Ajker Patrika

আকাশে বাড়ছে যাত্রীশূন্য ভৌতিক উড়োজাহাজ

জাহাঙ্গীর আলম
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১০: ৪৫
আকাশে বাড়ছে যাত্রীশূন্য ভৌতিক উড়োজাহাজ

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত বছরের শেষ নাগাদ প্রতি মাসে শুধু যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৫০০টি ফ্লাইট উড়েছে, যেগুলোতে কোনো যাত্রীই ছিল না বা হাতেগোনা যাত্রী ছিল। এগুলোকে অনেকে বলেন ‘ভৌতিক ফ্লাইট’।

আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এই শীতে ইউরোপের আকাশে ১ লাখেরও বেশি ‘ভৌতিক ফ্লাইট’ উড়বে। সংগঠনটির দাবি, এতে যে পরিমাণ জলবায়ুর ক্ষতি হবে তা ১৪ লাখের বেশি গাড়ি থেকে গ্রিনহাউস গ্যাসের বার্ষিক নির্গমনের সমতুল্য। 

কোভিড মহামারির শুরুর দিকে যখন স্বাস্থ্যবিধি আরোপের কারণে আকাশভ্রমণের চাহিদা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে তখন এই ‘ভৌতিক ফ্লাইট’ একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ প্রায় নিয়ন্ত্রণে এলেও মাথার ওপরে এমন ‘ভৌতিক ফ্লাইটের’ আনাগোনা খুব একটা কমেনি। 

গ্রিনপিস ওপরের যে পরিসংখ্যানটি দিয়েছে সেটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ উড়োজাহাজ নেটওয়ার্ক লুফথানসার সিইও কারস্টেন স্পহরের এক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্যের প্রক্ষেপণ। গত ডিসেম্বরে তিনি গ্রিনপিসকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, লুফথানসা গ্রুপকে ইউরোপীয় বিধির অধীনে বরাদ্দ পাওয়া স্লটগুলো ধরে রাখতে চাইলে ছয় মাসের শীত মৌসুমে ১৮ হাজার অতিরিক্ত ফ্লাইট চালাতে হবে। 

গ্রিনপিস বলছে, ইউরোপীয় বাজারে লুফথানসার এয়ার ট্র্যাফিকের হিস্যা ১৭ শতাংশ। সে হিসাবে ইউরোপের মোট ভৌতিক ফ্লাইট ২১ লাখ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করবে। এ নিয়ে ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ বলেছেন, ব্রাসেলস এয়ারলাইনস (লুফথানসা গ্রুপের সাবসিডি) বিমানবন্দরের স্লট বজায় রাখতে ৩ হাজার অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইট পরিচালনা করে। 

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এ ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা যেমন বিপুল ‘বাহুল্য ব্যয়’, তেমনি পরিবেশের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ব্যবসার স্বার্থে পরিবেশের ব্যাপারটা না হয় বাদই গেল, কিন্তু এত বিপুল ব্যয় করে যাত্রীবিহীন ফ্লাইট পরিচালনার কারণ কী? 

এর পেছনে আছে উড়োজাহাজ সেবা পরিচালনার কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন। 

এয়ারলাইনগুলো শত শত জোড়া শহরের রুট উড়োজাহাজ পরিচালনা করে। কিছু সংযোগকারী ফ্লাইটের সঙ্গে আবার সামঞ্জস্য রাখতে হয়। এর জন্য নির্দিষ্ট স্লট বরাদ্দ নিতে হয়। এটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বছরে দুবার (গ্রীষ্ম এবং শীত) সময়সূচি হালনাগাদ করার প্রয়োজন পড়ে। 

দৈনিক শত শত ফ্লাইটের ব্যবস্থাপনা করাই যখন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য অত্যন্ত শ্রমসাধ্য একটি কাজ। সেখানে ছয় মাস অন্তর শিডিউল হালনাগাদ করতে গিয়ে তাদের ঘাম ছুটে যায়। এই জটিলতা এড়ানোর জন্য একটি নিয়ম রয়েছে—একটি এয়ারলাইন সফলভাবে তার স্লটটি কমপক্ষে ৮০ শতাংশ সময় ব্যবহার করতে পারলে তবেই পরবর্তী মৌসুমে তারা স্লটটির বরাদ্দ ধরে রাখতে পারবে। এটিকে বলে ‘গ্র্যান্ডফাদার রাইটস’। 

এ কারণে ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলোতে নতুন রুট চালু করতে চাইলে এয়ারলাইনসগুলোকে বেশ বেগ পেতে হয়। ফলে স্লট মানেই সোনার হরিণ! 

উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরের কথা বলা যায়। এখানকার স্লট সবচেয়ে মূল্যবান। অত্যন্ত সীমিত স্লট কিন্তু চাহিদা অত্যধিক, ফলে স্লটের দামও আকাশচুম্বী। সকালের দিকের স্লট জোড়ার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার, দুপুরেরটি ১ কোটি ৩০ লাখ এবং সন্ধ্যারটির দাম ৬০ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স ব্রিফিং পেপারে এ তথ্য উল্লেখ আছে। 

নথির তথ্য অনুযায়ী, স্লট কেনায় রেকর্ড ভেঙেছে ওমান এয়ার। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে হিথ্রোতে এক জোড়া টেকঅফ এবং ল্যান্ডিং স্লটের জন্য তারা দিয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৭ সালের মার্চে এসএএস স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এয়ারলাইনস হিথ্রোর দুই জোড়া স্লট আমেরিকান এয়ারলাইনসের কাছে বিক্রি করেছিল ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। তবে সাধারণত এয়ারলাইনসগুলো এই চুক্তির বিবরণ গোপন রাখে। 

স্লটগুলো অন্যান্য উপায়েও লেনদেন করা যেতে পারে। যেমন ক্যারিয়ারগুলোর মধ্যে অদলবদল হতে পারে। যেমনটি ফুটবল ক্লাবগুলো ধারে খেলোয়াড় নেয়।

এই ‘গ্র্যান্ডফাদার রাইটস’ নিয়মের কারণেই এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট কমালেই স্লট হারানোর ঝুঁকিতে পড়ে। মহামারিতে কার্যক্রম সংকুচিত করার চিন্তা করতে গিয়ে অনেক এয়ারলাইনস এখন স্লট হারানোর হুমকির মুখে। ঠিক এ কারণেই খুব কম বা একেবারেই যাত্রী না পেলেও তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করতে হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এয়ারলাইনগুলোর এই ব্যয়বহুল ভৌতিক ফ্লাইট পরিচালনার কারণ হলো এই শিল্পের ‘স্লট গেম’। এটি এমন এক ব্যয়বহুল খেলা যা লাস ভেগাসে যা হয় তার চেয়েও বড় বাজি। অবশ্য লাভজনকও। 

পৃথিবীতে ২০০টিরও বেশি ব্যস্ততম হাব পূর্ণ সক্ষমতায় চলছে। ফ্লাইটের চাহিদা টার্মিনালের ভেতরের স্থান এবং রানওয়ের প্রাপ্যতা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য ব্যস্ততম বিমানবন্দরের সক্ষমতা স্লটে বিভক্ত করতেই হয়। অবতরণ, যাত্রীদের নামানো, জ্বালানি ভরা, যাত্রী তোলা এবং আবার টেক অফ করা—সবই একটি নির্দিষ্ট এবং নিয়ন্ত্রিত সময়ের মধ্যে থাকে। ফলে একটা ফ্লাইটের পেছনেই অনেক স্থান ও সময় ব্যয় হয়। হিথ্রোর মতো বিমানবন্দরের জন্য কাজটি করা কতো কঠিন তা সহজেই অনুমেয়। 

তাছাড়া রাজস্ব বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচির চাহিদা রয়েছে। যেমন, ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীরা সকালবেলা স্বল্প-দূরত্বে ভ্রমণ করেন, আবার একই দিনে ফিরে আসেন। ফলে সকালের স্লটগুলো অত্যন্ত মূল্যবান। আবার কানেকটিং ফ্লাইটের জন্য সময়ের সামঞ্জস্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ঢাকা-যুক্তরাজ্য সরাসরি ফ্লাইট নেই। সে ক্ষেত্রে ঢাকা-দুবাই এরপর কানেকটিং ফ্লাইটে দুবাই-হিথ্রো রুটে যেতে হয়। 

মহামারিতে ব্যাপক ক্ষতি এবং জলবায়ু ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের চাপে এই ‘গ্র্যান্ডফাদার রাইটস’ পরিবর্তনের দাবি উঠছে। গত অক্টোবরে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) বার্ষিক সভায় উড়োজাহাজ শিল্প ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নির্গমন লক্ষ্য অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

হাব-ভিত্তিক ক্যারিয়ার, সুলভ এয়ারলাইনস, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং পরিবেশবাদী লবিস্টসহ বহু অংশীজন অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইটের অযৌক্তিক অপচয়ের জন্য ‘গ্র্যান্ডফাদার রাইটসকে’ দোষারোপ করে আসছে। 

অবশ্য মহামারির কারণে অনেকে দেশেই এ নিয়ম শিথিল করা হচ্ছে। দুবছর আগে মহামারির শুরুর দিকে তখন ৮০ শতাংশ শিথিল করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) স্লট ব্যবহারের নিয়ম মুলতবি করেছে। এর আগে ২০০২, ২০০৩ এবং ২০০৯ সালেও বিধানটি স্থগিত করা হয়েছিল। এর আগে যথাক্রমে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইনটাওয়ার হামলা, সার্সের প্রাদুর্ভাব এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দারকালে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। 

এ ছাড়া ইউরোপে ২০২১-২০২২ শীতকালীন থ্রেসহোল্ড ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে এয়ারলাইনগুলো আরও ছাড় চায়। ইউরোপীয় কমিশন আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্লট বিধি শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে। চলতি এপ্রিলে স্লটের থ্রেসহোল্ড ৬৪ শতাংশে উন্নীত করেছে তারা।

উড়োজাহাজ সম্পর্কিত পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ছয় মাসে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

ডলার এখন রেমিট্যান্স, রপ্তানি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই বাজারে ডলার হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে সবাই চুপ। এই ডলারের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি পুরো বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত বিরতিতে ডলার কিনছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুধু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিসেম্বর মাসে কেনা ডলারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৯২ কোটি ডলার এবং চলতি অর্থবছর ধরে মোট কেনা হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে প্রথম ডলার কেনা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, আগস্টে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ, সেপ্টেম্বরেই তা বেড়ে ৯২ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছায়। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে অবশ্য অনেকটাই কমে ১৪ কোটি ২০ লাখ এবং ৫ কোটি ৪০ লাখে নেমে আসে। ডিসেম্বরেই তার বড় উল্লম্ফন ঘটে, কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ কোটি ১০ লাখ ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং চ্যানেলের শক্তিশালীকরণ এবং অনলাইনে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এ ছাড়া ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ হওয়ায় ব্যবসার আড়ালে ডলার পাচার কমেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে জমে থাকা অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের অর্থবছরগুলোর সঙ্গে তুলনায় এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেতার ভূমিকায়, যেখানে অতীতের বছরগুলোতে বড় অঙ্কে বিক্রি হতো। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ এ ছিল ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন, ২০২৩-২৪ এ ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন এবং ২০২৪-২৫ এ ১ দশমিক ১২৪ বিলিয়ন ডলার। এই পরিবর্তন বাজারে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্তমান খোলাবাজারে ডলারের দর ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছরের এই সময়ে তা ছিল ১৩১ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ বিলিয়ন ডলার, আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। অনলাইনে বাজার নজরদারি এবং ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে আসায় পণ্যের আড়াল থেকে ডলার পাচারও অনেক কমেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর ফলে আমদানি, বিনিয়োগ ও বাজার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।’

সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, পাচার কমে আসা—সব মিলিয়ে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলার বিক্রেতা নয়; বরং ক্রেতার ভূমিকায়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এনবিআর কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে টাকা দাবি, সতর্কবার্তা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের দপ্তরের ব্যক্তিগত সহকারী মো. কাউসারের নাম ভাঙিয়ে একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করছে। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা দিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, প্রতারকেরা মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে ফোন, মেসেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। তবে মো. কাউসারের সঙ্গে এ কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সর্বসাধারণকে এই প্রতারক চক্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ এ ধরনের ফোনকল বা বার্তার সম্মুখীন হলে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

জিডিতে মো. কাউসার উল্লেখ করেন, ২৩ ডিসেম্বর এনবিআরের উপ-কর কমিশনার রইসুন নেসা (বর্তমানে যুগ্ম কর কমিশনার) তাঁকে জানান, কাউসারের নাম ব্যবহার করে ০১৭০১৮৯০৩৮৭ নম্বর থেকে কল করে তাঁর বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ আছে’ উল্লেখ করে টাকা দাবি করা হয়। বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয় ০১৩২৮০৮৩২১৬ নম্বরে। পরে দেখা যায়, একই চক্র আরও অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে একই কৌশলে অর্থ আদায় করার চেষ্টা করেছে। পরে কাউসার জানতে পারেন আরও অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে একই নম্বর থেকে টাকা দাবি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা কে বা কারা তাঁর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করছে, তা জানা নেই বলে উল্লেখ করেন কাউসার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর অঞ্চল-কুষ্টিয়ার পরিদর্শী রেঞ্জ-৪-এর যুগ্ম কর কমিশনার রইসুন নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে কাউসারের নামেই ফোন করে। আমি বিষয়টি কাউসারকে জানাই। পরে আর ফোন করেনি। কোনো কথাও হয়নি।’

জানতে চাইলে মো. কাউসার বলেন, কোনো একটা চক্র এটা করছে। এর আগে চেয়ারম্যান স্যারের হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করে টাকা চেয়েছিল বিভিন্নজনের কাছ থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এল আরও ৫৭ হাজার টন গম

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জি-টু-জি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
জি-টু-জি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৫৬ হাজার ৮৯০ টন গম নিয়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। আজ রোববার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় নগদ ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে এই গম আমদানি করা হয়েছে। জি-টু-জি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রথম চালানে ৫৬ হাজার ৮৯০ টন গম দেশে এসেছে। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ১৩৪ টন চট্টগ্রাম বন্দরে এবং অবশিষ্ট ২২ হাজার ৭৫৬ টন মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজে রক্ষিত গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। গমের নমুনা পরীক্ষা শেষে দ্রুত গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে আরেক চুক্তিতে (জি-টু-জি) এরই মধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি সম্পন্ন হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত