Ajker Patrika

আসামে বাংলাদেশ ইস্যুতে রাজনীতি: বাস্তবতা সন্ধানে

আলতাফ পারভেজ
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১৭: ০৪
আসামে বাংলাদেশ ইস্যুতে রাজনীতি: বাস্তবতা সন্ধানে

ভারতে ২৮টি রাজ্য এবং ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে আয়তন ও জনসংখ্যার সঙ্গে জিডিপির তুলনা করলে সর্বভারতীয় পটভূমিতে আসামের অবস্থান সহজে বোঝা যায়। ভারতের জনসংখ্যায় আসামের হিস্যা (২০১১-এর হিসাবে) ২.৫৮ শতাংশ। আয়তনে হিস্যা ২.৩৯ শতাংশ। কিন্তু জিডিপিতে হিস্যা মাত্র ১.৭০ শতাংশ। আয়তন ও জনসংখ্যার সঙ্গে জিডিপির হিস্যাগত এই তুলনায় আসামের অবস্থান ভারতের প্রথম ১৫টি রাজ্যের মধ্যেও নয়। ১৯৫০-৫১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ে আসাম ভারতীয় গড়ের চেয়ে ৫০ রুপি ওপরে ছিল। সত্তর বছর পরে ২০১৮ সালে দৃশ্যটি ছিল—ভারতে যখন মাথাপিছু আয় গড়ে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৭০ রুপি, আসামে তা ৬৭ হাজার ৬২০ রুপি। বৃহত্তর ভারতের পটভূমিতে আসামের পিছিয়ে পড়ার একটা বড় কারণ নিহিত দেশটির সংবিধানেই। বিশেষত, কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক সম্পর্কের মাঝে।

অনেক সময় বলা হয়, আসাম দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ এলাকা বলেই দরিদ্র। এরূপ প্রচারণাও চলে মূলত আসামের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কের রাজনৈতিক অর্থনীতি আড়াল করে। বাস্তবে ভারতে ২০১৮ সালের জুনে ৬৪০টি জেলায় শুমারির ভিত্তিতে যে ‘দুর্যোগ সূচক’ তৈরি হয়, তাতে সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ রাজ্য ছিল যথাক্রমে মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর প্রদেশ। আসামের অবস্থান ছিল সেখানে সপ্তম। সমস্যাটি কাঠামোগত, কিন্তু রাজনৈতিক পণ্য হলো ‘বিদেশি খেদাও’।

ভারতের সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য সরকারগুলোর হাতে করের উৎস সীমিত। যেমন কৃষি আয় ও কৃষিজ ভূসম্পদের ওপর কর, মদজাতীয় পানীয়র ওপর আবগারি শুল্ক, যানবাহনের মতো স্বল্প আয়ের ক্ষেত্রগুলো ছাড়া আয়কর থেকে করপোরেট কর পর্যন্ত করের প্রধান উৎসগুলো কেন্দ্রের হাতেই। এসব আয় থেকে যদিও কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোতে নানাভাবে বরাদ্দ দেয়; কিন্তু কর প্রক্রিয়াটির আইনগত ভিত্তি ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট-১৯৩৫’-এর মতোই রয়েছে বলা যায়। ভারতকে ‘ফেডারেল রাষ্ট্র’ বলা হলেও করারোপ আর তা থেকে রাজ্যপ্রতি বরাদ্দ এবং এ-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ার ধরনে রয়েছে অতিকেন্দ্রীভূত বৈশিষ্ট্যের ছাপ। কেন্দ্রের হাতে করের প্রধান উৎসগুলো রেখে দেওয়া হলেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও স্যানিটেশনের মতো খাতগুলোর দায়িত্ব বর্তেছে রাজ্য সরকারের ওপর। এমন পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করেই আসামের অনেক সংগঠন স্থানীয় তরুণদের তাদের কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত করেছিল অতীতে। তবে একপর্যায়ে তারাও অর্থনৈতিক বঞ্চনা সংশোধনের প্রশ্ন বা প্রশাসনিক স্বশাসনের পরিবর্তে ‘বিদেশি খেদাও’ রাজনীতিতে আত্মসমর্পণ করে।

যে কারণে ‘বিদেশি’ প্রশ্ন সামনে
আসামের অর্থনীতির পিছিয়ে পড়া চরিত্রের সঙ্গে রাজ্যটির রাজনীতি ও রাজনৈতিক প্রশাসনের রয়েছে গভীর যোগ। আবার লোকসভায় মাত্র ১৪ জন সদস্য থাকায় আসাম ভারতের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব রাখতে পারে সামান্যই। ভারতের মধ্যে আসামের এই বিধিবদ্ধ সীমাবদ্ধতা রাজনীতির মঞ্চে আড়াল করে রাখা হয় সচেতনভাবে। তার বদলে নিয়মিতভাবে প্রধান প্রসঙ্গ করে রাখা হয়েছে জাতিগত বিবাদ এবং ‘অবৈধ অভিবাসন’ ইস্যুকে। বলা হয়, অবৈধ বিদেশিরাই আসামের অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক চাপ তৈরি করে রেখেছে। আসামের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার চেয়ে জরুরি হলো অবৈধ অভিবাসীদের তাড়ানো।

অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব থেকে ‘বিদেশি’ প্রশ্নে রাজনৈতিক প্রচারণার মোড় ঘোরানোর ফল হয়েছে তাৎপর্যময়। এর মাধ্যমে আসামে তরুণদের সামনে থেকে ‘প্রতিপক্ষ’ পাল্টে দেওয়া গেছে। জনগণের প্রায় ৭৫ শতাংশ জীবনযাত্রায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিসংশ্লিষ্ট হলেও আসামের অবিকশিত এই খাত থেকে নবীন প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছিল না। রাজ্যের জিডিপিতে কৃষি মাত্র ২০ শতাংশ অবদান রাখতে পারছে। আবার সরকার বিকল্প খাত সৃষ্টি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতেও ছিল অসমর্থ। রাজ্যটির জিডিপিতে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের অবদান ১০ শতাংশের মতো। ভারতের অন্যত্র গড়ে তা আসামের দ্বিগুণ। ভারতের একটি রাষ্ট্রীয় এক গবেষণায় দেখা গেছে, আসামে বছরে প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করা দরকার। কিন্তু বাস্তবতা তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে। ভারতের জাতীয় হারের চেয়ে আসামে বেকারত্বের হার তিন গুণ বেশি। এ রকম তরুণদের সামনে অনিশ্চিত অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের একটা কারণ হাজির করা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং আসামের রাজ্য সরকারের জন্য জরুরি ছিল। ‘বিদেশি’ প্রসঙ্গের মাধ্যমে বাংলাদেশকে টার্গেট করে সেটাই সৃষ্টি করা গিয়েছিল।

কাজের সন্ধানে বাংলাদেশিদের যাওয়ার বাস্তব কারণ নেই লক্ষ করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত ‘অবৈধ অভিবাসন’ নিয়ে উচ্চকিত হলেও নেপাল সীমান্তে তাদের অবস্থান তদ্রূপ নয়। অথচ নেপাল সীমান্তটি প্রায় উন্মুক্ত। বাংলাদেশ-আসাম সীমান্ত ২৬২ কিলোমিটার মাত্র, সেখানে নেপাল-ভারত সীমান্ত প্রায় সাত গুণ দীর্ঘ—১ হাজার ৭৫৮ কিলোমিটার। এই সীমান্ত পেরিয়ে এসে প্রচুর নেপালি ভারতে অবস্থানও করছে। কিন্তু তাদের ‘বিদেশি খেদাও’ধর্মী কোনো আন্দোলনের শিকার হতে হচ্ছে না।

উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে বরাবরই অভিবাসীদের সস্তা শ্রমকে সহায়ক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে অভিবাসন কোনো দেশের অর্থনীতিতে অভিশাপ না আশীর্বাদ, সে বিতর্ক আসামের ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিকই মনে হয়। কারণ, আসামের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নই তোলা যায়, সেখানকার অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা আদৌ ব্যাপকভিত্তিক অভিবাসনের ধারণাকে সমর্থন করে কি? আরেকটি প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশিদের আসামে যাওয়ার কোনো অর্থনৈতিক বাস্তবতা আছে কি? এর সরাসরি উত্তর হলো, আসামের অর্থনীতি ও বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনামূলক চিত্র বড় আকারে অভিবাসনের ধারণা সমর্থন করে না।

দরিদ্রদের জন্য আসাম কি প্রলুব্ধকর জায়গা
সাধারণভাবে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ও ভারত কাছাকাছি অবস্থানে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত এইচডিআইয়ে ১৮৯টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ছিল ১৩০ এবং বাংলাদেশের ১৩৬। ২০২২ সালে একই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৯১ দেশের মধ্যে ১২৯, ভারতের ১৩২।
তবে ভারত-বাংলাদেশ কাছাকাছি থাকলেও আসামের সঙ্গে তুলনা করলে অধিকাংশ মৌলিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা অনেক ভালো। এইচডিআইয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও অঞ্চলের মধ্যে আসামের অবস্থান কয়েক বছর আগেও ৩০তম ছিল। এই সূচকে আসামের অর্জন ০.৬০৫ এবং বাংলাদেশের ০.৬০৮। মাতৃমৃত্যুর হার আসামে বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণ, লাখে ৩২৮। নবজাতকের মৃত্যুহারও বাংলাদেশের চেয়ে আসামে প্রায় দ্বিগুণ। সেখানে গড় আয়ুষ্কাল ৬২ বছর, বাংলাদেশে ৭২। মাথাপিছু আয়ে আসাম-বাংলাদেশ ব্যবধান বিপুল। এই লেখা তৈরির সময়ও আসামে প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। এর মাঝে আবার মুসলমানপ্রধান এলাকাগুলো অধিক দরিদ্র। অন্যদিকে বাংলাদেশে ২০১৮-এর হিসাবে দারিদ্র্যের হার প্রায় ২২ শতাংশ। এখন সেটা আরও কমেছে।

এসব তথ্য-উপাত্ত কোনোভাবেই প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে দলে দলে কাজের সন্ধানে আসাম যাওয়াকে সমর্থন করে না। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতার কারণেও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে আসাম মোটেই আগ্রহোদ্দীপক স্থান নয়। আসামে অধিক বৃষ্টি ও বন্যার প্রাদুর্ভাব নৈমিত্তিক ঘটনা। আসাম সরকারের হিসাবেই গত ৬০ বছরে সেখানে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৫৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০৫০ সাল নাগাদ এটা ১ দশমিক ৭ থেকে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে। একই সময়ে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে ৩৮ শতাংশ বেশি। স্বাভাবিকভাবেই এ রকম একটা স্থান দরিদ্রদের বাড়তি আয়ের জন্য প্রলুব্ধ করে না। অন্তত বাংলাদেশের ‘দরিদ্র’দের ওদিকে যাওয়ার কোনো বাস্তব কারণ নেই। বাংলাদেশের শুমারি তথ্যেও জনসংখ্যার কোনো অস্বাভাবিক হ্রাস প্রমাণ করছে না।

জনসংখ্যাবিদ্যা কী বলছে
আসামের রাজনৈতিক সাহিত্যে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ সম্পর্কে পুনঃপুন উল্লেখ করে বলা হয়, আসামে লাখ লাখ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী গেছে পূর্ব বাংলার ময়মনসিংহ থেকে। সুদূর অতীত থেকেই এটা ঘটেছে, তবে অবিভক্ত পাকিস্তানের সময় সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির অবনতিকালে এই অভিবাসন বাড়তি গতি পায়। কিন্তু পাকিস্তান শাসনামলের দুটি শুমারি দলিল এ ক্ষেত্রে তেমন ইঙ্গিত দেয় না। ১৯৫১ এবং ১৯৬১ সালের শুমারি দলিলে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল যথাক্রমে ৭৬১ ও ৯২২। আর ময়মনসিংহে এটা ছিল ৯৩১ ও ১ হাজার ১০৩।

ময়মনসিংহের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা এবং সেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব পূর্ব বাংলার গড় চিত্রের চেয়ে অনেক বেশি হারে অব্যাহত ছিল, যা পাকিস্তান শাসনামলে সেখান থেকে বিপুল জনসংখ্যার স্থানান্তরের সাক্ষ্য দেয় না। বিআইডিএসের এক গবেষণায় ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫ সময়ে জনসংখ্যার যে চিত্র পাওয়া যায়, তাতে স্বাভাবিক গতিতে ৫ বছর পরপর ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্পষ্ট এবং নির্বিঘ্ন প্রবণতা দেখা যায়।

এ ছাড়া বিগত শতাব্দীতে ময়মনসিংহ ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত থাকায় শুমারি দলিলগুলোকে দশকওয়ারি সাজালে এই বিভাগের জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে চিত্র পাওয়া যায়, তাতেও দেখা যায়, ময়মনসিংহসহ ঢাকা বিভাগের জনসংখ্যার ঘনত্ব সব সময়ই জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেক ওপরে ছিল।

এমন তথ্য-উপাত্ত হাতে থাকার পরও বাংলাদেশ থেকে মানুষের আসামে যাওয়ার দাবিকে যৌক্তিক রাখতে আসামজুড়ে প্রচারণা চালানো হয় যে বাংলাদেশ খুব দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশে আসেননি, আসামের এমন অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস, বাংলাদেশে গড় অর্থনৈতিক চিত্র অতি দারিদ্র্যময়। আসামে প্রতিদিন হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রবেশের কল্পিত কাহিনি নিয়মিত প্রচারের একটা সহায়ক তথ্য হিসেবে এটা শুরু হয়েছিল এবং তা অনেকাংশে সফল। বাংলাদেশে আয়-রোজগারের ক্ষেত্রে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো খাতে গত তিন-চার দশকে যেসব পরিবর্তন ঘটেছে, সে বিষয়ে আসামবাসী মোটেই অবহিত নয়। বৈধ-অবৈধভাবে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় নাগরিক যে বাংলাদেশে কাজ করছে, সে বিষয়েও আসামবাসীর কোনো ধারণা নেই। বরং সেখানে অনেকের কাছেই বাংলাদেশ দুর্ভিক্ষময়, দুর্যোগপ্রবণ, সাম্প্রদায়িক এক জনপদ হিসেবে চিহ্নিত। এসব প্রচারণার সত্যাসত্য সম্পর্কে বাংলাদেশের উচিত নীরবতা ভাঙা। আসামবাসীর সামনে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরা দরকার।

লেখক: গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।

নাদিম নেওয়াজ
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।

প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

নিরাপত্তা ও সেবায় মার্কেট শেয়ারে এগিয়ে সিটি ব্যাংক

দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।

আসাদুজ্জামান নূর
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
তৌহিদুল আলম
তৌহিদুল আলম

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।

এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।

ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?

তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।

মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

১৫০০‍-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে সুবিধা দেয় ঢাকা ব্যাংক

ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।

অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।

দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।

গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।

ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

মাস্টারকার্ডেই সহজ ও নিরাপদ লেনদেন

বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৫০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।

গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।

দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।

গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।

ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত