Ajker Patrika

উদ্যোক্তা হতে প্রয়োজন অধ্যবসায় ও দৃঢ়তা

মন্টি বৈষ্ণব
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৩৭
উদ্যোক্তা হতে প্রয়োজন অধ্যবসায় ও দৃঢ়তা

‘কাজটা যখন শুরু করি তখন উদ্যোক্তা শব্দটার সঙ্গে অপরিচিত ছিলাম।’ এভাবেই নিজের উদ্যোক্তা জীবন শুরুর গল্পটা বললেন সোনিয়া মান্নান। অনলাইনভিত্তিক শপিং প্ল্যাটফর্ম Monipuri Handicrafts-এর যাত্রা হয়েছিল ২০১২ সালে। সোনিয়া যখন দুরুদুরু বুকে এই যাত্রা করেন, তখনো তিনি আসলে নিজের কাজের অভিমুখটা বুঝতে পারেননি। শুধু বুঝেছিলেন নিজে কিছু একটা করতে চান। 

নারী উদ্যোক্তা সোনিয়া। জীবনে একটা পর্যায়ে এসে তিনি নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরি করতে চান। অনেক চিন্তার পর একপর্যায়ে অনলাইনভিত্তিক শপিং প্ল্যাটফর্ম ‘Monipuri Handicrafts’-এর যাত্রা শুরু করেন। সোনিয়া মূলত মণিপুরী হ্যান্ডলুম শাড়ি, মণিপুরী হ্যান্ডউইভেন লেডিস শাল, ওড়না নিয়েই কাজ করেন।

সোনিয়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠা মৌলভীবাজারেই। এইচএসসি পাস করেন মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে। সিলেটের এমসি কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পড়ার পর হঠাৎ করেই তাঁর সুযোগ আসে নরওয়ে সরকারের পিসকোর হিসেবে কাজ করার। এর জন্য তিনি চলে যান ফিলিপাইনে। সেখানে তেলাপিয়া মাছের ওপর দুটি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। দেশে এসে আমেরিকান-বাংলাদেশ জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যুক্ত হন। পর্যায়ক্রমে সেখানে প্রধান হিসাব কর্মকর্তা পদে উন্নীত হন। কিন্তু বিয়ের পর পারিবারিক কারণে চাকরিটা ছেড়ে দেন। এরপরই ফিরে আসে সেই নিজে কিছু করার স্বপ্নটি। 

কমলগঞ্জে তাঁতিদের সঙ্গে সোনিয়াসোনিয়া মান্নান বলেন, ‘নিজে কিছু একটা করতে চাই—এমন একটা ভাবনা থেকেই আমার ব্যবসার যাত্রা শুরু। নিজের এলাকার একটি অনন্য পণ্য নিয়ে ব্যবসা করার চিন্তা থেকেই মণিপুরী পণ্যকে বেছে নেওয়া। এর রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও ইতিহাস। তা ছাড়া সে সময় মণিপুরী পণ্যের দেশজুড়ে চাহিদা থাকলেও তা সহজলভ্য ছিল না। তবে, কাজটা যখন শুরু করি, তখন উদ্যোক্তা শব্দটির সঙ্গে অপরিচিত ছিলাম। একপর্যায়ে শাড়ি বুনন প্রক্রিয়া শিখি। ডিজাইন করা, মোটিফ করাও শিখলাম। অনলাইনে বিভিন্ন কোর্সও করেছি। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) পরিচালিত উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে (ইএসডিপি) প্রশিক্ষণ নিই।’ 

২০১২ সালের জুলাই মাসে একদিন সাহস করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ তৈরি করেন সোনিয়া মান্নান। সেই শুরু। বললেন, ‘সে সময় এমন একটা নাম খুঁজি, যা আমার কাজের প্রতিনিধিত্ব করবে। এ কথা, সে কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত নাম ঠিক করলাম ‘Monipuri Handicrafts’। প্রথমে নিজের মণিপুরী শাড়ির ছবি তুলে পেজে আপলোড দিতাম। সেখানে এক-দুটি লাইক আসতে থাকে। একপর্যায়ে ক্রেতারা মণিপুরী শাড়ির জন্য অর্ডার করেন। আমি পুরো মণিপুরী পাড়া ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন কম্বিনেশনের শাড়ি কিনে ক্রেতাদের পাঠাতে থাকি। তখন আসলে আমার লাভ কিছুই থাকত না। কারণ, প্রোডাক্ট সোর্সিং করতেই বেশি খরচ পড়ত। কিন্তু একটা অর্ডারের কাজ শেষ করতে পারলে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করত। এর পর আমি ভালো কোয়ালিটি, পছন্দসই ডিজাইনের শাড়ি খুঁজে খুঁজে প্রোডাক্ট স্টক করা শুরু করি।’ 

পণ্যের গুণগত মান, আর ক্রেতাদের পছন্দকেই বেশি অগ্রাধিকার দেন সোনিয়া। তিনি মাত্র দেড় হাজার টাকা পুঁজিতে কাজ শুরু করেন। মজার বিষয় হলো তাঁর বিক্রি করা প্রথম শাড়ির দামও ছিল দেড় হাজার টাকা। অর্থাৎ, মুনাফা শূন্য। এমন পরিস্থিতিতে নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখাটা অনেক কঠিন। সেই কঠিন কাজটিই করেছেন সোনিয়া। ফলও পেয়েছেন। বর্তমানে সোনিয়ার কাছে প্রায় ২ লাখ টাকা মূল্যমানের কাপড়ের মজুত থাকে সব সময়। এখন প্রতি মাসে কমবেশি ১৫ হাজার টাকার মুনাফা আসে। তাঁর প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৪ জন শ্রমিক কাজ করছেন। 

দেশের অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো করোনাকালে কঠিন পরিস্থিতি পার হতে হয়েছে সোনিয়াকেও। প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল ‘Monipuri Handicrafts’-এর কাজ। অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের পথ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সোনিয়া বসে থাকেননি। শ্রমিকদের কথা চিন্তা করেই কুরিয়ার সার্ভিস চালুর সঙ্গে সঙ্গেই আবার সচল করেন প্রতিষ্ঠানকে। এই সময় তিনি পাইকারিভাবে পণ্য বিক্রি করেছেন। 

রং করার পর ওড়না রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছেএখন আবার কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। কিন্তু শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নানা বাধা-বিপত্তি তাঁর সঙ্গী হয়ে গেছে বলা যায়। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে চলার পথে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন। মণিপুরী তাঁতি, শাড়ির কম্বিনেশন, উৎপাদন, বাজারে চাহিদা, পণ্যের সহজলভ্যতা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। কাজ করতে গিয়ে যেমনটা ভেবেছিলেন, বাস্তব কাজের পরিস্থিতি তেমনটা পাননি। শুনতে হয়েছে অনেক কটু কথা। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল মণিপুরী সমাজ। তাদের ভাষা ভিন্ন। তাদের সঙ্গে সোনিয়া যেভাবে কাজ করতে চাইতেন, সেটা ঠিকঠাক পারতেন না। তা ছাড়া তাদের জীবনমান অনেক অনগ্রসর। এখনো বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। নেই তাদের পর্যাপ্ত কাঁচামালের সরবরাহ। 

ছিল পারিবারিক নানা সংকটও। বিয়ের ১০ বছর পর বিচ্ছেদ হয় সোনিয়ার। অনেক ভেঙে পড়েন। ভাবেন, জীবনসংগ্রামের লড়াইয়ে হেরে যাবেন কিনা। কিন্তু আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। এই কঠিন সময়ে পরিবার ও বন্ধুদের সমর্থন পেয়েছেন। বললেন, ‘যে মণিপুরী দাদা, বৌদিদের সঙ্গে কাজ করতাম, তাঁরাও আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে তিনি নিজের যোগ্যতা আর শ্রম দিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান। 

হাল না ছাড়ার মানসিকতাকেই উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় গুণ বলে মনে করেন সোনিয়া। এ দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তাঁর বক্তব্য—‘কখনোই হাল ছাড়ব না—এমন একটি গুণ একজন উদ্যোক্তার থাকতে হবে। সফল উদ্যোক্তারা লক্ষ্যে অর্জনকারী। ব্যবসায় ব্যর্থতার প্রধান কারণ হলো খুব তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দেওয়া। যদি আপনি অধ্যবসায়ী না হন, অনুসন্ধান, গবেষণা না করেন, তাহলে আপনি ব্যবসায় সফল নাও হতে পারেন। তবে আপনি যদি অবিচল থাকেন। তাহলে আপনার সফল হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে, অধ্যবসায় এবং দৃঢ়তা, পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ 

মণিপুরী শাড়িনিজের পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে সোনিয়া বলেন, ‘অনলাইনে ব্যবসা করব—এই কথা পরিবারের কাউকে শুরুতে বোঝাতে পারিনি। কিন্তু এখন বাবা, মা, ভাই, বোনসহ আত্মীয়রা আমাকে সহযোগিতা করেন। আমরা দুই বোন, দুই ভাই। বর্তমানে আমি বাবা-মায়ের সঙ্গে মৌলভীবাজার শহরেই থাকি। বাবা ব্যবসায়ী; কিন্তু বর্তমানে অবসরে আছেন। মা গৃহিণী। বোন ব্যাংককে জাতিসংঘে চাকরি করে। এর পরের ভাই একটা এনজিও তে আর ছোট ভাই একটা সফটওয়্যার ফার্মে আছে।’ 

যে স্বপ্নের পথে হাঁটছেন, স্বপ্নের সেই জায়গা থেকে পিছপা হতে চান না সোনিয়া। এখন তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য একটা কারখানা তৈরি করা, যেখানে তাঁর নিজের মতো করে নতুন কিছু তৈরি করার সুযোগ থাকবে। ভবিষ্যতে কী করতে চান জানতে চাইলে বললেন, ‘আমি ভালো ব্যবসায়ী হতে চাই। আমার একটা ব্র্যান্ড হবে। এই শিল্পের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, আমার সফল ব্যবসায়ী হওয়ার চেয়ে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটা টিকিয়ে রাখা অনেক বেশি দরকারি। নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যদি করতে পারি, আর যদি মণিপুরী পণ্যের ঐতিহ্যের একটা দীর্ঘমেয়াদি জায়গা তৈরি করতে পারি—সেটাই হবে আমার আসল সফলতার জায়গা। এর মাধ্যমে মণিপুরী পণ্যের ঐতিহ্য দেশব্যাপী এবং দেশের বাইরেও ছড়িয়ে দিতে চাই।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা 
রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি

রাজস্ব খাতে ব্যাপক সংস্কার এবং সব খাতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা (অটোমেশন) চালুর উদ্যোগের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বাড়তি তৎপরতা সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। প্রতিমাসে রাজকোষের হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে ঘাটতির ব্যবধান স্পষ্ট হচ্ছে এবং চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতা বজায় আছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৪৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বা ১৩.৮৯ শতাংশ।

তবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো—রাজস্ব আদায়ে বৃদ্ধি হয়েছে ১৫.১৫ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আদায় হয়েছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যের ধীরগতির কারণে রাজস্ব আদায় প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে। তবে বছরের শেষ দিকে সাধারণত আদায় বাড়ে। করের আওতা বৃদ্ধি, কর পরিপালন জোরদার করা এবং ফাঁকি প্রতিরোধে এনবিআর সক্রিয়।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক মন্দাভাব, কাঠামোগত দুর্বলতা ও সক্ষমতার অভাব সরাসরি রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তা ছাড়া অর্থবছরের মাঝপথে লক্ষ্যমাত্রা একলাফে ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর কারণে বাস্তবতার সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার ব্যবধান আরও প্রকট হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। তবে ১০ নভেম্বর বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটি তা ৫ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করে। ফলে বাকি সাত মাসে এনবিআরকে ৪ লাখ ৫ হাজার ২৪ কোটি টাকা আদায় করতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থাকে। প্রধান কারণ হলো এনবিআরের সক্ষমতার চেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ। মানবসম্পদ, কারিগরি দক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা পর্যাপ্ত নয়; পাশাপাশি করদাতা এবং করযোগ্য ব্যক্তির মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে, কর ফাঁকিও প্রচুর। বর্তমান ব্যবসায়িক মন্দা, খরচ বৃদ্ধি, আয় হ্রাস এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগ কমে যাওয়াও রাজস্ব আদায়ে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানো, অটোমেশন ও সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন করলে রাজস্ব ফাঁকি রোধ করে আদায় বাড়ানো সম্ভব।

সাবেক আমলা ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, এনবিআরের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি প্রশাসনিক পদে বড় রদবদলের কারণে কার্যক্রম গোছাতে কিছুটা সময় লাগা স্বাভাবিক।

রাজস্ব খাত অনুযায়ী, ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। প্রথম পাঁচ মাসে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৫৮ হাজার ২৩১ কোটি টাকা, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা; ঘাটতি ৩ হাজার ৮১৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ৬.১৫ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১.৯৭ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব আসে আয়কর খাতে। আদায় হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৮১ কোটি, লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ হাজার ৯৯৫ কোটি ২৫ লাখ; ঘাটতি ২০.১৯ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। কাস্টমস বা শুল্ক খাতে ৪২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার ৯৭৯ কোটি ৫৬ লাখ; ঘাটতি ১৫.৯১ শতাংশ, তবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.২৮ শতাংশ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার অপরিহার্য। এনবিআরের মানবসম্পদ, প্রযুক্তি ব্যবহার, প্রক্রিয়ার সরলীকরণ এবং অটোমেশন কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আদালতের রায়ে ইতিহাস গড়লেন ইলন মাস্ক, সম্পদ ছাড়াল ৭০০ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ২৪
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত

পে প্যাকেজ বা বেতন-ভাতাসংক্রান্ত একটি মামলার রায়ের পর টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের সম্পদ গত শুক্রবার রাতে ৭৪৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।

ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট মাস্কের ১৩৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের টেসলা স্টক অপশনগুলো পুনর্বহাল করার পরই তাঁর সম্পদে এই বিশাল উল্লম্ফন দেখা যায়।

উল্লেখ্য, গত বছর আদালত এই সুবিধাগুলো বাতিল করেছিলেন।

২০১৮ সালে মাস্কের যে বেতন প্যাকেজের মূল্য ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছিল, সেটিই গত শুক্রবার ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট পুনর্বহাল করেন। এর দুই বছর আগে নিম্ন আদালত ওই পারিশ্রমিক চুক্তিকে ‘অবিশ্বাস্য’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করেছিলেন।

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছেন, ২০২৪ সালে দেওয়া যে সিদ্ধান্তে বেতনের প্যাকেজটি বাতিল করা হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না এবং মাস্কের প্রতি অন্যায্য ছিল।

এর আগে চলতি সপ্তাহে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স শেয়ারবাজারে আসতে পারে—এমন প্রতিবেদনের পর মাস্কের সম্পদ ৬০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন।

এদিকে গত নভেম্বরে টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা আলাদাভাবে মাস্কের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি পারিশ্রমিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।

এটি করপোরেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেতন প্যাকেজ। বিনিয়োগকারীরা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিকসভিত্তিক এক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে মাস্কের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানান।

ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, মাস্কের বর্তমান সম্পদমূল্য গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের চেয়ে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বেশি। ল্যারি পেজ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর তথ্য জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। একই তথ্য বারবার ছাপিয়ে আলাদা স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হতো। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সম্প্রতি চালু করেছে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম (এসএসএস)।

নতুন এই সিস্টেমের মাধ্যমে কোম্পানি ও ফান্ডগুলো মূল্য সংবেদনশীল ঘোষণা, আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য রেগুলেটরি ফাইলিং কাগজ ছাড়াই অনলাইনে জমা দিতে পারবে। এতে সময় ও খরচ কমার পাশাপাশি তথ্য ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং ট্র্যাকিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ডিএসই সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই প্ল্যাটফর্ম ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ দুটি নতুন মডিউল যুক্ত হওয়ায় এখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তথ্য একই ডিজিটাল গেটওয়ে দিয়ে জমা দেওয়া সম্ভব। ফলে দ্বৈত সাবমিশনের ঝামেলা প্রায় সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে কাগুজে নথির ওপর নির্ভরতা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল সাবমিশন শুধু সুবিধার বিষয় নয়, এটি বাজার শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করার একটি কাঠামোগত পরিবর্তন।

ডিএসই জানায়, চায়নিজ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কাজ করে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বাড়ানোর পর সিস্টেমটি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন ফিচার যুক্ত করা সহজ হবে।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. মো. আসিফুর রহমান বলেন, একক ডিজিটাল সাবমিশন পয়েন্ট চালু হওয়ায় ম্যানুয়াল হস্তক্ষেপজনিত ভুল কমবে এবং তথ্য জমার প্রতিটি ধাপ ডিজিটালি যাচাইযোগ্য থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের প্রভাব শুধু স্টক এক্সচেঞ্জেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেশের প্রথম ‘ক্যাশলেস’ জেলা হতে যাচ্ছে কক্সবাজার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল ও নগদ লেনদেনমুক্ত (ক্যাশলেস) রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে দেশের প্রথম ‘ক্যাশলেস’ জেলা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই তথ্য জানান।

গভর্নর বলেন, ‘২০২৭ সালের মধ্যে দেশের অন্তত ৭৫ শতাংশ খুচরা লেনদেন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রতিটি নাগরিকের হাতে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।’

চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা শীর্ষক এই সভায় গভর্নর চট্টগ্রামকে দেশের ‘অর্থনৈতিক লাইফলাইন’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), ভারী শিল্প এবং জ্বালানি অবকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু এই চট্টগ্রাম। সিঙ্গাপুর, দুবাই বা হংকংয়ের মতো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংযোগ শক্তিশালী করতে হবে। তবেই এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে।’

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করতে দেশের সব সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে শিগগিরই ২৪ ঘণ্টা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) সিস্টেম চালু করা হবে বলে জানান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এটি একটি তাৎক্ষণিক ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ব্যবস্থা যা বাণিজ্যের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ ছাড়া, তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএমই) এবং কৃষি খাতে পর্যাপ্ত ও সহজ শর্তে ঋণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন গভর্নর। জেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে উৎপাদনশীল খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বার, ব্যাংকার, সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত