Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

রাবিতে ছাত্ররাজনীতির মডেল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঠিক করবেন

অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২৫তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। সম্প্রতি তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইলিয়াস শান্ত।

ইলিয়াস শান্ত
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ১৯

প্রশ্ন: জুলাই-আগস্টের সেই উত্তপ্ত দিনগুলোতে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি কেমন ছিল, শুরুতে সে সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব: জুলাই-আগস্টে দেশের অন্য বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি যেমন ছিল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও অনেকটা তেমনই ছিল। তবে এখানে কিছু ভিন্নমাত্রাও ছিল। আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকে বিভিন্ন ফর্মে এখানে অংশ নিয়েছেন। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তাঁদের অসম্ভব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীষণ দৃঢ়তা দেখেছি। এককথায় এটা অত্যন্ত উদ্দীপনামূলক একটা সময় ছিল। একই সঙ্গে তাঁদের যে সাহসিকতা... তাঁরা খুব কঠিন একটা সময়ের মধ্যে ছিলেন। আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসে তৎকালীন সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের প্রচণ্ড আধিপত্য ছিল। তাঁদের হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তবুও শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত সাহস নিয়ে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। একই সঙ্গে শিক্ষকদের একটা অংশও এই অন্যায়-অনাচার এবং শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাঁদের সংখ্যা যদিও খুব বেশি ছিল না... তবে আমি বলব এসব শিক্ষক শুধু এই জুলাই-আগস্ট নয়, অনেক লম্বা সময় ধরে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। সামগ্রিকভাবে বলব, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এবং আরও ব্রডলি বললে রাজশাহী শহরের স্কুল-কলেজ, রুয়েট-মেডিকেল কলেজসহ সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে এ অঞ্চলের হয়ে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন।

প্রশ্ন: আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কতজন হতাহত হয়েছেন?

সালেহ হাসান নকীব: তৎকালীন সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের হামলা এবং একই সঙ্গে সে সময়ের পুলিশ বাহিনীর যে তৎপরতা; বলতে গেলে তারা অনেকটাই একে অপরের সহায়ক ভূমিকায় ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের হামলা হয়েছে। তাঁরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরে ডজনখানেক শিক্ষার্থী জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে হতাহত হয়েছেন।

প্রশ্ন: কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের এ সংগ্রাম আপনি কীভাবে দেখছেন?

সালেহ হাসান নকীব: এটা হওয়ারই ছিল। তবে ঠিক কোন ফর্মে এটা পরিণতি লাভ করবে, সে ব্যাপারে অস্পষ্টতা ছিল। আসলে বাংলাদেশে গত দেড় যুগ ধরে যে ধরনের শাসন চলছিল, তাতে জনগণের একটি বড় অংশ নানানভাবে নিগৃহীত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে, অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন, অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ওপর জেল-জরিমানা-মামলা এগুলো সমানতালে চলেছে। ফলে যাঁদের বুদ্ধি-বিবেক ছিল এবং যাঁরা ন্যায়-অন্যায়ের ভেদাভেদ করতে পারতেন, তাঁদের ভেতরে একধরনের অসন্তোষ সব সময় ছিল। স্পেশালি শেষ যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, যেটা কোনো মানদণ্ডেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা যায় না; সেগুলোও মানুষের ভেতরে জমে থাকা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শিক্ষার্থীরা শুরু করেছিলেন কোটা নিয়ে। এরপর এটা ধাপে ধাপে এক দফার আন্দোলনে পৌঁছে যায়। মূলত যেটা হয়েছে, যখন এ দেশের মানুষ দেখল, আমাদের বাচ্চাদের একেবারে নির্মমভাবে রাস্তাঘাটে হত্যা করা হচ্ছে, তখন তাঁদের ভেতরে পুঞ্জীভূত যে অভিযোগ ও ক্ষোভ ছিল, সেটার একটা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যখন একবার মানুষ ভয়টা কাটিয়ে রাস্তায় নেমে যায়, তখন আসলে তাদের দমিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আমি যেটা বলব, এ বিপ্লবকে যদি কেউ বিশ্লেষণ করতে চান, তাহলে তাঁর এটা ভুললে চলবে না, এ ঘটনাটা আসলে জুলাই-আগস্টের ঘটনা নয়। এটার পেছনে অনেক ইতিহাস আছে এবং সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। যখন শিক্ষার্থীদের ডাকে জনতা রাস্তায় নেমে এলো, তখন এটা একটা চূড়ান্তরূপ লাভ করে। তবে এর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে।

প্রশ্ন: এখন পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে রয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কোটাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা কী?

সালেহ হাসান নকীব: পোষ্য কোটা নিয়ে আমি ১০-১৫ বছর ধরে চিন্তাভাবনা করছি। তারও আগে, আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখনো এই কোটা নিয়ে ভেবেছি। আমি এই পোষ্য কোটা রাখার পেছনে কোনো শক্তিশালী নৈতিক ভিত্তি অথবা যুক্তি দেখি না। তারপরও যেটা বাস্তবতা, সেটা হচ্ছে এ কোটাব্যবস্থা এখানে চলমান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন যে দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছেন, আমি আমার একেবারে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে মনে করি তাঁরা যে কথাবার্তা বলছেন সেগুলোর পেছনে শক্তিশালী যুক্তি আছে। আমি মনে করি, তাঁরা অযৌক্তিক কোনো বার্তা বলছেন না।

প্রশ্ন: আমরা শুনেছি, সাবেক একজন উপাচার্য তাঁর ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এই কোটা প্রথা চালু করেছিলেন। সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত হলো, পরবর্তীকালে নাকি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ কোটা প্রথায় রাবিকে অনুসরণ করেছে...

সালেহ হাসান নকীব: এই কথা বাজারে চালু আছে। তবে এটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। আসলে বিভিন্ন ফর্মে এই ধরনের কোটা সম্ভবত বাংলাদেশে আরও আগে থেকেই ছিল। এটা শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, বিভিন্ন ফর্মে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছিল। হতে পারে যেটা, এটাকে একটা কাঠামোবদ্ধ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একজন উপাচার্য এরকম ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু সম্ভবত আপনারা খতিয়ে দেখলে জানতে পারবেন, এটা আগে থেকেই ছিল। কাগজে-কলমে এটাকে একটা জায়গায় নিয়ে আসার বিষয়টা হয়তো পরে ঘটেছে, কিন্তু জিনিসটা আগেই ছিল।

আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, একজন উপাচার্য এ কোটাপ্রথা চালু করেছেন বলে যে একধরনের রটনা আছে, এই রটনা যাঁরা শুরু করেছেন তাঁরা নিজেরাও কখনো পোষ্য কোটা বাতিল করেননি। বরং তাঁদের অনেকে নিজেদের সন্তানদের জন্য এই পোষ্য কোটার সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। ব্যাপারটা আসলে ঠিক যেভাবে বলা হয়, ততখানি সরল না। তবে আমি যেটা বলছিলাম, আমার নিজের বুদ্ধি-বিবেকের জায়গা থেকে, ন্যায়পরাণয়তার জায়গা থেকে এটা থাকার জন্য শক্তিশালী কোনো যুক্তি কখনো খুঁজে পাইনি।

প্রশ্ন: আপনি উপাচার্য হওয়ার আগে পোষ্য কোটা নিয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন। এখন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রনেতারাও এ কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। পোষ্য কোটা বাতিল করা যাচ্ছে না কেন?

সালেহ হাসান নকীব: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। এই জায়গাতেই আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার ভেতরে আছি। আমি একেবারে অকপটে স্বীকার করছি, এই মুহূর্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সমস্যার মধ্যে রয়েছি। তার কারণ হচ্ছে, প্রায় ৫০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই পোষ্য কোটার সুবিধাভোগী। এই সুবিধা তাঁরা এত দীর্ঘ সময় ধরে চর্চা করেছেন যে, এখন এটাকে পুরোপুরি তুলে দেওয়াটা তাঁদের অনেকের কাছে খুব বড় একটা ধাক্কা বলে মনে হচ্ছে।

সম্প্রতি আমি আমাদের শিক্ষক সমিতির কাছ থেকে একটা চিঠি পাই। যেখানে বলা হয়েছে, সর্বসম্মতিক্রমে পোষ্য কোটা যে শুধু থাকবে তাই নয়, আমরা যে তিন শতাংশের কথা বলেছিলাম এটাকে যেন ৫ শতাংশে নিয়ে গিয়ে অবিলম্বে কার্যকর করা হয়। ফলে বুঝতেই পারছেন, এই যে নানাবিধ ইন্টারেস্ট এবং নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা, এগুলো আমাদের একটা সিদ্ধান্তে যেতে বা ঐকমত্যে পৌঁছাতে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।

আমি যেটা ফিল করছি, আমার ওপর যে চাপ রয়েছে; সেটা হচ্ছে, যেহেতু আমি এই মুহূর্তে প্রশাসনের দায়িত্বে আছি... এখানে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি, আমি কী মনে করি, সেটা এক জায়গা। একই সঙ্গে পুরো প্রতিষ্ঠানটাকে কী করে সচল রাখা যায়; শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠন এবং অন্য দিকগুলোকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়; এটাও আমার চিন্তা করতে হচ্ছে। কাজেই পোষ্য কোটার স্টেকহোল্ডারদের ভেতরে এখন যে একটা ঐকমত্য দরকার, সেটা স্পষ্ট। এখন এ ঐকমত্য কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং একই সঙ্গে মতবিরোধের পার্থক্যটা কীভাবে আরও কমিয়ে নিয়ে এসে একটা সুন্দর সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়, সেটা নিয়েই আলোচনা চলমান রয়েছে। এটা নিয়ে অনেকে দিনরাত কাজ করছেন। কাজ চলছে। আমরা আশা করছি, একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারব, যেটা হয়তো ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।

প্রশ্ন: ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে আপনাদের পদক্ষেপ অভিভাবক ও ভর্তি-ইচ্ছুকদের মধ্যে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতিতে এর বাইরে আর নতুন কোনো পরিবর্তন আসছে কি না?

সালেহ হাসান নকীব: আমার কাছে এটাকেই বড় পরিবর্তন বলে মনে হয়েছে। এর আগে আমরা কখনো বিকেন্দ্রীকরণে যাইনি। এই প্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তার পরীক্ষাগুলো বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে নেওয়ার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটার বাস্তবায়ন আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। পরীক্ষাগুলো সুন্দরভাবে শেষ করতে হবে। এটার চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। আপনারা জানেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। এর কারণও আপনাদের অজানা থাকার কথা নয়। শিক্ষক নিয়োগে যেসব ভয়ংকর অনিয়ম হয়েছে, সেটার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রক্রিয়াই বিতর্কিত করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে যেটা হয়েছে, আমাদের প্রবীণ শিক্ষকরা অবসরে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু আমরা তাঁদের রিপ্লেসমেন্ট পাচ্ছি না। কাজেই এটা নিয়েও খুব সতর্কভাবে এগোচ্ছি, আমরা একটা নতুন পদ্ধতিতে যাব। সেখানে আমাদের যাতে ত্রুটি-বিচ্যুতি না হয় এবং যেন সুনামের সঙ্গেই এ পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি। সম্প্রতি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একটা সভা হয়েছে। সেখানে পোষ্য কোটা, ভর্তি পরীক্ষাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমাদের যে সিদ্ধান্ত; সেটা হচ্ছে, ভর্তি পরীক্ষার যে তারিখগুলো নির্ধারণ করেছিলাম, এটাকে টার্গেট করেই সামনে এগিয়ে যাব।

প্রশ্ন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নিয়ে একটা আলোচনা হয়েছে। দলীয় রাজনীতিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অংশগ্রহণ নিয়েও বিধিনিষেধ আরোপের কথা শোনা যাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলীয় রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে?

সালেহ হাসান নকীব: এখানে আমি যে বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছি; সেটা হচ্ছে, আমার শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে দেখতে চায়। ইনফ্যাক্ট আপনারা দেখেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে এমন একটা ভিউ তৈরি হয়েছিল; ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের মতো কথাও উঠেছে। পরে আমি জেনেছি, এখানে কিছু কৌশলগত ব্যাপার ছিল।

আসল কথা হচ্ছে, ছাত্ররাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলেছে, এই ধরনের অপরাজনীতি আমি মনে করি না আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসার সুযোগ আছে। রাজনীতি নিয়ে আমার ছাত্র-ছাত্রী এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই একটা সুষ্ঠু ধারা ঠিক করবেন, যেটা মেজরিটির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সে ধরনের একটি ধারায় কীভাবে আসা যায়, সেটা নিয়ে কাজ চলমান আছে। একই সঙ্গে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে বারবারই বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করেছি। তাঁদের পরামর্শগুলো আমরা একসঙ্গে করে বিচার-বিশ্লেষণ করছি। আমাদের এই কাজ এত দিনে শেষ হয়ে যেত, যদি আমরা পোষ্য কোটা নিয়ে এখন যে ডামাডোলের মধ্যে রয়েছি, সেখানে না পড়তাম।

কথা হচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ফর্মে রাজনীতি হবে অথবা হবে না; সেটা আমার ছাত্র-ছাত্রীরা এবং যাঁরা এর সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট তাঁরাই ঠিক করবেন। আর কী হবে না, সেটা আমি বলতে পারি। সেটা হলো সিট-দখল, সিট-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-নিপীড়ন, আধিপত্য বিস্তারের যে প্রবণতা; এই জিনিসগুলোর বিরুদ্ধে আমরা সবাই একমত হব। এই জিনিসগুলো আর কখনো ক্যাম্পাসে ফিরতে দেব না। এই বিষয়ে আমাদের খুবই দৃঢ় একটা অবস্থান থাকবে। ছাত্ররাজনীতির নামে এ ধরনের যে গুন্ডামি এবং অপরাজনীতি চলেছে, সেটা আর ক্যাম্পাসে আসতে দেব না।

প্রশ্ন: ১৯৮৯ সালের পর থেকে নানা কারণে রাকসু নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও করোনার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাবির এখন পরিকল্পনা কী?

সালেহ হাসান নকীব: আমার দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে রাকসু নির্বাচন টপ-প্রায়োরিটিতে আছে। কারণ, শিক্ষার্থীদের বহু কথা থাকে। সেই কথাগুলো একটা নির্বাচিত ভ্যালিড বডির কাছ থেকে এলে বিশ্ববিদ্যালয় চালানোও সহজ হয়। জবাবদিহির ব্যাপারটাও নিশ্চিত হয়। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাঁদের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। এখানে তাঁদের দায়বদ্ধতা থাকবে এবং তাঁরা আমাদের জানাবেন ছাত্রসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা; তাঁরা কী চান। আমি মনে করি, একটা সুস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই প্রক্রিয়া খুবই জরুরি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে এটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একটা হোমওয়ার্ক করা দরকার। সে কাজটাই রাকসুর ট্রেজারার করে যাচ্ছেন। আমাদের ইচ্ছা, ইনশাআল্লাহ শিক্ষার্থীদের রাকসু দিতে পারব।

প্রশ্ন: রাকসু নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে?

সালেহ হাসান নকীব: আমি চেয়েছিলাম দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের মতো একটা জায়গায় পৌঁছে যাব। তবে এর থেকে কিছু কম-বেশি সময় লাগতে পারে। কিন্তু খুব কম-বেশি হবে বলে মনে হয় না। আমাদের সবার যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে এটা করতে পারব।

প্রশ্ন: প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে তরুণ প্রজন্ম মাদকাসক্তি, অনলাইন জুয়া এবং অন্যান্য নেশার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একাডেমিক বা কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস চালু করা যায় কি না?

সালেহ হাসান নকীব: আপনারা জেনে খুশি হবেন, এই মুহূর্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে-নিঃসংকোচে কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস এবং খেলাধুলার যে কার্যক্রম, এগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি দুই বিভাগের খেলা নিয়ে ক্যাম্পাসে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। এটা নিয়ে আমি খুবই মর্মাহত; আমাদের শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণ কোনো কোনো সময় সীমা ছাড়িয়ে যায়। তবে এখন আবার খেলাধুলা পুরোদমে চলছে। প্রতিদিনই কালচারাল, এক্সট্রা-কারিকুলার এবং কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি সারা দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে। আমি এটাকে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে আশাবাদী। এর জন্য যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, সেটা করব। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি সুন্দর করতে হয়, তাহলে এ ধরনের অ্যাক্টিভিটির কোনো বিকল্প নেই। আমরা চাই, ছেলেমেয়েরা পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে এখান থেকে বেরিয়ে যাক।

প্রশ্ন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা এবং এখান থেকেই ১৯৯৮ সালে কর্মজীবন শুরু করেছেন। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে আরও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনার শিক্ষাজীবন ও উজ্জ্বল কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

সালেহ হাসান নকীব: নিজের সম্পর্কে বলাটা খুব একটা শোভা পায় না। এটা নিয়ে কথাবার্তা অন্যরাই বলবেন। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে পদার্থবিজ্ঞানকে ভালোবেসেছিলাম। এই ভালোবাসাই আমার জীবনের অন্যতম বড় শক্তির উৎস। আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করি, যেটা এই মহাবিশ্বের যত বড় বড় রহস্য এবং যত চমকপ্রদ ঘটনা আছে, সবকিছুর সঙ্গে জড়িত। আমার ফিজিক্স পড়তে, জানতে এবং এটা নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। এটা আমার জীবনের খুব বড় ভালোবাসার জায়গা। নিজকে পরিচয় দেওয়ার সময় বলি, আমি ছাত্র। কারণ, ছাত্রত্বের চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। ডিগ্রি, পুরস্কার, সাইটেশন, নাম্বার অব পাবলিকেশন্স, দেশে-বিদেশে কতটুকু নাম আছে না-আছে; ছাত্রত্ব এ সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। কারণ একজন ছাত্র সব সময় শেখে। এই শেখার আনন্দের চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু নেই।

আমি কতটুকু কী করেছি, সেটা আমার ফিল্ডে যাঁরা কাজ করেন তাঁরাই মূল্যায়ন করবেন। আমি যত দিন বেঁচে আছি, এই কাজের ভেতরেই থাকতে চাই।

প্রশ্ন: সুপারকন্ডাক্টিভিটি এবং কম্পিউটেশনাল ফিজিক্স নিয়ে আপনার গবেষণার আগ্রহ। এ বিষয়গুলো কীভাবে জনকল্যাণে ভূমিকা রাখছে?

সালেহ হাসান নকীব: সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে যদি বলি, হাই-টেম্পারেচার সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে ২৮-২৯ বছর কাজ করছি। আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে, হয়তো সামনের দশকে দেখতে পাব, সুপারকন্ডাক্টিভিটি কী করে সমস্ত পৃথিবীর প্রযুক্তির ওপর তার দখলটা নিয়ে আসছে।

এখন আমরা বাস করি সেমিকন্ডাক্টরের যুগে। এই যে চিপ, মাইক্রোচিপ; এসব ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস দাঁড়িয়ে আছে সেমিকন্ডাক্টিং ইন্ডাস্ট্রির ওপর।

সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে আমাদের যে কাজ, সে কাজগুলো যদি একেবারে মার্কেট লেভেলে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এ জগতের চেহারা অনেকখানি পাল্টে যাবে। কারণ অতি পরিবাহীর যে অদ্ভুত সব ফিজিক্যাল প্রোপার্টিজ আছে, তাতে এখন আমরা যে সংকটগুলোর মধ্যে আছি, এখানে সবচেয়ে বড় সংকট হলো এনার্জি ক্রাইসিস। শক্তির একটা সংকট। তেল-গ্যাস এগুলো পুরিয়ে যাবে। ফসিল ফুয়েল পরিবেশের ওপর বিরূপ ভূমিকা রাখে। যদি সুপারকন্ডাক্টিং পাওয়ার সিস্টেম নিয়ে আসা যায়, তাহলে আমরা এমন অনেক বড় বড় ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখতে পাব। এ ছাড়া শুধু ট্রান্সমিশন বা ম্যাটল্যাবের মতো ব্যাপার না, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের কথা বলি, কিউবিটের কথা বলি; এসবের সঙ্গেও সুপারকন্ডাক্টিভিটি প্রযুক্তি ভীষণভাবে জড়িত। সুপারকন্ডাক্টরটাকে আরেকটু ইউজার ফ্রেন্ডলি করতে পারলে তথ্যপ্রযুক্তির জায়গা থেকেও একটা বড় বিপ্লব ঘটে যাবে।

আর কম্পিউটেশনাল ফিজিকসে যেটা করি, সেটা হলো, ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন। আপনি কোনো একটা বিষয় ল্যাবে তৈরি না করে, ফিজিকস ব্যবহার করে এবং কম্পিউটেশন করে বিভিন্ন প্রপার্টি প্রেডিক্ট করতে পারেন। এর ফলে প্রস্তুতকারকরা আগে থেকেই একটা তথ্য পান যে কোন কাজ কোন ধরনের ম্যাটেরিয়াল দিয়ে এবং কোন ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি করা যায়। এই কাজগুলো আমরা করি। কাজেই এগুলো সব জীবনঘনিষ্ঠ। এগুলোর অনেক প্রয়োগ আছে।

অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। ছবি: সংগৃহীত
অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশনের র‌্যাংকিং প্রকাশিত হয়েছে। এ তালিকায় ১ হাজারের মধ্যে আছে দেশের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। এই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাবির অবস্থান ১ হাজার ১ থেকে ১ হাজার ২০০-এর মধ্যে। র‍্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

সালেহ হাসান নকীব: র‍্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে শিক্ষা কার্যক্রমকে উন্নত করার কোনো বিকল্প নেই। আমরা বারবার গবেষণার কথা বলি; কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, আমাদের যে গ্র্যাজুয়েটরা বের হবেন, তাঁরা যেন ভালো ট্রেনিং নিয়ে বের হন। যদি আপনি সাসটেইনেবল র‍্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে চান, তাহলে পঠন-পাঠন ও গবেষণা; প্রত্যেকটি জায়গাতে গুরুত্ব দিতে হবে। কোর্স কারিকুলামকে আধুনিক দুনিয়ার সঙ্গে মিল রেখে উন্নত করা, গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো এবং যাঁরা যোগ্য তাঁদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা বারবার যে ভুলটা করে আসছি সেটা হলো, যোগ্য মানুষগুলোকে ঠিক জায়গাতে নিয়ে আসতে পারিনি। এর ফলে যেটা হয়েছে, হয়তো বরাদ্দ দিয়েছি, কিন্তু কাকে দিয়েছি, কতটুকু দিয়েছি; যাঁকে দিয়েছি তিনি এই বরাদ্দের কতটুকু সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারবেন, এই জায়গাগুলো দেখিনি। আমি বলব, বরাদ্দ আরও দরকার। ক্লাসরুমের শৃঙ্খলা এবং কোর্স কারিকুলাম আধুনিকায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হব। আসলে শিক্ষার্থীরা যেভাবে জীবনযাপনের মাধ্যমে লেখাপড়া করেন, এই সংকটের মধ্যে তাঁরা যেটুকু করেন, সেটাও কম নয়। হলের এই পরিবেশ, এই খাবার; এরপরও তাঁরা যেটুকু করছেন, সেটারও প্রশংসা করতে হবে।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

সালেহ হাসান নকীব: বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি বহুতলবিশিষ্ট ভবনের নির্মাণকাজ চলমান। এই কাজও জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রায় থেমে গিয়েছিল। সেটাকে আবার সচল করা হয়েছে। বুঝতেই পারছেন, একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর কাজ থেমে যাওয়াটা কীসের ইন্ডিকেশন। আসলে গণ-অভ্যুত্থান হলে একটি হলের নির্মাণকাজ থেমে যাবে; এমন তো হওয়া উচিত না। নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিল বলেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেগুলো আবার সচল করেছি। এখন অনেক বড় একটা একাডেমিক ভবনের কাজ প্রায় অর্ধেক হয়ে পড়ে আছে। এই বিষয়গুলোর ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরেও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে, যেগুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে খুব শিগগির বসব। এই মুহূর্তে তিন ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা দিতে পেরেছি। এটাকে অন্তত দ্বিগুণ করার একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। কবে সবাইকে আবাসন দিতে পারব জানি না। কিন্তু এই মুহূর্তে আবাসনের যে সুবিধা রয়েছে, সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। এ ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। কাজ চলমান রয়েছে।

প্রশ্ন: আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খাবারের মধ্যে বিভিন্ন সময় নানা কিছু পাওয়া যায়। কীভাবে খাবারের মানে উন্নতি করা যায়?

সালেহ হাসান নকীব: খাবারের মান উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বাজেট। আমাদের উত্তরবঙ্গের হলগুলোতে যেসব শিক্ষার্থী থাকেন, তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশের পক্ষে উচ্চমূল্য দিয়ে ডাইনিং চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে যে বাজেটে এটা চলছে, তাতে আমাদের ভর্তুকি ছাড়া খুব ভালো কিছু আইটেম রাখাও সম্ভব নয়। আবার এই মুহূর্তে ভর্তুকির জন্য কোনো অ্যালোকেশনও নেই।

আমাদের যে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আছে, সেটাকে সচল করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে সেখানে আমিও একটা আবেদন রাখতে চাই। আমাদের লাখ লাখ অ্যালাইমনাই পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। তাঁরা সবাই মিলে যদি একটু করেও কনট্রিবিউট করেন, তাহলে অন্তত আমাদের শিক্ষার্থীদের তিনবেলা খাবারের মান নিয়ে অত চিন্তা করতে হয় না। অনেক পথ আছে, একটা হচ্ছে ভর্তুকির জন্য আবেদন করা। যেটার ব্যাপারে আমি খুব আশাবাদী বলব না, কিন্তু আমাদের যাঁরা অ্যালামনাস আছেন, তাঁদের এখানে কনট্রিবিউট করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তাঁদের এগিয়ে আসা উচিত।

অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। ছবি: সংগৃহীত
অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে? বিগত সময়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।

সালেহ হাসান নকীব: প্রত্যেকটি ফ্যাকাল্টির গবেষণার ধরন আলাদা। কৃষি অনুষদে যে গবেষণাগুলো হচ্ছে, সেটা মাটি ও মানুষের খুব কাছাকাছি। তারা উন্নত জাত, গবাদি পশু পালন; এগুলো নিয়ে মিনিংফুল কাজ করছে। এই মুহূর্তে হাঁস-মুরগির টিকা নিয়ে একটা বড় প্রজেক্ট চলছে। ফিজিকস এবং কেমিস্ট্রি বিভাগে ন্যানো পাবলিকেশন, থিউরিটিক্যাল কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিকস; এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস যে বিভাগগুলো আছে, সেখানে সাপের বিষ, টক্সিসিটি, ক্যানসার ড্রাগ—এসব নিয়ে অনেক গবেষক কাজ করছেন। ফিশারিজ বিভাগও খুব তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করছে। ইঞ্জিনিয়ারিং যে ফ্যাকাল্টি আছে, তারা বিগ ডেটা অ্যানালাইসিস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিভিন্ন অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট; এগুলো নিয়ে কাজ করছে। কলা ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদেও আমাদের দেশের বিভিন্ন সমস্যা, আবাসন, জলবায়ু; এগুলো মানুষের ওপর কী ইম্প্যাক্ট ফেলছে সে-সংক্রান্ত কিছু প্রজেক্ট চলছে। সামাজিক সমস্যা, নারী নির্যাতন; এগুলো নিয়েও কাজ হচ্ছে। কাজ হচ্ছে, কিন্তু এ কাজের পরিমাণ আরও বেশি হওয়া উচিত। যেটুকু হচ্ছে, সেটুকু আমি মনে করি না পর্যাপ্ত। আমরা যদি একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে চাই, তাহলে কাজের গুণগত মান এবং পরিমাণ সবই বাড়াতে হবে।

প্রশ্ন: শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গবেষণার জন্য যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। গবেষণার জন্য বরাদ্দ আরও বাড়ানো সম্ভব কি না?

সালেহ হাসান নকীব: এটার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। সম্প্রতি আমি এবং আমাদের হিসাব শাখার পরিচালক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। গবেষণার ব্যাপারে একটা খসড়া সেখানে দিয়ে এসেছি। ইউজিসির মিটিংয়েও গবেষণা বাজেট বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। কথা হচ্ছে, আমাদের এই প্রশাসনের বয়স মাত্র সাড়ে তিন মাস। এটা খুব অল্প সময়। কিন্তু এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছি। কিছু আশ্বাসও পেয়েছি। বাকিটা সময়ই বলবে, কতটুকু সাপোর্ট নিয়ে আসতে পারব।

আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।

সালেহ হাসান নকীব: আজকের পত্রিকার জন্য শুভকামনা রইল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৪
ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান শাখার প্রথম বর্ষের আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সকল জুলাই যোদ্ধা, শরিফ ওসমান হাদি ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠেয় এই পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের পাঠানো এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানা গেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক দিবস পালন করা হবে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সাহসী জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি এবং ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল জুলাই যোদ্ধা ও শহীদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আগামীকাল ২০ ডিসেম্বর শনিবার অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান ইউনিটের প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ৩১ ডিসেম্বর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আগামী বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হবে ৩১ ডিসেম্বর থেকে। যা চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। ফি জমা দেওয়া যাবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফরম পূরণের বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ থাকা সাপেক্ষে জিপিএ উন্নয়ন পরীক্ষার্থীসহ আবশ্যিক ও নৈর্বাচনিক বিষয় ও বিষয়গুলো এক থেকে চার বিষয়ে ২০২৫ সালে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের ২০২৬ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অকৃতকার্য বিষয় ও বিষয়গুলোতে অংশ নেওয়ার জন্য নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান বরাবরে সাদা কাগজে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনী পরীক্ষা নিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ফল প্রকাশ করবে।

আরও বলা হয়, বিলম্ব ফিসহ অনলাইনে ফরম পূরণ করা যাবে ২০২৬ সালের ১২ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। পরীক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা হারে বিলম্ব ফিসহ অনলাইনে ফি জমা দেওয়া যাবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।

আরও বলা হয়, বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ফি (চতুর্থ বিষয় ছাড়া) ২ হাজার ৪৩৫ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকে ২ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের বেতন ও সেশন চার্জ হিসেবে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে।কোনো শিক্ষার্থীর নবম ও দশম শ্রেণির মোট ২৪ মাসের বেশি বেতন নেওয়া যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিইউবিটিতে চতুর্থবারের মতো ‘আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট’ আয়োজিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিইউবিটিতে চতুর্থবারের মতো ‘আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট’ আয়োজিত হচ্ছে। এই উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
বিইউবিটিতে চতুর্থবারের মতো ‘আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট’ আয়োজিত হচ্ছে। এই উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) স্থায়ী ক্যাম্পাসের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স হলে গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ‘আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট ২০২৫’ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন পোর্টাল এবং ডিজিটাল মিডিয়ার সাংবাদিকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, যা ‘প্রোগ্রামিংয়ের অলিম্পিক’ খ্যাত—আইসিপিসির এই রিজিওনাল পর্বটি ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ বিইউবিটি ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, বিইউবিটি এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করার গৌরব অর্জন করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিইউবিটির উপাচার্য ড. এ বি এম শওকত আলী উপস্থিত সাংবাদিকদের এবং এই আয়োজনের গর্বিত স্পনসরদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য হলো সারা দেশ থেকে বাংলাদেশের সেরা প্রোগ্রামারদের খুঁজে বের করা এবং তাঁদের মেধা বিকাশের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেওয়া।’

শওকত আলী আরও জানান, এবারের আয়োজনে সারা বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড সংখ্যক প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছেন। মোট ৩১৩টি টিমের ৯৩৯ জন মেধাবী প্রোগ্রামার এই চূড়ান্ত পর্বে লড়বেন, যা বাংলাদেশে আইসিপিসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিইউবিটি ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত সদস্য মো. শামসুল হুদা এফসিএ।

এ ছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং টেকনিক্যাল বিষয়গুলো তুলে ধরেন আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা সাইট ২০২৫-এর আরসিডি (RCD) এবং বিইউবিটির সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সাইফুর রহমান এবং আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা সাইট ২০২৫-এর অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর ও এনএসইউর ইসিই বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল লায়েস এম এস হক।

এ সময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস বিচারক (২০০৩-২০১৮) শাহরিয়ার মঞ্জুর এবং বিইউবিটির প্রকৌশল ও ফলিতবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মুন্সী মাহবুবুর রহমান। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিইউবিটির সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল ইসলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জকসু নির্বাচন: তিন দিনেও প্রকাশ করা হয়নি ব্যালট নম্বর, প্রচারে নেমে বিপাকে প্রার্থীরা

  জবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদের ‎আসন্ন নির্বাচনে ক্যাম্পাসে প্রচার শুরু হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর থেকে। তফসিল অনুযায়ী টানা ১৩ দিন চলবে এই প্রচার। তবে প্রচার শুরুর পর তিন দিন পার হলেও প্রার্থীদের ব্যালট নম্বর প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন প্রার্থীরা।

‎‎তফসিল সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনী প্রচারণার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর। প্রচারণার ১৩ দিন সময়ের ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও ব্যালট নম্বর প্রকাশ না করায় প্রচারণায় বাধার অভিযোগ তুলেছেন প্রার্থীরা।

‎‎শিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য প্যানেল’ থেকে ভিপি প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ব্যালট নম্বর না থাকায় প্রচার ও পেপার ছাপাতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে নাম সংশোধনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

‎ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান প্যানেল’ থেকে জিএস প্রার্থী খাদিজাতুল কোবরা বলেন, ব্যালট নম্বর প্রকাশ না করায় প্রচার ব্যাহত হচ্ছে এবং এতে নির্বাচন কমিশনের অদক্ষতা ও স্বচ্ছতা প্রমাণিত হয়। দ্রুত ব্যালট নম্বর প্রকাশের দাবি জানান তিনি।

‎স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী চন্দন কুমার দাস বলেন, শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা দায়িত্বহীন। প্রার্থিতা ও আচরণবিধি-সংক্রান্ত অভিযোগে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার পাশাপাশি ব্যালট নম্বর না দেওয়ায় প্রচার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা কোনো পক্ষকে সুবিধা দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

‎‎এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম চলছে। প্রার্থীদের নাম সংশোধনের জন্য আমাদের কাছে আবেদন এসেছে অনেকগুলো। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নাম সংশোধন বা নিকনেম রাখার জন্য কাজ করছি। ফলে আমাদের কিছুটা সময় বেশি লাগছে।’

‎এর আগে ৪ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশোধিত তফসিল ঘোষণা করা হয়। সেই তফসিল অনুযায়ী ৯ ও ১০ ডিসেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট সম্পন্ন হয়। নির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী ১১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ১৪ ডিসেম্বর প্রত্যাহারকৃত তালিকা প্রকাশ করা হয়। ভোট গ্রহণের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর, ভোট গণনা ৩০ ডিসেম্বর (ভোট গ্রহণ শেষে) এবং ফলাফল ঘোষণা ৩০ অথবা ৩১ ডিসেম্বর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত