Ajker Patrika

স্বাধীনতার পর প্রথম বাজেটের আকার কমল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ১৪: ৫৭
স্বাধীনতার পর প্রথম বাজেটের আকার কমল

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম বাজেটের আকার আগের বছরের তুলনায় কমেছে। দেশে এবার ৫৫তম বারের মতো বাজেট উপস্থাপন করা হচ্ছে। এবারে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি কমানো, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই বাজেটে গুরুত্ব পাবে।

দেশের ইতিহাসে এর আগে ৫৪ বার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু কখনোই বাজেটের আকার আগের বছরের তুলনায় কমেনি। বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯৭২ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের দেওয়া বাজেটের আকার ছিল ৭৭৬ কোটি টাকা। এরপর ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত বাজেটের আকার ছিল যথাক্রমে ৮২০ দশমিক ৬৫ কোটি, ৯৯৫ দশমিক ২৩ কোটি এবং ১৫৪৯ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা।

মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তিনটি বাজেট দিয়েছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তাঁর দেওয়া তিনটি বাজেটের আকার ছিল যথাক্রমে ১৮৬৭ দশমিক ৮৭ কোটি, ২০৮৬ দশমিক ৯৬ কোটি এবং ২৪৪৩ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। এরপর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এরশাদ সরকারের শাসনামলেও বাজেটের আকার বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত ছিল।

স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত প্রথম নির্বাচিত সরকারের ৫ বছরেও বাজেটের আকার ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। বিএনপি সরকারের প্রথম বছরে অর্থাৎ ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে মোট বাজেট ছিল ১৫ হাজার ৫৮৩ দশমিক ২৫ কোটি টাকা। সরকারের মেয়াদের শেষ অর্থবছর অর্থাৎ ১৯৯৫-৯৬ সালে বাজেটের আকার ছিল ২৪ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা।

এরপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরও বাজেটের আকার বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকে। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা এবং শেখ হাসিনা সরকারের সেই মেয়াদের শেষ বছরে বাজেটের আকার দাঁড়ায় ৪৪ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।

বিএনপির দ্বিতীয় মেয়াদের সরকার ক্ষমতায় আসার পরও বাজেটের আকার বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। ২০০২-০৩ অর্থবছরে মোট বাজেট ছিল ৪৪ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা; যা আগের বছরের চেয়ে মাত্র ৯০ কোটি টাকা বেশি। তারপরও বাজেটের আকার কমেনি। এরপর বিএনপির পাঁচ বছর মেয়াদের শেষ অর্থবছর ২০০৬-০৭ সালে বাজেটের আকার ছিল ৬৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।

এমনকি, দেশে দুই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকার সময়ও এই বাজেটের আকার কমেনি। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দেওয়া বাজেটের আকার ছিল ৮৭ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট বাজেট ছিল ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা।

২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। এই সময়েও দেশের বাজেটের আকার ক্রমেই বেড়েছে। ২০০৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া সর্বশেষ বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাপক দুর্নীতি, বিপুল অর্থ পাচার ও অন্যান্য আর্থিক অসংগতির কারণে দেশের অর্থনীতি নাজুক হয়ে পড়ে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতেই এবারের বাজেটের আকার কিঞ্চিৎ কমানো হয়েছে। এই বিষয়ে থিংকট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আসন্ন বাজেটের দুটি বিশেষত্ব থাকছে। এর একটি হচ্ছে—দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আগের বছরের তুলনায় ছোট বাজেট দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, জাতীয় সংসদ কার্যকর না থাকায় ১৭ বছর পর ২০০৭-০৮ সালের মতো টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে বাজেট ঘোষণা করা হবে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটটি হতে যাচ্ছে সংকোচনমূলক বাজেট। বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী বাজেটের মূল আকার ৭ হাজার কোটি টাকা কমবে; যা অতীতে দেশে আর কখনো এমনটি দেখা যায়নি।’

নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে বাজেটটি হবে সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী। আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিশেষ জোর দেওয়া হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে। এ ছাড়া উজ্জীবিত করা হবে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতকে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতা ও সুবিধাভোগীর ভাতাও কিছুটা বাড়বে।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এবারের বাজেট বিশেষ একটি পরিস্থিতিতে আসতে যাচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যেই আভাস পাচ্ছি নতুন বাজেট চলতি বাজেটের চেয়ে আকারে ছোট হবে। আমি মনে করি, এটি ভালো দিক। কারণ, শুধু আকারে বড় দেখানোর জন্য প্রতিবছর বড় বাজেট দিতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।’

উল্লেখ্য, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার মূল বাজেট ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। পরে তা সংশোধন করে সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা করা হয়েছিল।

আগামী বাজেট কেমন হওয়া দরকার এবং কোন কোন খাতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার, সে বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘আগামী বাজেট হওয়া দরকার জনবান্ধব। আগের সরকারের সময় দেখা গেছে, বাজেট ঘোষণার সময় বলা হতো জনবান্ধব বাজেট, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে জনবান্ধব না; বরং সরকারবান্ধব বাজেট দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিবছর বিশাল অঙ্কের বাজেট দেওয়া হয়েছে, বড় বড় প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এভাবে বড় বাজেট এবং মেগা প্রকল্প নেওয়া হতো মেগা দুর্নীতির জন্য। প্রকল্পের টাকা লোপাট করে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং দলীয় নেতারা বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। তাই বড় বাজেট দেওয়া মানেই ভালো বাজেট-বিষয়টি তেমন না। শোনা যাচ্ছে, এবার চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা দেওয়া হবে। আমি বলব—এটি ভালো সিদ্ধান্ত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের ই-রিটার্ন দাখিলে এনবিআরের হেল্প ডেস্ক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের সুবিধার্থে ছুটির দিনে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সহজীকরণে এনবিআরের উদ্যোগে ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের সহযোগিতায় ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটস্থ কার্যালয়ে ‘হেল্পডেস্ক’ চালু করা হয়েছে।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এ ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের হেল্পডেস্ক থেকে আগামী শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আকাশপথে পণ্য পরিবহনে অফডক চান ব্যবসায়ীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ১০
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা

আকাশপথে আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থার দুর্বলতা নতুন করে সামনে এনেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড। ওই ঘটনায় কয়েক দিনের জন্য কার্গো কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। এই প্রেক্ষাপটে আকাশপথে পণ্য পরিবহনকে নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুত ও সংকটসহনীয় করতে বিমানবন্দরের বাইরে অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো ব্যবস্থা চালুর দাবি জোরালো হয়েছে। সেই সঙ্গে দ্রুত এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো অপারেশন চালু না হলে যেকোনো সংকটে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

অফডক হলো বন্দর বা বিমানবন্দরের মূল এলাকার বাইরে অবস্থিত এমন নির্ধারিত স্থাপনা, যেখানে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের খালাস, সংরক্ষণ, পরীক্ষা ও হ্যান্ডলিং করা হয়। সহজভাবে বলা যায়, বন্দরের ভেতরে সব কাজ না করে বন্দরের বাইরে আলাদা জায়গায় কার্গোর কাজ করা, এটাই অফডক।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের মতো আকাশপথেও অফডক ব্যবস্থা চালু করা যায় বলে মনে করেন নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং সেবা মূলত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা খুবই সীমিত। অনেক সময় পণ্য খালাসে অতিরিক্ত দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। এতে রপ্তানি ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েন।

অফডক চালু হলে এ ধরনের জটিলতা থাকবে না জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এতে পণ্য খালাস দ্রুত হবে এবং সামগ্রিকভাবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও সহজ ও গতিশীল হবে।

অফডক দরকার কেন

সংশ্লিষ্টরা জানান, অফডক ব্যবস্থা চালু হলে বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক অপারেটর থাকবে। ফলে কার্গো আমদানি-রপ্তানি পরিবহনে টার্মিনাল হ্যান্ডলিং, কার্গো হ্যান্ডলিং, স্ক্যানিং চার্জসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে সেবার মানও বাড়বে।

তথ্যমতে, বর্তমানে আকাশপথে প্রতি কেজি পণ্য রপ্তানিতে প্রায় ২৬ টাকা সার্ভিস চার্জ নেয় বিমান বাংলাদেশ ও সিভিল এভিয়েশন। একই সেবা পেতে ব্যাংককে প্রতি কেজিতে ৬.৪২ টাকা, কলকাতায় ৪.৮৮ টাকা এবং দিল্লিতে ৬.১০ টাকা দিতে হয়। এতে করে আকাশপথে পণ্য পরিবহন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা মনে করেন, দেশে এয়ার কার্গো অপারেশনে অফডক পদ্ধতি চালু হলে অধিকতর কার্গো নিরাপত্তার সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। ইলেকট্রনিক কার্গো ট্র্যাকিং সিস্টেম (ইসিটিএস) চালু হবে। ফলে সহজে কার্গোর অবস্থান জানা যাবে। দ্রুত পণ্য খালাসে সুবিধা পাবে এবং জট কমবে। ওষুধের কাঁচামাল, জরুরি গার্মেন্টস পণ্যের নমুনাসহ আনুষঙ্গিক পণ্য সহজে পরিবহন করা যাবে। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ত্বরান্বিত হবে।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। বিশ্বের অনেক দেশে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন সিঙ্গাপুর, দুবাই, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, জাপান, ভারত, হংকং, ইউএসএ। সেখানে এই ব্যবস্থার ফলে কার্গো পরিবহনে সময়ের সাশ্রয় ও পণ্য খালাসে জটিলতা নেই বললেই চলে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে এবং তা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। একই ধরনের ব্যবস্থা ঢাকার বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় চালু করা গেলে আকাশপথে পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে।

এদিকে এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন চেয়ে ২৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি বলছে, ঢাকা বিমানবন্দর এবং এর আশপাশে অফডক সুবিধা চালু হলে আমদানি প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং রপ্তানির গতি বাড়বে। তবে অফডকের জন্য লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কম খরচে ভালো সেবা নিশ্চিত করতে স্পষ্ট শর্ত থাকা প্রয়োজন।

বিজিএমইএ আরও জানিয়েছে, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। তাই অফডক ব্যবস্থায় বিমানের সঙ্গে সমন্বয় ও চুক্তির বিষয়টি নীতিমালায় স্পষ্ট থাকা জরুরি।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, অফডক চালু হলে ডিএইচএল বা ফেডেক্সের মতো কুরিয়ার কোম্পানিগুলো বন্ড লাইসেন্স নিয়ে এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার পরে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে সরাসরি ডেলিভারি করতে পারবে। তখন আর বিমানের ওপর নির্ভর করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।

১০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ‘এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস ডেলিভারি’ বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—বিডা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে এয়ার কার্গো কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) কাস্টমস ও মূল্য সংযোজন কর বিভাগ থেকে ‘এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) স্থাপন, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, তদারকি ও কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২৫ ’-এর খসড়াও প্রণয়ন করা হয়েছে।

এয়ার কার্গো অপারেটর’স স্টেশন নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়ন করতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি তাদের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জন্য অ্যান্টি মানি লন্ডারিং (এএমএল) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ (সিএফটি) সংক্রান্ত এক সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করেছে। গত ২১ ডিসেম্বর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

এএমএল ও সিএফটি কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা এবং প্রাসঙ্গিক নিয়ন্ত্রক নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিই ছিল এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। কর্মশালায় আলোচিত প্রধান বিষয় ছিল—ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং মানি লন্ডারিং তদারকিতে পরিচালনা পর্ষদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কর্তৃক বিভিন্ন সময় সিস্টেম চেক পরিদর্শন থেকে প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। দেশের সাম্প্রতিক মানি লন্ডারিং পরিস্থিতি এবং রিপোর্টিং সংস্থা হিসেবে ব্যাংকের করণীয়।

কর্মশালায় রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক রেজওয়ানুর রহমান ও যুগ্ম পরিচালক জুয়াইরিয়া হক।

এ ছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. এবতাদুল ইসলাম, কাজী মো. মাহবুব কাশেম এফসিএ, মো. গোলাম মোস্তফা ও মুহাম্মদ মনজুরুল হক উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, উপব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই সচেতনতামূলক সেশনে অংশ নেন।

আইএফআইসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে এ ধরনের কর্মশালা নিয়মিত আয়োজন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএসআরএম স্টিলসের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশিকা অনুযায়ী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ড) সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবরআলী এফসিএ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী এবং পরিচালকমণ্ডলীর প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়। শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কোম্পানির পরিচালক পুনর্নিয়োগ এবং নিরীক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহোসেন পরিচালকমণ্ডলীর বিবরণী উপস্থাপন করেন এবং কোম্পানির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত করেন।

বিপুলসংখ্যক শেয়ারহোল্ডার নিজ নিজ বিও (BO) আইডি ব্যবহার করে ওয়েব লিংকের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল সভায় সরাসরি অংশ নেন। নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নের উত্তর দেন কোম্পানি সচিব।

শেয়ারহোল্ডাররা তাঁদের মন্তব্যে কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও পরিচালকমণ্ডলীর প্রতি গভীর আস্থা ও নির্ভরতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

সভায় কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ, কোম্পানি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোম্পানির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত