Ajker Patrika

ট্রাম্পের শুল্কে ভারতের হীরা ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত, চাকরি হারাতে পারেন ২ লাখ কর্মী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ৫৭
আহমেদাবাদের একটি হীরার দোকান। ছবি: সংগৃহীত
আহমেদাবাদের একটি হীরার দোকান। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের গুজরাট রাজ্যের সুরাট শহরের বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সী কল্পেশ প্যাটেল। এ বছরের দীপাবলি তাঁর জন্য যেন ‘দীপ নিভে যাওয়ার দিন’ নিয়ে আসছে। পুরোনো হীরা কাটাই ও পলিশের ছোট্ট একটি কারখানা আছে তাঁর। কল্পেশের এই কারখানায় নেমে আসছে অন্ধকার। আর এই অন্ধকারের কারণ ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ।

৮ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা কল্পেশের এই কারখানায় এখন ৪০ জন কর্মী রয়েছে। অপরিশোধিত হীরা কেটে ও ঘষেমেজে ঝকঝকে করে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করেন তাঁরা। কল্পেশ ভাবছেন, বছরের পর বছর বহু বাধা অতিক্রম করে আসা তার এই কারখানায় ট্রাম্পের এই শুল্ক যেন ‘কফিনের শেষ পেরেকটি’ ঠুকে দেবে।

আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কল্পেশ বলতে থাকেন, ‘দীপাবলির কিছু অর্ডার বাকি আছে, সেগুলো শেষ করার চেষ্টা করব।’

আলোর উৎসব দীপাবলি ভারতের সবচেয়ে বড় উৎসবগুলোর একটি। প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ দিকে আয়োজিত হয় এই উৎসবটি। এ উৎসবকে ঘিরে দেশটির বাজারে পণ্যের বিক্রি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। কল্পেশ বলছিলেন, ‘এ বছর হয়তো উৎসবের আগেই ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শুল্কের কারণে রপ্তানিকারকেরা অর্ডার বাতিল করতে পারেন। এমনিতেই অর্ডার কমে আসায় কর্মীদের বেতন দেওয়া এবং অন্যান্য খরচ মেটানো ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।’

‘ভারতের হীরার শহর’ নামে পরিচিত সুরাটে কল্পেশসহ প্রায় ২০ হাজার ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী হীরা কাটাই ও পলিশের কাজ করেন। এখানের কারখানাগুলোতে বিশ্বের প্রতি ১৫টি প্রাকৃতিক হীরার মধ্যে ১৪টি কাটাই ও পলিশের কাজ হয়।

ভারতের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের রত্ন ও গয়না রপ্তানি উন্নয়ন কাউন্সিলের (জিজেপিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (যা মার্চে শেষ হয়েছে) দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ৪৮০ কোটি ডলারের কাটা ও পলিশ করা হীরা রপ্তানি করেছে। এই অঙ্ক ভারতের মোট কাটা ও পলিশ করা হীরা রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশের বেশি, যা একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার।

এরই মধ্যে অর্ডার বাতিল হতে শুরু করেছে বলে জানান কলকাতার হীরা রপ্তানিকারক ডিম্পল শাহ। আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘উচ্চ শুল্কের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা পাঠানো পণ্য গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। আমার দুই দশকের হীরা ব্যবসায় এটাই সবচেয়ে খারাপ সময়।’

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শুল্কের কারণে হিরা রপ্তানিকারকেরা অর্ডার বাতিল করতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শুল্কের কারণে হিরা রপ্তানিকারকেরা অর্ডার বাতিল করতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত

গত ৭ আগস্ট থেকে ভারতের সব ধরনের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়, যা ২ এপ্রিল ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন। এরই মধ্যে ৬ আগস্ট ট্রাম্প আরও ২৫ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা দেন, ফলে মোট শুল্কহার দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। তিনি জানান, এই অতিরিক্ত শুল্ক ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ভারত রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে তাই এটি ভারতের ওপর একধরনের শাস্তি।

আর রত্নশিল্পের ওপর আগে থেকেই ২ দশমিক ১ শতাংশ শুল্ক ছিল, এখন কার্যকর শুল্কহার দাঁড়াল ৫২ দশমিক ১ শতাংশে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপকে বাণিজ্য গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল রিসার্চ ট্রেড ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)-এর প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব ‘দ্বিচারিতা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখনো রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে এবং রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা চীন কোনো ধরনের শাস্তিমূলক শুল্কের মুখে পড়েনি।

অজয় বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানানো এবং কৃষি ও দুগ্ধ খাত উন্মুক্ত করতে অস্বীকার করায় ট্রাম্প হতাশা থেকে ভারতকে টার্গেট করছেন।’

এর মাধ্যমে তিনি চলমান বৃহত্তর বাণিজ্য আলোচনার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় অর্থনৈতিক খাতগুলোতে আরও প্রবেশাধিকার চাইছে।

তবে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পেছনে যে কারণই থাকুক না কেন, তা ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত হীরা শিল্পকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

গুজরাটের সুরাট, আহমেদাবাদ ও রাজকোট শহরের হীরা কাটাই ও পলিশ শিল্পে ২০ লাখের বেশি মানুষ কাজ করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের অনেকেরই বেতন কমে গেছে। প্রথমে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এবং পরে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের কারণে।

গুজরাট ডায়মন্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি রমেশ জিলরিয়া আল জাজিরাকে বলেন, ‘মহামারি আন্তর্জাতিক বাজারে, বিশেষত হংকং ও চীনে, অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি করেছিল। আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর হীরা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং জি৭–এর রাশিয়াবিরোধী নিষেধাজ্ঞাও আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’

ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়া ছিল অপরিশোধিত হীরার বড় উৎস।

আর্থিক সংকটে গত দুই বছরে অন্তত ৮০ জন হীরা শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন ডায়মন্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি শ্রমিকদের মজুরি অর্ধেকে নামিয়ে আনতে বাধ্য করেছে, যা এখন গড়ে মাসপ্রতি ১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার রুপি (প্রায় ১৯৪ ডলার)। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে এ আয় দিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন।’

ট্রাম্পের শুল্ক সম্পূর্ণ কার্যকর হলে গুজরাটে প্রায় দুই লাখ মানুষ জীবিকা হারাতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন রমেশ।

ইতিমধ্যেই হীরাশিল্পের সাবেক ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি কর্মী সরকারি ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। চলতি বছরের মে মাসে গুজরাট রাজ্য সরকার প্রতিশ্রুতি দেয়, শিল্পের অস্থিরতায় চাকরি হারানোদের পরিবারকে সহায়তা দিতে প্রতি সন্তানকে ১৩ হাজার ৫০০ রুপি (প্রায় ১৫৪ ডলার) ভাতা দেওয়া হবে।

তবে সংকটের জন্য শুধু ট্রাম্পের শুল্ক, মহামারি বা যুদ্ধ দায়ী নয়, এর পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত (ল্যাব–গ্রোন) হীরা ও প্রাকৃতিক হীরার বাজারকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে।

সুরাটে প্রায় ২০ হাজার ব্যবসায়ী হিরা কাটাই ও পলিশের কাজ করেন। ছবি: সংগৃহীত
সুরাটে প্রায় ২০ হাজার ব্যবসায়ী হিরা কাটাই ও পলিশের কাজ করেন। ছবি: সংগৃহীত

সুরাট জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সলিম দাগিনাওয়ালা বলেন, ‘প্রাকৃতিক হীরার মতো ল্যাব–গ্রোন হীরা খনি থেকে উত্তোলন করা হয় না, বরং বিশেষ ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা হয়, আর এর দাম প্রাকৃতিক হীরার মাত্র ১০ শতাংশ। খালি চোখে এমনকি অভিজ্ঞ জুয়েলারদের পক্ষেও প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম হীরার পার্থক্য ধরা কঠিন। ক্রেতাদের রুচি এখন কৃত্রিম হীরার দিকে ঝুঁকছে, কারণ এগুলো সস্তা।’

জিজেপিসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত ১০.৮ বিলিয়ন ডলারের অপরিশোধিত হীরা আমদানি করেছে, যা ২০২৩-২৪ সালের ১৪ বিলিয়ন ডলারের আমদানি থেকে ২৪.২৭ শতাংশ কম।

একইভাবে কাটা ও পলিশ করা প্রাকৃতিক হীরার রপ্তানিও ১৬.৭৫ শতাংশ কমে ২০২৪-২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ১৩.২ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের ১৬ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস।

জিজেপিসির চেয়ারম্যান কীরিত বানসালি বলেন, ‘এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ভারতের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে, যা গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করতে পারে, রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে এবং হাজার হাজার মানুষের জীবিকা বিপন্ন করতে পারে। আমরা আশা করি শুল্কে স্বাভাবিককরণের ব্যবস্থা হবে, না হলে টিকে থাকা কঠিন হবে।’

শুল্কের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গয়না বিক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বলে সতর্ক করেন অল ইন্ডিয়া জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের (জিজিসি) চেয়ারম্যান রাজেশ রোকডে। তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭০ হাজার গয়না ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা গয়নার দাম বাড়লে সংকটে পড়বেন।’

এ পরিস্থিতিতে বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ হীরা চাহিদা বাড়ানো এবং নতুন বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে বৈচিত্র্য আনা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

উত্তর প্রদেশের বারাণসীর নারায়ণ দাস সরাফ জুয়েলার্সের পরিচালক রাধা কৃষ্ণ আগারওয়াল বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বাজার শক্তিশালী হলে শুধু স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে না, পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের জন্য কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।’

নারায়ণ দাস আরও জানান, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ যদি ভারতের রত্নশিল্পের ‘বহির্বিশ্বনির্ভরতা’ কমিয়ে আনে, তাহলে তা ‘অপ্রত্যাশিত এক আশীর্বাদ’ হতে পারে।

জিজেপিসির চেয়ারম্যান কীরিত বানসালি বলেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ গয়না বাজার দ্রুত বাড়ছে এবং আগামী দুই বছরে তা বর্তমানে থাকা ৮৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, শিল্প নতুন বাজারের খোঁজে রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য।

সুরাট জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অমিত কোরাত বলেন, স্বর্ণ ইতিমধ্যে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা রপ্তানির ওপর আসা আঘাত সামলাতে সাহায্য করেছে।

তবে আপাতত ভারতের হীরা শিল্পের কোনো এমন অবস্থা নেই। এই শিল্পকে জরুরি ভিত্তিতে রক্ষা করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন সুরাটের হীরা কাটাই ও পলিশ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে থাকা ব্যবসায়ী রমেশ প্যাটেল। তিনি বলেন, ‘সহায়তা না পেলে, এই ব্যবসা চিরতরে তার ঝলক হারিয়ে ফেলবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কক্সবাজারে এমজিআইয়ের বার্ষিক সেলস কনফারেন্স

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৭
কক্সবাজারে এমজিআইয়ের বার্ষিক সেলস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
কক্সবাজারে এমজিআইয়ের বার্ষিক সেলস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) এফএমসিজি ডিভিশনের বার্ষিক সেলস কনফারেন্স ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পায় দুই পর্বে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

‘টুগেদার উই রাইজ’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আয়োজিত এই কনফারেন্সে এফএমসিজি ডিভিশনের ১০টি সেলস লাইনের প্রায় ১ হাজার ১০০ জন কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি অংশ নেন। অনুষ্ঠানে আগামী বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন এমজিআইয়ের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক পরিবর্তন আসায় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানসম্পন্ন নতুন পণ্য উৎপাদন এবং সেগুলো ভোক্তাদের কাছে সহজলভ্য করে তুলতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এর জন্য চাই সবার মিলিত প্রচেষ্টা। আমরা যদি একসাথে, এক লক্ষ্যে এগিয়ে যাই; তাহলে কোনো বাধা আমাদের আটকে রাখতে পারবে না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমজিআইয়ের ডিরেক্টর তাহমিনা মোস্তফা বলেন, ‘ফ্যাক্টরি, সাপ্লাই চেইন, ফাইন্যান্স, ব্র্যান্ড ও অপারেশনস—সবাই এফএমসিজি পরিবারের অংশ। সেলস কোনো আলাদা বিভাগ নয়, এটি সবার একটি সম্মিলিত কমিটমেন্ট।’ তিনি ২০২৬ সালেও বাজারে ‘ফ্রেশ’, ‘নাম্বার ওয়ান’ এবং ‘অ্যাক্টিফিট’ ব্র্যান্ডের শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখার জন্য শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার দিকনির্দেশনা দেন।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এমজিআইয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার (সিএও) মো. রহমতুল্লাহ খন্দকার, চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার (সিএইচআরও) আতিক উজ জামান খান, সিনিয়র জিএম ও হেড অব অ্যাকাউন্টস এস এম মুজিবুর রহমান, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (ব্র্যান্ড) কাজী মো. মহিউদ্দিন, এসবিইউ হেড কাজী তৌহিদুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কনফারেন্সে আগামী দিনের কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন টিম বিল্ডিং অ্যাকটিভিটি অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘সেলস চ্যাম্পিয়ন’, ‘সেলস হিরো’ এবং ‘লং সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে ছিল দেশের স্বনামধন্য শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ষষ্ঠবারের মতো এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল ডিবিএল গ্রুপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছে বহুমুখী শিল্পগোষ্ঠী ডিবিএল গ্রুপ। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
‘এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছে বহুমুখী শিল্পগোষ্ঠী ডিবিএল গ্রুপ। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

রপ্তানি বাণিজ্য ও টেকসই উন্নয়নে অবদানের জন্য সম্প্রতি ‘এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছে বহুমুখী শিল্পগোষ্ঠী ডিবিএল গ্রুপ। এর মাধ্যমে ষষ্ঠবারের মতো সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করল গ্রুপটি।

এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন।

ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. জব্বার বলেন, ‘এই পুরস্কার একবার জেতা একটি বিশেষ বিষয়। কিন্তু ছয়বার এই পুরস্কার অর্জন করা এবং বাংলাদেশের একমাত্র শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে এই গৌরব ধরে রাখার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে, ধারাবাহিকতা, সততা এবং উদ্ভাবনই হলো সত্যিকারের রপ্তানি শ্রেষ্ঠত্বের মূল স্তম্ভ। এই স্বীকৃতি ডিবিএল পরিবারের প্রতিটি সদস্য এবং আমাদের অংশীদারদের প্রাপ্য।’

বিশ্বব্যাপী পোশাক সংগ্রহের হাব হিসেবে অবস্থান সুসংহত করছে বাংলাদেশ। আর এর মধ্যে অগ্রণী অবস্থানে রয়েছে ডিবিএল গ্রুপ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরও কমেছে পেঁয়াজ আলু ও সবজির দাম

  • পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম নামল ৪২ টাকা কেজি
  • ডিম, মুরগি ও ডালের দাম আগের মতোই
  • চালের দাম কমলেও আশানুরূপ নয়, বলছেন ক্রেতা
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ০৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ ও আমদানির বাড়তে থাকায় আরও কমেছে পেঁয়াজের দাম। গত এক সপ্তাহে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে ১৮-২৫ টাকা। শুধু পেঁয়াজই নয়, চলতি সপ্তাহে আলু, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ শীতকালীন সবজির দামও আরেকটু কমেছে। এ ছাড়া চাল, ডাল, ডিম, মুরগি ও অন্যান্য মুদিপণ্য আগের দামেই স্থির রয়েছে।

তবে দাম কমে বাজারে স্বস্তি এলেও তথ্য বলছে অধিকাংশ সবজির দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখনো বেশি রয়েছে। এ ছাড়া আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম যতটা কমা প্রয়োজন, ততটা কমেনি বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আলুর বাজার। সাধারণত অন্যান্য বছর এই সময় আলুর দাম ৫০ টাকার ওপরে থাকে। কিন্তু চলতি বছর ২৫ টাকা কেজিতে নেমেছে।

সবজিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও চালের দাম নিয়ে এখনো অস্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা। তাঁরা বলছেন, দাম কমলেও এখনো অনেক বেশি রয়েছে।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি শ্যামবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৭ টাকা কেজি; এক সপ্তাহ আগে পাইকারিতে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০-৬৫ টাকা। এ ছাড়া আমদানির পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০-৭২ টাকা।

শ্যামবাজারের মেসার্স আনোয়ার বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মো. রঞ্জু শেখ বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেছে। এতে দাম খুব দ্রুত নামছে। নতুন, পুরোনো ও আমদানির মিলে এখন তিন ধরনের পেঁয়াজই রয়েছে বাজারে। চাহিদার তুলনায় বেশি হওয়ায় পেঁয়াজের বেচাকেনা খুব কম।

পাইকারিতে কমে আসায় খুচরাতেও দাম কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, মানিকনগরসহ বিভিন্ন বাজারে খুচরায় দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ৮৫-৯০ টাকা। আমদানির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯৫-১০০ টাকা।

বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৩৫ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ডিএএম) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় নতুন আলু বাজারে তেমন ছিল না। পুরোনো আলুই বিক্রি হয়েছে ৫০-৭০ টাকা কেজি।

রাজধানীর বাজারগুলোয় গতকাল বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ টাকা। ডিএএম বলছে, গত বছর এই সময় বেগুনের দাম ছিল ৩০-৬০ টাকা কেজি।

বাজারে শিম বিক্রি হচ্ছে ৩০-৭০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০-৭০ টাকা কেজি। গত বছর এই সময় শিমের দাম ছিল ৩০-৮০ টাকা।

বাজারে প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২০-৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৫-৪০ টাকা। গত বছর কপি একই দামে বিক্রি হতে দেখা গিয়েছিল।

বাজারে শীতের সবজি মুলা প্রতি কেজি ২০ টাকা, সপ্তাহখানেক আগে মুলা বিক্রি হয়েছিল ৩০ টাকায়। গত বছর এই সময় মুলার দাম নেমেছিল ১৫ টাকা কেজিতে।

শীতের সবজির মধ্যে টমেটোর দাম কিছুটা বেড়েছে গত এক সপ্তাহে। বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ টাকা।

কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৬০-১০০ টাকা, দেড় থেকে দুই সপ্তাহ আগে যা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

সেগুনবাগিচা বাজারের সবজি বিক্রেতা নূর নবী বলেন, গত বছর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দেশে পরিস্থিতি ছিল একটু অস্থির। এতে সরবরাহব্যবস্থাও ভালো ছিল না। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও কিছুটা খারাপ ছিল। এতে সবজির চাহিদাও কম ছিল। ফলে দামও কম ছিল। এ বছর সে রকম পরিস্থিতি নেই।

সবজিতে দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকলেও ডিম, মুরগি, চালসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে।

বাজারে ডিমের দাম আরও কমে প্রতিটি ৮ টাকা ৩৩ পয়সা থেকে ৯ টাকা ১৭ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে; যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ছিল। গত বছর একই সময় প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছিল ১০ টাকা ৮৪ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৬৭ পয়সা।

ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহেও এই দামেই বিক্রি হয়েছিল।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও বাজার তথ্য বলছে, খুচরা বাজারে গুটি, স্বর্ণাসহ মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। তবে এই দামও বেশি বলছে ক্রেতারা। যদিও গত বছর একই সময় মোটা চাল ছিল ৫২-৫৮ টাকা।

বিআর-২৮, বিআর-২৯, পাইজামসহ মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা কেজি, যা গত বছর ছিল ৬০-৬৫ টাকা। কাটারি, শম্পা কাটারি, জিরাশাইলসহ সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৯০ টাকা কেজি, যা গত বছর একই সময় ছিল ৭২ থেকে ৮৫ টাকা।

মালিবাগ বাজারের ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, মাঝারি মানের এক কেজি সরু চাল কিনতে এখনো ৭০-৭৫ টাকা লাগছে। আমনের এই ভরা মৌসুমে এটা অনেক বেশি। চালের দাম আরও কমে আসা উচিত। প্রতিবেশী দেশগুলোতে চালের দাম অনেক কম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের ই-রিটার্ন দাখিলে এনবিআরের হেল্প ডেস্ক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের সুবিধার্থে ছুটির দিনে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সহজীকরণে এনবিআরের উদ্যোগে ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের সহযোগিতায় ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটস্থ কার্যালয়ে ‘হেল্পডেস্ক’ চালু করা হয়েছে।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এ ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের হেল্পডেস্ক থেকে আগামী শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত