকৃত জৌলুশ ও গুণগত মান। ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করতে, যেন যোগ্যতার ভিত্তিতে কাঙ্ক্ষিত কর্মজীবনের পথে এগোতে পারি। একই সঙ্গে জাগতিক সাফল্যের ভিড়ে হারিয়ে না গিয়ে মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠাই হোক নতুন বছরের লক্ষ্য।

রাইসা আমিন,
রাইসা আমিন,

সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যের বন্ধন আরও দৃঢ় হোক

রাইসা আমিন, শিক্ষার্থী, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন বছর মানে আমার কাছে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ এবং নতুন করে স্বপ্ন দেখার সুযোগ। আমি প্রত্যাশা করি, শিক্ষাঙ্গন হবে আরও প্রাণবন্ত, গবেষণামুখী এবং সহমর্মিতায় পরিপূর্ণ। পড়াশোনার পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার চর্চা বাড়ুক। মতের ভিন্নতা থাকলেও পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় থাকুক—মতভেদ হোক, কিন্তু বিভেদ নয়। সহপাঠীদের মধ্যে সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যের বন্ধন আরও দৃঢ় হোক। ব্যক্তিগত জীবনে সময়ের সঠিক ব্যবহার এবং লক্ষ্যভিত্তিক পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে চাই।

মো. মাহামুদুল হাসান
মো. মাহামুদুল হাসান

তরুণ প্রজন্মের অন্তরে এক অদম্য আশার স্রোত

মো. মাহামুদুল হাসান, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন বছরের সূচনায় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের অন্তরে জেগে উঠেছে এক অদম্য আশার স্রোত। আর্থসামাজিক অস্থিরতা, বেকারত্ব ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও প্রযুক্তির অগ্রগতি; বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ব্লকচেইনের মতো ক্ষেত্র—আমাদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। প্রতিহিংসা নয়, বরং ন্যায়ভিত্তিক ও স্বনির্ভর সমাজ গঠনের স্বপ্নই আমাদের অনুপ্রেরণা। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ঐক্যবদ্ধ যুবশক্তির হাত ধরে বাংলাদেশ পৌঁছাবে নতুন উচ্চতায়।

মেহরাজ হোসেন
মেহরাজ হোসেন

গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে যাক

মেহরাজ হোসেন, শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন বছর একদিকে যেমন বিদায়ের বার্তা দেয়, অন্যদিকে সম্ভাবনার নতুন দরজা খুলে দেয়। সাম্প্রতিক আন্দোলনের ইতিবাচক প্রভাবে ক্যাম্পাসগুলোতে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন, র‍্যাগিং ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান—সবই শিক্ষার্থীদের সচেতনতার প্রতিফলন। নতুন বছরে প্রত্যাশা, ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরও এগিয়ে যাবে জ্ঞান ও গবেষণায়। গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে দেশকে আন্তর্জাতিক পরিসরে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করাই হোক আমাদের যৌথ লক্ষ্য।

সমাপ্তি খান
সমাপ্তি খান

নিজেকে মানবিক ও সচেতন করে গড়ে তুলতে চাই

সমাপ্তি খান, শিক্ষার্থী, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন বছর আমাদের কাছে নতুন স্বপ্নের পাশাপাশি নতুন দায়বদ্ধতার সময়। এটি শুধু ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন নয়; বরং নিজের সঙ্গে নতুন করে অঙ্গীকার করার মুহূর্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি চাই নিজেকে আরও দায়িত্বশীল, মানবিক এবং সচেতন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণা, দক্ষতা অর্জন এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার চর্চা জরুরি বলে আমি মনে করি। নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও আমরা স্বপ্ন দেখতে ছাড়িনি। আমাদের প্রত্যাশা, একটি কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা, নিরাপদ ক্যাম্পাসজীবন এবং ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যৎ। নতুন বছর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সাহস জোগাক।

উম্মে হাবিবা নিশাত
উম্মে হাবিবা নিশাত

নবসূর্যের নিঃশব্দ প্রতিশ্রুতি

উম্মে হাবিবা নিশাত, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ

নতুন বছর আমার কাছে নিঃশব্দ এক প্রতিশ্রুতি—ধীরে বাঁচার সাহস ও গভীরভাবে অনুভব করার শক্তি। চাই সম্পর্কগুলো হোক বোঝাপড়ার জায়গা, নীরবতাগুলো হোক হৃদয়ের ভাষা। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপে ধৈর্য ও কোমলতা বজায় রাখতে চাই। অল্পতেই সুখ খুঁজে পাওয়ার প্রজ্ঞা এবং নিজের ভেতরের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে নতুনভাবে জেগে ওঠার প্রত্যয়—এই হোক নতুন বছরের সঙ্গী। নবসূর্যের মতো নীরব অথচ উজ্জ্বল হোক আগামীর দিনগুলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জ্ঞান, নৈতিকতা এবং উৎকর্ষের ধারায় তিন দশকের গৌরবময় অগ্রযাত্রা

মিজানুর রহমান ভূঁইয়া
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৮
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্থায়ী ক্যাম্পাস। ছবি: সংগৃহীত
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্থায়ী ক্যাম্পাস। ছবি: সংগৃহীত

দেশের উচ্চশিক্ষার ইতিহাসে গত তিন যুগ ছিল পরিবর্তন ও সম্প্রসারণের সময়। এই সময়ে শিক্ষা শুধু শহরকেন্দ্রিক থেকে বেড়ে ধীরে ধীরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিকতা, গুণগত মান ও সামাজিক দায়বদ্ধতার সমন্বয়ে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এইউবি) সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।

১৯৯৬ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটি তিন দশকে পদার্পণ করছে। মাত্র ২৯৫ শিক্ষার্থী নিয়েযাত্রা শুরু হয়। এইউবি আজ দেশের সুপরিচিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আশুলিয়ার টংগাবাড়িতে স্থায়ী ক্যাম্পাসে দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিকোণ

সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক রবিউল আলম বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডে পিএইচডি রিসার্চার। তিনি বলেন, ‘৩০ বছর মানে শুধু সময় পার হওয়া নয়, বরং সময়টা চিন্তার ধারাবাহিকতাও। এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শুধু ডিগ্রি অর্জনে নয়; প্রশ্ন করতে, নিজস্ব বাস্তবতা বুঝতে এবং জ্ঞানকে নতুনভাবে ভাবতে উৎসাহ দিয়েছে। এটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত শক্তি।’

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সামসুন্নাহার পিংকি বলেন, ‘এইউবি আমাদের স্বপ্ন গড়ার জায়গা। এখানে শিক্ষকেরা শুধু বইয়ের জ্ঞান দেন না, ভালো মানুষ হতে শেখান। তাঁদের আন্তরিকতা, ধৈর্য ও সহযোগিতা আমাদের প্রতিদিন এগিয়ে যেতে সাহস জোগায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আশা করি, আগামীর দিনগুলোতেও এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবে।’

এক স্বপ্নদ্রষ্টার উদ্যোগ

প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আবুল হাসান এম সাদেক একজন অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর কানাডায় পিএইচডি সম্পন্ন করেন। বিদেশে কর্মজীবনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি ব্যক্তিগত সঞ্চয়, অভিজ্ঞতা এবং শ্রম বিনিয়োগ করার মধ্য

দিয়ে ১৯৯৬ সালে এইউবি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সীমিত। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা স্বল্প খরচে শিক্ষাদান করছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন খাতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে কাজ করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম আন্তর্জাতিক মানের; আইসিটি, স্মার্ট ক্লাসরুম, অনলাইন লার্নিং এবং আধুনিক কারিকুলাম চালু রয়েছে।’

শিক্ষা দর্শন ও একাডেমিক পরিবেশ

এইউবির শিক্ষা দর্শনের মূল ভিত্তি নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধ। এখানে শিক্ষা শুধু সনদ অর্জনে সীমাবদ্ধ নয়; ব্যক্তিত্ব ও দায়িত্ববোধ গঠনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। আধুনিক ও কর্মবাজারমুখী পাঠ্যক্রম, অভিজ্ঞ শিক্ষক ও গবেষকদের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি স্থিতিশীল একাডেমিক পরিবেশ তৈরি করেছে। গবেষণা, সেমিনার ও কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী ও সৃজনশীল চিন্তায় উৎসাহ দেওয়া হয়।

গ্র্যাজুয়েটদের অবস্থান

দেশ-বিদেশে ব্যাংকিং, করপোরেট খাত, শিক্ষা, গবেষণা, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রশাসন, গণমাধ্যম ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে তাঁরা কর্মরত। পেশাদারি ও নৈতিক আচরণে সবাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

মান নিশ্চয়তা ও অবকাঠামো

শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়টি গঠন করেছে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেল (আইকিউএসি)। ১০ একর জমির স্থায়ী ক্যাম্পাসে রয়েছে ১০ তলা একাডেমিক ভবন, আধুনিক শ্রেণিকক্ষ, গবেষণাগার, সেমিনার কক্ষ, দুটি খেলার মাঠ, সাতটি কম্পিউটার ল্যাব এবং লাখো বইয়ের লাইব্রেরি ও জার্নাল। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে হোস্টেল সুবিধা ও বিনা মূল্যের পরিবহনব্যবস্থা।

সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সুযোগ

স্বল্প ফি কাঠামোর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষাকে সহজলভ্য করা এইউবির লক্ষ্য। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য পূর্ণ বৃত্তি এবং মেধাবী ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রাম রয়েছে। নারী শিক্ষা, সহশিক্ষা কার্যক্রম, বিতর্ক, সাংস্কৃতিক আয়োজন, খেলাধুলা ও সামাজিক স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব ও সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতে সহায়ক।

ভবিষ্যৎ লক্ষ্য

তিন দশকের অভিজ্ঞতায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এখন একটি স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গবেষণা, ডিজিটাল লার্নিং, উদ্ভাবন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত