Ajker Patrika

মনোবৈকল্য থেকে কিশোরদের অস্বাভাবিক যৌন আচরণ, দরকার কাউন্সেলিং

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬: ০১
মনোবৈকল্য থেকে কিশোরদের অস্বাভাবিক যৌন আচরণ, দরকার কাউন্সেলিং

চারপাশে শত শত অপরাধের মধ্যে যৌন হয়রানি নৈমিত্তিক ঘটনা। ভিড়ের মধ্যে অমনোযোগিতার সুযোগে স্পর্শ-ধাক্কা, গণপরিবহনে গাঘেঁষে বসা, প্রেমের ছলে জোরজবরদস্তি, আপত্তিকর ভিডিওধারণ করে যৌনসম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা, এমনকি মাদকের নেশায় আসক্ত করেও চলে নারীর যৌন নিপীড়ন। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে জেলার কোনো না কোনো প্রান্তে। এর মধ্যে সব অভিযোগ থানায় আসে না। এলে হয়তো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবু এধরনের অপরাধ ঘটেই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌনশিক্ষার অভাবে ছোট বয়সেই এমন নিপীড়নের প্রবণতা বাসা বাঁধছে কিশোর মনে। তার সঙ্গে এক্ষেত্রে আইনি প্রতিকার জোরদার না হওয়ায় এগুলো স্বাভাবিক আচরণে পরিণত হচ্ছে।

ধুনট উপজেলার অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ফুসলিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে রাসেল (২১)। এরপর কৌশলে ওই স্কুলছাত্রীর গোসলের নগ্ন ভিডিওধারণ করে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে স্কুলছাত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে সে। কিন্তু ওই স্কুলছাত্রী রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ রাসেল গোসলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় গত ১৪ নভেম্বর। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন তার বন্ধু জিয়াম সরদার (২০) ও সজিব মণ্ডল (১৯)। 

চলতি বছর জুন মাসে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় ঘটে একটি রোমহর্ষক ঘটনা। ১৪ বছরের এক কিশোর তার সমবয়সী আরেক কিশোর নওফেলকে খুন করে। কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ খুঁজে পায়, টাকার বিনিময়ে নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছিল ওই কিশোর। কিন্তু তার কাছে টাকা না থাকায় সে বন্ধু নওফেলকে খুন করে তার মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নেয়। তারপর সেই মোবাইল ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ২ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করে একটি হোটেল রুম। সেখানে মেয়েটির সঙ্গে মিলিত হয় সে। মেয়েটিকে ভাড়া দেয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এসব বর্ণনা দেয় ১৪ বছরের ওই কিশোর। 

মে মাসে ঘটে আরেকটি কিশোর অপরাধের ঘটনা। টাকার বিনিময়ে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এক মেয়েকে ভাড়া করে গাইবান্ধার তিন কিশোর। মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বগুড়ার সোনাতলার এক নির্জন মাঠে। তারপর রাতে সবাই সেখানে পৌঁছে কে আগে মেয়েটির সঙ্গে মিলিত হবে-এই নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় তাদের মধ্যে। এরই একপর্যায়ে ১৪ বছরের কিশোর রাকিব হোসেনকে খুন করে আহসান হাবিব সজীব (২০) নামের অপর কিশোর। মাসুম বিল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে সেই লাশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে এক ডোবায় ফেলে দেয়। পিবিআই এর অনুসন্ধানে উঠে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

বগুড়া পিবিআই পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড ঘটনা যতটা না ফৌজদারি অপরাধ তার চেয়ে বেশি সামাজিক অবক্ষয়ের নমুনা। সামাজিক, ধর্মীয় এবং পারিবারিক শিক্ষার অভাবে কিশোররা অতিআগ্রহী হয়ে খারাপ কাজে যুক্ত হচ্ছে এবং একপর্যায়ে বড় বড় অপরাধ ঘটাচ্ছে।’ 

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে একদিকে যৌনতাবিষয়ক অসচেতনতা আছে, অপরদিকে আছে অপশিক্ষা। যৌনশিক্ষার পরিবর্তে যৌন কুশিক্ষা লাভ করছে কিশোররা। অনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যবহার, নেশা এই কুশিক্ষার খোরাক জোগাচ্ছে। এসব মানুষের কুচিন্তাকে প্রভাবিত করছে এবং মানসিক বৈকল্য তৈরি করছে। অসুস্থ, অস্বাভাবিক যৌনতা এক ধরনের মানসিক রোগ যা সারতে কাউন্সেলিং এবং চিকিৎসা প্রয়োজন ৷ সেই সাথে সার্বিকভাবে প্রয়োজন শিক্ষা, সংস্কৃতির উন্নয়ন।’ 

আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদক ১৪-১৭ বছর বয়সী ৫ জন কিশোর, ১৮-২১ বছর বয়সী ৫ জন তরুণ এবং ২২-৪২ বছর বয়সী ৫ জন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। এদের মধ্যে ১২ জন জানান, বয়ঃসন্ধিকালে নারীদেহের প্রতি তীব্র আকর্ষণ এবং কৌতূহল ছিল তাদের। আর এরই জেরে ৮ জন কৈশোরে নানা ছলে বিভিন্ন বয়সের নারীর শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ করে। ৪ জন জানায়, তারা তাদের নিকট আত্মীয়দের শরীরে স্পর্শ করে এক ধরনের পুলক অনুভব করে। 

আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ২১ বছর বয়সী তরুণ জুলফিকারের (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘বয়ঃসন্ধিকালে আমার খুব কৌতূহল তৈরি হয় নারী শরীরের প্রতি, শারীরিক ইচ্ছাও বেড়ে যায় অনেক। একদিন কৌশলে আমার এক কাজিনের শরীরে বাজেভাবে স্পর্শ করি। পরবর্তীতে এটা ভেবে আমি ভীষণ অনুতপ্ত হই। কয়েক বছর পর হিউম্যান বডি এবং যৌনতা বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে স্টাডি করি নিজ উদ্যোগে। এরপর আমার মধ্যে আর কখনো এমন আগ্রহ জন্মায়নি।’ 

বগুড়ার ১২টি থানায় ২০২১ ও ২০২২ সালের দায়ের করা অভিযোগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই বছরে ৭৩৮টি মামলা দায়ের হয়েছে ধর্ষণ, কিশোরী অপহরণ, নারী নিপীড়ন, পর্নোগ্রাফি এবং যৌন হয়রানি বিষয়ে। এর মধ্যে ১৩৫টি মামলাই যৌন হয়রানি বিষয়ক। 
 
২০২১ সালে জেলায় ১২২টি ধর্ষণ, ১২৯টি অপহরণ, ৪৬টি যৌতুকের জন্য নিপীড়ন এবং ৬২টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১১২টি ধর্ষণ, ১৩৭ টি অপহরণ, ৫৭টি যৌতুক এবং ৭৩টি যৌন হয়রানির মামলা লিপিবদ্ধ হয়। 

জেলা পুলিশ জানায়, এসব অভিযোগের আসামিরা বেশির ভাগই একাধিকবার যৌন হয়রানি-নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন তারা। 

বগুড়া সদর থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে দায়িত্বরত পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) জেবুন্নেসা জানান, চলতি বছরে তার ডেস্কে ২১৬৩ জন নারী ভিকটিমের অভিযোগ রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে যৌন হয়রানির অভিযোগ ১৬৮টি। তিনি বলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগ বেশির ভাগই এসেছে কিশোরদের বিরুদ্ধে। করোনাকালে মুঠোফোনে আসক্ত হওয়ায় যৌন হয়রানির মাত্রা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন জেবুন্নেসা। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শ্যামলী শীল বলেন, ‘আমাদের দেশে যথাযথ যৌন শিক্ষার অভাবে যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ছোটবেলা থেকে মানুষের শারীরিক শিক্ষা এবং যৌনতার ক্ষেত্রে সঠিক নৈতিক দর্শন শিখতে হবে। শারীরিক প্রয়োজনীয়তাকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমেই পশু এবং মানুষের পার্থক্য তৈরি হয়। এই শিক্ষাটা পাঠ্যপুস্তকে এবং দেশের সংস্কৃতিতে চর্চা করতে হবে ৷ আমি মনে করি, শুধু কিশোর-কিশোরীদের জন্য নয়, সমগ্র জাতিকেই যৌনতা বিষয়ক একটি পাঠ নেওয়া প্রয়োজন যেন শরীরকে কেবলমাত্র সেক্স অবজেক্ট মনে করা না হয়।’ 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অশোক কুমার সাহা বলেন, ‘অস্বাভাবিক যৌন আচরণ এক ধরনের মানসিক বৈকল্য। শিক্ষার অভাবে এটা কিশোর মনে গেঁথে যায়। যৌনতা সম্পর্কে স্বাভাবিক ধারণা না থাকায় মানুষ বিকৃত আচরণ করে। যত দিন যৌনশিক্ষাকে গোপনীয় বিষয় হিসেবে রাখা হবে তত দিন এর অপব্যবহার চলতে থাকবে। যৌনশিক্ষাকে উন্মুক্ত শিক্ষার বিষয় করতে হবে।’ 

জাতিসংঘের ইউএনএফপিএ এর জেন্ডার বিশেষজ্ঞ মাসুদা ইসলাম বলেন, ‘যৌন হয়রানি কমাতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়েও বেশি জরুরি সামাজিক এবং পারিবারিক মূল্যবোধ। বাংলাদেশে সাধারণত পরিবারগুলো একজন মেয়ে সন্তানকে যেভাবে মূল্যবোধ শেখায়, শাসন করে ছেলে সন্তানদের সেভাবে শেখায় না, শাসনে রাখে না। ফলে, ছেলেরা পরিবার এবং সমাজ থেকে এটা শিখে বড় হয় যে তারা চাইলেই নারীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে পারে।’

বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আইনের ভাষায় অপরাধকে অপরাধই মনে করি। এটাকে মানসিক রোগ বিবেচনা করে আসামির প্রতি নমনীয়তা দেখানোর সুযোগ নেই। তবে একজন অপরাধী তৈরি হয়ে ওঠার পেছনে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানামুখী ভূমিকা থাকে। শুধু আইন প্রয়োগ করে অপরাধ কমানো সম্ভব হলেও নির্মূল করা সম্ভব নয়৷’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অতি লোভে তাঁতি নষ্ট: ৬০০ কোটি টাকা হারালেন নওগাঁর ৮০০ জন!

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৪
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।

বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।

মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।

প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।

কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।

তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ত্রাস ‘সন্ত্রাসী রনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৪
সন্ত্রাসী মামুন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী রনি। ছবি: সংগৃহীত
সন্ত্রাসী মামুন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী রনি। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী। এখন ঢাকার অপরাধজগতের নতুন নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, রনি মূলত মুদিদোকানি ছিলেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন কারাগারে থাকাকালে রনির সঙ্গে পরিচয় হয়। ইমন তাঁর মাধ্যমে অপরাধ চক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুরুতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ডিশ ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে কারাগারে থাকা ইমনকে পাঠাতেন। পরে সন্ত্রাসী ইমনের শিষ্যদের ব্যবহার করে বড় বড় কাজ করতে থাকেন। মিরপুর এলাকায়ও ব্যবসা বড় করতে থাকেন। এভাবে রনি ধীরে ধীরে ঢাকার অপরাধজগতের পরিচিত মুখে পরিণত হন।

ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল ইমনের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রনির নির্দেশে ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ পিয়াস গুলি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ফারুক রবিন, রুবেল, শামীম আহম্মেদ ও ইউসুফ ওরফে জীবনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও রনির খোঁজ মিলছে না।

ডিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর তাঁরা প্রথমে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফারুক ও রবিন ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের কাছে রেখে আসেন। পরে রুবেল পেশায় দরজি ইউসুফের কাছে অস্ত্রগুলো হস্তান্তর করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ইউসুফ মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসায় অস্ত্র ও গুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রনি পারিশ্রমিক হিসেবে এই টাকা দুই ভাগে ভাগ করে দুই শুটারকে দেন।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, জামিনে মুক্তির পর মামুন আবার অপরাধজগতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। রনিকে পাত্তা না দিয়ে তাঁর এলাকা দখল করতে চান। তখনই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে পরার্মশ করে মামুনকে পথ থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেন।

পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরোনো দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা। মামুন ও ইমন দুজনই ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, যাঁরা প্রভাব বিস্তার ও এলাকা দখল নিয়ে লড়াই করছিলেন। ইমনের সহযোগী হিসেবে রনি দ্রুত অপরাধজগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ মামুন হত্যার পর তিনি এখন ঢাকার অপরাধজগতে নতুন চরিত্র। ডিবি অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী রনি ও তাঁর সহযোগীদের ধরার চেষ্টা করছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পাঁচজন রিমান্ডে

মামুন হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গতকাল মোহাম্মদপুর থানার অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত