Ajker Patrika

পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার: লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার: লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং

বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মাত্র ১.২৫ বিলিয়ন ডলার, যা বাজারের তুলনায় নগণ্য। তবে এই খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। ফলে দক্ষ লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।

এই প্রেক্ষাপটে, কীভাবে একজন শিক্ষার্থী লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন, কোথায় পড়বেন, কী কী বিষয় পড়ানো হয়, চাকরির সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা কেমন—এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. শরীফুল ইসলাম।

কোথায় পড়বেন

বাংলাদেশে বর্তমানে চামড়া শিল্পসংক্রান্ত বিষয় পড়ার সুযোগ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি বিভাগে আসন সংখ্যা ৫০টি। তাছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রতিবছর ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির জন্য বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আবেদনের যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩.৫ জিপিএসহ মোট জিপি-৮। কুয়েটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির জন্য প্রার্থীকে চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েটের স্নাতক পর্যায়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ন্যূনতম জিপিএ-৪ এবং উচ্চমাধ্যমিকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজি মিলিয়ে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট ১৮ হতে হবে।

যা পড়ানো হয়

চামড়াশিল্পের পণ্যগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স খোলা হলেও তিনটি বিষয়ের পড়াশোনায় বেশ মিল রয়েছে। এখানে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে শুরু করে উচ্চ মানসম্পন্ন চামড়াজাত পণ্য যেমন জুতা, ব্যাগ উৎপাদনের জ্ঞান আহরণ করেন শিক্ষার্থীরা। তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি হাতেকলমে শিক্ষালাভের জন্য রয়েছে সমৃদ্ধ কয়েকটি ল্যাব।

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সম্ভাবনা

বাংলাদেশের চামড়াশিল্পের ঐতিহ্য ও বৈশ্বিক বাজারে চাহিদার কারণে এই খাতে কর্মসংস্থানের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি বিষয় যেখানে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ, উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষার মাধ্যমে ভালো ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।

সরকারি চাকরি

বাংলাদেশে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সরকারি খাতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন বাংলাদেশ লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক সিনিয়র অফিসার (প্রকৌশল-লেদার টেকনোলজি) নিয়োগ দিয়ে থাকে। আবার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসেও চাকরি করছেন অসংখ্য লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট।

বেসরকারি চাকরি

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের সুযোগ বেশি মূলত বেসরকারি সেক্টরে। বাংলাদেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন অ্যাপেক্স, বাটা, বে-এর মতো বড় বড় কোম্পানি লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও চর্ম প্রকৌশলীদের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বায়িং হাউসগুলোতেও অনেক লেদার ইঞ্জিনিয়ারের কর্মসংস্থান হয়ে থাক।

উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যাঁরা উদ্যোক্তা হতে চান তাঁদের জন্যও অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বিশ্বব্যাপী রয়েছে। বাংলাদেশে এই পণ্যের কাঁচামাল সহজলভ্য। যাঁরা নিজেদের উদ্যোগে কারখানা স্থাপন করতে চান, তাঁরা সহজেই চামড়া প্রক্রিয়াজাত, জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ও অন্যান্য চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারেন।

উচ্চশিক্ষার অবারিত সুযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েট উভয় প্রতিষ্ঠানে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএসসি কোর্স চালু রয়েছে। অনেকেই কর্মজীবনে গিয়ে হিউম্যান রিসোর্স, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে এমবিএ করছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, প্রোডাকশন প্ল্যানিং ইত্যাদির ওপর এমএসসি/পিজিডি করছেন কেউ কেউ। দেশের বাইরে ভারত, ইতালি, চীন, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে লেদার ইঞ্জিনিয়াররা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে-বিদেশে চামড়া সেক্টরে অবদান রাখছেন।

বেতন

রপ্তানিমুখী ট্যানারি ও জুতা ফ্যাক্টরিতে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক বেতন ২০-২৫ হাজার টাকা। অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বেতন বৃদ্ধি পায়। তবে বহুজাতিক সোর্সিং প্রতিষ্ঠান ডেকাথলন, টিম্বারল্যান্ড, অ্যাডিডাস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে প্রারম্ভিক বেতন আরও বেশি। বাংলাদেশ লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে মূল বেতন ২২,০০০ টাকা। পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।

সমস্যা

বাংলাদেশের চামড়াশিল্প, বিশেষ করে ট্যানারিগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (LWG)-এর পরিবেশ সনদ না থাকায় কিছু বায়ার বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত চামড়ার ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করছে। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও এখন অনেক সচেতন। ফলে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের সম্ভাবনা বরং উজ্জ্বলতর হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জকসু নির্বাচন: কাল ভোট, নিরাপত্তা জোরদার

  • ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ।
  • ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি।
  • মোট ভোটার ১৬ হাজার ৪৪৫ জন।
  • কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে প্রার্থী ১৮৭।
সোহানুর রহমান, জবি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জকসু নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি এবং কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।

সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে জগন্নাথ কলেজে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর এটিই প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, জকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১৬ হাজার ৪৪৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৮ হাজার ৪৭৯ জন এবং পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ১৭০ জন। কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট প্রার্থী ১৮৭ জন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। ৩৯ কেন্দ্রের ১৭৮ বুথে ভোট গ্রহণ হবে। ব্যালট পেপার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোট গ্রহণ চলাকালে প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ টিম দায়িত্ব পালন করবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সামগ্রিকভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আইনশৃঙ্খলাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাহিনী আজ থেকে ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সক্রিয় থাকবে। কমিশন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, যেকোনো সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তাব্যবস্থা কঠোর অবস্থানে থাকবে।’

নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল শেষ দিনের মতো প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। দিনভর ক্যাম্পাসে প্রার্থীদের গণসংযোগ, মতবিনিময় ও ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ লক্ষ করা গেছে।

ছাত্রশিবির-সমর্থিত অদম্য জবিয়ান ঐক্য প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি ফেয়ার এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। ভোট গণনায় যেন বিলম্ব না হয়, সেই দাবিও থাকবে। সব মিলিয়ে আশা করি, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ক্যাম্পাসে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে।’

ছাত্রদল-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, ‘আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও এই ধারা অব্যাহত থাকত। এখন আমাদের প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। আশা করি, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থেকে এবং কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবে।’

জাতীয় ছাত্রশক্তি-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী কিশোয়ার আনজুম সাম্য বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমরা হতাশ। তাদের প্রতিটি কার্যক্রম বিতর্কিত, তাই কোনো আশা রাখছি না। তবে শিক্ষার্থীদের থেকে আমাদের একটাই আশা, ক্যাম্পাসের জন্য যারা কাজ করবে, সে রকম প্রতিনিধি বাছাই করতে তারা ভোটকেন্দ্রে এসে নিরাপদে ভোট দিতে পারুক।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট-সমর্থিত মওলানা ভাসানী ব্রিগেড প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী গৌরব ভৌমিক বলেন, ‘প্রচারণার মধ্য দিয়ে আমরা অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি এবং শিক্ষার্থীদের থেকে আশাবাদী। তবে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কিছু সংশয় আছে। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’

লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লাবণী আক্তার কবিতা বলেন, ‘আশা করি, নির্বাচিত প্রার্থীরা দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।’

নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে প্রবেশসংক্রান্ত বিষয়ে তিনি জানান, ‘কেবল অনুমোদিত ব্যক্তি, ভোটার, শিক্ষক এবং নির্বাচনের কাজে বিশেষভাবে অনুমোদিত ব্যক্তিরাই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। এ জন্য নির্ধারিত পরিচয়পত্র বহন বাধ্যতামূলক। পরিচয়পত্র সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর বুটেক্সে প্রথম সমাবর্তন

শেফাক মাহমুদ, বুটেক্স
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) অনুষ্ঠিত হলো সমাবর্তন। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হংকং পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জুংগাই ওয়াং। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ।

সমাবর্তনে মোট ৪,১২৬ জন শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৬০ জন মাস্টার্স, ১৯৪ জন এমবিএ এবং বুটেক্স অধিভুক্ত কলেজসমূহ থেকে ১,২৫০ জন গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ৪১ জন শিক্ষার্থীকে গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, "আজকের এই সমাবর্তন শুধু বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নয়, দেশের বস্ত্রশিল্পের গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি যুগান্তকারী অর্জন। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা এমন একটি প্রতিষ্ঠানের পরিপক্কতার সাক্ষী হচ্ছি, যা অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলছে। এটি কেবল শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সাফল্য নয়; বরং ভবিষ্যতের আরও অসংখ্য তরুণকে অনুপ্রাণিত করবে।"

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, "আমাদের বৈদেশিক আয়ের বড় অংশ আসে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল পণ্য থেকে। এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ সরবরাহে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। তাই মনে রাখতে হবে—দেশ ও জাতি আজ তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। চলার পথ সহজ নয়; সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তবে মনে রেখো, তোমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও কাজের প্রভাব শুধু নিজেই নয়, পরিবার, সমাজ এবং দেশের ওপরও পড়বে।"

হংকং পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ার অধ্যাপক ড. জুংগাই ওয়াং বলেন, “প্রাচীনকাল থেকে এশীয় এই উপমহাদেশ বস্ত্রশিল্পে বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। ঢাকার মসলিন ছিল বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট তুলা বস্ত্র—যার কোমলতা ও মান আজও অতুলনীয়। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আজও বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল খাত বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। দেশের ৫০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক শিল্পের মেরুদণ্ড হিসেবে গড়ে ওঠা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। টেক্সটাইল ও অ্যাপারেলের প্রতি আগ্রহ ও নিষ্ঠা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে এবং দেশসেবার সুযোগ তৈরি করবে। এই সমাবর্তন শুধু একটি ডিগ্রি অর্জনের অনুষ্ঠান নয়—এটি আরও বড় একটি উত্তরাধিকার বহনের আনুষ্ঠানিক সূচনা।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, "মোট ৪,১২৬ জন গ্র্যাজুয়েট আজ তাদের ডিগ্রি গ্রহণ করছেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই সকল গ্র্যাজুয়েট দেশ ও জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। আমাদের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের টেক্সটাইল শিল্পে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে অবদান রেখে আসছে। এর পাশাপাশি ২৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখেছেন। আজকের এই সমাবর্তন শুধু একটি অর্জন নয়, বরং দায়িত্ব ও অঙ্গীকারের সূচনা। সততা, অধ্যবসায় এবং শিক্ষার ধারাবাহিক চর্চাকে জীবন ও কর্মের মূলমন্ত্র হিসেবে ধারণ করে নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে সমাজ, দেশ ও মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানাই।"

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মধ্য জানুয়ারির আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ বই পৌঁছাবে: শিক্ষা উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ে আজ রোববার আয়োজিত অনুষ্ঠান। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ে আজ রোববার আয়োজিত অনুষ্ঠান। ছবি: আজকের পত্রিকা

আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের আগেই শতভাগ নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)।

রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ে আজ রোববার আয়োজিত ‘নতুন পাঠ্যবইয়ের সফট কপি অনলাইনে আপলোডকরণ উদ্বোধন’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন বা পিডিএফ কপি প্রকাশ করা হয়।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম আগামী বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু হবে। তার আগেই অলমোস্ট হান্ড্রেড পার্সেন্ট (প্রায় শতভাগ) বই পৌঁছে যাবে।

আগামী বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের সবাই সব বিষয়ের নতুন পাঠ্যবই হাতে পাবে না বলে সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়।

এর সমালোচনা করে সি আর আবরার বলেন, ‘এখানে পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে রিপোর্ট (প্রতিবেদন) হয়েছে, যথার্থ রিপোর্ট হয়েছে। আবার কিছু কিছু রিপোর্ট আমি বলব, সেগুলো খুব যে একটা সৎ উদ্দেশ্যে হয়েছিল, সেটা না।’

নতুন বই নিয়ে অভিযোগের জবাব শিক্ষা প্রশাসন কাজের মাধ্যমে দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, ‘বিভিন্ন রকমের স্বার্থগোষ্ঠী এখানে কাজ করেছে এবং আমরা এখানে সেগুলো সয়েছি। এগুলো আমরা কোশ্চেন করিনি, কনটেস্ট করিনি। আমরা মনে করেছি, শেষ বিচারে আমরা কতটুকু নির্ভুল ও মানসম্পন্ন বই দিতে পারব, দ্যাট উইল বি আলটিমেট টেস্ট।’

বই ছাপানোর সময় বেশি লাগার কারণও অনুষ্ঠানে ব্যাখ্যা করেন সি আর আবরার।

বিভিন্ন প্রেসে অভিযান চালিয়ে ‘মানহীন’ বই ধ্বংস করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে যেন কোনো ভুল না থাকে, এ জন্য রিটেন্ডার করতে হয়েছে। বিভিন্ন রকমের চিন্তাভাবনা ছিল, সেগুলো আমাদের নিরসন করতে হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সমুদ্রের বাতাসে স্বাস্থ্যের বার্তা

ক্যাম্পাস ডেস্ক 
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৫
সমুদ্রের বাতাসে স্বাস্থ্যের বার্তা

কক্সবাজারের সোনারপাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়কে সম্প্রতি এক বর্ণাঢ্য ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং বিদেশ থেকে মোট ৫০০ জন দৌড়বিদ এই আয়োজনে অংশ নেন।

ভোর ৬টায় উখিয়ার সোনারপাড়া বিচ পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে দৌড়টি শেষ হয় সকাল ৭টায় তারকা মানের হোটেল অর্কিড ব্লুতে। পুরুষ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হন মোহাম্মদ সায়েদ (০১৫৯), প্রথম রানারআপ তারেক (০৪৫৬) এবং দ্বিতীয় রানারআপ আশিক (০১৬০)। নারীদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন বিদেশি প্রতিযোগী জোহানা (০২৩৯), প্রথম রানারআপ আভা (০০৬৫) এবং দ্বিতীয় রানারআপ কুজো (০০৮৭)।

ম্যারাথন আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাসিঘর ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন উপদেষ্টা এ এইচ সেলিম উল্লাহ, প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিন সিকদার, উখিয়া শাখার সভাপতি পিএম মোবারক, ইনস্টিটিউশনাল অ্যাফেয়ার্স উইংয়ের সিডিসিও শাইফুল ইসলাম শিহাব, উবায়েদ উল্লাহ শুভ, শাকিবুল ইসলাম, সাইয়েদ মোবারক, মেহেদী হাসান, শাহরিয়ার তানভীর রিফাত, আর জে রাফি, আবুল কাশেমসহ সংগঠনের অন্য সদস্যরা।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইয়াসিন সিকদার বলেন, ‘বিপুল সাড়া পাওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখা এবং স্বাস্থ্যসচেতন হওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা।’

ম্যারাথনের সমাপ্তির পর অংশগ্রহণকারীরা আরও এরূপ আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। আয়োজকেরা জানান, আগামী বছরও তাঁরা একটি নতুন ম্যারাথন আয়োজনের চেষ্টা করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত