Ajker Patrika

কাপড় বিক্রি শুধু নয়, মানুষকে পুষ্টিকর খাবারের সন্ধানও দেন রীদা

মন্টি বৈষ্ণব
কাপড় বিক্রি শুধু নয়, মানুষকে পুষ্টিকর খাবারের সন্ধানও দেন রীদা

সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্যের। কিন্তুবাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছেই এই পুষ্টিকর খাদ্য এখনো অধরাই রয়ে গেছে। অথচ শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পুষ্টিকর খাবারের কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সাধ ও সাধ্যের চিরায়ত সমীকরণের ফেরে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। তবে, খাবারের পুষ্টিগুণ বিষয়ে ধারণা থাকলে কম মূল্যের খাবার দিয়েও শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণ করা যায়। কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তরটিই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দিচ্ছেন পেশায় পুষ্টিবিদ রীদা নাজনীন। 

রীদা নাজনীন একজন পুষ্টিবিদ। এ ছাড়া ‘পিরিতি’ নামের অনলাইনভিত্তিক একটি কেনাকাটার প্ল্যাটফর্মের স্বত্বাধিকারী তিনি। সেখানে চলে কাপড়ের ব্যবসা। পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যের উপকারিতা নিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কথা বলেন তিনি। 

রীদার জন্ম উত্তরবঙ্গের মফস্বল শহরে। গ্রামের পরিবেশে কেটেছে তাঁর শৈশবকাল। ছোটবেলা থেকে স্বাধীনভাবে নিজের কথা প্রকাশ করতে পছন্দ করতেন তিনি। নিজের মতো করে কাজ করার মধ্যেই খুঁজে পেতেন অফুরান প্রাণশক্তি। আর সেই প্রাণ সঞ্চারের ভাবনা থেকে অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটার প্ল্যাটফর্ম ‘পিরিতি’র যাত্রা শুরু করেন। বেড়ে ওঠা মফস্বল শহরে হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিষয়ে পড়তে চলে আসেন ঢাকায়। তখন থেকে ঢাকায় পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যান্য কাজ শুরু করেন। রীদার বাবা সরকারি চাকরিজীবী। আর ভাইবোনেরাও নিজেদের মতো কাজ করতে পছন্দ করেন। 

ক্যাপসিকাম ও আদাযোগে বাঁধাকপি ফার্মেন্টেশনরীদা কাজ করেন বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় দুটি বিষয়—খাদ্য ও পোশাক নিয়ে। এর শুরুর গল্পটা জানতে চাইলে বললেন, ‘পেশায় পুষ্টিবিদ হিসেবে কাজ করছি ২০১২ সাল থেকে। স্বাস্থ্য নিয়ে আমি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে এক বছর কাজ করেছি। আমার কাজ ছিল খাদ্যের বিষয়ে কাউন্সেলিং করা, সময় দিয়ে সবাইকে খাবারের উপকারিতার বিষয়ে বুঝিয়ে বলা। এভাবে কাজ করতে করতে একদিন চিন্তা করলাম ব্যবসায়িক কোনো প্রতিষ্ঠানে খাদ্যের দরকারি বিষয়ে কথা বলার সুযোগ খুব কম। সেই ভাবনা থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ইচ্ছা মাথায় আসে। এই ভাবনা থেকেই যৌথ উদ্যোগে একটা হেলথ কেয়ার সেন্টার দিয়েই আমার এই যাত্রার সূচনা।’ 

রীদা বলেন, ‘বর্তমানে আমি অনলাইনভিত্তিক কাউন্সেলিং করছি। সেখানে সবাইকে বলার চেষ্টা করছি, শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন কতটা জরুরি। এর চেয়ে আরও জরুরি বিষয় হলো আমাদের জীবনযাপনের পদ্ধতিকে একটু সহজ করে ভাবতে শেখা। রোগ ও ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিজের নেওয়া শেখাটা জরুরি।’ 

রীদা নাজনীন জানালেন, তিনি সব সময় খাবারের বিষয়ে এমন কিছু খাবারের তথ্য খোঁজেন, যা সার্বিকভাবে সবার জন্য সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী। যেমন, কাঠবাদামের বিকল্প হিসেবে রয়েছে একই গুণাগুণসম্পন্ন তিসি। কাঠবাদামের দাম বেশি বলে এটি অনেকে কিনতে পারেন না। বাদামের কেজিপ্রতি দাম ১ হাজার টাকা। অথচ তিসির বাজারমূল্য কেজিতে ২০০ টাকা। এ ছাড়া আমি ৫০ থেকে ২০০ টাকা মধ্যে ঘরে তৈরি বিভিন্ন সবজির ফার্মেন্টেশনও করা যায়, যা সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। 

বীট ফার্মেন্টেশনকিন্তু শুধু পুষ্টি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তো আর চলা সম্ভব নয়। তাই রীদা উদ্যোক্তা হিসেবেও যাত্রা করেন। মাঝেমধ্যে কলকাতা যেতেন। সেখানে কাপড়ের দাম অনেক কম। আর এখান থেকেই মাথায় ব্যবসার চিন্তা মাথায় আসে। বললেন, কলকাতায় কাপড়ের দাম কম। বিষয়টি আমাকে বেশ নাড়া দেয়। এ ছাড়া দিল্লিতে গেছি একবার একটা প্রফেশনাল কোর্সে অংশ নিতে। সেখানেও দেখলাম পোশাকের দাম অনেক কম। এসব দেখে ২০১৩-১৪ সময়ে বুটিকস করার চিন্তা আসে। ২০১৯ সালে ড্রয়িং ও পেইন্টিং নিয়ে স্নাতক পড়া শুরু করি। ডিজাইন, কালার নিয়ে কাজ শুরু করলে কীভাবে শাড়িতে তা যুক্ত করা যায়, সেটা ভাবতে থাকি। এর পর শুরু হলো, কোথায় কী পাওয়া যায়, তার খোঁজ নেওয়া। ডোবি নকশার শাড়ি, টাঙ্গাইলে ভালো মানের কী আছে, ন্যাচারাল ডাইয়ের কাজ কোথায় হয়। আস্তে আস্তে সবই জানতে শুরু করি। এর পর শুরু করলাম অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটার প্ল্যাটফর্ম ‘পিরিতি’-এর যাত্রা।’ 

রীদা সাশ্রয়ী মূল্যের যে চিন্তা থেকে কাজটা শুরু করেছিলেন, মাঠে নেমে দেখলেন বিষয়টি অনেক কঠিনও বটে। কারণ, এই সময়টাতে সবকিছুই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। এ ছাড়া অনলাইন কেন্দ্রিক এমন উদ্যোগ অনেক আছে, যেখানে প্রতিযোগিতাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। কম দামে জিনিস বিক্রি করলে ক্রেতারা ভাবেন পণ্যের গুণগত মান নিয়ে। তবে সময় যত যাচ্ছে, পিরিতির পণ্যের ওপর ক্রেতাদের আস্থা তত বাড়ছে বলে জানালেন রীদা। বললেন, ক্রেতাদের ভালোবাসা পাচ্ছি। পিরিতির প্রতি তাদের ভরসার জায়গা বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। 

শিবুরি ও মোম বাটিকের ফিউশান ওর্য়াকযারা উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে চান, তাঁদের উদ্দেশ্যে রীদা বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস রাখুন নিজের ওপর। আর আপনার কাজকে ভালোবাসুন। দেখবেন, সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ছাড়িয়ে আপনি আপনার কাজ নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছেন। আপনি পারবেন, এই শব্দটা নিজেকে বলুন। এই আত্মবিশ্বাস খুব জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, মন থেকে চাইলে মানুষ যেকোনো কাজ করতে পারবে। যেমন ধরেন, আমি কোনো দিন ছবি আঁকিনি। শুধু এটুকুই জানি, আমি আঁকতে পারব। আত্মবিশ্বাসের কথা হলো, আজ আমি ছবি আঁকতে পারি।’ 

রীদা ‘পিরিতি’-এর মাধ্যমে দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। আর চেষ্টা করছেন কম বাজেটে মানসম্মত পণ্য সবার হাতে পৌঁছে দিতে। নিজের স্বপ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পিরিতি নিয়ে কাজ শুরুর পর একটা বিষয় বিশেষভাবে অনুভব করি, সেটা হলো ছোট্ট পরিসরে কাজ করেও অন্যের জন্য কিছু করা যায়। শাড়ি-সুতা তৈরির কারিগর, তাঁতি, ন্যাচারাল ডাই কারখানার কারিগর, উদ্যোক্তা—সবার সঙ্গেই পিরিতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। করোনাতে এই প্রতিটি পর্যায়ের মানুষ ভুক্তভোগী ছিল। করোনায় পরিচিত এক ডাই কারখানার দাদা, তাঁর পুঁজির সবই হারিয়েছেন। আমি তাঁকে আমার কাজের সঙ্গে যুক্ত করি। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠান আবার আশার আলো দেখছে। পিরিতির সার্বিক কাজের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শ্রমিককে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। এমনকি করোনাকালে তাঁরা যেন আর্থিকভাবে ভালো থাকেন, সে ব্যবস্থাও করেছি। আমার ভাবতে ভালো লাগে, একটি শাড়ির সঙ্গে কতজনের কর্মসংস্থান জড়িত। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছে পিরিতি। সবার ভালোবাসা নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই অনেক দূর।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিসিআইয়ের সাধারণ সভা: ভ্যাট ও করকাঠামো যুক্তিসংগত করার দাবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ভ্যাট ও করকাঠামোকে আরও যুক্তিসংগত করার দাবি তুলেছে দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ে যুক্ত উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। পাশাপাশি, সকল শিল্প এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহকে নিরবচ্ছিন্ন ও টেকসই করতে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে উৎপাদন কার্যক্রম বাধাহীনভাবে চলতে পারে।

গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তাঁরা বলেন, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, শিল্পের প্রতিযোগিতা বজায় রাখা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া অত্যাবশ্যক।

সভায় বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশের উৎপাদনশীল শিল্পকে শক্তিশালী রাখতে সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক রাখা, সুষ্ঠু উৎপাদন ও কার্যক্রম নিশ্চিত করতে মসৃণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। আয়বৈষম্য কমানো এবং টেকসই এমএসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার, শিক্ষাবিদ ও শিল্পের যৌথ উদ্যোগ অপরিহার্য। বিসিআই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে শিল্পের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কাজ করছে, যাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, শিল্প প্রতিযোগিতামূলক থাকে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, ভ্যাট ও করকাঠামো সহজ, উদ্যোক্তাবান্ধব ও উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে লক্ষ্য করেই তৈরি হওয়া উচিত। তাঁরা আরও বলেন, পণ্য টেস্টিং এবং সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়াকে উদ্যোক্তাবান্ধব করা, নতুন উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপের সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি। এসব পদক্ষেপ দেশীয় শিল্পে নতুন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতা ধরে রাখবে।

সভায় শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এবং সাবেক সভাপতি এ টি এম ওয়াজিউল্লাহর জন্য। এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। সভা পরিচালনা করেন বিসিআই সেক্রেটারি জেনারেল ড. মো. হেলাল উদ্দিন। সভার আলোচ্যসূচি অনুযায়ী, বিগত ৩৮তম সাধারণ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিসিআই কার্যক্রম ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অডিটেড হিসাব অনুমোদন এবং নতুন অডিটর নিয়োগের বিষয়ও অনুমোদিত হয়। সভায় অংশ নেন বিসিআই সদস্য ও সাবেক নেতা শাহেদুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিতির সংকট: সুরক্ষা ঝুঁকিতে গ্রাহকের আমানত

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিতির সংকট: সুরক্ষা ঝুঁকিতে গ্রাহকের আমানত

দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের যে আশঙ্কাজনক উত্থান ঘটেছে, তার সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব পড়ছে গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তায়। নিরাপত্তা সঞ্চিতির (প্রভিশন) বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুরক্ষাকাঠামোই কার্যত দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ঘাটতি অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং খাতের সংকট কেবল সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং এর প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়বে সাধারণ গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষার ওপর, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকির বার্তা দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ২৪টি ব্যাংকে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। বিপরীতে এসব ব্যাংক রাখতে পেরেছে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। এতে সম্মিলিত সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।

এক বছর আগের সেপ্টেম্বরে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৫৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা (২ লাখ ৯৩ হাজার ৮২৩ কোটি)। ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, এই প্রবণতা স্বাভাবিক কোনো আর্থিক চক্রের ফল নয়; এটি দীর্ঘদিন ধরে আড়াল করে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রকৃত চিত্র সামনে আসার পরিণতি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পালাবদলের পর ব্যাংকিং খাতে পুনর্গঠিত, পুনঃ তফসিলকৃত, অবলোপনকৃত ও আদালতে আটকে থাকা ঋণসহ মোট ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে। বর্তমানে এসব ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের মোট অঙ্ক প্রায় সাড়ে ১০ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং মন্দমানের কুঋণ ৫ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি মানে সরাসরি আমানতকারীর ঝুঁকি। তাঁর মতে, গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই প্রভিশন রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক ব্যাংক এমন অবস্থায় আছে, তারা ন্যূনতম সঞ্চিতিও গড়ে তুলতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে সময়মতো প্রভিশন না রাখতে পারলে সেই ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ হওয়া উচিত।

ব্যাংকিং বিধি অনুযায়ী, সাধারণ শ্রেণির ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ, নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা লোকসান শ্রেণির খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা, কম আমানত প্রবৃদ্ধি এবং সামগ্রিক আর্থিক সংকটে ব্যাংকগুলোর সেই সক্ষমতা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, খেলাপি ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের দ্রুত বৃদ্ধিই প্রভিশন ঘাটতির মূল কারণ। সরকারের পালাবদলের পর এসব ঝুঁকি প্রকাশ্যে আসায় ব্যাংকিং খাতের ভেতরের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ডাইনামিক প্রভিশনিং চালুর পরিকল্পনা নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, এই ডাইনামিক প্রভিশনিং চালু হলে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়বে, মূলধনের চাপ কমবে এবং কুঋণ হ্রাস পেলে প্রভিশন ঘাটতিও কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেবিএস হোল্ডিংসের ফ্ল্যাট কিনলে বিশেষ ছাড় পাবেন প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

প্রাইম ব্যাংক পিএলসি দেশের শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির আওতায় প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেড থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।

সম্প্রতি জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই অংশীদারত্বের আওতায় প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেড থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা পাবেন, যা তাঁদের দেশের প্রিমিয়াম রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ আরও সহজলভ্য করবে।

চুক্তিতে প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন মামুর আহমেদ এবং জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের পক্ষে ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল হক।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেটস জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল এবং জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) মো. বেলায়েত হোসেনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এই অংশীদারত্বের মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের লাইফস্টাইলভিত্তিক মানসম্পন্ন সেবা ও আর্থিক সমাধান প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, যা গ্রাহকদের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুনরায় বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট শওকত আজিজ রাসেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আবারও বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। ছবি: সংগৃহীত
আবারও বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবার নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। তিনি আম্বার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং দেশের টেক্সটাইল শিল্পে একজন উদ্যোক্তা।

গত ২৫ নভেম্বর বিটিএমএর গুলশান কার্যালয়ে প্রার্থীদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বিটিএমএ।

এতে বলা হয়, বিটিএমএর তিনজন ভাইস প্রেসিডেন্টও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরি থেকে মো. শামীম ইসলাম, ফ্যাব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরি থেকে মো. আবুল কালাম ও টেক্সটাইল প্রোডাক্ট প্রসেসের ক্যাটাগরি থেকে শফিকুল ইসলাম সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত