
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর একটি ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৬ মাসে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, থেমেছে রিজার্ভে পতন। কিন্তু দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি, বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া। শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়ায় উৎপাদন খাতেও স্থবিরতা চলছে। সব মিলিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পার হয়েছে বর্তমান সরকারের ছয় মাস।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার ভঙ্গুর অর্থনীতির দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখনো কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা আসেনি। বরং বহুমাত্রিক সংকট, অবকাঠামো ঘাটতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নীতিনির্ধারণের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে। তবে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিলে এই সরকারের পক্ষেই সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, বৈশ্বিক অস্থিরতা ও দেশীয় সংকটের চাপ কাটিয়ে এখনো উঠতে পারেনি অর্থনীতি। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রবাসী আয় রিজার্ভে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে, তবে রাজস্ব ঘাটতি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণ প্রত্যাশিত হারে আসছে না, অথচ সুদ পরিশোধের ব্যয় বেড়েছে। এতে নিয়মিত সরকারি কার্যক্রম ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাংক খাতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তবে তারল্যসংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তা কাটেনি।
সমস্যাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হিসেবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করতে হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেওয়া জরুরি। বাজেট ও উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে অন্তত মধ্যমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে পারলে ক্রেতা-ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে, এতে অর্থনীতিও গতি পাবে।
পতন থেমেছে রিজার্ভে
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অর্থনীতির কিছু প্রতিকূলতার মধ্যেও রিজার্ভে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। থামানো গেছে পতন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে দেশে ১ হাজার ৫৯৬ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৯১ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে ৩০৫ কোটি ডলার।
এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার। অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির কারণে দেশে ডলারের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা কিছুটা কমিয়েছে। এই বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভও বেড়েছে। চলতি বছর জানুয়ারিতে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১৯ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার।
রাজস্ব ঘাটতির চাপে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
সরকারের জন্য খরচ মেটানো এখন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে; কারণ, অর্থসংকট বেড়েই চলেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে, যা ৬ শতাংশের সমান।
রাজস্ব কর্মকর্তাদের মতে, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি সরকারের জন্য আরও বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিতে পতন
ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নেওয়ায় বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বেশির ভাগ সময়েই বেসরকারি খাতে কমেছে ঋণের প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরেও একই ধারা বহাল রয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এই হার গত সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছরের একই সময়ে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। সংকোচনমূলক নীতি বজায় রাখার ধারায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
কমেছে বিনিয়োগ, জিডিপিতে প্রভাব নতুন বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িত মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি। কিন্তু গত ছয় মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়েনি, উল্টো কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৮৭৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যমানের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ২৮৫ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এলসি খোলার হার কমেছে ৩২ শতাংশ। এতে প্রভাব পড়েছে শিল্পোৎপাদন, দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও কর্মসংস্থানে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৬.০৪ শতাংশ।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অবস্থানে রয়েছেন, ফলে নতুন বিনিয়োগ আশানুরূপভাবে আসছে না। এই কারণে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নিট এফডিআই এসেছে মাত্র ১০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার। সে হিসাবে এফডিআই কমেছে ২৫ কোটি ২৯ লাখ ডলার বা ৭১ শতাংশ।
বিডার তথ্যমতে, ২০২৪ সালে ৭৪২টি প্রকল্পে ১,১৬৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিবন্ধন হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগের প্রবাহে ধস নেমেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ২৫৪টি প্রকল্পে ৬৬৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিনিয়োগ হয়েছিল; কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা কমে মাত্র ১৮৬টি প্রকল্পে ১৮৬ কোটি ৭১ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ কমেছে ৪৮০ কোটি ৯ লাখ ডলার বা প্রায় ৭২ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা ও ব্যবসা উপযোগী পরিবেশের বিরাট ঘাটতি ও আস্থার সংকট দৃশ্যমান। তাই প্রবৃদ্ধির খাত গার্মেন্টস থেকে শুরু করে সব ধরনের শিল্প, কৃষি, সেবা, পর্যটন খাতসহ সর্বত্র এখন হতাশার ছাপ স্পষ্ট। ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এর সঙ্গে আরও বহুমাত্রিক সংকট যোগ হয়েছে। এতে বেশির ভাগ শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতার তুলনায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে অর্থনীতির প্রতিটি খাতে। কমছে মোট দেশজ উৎপাদন। ক্ষয় হচ্ছে অর্থনীতি।
অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসের অর্থনৈতিক কার্যক্রম মূল্যায়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমান সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যবসার অনুকূলে নয়। ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সব ব্যবসায়ীই এর প্রভাব অনুভব করছেন। এর সঙ্গে আর্থিক খাতের সংকট বিনিয়োগের পরিবেশ আরও কঠিন করে তুলছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, কিন্তু মজুরি বাড়ছে ধীরগতিতে। ফলে মানুষের সঞ্চয় কমছে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আরেক মর্যাদাপূর্ণ ব্যবসায়িক সংগঠন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান জানান, এখনো ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা আসেনি। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কিছু ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত, আবার কিছু ক্ষেত্রে আরও গভীর হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। দামও সহনশীলতার সীমা ছাড়িয়েছে। উৎপাদন ও পরিবহন খরচ ক্রমেই বাড়ছে। ডলারের ঘাটতি ও বিনিময় হারে অস্থিরতা কাটেনি। নীতিগত সুদহার বৃদ্ধির ফলে ঋণের সুদ বেড়েছে, যা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত করেছে। ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধির বিষয়টি সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। কিন্তু দিন দিন এর ভিত দুর্বল হচ্ছে। দেশে উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিশ্ববাজারে বাড়ছে না পোশাকের দাম। বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে চাপা অসন্তোষ, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে শিল্পকারখানার উৎপাদনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। এরই মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির চাপ রয়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসির সংকট তো আছেই। নীতি সুদহারের চাপেও ব্যবসায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
ঋণের চাপে সরকার
বর্তমান অর্থনৈতিক চাপ এবং বিপুল রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকারকে ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নিতে হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি, বরং এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে, যা আগে নেওয়া হয়েছিল।
উন্নয়ন প্রকল্পে স্থবিরতা
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্প পরিকল্পনায় ধীরগতি, অর্থছাড়ে বিলম্ব এবং লোকবল নিয়োগে দেরিসহ নানা কারণে দেশে এই সংকট নিয়মিতই দেখা মেলে। তবে চলতি বছর এর বাড়তি সংযোজন ঘটেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এই হার ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরের পর প্রথমবারের মতো এডিপি বাস্তবায়নের হার ২০ শতাংশের নিচে নামল।
বিদেশি সহায়তা কম
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি ছিল ২২৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি কমেছে প্রায় ৪৭০ কোটি ডলার বা ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া অর্থছাড়ও কমেছে এই ৬ মাসে ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার, যা গত বছর ছিল ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থছাড় কমেছে ১৩ শতাংশ। তবে প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমলেও ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এই সময়ে সরকারকে ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
দেশের অর্থনীতি যে চ্যালেঞ্জের মুখে, বাস্তবতা তার চেয়েও কঠিন, এমনটাই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তাঁর মতে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের দুর্বল অবস্থা যতটা শোনা যাচ্ছে, বাস্তবে পরিস্থিতি আরও নাজুক। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশও অর্থনীতির জন্য সহায়ক নয়, যা সংকটকে আরও গভীর করছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর একটি ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৬ মাসে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, থেমেছে রিজার্ভে পতন। কিন্তু দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি, বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া। শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়ায় উৎপাদন খাতেও স্থবিরতা চলছে। সব মিলিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পার হয়েছে বর্তমান সরকারের ছয় মাস।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার ভঙ্গুর অর্থনীতির দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখনো কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা আসেনি। বরং বহুমাত্রিক সংকট, অবকাঠামো ঘাটতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নীতিনির্ধারণের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে। তবে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিলে এই সরকারের পক্ষেই সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, বৈশ্বিক অস্থিরতা ও দেশীয় সংকটের চাপ কাটিয়ে এখনো উঠতে পারেনি অর্থনীতি। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রবাসী আয় রিজার্ভে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে, তবে রাজস্ব ঘাটতি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণ প্রত্যাশিত হারে আসছে না, অথচ সুদ পরিশোধের ব্যয় বেড়েছে। এতে নিয়মিত সরকারি কার্যক্রম ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাংক খাতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তবে তারল্যসংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তা কাটেনি।
সমস্যাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হিসেবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করতে হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেওয়া জরুরি। বাজেট ও উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে অন্তত মধ্যমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে পারলে ক্রেতা-ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে, এতে অর্থনীতিও গতি পাবে।
পতন থেমেছে রিজার্ভে
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অর্থনীতির কিছু প্রতিকূলতার মধ্যেও রিজার্ভে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। থামানো গেছে পতন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে দেশে ১ হাজার ৫৯৬ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৯১ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে ৩০৫ কোটি ডলার।
এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার। অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির কারণে দেশে ডলারের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা কিছুটা কমিয়েছে। এই বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভও বেড়েছে। চলতি বছর জানুয়ারিতে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১৯ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার।
রাজস্ব ঘাটতির চাপে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
সরকারের জন্য খরচ মেটানো এখন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে; কারণ, অর্থসংকট বেড়েই চলেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে, যা ৬ শতাংশের সমান।
রাজস্ব কর্মকর্তাদের মতে, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি সরকারের জন্য আরও বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিতে পতন
ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নেওয়ায় বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বেশির ভাগ সময়েই বেসরকারি খাতে কমেছে ঋণের প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরেও একই ধারা বহাল রয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এই হার গত সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছরের একই সময়ে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। সংকোচনমূলক নীতি বজায় রাখার ধারায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
কমেছে বিনিয়োগ, জিডিপিতে প্রভাব নতুন বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িত মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি। কিন্তু গত ছয় মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়েনি, উল্টো কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৮৭৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যমানের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ২৮৫ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এলসি খোলার হার কমেছে ৩২ শতাংশ। এতে প্রভাব পড়েছে শিল্পোৎপাদন, দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও কর্মসংস্থানে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৬.০৪ শতাংশ।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অবস্থানে রয়েছেন, ফলে নতুন বিনিয়োগ আশানুরূপভাবে আসছে না। এই কারণে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নিট এফডিআই এসেছে মাত্র ১০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার। সে হিসাবে এফডিআই কমেছে ২৫ কোটি ২৯ লাখ ডলার বা ৭১ শতাংশ।
বিডার তথ্যমতে, ২০২৪ সালে ৭৪২টি প্রকল্পে ১,১৬৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিবন্ধন হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগের প্রবাহে ধস নেমেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ২৫৪টি প্রকল্পে ৬৬৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিনিয়োগ হয়েছিল; কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা কমে মাত্র ১৮৬টি প্রকল্পে ১৮৬ কোটি ৭১ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ কমেছে ৪৮০ কোটি ৯ লাখ ডলার বা প্রায় ৭২ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা ও ব্যবসা উপযোগী পরিবেশের বিরাট ঘাটতি ও আস্থার সংকট দৃশ্যমান। তাই প্রবৃদ্ধির খাত গার্মেন্টস থেকে শুরু করে সব ধরনের শিল্প, কৃষি, সেবা, পর্যটন খাতসহ সর্বত্র এখন হতাশার ছাপ স্পষ্ট। ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এর সঙ্গে আরও বহুমাত্রিক সংকট যোগ হয়েছে। এতে বেশির ভাগ শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতার তুলনায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে অর্থনীতির প্রতিটি খাতে। কমছে মোট দেশজ উৎপাদন। ক্ষয় হচ্ছে অর্থনীতি।
অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসের অর্থনৈতিক কার্যক্রম মূল্যায়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমান সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যবসার অনুকূলে নয়। ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সব ব্যবসায়ীই এর প্রভাব অনুভব করছেন। এর সঙ্গে আর্থিক খাতের সংকট বিনিয়োগের পরিবেশ আরও কঠিন করে তুলছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, কিন্তু মজুরি বাড়ছে ধীরগতিতে। ফলে মানুষের সঞ্চয় কমছে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আরেক মর্যাদাপূর্ণ ব্যবসায়িক সংগঠন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান জানান, এখনো ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা আসেনি। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কিছু ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত, আবার কিছু ক্ষেত্রে আরও গভীর হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। দামও সহনশীলতার সীমা ছাড়িয়েছে। উৎপাদন ও পরিবহন খরচ ক্রমেই বাড়ছে। ডলারের ঘাটতি ও বিনিময় হারে অস্থিরতা কাটেনি। নীতিগত সুদহার বৃদ্ধির ফলে ঋণের সুদ বেড়েছে, যা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত করেছে। ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধির বিষয়টি সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। কিন্তু দিন দিন এর ভিত দুর্বল হচ্ছে। দেশে উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিশ্ববাজারে বাড়ছে না পোশাকের দাম। বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে চাপা অসন্তোষ, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে শিল্পকারখানার উৎপাদনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। এরই মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির চাপ রয়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসির সংকট তো আছেই। নীতি সুদহারের চাপেও ব্যবসায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
ঋণের চাপে সরকার
বর্তমান অর্থনৈতিক চাপ এবং বিপুল রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকারকে ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নিতে হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি, বরং এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে, যা আগে নেওয়া হয়েছিল।
উন্নয়ন প্রকল্পে স্থবিরতা
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্প পরিকল্পনায় ধীরগতি, অর্থছাড়ে বিলম্ব এবং লোকবল নিয়োগে দেরিসহ নানা কারণে দেশে এই সংকট নিয়মিতই দেখা মেলে। তবে চলতি বছর এর বাড়তি সংযোজন ঘটেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এই হার ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরের পর প্রথমবারের মতো এডিপি বাস্তবায়নের হার ২০ শতাংশের নিচে নামল।
বিদেশি সহায়তা কম
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি ছিল ২২৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি কমেছে প্রায় ৪৭০ কোটি ডলার বা ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া অর্থছাড়ও কমেছে এই ৬ মাসে ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার, যা গত বছর ছিল ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থছাড় কমেছে ১৩ শতাংশ। তবে প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমলেও ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এই সময়ে সরকারকে ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
দেশের অর্থনীতি যে চ্যালেঞ্জের মুখে, বাস্তবতা তার চেয়েও কঠিন, এমনটাই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তাঁর মতে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের দুর্বল অবস্থা যতটা শোনা যাচ্ছে, বাস্তবে পরিস্থিতি আরও নাজুক। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশও অর্থনীতির জন্য সহায়ক নয়, যা সংকটকে আরও গভীর করছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর একটি ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৬ মাসে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, থেমেছে রিজার্ভে পতন। কিন্তু দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি, বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া। শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়ায় উৎপাদন খাতেও স্থবিরতা চলছে। সব মিলিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পার হয়েছে বর্তমান সরকারের ছয় মাস।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার ভঙ্গুর অর্থনীতির দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখনো কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা আসেনি। বরং বহুমাত্রিক সংকট, অবকাঠামো ঘাটতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নীতিনির্ধারণের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে। তবে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিলে এই সরকারের পক্ষেই সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, বৈশ্বিক অস্থিরতা ও দেশীয় সংকটের চাপ কাটিয়ে এখনো উঠতে পারেনি অর্থনীতি। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রবাসী আয় রিজার্ভে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে, তবে রাজস্ব ঘাটতি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণ প্রত্যাশিত হারে আসছে না, অথচ সুদ পরিশোধের ব্যয় বেড়েছে। এতে নিয়মিত সরকারি কার্যক্রম ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাংক খাতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তবে তারল্যসংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তা কাটেনি।
সমস্যাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হিসেবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করতে হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেওয়া জরুরি। বাজেট ও উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে অন্তত মধ্যমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে পারলে ক্রেতা-ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে, এতে অর্থনীতিও গতি পাবে।
পতন থেমেছে রিজার্ভে
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অর্থনীতির কিছু প্রতিকূলতার মধ্যেও রিজার্ভে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। থামানো গেছে পতন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে দেশে ১ হাজার ৫৯৬ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৯১ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে ৩০৫ কোটি ডলার।
এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার। অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির কারণে দেশে ডলারের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা কিছুটা কমিয়েছে। এই বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভও বেড়েছে। চলতি বছর জানুয়ারিতে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১৯ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার।
রাজস্ব ঘাটতির চাপে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
সরকারের জন্য খরচ মেটানো এখন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে; কারণ, অর্থসংকট বেড়েই চলেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে, যা ৬ শতাংশের সমান।
রাজস্ব কর্মকর্তাদের মতে, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি সরকারের জন্য আরও বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিতে পতন
ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নেওয়ায় বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বেশির ভাগ সময়েই বেসরকারি খাতে কমেছে ঋণের প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরেও একই ধারা বহাল রয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এই হার গত সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছরের একই সময়ে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। সংকোচনমূলক নীতি বজায় রাখার ধারায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
কমেছে বিনিয়োগ, জিডিপিতে প্রভাব নতুন বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িত মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি। কিন্তু গত ছয় মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়েনি, উল্টো কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৮৭৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যমানের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ২৮৫ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এলসি খোলার হার কমেছে ৩২ শতাংশ। এতে প্রভাব পড়েছে শিল্পোৎপাদন, দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও কর্মসংস্থানে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৬.০৪ শতাংশ।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অবস্থানে রয়েছেন, ফলে নতুন বিনিয়োগ আশানুরূপভাবে আসছে না। এই কারণে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নিট এফডিআই এসেছে মাত্র ১০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার। সে হিসাবে এফডিআই কমেছে ২৫ কোটি ২৯ লাখ ডলার বা ৭১ শতাংশ।
বিডার তথ্যমতে, ২০২৪ সালে ৭৪২টি প্রকল্পে ১,১৬৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিবন্ধন হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগের প্রবাহে ধস নেমেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ২৫৪টি প্রকল্পে ৬৬৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিনিয়োগ হয়েছিল; কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা কমে মাত্র ১৮৬টি প্রকল্পে ১৮৬ কোটি ৭১ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ কমেছে ৪৮০ কোটি ৯ লাখ ডলার বা প্রায় ৭২ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা ও ব্যবসা উপযোগী পরিবেশের বিরাট ঘাটতি ও আস্থার সংকট দৃশ্যমান। তাই প্রবৃদ্ধির খাত গার্মেন্টস থেকে শুরু করে সব ধরনের শিল্প, কৃষি, সেবা, পর্যটন খাতসহ সর্বত্র এখন হতাশার ছাপ স্পষ্ট। ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এর সঙ্গে আরও বহুমাত্রিক সংকট যোগ হয়েছে। এতে বেশির ভাগ শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতার তুলনায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে অর্থনীতির প্রতিটি খাতে। কমছে মোট দেশজ উৎপাদন। ক্ষয় হচ্ছে অর্থনীতি।
অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসের অর্থনৈতিক কার্যক্রম মূল্যায়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমান সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যবসার অনুকূলে নয়। ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সব ব্যবসায়ীই এর প্রভাব অনুভব করছেন। এর সঙ্গে আর্থিক খাতের সংকট বিনিয়োগের পরিবেশ আরও কঠিন করে তুলছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, কিন্তু মজুরি বাড়ছে ধীরগতিতে। ফলে মানুষের সঞ্চয় কমছে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আরেক মর্যাদাপূর্ণ ব্যবসায়িক সংগঠন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান জানান, এখনো ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা আসেনি। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কিছু ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত, আবার কিছু ক্ষেত্রে আরও গভীর হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। দামও সহনশীলতার সীমা ছাড়িয়েছে। উৎপাদন ও পরিবহন খরচ ক্রমেই বাড়ছে। ডলারের ঘাটতি ও বিনিময় হারে অস্থিরতা কাটেনি। নীতিগত সুদহার বৃদ্ধির ফলে ঋণের সুদ বেড়েছে, যা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত করেছে। ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধির বিষয়টি সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। কিন্তু দিন দিন এর ভিত দুর্বল হচ্ছে। দেশে উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিশ্ববাজারে বাড়ছে না পোশাকের দাম। বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে চাপা অসন্তোষ, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে শিল্পকারখানার উৎপাদনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। এরই মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির চাপ রয়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসির সংকট তো আছেই। নীতি সুদহারের চাপেও ব্যবসায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
ঋণের চাপে সরকার
বর্তমান অর্থনৈতিক চাপ এবং বিপুল রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকারকে ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নিতে হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি, বরং এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে, যা আগে নেওয়া হয়েছিল।
উন্নয়ন প্রকল্পে স্থবিরতা
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্প পরিকল্পনায় ধীরগতি, অর্থছাড়ে বিলম্ব এবং লোকবল নিয়োগে দেরিসহ নানা কারণে দেশে এই সংকট নিয়মিতই দেখা মেলে। তবে চলতি বছর এর বাড়তি সংযোজন ঘটেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এই হার ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরের পর প্রথমবারের মতো এডিপি বাস্তবায়নের হার ২০ শতাংশের নিচে নামল।
বিদেশি সহায়তা কম
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি ছিল ২২৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি কমেছে প্রায় ৪৭০ কোটি ডলার বা ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া অর্থছাড়ও কমেছে এই ৬ মাসে ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার, যা গত বছর ছিল ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থছাড় কমেছে ১৩ শতাংশ। তবে প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমলেও ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এই সময়ে সরকারকে ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
দেশের অর্থনীতি যে চ্যালেঞ্জের মুখে, বাস্তবতা তার চেয়েও কঠিন, এমনটাই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তাঁর মতে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের দুর্বল অবস্থা যতটা শোনা যাচ্ছে, বাস্তবে পরিস্থিতি আরও নাজুক। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশও অর্থনীতির জন্য সহায়ক নয়, যা সংকটকে আরও গভীর করছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর একটি ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৬ মাসে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, থেমেছে রিজার্ভে পতন। কিন্তু দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি, বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া। শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়ায় উৎপাদন খাতেও স্থবিরতা চলছে। সব মিলিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পার হয়েছে বর্তমান সরকারের ছয় মাস।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার ভঙ্গুর অর্থনীতির দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখনো কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা আসেনি। বরং বহুমাত্রিক সংকট, অবকাঠামো ঘাটতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নীতিনির্ধারণের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে। তবে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিলে এই সরকারের পক্ষেই সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, বৈশ্বিক অস্থিরতা ও দেশীয় সংকটের চাপ কাটিয়ে এখনো উঠতে পারেনি অর্থনীতি। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রবাসী আয় রিজার্ভে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে, তবে রাজস্ব ঘাটতি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণ প্রত্যাশিত হারে আসছে না, অথচ সুদ পরিশোধের ব্যয় বেড়েছে। এতে নিয়মিত সরকারি কার্যক্রম ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাংক খাতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তবে তারল্যসংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তা কাটেনি।
সমস্যাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হিসেবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করতে হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেওয়া জরুরি। বাজেট ও উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে অন্তত মধ্যমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে পারলে ক্রেতা-ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে, এতে অর্থনীতিও গতি পাবে।
পতন থেমেছে রিজার্ভে
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অর্থনীতির কিছু প্রতিকূলতার মধ্যেও রিজার্ভে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। থামানো গেছে পতন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে দেশে ১ হাজার ৫৯৬ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৯১ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে ৩০৫ কোটি ডলার।
এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার। অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির কারণে দেশে ডলারের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা কিছুটা কমিয়েছে। এই বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভও বেড়েছে। চলতি বছর জানুয়ারিতে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১৯ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার।
রাজস্ব ঘাটতির চাপে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
সরকারের জন্য খরচ মেটানো এখন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে; কারণ, অর্থসংকট বেড়েই চলেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে, যা ৬ শতাংশের সমান।
রাজস্ব কর্মকর্তাদের মতে, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি সরকারের জন্য আরও বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিতে পতন
ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নেওয়ায় বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বেশির ভাগ সময়েই বেসরকারি খাতে কমেছে ঋণের প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরেও একই ধারা বহাল রয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এই হার গত সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছরের একই সময়ে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। সংকোচনমূলক নীতি বজায় রাখার ধারায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
কমেছে বিনিয়োগ, জিডিপিতে প্রভাব নতুন বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িত মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি। কিন্তু গত ছয় মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়েনি, উল্টো কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৮৭৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যমানের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ২৮৫ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এলসি খোলার হার কমেছে ৩২ শতাংশ। এতে প্রভাব পড়েছে শিল্পোৎপাদন, দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও কর্মসংস্থানে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৬.০৪ শতাংশ।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অবস্থানে রয়েছেন, ফলে নতুন বিনিয়োগ আশানুরূপভাবে আসছে না। এই কারণে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নিট এফডিআই এসেছে মাত্র ১০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার। সে হিসাবে এফডিআই কমেছে ২৫ কোটি ২৯ লাখ ডলার বা ৭১ শতাংশ।
বিডার তথ্যমতে, ২০২৪ সালে ৭৪২টি প্রকল্পে ১,১৬৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিবন্ধন হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগের প্রবাহে ধস নেমেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ২৫৪টি প্রকল্পে ৬৬৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিনিয়োগ হয়েছিল; কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা কমে মাত্র ১৮৬টি প্রকল্পে ১৮৬ কোটি ৭১ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ কমেছে ৪৮০ কোটি ৯ লাখ ডলার বা প্রায় ৭২ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা ও ব্যবসা উপযোগী পরিবেশের বিরাট ঘাটতি ও আস্থার সংকট দৃশ্যমান। তাই প্রবৃদ্ধির খাত গার্মেন্টস থেকে শুরু করে সব ধরনের শিল্প, কৃষি, সেবা, পর্যটন খাতসহ সর্বত্র এখন হতাশার ছাপ স্পষ্ট। ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এর সঙ্গে আরও বহুমাত্রিক সংকট যোগ হয়েছে। এতে বেশির ভাগ শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতার তুলনায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে অর্থনীতির প্রতিটি খাতে। কমছে মোট দেশজ উৎপাদন। ক্ষয় হচ্ছে অর্থনীতি।
অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসের অর্থনৈতিক কার্যক্রম মূল্যায়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমান সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যবসার অনুকূলে নয়। ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সব ব্যবসায়ীই এর প্রভাব অনুভব করছেন। এর সঙ্গে আর্থিক খাতের সংকট বিনিয়োগের পরিবেশ আরও কঠিন করে তুলছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, কিন্তু মজুরি বাড়ছে ধীরগতিতে। ফলে মানুষের সঞ্চয় কমছে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আরেক মর্যাদাপূর্ণ ব্যবসায়িক সংগঠন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান জানান, এখনো ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা আসেনি। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কিছু ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত, আবার কিছু ক্ষেত্রে আরও গভীর হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। দামও সহনশীলতার সীমা ছাড়িয়েছে। উৎপাদন ও পরিবহন খরচ ক্রমেই বাড়ছে। ডলারের ঘাটতি ও বিনিময় হারে অস্থিরতা কাটেনি। নীতিগত সুদহার বৃদ্ধির ফলে ঋণের সুদ বেড়েছে, যা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত করেছে। ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধির বিষয়টি সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। কিন্তু দিন দিন এর ভিত দুর্বল হচ্ছে। দেশে উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিশ্ববাজারে বাড়ছে না পোশাকের দাম। বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে চাপা অসন্তোষ, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে শিল্পকারখানার উৎপাদনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। এরই মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির চাপ রয়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসির সংকট তো আছেই। নীতি সুদহারের চাপেও ব্যবসায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
ঋণের চাপে সরকার
বর্তমান অর্থনৈতিক চাপ এবং বিপুল রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকারকে ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নিতে হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি, বরং এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে, যা আগে নেওয়া হয়েছিল।
উন্নয়ন প্রকল্পে স্থবিরতা
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্প পরিকল্পনায় ধীরগতি, অর্থছাড়ে বিলম্ব এবং লোকবল নিয়োগে দেরিসহ নানা কারণে দেশে এই সংকট নিয়মিতই দেখা মেলে। তবে চলতি বছর এর বাড়তি সংযোজন ঘটেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এই হার ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরের পর প্রথমবারের মতো এডিপি বাস্তবায়নের হার ২০ শতাংশের নিচে নামল।
বিদেশি সহায়তা কম
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি ছিল ২২৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি কমেছে প্রায় ৪৭০ কোটি ডলার বা ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া অর্থছাড়ও কমেছে এই ৬ মাসে ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার, যা গত বছর ছিল ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থছাড় কমেছে ১৩ শতাংশ। তবে প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমলেও ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এই সময়ে সরকারকে ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
দেশের অর্থনীতি যে চ্যালেঞ্জের মুখে, বাস্তবতা তার চেয়েও কঠিন, এমনটাই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তাঁর মতে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের দুর্বল অবস্থা যতটা শোনা যাচ্ছে, বাস্তবে পরিস্থিতি আরও নাজুক। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশও অর্থনীতির জন্য সহায়ক নয়, যা সংকটকে আরও গভীর করছে।

ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির ৮০০ কোটি টাকার একটি সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বন্ডটি অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত করতে হবে।
৩ ঘণ্টা আগে
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সরকারের উন্নয়ন ব্যয় আশঙ্কাজনকভাবে ধীর হয়ে পড়েছে। মাঠপর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন প্রত্যাশার তুলনায় অনেক পিছিয়ে, তেমনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয় ঘাটতি, প্রশাসনিক টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ...
১ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান আরও ২৩ পয়সা কমে ৯১ দশমিক ০১-এ পৌঁছেছে। ডলারের বিপরীতে এখন পর্যন্ত এটিই রুপির সর্বনিম্ন দর। ধারাবাহিক বিদেশি তহবিলের প্রস্থান, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনায় স্থবিরতা এবং স্থায়ী ডলার ক্রয়কে এই পতনের মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১ দিন আগে
ডিজিটাল পেমেন্ট কোম্পানি পেপ্যাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এটি পেপ্যাল ব্যাংক তৈরি করার জন্য ইউটাহ ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস এবং ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনে আবেদন জমা দিয়েছে।
১ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির ৮০০ কোটি টাকার একটি সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বন্ডটি অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত করতে হবে।
আজ বুধবার ৯৮৮তম কমিশন সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
বিএসইসি জানায়, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির ৮০০ কোটি টাকা মূল্যের আনসিকিউরড, নন-কনভার্টিবল, ফুললি রিডিমেবল, ফ্লোটিং রেট, কুপন বিয়ারিং সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব কমিশন সভায় অনুমোদন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্ডটি হবে আনসিকিউরড, অর্থাৎ এর বিপরীতে ব্যাংক কোনো নির্দিষ্ট সম্পদ জামানত হিসেবে রাখছে না। একই সঙ্গে এটি নন-কনভার্টিবল, ফলে ভবিষ্যতে এই বন্ডকে শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ থাকবে না। তবে বন্ডটি ফুললি রিডিমেবল, অর্থাৎ মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকারীরা তাঁদের সম্পূর্ণ মূল টাকা ফেরত পাবেন।
এই বন্ডের কুপন রেট বা সুদের হার হবে ফ্লোটিং রেট, অর্থাৎ বাজারভিত্তিক রেফারেন্স রেটের সঙ্গে ওঠানামা করবে। বন্ডটি কুপন বিয়ারিং, ফলে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট সময় পরপর সুদ পাবেন।
বন্ডটির কুপন রেট নির্ধারণ করা হয়েছে রেফারেন্স রেটের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ কুপন মার্জিন যোগ করে। অর্থাৎ, যদি রেফারেন্স রেট ৮ শতাংশ হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা মোট ১১ শতাংশ হারে সুদ পাবেন। ভবিষ্যতে রেফারেন্স রেট বাড়লে বা কমলে বন্ডের কুপন রেটও সেই অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে।
এই বন্ড প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠান, উচ্চসম্পদশালী ব্যক্তি, স্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিমা কোম্পানিগুলো এতে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। বন্ডটির প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
বিএসইসি জানায়, এই বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ব্যাসেল–৩ নীতিমালার অধীনে ইস্টার্ন ব্যাংকের টায়ার-২ মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী করতে ব্যবহার করা হবে। আন্তর্জাতিক এই নীতিমালার লক্ষ্য হলো ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততা বাড়ানো এবং আর্থিক ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা জোরদার করা।
ব্যাংকিং খাতে টায়ার-২ মূলধনের মধ্যে সাধারণত সাব-অর্ডিনেট বন্ড অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা দেউলিয়াত্বের ক্ষেত্রে আমানতকারী ও অন্যান্য বড় ঋণের পরে পরিশোধযোগ্য। এ কারণে এসব বন্ড তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদের হার সাধারণত বেশি হয়ে থাকে।
বন্ডটির ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি। আর ইস্যুর অ্যারেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির ৮০০ কোটি টাকার একটি সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বন্ডটি অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত করতে হবে।
আজ বুধবার ৯৮৮তম কমিশন সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
বিএসইসি জানায়, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির ৮০০ কোটি টাকা মূল্যের আনসিকিউরড, নন-কনভার্টিবল, ফুললি রিডিমেবল, ফ্লোটিং রেট, কুপন বিয়ারিং সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব কমিশন সভায় অনুমোদন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্ডটি হবে আনসিকিউরড, অর্থাৎ এর বিপরীতে ব্যাংক কোনো নির্দিষ্ট সম্পদ জামানত হিসেবে রাখছে না। একই সঙ্গে এটি নন-কনভার্টিবল, ফলে ভবিষ্যতে এই বন্ডকে শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ থাকবে না। তবে বন্ডটি ফুললি রিডিমেবল, অর্থাৎ মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকারীরা তাঁদের সম্পূর্ণ মূল টাকা ফেরত পাবেন।
এই বন্ডের কুপন রেট বা সুদের হার হবে ফ্লোটিং রেট, অর্থাৎ বাজারভিত্তিক রেফারেন্স রেটের সঙ্গে ওঠানামা করবে। বন্ডটি কুপন বিয়ারিং, ফলে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট সময় পরপর সুদ পাবেন।
বন্ডটির কুপন রেট নির্ধারণ করা হয়েছে রেফারেন্স রেটের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ কুপন মার্জিন যোগ করে। অর্থাৎ, যদি রেফারেন্স রেট ৮ শতাংশ হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা মোট ১১ শতাংশ হারে সুদ পাবেন। ভবিষ্যতে রেফারেন্স রেট বাড়লে বা কমলে বন্ডের কুপন রেটও সেই অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে।
এই বন্ড প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠান, উচ্চসম্পদশালী ব্যক্তি, স্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিমা কোম্পানিগুলো এতে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। বন্ডটির প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
বিএসইসি জানায়, এই বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ব্যাসেল–৩ নীতিমালার অধীনে ইস্টার্ন ব্যাংকের টায়ার-২ মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী করতে ব্যবহার করা হবে। আন্তর্জাতিক এই নীতিমালার লক্ষ্য হলো ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততা বাড়ানো এবং আর্থিক ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা জোরদার করা।
ব্যাংকিং খাতে টায়ার-২ মূলধনের মধ্যে সাধারণত সাব-অর্ডিনেট বন্ড অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা দেউলিয়াত্বের ক্ষেত্রে আমানতকারী ও অন্যান্য বড় ঋণের পরে পরিশোধযোগ্য। এ কারণে এসব বন্ড তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদের হার সাধারণত বেশি হয়ে থাকে।
বন্ডটির ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি। আর ইস্যুর অ্যারেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর একটি ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৬ মাসে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, থেমেছে রিজার্ভে পতন। কিন্তু দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সরকারের উন্নয়ন ব্যয় আশঙ্কাজনকভাবে ধীর হয়ে পড়েছে। মাঠপর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন প্রত্যাশার তুলনায় অনেক পিছিয়ে, তেমনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয় ঘাটতি, প্রশাসনিক টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ...
১ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান আরও ২৩ পয়সা কমে ৯১ দশমিক ০১-এ পৌঁছেছে। ডলারের বিপরীতে এখন পর্যন্ত এটিই রুপির সর্বনিম্ন দর। ধারাবাহিক বিদেশি তহবিলের প্রস্থান, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনায় স্থবিরতা এবং স্থায়ী ডলার ক্রয়কে এই পতনের মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১ দিন আগে
ডিজিটাল পেমেন্ট কোম্পানি পেপ্যাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এটি পেপ্যাল ব্যাংক তৈরি করার জন্য ইউটাহ ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস এবং ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনে আবেদন জমা দিয়েছে।
১ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সরকারের উন্নয়ন ব্যয় আশঙ্কাজনকভাবে ধীর হয়ে পড়েছে। মাঠপর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন প্রত্যাশার তুলনায় অনেক পিছিয়ে, তেমনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয় ঘাটতি, প্রশাসনিক টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বড় হলেও বাস্তব অগ্রগতি একেবারেই হতাশাজনক।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর—এই পাঁচ মাসে উন্নয়ন ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ১১.৭৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় ছিল ৩৪ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় পিছিয়ে আছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর থেকে স্পষ্ট হচ্ছে, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প যেন এগোচ্ছেই না। সরকারি তহবিল, বৈদেশিক সহায়তা ও সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন—প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নয়ন ব্যয়ের এ তিন উৎসের প্রতিটিতেই যেন মন্থরতা লক্ষণীয়।
শুধু অর্থবছরের সার্বিক পরিস্থিতিই নয়, এডিপির মাসওয়ারি অগ্রগতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নভেম্বর মাসের তথ্য আরও চিন্তার। এই এক মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে ৮ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার মতো, যেখানে আগের বছরের নভেম্বরেই ব্যয় ছিল ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এক মাসেই ব্যয় কমে গেছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতির হার মাত্র ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধীরগতি কোনো স্বাভাবিক মৌসুমি প্রবণতা নয়; বরং প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ভেতরে জমে থাকা নানা অচলাবস্থার ফল।
প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব, টেন্ডারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়া, দক্ষ ঠিকাদারের অভাব, মাঠপর্যায়ে প্রকৌশল বিভাগগুলোর সংকোচন—এসব মিলেই উন্নয়ন ব্যয় জমে থাকছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকার পরিবর্তনের পর প্রশাসনে তৈরি হওয়া মন্থরতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধা। আইএমইডি কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ে পুরো প্রশাসনিক কাঠামো একধরনের অচল অবস্থায় ছিল, যার ধাক্কা এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ব্যয়ে বৈষম্যও স্পষ্ট। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও সংসদবিষয়ক সচিবালয় মন্ত্রণালয় পাঁচ মাসে এক টাকাও ব্যয় করতে পারেনি। কিছু বিভাগ অগ্রগতি দেখালেও, তা সমগ্র চিত্র বদলে দেওয়ার মতো নয়। বিপরীতে খাদ্য মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ১৩২.৭৮ শতাংশ ব্যয় করেছে, যা বরাদ্দের চেয়েও বেশি ব্যয়—এটি চলমান প্রকল্পগুলোর প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আইএমইডির মতে, প্রকৃত ব্যয় ও আর্থিক প্রতিবেদনের মধ্যকার এ ধরনের ব্যবধান ভবিষ্যতে প্রকল্প মূল্যায়নকে আরও জটিল করে তুলবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলছেন, ‘বাস্তবায়নের হার স্পষ্টতই কম। শুধু সংখ্যা নয়, কেন এই অবস্থা, সেটাই এখন সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, সামনের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় ব্যবস্থাপনায় আরও ধীরতা দেখা দিতে পারে। ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, অর্থবছরের শুরুতে সাধারণত কিছুটা ধীরতা দেখা গেলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। নির্বাচনকালীন প্রশাসন সাধারণত ঝুঁকিনির্ভর হয় না, ফলে প্রকল্পের গতি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
সব মিলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, প্রশাসনিক দ্বিধা এবং মাঠপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণহীনতা মিলিয়ে এডিপি বাস্তবায়ন যে পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, তা দিয়ে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন খুব কঠিন—এমনটি ধারণা করা হচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনের ভেতরেও।
চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রথম পাঁচ মাসে যে গতি দেখা গেছে, তাতে বছরের শেষে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন আদৌ সম্ভব হবে কি না, সে প্রশ্ন এখন আরও তীব্র হয়ে উঠছে।

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সরকারের উন্নয়ন ব্যয় আশঙ্কাজনকভাবে ধীর হয়ে পড়েছে। মাঠপর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন প্রত্যাশার তুলনায় অনেক পিছিয়ে, তেমনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয় ঘাটতি, প্রশাসনিক টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বড় হলেও বাস্তব অগ্রগতি একেবারেই হতাশাজনক।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর—এই পাঁচ মাসে উন্নয়ন ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ১১.৭৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় ছিল ৩৪ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় পিছিয়ে আছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর থেকে স্পষ্ট হচ্ছে, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প যেন এগোচ্ছেই না। সরকারি তহবিল, বৈদেশিক সহায়তা ও সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন—প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নয়ন ব্যয়ের এ তিন উৎসের প্রতিটিতেই যেন মন্থরতা লক্ষণীয়।
শুধু অর্থবছরের সার্বিক পরিস্থিতিই নয়, এডিপির মাসওয়ারি অগ্রগতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নভেম্বর মাসের তথ্য আরও চিন্তার। এই এক মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে ৮ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার মতো, যেখানে আগের বছরের নভেম্বরেই ব্যয় ছিল ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এক মাসেই ব্যয় কমে গেছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতির হার মাত্র ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধীরগতি কোনো স্বাভাবিক মৌসুমি প্রবণতা নয়; বরং প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ভেতরে জমে থাকা নানা অচলাবস্থার ফল।
প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব, টেন্ডারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়া, দক্ষ ঠিকাদারের অভাব, মাঠপর্যায়ে প্রকৌশল বিভাগগুলোর সংকোচন—এসব মিলেই উন্নয়ন ব্যয় জমে থাকছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকার পরিবর্তনের পর প্রশাসনে তৈরি হওয়া মন্থরতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধা। আইএমইডি কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ে পুরো প্রশাসনিক কাঠামো একধরনের অচল অবস্থায় ছিল, যার ধাক্কা এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ব্যয়ে বৈষম্যও স্পষ্ট। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও সংসদবিষয়ক সচিবালয় মন্ত্রণালয় পাঁচ মাসে এক টাকাও ব্যয় করতে পারেনি। কিছু বিভাগ অগ্রগতি দেখালেও, তা সমগ্র চিত্র বদলে দেওয়ার মতো নয়। বিপরীতে খাদ্য মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ১৩২.৭৮ শতাংশ ব্যয় করেছে, যা বরাদ্দের চেয়েও বেশি ব্যয়—এটি চলমান প্রকল্পগুলোর প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আইএমইডির মতে, প্রকৃত ব্যয় ও আর্থিক প্রতিবেদনের মধ্যকার এ ধরনের ব্যবধান ভবিষ্যতে প্রকল্প মূল্যায়নকে আরও জটিল করে তুলবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলছেন, ‘বাস্তবায়নের হার স্পষ্টতই কম। শুধু সংখ্যা নয়, কেন এই অবস্থা, সেটাই এখন সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, সামনের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় ব্যবস্থাপনায় আরও ধীরতা দেখা দিতে পারে। ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, অর্থবছরের শুরুতে সাধারণত কিছুটা ধীরতা দেখা গেলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। নির্বাচনকালীন প্রশাসন সাধারণত ঝুঁকিনির্ভর হয় না, ফলে প্রকল্পের গতি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
সব মিলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, প্রশাসনিক দ্বিধা এবং মাঠপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণহীনতা মিলিয়ে এডিপি বাস্তবায়ন যে পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, তা দিয়ে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন খুব কঠিন—এমনটি ধারণা করা হচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনের ভেতরেও।
চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রথম পাঁচ মাসে যে গতি দেখা গেছে, তাতে বছরের শেষে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন আদৌ সম্ভব হবে কি না, সে প্রশ্ন এখন আরও তীব্র হয়ে উঠছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর একটি ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৬ মাসে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, থেমেছে রিজার্ভে পতন। কিন্তু দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির ৮০০ কোটি টাকার একটি সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বন্ডটি অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত করতে হবে।
৩ ঘণ্টা আগে
যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান আরও ২৩ পয়সা কমে ৯১ দশমিক ০১-এ পৌঁছেছে। ডলারের বিপরীতে এখন পর্যন্ত এটিই রুপির সর্বনিম্ন দর। ধারাবাহিক বিদেশি তহবিলের প্রস্থান, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনায় স্থবিরতা এবং স্থায়ী ডলার ক্রয়কে এই পতনের মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১ দিন আগে
ডিজিটাল পেমেন্ট কোম্পানি পেপ্যাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এটি পেপ্যাল ব্যাংক তৈরি করার জন্য ইউটাহ ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস এবং ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনে আবেদন জমা দিয়েছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান আরও ২৩ পয়সা কমে ৯১ দশমিক ০১-এ পৌঁছেছে। ডলারের বিপরীতে এখন পর্যন্ত এটিই রুপির সর্বনিম্ন দর। ধারাবাহিক বিদেশি তহবিলের প্রস্থান, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনায় স্থবিরতা এবং স্থায়ী ডলার ক্রয়কে এই পতনের মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার দিনের শুরুতে রুপি ৩৬ পয়সা কমে ৯১ দশমিক ১৪-এ পৌঁছায়, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন, পরে সামান্য পুনরুদ্ধার হয়। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে এবং ডলারের শক্তি কিছুটা কমেছে, তারপরও রুপির পতন অব্যাহত রয়েছে।
গত ১০টি লেনদেনের দিনে রুপি ৯০ থেকে ৯১-এর মধ্যে ওঠানামা করেছে। শুধু গত পাঁচ দিনে রুপির মান ডলারের তুলনায় ১ শতাংশ কমেছে। মুদ্রা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের বিপরীতে রুপির দাম চলতি মাসে ৯২ ছাড়িয়ে যাবে।
আজ মঙ্গলবার আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা রুপি ৯০ দশমিক ৮৭ থেকে লেনদেন শুরু হয়। পরে ৯০ দশমিক ৭৬ থেকে ৯১ দশমিক ১৪-এর মধ্যে ওঠানামা করে। শেষে ৯১ দশমিক ০১-এ বন্ধ হয়। গত সোমবার রুপি ৯০ দশমিক ৭৮-এ বন্ধ হয়েছিল, যা আগের দিনের তুলনায় ২৯ পয়সা কম।
ফিনরেক্স ট্রেজারি অ্যাডভাইজার্সের হেড অব ট্রেজারি অনিল কুমার বানসালি বলেন, ‘ডলারের ক্রয় অব্যাহত থাকায় রুপি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের নতুন বাণিজ্য প্রস্তাব মেনে না নেওয়ায় চুক্তি স্থগিত রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান আরও ২৩ পয়সা কমে ৯১ দশমিক ০১-এ পৌঁছেছে। ডলারের বিপরীতে এখন পর্যন্ত এটিই রুপির সর্বনিম্ন দর। ধারাবাহিক বিদেশি তহবিলের প্রস্থান, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনায় স্থবিরতা এবং স্থায়ী ডলার ক্রয়কে এই পতনের মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার দিনের শুরুতে রুপি ৩৬ পয়সা কমে ৯১ দশমিক ১৪-এ পৌঁছায়, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন, পরে সামান্য পুনরুদ্ধার হয়। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে এবং ডলারের শক্তি কিছুটা কমেছে, তারপরও রুপির পতন অব্যাহত রয়েছে।
গত ১০টি লেনদেনের দিনে রুপি ৯০ থেকে ৯১-এর মধ্যে ওঠানামা করেছে। শুধু গত পাঁচ দিনে রুপির মান ডলারের তুলনায় ১ শতাংশ কমেছে। মুদ্রা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের বিপরীতে রুপির দাম চলতি মাসে ৯২ ছাড়িয়ে যাবে।
আজ মঙ্গলবার আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা রুপি ৯০ দশমিক ৮৭ থেকে লেনদেন শুরু হয়। পরে ৯০ দশমিক ৭৬ থেকে ৯১ দশমিক ১৪-এর মধ্যে ওঠানামা করে। শেষে ৯১ দশমিক ০১-এ বন্ধ হয়। গত সোমবার রুপি ৯০ দশমিক ৭৮-এ বন্ধ হয়েছিল, যা আগের দিনের তুলনায় ২৯ পয়সা কম।
ফিনরেক্স ট্রেজারি অ্যাডভাইজার্সের হেড অব ট্রেজারি অনিল কুমার বানসালি বলেন, ‘ডলারের ক্রয় অব্যাহত থাকায় রুপি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের নতুন বাণিজ্য প্রস্তাব মেনে না নেওয়ায় চুক্তি স্থগিত রয়েছে।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর একটি ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৬ মাসে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, থেমেছে রিজার্ভে পতন। কিন্তু দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির ৮০০ কোটি টাকার একটি সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বন্ডটি অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত করতে হবে।
৩ ঘণ্টা আগে
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সরকারের উন্নয়ন ব্যয় আশঙ্কাজনকভাবে ধীর হয়ে পড়েছে। মাঠপর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন প্রত্যাশার তুলনায় অনেক পিছিয়ে, তেমনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয় ঘাটতি, প্রশাসনিক টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ...
১ দিন আগে
ডিজিটাল পেমেন্ট কোম্পানি পেপ্যাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এটি পেপ্যাল ব্যাংক তৈরি করার জন্য ইউটাহ ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস এবং ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনে আবেদন জমা দিয়েছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ডিজিটাল পেমেন্ট কোম্পানি পেপ্যাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এটি পেপ্যাল ব্যাংক তৈরি করার জন্য ইউটাহ ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস এবং ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনে আবেদন জমা দিয়েছে।
পেপ্যালের প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স ক্রিস বলেন, ‘পুঁজির নিরাপত্তা ছোট ব্যবসাগুলোর বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা। পেপ্যাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা ছোট ব্যবসার উন্নয়ন এবং মার্কিন অর্থনীতিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারব।’
১৯৯৮ সালে ইলন মাস্ক ও পিটার থিয়েল পেপ্যাল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ৪ লাখ ২০ হাজারের বেশি গ্রাহককে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। মার্কিন ব্যাংকিং লাইসেন্স পাওয়ার পর কোম্পানি তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে গ্রাহকের আমানতকে ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনে বিমার আওতায় আনতে পারবে।
পেপ্যালের আবেদন এসেছে এমন সময়ে, যখন একাধিক ক্রিপ্টো কোম্পানি এবং নিওব্যাংক এই বছরে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি সুবিধা নিয়ে নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং খাতে প্রবেশের সুযোগ গ্রহণের চেষ্টা করছে। এ বছরের মধ্যে নুবাঙ্ক, কয়েনবেসসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং চার্টারের জন্য আবেদন করেছে।

ডিজিটাল পেমেন্ট কোম্পানি পেপ্যাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এটি পেপ্যাল ব্যাংক তৈরি করার জন্য ইউটাহ ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস এবং ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনে আবেদন জমা দিয়েছে।
পেপ্যালের প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স ক্রিস বলেন, ‘পুঁজির নিরাপত্তা ছোট ব্যবসাগুলোর বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা। পেপ্যাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা ছোট ব্যবসার উন্নয়ন এবং মার্কিন অর্থনীতিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারব।’
১৯৯৮ সালে ইলন মাস্ক ও পিটার থিয়েল পেপ্যাল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ৪ লাখ ২০ হাজারের বেশি গ্রাহককে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। মার্কিন ব্যাংকিং লাইসেন্স পাওয়ার পর কোম্পানি তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে গ্রাহকের আমানতকে ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনে বিমার আওতায় আনতে পারবে।
পেপ্যালের আবেদন এসেছে এমন সময়ে, যখন একাধিক ক্রিপ্টো কোম্পানি এবং নিওব্যাংক এই বছরে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি সুবিধা নিয়ে নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং খাতে প্রবেশের সুযোগ গ্রহণের চেষ্টা করছে। এ বছরের মধ্যে নুবাঙ্ক, কয়েনবেসসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং চার্টারের জন্য আবেদন করেছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর একটি ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৬ মাসে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, থেমেছে রিজার্ভে পতন। কিন্তু দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির ৮০০ কোটি টাকার একটি সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বন্ডটি অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত করতে হবে।
৩ ঘণ্টা আগে
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সরকারের উন্নয়ন ব্যয় আশঙ্কাজনকভাবে ধীর হয়ে পড়েছে। মাঠপর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন প্রত্যাশার তুলনায় অনেক পিছিয়ে, তেমনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয় ঘাটতি, প্রশাসনিক টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ...
১ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান আরও ২৩ পয়সা কমে ৯১ দশমিক ০১-এ পৌঁছেছে। ডলারের বিপরীতে এখন পর্যন্ত এটিই রুপির সর্বনিম্ন দর। ধারাবাহিক বিদেশি তহবিলের প্রস্থান, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনায় স্থবিরতা এবং স্থায়ী ডলার ক্রয়কে এই পতনের মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১ দিন আগে